পুঁজি ২২২ রান। তারমধ্যে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা একাই দিলেন চার ওভারে ৬৮ রান। নিট ফল, মঙ্গলের বর্ষাপাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে মাঠ ছাড়ল ভারত। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ শেষে ভারত অধিনায়ক সূর্য কুমার যাদব জানালেন, পরিকল্পনায় ভুল ছিল না, কিন্তু সব ভেস্তে দিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
১২ বলে ৪২ রান। এই সমীকরণ থেকেই মঙ্গলবার ম্যাচ বার করেছে অস্ট্রেলিয়া। আসলে ভারতের মাঠে ২২২ যে কোনও রান নয়, তা প্রমাণ করেছেন ম্যাক্সওয়েল এবং অজি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। তাই সূর্যর মতে, সব হল কিন্তু ম্যাক্সওয়েলকে আউট করা গেল না।
গুয়াহাটির মাঠেও টোন সেট করে দিয়েছিলেন রুতু। তাঁর অপরাজিত ১২৩ রান অক্সিজেন দিয়েছিল সিরিজ জয়ের। কিন্তু কল্পতরু ভারতীয় বোলারদের সৌজন্যে আপাতত রায়পুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাতেও ছেলেদের প্রশংসা অধিনায়কের গলায়। স্কাইয়ের গলায় আলাদা অনুভূমি রুতুর ব্যাটিং নিয়েও।
পার্থ ভৌমিক (মন্ত্রী / পশ্চিমবঙ্গ সরকার ): মঙ্গলবারের বিশ্বকাপের এই খেলা মনে রাখবো নিশ্চিত। ম্যাক্সওয়েল যেদিন খেলেন সেদিনটা ওরই থাকে। আইপিএলে দেখেছিতো। আজকের ক্রিকেট কিন্তু সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। আমাদের ছোটবেলার ইডেনে দেখা বিশ্বনাথ গাভাস্কারের টেস্টের যুগ আজকে আর কোথায়? আজকে একজনের খেলা এবং দলকে জেতানো নিশ্চয় বড় ব্যাপার কিন্তু ম্যাক্সির এই খেলা ভেবে দেখলে অনেকেই খেলে নিচ্ছে। ম্যাক্সিকে তবু ধন্যবাদ দেব প্রয়োজনে দুর্দান্ত ইনিংস খেলার জন্য কিন্তু ভেবে দেখুন এই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের খেলায় মাত্র ২০০ রান দরকার ছিল, দ্রুত তিনটে উইকেট পরে গেলো। তারপর কোহলি এসে ম্যাচটা ধরলেন। কোহলিকে আমি নিঃসন্দেহে এবারের বিশ্বকাপের সেরা বলবোই। দেখুন আবারও বলছি ম্যাক্স দারুন, চিরকাল এই খেলাটা মনে থাকবে কিন্তু এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া হারলেও সেমিফাইনালে যেতই। এ ছাড়া আফগানিস্তান স্রেফ অভিজ্ঞতা এবং বাজে ফিল্ডিংয়ের জন্য হারলো। দুটো লোপ্পা ক্যাচ কি ভাবে মিস করলো তারা। প্রথমে বেশ ভালো ফিল্ডিং করছিলো কিন্তু ৭ উইকেট ফেলে দেওয়ার ওদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এসে গেলো এবং সেটাই কাল হলো।
ম্যাক্সওয়েল নিঃসন্দেহে এবারের বিশ্বকাপের সেরা ইনিংস খেলেছে কিন্তু ১৯৮৩ র কপিল হতে পারবে না। নটিংহ্যামে ও বছর জিম্বাবোয়ের সঙ্গে যে খেলা হয়েছিল তা আমরা কেউই দেখতে পারি নি কারণ ইংল্যান্ডের সাম্প্রচারকারী বিবিসি সেদিন ধর্মঘট ডেকেছিল বলে খেলা দেখায় নি কিন্তু বিবরণ তো শুনেছি। ১৭ রানে গাভাস্কার, শ্রীকান্ত, অমরনাথ, যশপাল, পাটিল আউট হয়ে গিয়েছিলো। কপিল এসে খেলা ধরে। তখন ফিল্ডিংয়ের কোনও রেস্ট্রিকশন ছিল না। কখনও বিনি কখনও ১০ নম্বরে থাকা কিরমানিকে নিয়ে ২৬৬ রান এবং নিজের ১৭৫ , ভাবা যায় ? মনে রাখতে হবে ভারত মোটেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষমাত্রা নিয়ে মাঠে নাম নি। কিন্তু কপিলের ওই ইনিংসের পরে নক আউট পর্যায়ে উঠেওছিলো দল এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কপিলের ওই ইনিংস সোনায় বাঁধানো| ওর সঙ্গে তুলনা চলে না।
অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত
চোট নিয়েও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দুরন্ত দু'শতরান হাঁকালেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল । কার্যত 'এক পায়ে' খেলে ২০১ রানের রেকর্ড গড়লেন ম্যাক্স। অসম্ভব মানসিক জেদ নিয়ে প্রায় হেরে যাওয়া একটা দলকে একাই জিতিয়ে দিলেন ম্যাক্স। আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে পরাস্ত করল অস্ট্রেলিয়া।
আফগান বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন ম্যাক্স। কিন্তু সেঞ্চুরি করার আগেই তাঁর পেশিতে টান ধরে। ইনিংস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ম্যাক্সের ব্যথাও। ম্যাসাজ, ব্যথা কমানোর ওষুধ কিছুতেই কাজ হয়নি।
কিন্তু থামানো যায়নি ম্যাক্সকে। আফগানদের বেঁধে দেওয়া রান তাড়া করে একাই দলকে জিতিয়ে দিলেন ম্যাক্স। তাঁর এই লড়াই উপভোগ করল গোটা বিশ্ব। ম্যাক্স দলকে জেতালেন তো বটেই একই সঙ্গে রেখে গেলেন ২২ গজে একলা লড়াই করার অনুপ্রেরণা।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ব্যাটার হিসাবে একদিনের ক্রিকেটে ডবল সেঞ্চুরি। তিনি প্রথম যিনি ওপেন করতে না এসে একদিনের ক্রিকেটে দ্বিশতরান করলেন। কোনও একদিনের ম্যাচে রান তাড়ায় তাঁর ব্যাট থেকে গেল সর্বোচ্চ রান করার নজির। এই প্রথম কোনও একদিনের ম্যাচে রান তাড়ায় কোনও ব্যাটার ২০০ রানের মাইল ফলক তৈরি করলেন। মঙ্গলবার ওয়াংখেড়ে পরবর্তী সময়ে চুম্বকে এটাই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। যাঁকে বলা হচ্ছে, এক পায়ে অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তোলার সম্রাট।
সেই ম্যাক্সওয়েল জানান, মুম্বইয়ের প্রচন্ড গরমে প্রথমে ফিল্ডিং করে তারপর ব্যাট করা মোটেই সহজ ছিল না। তাই কাহিল হয়ে যাচ্ছিলেন। যন্ত্রণা তাঁর শরীরে থাবা বসাছিল। মাঠে শুয়ে তার থেকে নিস্তার খোঁজার চেষ্টা করছিলেন। কারণ, যে পরিস্থিতি তিনি এসেছিলেন, আর যেখান থেকে তিনি মাঠ ছাড়লেন, তা একশো আশি ডিগ্রির পার্থক্য। ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স জানিয়েছেন, তাঁর দেখা একদিনের ক্রিকেটে এটাই সেরা ইনিংস।
১৯৮৩ সালে ট্রেন্ট ব্রিজ। নাকি ২০২৩ সালের মুম্বই। বিশ্বকাপের প্রেক্ষাপটে কোনটা সেরা। ওয়াংখেড়ে পরবর্তী সময়ে শুরু হয়ে গিয়েছে এই নিয়ে আলোচনা। কপিলের মহাকাব্য নাকি ম্যাড-ম্যাক্সের রূপকথা ? আলোচনা চলছে। তার মধ্যেই বিশ্বকাপের তৃতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। আফগানিস্তানের হারে আপাতত স্বস্তির শ্বাস পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড শিবিরে। আর ভারত তাল ঠুকছে চার নম্বরে কে থাকবে, তার অপেক্ষায়।