
বিদায় মেসি (Lionel Messi)। আধুনিক ফুটবলের রাজকুমারকে সরকারি ভাবে গুডবাই করে দিল তাঁর ক্লাব প্যারি সাঁজা (PSG)। শনিবার শেষ ম্যাচ খেলেই মাঠ ছেড়েছিলেন লিও। সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) এক ভিডিও পোস্টে ক্লাবের তরফে জানানো হয়েছে, সাতবারের ব্যালন জয়ীকে ধন্যবাদ। এই কয়েক বছরে মেসি তাদের ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছিল। মেসির জন্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং লিগ ওয়ান খেতাব জয় বলেই জানিয়েছে ফরাসি এই ক্লাব।
সবাই ভেবেছিলেন নিজের সেরাটা দিয়েই প্যারিসকে বিদায় জানাবেন। কিন্তু ফরাসি ক্লাবের শেষ দিনে তিনি আটকে গেলেন। তিনি লিওনেল মেসি। লিগ জেতা হয়ে গিয়েছিল। তবু শেষ ম্যাচে হেরে শেষ হল তাঁর প্যারিসের শেষ রাত। লিগের শেষ ম্যাচে ক্লেরমের কাছে তিন-দুই গোলে হেরেই লিগ জয়ের উৎসব মঞ্চে উঠতে হল এমবাপে, নেইমারদের। আর একরাশ বিষন্নতা নিয়েই মাঠ ছাড়লেন লিওনেল মেসি।
এই ম্যাচ ছিল মেসির পাশাপাশি সার্জিও রামোসেরও শেষ ম্যাচ। তাই উৎসবের আবহে শুরু হয়েছিল। পরিবার নিয়ে প্যারিসকে শেষ বিদায় জানাতে মাঠে নেমেছিলেন লিও। তবে এই ম্যাচে আরও একজনও জায়গা করে নেনে তিনি সার্জিও রিকো। যিনি ফরাসি এই ক্লাবের হয়ে একটি ম্যাচও খেলেননি। কিন্তু দুর্ঘটনায় জখম রিকো এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তাই তাঁর জন্য এই ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন সাঁজার ফুটবলাররা।
পিছিয়ে থেকে শুরু। তারপর আবার ম্যাচে ফিরে আসা। সবকিছুই হল। কিন্তু মেসি যেন আনমনা। দ্য লাস্ট ইভনিং আ প্যারিস। বর্ষা আসার আগেই মেসি চলে যাচ্ছেন। আরও যেন মন ভার কবিতার এই শহরের। কারণ সবুজ গালিচায় কে চালাবেন ওই সূক্ষ্ম কলম। যার থেকে তৈরি হবে ফুটবলের নানা ছড়া এবং ছন্দ।
এই মরশুমেই শেষ। ফরাসি ক্লাব প্যারিস সাঁ জাঁ ছাড়ছেন লিওনেল মেসি। বৃহস্পতিবার একথা জানিয়ে দিলেন ক্লাবের কোচ ক্রিস্টোফ গালতিয়ে। প্যারিস ছাড়লেও মেসি কোন ক্লাবে যাচ্ছেন, তা জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার পিএসজির কোচ গালতিয়ে জানিয়েছেন, "ফুটবল ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড়কে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা পেয়েছি। শনিবার ঘরের মাঠে ক্লেমন্টের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ খেলবেন।" মে মাসের শুরুতেই পিএসজি ছাড়ার কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে। পিএসজি-কে এই সিদ্ধান্ত জানান মেসির বাবা। সৌদি আরবের আল হিলাল ও মেজর সকার লিগের ক্লাব ইন্টার মায়ামি মেসিকে নিতে আগ্রহী। তালিকায় রয়েছে মেসির প্রাক্তন ক্লাব বার্সেলোনাও।
২০২০ সালে বার্সা ছাড়়েন লিওনেল মেসি। ২ বছরের চুক্তি ছিল তাঁর। প্রথম মরশুম ভাল কাটলেও দ্বিতীয় মরশুম থেকে সমস্যা হচ্ছিল। পিএসজি সমর্থকদের বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়। বিশ্বকাপ জয়ের পর সেই বিদ্রুপ আরও বাড়ে। এরই মধ্যে ক্লাবকে না জানিয়ে সৌদি আরবে যাওয়া নিয়ে মেসিকে নির্বাসিত করে পিএসজি।
ফুটবল তারকা লিওনেল মেসিকে (Lionel Messi) ইংরেজিতে 'আনপ্রেডিক্টেবল' বললে খুব একটা ভুল হবে না। ফুটবলের ময়দানে যেমন তাঁর পদক্ষেপ বোঝা দুষ্কর, ঠিক তেমনভাবেই মেসির জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ আগে থেকে বোঝা কঠিন। কিছুদিন আগেই প্যারিস সেন্ট জার্মান ক্লাব মেসিকে দু সপ্তাহের জন্য দল থেকে স্থগিত করেছিল। মেসির অপরাধ, দলের অনুমতি ছাড়া সৌদি আরব সফরে যাওয়া। এরপর জল্পনা শুরু হয়েছিল, পিএসজি (PSG) নিয়ে মেসির মনেও ক্লেদ জমেছে। চারিদিকে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, তিনি যোগ দিতে পারেন সৌদির ক্লাব 'আল হিলাল'এ। কিন্তু শনিবারই খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন হতে পারে পিএসজিতেই।
দলের সঙ্গে সমস্ত অভিমান মিটিয়ে নিতে এগিয়ে আসেন মেসি নিজেই। ক্ষমা চেয়ে বলেন, 'ভেবেছিলাম খেলার পরে ছুটি নেব। একটি ট্রিপ আগে থেকেই ঠিক হয়েছিল। আমি তা বাতিল করতে পারিনি, কারণ আমি আগেও সৌদি সফর বাতিল করেছিলাম। আমি আমার দলের সহযোদ্ধাদের কাছে ক্ষমা চাইছি এবং দলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি।'
অন্যদিকে বিশ্বকাপজয়ী লিওনেল মেসিকে হাতছাড়া করতে চাইছে না প্যারিস সেন্ট জার্মান দল। তাঁরাও চাইছে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরুক। আসন্ন ঘরের ম্যাচের জন্য নাকি শীঘ্রই ক্লাবের মাঠে অনুশীলনে ফিরবেন মেসি। পিএসজির কোচ ক্রিস্টোফে গালতিয়ের একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, 'আমার মেসির সঙ্গে কথা হয়েছে। সে খেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। আগামীকাল থেকেই অনুশীলন শুরু করবেন।'
যদিও মেসি যে পিএসজিতে থাকছেন তা এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। জুন মাস পর্যন্ত পিএসজির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ তিনি। এরপর মেসি সেখানেই থাকবেন, না কি নীল জার্সি ছেড়ে গায়ে পরবেন আল হিলালের জার্সি। তা এখনও বলা যায় না। কারণ ফুটবলের ঈশ্বরের গতিবিধি 'আনপ্রেডিক্টেবল'।
সৌদি আরব ভ্রমণে গিয়ে বিপাকে পড়লেন মেসি (Lionel Messi)। প্যারিস সেইন্ট জার্মান (PSG) ক্লাব কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড (Suspended) করল তাঁকে। খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাঁকে সৌদি আরব যাওয়ার অনুমতি দেননি, তা সত্বেও সেখানে গিয়েছেন তিনি। তাই জন্যই শাস্তি ভোগ করতে হল মেসিকে। আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য মেসিকে মাঠের বাইরেই থাকতে হবে। এই শাস্তির জেরে মেসি বাদ যেতে পারেন আসন্ন দুটি ম্যাচ থেকে। এমনকি এই দুই সপ্তাহে মেসি ক্লাবের মাঠে খেলতে পারবেন না, ট্রেনিং দিতেও পারবেন না।
জানা গিয়েছে, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ানকে শাস্তির এই দুই সপ্তাহে ক্লাবের তরফ থেকে পারিশ্রমিকও দেওয়া হবে না। চলতি বছরের জুন মাসে পিএসজি অর্থাৎ প্যারিস সেইন্ট জার্মানদের সঙ্গে মেসির চুক্তি শেষ হচ্ছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ মেসির সঙ্গে আবারও নতুন করে চুক্তি করার কথা ভাবছিল, এরই মধ্যে ক্লাবের নির্দেশকে অমান্য করে সৌদি গেলেন মেসি। এই ঘটনাকে ইঙ্গিতবহ মনে করছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, মেসি বোধহ্য় নিজেই পিএসজিতে আর থাকতে চাইছেন না।
এর আগে গুঞ্জন উঠেছিল মেসি বার্সেলোনায় ফিরে যেতে পারেন। এমনকি বার্সেলোনার প্রাক্তন সতীর্থদের সঙ্গে ডিনারে গিয়েছিলেন তিনি। সেই নিয়েও কম চর্চা হয়নি। সম্প্রতি মেসি সৌদি গিয়েছিলেন সেখানকার পর্যটনের হয়ে প্রচার করতে। নেটিজেনদের প্রশ্ন, 'মেসি কী শুধুই এই কারণে আরবে গেলেন?' অনেকে মনে করছেন, মেসি সৌদি আরবের ক্লাব 'আল হিলাল'-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন। তাই বর্তমান ক্লাবকে অমান্য করেই তাঁর এই যাত্রা।
২০২২ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি ক্লাব ফুটবলে নিজের ৭০০তম গোলটি করে ফেললেন রবিবার রাতে। ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের ম্যাচে মার্সেইলের বিপক্ষে পিএসজি জয় পায় ৩-০ গোলে। প্রথম গোলটি করেন ফরাসি তারকা এমবাপে। ২৯ মিনিটে দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেন প্রাক্তন বার্সা তারকা মেসি। দলের পক্ষে শেষ গোলটি আসে সেই এমবাপের পা থেকেই। গত ডিসেম্বরে বার্সেলোনা থেকে পিএসজি-তে আসার পর এটা তাঁর নতুন ক্লাব জার্সিতে ২৮ তম গোল। ১৩ বছর বয়সে কাতালান ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন মেসি।
সেই জার্সিতে ৭৭৮টি ম্যাচ খেলে ৬৭২টি গোল করেছিলেন এলএম-১০। ৭টি ব্যালন-ডি-ওর পাওয়ার রেকর্ডও তাঁরই দখলে। পাশাপশি বার্সেলোনার হয়ে ৩৫টি প্রতিযোগিতামূলক ট্রফি জিতেছিলেন মেসি। ফিফার সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবও তাঁরই পকেটে আসছে বলেও ফুটবল বিশ্বে খবর। দেশের হয়ে ৯৮টি গোল করে রেকর্ডের সামনে দাড়িয়ে রয়েছেন লিও। ১০০টি গোল করলেই তিনি হবেন তৃতীয় আর্জেন্টাইন, যিনি ১০০টি গোলের মালিক হবেন। স্বভাবতই মেসি প্রেমীরা উচ্ছসিত এই সাফল্যে।
প্রসূন গুপ্ত: একটাই স্বপ্ন ছিল আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মেসির, কোনও একদিন বিশ্বকাপটি তাঁর হাতে ওঠে। স্বাভাবিক, বিশ্বসেরা তিন খেলোয়াড়ের মধ্যে সদ্য প্রয়াত পেলেকে বলা হয় সম্রাট, মারাদোনাকে রাজপুত্র এবং মেসিকে সুলতান বা রাজা। সমকালীন অনেক খেলোয়াড়ই এই তিন কিংবদন্তির সময়ে ছিলেন। কিন্তু এঁরা বিখ্যাত হয়েছেন একক শক্তিতে বা পায়ের জাদুতে দর্শকের ভোটেই। পেলে একমাত্র ফুটবলার, যিনি তিন-তিনবার বিশ্বকাপ পেয়েছেন। মারাদোনা ১৯৮৬-তে এবং অবশেষে মেসি খেলোয়াড় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে। ২০০৬ থেকে নিয়মিত বিশ্বকাপ খেললেও এতদিন লাগলো কেন মেসির, উঠছে এমন প্রশ্ন। আসলে আর্জেন্টিনার গাঁট জার্মানি দল। ৮৬-র ফাইনাল বাদ দিলে এই জার্মানি কতবার যে আর্জেন্টিনার মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে তা নিয়ে রেকর্ড বই ঘাঁটার দরকার নেই। দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন ৯০-এ মারাদোনা, ২০১৪-তে মেসি।
১৯৮৬-র বিশ্বকাপ ফাইনালে নিয়মিত পায়ের জাদু দেখানো মারাদোনাকে বোতলবন্দি করে রেখেছিলো তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি। কিন্তু তাঁকে লক্ষ্য রাখতে গিয়ে বাকিদের ঢিলে পরে যাওয়াতে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা জিতেছিল। পরে ৯০-তেও ফাইনালে মারাদোনাকে আটকে দিয়েছিলো এই জার্মানিই। মেসির ২০০৬-০এ তেমন নাম ধাম ছিল না, কিন্তু উঠতি খেলোয়াড় ছিলেন তো বটেই। ২০১০-এ মেসির আর্জেন্টিনাকে জার্মানি কোয়ার্টার ফাইনালে ৪ গোল দিয়ে বিদায় করেছিল। ২০১৪-র ফাইনালে মেসিকে বল নিয়ে ড্রিবলিং বা পাসিং করতেই দেয়নি জার্মান ডিফেন্স। ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের ১১৩ মিনিটের মাথায় গোৎজের গোলে আর্জেন্টিনা ১ গোলে হারে।
এবারে মেসি বলেই দিয়েছিলেন, এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। কাজেই ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের মতোই জানপ্রাণ লড়িয়ে সারা টুর্নামেন্ট খেললেন নেতার মতোই। অবশেষে ঐতিহাসিক ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বৈরথে টাই-ব্রেকে জয় পায়ে মেসি বাহিনী। ট্রফিতে পেলেনই সঙ্গে বিশ্বকাপ ইতিহাসে নামটিও তুলে ফেললেন। সেই রাতে ঘুমের সময়ে নাকি মেসি বিশ্বকাপটি সঙ্গে নিয়ে শুয়েছিলেন।
তাঁর ফেসবুকে সে ছবিই পোস্ট করেছিলেন। এরপর তাঁর ক্লাব ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি বর্তমানে দেশে এবং এই সময়ে আর্জেন্টিনায় গ্রীষ্মকাল। সারা বছর শীতের দেশে থাকা মেসি গরমকাল উপভোগ করছেন স্ত্রী এবং ৩ পুত্রের সঙ্গে। এই ছবিও পোস্ট করেন মেসি দ্য গ্রেট।