আবারও সিবিআইয়ের স্ক্যানারে নারদাকর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল। ৪ঠা এপ্রিল সকাল ১১টায় নিজাম প্যালেসে তলব সংবাদমাধ্যম তেহলকার প্রাক্তন সম্পাদককে। ষড়যন্ত্র, নাকি দুর্নীতি, উত্তর কি সামনে আসবে এবার? ইমেল মারফত তাঁকে সিবিআই ডেকে পাঠালেও পাল্টা জবাব দেন ম্যাথু।
সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে স্যামুয়েল হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক নাটকে পরিণত হয়েছে, পাল্টা জবাব তাঁর। দুই মাস আগেও এমন একটা চিঠি পেয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁর জবাবে বলা ছিল, তিনি এখন বেঙ্গালুরুতে থাকেন আর এত কম সময়ে কলকাতা আসতে পারবেন না। তাঁকে যাতায়াত এবং থাকার খরচ দিতে হবে। গোটা ঘটনায় তিনি কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চান। একইসঙ্গে তাঁর দাবি, কলকাতায় আসা-যাওয়ার খরচও জোগাতে হবে সিবিআইকে। ২০১৬ সাল থেকে সিবিআই এই মামলার তদন্ত করলেও এখনও রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ তারা। এদিকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে তৎপর দুই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ও সিবিআই। ফের নির্বাচনের আগে নারদ-কাণ্ড নিয়ে তৎপর সিবিআই। কিন্তু কে এই ম্যাথু স্যামুয়েল? কীভাবে তিনি যুক্ত নারদা-কাণ্ডের সঙ্গে।
ম্যাথু স্যামুয়েল একজন সাংবাদিক। তিনি সংবাদমাধ্যম তেহলকার প্রাক্তন সম্পাদকও। তিনিই নারদ ‘স্টিং অপারেশন’ চালিয়েছিলেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বাছাই করা কিছু নেতা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ২০১৪ সালে হওয়া এই অভিযানে ক্যামেরার সামনেই টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল বাংলার শাসক দলের একাধিক সাংসদ, মন্ত্রীকে। অভিযোগ, তোয়ালে মুড়ে টাকা নিতে দেখা যায় তৎকালীন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে উত্থানও এই ২০১৪ সাল থেকেই। বঙ্গ রাজনীতির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায় এই সমস্ত নেতাদের সঙ্গে অভিষেকের সখ্যতা খুব একটা মধুর ছিল না। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বারবার বলতে শোনা যায়, “এটি দুর্নীতি ছিল না, এটি ছিল ষড়যন্ত্র। কনস্পিরেসি মেড বাই ভাইপো। যাদের সহ্য করতে পারত না, যাদের মনে করত আগামী দিনে বাধা হতে পারে, তাদের বিরুদ্ধেই ম্যাথুকে কেডি সিং-এর মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়েছিল।" যদিও আট বছর পরেও এখনও অধরা নারদা রহস্য!
নারদ কেলেঙ্কারিতে আবার সক্রিয় হল সিবিআই। নারদকর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলকে তলব করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সোমবার ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় কলকাতার নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, ম্যাথু স্যামুয়েলের ফোন ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেই ফরেনসিক পরীক্ষায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব জানতে চান সিবিআই আধিকারিকরা। সেজন্যই ফের তাঁকে তলব করেছে সিবিআই।
প্রসঙ্গত, সারদা চিটফাণ্ড দুর্নীতির পর ২০১৬ সালে রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমত আলোড়ন ফেলে দেয় নারদ স্টিং অপারেশন। ২০১৪ সালে সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল ছদ্মবেশে রাজ্যে এসে এই স্টিং অপারেশন করেন। পরে রাজ্য বিজেপি দফতরে রীতিমত পর্দা টানিয়ে স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফাঁস করেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিং। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে মার্চ মাসে। ওই ফুটেজে তাতে তৃণমূলের একাধিক নেতা মন্ত্রী ও রাজ্যের ১ আইপিএস আধিকারিককে ম্যাথু স্যামুয়েলের থেকে টাকা নিতে দেখা যায়। ফুটেজে দেখা যায় প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদ, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র, মন্ত্রী তথা বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিম, প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা বর্তমান বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়, বিধায়ক ইকবাল আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক এসএমএইচ আহমেদ মির্জা এবং প্রাক্তন তৃণমূল নেতা বর্তমানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে
এই দুর্নীতির সিবিআই তদন্তের দাবিতে আদালতে দায়ের হয় মামলা। সেই মামলায় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তার পর থেকে নারদ দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই। সিবিআইয়ের তৎপরতায় তৃণমূলের তরফে প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে, লোকসভা ভোট আসছে। এখন অনেক তদন্তই গতি পাবে। তবে জিজ্ঞাসাবাদ যেন শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে শুরু করা হয়। পালটা বিজেপির দাবি, তদন্ত হচ্ছে আদালতের নির্দেশে। এখানে কারও কিছু করার নেই। দোষ করে থাকলে কেউ পার পাবে না।