লোকসভা আবহে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। গ্রীষ্মের দাবদাহকে উপেক্ষা করেই চলছে নির্বাচনী প্রচার। শুক্রবার সকাল সকাল প্রচার সারলেন উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। বেলেঘাটার লোহাপোল এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ সারেন তিনি। সেখানে সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগের কথাও শোনেন তিনি।
উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে কোনও লড়াই-ই নেই। তিনিই জিতছেন এই কেন্দ্র থেকে, নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে জানালেন জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী তাপস। এর আগেও একাধিকবার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
প্রতিপক্ষ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কখনও দুর্নীতিগ্রস্ত তো কখনও সুবিধাবাদী বলে কটাক্ষ করেছেন উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। এর থেকেই স্পষ্ট যে লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে। তবে শেষ হাসি কে হাসবে তা জানতে আরও বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে রাজ্যবাসীকে।
প্রসূন গুপ্তঃ পশ্চিমবঙ্গের আদি শহরের অংশ সুতানটি, যাকে এখন উত্তর কলকাতা বলা হয়। একদিকে বেলগাছিয়া/ কাশিপুর থেকে সেই চৌরঙ্গী। এখানে স্কুল, কলেজে, মেডিকেল কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব সুবিধাই আছে। স্বাধীনতা পূর্ব যুগে কত শত গল্প যে উত্তর কলকাতার বাবু সংস্কৃতি নিয়ে পাই তার বিবরণ বিখ্যাত সাহিত্যিকরা লিখে গিয়েছেন। উত্তর কলকাতায় চিরকাল কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল যা এখন দখল নিয়েছে তৃণমূল। শিক্ষিত কলকাতার মানুষ নিজের নিজের জীবন নিয়েই থাকতে ভালোবাসে। দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারি নিয়ে রকে সন্ধ্যার পর আসর গরম হলেও শেষ পর্যন্ত তারা ওই তৃণমূলকেই জিতিয়ে এসেছে। এবারে কি কঠিন লড়াই এই লোকসভায়?
আসুন দেখে নি করা বসবাস করে এই উত্তর কলকাতায়। প্রথমত এখানে বাঙালিদের ৮৫ শতাংশই 'ঘটি' বা এদেশীয়। মোহনবাগান সমর্থক। এছাড়া ২৫-৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু বা মুসলিমদের বাস। অবাঙালি হিন্দু ব্যবসায়ীদের ৬-৭% এখানেই বাস করে তথা চৌরঙ্গী অঞ্চলে বিভিন্ন ভাষাভাষীর বাস। ২৫/৩০ বছর ধরে এখানে প্রথমে কংগ্রেস পরে তৃণমূলের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। একটা সময়ে উত্তর কলকাতা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। উত্তর পূর্ব এবং উত্তর পশ্চিম। উত্তর পূর্বে দাঁড়াতেন অজিত পাঁজা। অজিতবাবু আর ডিমিলিটেশন দেখে যেতে পারেন নি। এবারে একসময়ের ছাত্র পরিষদের সভাপতি এবং সদ্য তৃণমূলত্যাগী তাপস রায় এবারে এখানে বিজেপির প্রার্থী এবং কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রদীপবাবু যথেষ্ট বৃদ্ধ, এখন তেমন দৌড়ঝাঁপ করতে পারেন না কাজেই বলা যেতে পারে লড়াই সুদীপ ও তাপসের।
তাপস একপ্রকার সুদীপের উপর ক্ষোভে দল ছেড়েছেন। ব্যক্তি জনপ্রিয়তায় তিনি কমতি যান না। একরোখা সিপিএম বিরোধী লড়াকু নেতা। পক্ষান্তরে সুদীপবাবু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে থাকেন। তাঁর ইতিবাচক দিক দীর্ঘদিন সাংসদ থেকেছেন এবং অনেকেই বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের প্রিয় বিরোধী নেতা। খোদ প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের মুখ সুদীপবাবু কিন্তু লড়াই তো পছন্দের উপর চলবে না। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে সুদীপ পেয়েছিলেন মাত্র ৩৫.৯৪ % ভোট এবং জিতেছিলেন। পরের বার কিন্তু তিনিই ৪৯.১৮ % পেয়ে অনেকটাই শক্তি বৃদ্ধি করেছিলেন। এখন প্রশ্ন কে এগিয়ে? লড়াকু তাপস দাবি করেছেন তিনি সুদীপকে হারাবেন। কিন্তু আবেগ নির্ভর তাপসকে অনেক অঙ্ক পার করতে হবে যা যথার্থই কঠিন।
লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলে বড় ধাক্কা। প্রায় ২৬ বছর পর তৃণমূল ছাড়লেন তাপস রায়। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন এই বর্ষীয়ান সৈনিক। তীব্র অভিমানের থেকেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি। সোমবার সকালে বিধানসভায় স্পিকারের ঘরে গিয়ে সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করলেন তাপস রায়। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিলেন ইস্তফা পত্র। তাহলে কি এবার বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন? জল্পনা তুঙ্গে।
সোমবার বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন দলের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, তাঁর বাড়িতে ইডি অভিযানে আসে। কিন্তু দল তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। তাঁর পরিবারের কাউকে ফোন করেনি। একই সঙ্গে আরও বিস্ফোরক উক্তি,'এত দুর্নীতি, তারপর সন্দেশখালি, এগুলো আমাকে তাড়না দিয়েছে। আমাকে বোঝাতে আসার জন্য কুণালকে শোকজ করেছেন সুব্রত বক্সী। ৫২ দিন হল মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ডাক আসেনি। তৃণমূলের অন্যান্য নেতা মন্ত্রীদের বাড়িতে ইডি গেলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। এমনকি ইডি অভিযানের পর শেখ শাহজাহানের কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় উল্লেখ করলেও তাঁর নামটুকুও বলেননি। এই ঘটনায় তিনি গভীরভাবে মর্মাহত।'
উল্লেখ্য, ১২ জানুয়ারি ইডি অভিযান চালিয়েছিল তাপস রায়ের বাড়িতে। বাড়িতে ইডি হানার সময় তিনি একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সেই সময় প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, 'আমার বাড়িতে ইডি আসার পিছনে হাত সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।' এরপর বেশ কয়েকদিন কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া না গেলেও, রবিবার রাত থেকে তাঁর ইস্তফা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। সোমবার সকালেই সেই অনুমান সত্যি হয়।
তৃণমূল ছাড়লেন তাপস রায়? দলের উপর তীব্র অভিমান প্রকাশ করে দল থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক। সোমবার অথবা মঙ্গলবারই বিধানসভায় বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন এমনই জল্পনা উঠেছিল। ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টায় সোমবার সকলে তাঁর বাড়িতে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা ব্রাত্য বসু ও কুণাল ঘোষ।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, তাঁর বাড়িতে ইডি অভিযানে আসে। কিন্তু দল তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। তাঁর পরিবারের কাউকে ফোন করেনি। ক্ষোভ উগরে দিলেন তাপস রায়। তাপসের আরও বিস্ফোরক উক্তি,'এত দুর্নীতি, তারপর সন্দেশখালি, এগুলো আমাকে তাড়না দিয়েছে। আমাকে বোঝাতে আসার জন্য কুণালকে শোকজ করেছেন সুব্রত বক্সী। ৫২ দিন হল মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ডাক আসেনি। তৃণমূলের অন্যান্য নেতা মন্ত্রীদের বাড়িতে ইডি গেলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। এমনকি শেখ শাহজাহানকে টার্গেট করেছে বলে বিধনসভায় উল্লেখও করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে অন্য ছবি দেখা গিয়েছে।'
এরপরই সটান জায়গা ছেড়ে উঠে পড়েন তাপস রায়। সূত্র মারফত খবর, এই বর্ষীয়ান নেতা বেরিয়ে পড়েন বিধানসভার উদ্দেশ্যে। ইতিমধ্যে পৌঁছন বিধানসভায়।
পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছে ইডি। শুক্রবার সকাল থেকেই ছিল টান টান উত্তেজনা। কারণ শুক্রবার সাতসকালেই শাসকদলের তিন হেভিওয়েট নেতার বাড়িতে পৌঁছে যান ইডি আধিকারিকরা। রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, বরানগরের বিধায়ক তাপস রায় ও উত্তর দমদম পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সুজিত বসুর বাড়িতে প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা ও তাপস রায়ের বাড়িতে প্রায় ১২ ঘণ্টা ম্যারাথন তল্লাশির পর একাধিক নথি ও তাঁদের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আর সেসব নথি ও ফোন থেকেই দুর্নীতির পর্দাফাঁস হতে পারে বলে আশাবাদী ইডি।
গতকাল মন্ত্রী ও বিধায়কের বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। ইডির দাবি, এই সব নথি পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসাবে কাজে আসবে। গতকাল বরানগরের বিধায়ক তাপস রায়ের বাড়িতে ১০ ঘণ্টারও বেশি ম্যারাথন তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁর মোবাইল ফোন ও বরানগর পুরসভা সংক্রান্ত একাধিক রিকোয়েস্ট লেটার উদ্ধার করা হয়েছে। বেশ কিছু বায়োডাটাও উদ্ধার করেছে ইডি। পাশাপাশি ইডির ডিজিটাল এক্সপার্টদের মাধ্যমে মোবাইল ফোন এক্সট্রাক্টর কাম হার্ডড্রাইভ ডিকোর্ডিং যন্ত্রের সাহায্যে তাপস রায়ের মোবাইল থেকে সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখবে ইডি।
এছাড়াও জানা গিয়েছে, আজ অর্থাৎ শনিবার ইডির তরফ থেকে সেই সমস্ত বায়োডেটার ক্যান্ডিডেটদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। কী কারণে বায়োডাটা জমা দিয়েছিলেন তাপস রায়ের কাছে, সেই বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে ইডির তরফ থেকে। বরানগর পুরসভার কোন কাজের জন্য রিকোয়েস্ট লেটার দেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়েই খতিয়ে দেখবে ইডি, এমনটাই সূত্রের খবর। মন্ত্রী সুজিত বসুর বাজেয়াপ্ত মোবাইল ফোন পরীক্ষা করেও গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হবে বলে আশাবাদী ইডি।
শুক্রবার সাতসকালে রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু ও বিধায়ক তাপস রায়ের বাড়িতে হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে তল্লাশি চালানো শুরু হয়েছে তাঁদের বাড়িতে। পাশাপাশি উত্তর দমদম পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবোধ চক্রবর্তী বাড়িতেও হানা দেন ইডি আধিকারিকেরা। দীর্ঘ ১২ ঘন্টার তল্লাশি শেষে বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের বাড়ি থেকে বের হল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। দীর্ঘ তল্লাশিতে একাধিক নথি এবং বিধায়কের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে ১০ ঘণ্টা তল্লাশি শেষে সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়ি থেকে বেরোলেন ইডি আধিকারিকরা। এককথায় বলা যায়, পুর নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে আজ, শুক্রবার সকাল থেকে তুঙ্গে ইডি তৎপরতা। সকালের আলো ফুটতেই বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস এবং রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর বাড়িতে পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা। গোটা এলাকাকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়। এমনকি ঘিরে রাখা হয় তাপস রায়ের বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাড়িটিও। সকাল থেকে প্রায় দীর্ঘ ১২ ঘন্টা ধরে চলে এই তল্লাশি অভিযান। আর এই দীর্ঘ তল্লাশিতে কিছুই তেমন পাওয়া যায়নি বলেই দাবি তৃণমূল বিধায়কের।
তাপস রায় কথায়, 'কিছু নেই তো পাবে কি!' ইডি বাড়ি ছাড়তেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাপস রায় জানিয়েছেন, 'আমি নিজেও খুবই আশ্চর্য হয়েছি। বরাহনগর পুরসভার কোনও নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত নই। এমনকি রাজনৈতিক জীবনে কোনও দুর্নীতির সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না এবং জড়িত নই'। আগামীদিনে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। আগামীদিনে তাঁকে তলব করা নিয়ে কিছু ইডি আধিকারিকরা জানাননি বলেই দাবি তৃণমূল নেতার।
'ইডির রং-ডায়াল। উনি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। উনার থেকে কিছু পাওয়া যাবে না।' তাপস রায়ের উপর এতটাই আত্মবিশ্বাস রয়েছে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির। শুক্রবার সাতসকালে রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু ও বিধায়ক তাপস রায়ের বাড়িতে হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে তল্লাশি চালানো শুরু হয়েছে তাঁদের বাড়িতে। শাসক দলের দুই হেভিওয়েট নেতার বাড়িতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তল্লাশির খবর পেতেই পুলিস অফিসাররা পৌঁছে গিয়েছেন তাঁদের বাড়িতে। সুজিত বসুর বাড়িতে বিধাননগর কমিশনারেটের অফিসার ও তাপস রায়ের বাড়িতে কলকাতা পুলিসের আধিকারিকদের দেখা যায়।
বরানগর পুরসভায় এর আগেও অভিযানে এসেছে ইডি। চেয়ারম্যান অপর্ণা মৌলিককে সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জমা নিয়েছে নথিও। এবার জানা যাচ্ছে, বরানগর পুরসভার সেসব নথি খতিয়ে দেখে তাতে তাপস রায়ের যোগ পেয়েছে ইডি। শুধু তাই না, অয়ন শীলের যে সংস্থার হাত ধরে পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে একাধিক বেআইনি নিয়োগ হয়েছে, তাতেও তাপস রায়ের যোগ পেয়েছে ইডি, এমনটাই খবর। আর তাই এবার সরাসরি তাপস রায়ের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে হাজির ইডি। প্রিন্টার নিয়েও ঢুকতে দেখা যায় ইডির আধিকারিকদের।
ইডির আধিকারিকদের সঙ্গে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্য কলকাতা পুলিসের তরফ থেকেও চোখে পড়ল সক্রিয়তা। তাপস রায়ের বাড়ির সামনে পুলিসের এসিপি পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে মোতায়েন পুলিসবাহিনী। অবাঞ্চিত কোনও মানুষ বা তাপস রায়ের অনুগামীকে তাঁর বাড়ির সামনে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোরে রাজ্যের দমকল মন্ত্রীর লেকটাউনের দুটি বাড়িতে ও তাপস রায়ের বাড়িতে ইডির হানার পাশাপাশি উত্তর দমদম পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবোধ চক্রবর্তী বাড়িতেও হানা দেন ইডি আধিকারিকেরা। এদিন ভোর সাড়ে ছটা নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে পাঁচ ইডি অধিকারিকের একটি দল সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতে পৌঁছয়। ইডি আধিকারিকদের পৌঁছনোর খবর পেয়ে প্রাক্তন পুর প্রধানের বাড়ির সামনে আসে দমদম থানার আধিকারিকেরা। যদিও তারা বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনি, রাস্তা থেকেই তাদের ফিরে যেতে হয়।
সন্দেশখালিকাণ্ডের এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই আবারও রাজ্য়জুড়ে তৎপর ইডি। সন্দেশখালি এবং বনগাঁর ঘটনার পর এবার সর্তক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পুর দুর্নীতির তদন্তে শুক্রবার সাত সকালে একাধিক জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছে ইডি। এদিন ভোরে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর লেকটাউন শ্রীভূমি এলাকার বাড়িতে ইডির হানার পাশাপাশি রাজ্যের বিধায়ক তাপস রায় ও উত্তর দমদম পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবোধ চক্রবর্তী বাড়িতেও হানা দেন ইডি আধিকারিকেরা।
ইডি সূত্রে খবর, পুরনিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে তাপস রায়ের। বরানগর পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে যোগসূত্র রয়েছে তাঁর। পুর নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে একাধিকবার বরানগর পুরসভায় অভিযান চালিয়েছে ইডি। সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বরানগর পুরসভার চেয়ারম্যান অপর্ণা মৌলিককে।
এছাড়া পুরসভার একাধিক কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং বাজেয়াপ্ত হওয়া নথি খতিয়ে দেখে তাপস রায়ের যোগসূত্র পেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। সেই যোগসূত্র ধরেই তাপস রায়ের বাড়িতেও চলছে তল্লাশি। একইসঙ্গে তাপস রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের করছেন ইডি আধিকারিকরা। ইডি সূত্রে আরও খবর, প্রথমে তাপস রায়কে একটি নিয়োগ সংক্রান্ত নথি দেখানো হয়েছে। যে নথিতে বরানগর পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর যোগসূত্র রয়েছে। সেই নথি দেখেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে এবং তল্লাশির কাজ চলছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
তাপস রায় (উপ-মুখ্যসচেতক/বিধানসভা): মাঝে মাঝে ভুলে যেতে ইচ্ছা করে যে আমিও একজন আইনজীবী এবং কলকাতা হাইকোর্টের। যখন নিয়মিত রাজনীতির ফাঁকে কাজের সূত্রে হাইকোর্টে যেতে হত তখন সওয়াল জবাবের মাঝে মুগ্ধ হয়ে শুনতাম তৎকালীন মাননীয় বিচারপতিদের অর্ডার। এজলাস গমগম করতো। আজকেও নিয়মিত না হলেও ব্রিফ নিয়ে হাজির হতে হয় আদালতে কিন্তু ওদিনের আকর্ষণ আজ আর টানে না। কত কিছুই হচ্ছে, কত অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা চলেছে এজলাসে। এটা ঠিক মাননীয় বিচারপতিরা অনেক ক্ষেত্রে শুনানিতে পুরাতন প্রসঙ্গ উদাহরণ হিসাবে নিয়ে আসেন, আনা উচিতও। কিন্তু উদাহরণের সুধাকরণের আস্থা থাকে কি? সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনের রেষারেষিতে বারবার পুরাতনী উদাহরণ এসেছে কিন্তু সবটাই তৃণমূলের ত্রুটি খুঁজে।
আমার মনে পরে যায়, ৯০ এর গোড়ায় কলকাতা পুরসভার ভোটে বৌবাজার কেন্দ্রের একটি ওয়ার্ডে আমি প্রার্থী ছিলাম। সারাদিন ধরে শুধু বোমাবাজি এবং এক সময়ে আমাকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছিল, স্বাভাবিক ভাবে সিপিএমের জয় হয়েছিল। তারপর ৯১ এর বিধানসভার নির্বাচনে আমি বিদ্যাসাগর কেন্দ্রের প্রার্থী হই, যদিও সেই কেন্দ্রটি আজ বিলীন হয়ে গিয়েছে। দিনভর বোমাবাজি আর ছাপ্পা ভোট চললো। রাত ৯টার পরেও আমার বুথ এজেন্টদের বের করে আনতে পারি নি। পরে অনেক আহতকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করতে হয়েছিল। পরদিন কাগজে ছাপা হয়েছিল 'কলকাতায় অসময়ের কালী পূজো", এতো বোমাবাজি এর আগে বা পরে কলকাতার মানুষ দেখে নি। কার্যত পরাজয় এবং সিপিএম বাহুবলি লক্ষী দের জয়। কিন্তু কোথায়, আজকের আদালতে তার পুরাতনী উদাহরণ?
শুক্রবার কত অপ্রাসঙ্গিক উদাহরণ দিলেন তাঁর এজলাসে বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি। প্রসঙ্গ ছিল কোনও এক সরকারি কর্মচারী করোনাতে মারা গিয়েছেন তো তাঁর স্ত্রী কি ভাবে সরকারি সাহায্য পাবেন ইত্যাদি। বিচারপতি গাঙ্গুলি বললেন যে, চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যু হলে সরকার ২ লক্ষ টাকা দেয় কিন্তু কোভিড মৃতদের কি হবে? প্রথমত যেবারে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে সে সময়ে কিছু মানুষ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ মদ খেয়ে মারা যায়। একটি মর্মান্তিক ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী দোষীদের গ্রেফতার করার আদেশ দেন এবং ওই মৃতদের অসহায় পরিবারগুলিকে ২ লক্ষ করে টাকা দেন। বেচারা পরিবারের রোজগেরে ব্যক্তি মারা গিয়েছে কাজেই অসহায় পরিবারে যাতে পথে না বসে সেই কারণেই অর্থ সাহায্য কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে নিয়মিত নিয়ম এই টাকা প্রদানের। অথচ বিচারপতি তাই বললেন। এ ছাড়া বললেন, কে একজন ভাইপো আছে, তার চারতলা বাড়ি। কোটি টাকার বাড়ি। এতো টাকা আসে কোথা থেকে। .... কি বলছেন বিচারপতি? এর মধ্যে ভাইপো আসছে কোথা থেকে? তার কোটি টাকার বাড়ি থাকে যদি, তার সঙ্গে কোভিড মৃত্যুর কি সম্পর্ক ? ভাইপো বলতে তিনি কাকে বোঝাচ্ছেন?
এসব কথা তিনি আইনত বলতে পারেন কি? প্রসঙ্গান্তর হওয়ার যুক্তি কোথায়? তিনি এর আগেও মিডিয়ার খবর হয়েছেন ব্যক্তিগত ভাবে। ফের কি মিডিয়ার খবর হওয়ার জন্যই অপ্রাসঙ্গিক হচ্ছেন বারবার। আর যাই হোক এ সমস্ত বিচারালয়ে বিচারপতির কাছে আশা করা যায় না। আইনজীবী হিসাবে আমি তীব্র প্রতিবাদ করছি।
(অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত )