প্রায় ৪৬ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। এখনও বিষ্ণপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষের পরিবারের মালিকানাধীন চালকলে তল্লাশি চালাচ্ছেন আয়কর দফতরের আধিকারিকরা। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়ক তন্ময় ঘোষের বাড়ি, চালকল এবং কার্যালয়ে গত বুধবার হানা দিয়েছিল আয়কর দফতর। তল্লাশি অভিযান চলতে থাকায় বুধবার থেকে মিলেই আটকে রয়েছেন অফিস কর্মীরা। বিধায়ক তন্ময় ঘোষ বৃহস্পতিবার প্রায় ১৩ ঘণ্টা রাইস মিলে ছিলেন। রাত্রি সাড়ে ন'টা নাগাদ সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার ১৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর আজ, শুক্রবার ফের তন্ময় ঘোষকে ডেকে পাঠান আয়কর দফতরের আধিকারিকরা। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ রাইস মিলে ঢোকেন বিধায়ক। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তন্ময় ঘোষের সমস্ত নথি পুনরায় খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। পাশাপাশি বুধবার বিধায়কের দফতর লাগোয়া একটি অতিথিশালা এবং মদের দোকানেও তল্লাশি চালান তদন্তকারী আধিকারিকরা। তল্লাশি চালানোর সময় পুরো এলাকা ঘিরে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনী।
উল্লেখ্য, তন্ময় ঘোষ পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ২০১৫ সাল থেকে রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে বিজেপি প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বিজেপির টিকিটে জয়লাভ করেও ৩০ অগাস্ট তিনি ফের তৃণমূলে যোগ দেন। সেই তন্ময় ঘোষের সম্পত্তির পরিমাণ কত জানেন? ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বলছে, ২০১৬ সালে তাঁর আয় ছিল ৭ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৪৫ টাকা। ২০১৯ সালে তা দাঁড়ায় ২৮ লক্ষ ৫৯ হাজার ২৩০ টাকা। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৭৪৮ টাকা।
গরু পাচার-কাণ্ডে (Cow Smuggling Case) সিবিআইয়ের র্যাডারে এবার অনুব্রত মণ্ডলের ভাগ্নে রাজা ঘোষ। তাঁর মায়ের নামে রয়েছে শিবশম্ভু রাইস মিল। পাশাপাশি তাঁর বাবার নামেও একাধিক সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে সিবিআই (CBI)। সেসব তথ্য জানার জন্য সিবিআই অস্থায়ী ক্যাম্পে ডাকা হয়েছে তৃণমূল নেতার (Anubrata Mondal) ভাগ্নেকে এমনটাই সূত্রের খবর। বুধবার আবার সিবিআই হানা দেয় বোলপুর রেজিস্ট্রি অফিসে। অনুব্রতর ভাগ্নে ও দিদি জামাইবাবুর সম্পত্তির উৎস খুঁজতেই নেতাজি মার্কেটের রেজিস্ট্রি অফিসে হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
পাশাপাশি সোমবারের মধ্যে সুকন্যা মণ্ডলকে তলব করেছে সিবিআই। তাঁর নামে থাকা দুটি সংস্থার আয়-ব্যায় সংক্রান্ত হিসেব এবং রাইস মিল সংক্রান্ত একাধিক তথ্য খতিয়ে দেখে এই তলব বলে সিবিআই সূত্রে খবর। সূত্রের খবর, বিশ্বজুড়ে মহামারী পরিস্থিতিতে অনুব্রত-কন্যার আয় বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ছিল ৫১ লক্ষ ৪১ হাজার ৩২১ টাকা। ভারতে প্রথম করোনা ধরা পড়েছিল ২০২০-র ৩০ জানুয়ারি। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রথম লকডাউন হয়েছে মার্চের শেষের দিকে। সেই সময় বহু মানুষ কাজ হারান। স্বজন হারান লক্ষাধিক মানুষ। সেই সময়কালে অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সুকন্যার বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৪৪ লক্ষ ৯৪ হাজার ৯০ টাকা।
গোরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে দাখিল চার্জশিটে এই তথ্য তুলে ধরেছে সিবিআই। প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষিকার উল্কাগতিতে এই আয় বৃদ্ধির উৎস কী, জানতে চায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। চার্জশিটে পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে অনুব্রতর একমাত্র কন্যার বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৩ লক্ষ ৯ হাজার টাকা। সাত বছরে তা বেড়ে হয় দেড় কোটি। বৃদ্ধির হার প্রায় ৫০ গুণ! অথচ ওই একই সময়ে (২০১৩-২০১৪ থেকে ২০২০-২০২১) খোদ অনুব্রতর আয় ৫ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকা। তাঁর স্ত্রী ছবি দেবীর আয় ৪ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৪ লক্ষ টাকা।
অনুব্রতর পরিবারের সদস্যদের এই আয়বৃদ্ধির খতিয়ান চার্জশিটে তুলে ধরেছে সিবিআই। বিপুল আয় বৃদ্ধির রহস্য কী? চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, অনুব্রতর পারিবারিক সম্পত্তি ভোলে ব্যোম রাইস মিলের মুনাফা বৃদ্ধি আয় বাড়িয়েছে বহুগুণ। ২০১৫-২০১৬ অর্থবর্ষে ওই মিলের মুনাফা ছিল মাত্র এক লক্ষ টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থবর্ষে সেই লাভের পরিমাণ লাফিয়ে হয়েছে ২ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই রাইস মিলের ডিরেক্টর পদে রয়েছেন সুকন্যা। এছাড়াও দু’টি ‘অলাভজনক’ কোম্পানি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। মণ্ডল পরিবারের ছোঁয়ায় সেগুলিও মাত্র ক’বছরে ফুলে ফেপে ওঠে। আয়কর বিভাগে অনুব্রতর দাখিল করা তথ্য থেকে আয়বৃদ্ধির এই উল্কাগতির সন্ধান মিলেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের একটি সূত্রের।
গোরুপাচারকাণ্ডে এনামুলের ভাগ্নে পিন্টু শেখের রাইস মিলে দিনভর তল্লাশি চালাল সিআইডি। রাইস মিল থেকে একটি ট্রেলার ট্রাক ও মারুতি সুইফ্ট গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এছাড়া, রাইসমিলের একাধিক কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করে মিলটিকে সিল করে দেন সিআইডি আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, গোরুপাচারকাণ্ডে এনামুলকে হেফাজতে নিয়ে সিবিআই সাক্ষী করেছিল তারই ভাগ্নে পিন্টু শেখকে। শুক্রবার সকালে সিআইডির এক ডিএসপি-র নেতৃত্বে তদন্তকারী দলের সদস্যরা বহরমপুর থেকে রঘুনাথগঞ্জ থানার অন্তর্গত তালাই মোড়ের কাছে একটি রাইস মিলে গিয়ে পৌঁছন। সারা দুপুর ধরে তল্লাশি চালানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, 'জেএইচএম' নামক বিশাল ওই চালের মিলটির মালিক ছিলেন এনামুলের তিন ভাগ্নে। জাহাঙ্গির, হুমায়ুন ও মেহেদি হাসানের মালিকানায় চলত এই মিল। তাদের নামের প্রথম অক্ষর দিয়েই মিলের নাম রাখা হয়। সিআইডি আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, হুমায়ূন আসলে পিন্টুর আসল নাম। রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় তার নামে ও বেনামে প্রচুর সম্পত্তি। তবে মালিকানা সংক্রান্ত বিবাদের জেরে, উৎপাদন শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে মিলটি বন্ধ হয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। তবে সম্প্রতি ওই মিলে একটি স্কুল তৈরির কাজ চলছিল।
সিআইডি আধিকারিকরা শুক্রবার মিলের ভেতরে থাকা কর্মীদের সঙ্গে প্রায় ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে কথা বলেন এবং জানতে চান কারা মিলের ভেতরে আসতেন এবং কী ধরনের কাজ মিলের ভিতরে হত। এদিন সন্ধ্যায় সিআইডি আধিকারিকরা নবগ্রাম থানার অন্তর্গত পলসন্ডার কাছে একটি রাইস মিলে হানা দেন। এই মিলটিও এনামুলের ঘনিষ্ঠ গোরুপাচারকারীর মালিকাধীন বলেই জানতে পেরেছেন আধিকারিকরা।
গরু পাচারের (Cow Smuggling) কোটি কোটি টাকার কমিশন (Commission) সরাতে ব্যবহার করা হত ক্যাশ ভ্যান (Cash Van)। এই কাজের সুবাদে তিনটি নিরাপত্তা সংস্থাকে নজরদারির আওতায় এনেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূম ও কলকাতায় এই সংস্থার কার্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে সিবিআই জানতে পেরেছে, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং পুরুলিয়ায় তৈরি হয়েছিল ত্রিস্তরীয় বলয়।
কোন গাড়িতে কত টাকা পাঠানো হচ্ছে, তার মেসেজ আসত সায়গলের হোয়াটসঅ্যাপে। ভোলে বোম রাইস মিলে তল্লাশি চালিয়ে যে কালো গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছেন সিবিআই কর্তারা, সেটিকেই টাকা পাচারের কাজে ব্যবহার করত সায়গল, এমনটাই জানা গিয়েছে সিবিআই সূত্রে।
অন্যদিকে, সিবিআইয়ের (cbi) কোনও অভিযানের (Raid) খবর বীরভূম বা বোলপুর জেলায় এখনও পর্যন্ত নেই। পূর্বপল্লি গেস্ট হাউসে ক্যাম্প করে এই ঘটনার তদন্ত করছেন সিবিআই আধিকারিকরা। এখনও পর্যন্ত সিবিআইয়ের কোনও অফিসার সেখানে এসে পৌঁছননি। যা খবর, আগামীকাল, অর্থাত্ সোমবার সিবিআইয়ের মুভমেন্ট হতে পারে। তার জন্য একটি বিশাল টিম বীরভূমে পৌঁছবে, এমনটাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর। কারণ, অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ ও আত্মীয়দের নামে প্রচুর সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চালমিল। বীরভূম জেলাতেই এমন ১২ টি চালকল রয়েছে। সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ রয়েছে, এই চালকলগুলির সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে অনুব্রতর যোগাযোগ রয়েছে বা তিনি লভ্যাংশ পেতেন। কাগজে কলমে নাম না থাকলেও ব-কলমে অংশীদারিত্ব আছে কি না বা কেন তাঁকে লভ্যাংশ দেওয়া হত, সেসব নিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ চালাতে চান সিবিআই আধিকারিকরা। চালকলের মালিকদের সেই কারণে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
বোলপুরে ভোলে ব্যোম রাইস মিলের (rice mill) পর অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের নামে আরও ১২ টা রাইস মিলের হদিশ পেল সিবিআই। তার মধ্যে অনুব্রত ঘনিষ্ঠ রাজীব ভট্টাচার্যর ৭ টা রাইস মিল রয়েছে। রাজীব হলেন অনুব্রতর বিনিয়োগকারী। এছাড়াও, অনুব্রতর ভগ্নিপতি কমলকান্তি ঘোষ শিব শম্ভু রাইস মিলের মালিক। এই রাইস মিলটি রয়েছে বোলপুরের (Bolpur) বাঁধ গোড়া এলাকায়। মহানন্দা রাইস মিলের মালিক পারমিতা ঘোষ ও রাজা ঘোষ। রাজা হলেন অনুব্রতর ভাগ্নে। মা শান্তিময়ী রাইস মিলের মালিক সুকুমার মজুমদার, সঞ্জীব মজুমদার। এঁরা প্রত্যেকেই অনুব্রত আত্মীয় (relative) বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের রাইস মিলের তালিকা সিএনের হাতে। এইভাবে বীরভূমের ছোট-বড় একাধিক মিলের অংশীদারিত্ব রয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের আত্মীয়দের নামে।
পাশাপাশি সূত্র মারফত জানা গেছে, ভোলে ব্যোম রাইস মিলের সঙ্গে রাজ্য রেশন (ration) দফতরের সংযোগ। উল্লেখ্য গতকাল সিবিআই (CBI) এই রাইস মিলে হানা দেয়। তল্লাশি চালিয়ে যে নথি উদ্ধার হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে এই মিল থেকে চাল নিত রাজ্য রেশন দফতর। যা রেশন ডিলারদের পাঠানো হত। রাজ্য খাদ্য দফতরের সঙ্গে ভোলে ব্যোম রাইস মিলের চুক্তি সংক্রান্ত নথি উদ্ধার হয়েছে। এর আগে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রককে চাল সরবরাহ করত এই চাল মিল বলে সূত্রের খবর। আরও জানা গেছে বর্তমানে কেন্দ্র চাল না দিয়ে তার পরিবর্তে টাকা দেয়। সেই টাকায় রাজ্য চাল কিনে রেশন মাধ্যমে চাল সরবরাহ করে গ্রাহকদের।
এছাড়া ভোলে ব্যোম রাইস মিলের নামে বেশ কয়েকটি ডাম্পার কেনা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। দুর্গাপুরের একটি শো রুম থেকে মোট ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকার গাড়ি কেনা হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। সেই বাবদ গত ২ অর্থবর্ষে মোট ২৮ লক্ষ টাকা GST দিতে হয়েছে অনুব্রতকে।
ভোলে ব্যোম রাইস মিলের দেরাজ থেকে কালিকাপুর মৌজা, গোয়েশপুর মৌজার একাধিক জমির নথি পেয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা। যেগুলোর মালিকানা সুকন্যার নামে আছে ও প্রয়াত স্ত্রী ছবি মণ্ডলের নামে রয়েছে বলে জানতে পারছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। গয়েশপুরে মোট ২৮ টি জমির নথি মিলেছে। যা ২০১৪ থেকে ২০১৭-এর মধ্যে কেনা হয়েছে। সূত্র জানাচ্ছে, এমনকী শুধু বীরভূম নয়, পুরুলিয়ার চালকলেও মণ্ডল পরিবারের অংশীদারীত্ব পেয়েছেন তদন্তকারীরা। যা অনুব্রত কন্যা সুকন্যার নামে রয়েছে।
চালকল বিতর্ক প্রসঙ্গে আদালতে অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, বহু বছর আগে রাইস মিল ওঁর শ্বশুর ওঁকে উপহার হিসাবে দিয়েছেন।
গোরু পাচারের তদন্তে নেমে শুক্রবার ভোলেব্যোম রাইস মিলে (Rice Mill in Birbhum) অভিযান চালায় সিবিআই। তদন্তে এই মিলের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে এবং প্রয়াত স্ত্রীয়ের যোগসূত্র পেয়েছে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (CBI)। আর শুক্রবার সকালে সেই রাইস মিলে প্রবেশের পরেই চক্ষু চড়কগাছ কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের। মিল চত্বরে সার দিয়ে দাঁড়ানো একাধিক বহুমূল্যের গাড়ি (Car Found)। যে গাড়িগুলোর মধ্যে একটি গাড়ি, যাতে সরকারি স্টিকার লাগানো, বিশেষ নজর কেড়েছে তদন্তকারীদের। আর এই গাড়ি উদ্ধার ঘিরে তুঙ্গে শাসক-বিরোধী তরজা। তৃণমূলকে কটাক্ষের সুরে বিঁধেছে বিজেপি, বাম, কংগ্রেস। পাল্টা যুক্তি খাড়া করেছে শাসক শিবিরও।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ব্যাঙ্গের সুরে বলেন, 'আমাদের কৃষ্ণের অষ্টতর শতনাম আর কলিকালের কেষ্ট অর্থাৎ দিদির কেষ্টার অষ্টতর শত দোষ। দিদি তো বলেই দিয়েছেন, কী এমন হয়েছে? একজনকে তো শুধু প্রাণে মারা হুমকিই দিয়েছে। আপনারা কেন এত মাথা ঘামাচ্ছেন?' সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, 'রাইস মিলে থাকা গাড়িতে সরকারি স্টিকার কেন? মাত্র একটা গাড়ি পাওয়া গিয়েছে। আর বাকিগুলো? এটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। আর সে কারণেই সিবিআই-ইডিকে ভয় পাচ্ছে।'
কটাক্ষের সুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, 'দিদি লাখ লাখ অনুব্রত তৈরি করবেন বলে দিয়েছেন। তাই বাংলায় যতদিন এই মুখ্যমন্ত্রী আছেন এবং তৃণমূল সরকার আছেন, কোনও কিছু নিয়ে অবাক হবেন না।'
কী বলছে বিরোধী দলগুলো?
এই বিষয়ে কৌশলে প্রতিক্রিয়া এড়িয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আর যে তথ্যের উপর এই বিতর্ক, সেটা হয় সংবাদ মাধ্যম থেকে পাওয়া কিংবা এজেন্সি কিছু দিয়েছে। তাই উলটো দিকের বক্তব্য শুনে তবেই বলা যাবে।'
শুনুন তৃণমূলের বক্তব্য-
বোলপুরের ভোলে বোম রাইস মিল এখন সাম্প্রতিক চর্চার বিষয়। আজই এই রাইস মিলে হানা দেয় সিবিআই। সূত্রের খবর অনুব্রত কন্যা ও অনুব্রতর প্রয়াত স্ত্রীর নামে এই রাইস মিলটি রয়েছে। মিলটিতে সিবিআই আধিকারিকরা প্রথমে বাধা পেলেও পরে প্রবেশ করেন। এরপরই মিলের ভিতরে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি গ্যারাজবন্দি দেখতে পান তারা। মোট ৫টি গাড়ির হদিশ পান তারা। সূত্রের খবর,গাড়িগুলির সবকটির কালো কাচ এবং তৃণমূলের স্টিকার লাগানো।
তালা খুলে মিলের ভিতরে ঢুকতেই একটি শেড নজরে আসে সিবিআই আধিকারিকদের। ৫ টি গাড়ির মধ্যে ৪ টি এসইউভি, এবং একটি হুডখোলা জিপ নজরে আসে তাদের। এরপরই গাড়িগুলির মালিকের সুলুক সন্ধানে নামেন তাঁরা। তবে এই গাড়িগুলি কার জানতে চাওয়া হলে তিনি জানেন না বলে দাবি করেন এক নিরাপত্তারক্ষী।
সূত্রের খবর, তাঁরা জানতে চান গাড়িগুলি কাদের নামে রেজিস্টার করা রয়েছে। WB4B6966 গাড়িটি একটি হুড খোলা জিপ এটি রেজিস্টার রয়েছে অর্ক দত্তের নামে। কিন্তু কে এই অর্ক দত্ত? জানা গেছে, অর্ক দত্ত কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক মাত্র। তবে তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে। উনি অনুব্রত মণ্ডলের পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। WB54B9555 গাড়িটি একটি মহিন্দ্রা আল্ট্রা জি ৪, এটি রেজিস্টার রয়েছে স্বাধীন চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে। WB54Z4176 নম্বরের গাড়িটি একটি মহিন্দ্রা ৫০০ যেটি সতীর্থ ট্রাস্টের নামে রেজিস্টার করা আছে।
সূত্রের খবর, সতীর্থ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে রয়েছে ১৭টি আইটিআই কলেজ । এই কলেজ গুলির ভুয়ো নথি দেখিয়ে কেন্দ্রীয় কারিগরি শিক্ষা মন্ত্রকের থেকে তহবিল সংগ্রহের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মলয় পিটের বিরুদ্ধে। এই সব কলেজই এখন সিবিআই স্ক্যানারে। এছাড়াও রয়েছে একটি টাটা সুমো যার নম্বর UA047183। এই গাড়িটিতেই অনু্ব্রত প্রথম যাতায়াত করতেন। এছাড়া রয়েছে একটি ফোর্ড এন্ডেভার যার নম্বর WB 54U 6666। তদন্তে জানা গিয়েছে এই গাড়িটি চড়েই গত ৭ অগাস্ট কলকাতায় এসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। গাড়িটির নম্বর প্লেটের নিচে লেখা গভর্নমেন্ট অব ওয়েস্টবেঙ্গল।
সূত্র মারফত জানা গেছে, রাইস মিলের গ্যারাজে রাখা গাড়িগুলি কোনওটাই অনুব্রতর নামে নয়। যে গাড়িটিকে সরকারি গাড়ি বলে উল্লেখ করা আছে, সেই বিতর্কিত গাড়িটি জনৈক প্রবীর মণ্ডলের নামে রেজিস্টার করা আছে। প্রবীর মণ্ডলের বাড়ি ময়ূরেশ্বর নারায়ণ ঘাঁটি গ্রামে। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে অনুব্রত মণ্ডলকে গাড়িটি গিফট দিয়েছিলেন তিনি। তাদের তিলপাড়া ব্যারাজ জলাধারের সংস্কার করার বরাত দেওয়ার জন্য এই উপহার। যদিও সেই কাজ হয়নি বলে দাবি প্রবীর মণ্ডলের ।
বোলপুরের ভোলে ব্যোম রাইস মিল(rice mill) নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য সামনে এল।সূত্রের খবর, তিন মাস আগে রাইস মিলের এক নিরাপত্তা রক্ষীকে মারধর(beaten) করার অভিযোগ ওঠে অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, এই মিলে নাকি মাঝে মাঝে সকন্যা আসতেন অনুব্রত(Anubrata)।
সূত্র মারফত জানা গেছে, মিলটি কেনা হয়েছিল ৫ কোটি টাকায়। মিলটির আসল দাম ১৫ কোটি ছিল। মিলের ৮ জন শরিক ছিল। তাদের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে কম দামে এই মিল কিনেছিলেন অনুব্রত।
উল্লেখ্য, আজই এই রাইস মিলে হানা দেয় সিবিআই আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, এই মিলটি অনুব্রত কন্যা ও অনুব্রতর প্রয়াত স্ত্রীর নামে। রাইস মিলে ঢুকতে শুরুতে তল্লাশিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নিরাপত্তারক্ষীদের(security guard) বিরুদ্ধে। তবে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। প্রায় ৪০ মিনিট পর রাইস মিলের ভিতরে ঢুকতে পারেন তারা। অন্যদিকে চাবি না থাকায় গেট খুলতে দেরি বলে দাবি নিরাপত্তারক্ষীদের।
মিলের ভিতরে ঢুকে নথিপত্র খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকরা। মিলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য(information) জানার চেষ্টা করে সিবিআই। এদিকে, মিলের ভিতরে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ আধিকারিকদের। ভিতরে গ্যারাজগুলিতে সার দিয়ে রাখা রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। ভিতরে দেখা গেছে অনুব্রত মণ্ডলের গাড়িও। কয়েকটি গাড়িতে রাজ্য সরকারের স্টিকারও লাগানো আছে। তবে গাড়িগুলির মালিকানা কার, সে প্রশ্নের উত্তরে মুখে কুলুপ মিলের কর্মীদের। তবে গাড়িগুলি কার, কী কাজেই বা সেগুলি ব্যবহার হত, তা জানার চেষ্টা করছেন আধিকারিকরা।
বোলপুরের ভোলে ব্যোম রাইস মিলে(rice mill) সিবিআই(CBI) হানা। রাইস মিলে ঢুকতে শুরুতে তল্লাশিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নিরাপত্তারক্ষীদের(security guard) বিরুদ্ধে। তবে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। প্রায় ৪০ মিনিট পর রাইস মিলের ভিতরে ঢুকতে পারেন তারা। অন্যদিকে চাবি না থাকায় গেট খুলতে দেরি বলে দাবি নিরাপত্তারক্ষীদের।
মিলের ভিতরে ঢুকে নথিপত্র খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকরা। মিলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য(information) জানার চেষ্টা করে সিবিআই। সূত্রের খবর, এই মিলের মালিকানা রয়েছে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে এবং স্ত্রীর নামে। মিলের ভিতরে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ আধিকারিকদের। ভিতরে ৬ টি গ্যারাজের(garrage) সন্ধান তাঁরা পান। গ্যারাজগুলিতে সার দিয়ে রাখা রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। ভিতরে দেখা গেছে অনুব্রত মণ্ডলের গাড়িও। কয়েকটি গাড়িতে রাজ্য সরকারের স্টিকারও লাগানো আছে। তবে গাড়িগুলির মালিকানা কার, সে প্রশ্নের উত্তরে মুখে কুলুপ মিলের কর্মীদের। তবে গাড়িগুলি কার, কী কাজেই বা সেগুলি ব্যবহার হত, তা জানার চেষ্টা করছেন আধিকারিকরা।
প্রসঙ্গত,গরু পাচার-কাণ্ডের তদন্তে নেমে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের একের পর এক সম্পত্তির হদিশ পাচ্ছে সিবিআই। এবার রাইস মিলে হানা দিয়ে তথ্য জানার চেষ্টায় গোয়েন্দা আধিকারিকরা।