প্রুসূন গুপ্তঃ বেশ কয়েক বছর বাদে ইস্টবেঙ্গল ও তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান ফাইনাল খেলায় মুখোমুখি। ডুরান্ড কাপে এর আগে যতবার ফাইনালে এই দুই দলের দেখা হয়েছে তার মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের জয় বেশি, কিন্তু সেটা বড় কথা নয়, এবারে দেখার কে ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়।
এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার বর্তমান নাম 'ডার্বি'। ইস্ট-মোহনের ইদানিংকালে মানে বিগত কয়েক বছরে যতবার এই ডার্বি ভারতের যতগুলি স্টেডিয়ামে হয়েছে, তাতে বেশ বিক্রমেই জিতেছে মোহনবাগান। অনেক কারণ ছিলও বটে। প্রথমত, আজকের দিনে দেশের সমস্ত বড় ফুটবল ক্লাব কিনে নিয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা। এর ফলে দেশের আদি ক্লাবগুলির কোনও অস্তিত্বই নেই। কোথায় গেলো মফতলাল, পঞ্জাব পুলিস, কেরালা পুলিস, ডেম্পো ভাস্কো বা ওরকে মিলসের মতো দলগুলি? এগুলোও তো অফিস টিম ছিল। কিন্তু বর্তমানের কোটি কোটি টাকার তৈরি দলগুলির কাছে এদের কোনও বাজেটই নেই। অফিসে চাকরি করো বা কিছু টাকা নিয়ে খেলে দাও গোছের অনুরোধ আজকে আর চলে না। আজ যারা দাপিয়ে আইএসএল, আই লীগ বা ন্যাশনাল টুর্নামেন্টগুলি খেলছে তাদের অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ একটিই তাদের পেশা, তা খেলো বা দুর্দান্ত খেলে টাকা কামাও। একেবারে বিদেশের মতো পেশাদারিত্ব এসে গিয়েছে ফুটবলে, যা কিনা বহু বছর আগে এসেছে ক্রিকেটে।
সে যাই হোক নানান টুর্নামেন্টে বহুবার দেখা হলেও একেবারে ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান মুখোমুখি হচ্ছে বহুদিন বাদে। এবারে প্রশ্ন দুটি, কোন দল কেমন এবং কিভাবে খেলবে ফাইনালে। ফুটবল নিশ্চিত টিম গেম। ডিফেন্স, মিডফিল্ড এবং অফেন্স এই তিন সূত্রে গাঁথা ফুটবল। আজকের দিনে ডিফেন্স আলগা রেখে আক্রমণে কেউ যায় না, তা কলকাতা হোক বা বিশ্বকাপ।
নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, ধারে ও ভারে মোহনবাগান অনেকটাই এগিয়ে। শোনা গিয়েছে, প্রায় ৭০ কোটি টাকার দল। বিশ্বকাপের থেকে বিদেশি খেলোয়াড়ে সমৃদ্ধ মোহনবাগান। পক্ষান্তরে ইস্টবেঙ্গল দলটিও এবারে মন্দ নয়। প্রকারান্তে বলা যেতে পারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরোক্ষ প্রয়াসে এই ইস্টবেঙ্গল দল। ফাইনালের আগে লীগ পর্যায়ে এই দুই দলের একবার দেখা হয়েছিল এবং বহুদিন বাদে ইস্টবেঙ্গল জিতেছিল। খেলা প্রিয় মানুষের নজর সে দিকেই। শুধু একটি বিষয়ে ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে তিনি কোচ কার্লেস কুয়াদ্রত। এতো ধূর্ত কোচ এর আগে কোনও ভারতীয় দল পায়নি। তাই বলা যেতে পারে শক্তিশালী মোহনবাগান বনাম কুয়াদ্রাতের খেলা রবিবার।
প্রসূন গুপ্ত: অবশেষে ভারত সেরা মোহনবাগান। স্বাভাবিকভাবেই এটা বাংলার আবেগ। আজকাল দুই প্রধানের কর্মকর্তারা হয়তো ট্রফির পিছনে দৌড়ন না। একেবারেই ইউরোপিয়ান ফুটবল ক্লাবের মতো মানসিকতা (যা অবশ্যই পেশাদারি)। আজ আর লোকাল লিগ বা আইএফএ শিল্ড বা ডুরান্ড কিংবা ভারতের অন্য ট্রফির দিকে নজর নেই ক্লাব কর্তাদের। আইএসএল আসার পর যেন ওটাই একমাত্র মোক্ষধর্ম। আজকের দিনে ক্লাবকে ভালোবেসে দিনের পর দিন একই ক্লাবে খেলে যাওয়ার রেওয়াজ নেই।
চিরকাল মোহনবাগানে খেলা বাঙাল চুনি গোস্বামী বা সুব্রত ভট্টাচার্য অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলে খেলা খাস ঘটি শান্ত মিত্র বা প্রশান্ত সিনহার মতো ক্লাব প্রেম কোথায়? ফেলো টাকা পায়ে বল, সংস্কৃতি হারিয়ে গিয়েছে। সোমবার মোহনবাগান তাঁবুতে ট্রফি এসে পৌঁছলে যে উচ্ছ্বাস সমর্থকদের মধ্যে পাওয়া গেল তা এক সময়ে দেখা যেত ৫০ থেকে ৯০ দশকে। তারপর কোথাও কী হারিয়ে গেল? ইস্টবেঙ্গল ৬০-এর দশক থেকে ২০১০ অবধি মাত্র একটিই বছর ট্রফি শূন্য ছিল। ১৯৭৯-এ, অথচ ওই বছর ইস্টবেঙ্গল সারা ভারত থেকে সেরা খেলোয়াড়দের ক্লাবে সই করিয়েছিল। নিশীথ ঘোষ, তিনি জানতে পেরেছিলেন নাকি সুরজিৎ সেনগুপ্তর নেতৃত্বে বাঙালি খেলোয়াড়রা দলের মধ্যে গ্রুপবাজি করছে।
সে বছর প্রবল ক্ষোভের মধ্যে পড়েছিলেন নিশীথবাবু। ১৯৮০-তে দল ভেঙে গেল সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়-সহ প্রায় এক ডজন বাঙালি খেলোয়াড় এবং অন্য রাজ্যের খেলোয়াড়রা ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে চলে যান। নিশীথবাবু পিকে ব্যানার্জিকে কোচ করে নিয়ে আসেন। প্রদীপবাবুর হাতে রাইট ব্যাক টমাস ম্যাথুজ এবং স্টপার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ছাড়া কেউই তেমন ছিল না। পরে হাবিব, সুধীর কর্মকাররা দলে এলেন এবং তিন বিদেশী নিয়ে আসলেন পিকে।
মজিদ বাস্কর,জামশেদ নাসিরি এবং খাবাজি। ওই বছর দুটি ট্রফি জয় করল ইস্টবেঙ্গল এবং কোনও দেশীয় টিমের কাছে হারে ক্লাব সেই বছর। এরপর থেকে প্রতি বছর শুধু ট্রফি আর ট্রফি। আর আজ দীর্ঘদিন এই ইস্টবেঙ্গলে কোনও ট্রফি নেই। তাপ-উত্তাপও নেই কর্মকর্তাদের। নিয়মিত প্রধান ক্রীড়া শত্রু মোহনবাগানের কাছে হারছে আর শুনতে হচ্ছে যত বার ডার্বি ততবার হারবি।
রঞ্জি ট্রফির (Ranji Trophy) ফাইনালে বাংলা (Bengal)। মধ্যপ্রদেশকে ৩০৬ রানে হারিয়ে ফাইনালে উঠল বাংলা। ২০১৯-২০ সালের পর আবারও ফাইনালে বঙ্গ ব্রিগেড। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু রঞ্জি ফাইনাল।
এর আগে ২০১৯-২০ মরসুমে এই মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধেই সেমিফাইনালে হেরেছিল বাংলা। দায়িত্ব ছাড়েন কোচ অরুনলাল। কোচের হট সিটে বসেন প্রাক্তন ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লা। অধিনায়ক করা হয় মনোজ তেওযারিকে। ফল মিলেছে হাতেনাতে। রঞ্জি জয়ের সোনার সুযোগ বাংলার সামনে। এই নিয়ে ১৪ বার ফাইনালে উঠলো বাংলা। শেষবার ঘরের মাঠে দল যখন রঞ্জি যেতে তখন অধিনায়ক ছিলেন সম্বরণ বন্দোপাধ্যায়।
১৯৮৯-৯০ সালের পর রঞ্জির সোনার হরিণ অধরাই থেকে গিয়েছে। এবার ট্রফি ঘরে তুলতে মরিয়া বাংলা। বিশেষ করে দারুন ছন্দে আছে দল। সেমিফাইনালে প্রথম ইনিংসে ৪৩৮ রানের ইনিংস খাড়া করেছিলেন মনোজরা।। জোড়া শতরান করেছিলেন অনুষ্টুপ মজুমদার আর সুদীপ ঘরামী। জবাবে ৫ উইকেট নিয়ে মধপ্রদেশকে ভেঙে দিয়েছিলেন আকাশ দীপ সিং। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে মধ্যপ্রদেশকে শেষ করে দিলেন প্রদীপ্ত প্রামানিক। শেষ দিনে চা বিরতির আগে ২৪১ রানেই শেষ মধ্যপ্রদেশ। এবার মিশন ফাইনাল। তৃতীয়বার ট্রফি জেতার সুযোগ টিম বাংলার সামনে।
প্রসূন গুপ্ত: চলচিত্র, সাহিত্য থেকে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি বিভিন্ন পেশার মানুষ রাজনীতিতে আসেন। খেলাধুলোর মাঠ বিশেষ করে ক্রিকেট ফুটবল থেকে অনেকেই এসেছেন। এক সময়ে ইন্দিরা ঘনিষ্ঠ তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মনসুর আলি খান পতৌদিও এসেছিলেন। রাজপাট নিয়ে সরকারের সঙ্গে বাক-বিতন্ডা হওয়া রাজনীতিতে আসার কারণ বলে শোনা গিয়েছিল। ইন্দিরার আমলে রাজা বা নবাবদের উপাধি বা মসনদ নিয়ে নেওয়া হয়। শোনা গিয়েছে তাতেই প্রতিবাদী হয় ইন্দিরার প্রিয়পাত্র টাইগার পাতৌদি।
পতৌদি রাজনীতিতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যান। কিন্তু খুব সুবিধা কিছু করে উঠতে পারেননি। টাইগারের রাজপাটের মতো ১৯৭১-এ নেতৃত্ব চলে যায়। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন অজিত ওয়াদেকার। ওই সময়ে পতৌদি প্রায় একঘরে হয়ে গিয়েছিলেন পরে অবশ্য ইন্দিরার সৌজন্যে ফের সম্পর্ক ভালো হলে ১৯৭৩-এ দলে ফেরেন এবং ১৯৭৪ এর শেষ দিকে ফিরে পান অধিনায়কত্ব।
এমন অনেকেই ক্রিকেট বা ফুটবল মাঠ থেকে রাজনীতিতে এসেছেন। কীর্তি আজাদ, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়রা লোকসভার সদস্য হয়েছেন। বিদেশ বোস বর্তমানে তৃণমূলের বিধায়ক এবং অশোক দিন্দা বিজেপির বিধায়ক। লক্ষ্মীরতন শুক্ল তৃণমূলের বিধায়ক, এমনকি ক্রীড়ামন্ত্রী হয়েছিলেন। পরে অবশ্য রাজনীতি ছেড়ে আবার ময়দানে ফেরেন।
বর্তমান মমতা সরকারের ক্রীড়া দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি। তিনি দীর্ঘদিন বাংলা, পূর্বাঞ্চল হয়েও ক্রিকেট খেলেছেন এবং বর্তমানে বাংলা রঞ্জি দলের অধিনায়ক।
রাজা-রাজাদের আমলে কী ছিল অন্য বিষয়। কিন্তু ২২ গজের সঙ্গে সখ্যতা এবং জনপ্রতিনিধি-সহ মন্ত্রিত্ব এমন উদাহরণ বোধহয় ভারতে বিরল। মনোজের নেতৃত্বে বাংলা ক্রিকেট ফের রঞ্জি ট্রফিতে ফাইনালে যাওয়ার পথে। দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে বাংলা দল। লিগ ম্যাচের প্রায় সবগুলিতে সরাসারি জয় পেয়েছে মনোজের বাংলা।
আপাতত সেমিফাইনাল খেলছে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে ইন্দোর মাঠে। গতবার এই এমপির কাছে সেমিতে হেরে বিদায় নিয়েছিল বাংলা কিন্তু এবার দুর্দান্ত খেলে ফাইনালের পথে কি মন্ত্রী মনোজের বাংলা?
ইংল্যান্ড জাতীয় দলের কোচ হয়েছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (Brenodn McCulum)। তাঁর জায়গায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR Coach) নতুন কোচ হলেন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। বুধবার এই নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে নাইট রাইডার্স। রঞ্জিজয়ী মধ্যপ্রদেশের কোচকে আগামি আইপিএল-র জন্য কোচ হিসেবে নিয়োগ করলেন শাহরুখ খান-বেঙ্কি মাইসোরররা। কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর বলেন, 'কলকাতা দলে চন্দ্রকান্তকে পেয়ে আমরা দারুণ খুশি। তাঁর হাত ধরেই আমাদের দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ঘরোয়া ক্রিকেটে ওঁর সাফল্য রয়েছে। শ্রেয়স আয়ারের সঙ্গে ওঁর জুটি দেখার জন্য আমরা মুখিয়ে।'
এবার রঞ্জি ফাইনালে মুম্বইকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মধ্যপ্রদেশ। আর এই সাফল্যের পিছনে ছিলেন গুরু চন্দ্রকান্ত। ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচ হিসাবে তাঁর সাফল্য নজর কেড়েছিল। এবার আইপিএল মতো টুর্নামেন্টে দায়িত্ব পেয়ে চন্দ্রকান্ত বলেন, 'আমার কাছে এটা গর্বের দায়িত্ব। নাইটদের দলে থাকা একাধিক ক্রিকেটারের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। এই দল সম্পর্কে আমি জানি। এই দলের সাপোর্ট স্টাফ এবং ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।'
২০২১-এ আইপিএলের ফাইনালে উঠে হেরে গিয়েছিলেন শ্রেয়স আইয়াররা। এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’বার আইপিএল জিতেছে তারা। এবার চন্দ্রকান্তের হাত ধরে ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখছে কেকেআর।