শনিবার বকেয়া ডিএ (DA) বা মহার্ঘ্য ভাতার দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের একটি সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের (Sangrami Joutha Mancha) আন্দোলন ১০০ তম দিনে পড়ল। ডিএ বা মহার্ঘ্য ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই শহীদ মিনারে (Sahid Minar) বসে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছেন তাঁরা। আজ অর্থাৎ শনিবার আদালতের অনুমতি নিয়েই মমতা ও অভিষেকের পাড়ায় মিছিল করবেন ডিএ আন্দোলনকারীরা।
সূত্রের খবর, শনিবার বেলা একটা থেকেই এই মিছিল শুরু হবে। শুরুর আগে ১০০টি শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে তাঁদের এই মিছিল শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিএ আন্দোলনকারীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সূত্রে খবর, তাঁদের এই মিছিল বন্ধ করতে জনস্বার্থ মামলাও করে রাজ্য সরকার। যদিও বিচারপতি ওই আবেদন নাকচ করে দেয়, এবং হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা অভিষেকের পাড়ায় অর্থাৎ হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে তাঁদের মিছিল করার অনুমতি দেয়। অবশ্য সেই মিছিল হতে হবে শান্তিপূর্ণ।
ডিএ আন্দোলনকারীদের এই মিছিল নিয়ে পূর্বেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গেছে বিরক্তির সুর। পাশাপাশি একই সুর শোনা গেছে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। এবার তাঁদের পাড়াতেই এই মিছিল যে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াবে সেটা বলাই বাহুল্য।
ওদিকে আন্দোলনকারী অর্থাৎ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষে দাবী আদালতের নির্দেশে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হলেও তাতে কোনও লাভ হয়নি। এবং তাঁদের দাবি, যে কোন রকম উপায়ই হোক তাঁদের সঙ্গে সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে মধ্যস্থতা করতে হবে এবং বকেয়া ডিএ পরিশোধ করতে হবে।
দাবি না মেটা পর্যন্ত চলবে আন্দোলন, বাড়বে প্রতিবাদের ঝাঁঝ। এই ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন ডিএ-র (DA Agitation) দাবিতে আন্দোলনরত সরকারী কর্মীরা। এবার ধর্মঘটের ডাক সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের। আগামি ৯ মার্চ সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকার পোষিত অফিসে এই ধর্মঘটের (Bandh in Government office) ডাক দেওয়া হয়েছে। মূলত বকেয়া ডিএ প্রদান, কেন্দ্র-রাজ্যের ডিএ ফারাক কমানো এবং শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে শহিদ মিনারের (Sahid Minar) পাদদেশে চলছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অবস্থান বিক্ষোভ।
পাশাপাশি তাঁরা অনশন আন্দোলন করছেন। এবার সরকারের উপর আরও চাপ বাড়াতে ধর্মঘটের পথে হাঁটছেন তাঁরা। এমনটাই সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের দাবি। তাঁরা জানান, 'ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে এভাবে আন্দোলনের পথে হাঁটতেই হবে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কিছু করতেই হবে। আমরা যা করছি গণতান্ত্রিক পরিসরে থেকেই করছি।' ইতিমধ্যে রাজ্য বাজেটে ৩% ডিএ ঘোষণা করেছে সরকার, মার্চ থেকেই কার্যকর সেই মহার্ঘ ভাতা।
কিন্তু তারপরেও ডিএ প্রদানের শতাংশ নিয়ে অসন্তোষ সরকারি কর্মীদের মধ্যে। তাই দাবি আদায়ে শহিদ মিনারে অবস্থান বিক্ষোভ মঞ্চ থেকেই আরও বড় আন্দোলনের ডাক সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের। ৯ মার্চ ধর্মঘট কী আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়ানোর প্রথম ধাপ? এই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে রাজনৈতিক মহলে।
বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার (DA) দাবিতে শহিদ মিনারে (Sahid Minar) অবস্থান বিক্ষোভের ২৫ দিন। পাশাপাশি লাগাতার অনশনের (Fast onto Death) ১১তম দিন। এই আন্দোলনের মধ্যেই সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ সোমবার এবং মঙ্গলবার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। এই দু'দিন কোনও সরকারী এবং সরকার পোষিত প্রতিষ্ঠানে কাজ হবে না। নবান্নের (Nabanna) উপর চাপ বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের। ৩০টির বেশি সরকারি কর্মীদের সংগঠন এই যৌথ মঞ্চের সদস্য। সেই কর্মবিরতির (Cease Work) প্রথম দিন শহরের একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘুরে কর্মবিরতির সমর্থনে অনুপস্থিতির ছবিই দেখা গিয়েছে।
মহাকরণ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, খাদ্য ভবন, বিকাশ ভবন, নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ের মতো একাধিক জায়গায় কর্মবিরতির সমর্থনে সরকারি কর্মীদের 'নিষ্ক্রিয়' (পেন ডাউন) হয়ে বসে থাকার দৃশ্য চোখে পড়েছে। অনেক জায়গায় আবার সই করে কর্মীদের বেড়িয়ে যেতেও দেখে গিয়েছে। এই কর্মবিরতি রুখতে ইতিমধ্যে কড়া সার্কুলার জারি করেছে অর্থ দফতর। কিন্তু সেই সরকারি সার্কুলার উপেক্ষা করেই চলছে পাহাড়-জঙ্গলমহল, পুরুলিয়া থেকে বসিরহাট কর্মবিরতি। এমনটাই সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের এক সদস্যের দাবি।
এদিকে, টানা ১১দিন অনশনে থাকা এক মহিলা সোমবার শহিদ মিনারের মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক আন্দোলনকারী জানান, 'প্রতিদিন কেউ না কেউ অসুস্থ হচ্ছেন। হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসা হচ্ছে না। সরকার নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে রয়েছে। এটা কী অমানবিক রূপ।'
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা DA-র দাবিতে সরকারি কর্মীদের অবস্থান আন্দোলনের ১৯তম দিন। পাশাপাশি অনশন কর্মসূচির পঞ্চম দিন। ইতিমধ্যে দু'জন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে এতেও থামবে না আন্দোলনের ঝাঁঝ, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে ডিএ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। সরকারি কর্মচারীদের ৩৪টি সংগঠনের এই মঞ্চ বকেয়া ডিএ-র দাবিতে শহিদ মিনারে গত প্রায় তিন সপ্তাহ অবস্থান আন্দোলন করছে। আগামি দু'দিনের মধ্যে সরকার বকেয়া ডিএ না মেটালে পঞ্চায়েত ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছেন সরকারি কর্মীরা। এই মর্মে তারা রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখছে।
বকেয়া ডিএ না মেটালে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না কোনও সরকারি কর্মচারী। এমন হুঁশিয়ারি রাজ্যের প্রতি ছুড়ে দিয়েছেন সরকারি কর্মীরা। এদিকে, এই আন্দোলন মঞ্চ থেকে স্কুলে পড়ুয়াদের পোশাক দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আনলো সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। DA অবস্থান মঞ্চ থেকে ৭০০ কোটি টাকার পোশাক দুর্নীতি হয়েছে বলে ব্যানারে অভিযোগ সরকারি কর্মীদের।
অভিযোগ, একজন পড়ুয়ার প্রতি পোশাকের জন্য বরাদ্দ ৬০০ টাকা। যে মানের পোশাক দেওয়া হয়, তার মূল্য আড়াইশো টাকার বেশি নয়। রাজ্য প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ২ কোটি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। প্রতি পড়ুয়াপিছু ৩৫০ টাকা করে কাটমানি খাওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৭০০ কোটি টাকা কাটমানি কার পকেটে যাচ্ছে? এই প্রশ্ন তুলে সরব DA অবস্থান মঞ্চের আন্দোলনকারীরা।
কলকাতা রাজপথ এতদিন অনেক আন্দোলনের (Protest in Kolkata) সাক্ষী থেকেছে। চাকরীপ্রার্থীদের ন্যায্য চাকরির দাবিতে আন্দোলন, রাজ্যে সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক কর্মসূচি, রাজনৈতিক আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে এই শহর কলকাতা। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন সরকারী কর্মচারীদের ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন। শহিদ মিনারের সামনে ডিএ (DA) বকেয়া দাবি নিয়ে সরকারি কর্মচারী (Employee Federation) এবং ২৮টি সংগঠন যৌথভাবে শুক্রবার রাত থেকেই অবস্থান বিক্ষোভে বসে। মূলত তাঁদের দাবি রাজ্য সরকারকে বকেয়া ডিএ দিতে হবে এবং শূন্যপদে স্থায়ী নিয়োগ করতে হবে।
শুক্রবার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে একটি মিছিলের মধ্য দিয়ে এই আন্দোলনের শুরু। জানা গিয়েছে, বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে অবস্থান বিক্ষোভের অনুমতি চেয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল এবং হাইকোর্টের অনুমতি পেয়েই এই অবস্থান আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা জানান,'২০০৯ থেকে তাঁদের ডিএ দিতে হবে। যা যা পাওনা আছে, সেগুলি বকেয়া-সহ দিতে হবে। এছাড়াও আমাদের আরেকটি দাবি, সমস্ত শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগ করতে হবে।'
তাঁরা জানান, 'রাতভর তাঁরা এই অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়েছে এবং যতদিন না পর্যন্ত রাজ্য তাঁদের এই দাবি মানছে, ততদিন চলবে এই অবস্থান। এই মাঠ ভরানোর দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি।' এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য অবিলম্বে তাঁদের দাবি পূরণ না হলে এই আন্দোলন আগামী দিনে বৃহত্তর রূপ নিতে পারে সে নিয়ে কোনও প্রশ্নই থাকছে না রাজনৈতিক মহলে।