ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (Student Union Election) দাবিতে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের (Medical Student) আন্দোলনের চলছে কলকাতা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে (Calcutta Medical College and Hospital)। এদিকে, স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত নিতে একেবারেই অপারগ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাহেই রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী ছাড়াও রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম (Health Secretary) কথা বলেন আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে। পাশাপাশি বৈঠক করেন প্রিন্সিপাল ইন্দ্রনীল বিশ্বাস এবং এমএসভিপি ডক্টর অঞ্জন অধিকারীর সঙ্গে।
ঠিক হয়েছে আগামী মঙ্গলবার, ছাত্র প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্যসচিব, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল, এমএসভিপি সবপক্ষকে নিয়ে বৈঠক হবে স্বাস্থ্য ভবনে। প্রিন্সিপাল আশাবাদী, 'ওই বৈঠক থেকে নির্বাচন নিয়ে সমাধান সূত্র বের হয়ে আসবে।' সবপক্ষই দেখতে চায় নির্বাচন নিয়ে, যখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন স্বাস্থ্য ভবনের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছে, সেই জায়গায় কী সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য ভবন।
এদিকে, আজ চতুর্থ দিনে পড়ল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোটের দাবিতে আমরণ অনশন। রবিবার ছুটি থাকলেও হাসপাতালে নিজের দফতরে আসেন প্রিন্সিপাল ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। এদিকে, প্রিন্সিপাল ইন্দ্রনীল বিশ্বাস দফতরে আসা মাত্রই, প্রথমে চলে যান অনশন মঞ্চে। সেখানে তিনি, অনশনকারী ছাত্রদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। জানতে চান তাদের শারীরিক অবস্থা কেমন রয়েছে। জানা গিয়েছে, অনশনের ৭২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত, আন্দোলনরত পড়ুয়াদের একজনের গাঁয়ে সামান্য জ্বর রয়েছে। কয়েকজনের ইউরিনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
অপরদিকে ছাত্র সংসদ সূত্রে খবর, আগামী মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনে সব পক্ষকে ডাকা হয়েছে নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে। প্রিন্সিপালের দাবি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন স্বাস্থ্য সচিব। ছাত্রদের বৈঠকে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের দাবি,আগামী মঙ্গলবার কখন বৈঠক হবে, কোথায় বৈঠক হবে, সেকথা আলোচনা করে কিছুই নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানানো হয়নি। আদৌ স্বাস্থ্য ভবনের ডাকা বৈঠকে উপস্থিত থাকব কিনা। আমরা নিজেরা বৈঠক করে,প্রিন্সিপালের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করব।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে উত্তাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (Medical College And Hospita।) সকাল থেকেই থমকে চিকিৎসা পরিষেবা। গেটে তালা ঝুলিয়ে মেডিক্যাল স্টুডেন্টদের (Medical Students) ঘেরাও, সুপারের ঘরে আটকে ডেপুটি সুপার-সহ বিভাগীয় প্রধানরা। পাল্টা চিকিৎসার দাবিতে সরব রোগীর পরিজনরা। দীর্ঘক্ষণ পরিষেবা বন্ধ থাকায় ইট দিয়ে গেটের তালা ভাঙার চেষ্টা করেন রোগীর পরিজনরা। তাঁদের দাবি, ঘেরাও তুলে রোগীর পরিজনদের হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। অবিলম্বে পুলিসি নিরাপত্তা দেওয়া হোক, আবেদন এক রোগীর আত্মীয়ের। মামলা দায়ের কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে। আগামীকাল শুনানির সম্ভাবনা।
জানা গিয়েছে, ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (Medical College Kolkata) অধ্যক্ষ, এমএসভিপি-সহ বিভাগীয় প্রধানদের ঘেরাও করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার থেকে চলছে বিক্ষোভ আন্দোলন। সেদিনই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষর অফিস ঘেরাও করেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। তাঁদের অভিযোগ, '২২ ডিসেম্বর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়েছিল। তার আগে সোমবার নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যক্ষের অফিসে বৈঠকের কথা ছিল। সেই মোতাবেক তাঁরা বৈঠকে যোগ দিতে যান। সেখানে গেলে অধ্যক্ষর অফিস থেকে জানানো হয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে না। একইসঙ্গে বলা হয় মৌখিকভাবে অন্য ডাক্তারি পড়ুয়াদের যেন তা জানিয়ে দেওয়া হয়।' এখানেই আপত্তি তোলেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। তারপরই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয় মেডিক্যাল কলেজের করিডরে।
এই ঘেরাওয়ের জেরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার জন চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঘেরাওয়ের জেরে আটকে রয়েছেন সার্জারি, মেডিসিন, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধানরা, প্রিন্সিপাল এবং সুপার। নার্সিং সুপারকে ঘেরাও করে চলছে বিক্ষোভ। এতে বচসায় জড়ান নার্সিং স্টাফ এবং মেডিক্যাল পড়ুয়ারা। হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করাতে আসা এক ব্যক্তির অভিযোগ, 'ভোর থেকে লাইন দিয়ে এখনও ঢুকতে পারলাম না। হয়রানির একশেষ, সকাল থেকে না খেয়ে দাঁড়িয়ে। কারও কিছু হয়ে গেলে কে দায় নেবে।' লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে রাত ৩টে থেকে অপেক্ষায় থাকা এক মহিলার চোখেমুখেও হয়রানির চিত্র স্পষ্ট।
অনেক রোগীর পরিবারের কাতর আবেদন, 'সংবাদ মাধ্যম একটু সাহায্য করুক। আমাদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সামর্থ নেই। কাজ থেকে ছুটি নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসে এই হেনস্থা।'
এদিকে, অচলাবস্থা কাটাতে হাসপাতালে মধ্যস্থতার জন্য আসেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের কয়েকজন সদস্য তাঁদের বক্তব্য, 'মেডিক্যাল পড়ুয়াদের দাবি অযৌক্তিক নয়। কিন্তু আমরা চাই চিকিৎসা পরিষেবা সচল থাকুক, সঙ্গে আন্দোলন চলুক।
সৌমেন সুর: হিন্দু কলেজের শিক্ষা সমাপ্ত করার পর, ১৮৬১ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে মহেন্দ্রলাল সরকার আই.এম.এস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৬৩ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকেই ডক্টর অফ মেডিসিন ডিগ্রির অধিকারী হন। ভারতে সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞান চর্চার মূল্যায়ন প্রসঙ্গে শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর 'রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ' গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন, "বঙ্গদেশকে যত লোক উঁচু করে তুলেছেন এবং শিক্ষিত বাঙালিদের মনে মনুষ্যত্বের আকাঙ্ক্ষা দীপ্ত করেছেন, তাঁদের মধ্যে ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন অন্যতম। এরকম বিমল সত্যানুরাগী, সাহসী ও দৃঢ়চেতা অতি অল্প বাঙালিই দেখাতে পেরেছেন। এইরকম জ্ঞানানুরাগ মানুষ বঙ্গদেশে দুর্লভ।"
যাই হোক, এম.ডি ডিগ্রি পাওয়ার পর ডাক্তার সরকার প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। তাঁর অসামান্য রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের খ্যাতি সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যসাগর তাঁর অত্যন্ত গুণগ্রাহী ছিলেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের ক্যানসার রোগের চিকিৎসার জন্য, তাঁর ভক্তরা ডাঃ সরকারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। জীবনের প্রাথমিক পর্বে হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে তাঁর অনাস্থার প্রধান কারণ ছিল- ওই পদ্ধতিতে অ্যানাটমি ও ফিজিওলজির তেমন গুরুত্ব না থাকা। পরবর্তীতে বিদ্যাসাগরের প্রেরণায় নিজের চিকিৎসার ধারা পাল্টে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হোমিওপ্যাথি বিশেসজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার।
ডাক্তার সরকারের শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল 'ইন্ডিয়ান এ্যাসোসিয়েশন ফোর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স' প্রতিষ্ঠা করা। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় সমকালের সেরা ছাত্রদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চায় যাতে মগ্ন থাকে তারই জন্য এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা। ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তাঁরই ভাইপো অমৃতলাল সরকার। তাঁর সময়েও এই প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। প্রতিষ্ঠানটি যাদবপুরে অবস্থিত। ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার সেই সময়ের রোগ নিরাময়ে ছিলেন ধন্বন্তরী, তাইতো আজও তাঁকে ভুলতে পারিনি আমরা।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (Calcutta Medical College) হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তাই রোগী স্বাছন্দ্য বজায় রাখতে খোলা হচ্ছে নতুন তিনটি বিভাগ। যথা-
১.নিওনেটোলজি বা সদ্যোজাত শিশু বিভাগ
২. দ্বিতীয়টি হল কার্ডিয়াক আনেসথেসিওলজি
৩. রিওম্যাটোলজি বিভাগ
এই তিনটি নতুন বিভাগ চালুর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যভবনের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। হাসপাতাল (hospital) সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক নিওনেটোলজি নামে একটি বিভাগ রয়েছে। যার শয্যাসংখ্যা ৫০। নতুন একটি বিভাগ চালু করা হচ্ছে, তা হল নিওনেটোলজি বা সদ্যোজাত শিশু বিভাগ।
পাশাপাশি, দ্বিতীয় নতুন বিভাগটি হল কার্ডিয়াক আনেসথেসিওলজি। ইতিমধ্যে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ রয়েছে। কিন্তু যেভাবে হার্ট এবং থোরাসিক অস্ত্রোপচার বাড়ছে। তাতে গুরুত্ব বাড়ছে এই বিভাগটির। জানা যায়, এই বিভাগটির অধীনে ২০টি সিসিইউ চালু করার মতো পরিকাঠামো রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের।
রিওম্যাটোলজি বিভাগ, বর্তমানে শুধু এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। যেভাবে বাতজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে একটি মাত্র মেডিক্যাল কলেজে এই বিভাগ থাকা যথেষ্ট নয়, এমনটাই মত চিকিৎসকদের। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নতুন এই বিভাগ তৈরির চিন্তাভাবনা রয়েছে। আরও জানা যায়, স্বাস্থ্যভবনের অনুমতি পেলে নতুন তিনটি বিভাগের উচ্চশিক্ষার পাঠক্রমও চালু করা হবে আগামী বছর।