ফের বন্দে ভারতে (Vande Bharat Express) পাথর ছোড়ার অভিযোগ। অভিযোগ উঠেছে এক মদ্যপ ব্যক্তির বিরুদ্ধে, ঘটনাটি তামিলনাড়ুর (Tamilnadu)। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার (Arrest) করা হয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম গুবেন্দ্রন। মাইসুরু থেকে চেন্নাইয়ের দিকে যাচ্ছিল এক্সপ্রেসটি। পুদুরের কাছে রেলকর্মীরা ট্রেনের একটি জানলা ভাঙা অবস্থায় দেখেন। বন্দে ভারতে পাথর ছোড়ার অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নামেন আরপিএফ-র অফিসাররা।
এমনকি অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করে পুলিস। দক্ষিণে একাধিকবার এই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছিল দক্ষিণ-মধ্য রেল। বন্দে ভারত উদ্বোধনের পর থেকেই তেলঙ্গানা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ,পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক
রাজ্যে বারবার পাথর হামলা হয়েছে। এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন তামিলনাড়ুর। তাই বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছিল বন্দে ভারতে পাথর ছুড়লে অভিযুক্তের ৫ বছরের জেল হবে। তবে এই পদক্ষেপ করেও শেষরক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
আরপিএফ সূত্রে খবর, তিরুমানজোলাইয়ের কাছে ট্রেনে পাথর ছোড়া হয়েছিল। রেললাইনের ধারে বসে মদ্যপান করছিলেন গুবেন্দ্রন। সেই সময়ই বন্দে ভারতে পাথর ছোড়েন তিনি। পাথর ছোড়ার কথা গুবেন্দ্রন স্বীকার করেছেন, দাবি আরপিএফ অফিসারদের।
বন্দে ভারত (Vande Bharat) এক্সপ্রেসে ঢিল-পাথর ছোড়ার ঘটনা থেকে বিরত রাখতে, মঙ্গলবার সতর্কবার্তা জারি করল দক্ষিণ-মধ্য রেল (South Central Railway)। এই ধরনের দুষ্কৃতীমূলক ঘটনা যাতে কোনওরকম প্রশ্রয় না পায় কিংবা আর যাতে না ঘটে সেই জন্যই জনসাধারণের উদ্দেশে এই বার্তা জানানো হয়েছে। রেল সূত্রে খবর, কাজিপেট, খাম্মাম, কাজিপেট-ভঙ্গির এবং এলুরু-রাজমুন্দ্রি শাখায় বন্দে ভারতকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকবার পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন্দে ভারতের উদ্বোধন। তারপর থেকেই তেলেঙ্গানা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং পশ্চিমবঙ্গে বন্দে ভারতে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। রেল আইনের ১৫২ ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার কথা উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই অপরাধে অভিযুক্তদের পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল পাঠানো হবে।
মোদি সরকারের দৌলতে ভারতবাসী পেয়েছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (Vande Bharat Express)। এই সেমি-হাই স্পিড ট্রেনটি চালু হওয়ায় কতটা যে সুবিধা পেয়েছে ভারতবাসী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কোনও সন্দেহ নেই, ভারতে চালু ট্রেনগুলির মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস একটি প্রিমিয়াম ট্রেন। এটিতে যেমন রয়েছে অত্যাধুনিক ফিচার, তেমনি ট্রেনের সিট অত্যন্ত আরামদায়ক হওয়ার পাশাপাশি সুরক্ষার দিকেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ নজর। কারণ ট্রেনে রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা (Cctv Camera)। এছাড়াও রয়েছে স্লাইডিং দরজা-সহ বায়ো টয়লেট। যাত্রীদের রুচি-সম্মত ভালো মানের খাবারও দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ভারতবাসী কি সত্যি এই ধরণের ট্রেন ডিজার্ভ করে?
কারণ প্রায়ই দেখা গিয়েছে, ট্রেনের জিনিসের অপব্যবহার নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও একাধিকবার দেখা গিয়েছে, বন্দে ভারতে ইট, পাথর-বৃষ্টি হতে। বন্দে ভারত চালু হওয়ার পরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্দে ভারতকে উদ্দেশ্য করে ইট, পাথর ছোঁড়া হয়েছে। ফলে বারবার রেলওয়ের সম্পত্তির ক্ষতি করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পাথর হামলা দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানায়। তবে শুধু বন্দে ভারতেই নয়, আরও একাধিক ট্রেন যেমন- রাজধানী, শতাব্দী এক্সপ্রেসেও একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে।
ফলে রেলওয়ের সম্পত্তির সুরক্ষা, ট্রেনকে পরিষ্কার রাখার কাজ যে শুধু রেলকর্মীদের, এমনটা কিন্তু নয়, রেলযাত্রীদেরও ট্রেনের বিভিন্ন জিনিসের ব্যবহার সঠিকভাবেই করা উচিত। সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা গিয়েছে একটি মেয়ে খাবার রাখার ট্রে-এর উপর বসে সিটের উপর পা রেখেছেন। জানা গিয়েছে, ভিডিওটি কাটরা-দিল্লি বন্দে ভারতের। এরপর এই ভিডিও ভাইরাল হতেই রেলওয়ের তরফে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে। ট্যুইট করে বলেছে, 'রেলওয়ে সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ করা সবারই দায়িত্ব। এটা শুধুমাত্র রেলকর্মীদের জন্য নয়, রেলযাত্রীদেরও এতে সমানভাবে অংশগ্রহণ করা উচিত। সুরক্ষার ক্ষেত্রে দু'পক্ষেরই অবদান থাকলে রেল পরিষেবা আরও উচ্চমানের হয়ে উঠবে।' রেলওয়ের তরফে তাই রেলযাত্রীদের অনুরোধও করা হয়েছে যে, সবাই যেন একজন দায়িত্ববান রেলযাত্রী হয়ে ওঠেন।
এসব ঘটনার পর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, সত্যিই কি আমরা এমন প্রিমিয়াম ট্রেনগুলোর জন্য যোগ্য?
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (Vande Bharat) চালানোর দায়িত্ব এল প্রথম মহিলা চালকের উপর। এশিয়ার প্রথম লোকোপাইলট সুরেখা যাদব। মুম্বই-পুনে-সোলাপুরের বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালানোর দায়িত্ব পান তিনি। ২০২১-র একটি নারী দিবসের সাক্ষাৎকারে তিনি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন, তাঁর এই ইচ্ছাপূরণ করছে ভারতীয় রেল।
১৯৮৯ সালে একজন সহকারী ট্রেন চালক (Loco Pilot) হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সুরেখা। সাতরার বাসিন্দা সুরেখা যাদব ট্রেন চালক হিসেবে কর্মজীবন শুরুর আগে স্থানীয় সেন্ট পল কনভেন্ট থেকে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি। প্রায় ৩৪ বছর ধরে ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে সুরেখা যাদবের।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি জানান, 'তাঁকে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে ট্রেন চালক হিসেবে নিযুক্ত করার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ ভারতীয় রেলের কাছে। প্রথম দিনেই একদম ঠিক সময়ে সোলাপুর থেকে ট্রেন ছেড়েছিলেন তিনি এবং সময়ের পাঁচ মিনিট আগেই ট্রেন নিয়ে মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি স্টেশনে পৌছন।'
বাংলায় আবারও একটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের (Vande Bharat Express) যাত্রা শুরু হতে পারে। হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ির পর এবার চালু হতে হাওড়া-পুরী (Howrah-Puri) বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, আজ চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি থেকে ট্রেনের সেটটি পাঠানো হয়েছে। সম্ভবত আগামী মাসেই শুরু হতে পারে রাজ্যের সেমি হাইস্পিড দ্বিতীয় এক্সপ্রেসের পথ চলা। মাসখানেক ঘুরতে না ঘুরতেই রেল সূত্রে খবর,'ফের রাজ্য আরও একটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস পেতে চলেছে। এবার হাওড়া স্টেশন থেকে জগন্নাথধাম (Jagannath Temple) পুরীগামী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের পথচলা শুরু হবে।'
প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের পুরী ভ্রমনের কথা মাথায় রেখে এই ট্রেনটি চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব কম সময়ের মধ্যে পুরী যাওয়া যাবে এই সেমি হাইস্পিড এক্সপ্রেসে। জানা গিয়েছে, মাত্র ৫-৬ ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন পুরীতে। খুব সীমিত স্টেশনে দাঁড়াবে ট্রেনটি।
তবে কবে থেকে ট্রেনটি চালু হবে, তা এখনও জানা যায়নি। ভাড়াই বা কত হবে, কোন কোন স্টেশনেই বা দাঁড়াবে এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস – সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
১৬ জানুয়ারি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে (Vande Bharat Express) উঠে সেলফি তুলতে গিয়ে বিপত্তি। ট্রেনের দরজা আটকে বিজয়ওয়ারা পৌঁছে যান তিনি। ঘটনাটি ঘটে রাজামুন্দ্রি রেলস্টেশনে। বিশাখাপত্তনম থেকে বিজয়ওয়ারাগামী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে রাজামুন্দ্রি স্টেশন থেকে ওঠেন ওই ব্যক্তি। উপলক্ষ্য সেলফি (Selfie Case) তোলা। কিন্তু সেই সময় ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সেই ট্রেন বিজয়ওয়ারা পৌঁছলে তাঁকে আবআর রাজামুন্দ্রি ফিরতে হয়েছে। এই কীর্তি ভাইরাল হওয়ায় টনক নড়েছে ভারতীয় রেলের।
ভারতীয় রেলের এক কর্তা জানান, ওই ব্যক্তি বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠেছিলেন। ভাইরাল হওয়া সেই ব্যক্তি জানান, তিনি শুধু সেলফি তুলতে উঠেছিলেন। আচমকা দরজাটি বন্ধ হয়ে যাবে তিনি বুঝতে পারেনি। এছাড়া তিনি এটাও বলেন তিনি কীভাবে ফিরবেন এবং ট্রেন থেকে নামবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তাই তিনি টিকিট কেটে ফিরতি ট্রেনে আবার ফিরে আসেন।
রেল জানিয়েছে, ব্যক্তি ভুল বুঝতে পারায় তার কাছ থেকে কোনও জরিমানা আরোপ করেনি রেল। এই সেমি হাইস্পিড ট্রেন বাংলায় চালু হওয়ার পর থেকে বিতর্কে জড়িয়েছে। যাত্রাপথে বন্দে ভারত লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি।
৩ জানুয়ারি হাওড়া-এনজেপি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে (Vande Bharat Express) পাথর ছোড়ার ঘটনায় চিহ্নিত অভিযুক্তরা। ট্রেনের সিসিটিভিতে ধরা ফুটেজ প্রকাশ্যে এনে এই দাবি করেছে পূর্ব রেল। জানা গিয়েছে, পাথর ছুঁড়বে (Stone Pelting) বলেই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিলেন অভিযুক্তরা। তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে আরপিএফ। বৃহস্পতিবার জানান পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী (CPRO)। এমনকি তাৎপর্যপূর্ণভাবে পূর্ব রেল সূত্রে খবর, ৩ জানুয়ারি বন্দে ভারতে পাথর বাংলা নয়, বরং বিহার থেকে ছোড়া হয়েছে। আলুয়াবাড়ি পেরিয়ে কাটিহার ডিভিশনের মানগুরজান এলাকা দিয়ে ট্রেনটি যাওয়ার সময় এই পাথর ছোড়ার ঘটনা।
এদিন প্রেস রিলিজের মাধ্যমে পূর্ব রেল জানিয়েছে, রেল যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সদা প্রস্তুত। যাত্রাপথে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোড়ার ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছে আরপিএফ। তাঁদের সাহায্য করছে রাজ্য পুলিস এবং জিআরপি। ইতিমধ্যে বন্দে ভারত ট্রেনের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পাথর কারা ছুড়েছিল চিহ্নিত করতে পেরেছে আরপিএফ। তাঁদের পরচিয় জানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অভিযুক্তদের পরিচয় জানতে রাজ্য পুলিস এবং রেল পুলিসকেও আবেদন জানানো হয়েছে।
ভারতীয় রেল এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস এবং নিরীহ যাত্রীদের শারীরিক নিগ্রহের নিন্দা জানায়। এই ধরনে কুকর্ম রুখতে আরপিএফ তৎপর হয়েছে।
মালদহের পর এবার নিউ জলপাইগুড়ি, ফের বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে (Vande Bharat Express) পাথর ছোড়ার ঘটনা। এই তাণ্ডবের (Stone pelting) জেরে ক্ষতিগ্রস্ত সেমি হাইস্পিড এই ট্রেনের দুটি কামরার জানলা, আতঙ্কিত যাত্রীরা। রেল যেহেতু জাতীয় সম্পত্তি, আর জনগণের স্বার্থেই পরিষেবা দেয়, তাই কোনও মানুষের উচিৎ নয় এই কাজ করা। এমনটাই মন্তব্য রেল যাত্রীদের (Railway Passenger)। এদিকে, ৩ জানুয়ারির এই ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। ট্রেনে পাথর ছোড়া কমাতে সচেতনতার উপরেও জোর দিতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ।
জানা গিয়েছে, ৩ জানুয়ারি বেলা দেড়টা নাগাদ হাওড়া থেকে রওনা দিয়ে এনজেপি স্টেশনে ঢোকার মুখেই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই এক্সপ্রেস ট্রেনের সি-থ্রি এবং সি-সিক্স কামরার জানালার কাঁচ। ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্ডার সেকশন অফ ১৫৪ রেলওয়েজ অ্যাক্টে এনজেপি আরপিএফে লিখিত অভিযোগ দায়ের।
রেলের তরফে জানা গিয়েছে, বন্দে ভারতের নিরাপত্তার দিকটি সুনিশ্চিত করতে তৎপর রেল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বন্দে ভারতকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনায় এবার তদন্তে নেমছে আরপিএফের ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ বা সিআইবি অন্যদিকে, এই ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে জিআরপি এবং রাজ্য পুলিসের সহযোগিতাও চেয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
ভিক্টোরিয়া-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হাওড়া স্টেশনে। মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata) সামনেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের 'জয় শ্রী রাম' (Jay Shree Ram) স্লোগান। আর তাতেই শুক্রবার সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং উষ্মা দেখিয়ে বন্দে ভারত ট্রেনের (vande Bharat Train) সূচনা অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে উঠতে অস্বীকার করেন মুখ্যমন্ত্রী। মূল মঞ্চের পাশে বাঁধা মঞ্চ বসেই সপার্ষদ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। যদিও তাঁকে মঞ্চে আসতে অনুরোধ করেন রেলমন্ত্রী এবং শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। কিন্তু সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দেন মমতা।
এদিকে, এদিন আহমেদাবাদ থেকে ভার্চুয়ালি বন্দে ভারত ট্রেনের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মাতৃ বিয়োগের কারণে ঘোষিত সূচিতে সামান্য বদল ঘটে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে হাওড়া স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তোলা জয় শ্রীরাম স্লোগান ঘিরে চর্চা তুঙ্গে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, 'মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। উনাকে ধন্যবাদ এসেছিলেন। রাগ মতো কিছু হয়নি। যারা কর্মী-সমর্থক, তাঁরা উৎসাহে স্লোগান দিয়েছি। এটা কোনও বড় কথা নয়। উনি মঞ্চে এসে বসেননি, এটাও মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
পাল্টা কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের তপ,'সৌজন্য বিজেপি জানে না। যেখানে সেখানে রাম নাম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করছে না, বরং শ্রী রামকে অপমান করছে। অসভ্য, বর্বর দল বিজেপি সভ্যতা জানে না। ওরা কী রামের পেটেন্ট নিয়ে রেখেছে? কিছু লুম্পেনদের নিয়ে গিয়ে অনুষ্ঠানে ভিড় করায়।'
একইভাবে আক্রমণাত্মক রাজ্যের অপর এক মন্ত্রী সুজিত বসু। তিনি জানান, সব বিষয়ের পরিমিত বোধ থাকে। যেটা করেছে সেটা খারাপ, বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না। একটা উদ্বোধনী প্রোগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছেন, সেখানে সংযত থাকা জরুরি।'
থেমে থাকেননি রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর খোঁচা, 'একটা বড় প্রকল্প ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকার কাজ বাংলা তথা মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা ফেডারাল কাঠামোর জন্য একদম সামঞ্জস্য পূর্ণ নয়। এই ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা করছি। একটা ভালো উনার মঞ্চে নিচে বসার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। আগামি দিনে মঞ্চের নিচেই বসতে হবে।'
শুক্রবার বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের (Vande Bharat Express) সঙ্গেই চাকা গড়াল জোকা-তারাতলা মেট্রোর। দীর্ঘ সাড়ে ছয় কিমি এই পথে (Joka-Taratala Metro) রয়েছে ছয়টি স্টেশন। এই স্টেশনগুলো জোকা, ঠাকুরপুকুর, সখেরবাজার, চৌরাস্তা, বেহালা বাজার এবং তারাতলা। এই মেট্রো পরিষেবা চালুর সঙ্গেই জোকা থেকে শহর কলকাতার দুরত্ব অনেকটাই কমল। এমনটাই দাবি বেহালাবাসীর। এদিন হাওড়া স্টেশনের অনুষ্ঠান শেষে মেট্রো রেল কর্তা এবং সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে নিয়ে জোকা চলে আসেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Rail Minister Ashwini Vaishnav)। চেপে বসেন মেট্রোতে, সপার্ষদ তাঁকে নিয়ে তারাতলার দিকে ছুটতে শুরু করে মেট্রো। এদিন মেট্রোয় চড়ে স্থানীয় স্কুলের পড়ুয়ারা। তাঁদের হাতে থ্যাঙ্ক ইউ মোদীজি প্ল্যাকার্ড দেখা গিয়েছে।
তবে এদিন কোনও স্টেশনেই দাঁড়ায়নি এই রুটের প্রথম মেট্রো। রেলমন্ত্রী-সহ মেট্রোর অন্য কর্তাদের নিয়ে সোজা গিয়ে দাঁড়ায় তারাতলা স্টেশনে। জানা গিয়েছে, জোকা-তারাতলা এই রুটের ভাড়া ৫-২০ টাকা। সর্বোচ্চ ভাড়া ২০ টাকা, সর্বনিম্ন ৫ টাকা। শুক্রবার জোকা স্টেশনে মেট্রো স্মার্ট কার্ডের জি২০-এর প্রতীক দেওয়া নতুন নকশাও উন্মোচন করেন তিনি।
ধাপে ধাপে ধর্মতলা পর্যন্ত এই রুটের লাইন সম্প্রসারণ হবে। যদিও এখন এই রুটে একটাই ট্রেন চলবে। সেই ট্রেনই আবার তারাতলা থেকে যাত্রী নিয়ে জোকায় ফিরবে।
মঞ্চ বাঁধা ছিল, ছিল চূড়ান্ত ব্যবস্থাপনা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর (PM Narendra Modi) মাতৃবিয়োগে ভার্চুয়ালি গড়াল হাওড়া-এনজেপি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের (Vande Bharat Express) চাকা। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পর আহমেদাবাদ থেকে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে এই ট্রেনের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। হাওড়ার মূল মঞ্চে তখন উপস্থিত রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Rail Minister), শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার প্রমুখরা। মূল মঞ্চের পাশে বাঁধা মঞ্চে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (CM Mamata)। ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী সবুজ পতাকা নাড়াতেই ধীরে ধীরে হাওড়া স্টেশনের ২২ নম্বর স্টেশন ছাড়তে শুরু করে বন্দে ভারত। ঐতিহাসিক সেই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেন অনুস্থান্সথলে উপস্থিত রেলকর্তারাও।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢুকতেই মুখ্যমন্ত্রীকয়ে দেখে জয় শ্রীরাম স্লোগান তোলেন উপস্থিত বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। এই ঘটনায় স্পষ্টতই বিব্রত দেখায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামেন রেলমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তাঁরা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে স্লোগান থামাতে বলেন। কিন্তু তাতেও কাটে না বিড়ম্বনা। উলটে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সূচনা অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চ বয়কট করেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যপাল এবং রেল মন্ত্রী এগিয়ে এসে তাঁকে অনুরোধ করলেও বরফ গলে না। মূল মঞ্চের পাশে বাঁধা মঞ্চে বসেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মমতা। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার পৌরহিত্য করেন রেলমন্ত্রী। বন্দে ভারতের সূচনার আগে মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, 'আজ আপনার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে অত্যন্ত দুঃখ এবং অপূরণীয় ক্ষতির দিন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আপনাকে কাজ এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রকাশের শক্তি দেন।'
মমতা জানান, 'আপনি ঐকান্তিক ভাবে চেয়েছিলেন এই কর্মসূচিতে আসতে। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু মায়ের শেষকৃত্যের সমাপ্তির পরেই আপনাকে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে হয়েছে। আমি এখন আপনাকে বিশ্রাম নিতে বলব।' পাশাপাশি এদিন প্রধানমন্ত্রী বাংলার যে কটি রেল প্রকল্পের সূচনা করেন, তার মধ্যে চারটি প্রকল্প রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চূড়ান্ত করেছিলেন। এদিন ভাষণে সেই কথাও স্মরণ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
অপরদিকে, বন্দে ভারত উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'জোকা-বিবাদী মেট্রো তৈরিতে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। নমামি গঙ্গা প্রকল্পে আদি গঙ্গা সংস্কারের কাজ চলছে। নদী পরিষ্কার রাখতে আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থায় জোর দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় রেলের পরিকাঠামোকে আধুনিক করতে রেকর্ড বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ভারতীয় রেলকে বিমান পরিষেবার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনও সে ভাবেই তৈরি করা হচ্ছে। ভারতের উন্নতির জন্য রেল পরিষেবার উন্নয়ন জরুরি। এই লক্ষ্যে ৪৭৫ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের বড় ভূমিকা হবে।'
হাওড়া স্টেশনে (Howrah) বহু প্রতীক্ষিত বন্দে ভারত (Vande Bharat Express) এক্সপ্রেসের সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই কর্মসূচি উপলক্ষে শুক্রবার বঙ্গ সফরে আসছেন তিনি। হাওড়া স্টেশনের ২২ কিংবা ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে মূল অনুষ্ঠান। কিন্তু অনুষ্ঠানের একদিন আগে থেকেই কড়া নিরাপত্তা বলয়ে হাওড়া স্টেশন। স্টেশনের ভিতরের নিরাপত্তার দায়িত্বে এসপিজি আধিকারিকরা আর বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে আরপিএফ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্টেশনের ২১,২২ এবং ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম যাত্রীদের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi) স্টেশন ছাড়ছেন, এই নির্দেশ কার্যকর থাকবে।
জানা গিয়েছে, বিশেষ পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেল আধিকারিক হলেও সেই আই কার্ড ছাড়া প্রবেশ নয়। পাশাপাশি হাওড়া স্টেশনের যাত্রী নিবাস, এসপিজির দখলে। সাধারণ যাত্রী কোনভাবেই প্রবেশ করতে পারবেন না ২১,২২ এবং ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। একপ্রস্থ মক ড্রিল সেরে রেখেছে এসপিজি। প্রবেশাধিকার নেই সংবাদমাধ্যমের কর্মীদেরও।
স্টেশন চত্বরে থাকা এবং প্ল্যাটফর্মে ঢোকা প্রতি গাড়িতে চলছে চেকিং, বসছে এক্স-রে ব্যাগ স্ক্যানার। দমকলের একটি গাড়ি আপাত ভিত্তিতে রাখা হয়েছে ভিতরে। দমকলের আরও একটি গাড়ি থাকবে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ঠেকাতে। চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুলেন্সের বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হবে জানা গিয়েছে আরপিএফ সূত্রে। রেলের ডিআরএম-র পাশাপাশি আরপিএফ সমন্বয় রেখে কাজ করছে। এমনটাই সূত্রের খবর। এদিকে, হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস তিনটি স্টেশনে থামবে। এমনটাই রেল সূত্রে খবর।