দেশব্যাপী চলতে থাকা ভুয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করল ইউজিসি(UGC)। সেই তালিকায় রয়েছে ২১টি ভুয়ো বিশ্ববিদ্যালয়(university)। পাশাপাশি এই রাজ্যেরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভুয়ো ঘোষণা করল ইউজিসি। এই ভুয়ো দুটি বিশ্ববিদ্যালয় শহর কলকাতার। তার মধ্যে একটি হল চৌরঙ্গির ইন্ডিয়ান ইনস্টিউট অব অল্টারনেটিভ মেডিসিন এবং অন্যটি ঠাকুরপুকুরের ইনস্টিটিউট অব অল্টারনেটিভ মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(university grants council) জানিয়ে দিয়েছে, অনুমোদনহীন এই ভুয়ো বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পড়ুয়াদের(student) ডিগ্রি বা শংসাপত্র(certificate) দিতে পারবে না।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ভুয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে রাজধানী দিল্লির ৮ টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরপ্রদেশের ৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি ওড়িশায় ২ টি এবং অন্ধ্রপ্রদেশ, পুদুচেরি, মহারাষ্ট্র, কেরালা ও কর্নাটকে একটি করে ভুয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ পেয়েছে ইউজিসি। বৃহস্পতিবার ইউজিসি-র তরফে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এই ভুয়ো বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিষয়ে পড়ুয়াদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এগুলি ইউজিসি স্বীকৃতিহীন প্রতিষ্ঠান, ইউজিসির আইন ভেঙে কাজ করছিল।
আবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (university) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। ওয়াই-ফাই কেলেঙ্কারির পর লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ল্যান নিয়ে এবার দুর্নীতির অভিযোগ। অস্থায়ী কর্মীকে দিয়ে টেন্ডার করানো এবং কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ-এর অভিযোগ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনায় জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতির আঁতুড়ঘর কটাক্ষ বিজেপির (BJP)। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গা দুর্নীতির আখড়া এটা মেনে নেওয়া যায় না প্রতিক্রিয়া তৃণমূলের। অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস মালদহের (Maldaha) জেলা শাসকের।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ এবং এপ্রিল মাসে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়। এক কোটি ৬১ লক্ষ টাকার এই টেন্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এবং এন্টিভাইরাস কেনার জন্য বরাদ্দ হয়। সেই টেন্ডার আহ্বান করেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসালটেন্ট ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার মাসুর আলম। যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অস্থায়ী কর্মী। একজন অস্থায়ী কর্মী কীভাবে এত টাকার টেন্ডার আহ্বান করেন, তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।
এমনকি জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম না মেনে টেন্ডার করে পুরো টাকাটাই আত্মসাৎ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর যার বিরুদ্ধে আইন বহির্ভূতভাবে টেন্ডার ডাকার অভিযোগ সেই মাসহূর আলম জানান, 'নিয়মে আমি টেন্ডার করতে পারি না। আমি একজন অস্থায়ী কর্মী আমি টেন্ডার করতে পারি না। কিন্তু ভিসির অর্ডার ফলো করেছি। চাকরির খাতিরে আমি করতে বাধ্য হয়েছি। ভিসিকে আমি জানিয়েছিলাম যে আমার এটা করা উচিত না কিন্তু তার নির্দেশে আমি করতে বাধ্য হয়েছি।'
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতির এই অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। দক্ষিণ মালদহ সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি পার্থসারথী ঘোষ বলেন, 'গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতির আতুরঘর। শিক্ষক নিয়োগ থেকে ওয়াই-ফাই এখন দেখছি ল্যান সবকিছুতেই দুর্নীতি, এর পেছনে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। প্রতিটা ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানো উচিত। তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল তথ্য উঠে আসবে।'
তবে দুর্নীতির এই ইস্যুতে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ালেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, "জন্ম লগ্ন থেকেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মালদহ সফরে এসে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভৎসনা করেছিলেন। তারপরও ওদের ঘুম ভাঙেনি। একের পর এক এই ধরনের কাজ করছে। জেলাশাসক তদন্ত করবেন যারা অভিযুক্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটা পবিত্র জায়গা দুর্নীতির আখড়া এটা মেনে নেওয়া যায় না।"
মঙ্গলবার সকাল থেকেই ধুন্ধুমার কাণ্ড বর্ধমান (Burdwan) বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের তালা ইট দিয়ে ভেঙে ও গেট টপকে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন এসএফআইয়ের (SFI) সদস্যরা। ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিন মূলত দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও বেনিয়ম নিয়ে অভিযোগ তুলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় (university) অভিযানের ডাক দিয়েছিল এসএফআইয়ের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটি। তবে বেলা বাড়তেই তাঁদের এই প্রতিবাদ মিছিল ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিন কার্জন গেট (Curzon Gate) থেকে বিশ্ববিদ্যালয় গেটে মিছিল পৌঁছলে রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিক্ষোভকারীদের আটকাতে নিরাপত্তারক্ষীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা মেরে দেয়। কিন্তু এরপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের তালা ইট দিয়ে ভেঙে ও গেট টপকে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন এসএফআই-র সদস্যরা। এখানেই শেষ নয়, কার্যত উপাচার্যের কার্যালয়ের গেট আটকে তার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চালান তাঁরা। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্যের আশ্বাসে উঠে যায় এসএফআইয়ের বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাড়ি চত্বর।
জানা যায়, বর্ধমানের বাদামতলা (Badamtala) থেকে শুরু হয় এসএফআইয়ের মিছিল। এরপর কার্জন গেট, বিসি রোড (B.C Road) হয়ে সেই মিছিল বেলা ১২ টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশদ্বারে গিয়ে পৌঁছয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের তালা খোলার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন এসএফআই কর্মীরা।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে (Raiganj University) সব ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার (BJP) আন্দোলন ঘিরে ধুন্ধুমার রায়গঞ্জে (Raiganj)। শুক্রবার প্রতিবাদ মিছিলে বের হলে মাঝপথেই মিছিল আটকায় পুলিস (Police)। এরপরই পুলিসের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
জানা যায়, এদিন প্রথমে রায়গঞ্জের বিদ্রোহী মোড়ে পুলিসের তরফে মিছিল আটকানো হয়। সেখানেই ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিসের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। রাস্তার ওপর বিজেপির কর্মীরা বসে পড়েন। ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় ওই এলাকায়। কিছুক্ষণ পরই সেখানে উপস্থিত হন রায়গঞ্জ লোকসভার সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। এরপর তাঁর নেতৃত্বে মিছিল এগোতে থাকলে সেই মিছিল ফের আটকায় পুলিস। কিন্তু নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের ফলে একসময় পুলিস পিছু হটে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ জানান, "রাজ্যজুড়ে একের পর এক তৃণমূল নেতৃত্ব গ্রেফতার হওয়া শুরু হয়েছে। রাজ্যে সমস্ত চাকরির ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ থেকে পিএইচডি, বিল্ডিং তৈরি থেকে সর্বত্র দুর্নীতি হয়েছে। তাই এদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা যারা দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের কেউ পার পাবেন না। আমরা চাই অতি দ্রুত কেন্দ্রীয় সংস্থা রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত করতে আসুক।"