মণি ভট্টাচার্যঃ ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠেছে মাটি। নতুন বছরের প্রথমদিনেই ভয়ঙ্কর শক্তিশালী ভূমিকম্পে তছনছ জাপান। তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে একের পর এক বাড়ি। হাহাকার আর আতঙ্ক যেন গ্রাস করেছে গোটা জাপানে। তার মধ্যেই আছড়ে পড়েছে সুনামির ঢেউও। পাশাপাশি ভারী বৃষ্টি ও হড়পা বানেরও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এমতাবস্থায় জাপানে স্বপরিবারে আটকে পড়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিস বিভাগের অধ্যাপক। সিএন-এর প্রতিনিধির কাছে নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি।
অধ্যাপক সুদীপ্ত দাস বললেন, বছরের প্রথম দিনে স্ত্রী ও চার মাসের সদ্যোজাত কন্যাকে নিজে জাপানের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র টোকিও স্কাইটিতে ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎই ভূমিকম্পের সতর্কতা ঘোষণা হয়। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেরাও অনুভব করেন জোরালো কম্পন। আটকে পড়েন স্কাইটিতে। লিফট বন্ধ করে দেওয়া হয়। নতুন বছরের সূচনা উপলক্ষে এদিন বহু মানুষের সমাগম হয়। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তের মধ্যে।
সুদীপ্ত দাস আরও জানান, তিনি স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে গবেষণার জন্য রয়েছেন জাপানে। তিনি বোলপুরের নতুন পুকুর এলাকার বাসিন্দা। এখনও ক্রমাগত আফটারশক হচ্ছে বলে জানান তিনি। আবহাওয়াও খারাপ হচ্ছে। জাপানের প্রশাসন ও ভারতীয় দূতাবাস এই পরিস্থিতিতে অনেকটাই সহায়তা করেছে। তবুও ভয়েই দিন কাটাচ্ছেন অধ্যাপক।
প্রসঙ্গত, ভূমিকম্পে এখনও অবধি ৫০ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে জাপান প্রশাসনের তরফে। গুরুতর জখম বহু। এখনও অবধি ১৫৫ বার কম্পন অনুভূত হয়েছে জাপানের বিভিন্ন জায়গায়। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নোটো উপকূল। শতাধিক বাড়ি ভেঙে পড়েছে সেখানে।
বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র’ স্বীকৃতি অর্জন করেছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এরপরেই বিশ্বভারতীর উপাসনা গৃহ, ছাতিমতলা এবং রবীন্দ্রভবনের উত্তরায়ণের সামনে বসানো হয়েছে শ্বেতপাথরের ফলক। এই ফলককে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ফলকে লেখা ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’। তার নিচে খোদাই করা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম। অভিযোগ, এর জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে। এবার এই নিয়ে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হল শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট।
এই ফলক বিতর্কে রবিঠাকুরের ছবি বুকে ধরে ধর্নায় বসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস-ও এই বিষয়ে জবাব চেয়েছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে এখন মুখ খুলতে নারাজ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
প্রকাশ্য দিবালোকে বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) এক ছাত্রকে (Student) অপহরণ করলো দুষ্কৃতীরা। ভাড়া বাড়িতে ঢুকে তুলে নিয়ে গেলো ছাত্রটিকে।। থানায় মেইল (Email) করে অভিযোগ দায়ের করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
জানা গিয়েছে, ছেলেটির নাম পান্না চারা। তাঁর বাড়ি মায়ানমারে। বিশ্বভারতীর সংস্কৃত ডিপার্টমেন্ট-এর পিএইচডি স্কলার ফাইনাল ইয়ারের এর পড়ুয়া পান্না।। শান্তিনিকেতনের ইন্দিরা পল্লী এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন এই ছাত্র। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুর দুটো নাগাদ ৭ থেকে ৮ জন দুষ্কৃতী আসে গাড়ি নিয়ে। তারপর যে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন সেই ভাড়া বাড়িতে প্রবেশ করে ছাত্রটিকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
আর এই ঘটনার পরই সন্ধ্যেবেলায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান ছাত্রের বন্ধু। জানানোর পরেই কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বোলপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে মেইল মারফত। পুলিস সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ঘটনার অভিযোগের ভিত্ততে তদন্ত শুরু হয়েছে।
তবে কারা, কেন, কী উদ্দেশ্যে ছাত্রকে অপহরণ করল সেটা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।ো কেবল টাকার উদ্দেশ্যে অপহরণ করা হয়েছে নাকি এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিস।
মিথ্যা অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়কে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। এই দাবি তুলে ফের অনশনে বসলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সোমবার সকাল থেকে সঙ্গীত ভবনের মূল মঞ্চে ধরনা শুরু করেন তিনি। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভবনের মূল দরজা। সোমবার বিকাল পর্যন্ত তিনি অনশন চালাবেন বলে জানা গিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভি বি কনফেশন নামে একটি পেজ রয়েছে। সেখানে অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলা পড়ুয়া অভিযোগ করেছেন, তাঁকে একাধিকবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। যার জন্য শিক্ষকদের একাংশ দায়ি। এই পোস্টের পরেই তোলপাড় শুরু হয় বিশ্বভারতীর অন্দরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর দাবি, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। বিশ্বভারতীকে কালিমালিপ্ত করতেই এই কাজ করা। আর তার প্রতিবাদেই ধরনা ও অনশন শুরু করেছেন তিনি।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ তাঁকে, শারিরীক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল। এবং যত দিন যাচ্ছে ততই বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠছে। ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবার বিশ্বভারতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে তাতে নতুন করে জলঘোলা তৈরি হয়েছে।
জমি নিয়ে অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবাদ অব্যাহত। তার মধ্যেই অমর্ত্য সেনের পক্ষ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোপ পড়ল এক পড়ুয়ার ওপর। বিশ্বভারতীর পল্লীশিক্ষা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র তথা এসএফআইয়ের সদস্য সোমনাথ সৌকে বুধবার সাসপেন্ড করলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শো-কজও করা হয়েছে তাঁকে।
অমর্ত্যকে সমর্থনের পাশাপাশি বিশ্বভারতী নিয়ে নানা বিতর্কিত বিষয়েও ফেসবুকে লিখেছিলেন সোমনাথ। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার জন্য সোমনাথ সৌ-এর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক বিতর্কিত পোস্ট করায় নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন ওই ছাত্র।
উল্লেখ্য, জমি বিবাদ নিয়ে বিশ্বভারতীর অবস্থানের বিরোধিতা করায় ওই ছাত্রকে এর আগেও শো-কজ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, ওই ছাত্র সমাজমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর পোস্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনামের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি, ফেসবুকে পোস্ট করে সোমনাথ সৌ নামে এক ছাত্র বিতর্কিত জমির মালিকানা সংক্রান্ত নথি প্রকাশের দাবি তোলেন। এরপরই তাঁকে শো-কজের নোটিস পাঠান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সৌমেন সুর: প্রায় সারা পৃথিবী ঘুরেছেন রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore)। পৃথিবীর যেখানেই গেছেন সেখানেই কবিকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় ভরিয়ে দিয়েছে। অবশ্য ভ্রমণের কারণ ছিল, বিশ্বভারতী (Visva Bharati) গড়ে তোলবার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, আর একটা কারণ- বিশ্বের নীতি, মতবাদ নিজের অন্তরে গ্রহন কোরে তাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা। এবং স্বদেশের আদর্শ, দর্শন পৌছে দিতেন বর্হি বিশ্বের কাছে। কবি বিশ্বাস করতেন, 'আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া।' এইভাবেই কবি বিশ্বের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন এবং নামজাদা ব্যক্তিত্বের সাথে গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্ব। রম্যাঁ রলাঁ, বানার্ড শ, আইনস্টাইন অন্যদিকে স্বদেশের মহাত্মা গান্ধী, চিত্তরঞ্জন, নেতাজী সুভাষ, ত্রিপুরার রাজা রাধাকিশোর মানিক্য সব বন্ধুস্থানীয় ছিলেন। কবি অসংখ্য কাজে দেশের মানুষের কাজে ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন।
কাজের ভিড়ে বাচ্চারা তার কলম থেকে বাদ যাইনি। অসংখ্য কবিতা, ছড়া এবং শিশুপাঠ্য বই 'সহজ পাঠ' লিখেছেন। ১৯৩০ সালে কবি তখন অসুস্থ, ঠিক হলো স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য দার্জিলিং যাবেন। ১৯৩১ সালে হিজলী কান্ডে দার্জিলিং যাওয়া বন্ধ করলেন। হিজলী ডিটেনশন ক্যাম্পে দুজন বন্দি মারা যায়। সেই প্রতিবাদে ময়দানে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করেন রবীন্দ্রনাথ। পরাধীন দেশের অত্যাচারিত বঞ্চিত মানুষদের জন্য তার ভাষা গর্জে উঠেছে কবিতায়, প্রবন্ধে ও নানাবিধ রচনায়। রবীন্দ্রনাথ কবি, মহাকবি। রবীন্দ্রমালার মধ্যে আছে নানা রঙের নিখুঁত ফুল। সেগুলি হল নানা রবীন্দ্রনাথ স্বদেশী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথ, গায়ক রবীন্দ্রনাথ, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি। অন্যদিকে তিনি সংগঠক, শিক্ষক, সমাজসেবী, বক্তা, মানুষের নেতা। রবীন্দ্রনাথ আমাদেরই লোক হলেও বিশ্বমানবতা জুড়ে আছে তার কর্মে, তার সৃষ্টিতে।
উচ্ছেদের নোটিশ (Notice) আগেই ঝোলানো হয়েছিল। সেই নোটিশের আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরাসরি বিশ্বভারতী (Visva-Bharati university) কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লিখেছিলেন অমর্ত্য সেন (Amartya Sen)। আর তারই জবাবে এবার ১৫ দিনের মধ্যে প্রতীচী ছাড়তে বলে বুধবার নোটিশ দিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতোর সাক্ষরিত সেই নোটিশে বলা হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে যদি প্রতীচী খালি না করা হয়, তাহলে প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হবে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে নোটিশে জানানো হয়েছে যে, প্রতীচীর জমির লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, এর আগে ‘প্রতীচী’র গেটে উচ্ছেদের নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল, ১৯ এপ্রিল এই জমি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে তার আগে ১৭ এপ্রিল বিশ্বভারতীকে জবাবি চিঠি দিয়েছিলেন অমর্ত্য সেন। অমর্ত্য সেন চিঠিতে লিখেছিলেন, লিজের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত কেমন করে কেউ এই জমি দাবি করতে পারেন? অমর্ত্য সেন সেখানে আরও জানান, জুন মাসেই শান্তিনিকেতনে ফিরছেন তিনি। পাশাপাশি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জানান, ‘প্রতীচী’–র জমির আইনশৃঙ্খলা এবং শান্তিরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। তবে এরই মধ্যে এবার প্রতীচীর জমির লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
এর আগে জমি ছাড়ার নোটিশ প্রতীচীর গেটে লাগানোর আগে ১৩ এপ্রিল বিশ্বভারতীতে এই সংক্রান্ত একটি শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে বিদেশে থাকার কারণে সেই শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না অমর্ত্য সেন। এরপরই ১৪ এপ্রিল প্রতীচীর গেটে উচ্ছেদের নোটিশ সেঁটে দিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর অভিযোগ, এই জমি অমর্ত্য সেন দখল করে রেখেছেন। এদিকে অমর্ত্য সেনের দাবি, এই জমি তাঁর বাবার। ১.৩৮ একর জমি অমর্ত্য সেনের নামে মিউটেশন করা হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে। মিউটেশন করার কথা জানানো হলেও বিশ্বভারতী তাঁদের নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। অমর্ত্য সেনের আইনজীবীকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে ইমেলে বলা হয়, ১৯৭১ সালের দখলদার উচ্ছেদ আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) বিতর্কিত জমিতে জারি ১৪৪ ধারা। আদালতের (Court) নির্দেশেই ১৪৪ ধারা জারি বলেই সূত্রের খবর। সূত্রের খবর, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (Visva Bharati University) কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি অমর্ত্য সেনের বাড়ি প্রতীচীতে সেই চিঠি গিয়েছিল। এবং ২৯ মার্চ ওই বিতর্কিত জমি নিয়ে শুনানির জন্য, অমর্ত্য সেনের পারিবারিক সদস্য কাউকে বিশ্বভারতীতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। বিশ্বভারতীর চিঠিতে ফের দাবি করা হয়েছিল, অমর্ত্য সেন ১৩ ডেসিবেল জমি দখল করে রেখেছেন।
এরপরে আসরে নামেন মমতা বন্দোপাধ্যায় খোদ। মমতা বিজেপিকে কটাক্ষ করেন এবং অমর্ত্য সেনের মত একজন নোবেলবিদকে বিজেপি সন্মান করতে জানেন না বলে জানান তিনি। এরপরেই সামনে আসে ওই বিতর্কিত জমির পর্চা সংক্রান্ত তথ্য। যদিও এর পরে সেই তথ্য মানতে চায়নি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ওই ঘটনায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের আবেদনেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে অমর্ত্য সেনের বিতর্কিত ওই জমিতে, এমনটাই সূত্রের খবর।
ঝুলেই রইলো পৌষ মেলার (Poush Mela) ভবিষ্যৎ। বিশ্বভারতীর (VisvaBharati University) মাঠে পৌষ মেলা আয়োজনের জট কেটেও কাটলো না কলকাতা হাইকোর্টে। রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে জানানো হয়েছে, ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে মেলা করার অনুমতি দিক কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। পৌষমেলার অনুমতি নিয়ে বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি। ৩ দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে, তারা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। পাশাপাশি শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদকে বিকল্প জায়গার খোঁজ রাখতে বলেন প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ।
পৌষমেলা নিয়ে বিশ্বভারতী হলফনামায় জানিয়েছেন, তাঁরা এবছর অনুমতি দিতে পারছেন না। গত ৭ বছর ধরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হয়ে এসেছে পৌষমেলা। কিন্তু এবছর তারা অনুমতি দেয়নি। কারণ পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মানা হয় না।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২৩ শে ডিসেম্বর ২০২২ সালে আসন্ন পৌষমেলার জন্য মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি বিশ্বভারতী। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন বোলপুরের বাসিন্দা গুরুমুখ জেঠওয়ানি। কলকাতা হাইকোর্টে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি করে, গত বছরগুলিতে শর্তসাপেক্ষে মেলার আয়োজন করার অনুমতি দিয়েছিল পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু মেলায় হওয়া জমায়েত পরিবেশ রক্ষার শর্ত মেনে চলেন না। সেই কারণে বারবার পরিবেশ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
অপর দিকে, শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ জানিয়েছে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ রাজি না হলে ওই মাঠে মেলা করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু পৌষ মেলা পশ্চিমবঙ্গের একটি বিখ্যাত মেলা। বাংলা এবং বাংলার বাইরে থেকেও বহু পর্যটক এই মেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। ফলে, বীরভূম জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মেলা করাটাও প্রয়োজন। বহু প্রাচীন কাল থেকে এই ঐতিহ্যশালী মেলা হয়ে আসছে। তাই আদালতের উচিত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসা।
চলতি বছর পৌষ মেলা ঘিরে বড়সড় জটিলতা। মেলার মাঠ আর পৌষ মেলার জন্য দিতে নারাজ বিশ্বভারতী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বক্তব্য হলফনামার আকারে জমা দিতে হবে বিশ্বভারতীকে। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, 'বিশ্বভারতী ৬ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানিতে লিখিত আকারে এই বক্তব্য জানাবে, তারপর আদালত পরবর্তী নির্দেশ দেবে।'
বিশ্বভারতী জানিয়েছে, মেলার জন্য দূষণ ছড়ানোয় বারেবারে পরিবেশ আদালত সতর্ক করেছে। মেলা করলে বেশ কিছু শর্ত মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মেলা চলাকালীন ব্যবসায়ী থেকে অন্য সকলে সেই শর্ত মানার উৎসাহ দেখায় না। ফলে সেই ঘটনায় বিশ্বভারতীকে সতর্ক করেতছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। তাই মেলা আয়োজনে আপত্তি না থাকলেও, ওই মাঠে মেলা করতে দেওয়ায় আপত্তি আছে বিশ্বভারতীর।
শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন ডেভলপমেন্ট অথরিটি সূত্রে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তি থাকলে মেলা হবে ন। কিন্তু জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মেলা করা হয়। দরকার হলে আদালত সবপক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে পথ বাতলে দিক।
প্রায় ১০ ঘণ্টা পর ঘেরাওমুক্ত বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (Vice Chancellor Vidyut Chakraborty)। খবর পেয়ে শান্তিনিকেতন ও বোলপুর থানার পুলিস (police) এসে তাঁকে উদ্ধার করে। উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গাঁইতি, শাবল, বাঁশ নিয়ে আসেন নিরাপত্তারক্ষীরা। গেট ভাঙতে শুরু করে৷ তখনই আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। ফের রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। প্রসঙ্গত, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা দীর্ঘদিন ধরেই পড়ুয়া, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, কর্মীদের বড় অংশ করছে৷ সদ্য পূর্বের আন্দোলনকারীরা পড়ুয়াদের ভর্তি না নেওয়া, গবেষণারত পড়ুয়াদের পাঠে বাধা দেওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছেন। এমনকি, আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ তুলে বুধবার বিকেল ৪ টে থেকে ঘেরাও করা হয় উপাচার্যকে৷ বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিজ দফতরেই ঘেরাও করা হয় উপাচার্যকে৷ সেই সময় পড়ুয়াদের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি হয় বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের। আহত হন দুই পড়ুয়া-সহ এক নিরাপত্তারক্ষী।
জানা গিয়েছে, "দীর্ঘক্ষণ দফতরে ঘেরাও থাকার পর নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি, হেনস্থা করা হয়েছে," এই অভিযোগে বীরভূম পুলিস সুপারকে ইমেল করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী৷ বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ২ টো নাগাদ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে আসে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীরা৷ গাঁইতি, শাবল, বাঁশ দিয়ে গেট খোলার চেষ্টা করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে শুরু হয় জোর ধস্তাধস্তি। পরিস্থিতি উত্তাল হওয়ার খবর পেয়ে শান্তিনিকেতন ও বোলপুর থানার পুলিস এসে পড়ুয়াদের বুঝিয়ে উপাচার্যকে উদ্ধার করে৷ প্রায় ১০ ঘণ্টা পর ঘেরাও মুক্ত হন উপাচার্য।
শেষ পৌষ মেলা (poush mela) হয়েছিল তখন সালটা ২০১৯। এরপর থেকেই পৌষ মেলা নিয়ে শান্তিনিকেতনে (Santiniketan) টালবাহানা দেখাতে শুরু করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ (Visva Bharati Authority)। প্রথমে করোনা (covid—19) মহামারির জন্য এবং পরে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের গা ছাড়া ভাব। এই দুয়ের ফাঁসে আর দেখা যায়নি শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা। তবে এবার পৌষ মেলা বাঁচানোর জন্য বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি, হস্তশিল্প সমিতি এবং বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয় শান্তিনিকেতন পৌষ মেলা বাঁচাও কমিটি।
করোনাকালের পর এবছর যখন সমস্ত কিছু স্বাভাবিক, সে সময়ও পৌষ মেলা নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর জেরে শান্তিনিকেতন পৌষ মেলা বাঁচাও কমিটির তরফ থেকে বুধবার বিশ্বভারতীর বলাকা গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। কমিটির সদস্যদের দাবি, উপাচার্য এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে শান্তিনিকেতন থেকে ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা তুলে দিতে চাইছে। কিন্তু তাঁরা তা হতে দেবেন না। পৌষ মেলা বাঁচানোর দাবিতে যেমন এদিন বিক্ষোভ সামিল হন এই মঞ্চের সদস্যরা, ঠিক সেইরকমই তাঁরা ২০১৯ সালে যে ডিপোজিট মানি দিয়েছিলেন ব্যবসা করার জন্য সেই টাকা ফেরতের দাবিও তোলেন। কারণ, সেই টাকার বিপুল অংশ এখনও পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ। যদিও সেই টাকা পৌষ মেলার পরেই ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে, তাঁদের তরফ থেকে জানানো হয় পৌষ মেলা করার জন্য যারাই এগিয়ে আসবেন তাঁদেরই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন তাঁরা।
পাশাপাশি, মেলার আয়োজনকে ঘিরে বোলপুর পুরসভার তরফ থেকে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। বোলপুর পুরসভার তরফ থেকে তাদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তারা মেলার আয়োজন করতে আগ্রহী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যাতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পূর্বপল্লীর মাঠে মেলার আয়োজন করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তার জন্য পুরসভার তরফ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠি পাঠানো হয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে। এখন সেই চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে বোলপুর পুরসভা।
সুজিত সাহা : মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বীরভূম ভ্রমণকালে বোলপুরে একটা শান্ত স্নিগ্ধ সবুজে ঘেরা অঞ্চল (বর্তমানে শান্তিনিকেতন) তাঁর খুব মনে ধরে। ১৮৬৩ সালে এই জায়গাটা কেনবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি, রায়পুরের জমিদার ভূবন মোহন সিনহার কাছে। বিশ বিঘা জমি ষোলো আনার বিনিময়ে পাট্টা নেন তিনি। মহর্ষির মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্জনে ঈশ্বর চিন্তা ও ধর্মালোচনার বিকাশ। ঠিক তার পঁচিশ বছর পর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন শান্তিনিকেতন ট্রাষ্টের। তার মাধ্যমেই একটি অতিথি ভবন, প্রার্থনা কক্ষ, এবং ধর্মীয় সাহিত্যের জন্য একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ থেকে ফিরে আসেন শান্তিনিকেতনে। সময়টা ছিল ১৯০১ সাল। পাঁচজন খুদে ছাত্রকে নিয়ে শুরু করেন ব্রক্ষ্ম বিদ্যালয়।
বাঁধাধরা গণ্ডির মাঝে আবদ্ধ থেকে পড়াশোনার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। প্রকৃতির মাঝে উন্মুক্ত শিক্ষাচিন্তা, শিশু মনকে সকল দিকে সমৃদ্ধ করার কথা ভেবেছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর চিন্তা চেতনায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ১৯১৮ সালে। এর তিনবছর পর অর্থাৎ ১৯২১ সালে ২৩ শে ডিসেম্বর আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে বিশ্বভারতীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরবর্তীকালে শিক্ষা ও শিল্পকলা ক্ষেত্রে দেশের মূল পীঠস্থান হয়ে ওঠে এই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্বোধনের ত্রিশ বছর পড়ে ১৯৫১ সালে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।
নানা চড়াই উৎরাই ও প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের গরিমায় আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কত স্বনামধন্য ব্যক্তিদের পাদস্পর্শে ধন্য হয়েছে এই পবিত্রভূমি।
বিশ্বের শিল্পী ও শিল্পানুরাগীদের কাছে মহা তীর্থক্ষেত্র হিসাবে স্থান পেয়েছে এই শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।