
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতিবাদ সত্যাগ্রহ আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করা হলেও, মঙ্গলবার দিনশেষে তা আর সত্যাগ্রহ বলা চলে না। একদিকে যেমন সোমবার রাজঘাটে, দিল্লি পুলিশ ও সিআরপিএফ জওয়ানদের তাড়া খায় তৃণমূল, অন্যদিকে মঙ্গলবার কৃষিভবনে অবস্থান বিক্ষোভ করতে গিয়ে ফের দিল্লি পুলিশের হেনস্তার মুখে তৃণমূল উচ্চ নেতৃত্ব সহ সংসদরা। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করবেন বলে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূল সাংসদরা।
এরই পাল্টা ওই বিক্ষোভ তুলতে এলে পুলিশ রীতিমতো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সমস্ত তৃণমূল নেতৃত্বকে টেনে-হিচড়ে চ্যাংদোলা করে প্রিজন ভ্যানে তুলে আটক করে। প্রায় দু'ঘণ্টা পর ওই সংসদের মুখার্জিনগর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই এর পরেই পাল্টা গর্জন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। থানা থেকে বেরিয়েই দিল্লিতে হেনস্থার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কলকাতায় রাজভবন অভিযানের ডাক দেন অভিষেক। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টের সময় রাজভবন অভিযানের কথা ঘোষণা করেন তিনি।
থানা থেকে বেরিয়ে অভিষেক আরও বলেন, 'কৃষি ভবনে ঢোকার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়ে দেন তিনি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা করবেন না। বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি সেই অনুরোধ রাখেননি। আমরা সন্তানহারাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করলেও তিনি রাজি হননি।' অভিষেক আরও বলেন, 'বেশ খানিকক্ষণ বসে থাকার পর আমরা জানতে পারি মন্ত্রী আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন না। তিনি বেরিয়ে গিয়েছেন। সন্তানহারাদের সঙ্গে দেখা না করে পালিয়ে গেলেন মন্ত্রী।'
কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ও ১০০ দিনের টাকাও আবাস যোজনায় বকেয়ার দাবিতে, দিল্লিতে কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল। সোমবার ও মঙ্গলবার অর্থাৎ অক্টোবর ২ এবং ৩ তারিখ গ্রহণ করা হয়েছিল এই আন্দোলন। এই আন্দোলন সত্যাগ্রহ আন্দোলন হলেও কোনও ভাবেই তা আর সত্যাগ্রহ আন্দোলন রইল না। একদিকে সোমবার রাজঘাটে পুলিশের তাড়া খেল তৃণমূল, অন্যদিকে কৃষি ভবনে জোর করে চ্যাংদোলা করে প্রিজন ভ্যানে তোলা হলো তৃণমূল সাংসদ, নেতৃত্ব সহ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। এ ঘটনার পর এবার সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষি ভবন থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন সংসদদের প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়, আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় মুখাজিনগর থানায়। এরপরই মুহূর্তে এ ঘটনা বৃহৎ আন্দোলনের আকার নেয়। এর পরেই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লড়াইয়ের বার্তা দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের পোস্টে লেখেন, 'আজ গণতন্ত্রের জন্য একটি অন্ধকার, অশুভ দিন। বাংলার জনগণের প্রতি বিজেপির ঘৃণা, দরিদ্রদের অধিকারের প্রতি তাদের অবজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়েছে।' তিনি আরও লেখেন, 'কিন্তু আমরা ভয় করব না ভয় করব না, দু বেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না।'
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে অর্থাৎ ১০০ দিনের ও আবাস যোজনার বকেয়া টাকার দাবিতে দিল্লির বুকে আন্দোলন সূচনা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল মঙ্গলবার এই আন্দোলনের শেষ দিন ছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন সাংসদরা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করবেন বলে কর্মসূচিও ছিল। কথামতো মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সাংসদরা কৃষি ভবনে পৌঁছলেও নিরঞ্জন জ্যোতি তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি বলে অভিযোগ। এরপরই সেখানে তাঁদের রীতিমতো জোরপূর্বক প্রিজন ভ্যানে তুলে তৃণমূল সাংসদদের আটক করা হয় এবং অবস্থান বিক্ষোভ থেকে তাদের হটিয়ে দেওয়া হয়।
যদিও এর পরেই তৃণমূলের অভিযোগ অস্বীকার করে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতি লেখেন, ' আজ আড়াই ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। তৃণমূল সাংসদদের জন্য অপেক্ষা করে সাড়ে ৮টায় দফতর ছেড়েছি। আমি জানতাম, তৃণমূলের সাংসদ এবং মন্ত্রীরা সন্ধ্যা ৬টায় দেখার করার জন্য সময় নিয়েছিলেন।'
ওদিকে পাল্টা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি খারিজ করলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেব এক্সে লেখেন, ‘‘আপনি এত বড় মিথ্যে বলছেন যে, আপনার ডুবে মরা উচিত। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাংসদেরা আপনার দফতরে রয়েছে। আপনি দেখা করেননি। কিছু লজ্জা করুন। বাংলার মানুষ দেখছে আপনার ছলনা। ২০২৪ সালে আপনারা নিশ্চিত ভাবে শূন্যে পৌঁছবেন। সাংসদ মহুয়া মৈত্রও অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিথ্যে বলছেন।'
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ তৃণমূল সাংসদদের তথা তৃণমূল উচ্চ নেতৃত্বের। এই বিক্ষোভ তুলতে গেলেই হুলুস্থুল কান্ড বেঁধে যায় দিল্লিতে। সেসময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সমস্ত সাংসদকে টেনে-হিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে অবস্থান বিক্ষোভ থেকে হটিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ মহিলা সংসদেরও মারধর করা হয়। এর পরই তাদেরকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে অর্থাৎ ১০০ দিনের টাকা ও আবাস যোজনার বকেয়া টাকার দাবিতে অক্টোবর দুই ও তিন তারিখ দিল্লিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করে তৃণমূল। সেই মত আজ অর্থাৎ শেষ দিন দিল্লিতে যন্তর মন্তরে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। এদিন সন্ধ্যেবেলায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ হবার কথা ছিল। সেই মতোই যন্তর মন্তর থেকে পায়ে হেঁটে দিল্লির কৃষিভবনে পৌঁছায় তৃণমূল। সেখানে তৃণমূল নেতৃত্বরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে, এরপর তাদের জানানো হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।
এরই পাল্টা সংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি দেখা না করে যাবেন না এরপরই বেধে যায় হুলুস্থুল কান্ড। জোরপূর্বক পুলিশ টেনে হিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে তৃণমূল সাংসদ সহ সমস্ত উচ্চ নেতৃত্বদের আটক করে নিয়ে যায় মুখার্জি নগর থানায়। ভিডিও কিছুক্ষণ আটকে রাখার পর তাদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগামীর কর্মসূচি গ্রহণ করেন। পাশাপাশি এর পূর্বে কখনোই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রিজন ভ্যানে ওঠেননি।
দিল্লির যন্তর মন্তরের মঞ্চে মঙ্গলবারও অবস্থান তৃণমূল কংগ্রেসের। সোমবার তৃণমূলের কর্মসূচিতে বারবার বাধা দিয়েছে দিল্লি পুলিস। এদিনও তৃণমূল কর্মীরা রান্নার গ্যাসের দাম, পেট্রোলের দাম, কেন্দ্রের প্রকল্পের টাকা নিয়ে বঞ্চনা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার হাতে যন্তর মন্তরে আসেন।
মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে যন্তর-মন্তরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে তৃণমূল। এক্স প্ল্যাটফর্মে তৃণমূল কংগ্রেস লেখে, "সুবিচারের দাবিতে গর্জন করছে বাংলা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ধর্না শুরু হয়েছে। বাংলার মানুষকে অধিকারের দাবিতে লড়াই করার থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।"
বাংলার জব কার্ড হোল্ডারদের ১০০ দিনের কাজের টাকা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে, একাধিক আর্থিক দাবি নিয়ে রাজধানীর যন্তর মন্তরে এই কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে 'মিশন দিল্লি'।
পার্থ ভৌমিক (সেচমন্ত্রী: প.ব.সরকার ): রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ এবং ১০০ দিনের কাজের পাওনার জন্যই আমাদের দিল্লি যাত্রা। দীর্ঘদিন ধরে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছে দরবার করেছেন, নিজে ব্যক্তিগত ভাবে গিয়েছেন। অনুরোধের পরেও রাজ্যের গরিব ১০০ দিনের কর্মীরা যখন তাদের প্রাপ্ত টাকা পায়নি তখনই আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করেছিলেন একেবারে সদলে দিল্লিতে গিয়ে অবস্থান আন্দোলন করবেন। সেই মোতাবেক তিনি বেশ কয়েক মাস আগে জানিয়ে দিয়েছিলেন আমরা তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা কর্মীরা ২ অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে দিল্লিতে প্রতিবাদ আন্দোলন করবো এবং শুরুটাই হবে গান্ধীঘাট থেকে।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় দেখুন, হঠাৎ শেষ মুহূর্তে ৩ তারিখেই কোর্টের নির্দেশে ডেকে পাঠালো কেন্দ্রীয় এজেন্সি। অভিষেক পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি অপারগ। এরপর আমাদের ভাড়া করা ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হলো। বাধ্য হয়েই আমরা বাসের ব্যবস্থা করলাম। আমরা তো ঠিকই করেছিলাম সবাই একসাথে যাবো কিন্তু সিকিউরিটি থেকে এবারে নিষেধ করা হলো। কাজেই অসহায় মানুষগুলিকে বাসে করে দিল্লিতে পাঠাতে হলো। ৪২ ঘণ্টার বাস জার্নি যে অতি কঠিন বিষয় তা আর বলার অবকাশ রাখে না। এর মধ্যে ঝাড়খন্ড এবং বিহারের প্রশাসন যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন, কিন্তু বাধা এলো যোগীর রাজ্যে। শেষ পর্যন্ত ২ অক্টোবর ভোররাতে যখন সবাই দিল্লিতে গিয়ে পৌছালো তখন তাঁদের শরীরে আর কিছুই নেই কিন্তু কেউ তাতে দমে যায়নি।
২ অক্টোবর দুপুরে আমরা গান্ধী স্মৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে প্রতিবাদ শুরু করলে দিল্লি পুলিস এসে প্রবল বাধা দেওয়া শুরু করলো। এই পুলিস কিন্তু অমিত শাহের অধীনস্ত। এই বাধা শেষ পর্যন্ত ধাক্কাধাক্কিতে পরিণত হয়। আহত হয় আমাদের কর্মী নেতারা। মোবাইল হারায় কয়েকজন, সুজিত বোসতো যতটাই হারিয়ে ফেললেন ধাক্কায় এবং চোটে। অভিষেকের দিকেও ধেয়ে আসছিলো প্রশাসন। প্রতিবাদের প্রাথমিক কাজ সেরে আমরা ফিরে আসি।
মঙ্গলবার আমাদের সাধারণ সম্পাদক ঠিক করেন যে, এই আহত এবং বিধ্বস্ত মানুষদের আর কষ্ট না দিয়ে তাদের ফেরত পাঠাতে হবে। সেই মোতাবেক যন্তরমন্তরে জমায়েতের পরে তাদের আমরা কলকাতাগামী বাসে তুলে দিয়ে আমরা বিভিন্ন পদে থাকা নেতামন্ত্রীরা মিছিল করে কৃষি ভবনের দিকে যাবো, তাতে আমাদের উপর হামলা হলে হবে। আন্দোলন তো শুরু, এর শেষ দেখতে চাই, জানিয়েছেন অভিষেক। এখন অভিষেক দেশের সমস্ত মিডিয়ার কাছে 'জাতীয় নেতার' উপাধিটা পেয়ে গেলেন, সরকার ও বিরোধী ঐক্যও তাই বলছে।
মঙ্গলবার দিল্লিতে ফের তৃণমূলের ধরনা কর্মসূচি। তবে সেখানে কিছুটা রদবদল ঘটেছে। সকালের পরিবর্তে দুপুরে যন্তর মন্তরের সামনে ধরনা হবে। একইসঙ্গে এদিন, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে কথা বলবেন সাংসদরা।
সোমবার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে দলীয় বৈঠকের পর অভিষেক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে যন্তর মন্তরে ধরনা কর্মসূচি। সেখানে থাকবেন ১০০ দিনের ‘জব কার্ড হোল্ডার’রা । সঙ্গে থাকবেন তৃণমূলের সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা। এরপর সন্ধে নাগাদ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। সেখানে রাজ্যের দাবিদাওয়া জানাতে যাবেন তাঁরা। অভিষেক স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁদের প্রশ্নের যদি যথাযথ উত্তর না দেওয়া হয়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষনা করবেন তাঁরা।
রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী দিনই ধরনা শুরু করেছে বাংলার শাসক দল। রাজ্যের বকেয়ার পরিসংখ্যান দিয়ে আনা হয় পোস্টার। যদিও এই মঞ্চে কোনও রাজনৈতির স্লোগান দেওয়া যাবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে দিল্লিতে (Delhi) তৃণমূল (TMC)। মোদী সরকারকে নিশানা করে একাধিক অভিযোগ এনেছে। সোমবার রাজঘাটে ধরনায় বসলেও কিছুক্ষণ পরই সেখান থেকে উঠিয়ে দেয় দিল্লি পুলিস (Delhi Police)। আর এবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে আনলেন আগামীকালের কর্মসূচি। এছাড়াও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি, মঙ্গলবার দুপুরে যন্তর-মন্তরে প্রতিবাদ সভায় যোগ দেবেন সাধারণ মানুষ, জব কার্ড হোল্ডাররা। দিল্লি পুলিস তাঁদের গায়ে হাত দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে না।
সূত্রের খবর, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে বৈঠকের পড়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় জানিয়েছেন, 'কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রথমে আমাদের সঙ্গে দুপুর ১২টায় দেখা করার কথা জানিয়েছিলেন। পরে ই-মেল করে জানানো হয়, দুপুরে তাঁর সময় হবে না, সন্ধ্যায় দেখা করবেন। তাই দুপুর ১টা থেকে আমরা যন্তর-মন্তরে সভা করব। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষেরা এসেছেন, এই সভায় যোগ দেবেন। তাদের গায়ে দিল্লি পুলিস হাত দিলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে।'
তিনি আরও জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তাঁদের সাক্ষাতের সময় দিয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টায় কৃষি ভবনে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করতে যাবে তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল। আগামীকাল তাঁদের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে রাজ্যের দাবি জানাতে যাবে। যদি তাঁরা তাঁদের প্রশ্নের জবাব সঠিক ভাবে না পায়, তা হলে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়েই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় বিরুদ্ধে ১০০দিনের কাজ এবং আবাস যোজনার টাকা আটকে রাখার অভিযোগ তুলে দিল্লির রাজপথে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করে তৃণমূল। আজ অর্থাৎ সোমবার এই কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজঘাটে প্রায় ঘন্টা দেড়েক এই প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ঠিক সে সময় দিল্লি পুলিসের তরফ থেকে এই ধরনা কর্মসূচি উঠিয়ে নিতে বলা হয়। এরপর হঠাৎই সাংসদ এবং তৃণমূল কর্মীদের দিকে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে শুরু করেন দিল্লির পুলিস এবং সিআরপিএফ জওয়ানরা। এরপরেই তৃণমূলের সঙ্গে অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বচসা বেঁধে যায় দিল্লি পুলিসের। এরপরই ফাঁকা হয়ে যায় তৃণমূলের ধরনা অঞ্চল অর্থাৎ রাজঘাট।
সূত্রের খবর, প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরনা চলার পর তৃণমূল সাংসদদের উঠে যাওয়ার নির্দেশ দেয় দিল্লি পুুলিস। ৫ মিনিট সময় দেওয়া হয় তাদের। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় পাঁচ মিনিটের মধ্যে রাজঘাট খালি না করলে, জোর করে বের করে দেওয়া হবে। সেই নির্দেশ মেনেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল সাংসদরা রাজঘাট থেকে বেরিয়ে এলেও, অভিযোগ হঠাৎ লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে শুরু করে সিয়ারপিএফ ও দিল্লি পুলিস।
'কেন্দ্রীয় বঞ্চনা'র অভিযোগে দিল্লির যন্তর মন্তরে (Jantar Mantar) ধরনা দিতে চেয়েছিল রাজ্যের তৃণমূল সরকার। ধরনার জন্য লিখিত আবেদনও দেওয়া হয়েছিল দিল্লি পুলিসের কাছে। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের ধরনার জন্য অনুমতি দেয়নি দিল্লি পুলিস। কিন্তু সেই জায়গাতেই ২০০৯-এর প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের আধ ঘণ্টা ধরনা করার ক্ষেত্রে সায় দিয়েছে দিল্লি পুলিস। ফলে সোমবার যন্তর মন্তরে ধরনায় বসেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২০০৯ সালের প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দিল্লিতে রাজঘাটে আন্দোলনে বসেছে তৃণমূল। ফলে তৃণমূল সাংসদ-বিধায়করা যখন দিল্লির রাজঘাটে ধরনা-বিক্ষোভে সামিল হয়েছে, সেসময় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নিয়োগে বঞ্চনার অভিযোগে মোদী সরকারের দ্বারস্থ হয়ে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধরনায় বসেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২০০৯ সালের প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা এদিন হাতে পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা ১৪ বছরের বঞ্চনার কথা বলতে এসেছেন দিল্লিতে।
চাকরিপ্রার্থীরা আরও জানিয়েছেন, তাঁরা চাকরির দাবিতে এখানে ধরনায় বসেছেন। বাংলায় একাধিক জায়গায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও তাঁদের লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে তাঁরা এবারে দিল্লি এসেছেন। এমনকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে যেখানে ধরনায় বসবেন, সেখানেই তাঁরা বিক্ষোভ দেখাবেন বলে জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিত ভাবে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
১০০ দিনের টাকা ও আবাস যোজনার বকেয়া টাকার দাবিতে অক্টোবর ২ এবং ৩ তারিখ তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এরই পাল্টা সোমবার দিল্লিতে মেগা সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলকে তুলোধনা করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপির তরফে ওই সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ ও জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বাংলায় আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের টাকায় দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। যদিও পূর্বে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ দিলীপ ঘোষ ও বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারক তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। সুকান্ত মজুমদার এদিন বলেন, 'গ্রাম পঞ্চায়েতে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে এনআরইজিএ, পিএমএওয়াই-তে দুর্নীতি হয়েছে।'
সুকান্ত এদিন অভিযোগ তোলেন, 'কেন্দ্রীয় দল যা তথ্য প্রমাণ পেয়েছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। রাজ্য সরকারের কাছে যে ইস্যু তোলা হয়েছিল তার উত্তর দেয়নি। কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। কেন্দ্রের রিপোর্টে ১৫টি পয়েন্ট তোলা হয়েছিল। একটারও জবাব দেওয়া হয়নি।'
এছাড়া এদিন তিনি দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারকে দায়ী করেন। তিনি আরও বলেন, 'কেন্দ্রের আবাস প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়নি। দেওয়াল ধসে তিনজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই তিন শিশুর জন্য দায়ী রাজ্য সরকার। অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নাটক বাংলার মানুষ বোঝেন।
দিল্লি পৌঁছতে শুরু করেছে তৃণমূল সমর্থকদের বাস। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তৃণমূলের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। সূত্রের খবর, সোমবার মহাত্মা গান্ধীর জন্মজয়ন্তীতে রাজঘাটে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করবে তৃণমূল। দুপুর ১টা নাগাদ রাজঘাটে শ্রদ্ধা জানাবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের সাংসদ, মন্ত্রী-বিধায়করা। সেখানেই ধরনায় বসে প্রতিবাদে সামিল হবেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ‘বকেয়া টাকা’ আদায়ের জন্য ইতিমধ্যেই দিল্লিতে পৌঁছেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং কর্মী-সমর্থকরা। সোমবারের পাশাপাশি মঙ্গলবারও প্রতিবাদ কর্মসূচি রয়েছে তৃণমূলের। যদিও মঙ্গলবার কী কী কর্মসূচি নেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা করতে আজই সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের বাড়িতে অভিষেকের নেতৃত্ব বৈঠকে বসবে ঘাসফুল শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, গতকাল অর্থাৎ রবিবার সন্ধ্যার সময় অভিষেকের নেতৃত্বে সংসদ সৌগত রায়ের দিল্লির বাড়িতে বৈঠকে বসেছিল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এরপরেই সোমবারের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
বাঁকুড়ায় দেওয়াল চাপা পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় তাদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শান্তনু সেন এবং সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তার পরে, মৃতদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যদের নিয়ে বিমানে করে দিল্লিও যান। জানা গিয়েছে, তৃণমূলের আন্দোলনে যোগ দিতে পারেন তাঁরা।
প্রবল বৃষ্টিতে বাঁকুড়ায় দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় তিনজন শিশুর। সেই ঘটনার পর রবিবার সকালেই মৃত শিশুদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান শান্তনু ও সায়ন্তিকা। সেখানে পুরো ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ি করেন তাঁরা। তারপরেই ওই পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে দিল্লি চলে যান।
শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার বোড়ামারা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত তিন শিশু পাঁচ বছর বয়সি রোহন সর্দার, চার বছরের নিশা সর্দার এবং তিন বছরের অঙ্কুশ সর্দার।
শুক্রবার বিকেল থেকেই খারাপ আবহাওয়া রাজ্য জুড়ে। বাঁকুড়াতেও বৃষ্টি হচ্ছিল দফায় দফায়। শনিবার সকালে বৃষ্টি কিছুটা কমতে গ্রামের এক কাঁচা বাড়ির পাশে খেলতে যায় ওই তিন শিশু। তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, আগামীকাল অর্থাৎ ২ ও ৩ অক্টোবর দিল্লিতে কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি রয়েছে তৃণমূলের। এই কর্মসূচির দায়িত্বে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৩ অক্টোবর কলকাতায় সিজিও কমপ্লেক্সের তলবে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।এ অবস্থায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা নিঃসন্দেহে তৃণমূলের এই আন্দোলনকে বেগ দেবে বলা যায়। সূত্রের খবর আজ অর্থাৎ রবিবার দিল্লিতে দলীয় নেতাদের সঙ্গে সোমবার এবং মঙ্গলবার এর কর্মসূচি নিয়ে একটি কৌশলী বৈঠকে বসতে চলেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ট্রেন বাতিল, বিমান বাতিল সত্ত্বেও বাধা মানতে নারাজ ছিল তৃণমূল। এবার নতুন বাধা দুর্ঘটনা। সূত্রের খবর, ট্রেন বাতিল হলেও দলীয় কর্মীদের বাসে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল তৃণমূল। কথামত বাসে করেই দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল তৃণমূল কর্মীরা। সূত্রের খবর, দিল্লিগামী ৫০ টি বাসের মধ্যে একটি বাস দুর্ঘটনার কবলে। সূত্রের আরও খবর, বৃষ্টি ও নিম্নচাপের দাপটে ঝাড়খণ্ডে বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। ১১ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের কোডারমার কাছে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে খবর। কোডারমায় একটা পাথরে ধাক্কা মারে বাসটি। সামনের ডাম্পার ভেঙে যায়। তাদের নিয়ে এই মুহূর্তে বাসটা পুরুলিয়া হাসপাতালে গিয়েছে। সেখানেই আহতদের চিকিৎসা চলছে বলেই সূত্রের খবর।