ভারতীয় বায়ু সেনার (Indian Air Force) পোশাকে সুখোই-৩০ যুদ্ধ বিমান ওড়ালেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মু (President Murmu)। শনিবার অসমের তেজপুর বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে সুখোই বিমান ওড়ালেন তিনি। সংবিধান মেনে দেশের তিন বাহিনীর কমান্ডার দেশের রাষ্ট্রপতি। সেই সূত্র ধরেই এদিন তেজপুরে বায়ুসেনার ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন দেশের সংবিধান প্রধান। সেখানেই সুখোই-৩০ (Sukhoi 30) এমকেআই-র প্রশিক্ষণ বিমান ওড়ান তিনি। সহকারী পাইলটের আসনে ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান চালক। তেজপুর ঘাঁটির পরিদর্শক খাতায় রাষ্ট্রপতি লেখেন, 'এমন উড়ানের ব্যবস্থা করার জন্য আমি তেজপুরের বিমান ঘাঁটির সমস্ত সেনাদের অভিনন্দন জানাই।'
President Droupadi Murmu took a historic sortie in a Sukhoi 30 MKI fighter aircraft at the Tezpur Air Force Station in Assam. President Murmu is the third President and second woman President to undertake such a sortie. pic.twitter.com/DozRAWm3Yp
— President of India (@rashtrapatibhvn) April 8, 2023
সুখোই সফরের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি টুইটারে লেখেন, 'ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তিশালী সুখোই-৩০-এমকেআই যুদ্ধবিমানে ওঠা আমার কাছে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এটা গর্বের বিষয় যে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষমতা আজ জল, স্থল এবং অন্তরীক্ষে সুদৃঢ় ভাবে প্রসারিত।' প্রসঙ্গত, ভারতের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসাবে সুখোই-৩০ এমকেআই বিমানে সওয়ার হলেন দ্রৌপদী। ২০০৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল মহারাষ্ট্রের পুণে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে এই রুশ যুদ্ধবিমান উড়িয়েছিলেন।
প্রসূন গুপ্ত: শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু নতুন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথম কলকাতায় এলেন সোমবার। তাঁকে সংবর্ধনা জানানোর বিপুল আয়োজন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর তিন কর্তা। পুলিসের বড় কর্তাদের উপস্থিতি নজর টেনেছে। এরপর হেলিকপ্টারে রাষ্ট্রপতি চলে আসেন কলকাতার রেসকোর্সে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল আনন্দ বোস। রাষ্ট্রপতিকে বাংলার বিশেষ শাল পরিয়ে অভ্যর্থনা জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরে ফুল তুলে দেন তাঁর হাতে রাজ্যপাল। এরপর রাষ্ট্রপতি চলে যান নেতাজি ভবনে। সেখানেও তাঁর সঙ্গী ছিলেন রাজ্যপাল।
এবার আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা। গত রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে যেভাবে নেতাজি ইনডোরে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সেভাবেই দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধিত করা হয়। প্রথমেই জঙ্গল মহলের বিশেষ নৃত্য পরিবেশিত হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ওই নাচে অংশ নেন। প্রারম্ভিক ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতিকে। তিনি বলেন, 'এক জন মহিলা হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবে রাষ্ট্রপতিজিকে অভ্যর্থনা জানাই।' ভাষণ শেষে তিনি জয় হিন্দের সঙ্গে জয় রাষ্ট্রপতি, জয় উড়িষ্যা জানান। এরপর সাহিত্যচর্চা করা রাজ্যপাল নানা উদাহরণ দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে শুভেছা জানান।
এখানেও মঞ্চে দেখা যায় কলকাতার মেয়রকে। সবশেষে বক্তব্য রাখতে আসেন দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে কৃতজ্ঞাতা জানান পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। তিনি বলেন, 'রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নৃত্য দেখে আপ্লুত। মনে হচ্ছে তাঁর উড়িষ্যার গ্রামে রয়েছেন।' তিনি যে খুশি মুখ্যমন্ত্রীর উপর তা জানাতে বিলম্ব করেননি রাষ্ট্রপতি। তবে এই খুশির দিনে বিরোধী দল বিজেপির কাউকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। তারা নাকি এই অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। বাংলার প্রধান উৎসবের দুর্গা প্রতিমা উপহার পান রাষ্ট্রপতি।
দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (President Murmu) উদ্দেশে মন্ত্রী অখিল গিরির করা মন্তব্য মামলায় বাদ দিতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata) নাম। সোমবার এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের মন্ত্রী অখিলের (Akhil Giri) বিরুদ্ধে করা জনস্বার্থ মামলায় পার্টি করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু আইনজীবীর তরফে আবেদন করা হয়, তাঁর নাম বাদ দিতে। সেই সওয়াল শুনেই নাম বাদ দিতে নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। এই মামলার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও যোগ নেই, তাই এই নির্দেশ বলে সূত্রের খবর।
পাশাপাশি রাজ্যকে জমা দিতে হবে হলফনামা, এমনটাই নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। এদিকে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর উদ্দেশে মন্ত্রী অখিলের মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। অখিলকে আক্রমণ করে সরব হয়েছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছিলেন অখিল গিরি। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় এখনও জিইয়ে সেই বিতর্ক।
মোদী সরকারের (Modi Government) অন্দরে প্রশংসিত মমতা সরকারের 'দুয়ারে সরকার' প্রকল্প (Duare Sarkar)। কেন্দ্রের তরফে প্লাটিনাম পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে এই সামাজিক প্রকল্পকে। শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে (Rashtrapati Bhawan) মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ডিজিটাল ইন্ডিয়া পুরস্কার ২০২২-র মঞ্চ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস তাদের ট্যুইটার পেজে এই সাফল্য তুলে ধরেছে। রাজ্যের শাসক দল লিখেছে, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যতিক্রমী নেতৃত্বে বাংলা আবার দিশা দেখিয়েছে। পশ্চিম বাংলার সরকারের সামাজিক প্রকল্প দুয়ারে সরকার ডিজিটাল পুরস্কার ২০২২-র মঞ্চে পুরস্কৃত হয়েছে। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।'
২০২২-কে পিছনে ফেলে ২০২৩-কে (New Year 2023) সাদরে বরণ করেছে ভারত-সহ গোটা বিশ্ব। এবার বছরের প্রথম দিনে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেন রাষ্ট্রপতি (President Murmu Tweet) দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)-সহ কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। রাষ্ট্রপতি ট্যুইট বার্তায় লেখেন, 'প্রত্যেককে শুভ নববর্ষ। দেশবাসী এবং প্রবাসী ভারতীয়দের নতুন বছরের শুভেচ্ছা এবং শুভ কামনা। এই নতুন বছর প্রত্যেকের জীবনে নতুন অনুপ্রেরণা, লক্ষ্য এবং সাফল্য নিয়ে আসুক। দেশের উন্নয়নে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।'
Happy New Year to all! Greetings and best wishes to all fellow citizens and Indians living abroad. May the Year 2023 bring new inspirations, goals and achievements in our lives. Let us resolve to rededicate ourselves to the unity, integrity and inclusive development of the nation
— President of India (@rashtrapatibhvn) January 1, 2023
প্রধানমন্ত্রী লেখেন, 'নতুন ২০২৩ ভালো কাটুক। গোটা বছর আশা, সুখ এবং সাফল্যের মধ্যে দিয়ে যাক। প্রত্যকের সুস্বাস্থ্য কামনা করি।' পিছিয়ে নেই কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও। নিজের ট্যুইটার প্রোফাইলে ভারত জোড়ো যাত্রার একটি ভিডিও পোস্ট করে রাহুল গান্ধী হিন্দিতে লেখেন, 'আশা করছি ২০২৩-এ ভারতের সব শহর, গলি এবং গ্রামে খুলবে ভালবাসার দোকান। প্রত্যেককে নববর্ষের শুভেচ্ছা।'
Have a great 2023! May it be filled with hope, happiness and lots of success. May everyone be blessed with wonderful health.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 1, 2023
প্রসূন গুপ্ত: সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য অখিল গিরি, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে যে কুকথা বলেছেন তাই নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে রাজ্যজুড়ে। অখিলের কুমন্তব্যের কারণে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। এখানেই হয়তো শেষ হয়ে যেতে পারতো এই ইস্যু, কিন্তু হলো কি? অখিল প্রশ্নে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, অখিলকে কান ধরে মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দেওয়া উচিত। এখানেই থামেননি তিনি, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশেও আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি।
আবার তার পাল্টা বক্তব্য রেখেছেন ববি হাকিম। অন্যদিকে অখিলের মন্তব্যের সমালোচনা করে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন যে, এ কোন সংস্কৃতির মধ্যে চলছে? তিনি আরও বলেন, যে দিনের পর দিন সোনিয়া গান্ধীকে নানা কুবাক্য করা হয়েছে আইনসভায়। নীতিবোধ তখন কোথায় থাকে?
মনে পরে যায় আগের জমানার কথা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পার্লামেন্টে অটলবিহারী বাজপেয়ী ভূয়সী প্রশংসা করে ইন্দিরাকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। আবার আমেরিকা সফরে ইন্দিরার সঙ্গে রোনাল্ড রেগনের মতবিরোধ হওয়ার পর ইন্দিরা বাজপেয়ীকেই আমেরিকা সফরে পাঠান। তর্ক-বিতর্ক, বিরোধিতা নেহেরুর আমল থেকেই ছিল কিন্তু শালীনতা ভেদ করেনি কখনও। এ রাজ্যে জ্যোতিবাবুর আমলে, মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট সমালোচনা করেছেন কেন্দ্র বা রাজ্যের। তিনি সমালোচনা করেছেন মমতারও। আবার মমতাও প্রশাসনের চরম বিরোধিতা করেছেন কিন্তু কখনও তা সীমা ছাড়িয়ে যায়নি।
তৃণমূলের প্রথম আমলে বিরোধী নেতা হন সূর্যকান্ত মিশ্র। পরের বার অর্থাৎ ২০১৬-তে আসেন কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। তাঁরা সরকারের যথেষ্ট সমালোচনা করেছেন কিন্তু ব্যক্তি আক্রমণে যাননি কেউ। এই সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে গত ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে। কুকথা, কুৎসিত ভাবে ব্যক্তি আক্রমণ চলেছে। তৃণমূল থেকে এমন অভিযোগ অহরহ করা হয় যে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, যিনি একসময় রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন, তিনিও নানাভাবে ব্যক্তি আক্রমণ করেন।
কমতি যান না তৃণমূলের কুনাল ঘোষরাও। গতকাল শুভেন্দু জানিয়েছেন যে তিনি কারুর নাম করে ব্যক্তি আক্রমণ করেন না। কুনালও জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তি আক্রমণ করেননি। কিন্তু সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ইদানিং যে ভাষা বিজেপি ও তৃণমূলের সমর্থকরা করছেন তা পড়ার অযোগ্য। পিছিয়ে নেই বামপন্থীরাও। তাঁদের সূক্ষ্ম গালিগালাজ সবচাইতে উচ্চস্থানে রয়েছে।