
কেউ দুষলেন কুন্তলকে, কেউ সুজন, শুভেন্দুকে। নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে (Education Scam) গ্রেফতার হওয়া পার্থ, তাপস-সহ আরও ৭ অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার আলিপুর বিশেষ সিবিআই কোর্টে (CBI) তুলল কেন্দ্রীয় সংস্থা। আদালতে তোলার সময় তাপসের গলায় শোনা গেল অন্য সুর। তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'ম্যাজিশিয়ান কুন্তল সব জানে।' তিনি যে কুন্তলকে টার্গেট করলেন সেটা স্পষ্ট। এই ঘটনায় আগেই গ্রেফতার হয়েছেন কুন্তল। কুন্তল আপাতত জেল হেফাজতেই আছেন।
ওদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কোর্টে আনার সময় তাঁকে উদ্দেশ্য করে চলতে থাকে 'চোর চোর স্লোগান', যদিও এ ঘটনা নতুন নয়। এর পূর্বেও পার্থকে উদ্দেশ্য করে চোর চোর স্লোগান দিতে শোনা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিককে বলেন, 'এখন দিলীপ বাবু, সুজন বাবু, বড় বড় কথা বলছেন, তাঁরা নিজের দিকে দেখুন, উত্তরবঙ্গে তাঁরা কী করেছেন? তাঁরা ২০০৯-২০১০-এ সিএজি রিপোর্ট পড়ুন, সমস্ত জায়গায় তদ্বির করেছেন, যেহেতু আমি তাঁদেরকে বলেছি আমি সাহায্য করতে পারবো না, আমি নিয়োগ কর্তা নই, আমি কোনও কাজ বেআইনি করতে পারবো না।'
বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারীকেও টার্গেট করেছেন তিনি। তিনি বলেন, 'শুভেন্দু অধিকারীর ২০১১-২০১২ সালটা দেখুন না, ডিপিএসসি-টা দেখুন না, কী করেছিল তাঁরা।' প্রসঙ্গত, গত ১৬-ই মার্চ, ১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ১৩ জনকে আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে পেশ করা হলেও ১৬ তারিখ বিভিন্ন কারণে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৭ জনের শুনানি হয়নি। তাই আদালত পরবর্তী দিন ধার্য করে ২৩ মার্চ। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৭ জনকে আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছে।
সিবিআই জেরার (CBI) সময় কুন্তল-তাপসের তর্ক জারি ছিল জেরা টেবিলে। মুখোমুখি জেরা পর্বেও বেশ কয়েকবার তর্ক জুড়েছেন হেফাজতে থাকা কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে এমনটাই দাবি। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জেরা পর্বে দুই অভিযুক্তর মধ্যে তর্ক বাঁধে, এমনটাই খবর। জেরার সময় একে অপরের বক্তব্য বারেবারে খণ্ডনের চেষ্টা করেছিলেন তাপস-কুন্তল (Tapas-Kuntal) বলে সূত্রের দাবি।
এই দুজনের কলহের জেরে বেশ কিছুক্ষণ জেরা বন্ধ রাখতে হয় সিবিআইকে।দু'পক্ষকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তদন্তকারী অফিসাররা। এমনটাই সিবিআই সূত্রে খবর। এদিকে, কুন্তল ঘোষ এদিন দাবি করেন তিনি কালীঘাটের কাকুকে চেনেন না। তিনি কাকু বলতে, একমাত্র তাঁর বাবার ভাইকেই চেনেন। যদিও কুন্তল 'মিথ্যা বলছে', 'ও সব জানে' বলে বৃহস্পতিবার পাল্টা দাবি করেন তাপস মণ্ডল।
পাশাপাশি এদিন কুন্তল আদালতে থেকে বেড়িয়ে জনৈক হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক 'রহস্যময়ী নারী'র প্রসঙ্গ টানেন। বিস্ফোরক কুন্তল বলেন, 'রহস্যময়ী নারী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় সব জানেন। তদন্তের ভিতরের কথা আর কিছু বলবো না।'
জানা গিয়েছে, তদন্তে চলাকালীন একটি সংস্থার নাম উঠে এসেছে। যেখানে গোপাল দলপতির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সেই অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল। সেই অ্যাকাউন্টের খোঁজ নিতে গিয়ে এই হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম পাওয়া যায়।
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (Recruitment Case) ফের বড়সড় গ্রেফতারি। বাগদার 'সৎ' রঞ্জনের পর এবার সিবিআইয়ের (CBI Arrest) জালে মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। রবিবার জিজ্ঞসাবাদের জন্য তাপস বাবুকে (Tapas Mondal Arrest) নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠানো হয়। তারপরেই টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর এই গ্রেফতারি কেন্দ্রীয় সংস্থার। এদিন তাপস মণ্ডলকে গ্রেফতারির পর এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। মেডিক্যাল পরীক্ষা শেষে বেড়িয়ে তাপস মণ্ডল বলেন, 'আমি নির্দোষ। তদন্তে সহযোগিতা করছি এবং করবো। কিন্তু আমি নির্দোষ।'
সিবিআই সূত্রে খবর, তাপস মণ্ডলের বয়ানে অসঙ্গতি এবং প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া, এই দুটি কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরার প্রয়োজন রয়েছে বলে এই গ্রেফতারি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, এই তাপস মণ্ডলের বয়ানে নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ইডির হাতে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের নাম উঠে আসে। মানিক ভট্টাচার্য গ্রেফতারির পর বহুবার ইডি এবং সিবিআই ডাকে সাড়া দিয়েছেন তাপস মণ্ডল।
জানা গিয়েছে, এদিন শুধু তাপস মণ্ডল নয়। নিলাদ্রি ঘোষ নামে এক অভিযুক্ত এজেন্টকে নিয়োগ-কাণ্ডে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।