সন্দেশখালিতে সাধারণ মানুষের জমি দখলের তদন্তে সক্রিয় সিবিআই। বুধবার এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে নথি-সহ সিবিআই দফতরে আসেন ৩ ব্যক্তি। অভিযোগকারীদের বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযোগ জানানোর জন্য আদালতের নির্দেশে সিবিআই-এর তরফে খোলা হয়েছে ইমেল আইডি।
সন্দেশখালিতে সাধারণ মানুষের জমি দখলের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে এই বিষয়টির তদন্ত করছে সিবিআই। অভিযোগ জানানোর জন্য আদালতের নির্দেশে সিবিআই-এর তরফে খোলা হয়েছে ইমেল আইডি। সন্দেশখালির বাসিন্দারা সেখানে নির্দ্বিধায় জানিয়েছিল, তাঁদের উপর শাহজাহান বাহিনীর অত্যাচারের অভিযোগ। এ নিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে নোটিস দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের তরফে।
গত মঙ্গলবারও অভিযোগকারী ১৬ জনকে নোটিস দিয়েছিল সিবিআই। এই অবস্থায় বুধবার সন্দেশখালির সুন্দরীখালি এলাকা থেকে নথি-সহ সিবিআই-এর সদর দফতর নিজাম প্যালেসে এলেন ৩ ব্যক্তি। অভিযোগ, তাঁদের জমি জোর করে দখল করেছিল শেখ শাহজাহান। বিষয়টি নিয়ে সিবিআই-এর কাছে তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এই প্রেক্ষিতেই বুধবার নথি সমেত সিবিআই দফতরে হাজির হন ৩ ব্যক্তি।
এদিকে, বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে অভিযোগকারীদের বয়ান রেকর্ডের কাজ। এরপর এই বয়ানের কপি জমা করা হবে কলকাতা হাইকোর্টে বলে সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এই সক্রিয়তায় সন্দেশখালির মানুষরা তাদের হারানো জমি ফিরে পান কিনা, সেটাই এখন দেখার।
'সন্দেশখালির বাঘ'-এর চোখে জল। একসময় যাঁর দাপটে বাঘে গরুতে একঘাটে জল খেত, আজ সে নিজের অশ্রু আর ধরে রাখতে পারলেন না। মেয়ের 'আব্বা' ডাক আর স্ত্রীয়ের কান্না শুনে একেবারে মুষড়ে পড়লেন বেতাজ বাদশাহ শেখ শাহজাহান। মুখ ঘুরিয়ে চোখের জল মোছার আগে স্ত্রীকে 'আল্লাহর কাছে দোঁহা' করার কথা বলেন। সোমবার বসিরহাট মহকুমা আদালতের বাইরে এক অন্য রূপ দেখা গেল শাহজাহানের।
সোমবার শাহজাহান, আলমগীর, শিবু হাজরা, মাফুজার মোল্লা, জিয়াউদ্দিন, দিদার-সহ মোট ১২ জনকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ। সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতাকে যখন প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন তাঁর স্ত্রী তসলিমা বিবি, মেয়ে ও পরিবারের কয়েকজন। তখনই ক্যামেরায় ধরা পড়ে এমন বিরল মুহূর্ত।
শাহজাহানের সাম্রাজ্যের পরতে পরতে শুধুই দুর্নীতির অভিযোগ। শাহজাহান ও তার অনুগামীদের বিরুদ্ধে জমছে অভিযোগের পাহাড়। ইতিমধ্যেই BLRO মাঠ দখলের অভিযোগ উঠে এসেছে শাহজাহান ও তার সাগরেদদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ মূলত মাঠটি দখল করেছিল শাহজাহান ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দার। তদন্তের গতি বাড়াতেই এবার ইডির হাতে এসেছে শাহজাহানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক তথ্য। তদন্ত বলছে সন্দেশখালিতে সরকারি টাকায় তৈরি হয়েছিল বাজার। কিন্তু সেই বাজারের চুক্তিপত্রে মালিক শেখ শাহজাহান। ২০১৯ সালে এই বাজারের উপর নিজের মালিকানা চাপায় শাহজাহান। বাজারের সমস্ত মাছ ব্যবসায়ীদের উপরও জোরজুলুম চালাত শাহজাহান বাহিনী। শাহজাহানের নিজস্ব ফিসারি কোম্পানি সাবিনা ফিশারিতে ব্যবসায়ীদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মাছ বিক্রয়ের জন্য জোর করত শাহজাহান বাহিনী।
এখানেই শেষ নয় শাহজাহানের দুর্নীতি। মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে আদায় করা হত তাদের রোজের ব্যবসার একাংশ। ব্যবসায়ীদের বলা হত এই টাকা সরকারকে দিতে হবে। কিন্তু টাকা কোনওদিনই জমা পড়ত না পঞ্চায়েতে। গরীব ব্যবসায়ীদের সেই টাকা সোজা পৌঁছে যেত শাহজাহান অনুগামীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
লোকসভা ভোটের আবহে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দের হাতে এবার কোন তথ্য এসে পৌঁছয় সেটাই দেখার।
সন্দেশখালিতে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শনিবার সন্দেশখালির বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালান সিবিআই-এর আধিকারিকরা। সেখানে অভিযোগকারীদের বয়ান রেকর্ড করেন তদন্তকারীরা। উত্তর ২৪ পরগণার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে চিঠি সিবিআইয়ের।
সন্দেশখালিতে সাধারণ মানুষের জমি দখলের ভুরিভুরি অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ জানানোর জন্য আদালতের নির্দেশে সিবিআই-এর তরফে খোলা হয়েছে ইমেল আইডি। সন্দেশখালির বাসিন্দারা সেখানে নির্দ্বিধায় জানিয়েছিল, তাঁদের উপর শাহজাহান বাহিনীর অত্যাচারের অভিযোগ। তথ্যপ্রমাণ-সহ সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শনিবার সন্দেশখালির বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালান সিবিআই-এর আধিকারিকরা। সেখানে জমি দখলের অভিযোগ খতিয়ে দেখেন তাঁরা।
সূত্রের খবর, অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর, তাঁদের বয়ানও নেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। এই প্রেক্ষিতে একাধিক বিষয় জানতে চেয়ে উত্তর ২৪ পরগনার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে চিঠি দেওয়া হয় সিবিআই-এর তরফে। সূত্রের খবর, চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, এই জমিগুলির আসল চরিত্র কী ছিল? কবে চরিত্র বদলানো হয়েছিল? জমির প্রকৃত মালিক কে? এমনকি বিডিও দফতর থেকেও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, রেজিস্ট্রি অফিস থেকেও জানতে চাওয়া হয়েছে যে, জমি রেজিস্ট্রি হয়ে থাকলে, সেই সময় জমির মালিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিনা? সিবিআই-এর এই সক্রিয়তায় জমি দখল সংক্রান্ত আর কোন কোন তথ্য উঠে আগামী দিনে উঠে আসে, সেটাই এখন দেখার।
জমি লুঠের পর এবার ইট ভাটাও গিলে খাওয়ার অভিযোগ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। সন্দেশখালির সরবেড়িয়ার ইটভাটা এসএনএফবি। বসিরহাটের ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় লিজ নিয়ে চালাচ্ছিলেন ভাটাটি। অভিযোগ, ভাটায় শ্রমিক সরবরাহ করতেন সরবেরিয়া আগারহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রাক্তন সদস্য মীজানুর রহমান মোল্লা। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সন্দেশখালিতে প্রভাব বাড়তে শুরু করে শাহজাহানের। সেই থেকেই ইটভাটায় নজর পড়ে মীজানুরের। তারপর শুরু হয় ইটভাটা হাতানোর ফন্দি।
ইটাভাটার লিজ নেওয়া ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ভাটা হাতিয়ে নিতে তাকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন মীজানুর। প্রাণভয়ে বসিরহাটের বাড়িতে ফিরে যান তিনি। এর মধ্যে দখল হয় ইটভাটা। ভাটা হারিয়ে দেনার দায় জর্জরিত হয়ে পড়েন ভবতোষ। মীজানুরের অত্যাচারে সর্বস্বান্ত হয়ে এখন প্রৌঢ়ের ঠাঁই বোনের বাড়িতে।
এখানেই শেষ নয়, ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় এক ব্যবসায়িক অংশীদার জানালেন, জ্বালানির কয়লা নিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা এখনও দেয়নি মীজানুর। গিয়েছিল শাহজাহানের কাছে বিচার চাইতেও। কিন্তু মেলেনি সুরাহা। তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাহাজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা মীজানুর রহমান মোল্লা।
ভয়,সন্ত্রাসে একদিন চাপা পড়ে ছিল সমস্ত অভিযোগ। শাহজাহানের গ্রেফতারির পর বেরিয়ে আসছে ক্ষোভ। জমি লুঠের পর এবার শাসকের থাবায় ইটভাটা? সন্দেশখালিকে কি ব্যক্তিগত সম্পত্তি বেছে নিয়েছিল শাহজাহান অ্যান্ড কোম্পানি?
সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহান ও তার অনুগামীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের জমি দখলের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে এই বিষয়টির তদন্ত করছে সিবিআই। শনিবার বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সন্দেশখালির বিভিন্ন এলাকায় যান সিবিআই-এর আধিকারিকরা। শনিবার তাঁরা মাঝের সরবেড়িয়া এলাকার শ্যামল ঘোষের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছন। সেখানে তাঁরা শ্যামল ঘোষের জমি সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখেন। পাশাপাশি, দখল হয়ে যাওয়া জমিটিও তাঁরা ঘুরে দেখেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা।
অন্যদিকে, শনিবারই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে সন্দেশখালির খুলনার ১০ নং পাড়ার সমীর মণ্ডলের বাড়িতে যান সিবিআই-এর ছয় সদস্যের একটি টিম। অভিযোগ, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালিয়েছিল শাহজাহান বাহিনী। সেই অভিযোগের তদন্ত করতেই শনিবার তাঁর বাড়িতে যান সিবিআই আধিকারিকরা। সেখানে তাঁরা সমীর মণ্ডলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
এর পাশাপাশি, মহন্ত সর্দারের বাড়িতেও যান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। মহন্ত সর্দারের অভিযোগ ছিল, মূলত শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগীরের বিরুদ্ধে। মহন্ত সর্দারের জমি আলমগীর দখল করেছিল বলে অভিযোগ। এ নিয়ে সিবিআই-এর কাছে অভিযোগ করেছিলেন মহন্ত সর্দার। সেই অভিযোগের তদন্ত করতেই শনিবার মহন্ত সর্দারের বাড়িতে যান সিবিআই-এর আধিকারিকরা। সিবিআই-এর এই তৎপরতায় জমি দখল সংক্রান্ত আর কোন কোন তথ্য আগামী দিনে উঠে আসে, সেটাই এখন দেখার।
ভোটের আগে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেকার যুবক যুবতীদের ট্রেনিং সন্দেশখালি থানায়। জুনিয়ার কনস্টেবল, হোমগার্ড বা সিভিক ভলেন্টিয়ার পোস্টে হবে চাকরি, তাই তার আগে নিতে হবে প্রশিক্ষণ। সন্দেশখালি থানার পক্ষ থেকে এমনই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বেকার যুবক-যুবতীদের কাছে।
সেই বার্তা পাওয়ার পরই সন্দেশখালির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েকশো বেকার যুবক-যুবতী যোগ দেন এই প্রশিক্ষণ শিবিরে। সন্দেশখালি থানার পাশে মিশন মাঠে বিগত ১০ দিন ধরে চলছিল বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ। বসিরহাট জেলা পুলিস থেকে দুজন প্রশিক্ষক এসে এই প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। ভোটের আগে আশায় বুক বেঁধেছিলেন সন্দেশখালির বেকার যুবক-যুবতীরা। প্রশিক্ষণ নিলেও সন্দেহ তৈরি হয়েছিল সন্দেশখালির তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। তার কারণ কোথাও কোনও ফর্ম ফিলাপ করা হয়নি। থানা থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেও, তাদের কাছ থেকে কোনও নথি সংগ্রহ করা হয়নি। শুধুমাত্র নাম এন্ট্রি করেই চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েই চলছিল এই প্রশিক্ষণ।
অভিযোগ, সিএন-এর ক্যামেরা দেখার পরই মুহূর্তের মধ্যেই উধাও প্রশিক্ষক। বাইকে চেপে মাঠ থেকে পালিয়ে গেলেন তিনি। কেন সিএন-এর ক্যামেরা দেখার পরেই পালিয়ে গেলেন ওই প্রশিক্ষক? প্রশ্ন তুললেন প্রশিক্ষণ নিতে আশা যুবক-যুবতীরা। তাদের কথায়, এভাবে উনাকে কোনওদিন পালিয়ে যেতে দেখিনি। এখন আপনাদের দেখে পালিয়ে যাচ্ছে মানেই, আমাদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তাহলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েই কি আমাদেরকে এভাবে মাঠে ডেকে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হল?
যদিও চাকরি দেওয়ার নাম করে এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার বক্তব্যকে খন্ডন করলেন বসিরহাট পুলিস জেলার সুপার মেহেদী হোসেন রহমান। তিনি বলেন, এরা চাকরির কোন প্রশিক্ষণ নয়। বসিরহাট পুলিস জেলা থেকে কোনও রিকুরমেন্টও হচ্ছে না। ভোটের আগে সন্দেশখালি থানার সিভিক ও কনস্টেবলদের ফিটনেস ঠিক করার জন্য এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে কিছু গ্রামের মানুষ যোগ দিয়েছেন। এটা একটা ভুল প্রচার হচ্ছে।
কিন্তু আজকে যখন, সিএন-এর প্রতিনিধি মিশন মাঠে পৌঁছয়, তখন কোনও থানার সিভিক বা কনস্টেবলকে প্রশিক্ষণ নিতে দেখা যায়নি। প্রশিক্ষণ নিতে আসা যুবক-যুবতীরা কেউ সন্দেশখালি থানার সিভিক বা কনস্টেবল পদে চাকরিও করেন না। বিগত দশদিন তাদের কি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে? তাহলে পুলিস সুপারের কাছেও কি তথ্য সঠিক নেই? ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে বলেই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন বসিরহাট পুলিস জেলার সুপার।
শাহজাহান এবং তাঁর সাগরেদ মিলে সন্দেশখালি জুড়ে ভয়াবহ অত্যাচার চালিয়েছে, তা এতদিনে রাজ্যবাসী শুনেছে। তবে বিচারপ্রক্রিয়া এখনও চলছে। তাই সেসব পদক্ষেপ মেনেই কড়া হাতে সিবিআই সন্দেশখালির সব মামলার তদন্ত করছে। সম্প্রতি সিবিআইকে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল সন্দেশখালির সমস্ত বাসিন্দাদের অভিযোগ নিতে এক ওয়েবসাইট বা ইমেইল খোলার। জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের তৈরি সেই ইমেলে জমা পড়েছে প্রায় ৬৫০-রও বেশি অভিযোগ। এবার সেই সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগকারীদের বয়ান রেকর্ড করতে ১০ জনের এক টিম গঠন করেছে সিবিআই। সন্দেশখালিতে অভিযোগকারীদের কাছে পৌঁছে তাঁরা রেকর্ড করবে সবটা।
কলকাতা হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ২ মে। এখন দেখার নতুন করে উঠে আসা অভিযোগে যাচাই করে, সন্দেশখালির অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন কঠিন পদক্ষেপ নেয় আদালত।
সন্দেশখালিকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শাহজাহানের ভাই আলমগীর শেখকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। এরপর আলমগীর শেখ এবং শেখ শাহজাহানের অন্যতম সহযোগী শিবপ্রসাদ হাজরা ও দিদার বাক্স মোল্লাকে সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি দফতরে নিয়ে আসা হল।
সূত্রের খবর, শেখ আলমগীর বন্দুক, পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। সাধারণ মানুষদের হুমকি দিয়ে বেড়াতেন। এমনকি শেখ আলমগীর শিবু হাজরার সঙ্গে যোগসাজশ করে সাধারণ মানুষের অর্থের অপব্যবহার করেছেন। শুধু তাই নয়, শিবু হাজরা কন্ট্রাক্টরদের হুমকি দিতেন। কন্ট্রাক্টরদের একপ্রকার বাধ্য করতেন এসকে এসটি ব্রিক ফিল্ড থেকে ইট কিনবার জন্য।
অভিযোগ, শেখ শাহজাহানের নাম করে তার সহযোগী শিবু হাজরা জমি দখল, অগ্নিসংযোগ, খুন, চাঁদাবাজি, হুমকি দিতেন সাধারণ মানুষদের। এই শিবু হাজরা বেনামি সম্পত্তিতে জড়িত ছিলেন। শিবপ্রসাদ হাজরা শিব এন্টারপ্রাইজের মালিক। এই শিব এন্টারপ্রাইজ এর ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট থেকে দেখা গিয়েছে সেখানে প্রচুর পরিমাণের অর্থ লেনদেন হয়েছে। এই অর্থ জমি দখলের বলে ধারণা তদন্তকারী সংস্থার। সেই কারণেই শেখ আলমগীর, শিবু হাজরা ও দিদার বাক্স মোল্লাকে জমি সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য় ইডি দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
সিবিআই তদন্ত হলে ভালই হবে। ইডি দফতর থেকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথাই বললেন সন্দেশখালির বাঘ শেখ শাহজাহান। বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট সন্দেশখালির ঘটনার তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে দিয়েছে। হঠাৎ করে শেখ শাহজাহানের এই সুর বদলে নতুন জল্পনা তৈরি হয়েছে।
যদিও শাহজাহান এই মুহূর্তে ইডি হেফাজতে রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে মেডিকেল চেকআপের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় জোকা ইএসআই হাসপাতালে। ইডি দফতর থেকে বেরোনোর সময় শেখ শাহজাহানকে প্রশ্ন করা হয় যে এবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়, উত্তরে শাহজাহান বলে সিবিআই তদন্ত হলে খুব ভালো হবে। প্রশ্ন করা হয় ইডি ও তদন্ত করছে উত্তরে বলেন সবটাই ভালো হবে।
হঠাৎ করে শেখ শাহজাহানের এই সুর বদলে রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপি কটাক্ষ করে বলেছে, শেখ শাহজাহান বুঝে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। সেকারণেই এখন সিবিআইয়ের হয়ে কথা বলছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গতকালই সন্দেশখালির ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে দিয়েছে। এবং সন্দেশখালির বাসিন্দারা সরাসরি সিবিআইকে অভিযোগ জানাতে পারবেন। সেই সঙ্গে সন্দেশখালিকতে স্পর্শ কাতর এলাকায় সিসিটিভি এবং বড় আলো বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সন্দেশখালির ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চের নির্দেশ, এব্যাপারে রাজ্যকে সব রকম সাহায্য করতে হবে। সেখানকার মানুষ তাদের অভিযোগ সরাসরি সিবিআইকে জানাতে পারবে। এজন্য সিবিআইকে আলাদা পোর্টাল তৈরি করতে হবে। জমি দখল, ধর্ষণ, চাষের জমিকে ভেড়িতে পরিবর্তন করা সহ সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই। আদালতের নজরদারিতে হবে তদন্ত। স্পর্শকাতর এলাকায় ১৫ দিনের মধ্যে সিসিটিভি বসাতে হবে। বসাতে হবে এলইডি আলো। সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া আদালত যে কোনও পদমর্যাদার যেকোন ব্যক্তিকে তদন্তের স্বার্থে ডেকে পাঠাতে পারবে সিবিআই। ২ মে পরবর্তী শুনানির দিন তদন্তে অগ্রগতির রিপোর্ট দেবে সিবিআই।
এর আগে গত পাঁচ জানুয়ারি শেখ শাহজাহানের বাড়িতে গিয়ে ইডির আধিকারিকদের ওপরে হামলার ঘটনার তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআই আধিকারিকরা তদন্ত করতে সন্দেশখালির আকুঞ্জিপাড়ায় শেখ শাহজাহানের বাড়ি যাওয়ার পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীকে ডেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এদিন আদেশ দিতে গিয়ে আদালত বলেছে, সন্দেশখালির ঘটনার কথা বিবেচনা করে আদালত মনে করে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। তাই আদালত মনে করে যে এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হোক, সরকারকে তাঁকে যথাযথ সহায়তা করতে হবে। আদালতের তরফে আদেশে বলা হয়েছে, অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি পোর্টাল ও ইমেল আইডি চাবলু করতে হবে। জেলাশাসককে এব্যাপারে তারিখ উল্লেখ করে পর্যাপ্ত প্রচার চালাতে হবে। আদালত বলেছে, সিবিআই জমি দখলের অভিযোগের তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিল করবে। সাধারণ মানুষ ছাড়াও সরকারি, বেসরকারি যে কোনও ব্যক্তি কিংবা সংস্থার (এনজিও) কর্তাব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অন্যদিকে আদালত পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
রেশন বণ্টন দুর্নীতির পরতে পরতে রহস্য। এই দুর্নীতির তদন্তে নেমে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। জমি দখল, রেশন দুর্নীতি সহ একাধিক মামলায় ইতিমধ্যে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছে শেখ শাহজাহান। একাধিক তথ্য প্রমাণ সামনে রেখে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন ইডি আধিকারিকেরা। শুধুমাত্র শেখ শাহাজাহান নয় সন্দেশখালি জুড়ে বাহুবলে জমি দখলে যুক্ত ছিলেন শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগীর সহ শিবু হাজরা ও দিদার বক্স। তদন্তের আরও গভীরে পৌঁছতে তাই আগামী দিনে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে তাঁদের বলে মনে করছেন আধিকারিকরা। তাই এই তিন অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাতে চাইছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
গত সোমবার শাহজাহানের স্ত্রীকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি আধিকারিকরা। আর এবার মাছ সংক্রান্ত মামলায় শেখ শাহজাহানের স্ত্রীকে তলব ইডির। চলতি সপ্তাহেই তাকে ইডির দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে বলে খবর।
ফের শেখ শাহজাহানের স্ত্রীকে তলব করল ইডি। গতকাল অর্থাৎ সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় চলেছে তলব। আগামী বুধবার আবার সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানের স্ত্রীকে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরার পাঠিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সূত্রের খবর, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে চলছে এই জিজ্ঞাসাবাদ।
গতকাল, সোমবার সকাল ১০ নাগাদ শেখ শাহজাহানের স্ত্রী তসলিমা বিবি তাঁর আইনজীবিকে নিয়ে ইডি দফতরে হাজির হন। প্রায় ১১ ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ন'টা নাগাদ ইডির অফিস থেকে বেরিয়ে যান তিনি। তারপর একদিন যেতে না যেতেই আবারও তলব করা হয়েছে শাহজাহান স্ত্রী তসলিমা বিবিকে। ইডি সূত্রে খবর, শাহজাহানের ব্যবসার গোপন তথ্য জানতেই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ইডি অফিসাররা।
গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলায় তল্লাশি করতে গিয়ে সন্দেশখালিতে আক্রান্ত হয় ইডি। সেই হামলা ঘটনার পর থেকে ৫৫ দিন বেপাত্তা ছিলেন তৃণমূল নেতা শেখ শাহাজাহান। তারপর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয় তাঁকে গেফতার করা হয়। আদালতে হাজিরার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল শাহজাহানকে। তখন আদালতকে শাহজাহান জানিয়েছিলেন, স্ত্রীর অসুস্থতার জন্যই তিনি হাজিরা দিতে পারছেন না। সোমবার ইডির অফিসেই প্রথম প্রকাশ্যে এলেন শাহজাহানের স্ত্রী তসলিমা বিবি।
ফের উত্তপ্ত সন্দেশখালি। ইডির উপর হামলার পর এবার আক্রান্ত পুলিস। গতকাল অর্থাৎ সোমবার রাতে সন্দেশখালির শীতলিয়ার পুলিস ক্যাম্পে ঘটে দুষ্কৃতী হামলা। আর সেই হামলায় আক্রান্ত হন সন্দীপ সাহা নামে একজন পুলিসকর্মী। এই ঘটনায় সন্দেহভাজনভাবে তিন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিস। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।
পুলিস সূত্রে খবর, সোমবার রাত ১১ টা নাগাদ সন্দেশখালির শীতলিয়া পুলিস ক্যাম্পে আচমকা হামলা চালায় কয়েকজন দুষ্কৃতী। অভিযোগ, ক্য়াম্পের পুলিস কর্মীদের উপর চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। তখনই আহত হন এক পুলিসকর্মী। এরপর তড়িঘড়ি আহত অবস্থায় প্রথমে তাঁকে খুলনা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি ওই আহত পুলিসকর্মীর শারীরিক অবস্থা।
তবে পুলিস ক্য়াম্পে কে বা কারা এই হামলা চালিয়েছে, কিংবা ঠিক কী উদ্দশ্য়ে ঘটানো হল এমন ঘটনা তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিস। গত জানুয়ারি মাসে ইডি হানার পর থেকে সন্দেশখালিকাণ্ডে তোলপাড়া হয়েছিল গোটা রাজ্য়। তারপর একেক করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারির পর কিছুটা হলেও শান্ত হয়েছিল সন্দেশখালি। তাহলে আবার কী কারণে রণক্ষেত্রে পরিণত হল সন্দেশখালি?
প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ, শক্তিস্বরূপা তকমা, রাতারাতি যেন সেলিব্রেটি রেখা পাত্র। মোদীর ফোনের পরদিনই সন্দেশখালিতে পা রেখা পাত্রর। গ্রামে খবর পৌঁছেছিল আগেই, রেখাকে দেখতে সন্দেশখালি ফেরিঘাটে ভিড় জমিয়েছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। পোস্টার বিরোধিতা অতীত, প্রথমদিনে রেখাকে জড়িয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসল সন্দেশখালি। আবেগে চোখে জল রেখার।
বিজেপি সূত্রের খবর, সন্দেশখালির আন্দোলন-প্রতিবাদের মুখ রেখা পাত্রকে প্রার্থী হিসেবে বেছেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। নদীপাড়ের পথ ধরেই এবার আরও বড় আন্দোলনের পথে এগোচ্ছেন রেখা। সন্দেশখালি পৌঁছে প্রণাম করলেন মাটিতে লুটিয়ে।
কোথাও আবির, কোথাও মালা, কোথাও ফুল। গ্রামের মেয়েকে বরণ করতে নাচ-গানে সামিল গোটা সন্দেশখালি। লোকসভা ভোটের ফলের পর আনন্দ হবে আরও, দাবি রেখার। রেখা পাত্রই বিজেপির অন্যতম 'মাস্টারস্ট্রোক' হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।