বলিউড অভিনেতাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় মনোজ বাজপেয়ী (Manoj Bajpayee)। ১৯৯৪ সালে 'দ্রোহকাল' সিনেমায় বলিউডে (Bollywood) ডেবিউ করেছিলেন তিনি। বর্তমানে যে কজন অভিনেতা বলিউডে অগ্রগণ্য তাঁদের মধ্যে অন্যতম মনোজ বাজপেয়ী। শবনম, স্পেশাল ছাব্বিশ, আইয়ারি, স্যাম বাহাদুর,গ্যাঙস অব ওয়াসেইপুর সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। বলিউডের তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। অভিনেতাকে বেশ সমীহ করে চলেন বলি পাড়ার সকলেই। একসময় অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ (katrina Kaif) মনোজ বাজপেয়ীর প্রতি শ্রদ্ধায় তাঁর পা ছুঁয়েছিলেন। কী হয়েছিল তারপর?

২০১০ সালে 'রাজনীতি' সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন, ক্যাটরিনা এবং মনোজ। এই সিনেমার প্রচারে গিয়েছিলেন সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। মনোজকে ডাকা হয়েছিল ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে। এমন সময় ক্যাটরিনা আচমকাই মনোজের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন। একই সঙ্গে ক্যাটরিনা বলেন, 'আপনি দুর্দান্ত অভিনেতা।' ক্যাটরিনার এই কান্ড দেখে একেবারে অবাক হয়ে যান মনোজ।  অভিনেত্রীকে জড়িয়ে ধরেন তিনি।

পরবর্তীতে মনোজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'ক্যাটরিনা মিডিয়ার সামনে আমার পা ছুঁয়ে আমাকে লজ্জিত করে দিয়েছিল। রাজনীতি দেখার পর আমার প্রতি সম্মান দেখাতে ও এই কাজ করেছিল। আমি এই ঘটনায় আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম।'

ফ্যামিলি ম্যান মনোজ বাজপেয়ীর (Manoj Bajpayee) বয়স তখন মেরেকেটে আট কি নয়। সেই বয়সে কিনা হোলিতে এক গ্লাস ভাং খেয়ে ফেলেছিলেন তিনি। আর তারপর যা যা হয়েছিল, সে সব স্মৃতি সত্যি চারণা করার মতোই বটে।

দিনকয়েক আগে একটি পডকাস্ট - এ কথা বলতে গিয়ে নিজের ছোটবেলার কথা জানিয়েছেন এই অভিনেতা। কীভাবে ওই ছোট বয়সে নেশা করে নানা কীর্তি কলাপ ঘটিয়েছিলেন তিনি। মনোজ বলেন, 'আমাদের ছোট থেকে বড় হওয়ার সময় ভাং একটা রেওয়াজের মতো ছিল। আমার মনে আছে, একবার হোলির সময় যখন আমার বয়স আট কি নয়, আমার বাবা অর্ধেক গ্লাস ঠান্ডাই (ভাং মিশ্রিত পানীয়) আমায় দিয়েছিলেন। মা আমার বাবার উপর ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন। বলতেন যে দেখো সব বাচ্চাগুলো নেশা করে পড়ে রয়েছে।'

আর সেই ভাং খাওয়ার পর কী ঘটেছিল, সেটাও জানিয়েছেন মনোজ বাজপেয়ী। তিনি বলেন, 'আমরা ছয় ভাইবোন ও তাদের বাবা মা ছিলাম। তাই আমাদের বাড়িতে একবার ৩ কেজি মটন রান্না করা হয়েছিল। একবার হোলিতে ভাং খেয়ে আমাদের এত নেশা হয়ে গিয়েছিল যে আমরা ৩ কেজি মটন শেষ করে দিয়েছিলাম। আমার মা একটা শব্দ উচ্চারণ করেননি। আমরা এতটাই নেশা করে ফেলেছিলাম যে মনে হচ্ছিল উড়ছি।'

বলিউডের এক জনপ্রিয় অভিনেতা হয়ে উঠেছেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী মনোজ বাজপেয়ী (Manoj Bajpayee)। জীবনে অনেক কষ্ট করে, কঠোর পরিশ্রম করেই এই জায়গায় উঠে এসেছেন, যেখানে তাঁকে সবাই একনামেই চেনেন। তাঁর করা এক-একটি চরিত্র দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। তবে তিনি এবারে তাঁর সিনেমার জন্য নয়, এই হাস্যকর কাণ্ডের জন্য ফের খবরের শিরোনামে। তাঁর জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানে মদ (Liquor) খেয়ে কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই স্মৃতিই সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অতীতের কথা স্মৃতিচারণ করে মনোজ বাজপেয়ী বলেন, 'আমি যখন থিয়েটার করতাম, তখন একবার প্যারিসে গিয়েছিলাম বিমানে চড়ে। সেবারই আমার প্রথম আন্তর্জাতিক বিমান ছিল। ফলে আমি বেশ উৎসুক ছিলাম। কিন্তু বিমানে চড়ে আমি কখনও কোনও মদ খাইনি। কারণ আমার কাছে টাকা ছিল না। কিন্তু আমি যখন জানতে পারলাম, বিমানে বিনা পয়সায় অ্যালকোহল দেওয়া হয়, তখন আমি নিজেকে থামাতে পারিনি। এত পরিমাণে মদ খেয়ে ফেলেছিলাম যে প্রায় বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলাম মাঝ আকাশেই।'

মাঝ আকাশে তিনি মদ খেয়ে যে কেলেঙ্কারি বাঁধিয়েছিলেন, তা নিয়ে সাক্ষাৎকারে অকপট জানিয়েছেন মনোজ 'ফ্যামিলি ম্যান'-এর অভিনেতা।

বলিউডের অন্য ধারার অভিনেতাদের মধ্যে প্রথম সারিতে নাম লিখিয়েছেন মনোজ বাজপেয়ী (Manoj Bajpayee)। অভিনয় জীবন ছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত জীবন তেমন প্রচারের আলোয় আসে না। ফলে চর্চাও কম হয়। কিন্তু অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আলোচনার প্রসঙ্গ রয়েছে। বিয়ে করেছেন অন্য ধর্মে। বাড়িতে মেনে নিলেন? এই ধর্মীয় বিভেদ সম্পর্কের মাঝে বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়? এই পার্থক্যের পরও সম্পর্ক অটুট রাখার মন্ত্র কী? নিজের মুখেই বললেন মনোজ।

মনোজ বাজপেয়ী বিয়ে করেছেন অভিনেত্রী শাবানা রাজার সঙ্গে। বেশ কয়েকটি ছবি করেছিলেন শাবানা। তবে নিজেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নেন অভিনয় জগৎ থেকে। এরপর বিয়ে করেন মনোজ বাজপেয়ীকে।সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মনোজ বলেন, 'তিনি ধর্মে কুলীন ব্রাক্ষণ। পরিবারের বেশ প্রতিপত্তি ছিল।  তবে তাঁর পরিবার এই বিয়ে নিয়ে আপত্তি করেননি। এই বিষয়ে বেশ অবাকও হন মনোজ।' 

তবে এই ধর্মীয় বিভেদ কী কোনওদিনও মনোজ ও শাবানার সম্পর্কের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি? মনোজ এই বিষয়ে বলেন, 'আমার স্ত্রী গর্বিত মুসলিম, আমি গর্বিত হিন্দু। আমাদের ধর্ম কোনওদিন আমাদের সম্পর্কের মাঝে বিভেদ তৈরী করেনি। আমরা ধার্মিকের থেকেও বেশি আধ্যাত্মিক। 'মনোজ আরও বলেন, 'আমার এবং শাবানার মধ্যে একটি অলিখিত চুক্তি রয়েছে। আমরা কোনওদিন একে ওপরের ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলব না।'