দেশের ৪৯তম প্রধান বিচারপতি (CJI) হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ নিলেন উদয় উমেশ ললিত (Justice UU Lalit)। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এনভি রামান্না, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Modi), উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর এবং বিচারপতি ললিতের পরিবার। স্বল্প সময়ের এই অনুষ্ঠানে বিচারপতি উদয় ইউ ললিতকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Murmu)। জানা গিয়েছে, মাত্র তিন মাস অর্থাৎ ৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি পদে থাকবেন বিচারপতি ললিত।
প্রথা অনুযায়ী বিদায়ী প্রধান বিচারপতি তাঁর উত্তরসূরির নাম প্রস্তাব করে যান। সেই মোতাবেক বিচারপতি ইউইউ ললিতের নাম শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে আইন মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব করেন বিচারপতি এনভি রামান্না। দেশের সদ্যনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি প্রথম ব্যক্তি, যিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থেকে বিচারপতি এবং পরে প্রধান বিচারপতি হলেন। এর আগে বিচারপতি এসএম সিকরি শীর্ষ আদালতের আইনজীবী থেকে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং পরে প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাম জন্মভূমি মামলা সুপ্রিম কোর্টের যে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ নিষ্পত্তি করেছে, সেই সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্য ছিলেন বিচারপতি ললিত। এই বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তবে ২০১৯-র ১০ জানুয়ারি, এই মামলার চূড়ান্ত শুনানির আগেই নিজেকে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলা থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন ললিত।
প্রসূন গুপ্ত: ঘোরতর বামপন্থী রাজ্য ছিল ত্রিপুরা। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের আগমনের কয়েক বছর পর সেখানেও কংগ্রেসকে সরিয়ে সিপিএমের নেতৃত্বে বামেরা ক্ষমতায় আসে। মাঝে রাজীব গান্ধীর আমলে একবার ৫ বছরের জন্য কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল ঠিকই, কিন্তু গোষ্ঠীদন্দ্ব ইত্যাদিতে জড়িয়ে সেই ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি হাত শিবির। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললেও ত্রিপুরার সমস্যা অনেক, যা কিনা স্বাধীনতার পর থেকে ৭৫ বছর বাদেও সমাধান হয়নি। স্কুল কলেজে বেড়েছে, ইঞ্জিয়ারিং থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট হয়েছে কিন্তু শিক্ষান্তে চাকরির সুবিধা হয়নি। কারণ সেভাবে শিল্প বিনিয়োগ আসেনি। আসা কঠিনও বটে কারণ বড় শিল্প গড়লে তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো প্রথমত খরচসাপেক্ষ, দ্বিতীয়ত সময় নষ্ট। বিজেপির বিপ্লব দেব মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এদিকে বিপ্লব আরএসএস করা নেতা। দীর্ঘদিন সংঘের প্রচারক ছিলেন। দলের ধারা অনুযায়ী তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু দ্রুতই বোঝা গেলো দলে মন কষাকষি প্রবল। বিভিন্ন সময় দিল্লি থেকে প্রতিনিধিরা এসেছিলো কিন্তু ফিরে গিয়েছিলো উপদেশ দিয়েই। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝতে পারল, যে কোথাও দল ত্রিপুরাতে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। উপজাতিরা ক্ষিপ্ত, অতএব বিপ্লবকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী করা হল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা মানিক সাহাকে।
মানিক দীর্ঘদিন বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করা মুখ। শোনা গিয়েছিলো যে বিপ্লব দেবকে হয়তো রাজ্য সভাপতি করা হতে পারে। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিল্লির চরমপত্র এল, যা পাঠালেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অরুন সিং। সেই পত্রে পরিষ্কার বার্তা রয়েছে আজ থেকেই ত্রিপুরা বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য্য। এই বার্তা পাঠিয়েছেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাই। রাজীব দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা। এরই সঙ্গে বিপ্লবের আশাও শেষ হলো।
মানিক ভট্টাচার্যের (Manik Bhattacharya) জায়গায় এবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নতুন সভাপতি হচ্ছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গৌতম পাল (Gautam Pal)। একইসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে ১১ জনের নতুন একটি অ্যাড হক কমিটিও গড়েছে রাজ্য। প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের (highcourt) নির্দেশ মেনে শেষমেশ মানিক ভট্টাচার্যকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গৌতম পাল জানান, " আমি সব কিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে করব। এই বোর্ডের অধীনে অনেক শিক্ষক যুক্ত, অনেক স্কুল যুক্ত। যদি কোনও অস্পষ্ট, অস্বচ্ছ বাতাবরণ তৈরি হয়ে থাকে, আমি আজ থেকে দায়িত্ব নিচ্ছি, কথা দিচ্ছি স্বচ্ছতা থাকবে। সেই অস্পষ্টতা দূর করার দায়িত্ব আমি নিলাম। আগামী দিনে সব স্বচ্ছ করে করব। যারা টেট পরীক্ষা দেবে, প্যানেল বেরোবে, তাঁদের বলি কোনও কিছু লুকাবো না। বোর্ড মেম্বারদের মতামত নেব, কোনও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার হলে, একা নেব না। সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে জানাবো। আগামীদিনে চেষ্টা করব চাকরি প্রার্থীদের কোনও প্রশ্ন থাকলে সেটার উত্তর দেওয়ার। প্রতি বছর টেট হবে। নির্দিষ্ট সময়ে মেধা তালিকা বের হবে।
তিনি আরও কী কী বলেছেন শুনুন---
চাই জমির(land) অধিকার, চাই শিক্ষা(education), স্বাস্থ্য(health),পানীয় জলের(drinking water) মত ন্যূনতম মৌলিক অধিকার। দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে এই বার্তা পৌছে দিতেই প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি ওদলাবাড়ি চা বাগানের দুই যুবকের। সোমবারই দেশের রাজধানীর(capital) উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিয়েছে পিলাতুস ওঁরাও(২৫) এবং শ্যাম ওঁড়াও(৩০) নামে ওই দুই যুবক।
উত্তরবঙ্গের মধ্যে বিশেষ করে ডুয়ার্সে তরাইয়ের চা বলয়ে লক্ষ লক্ষ আদিবাসী মানুষের বসবাস আদিকাল থেকে। জনসংখ্যার নিরিখে এগিয়ে থাকলেও, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে রয়েছেন আদিবাসী জনজাতির মানুষেরা। বিশেষত শিক্ষা এবং জমির অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত বলে অভিযোগ। ডুয়ার্স, তরাই- এর আদিবাসীদের জন্য হিন্দি স্কুল, কলেজ স্থাপন হয়েছে। তারা পড়াশোনাও করছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে বিশেষত সরকারি চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে সেই হিন্দিভাষার পড়াশোনা কাজে লাগছে না বলেই অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় বসবাস করলেও জমির অধিকার থেকেও বহু আদিবাসী মানুষ বঞ্চিত বলে অভিযোগ।
এছাড়াও আদিবাসী অধ্যুষিত ডুয়ার্সের চা বলয় পানীয় জল পরিষেবা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, রাস্তাঘাট পরিষেবায় পিছিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি ডুয়ার্স জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসীদের প্রাণপুরুষ বিরসা মুন্ডার মুর্তি বসানো হচ্ছে। কিন্তু তাদের অভিযোগ, বিরসা মুন্ডার মুর্তির চেহারা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। এর ফলে আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ জমছে।
সেইসব অভাব, অভিযোগগুলি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পৌছে দিতেই এই পদযাত্রা বলে জানিয়েছেন পিলাতুস ওঁরাও। এই দুই যুবকের বাড়ি মালবাজার মহকুমার ওদলাবাড়ি চা বাগান এলাকায়। জানা গিয়েছে, ওদলবাড়ি থেকে শুরু করে শিলিগুড়ি, বিহার হয়ে তারা নিউ দিল্লি পৌঁছবেন তারা। তারপর রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে দেখা করবেন দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে।
উল্লেখ্য, দ্রৌপদী মুর্মু দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরই উচ্ছাস,উল্লাস দেখা গিয়েছিল আদিবাসী সমাজে। দুই যুবকের আশা, সমস্যায় জর্জরিত আদিবাসীদের বার্তা রাস্ট্রপতির কাছে পৌছে দিতে পারলে মিলতে পারে আশার আলো। যে আলো তাদের জীবনের অন্ধকার দূর করে আলোর পথে নিয়ে যাবে।
দেশের ১৪তম উপরাষ্ট্রপতি (Vice President of India) হিসেবে শপথ নিলেন জগদীপ ধনকর। বৃহস্পতিবার তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Draupadi Murmu)। এদিন ধনকর হিন্দিতে শপথ নিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ভবনে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু। যদিও জগদীপ ধনকরের (Jagdeep Dhankar) শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলার শাসক দলের কাছে আমন্ত্রণ গেলেও এই অনুষ্ঠানে গরহাজির ছিলেন লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।
প্রসঙ্গত, গত ৬ অগস্ট উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোট প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে হারিয়ে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেন এনডিএ প্রার্থী ধনকর। এই ভোটদানে বিরত ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এনডিএ-র প্রার্থীর পক্ষে গিয়েছে ৫২৮টি ভোট, বিরোধী জোটের প্রার্থী আলভা পেয়েছেন ১৮২টি ভোট।
এদিকে, আগামি শীতকালীন অধিবেশন থেকে রাজ্যসভা পরিচালনার ভার ধনকরের উপর। সংবিধান মেনে দেশের উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু এই আগামি এই অধিবেশন বড় চ্যালেঞ্জের হতে চলেছে ধনকরের কাছে। কারণ এই মুহূর্তে সংখ্যাতত্বের বিচারে সংসদের উচ্চকক্ষে শাসক এবং সম্মিলিত বিরোধীর সাংসদ সংখ্যা প্রায় এক। এনডিএ জোটের সাংসদ সংখ্যা ১১৪ আর বিজেপি বিরোধীদের সাংসদ সংখ্যা ১০৭ জন। এই তালিকায় নাম নেই বিজেডি এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসের। কারণ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, এই দুটি বল জাতীয় রাজনীতিতে নীরব থেকে বহুবার বিজেপিকে প্রছন্ন মদত জুগিয়েছে।
অনেক সময় সংসদে ভোটাভুটি থেকে ওয়াকআউট করে সুবিধা কোরে দিয়েছে শাসক এনডিএ-কে। তাই তাদের বিরোধীতা ছাড়াও রাজ্যসভায় ১০৭টি বিরোধী সাংসদের কণ্ঠ মোদী সরকারের কানে পৌঁছতে বাধ্য। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে বিরোধী হল্লা সামলে সুষ্ঠুভাবে রাজ্যসভা পরিচালনা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হবে জগদীপ ধনকরের কাছে।