টেট ২০২২ (TET 2022) আয়োজনে পর্ষদের ভূমিকায় সন্তুষ্ট বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবারের পর বুধবারেও তাঁর অবস্থান একই। এদিন বিচারপতি (Justice Ganguly) বলেন, "শিক্ষা পর্ষদ (Primary Board) যদি ভালো কাজ করে তার প্রশংসা আমি করবোই। সরকারের যদি সঠিক ভূমিকা থাকে তবে মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata) কাজের প্রশংসা করবো। আবার যদি দেখি শিক্ষা পর্ষদ কোনও ভুল কাজ করছে তবে তার সমালোচনাও আমি করবো। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই।"
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের একটি মামলা চলাকালীন এই মন্তব্য করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিকে, রবিবার রাজ্যজুড়ে হওয়া টেটে বসেন ৭ লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী। এই বিরাট আয়োজনকে সুষ্ঠু রাখতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য প্রশাসন। রবিবার ছুটির দিনেও পথে ছিল পর্যাপ্ত বাস, ছিল অতিরিক্ত ট্রেন।
কিন্তু প্রশাসনিক এই তৎপরতার সঙ্গেই একাধিক অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন কিছু পরীক্ষার্থী। কোথাও বায়োমেট্রিক বিকল, কোথাও অ্যাডমিট কার্ডে পরীক্ষা কেন্দ্রের ভুল ঠিকানার মতো অভিযোগ উঠেছে। তবে পরীক্ষার সন্ধ্যায় পর্ষদ সভাপতি দাবি করেছেন সুষ্ঠু হয়েছে চলতি বছরের টেট। এই আয়োজনের জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানান।
১১ নভেম্বর, ২০২২ আয়োজিত টেট (TET 2022) পরীক্ষার ব্যবস্থাপনায় সন্তোষপ্রকাশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Ganguly)। 'টেট হওয়ার পর কার্বন কপি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে কাজ ভালো হচ্ছে।' এই মন্তব্য করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একটি মামলার শুনানি চলাকালীন এহেন মন্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের।
নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টেট-২০২২ ওএমআর শিট সংরক্ষণ করা থাকবে। ৫.৫ লক্ষের বেশি ওএমআর শিট সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আদালতে জানালের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী। রবিবার রাজ্যজুড়ে টেটে বসেন ৭ লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী। আয়োজন সুষ্ঠু রাখতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছিল রাজ্য প্রশাসন। ছুটির দিন হলেও পথে ছিল পর্যাপ্ত বাস, ছিল অতিরিক্ত ট্রেনের ব্যবস্থা।
যদিও একাধিক অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন কিছু পরীক্ষার্থী। কোথাও বায়োমেট্রিক বিকল, কোথাও অ্যাডমিট কার্ডের পরীক্ষা কেন্দ্রের ভুল ঠিকানার মতো অভিযোগ উঠেছে। যদিও পরীক্ষার সন্ধ্যায় পর্ষদ সভাপতি দাবি করেছেন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে চলতি বছরের টেট পরীক্ষা। এই আয়োজনের জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ের অপেক্ষা, তার উপর লাগাতার আন্দোলন, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ, আদালতের কড়া দাওয়াই, হাজার টানাপোড়েন, সব কাটিয়ে অবশেষে রবিবার রাজ্যে (West Bengal) হয়ে গেল প্রাথমিক টেট (Primary TET) পরীক্ষা। মোটের উপর রাজ্যজুড়ে শান্তিপূর্ণ ভাবেই টেট হয়েছে বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কিন্তু রাজ্যজুড়ে চালচিত্র বলছে অন্য কথা। শহর কলকাতা (Kolkata) থেকে জেলা, একাধিক জায়গায় উঠে এল চরম ভোগান্তি আর অব্যবস্থার ছবি। অনেক পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ পরিবহণ ব্যবস্থা ঠিক ছিল না, রবিবার বলে যানবাহন কম ছিল। ফলে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। টেট পরীক্ষা দিলে পরিবহণের বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবকরা।
এদিকে শুধুমাত্র যানবাহন সমস্যাই নয়, পরীক্ষাকেন্দ্র খুঁজতে গিয়েও হাঁড়ির হাল পরীক্ষার্থীদের। টেট পরীক্ষা কেন্দ্রের ঠিকানা ভুল নিয়ে বিভ্রান্ত পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষার্থীদের এডমিট কার্ডে রয়েছে ভুল ঠিকানা। সল্টলেক লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠ এডি ব্লকে কিন্তু এডমিট কার্ডে লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠ বিডি ব্লক উল্লেখ করা রয়েছে। অভিযোগ, হেল্পলাইন নাম্বারে ফোন করে যোগাযোগ করলেও কোন রকম সহযোগিতা করা হয়নি। কোন্নগর বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে টেট পরীক্ষার সিট্ পড়ে। কিন্তু পিনকোডে ভুল থাকার জন্য অনেকেই পৌঁছন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কন্যা নগর স্কুলে। আবার এক স্কুলের বাইরে নোটিস দেখা যায় যে সেখানে নয়, পরীক্ষা রয়েছে সোদপুরের একটি স্কুলে। এরপরেই বিভ্রান্ত পরীক্ষার্থীদের গাড়ি করে নির্দিষ্ট স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে বিষয় থেমে থাকেনি এখানেই। অন্যান্য বিভ্রান্তির সঙ্গেই দেখা গেল হয়রানির আরও এক চিত্র। শাঁখা পলা খুলিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশের নির্দেশ, আর যার ফলে অগত্যা মহিলাদের সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে খুলতে হয় শাঁখা। এমনকি দূর দূরান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীরা ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে পারেননি, অথচ ব্যাগ বাইরে কোথায় রাখবেন তাও কিছু নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। ফলে ব্যাগে ফোন, পার্স ফেলে মানসিক অশান্তির মধ্যে পরীক্ষা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কড়াকড়ি করতে গিয়ে সেটা বারাবারিতে পরিণত হয়েছে, দাবি পরীক্ষার্থীদের।
তবে টেট পরীক্ষা শেষ হলেও শেষ হয়নি অশান্তি। কলকাতার প্রখ্যাত দেশপ্রিয় পার্ক তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে বিক্ষোভে সামিল হলেন পরীক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা নির্দিষ্ট সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছিলেন। পরীক্ষা শুরুর আগে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম বায়োমেট্রিক। কিন্তু তাঁদের সেই পদ্ধতি সম্পন্নই হয়নি বলে অভিযোগ। এদিকে বায়োমেট্রিক না হলে তাঁরা অনুপস্থিত বলে বিবেচিত হবেন বলে আশঙ্কা, আর তাতেই বিক্ষোভে সামিল পরীক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও খবর। যতক্ষণ না সমস্যার সমাধান হবে ততক্ষণ স্কুলেই অবস্থান করবেন বলে হুঁশিয়ারি পরীক্ষার্থীদের।
অপরদিকে দূর্ঘটনার কবলে টেট পরিক্ষার্থী। সিউড়ির মাঝি গ্রাম থেকে হেতমপুরে টেট পরিক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন পরীক্ষার্থী শুভশ্রী দে। সেই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মারে চারচাকা গাড়ি। ঘটনায় আহত শিশু সহ তিনজন। এদিন সকালে বাঁকুড়ার কোতুলপুর থেকে একটি গাড়িতে চাতরা রামাই পন্ডিত কলেজে টেটের পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গাড়িতে কলেজের একজন কর্মী ছাড়াও ছিলেন পুলিশকর্মীরা। সাঁইতাড়া ও মির্জাপুরের মাঝামাঝি গাড়িটি মুখোমুখি ধাক্কা মারে একটি পিক আপ ভ্যানে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কোতুলপুর থানার পুলিশ। এরপরই তড়িঘড়ি পুলিশের অপর একটি গাড়িতে করে প্রশ্নপত্র চাতরা রামাই পন্ডিত কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সভাপতি দাবি করেন, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে পরীক্ষা। এই আয়োজনকে সফল করার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ধন্যাব্দ জানান। পাশাপাশি পুলি প্রশাসনের ভূয়সী প্রশংসায় সরব ছিলেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল।
বিক্ষিপ্ত অভাব অভিযোগকে সঙ্গী করেই শেষ চলতি বছরের টেট পরীক্ষা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, প্রায় ৫ বছর পর রবিবার দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়েছিল চলতি বছরের টেট পরীক্ষা (TET 2022)। নির্ঘণ্ট মিলিয়ে শেষ হয় আড়াইটের সময়। রাজ্যের ১,৪৫৩টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯৩১ জন পরীক্ষার্থী (Teacher Aspirants) বেলা আড়াইটে পর্যন্ত পরীক্ষা দেন। বহু প্রতীক্ষিত এই পরীক্ষার সুষ্ঠু আয়োজনের স্বার্থে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের (Primary Board) অন্দরে সাজোসাজো রব। খোলা হয়েছিল পর্ষদের কন্ট্রোলরুম, জারি একাধিক বিধিনিষেধ। প্রশাসনের দাবি ছুটির দিন হলেও রাস্তায় ছিল পর্যাপ্ত সরকারি এবং বেসরকারি বাস। কলকাতার-শহরতলির পরীক্ষাকেন্দ্রে সময়ে পৌঁছতে এদিন সাতসকাল থেকে শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশনে ছিল পরীক্ষার্থীদের ভিড়।
ভিড় চোখে পড়েছে শহর লাগোয়া ফেরি ঘাটগুলোতেও। এদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার নির্দেশিকা দিয়েছিল পর্ষদ। কিন্তু পরিবহণ না পেয়ে, ট্রেন মিস করে অনেকে ১১টার পরেও পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। পর্ষদের বিশেষ অনুমতিক্রমে তাঁদের ঢুকতে অনুমতি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্র। পৌনে বারোটা এমনকি পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট আগেও অনেক পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে ঢুকতে দিয়েছে পর্ষদ। বায়োমেট্রিক পরিচয় সেরে তবেই আসনে বসার অনুমতি পেয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
জেলা এবং শহরের কিছু জায়গা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ঠিকানা ভুলের অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রের বাইরে ব্যাগ রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, এই অভিযোগ অনেক স্কুল থেকে এসেছে। এমনকি বিবাহিত মহিলা পরীক্ষার্থীদের অলঙ্কার এবং শাঁখা-লোহা খুলে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে হয়েছে বলেও অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছিল।
এদিকে, টেটের প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে রাজ্যের ছয় জেলায় সাময়িকভাবে সাসপেন্ড ইন্টারনেট পরিষেবা। পরীক্ষা কেন্দ্র নিয়ে সাময়িক অব্যবস্থার অভিযোগ উঠলেও সমস্যা সমাধানে সজাগ ও সতর্ক ছিলপর্ষদ, প্রশাসন বলে সূত্রের খবর।