শুরু হয়ে গিয়েছে লোকসভা নির্বাচনের মহাযুদ্ধ। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণের সকাল থেকেই নির্বাচন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অতি সক্রিয়তা রাজভবনে। ২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ও নির্বাচনকে হিংসা মুক্ত করতে রাজভবনের তরফে চালু করা হয়েছিল পিস রুম। লোকসভা নির্বাচনেও হয়নি তার ব্যাতিক্রম।লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে রাজভবনে চালু হল কন্ট্রোলরুম। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পিসরুম থেকে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেন বঙ্গের সাংবিধানিক প্রধান স্বয়ং।নির্বাচনের প্রথম দিনে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে আসা এই অশান্তির অভিযোগ শুনে ইলেকশন কমিশনকে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিলেন রাজ্যপাল।
নির্বাচনের প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় ক্রমশ বাড়াছে উত্তাপ। জমা পড়ছে একের পর এক অভিযোগ। ফোন এবং ই-মেল মারফত বহু অভিযোগ জমা হয়েছে রাজভবনে। ভোট প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। কমিশনকে সেই কাজেই সহায়তা করেছে রাজভবনের বিশেষ প্রতিনিধি দল। কন্ট্রোল রুম থেকে এমনটাই জানালেন সাংবিধানিক প্রধান সিভি আনন্দ বোস।
পোর্টালে জমা হচ্ছে একের পর এক অভিযোগ। অভিযোগ গ্রহণ করছেন স্বয়ং রাজ্যপাল । তাঁর নির্দেশই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করল সংশ্লিষ্ট দফতর। যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে কাজ চলল রাজভবনের কন্ট্রোল রুমে।
দিব্য়ি হেঁটে চলে গেলেন ভোট দিতে। কিন্তু, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে শুনলেন তিনি নাকি মারা গিয়েছেন। তাই ভোট দিতে দেওয়া হবে না তাঁকে। অভিযোগ, বেঁচে থেকেও ভোট দিতে পারলেন না সুনীল সাহা। শুক্রবার সকালে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য় ছড়িয়েছে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা ব্লকের জটেশ্বরে।
জানা গিয়েছে, জটেশ্বর বাস স্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা সুনীল সাহা। এদিন সকালে ১৩/১৩৮ নম্বর বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি। তখন ভোটের ডিউটিতে থাকা অফিসার জানান, ভোটার তালিকায় নাম ক্যানসেল করা রয়েছে। তাই ভোট দিতে পারবেন না তিনি, তাই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। জীবিত থাকলেও কাগজে-কলমে তিনি মৃত। তাই ভোটাধিকার নেই তাঁর। ভোট দিতে না পেরে ভোটকেন্দ্র থেকে আবার ফিরে এলেন সুনীল সাহা।
প্রথম দফায় শুরু ভোট পর্ব। তার মধ্য়েই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে কোচবিহার। শুক্রবার সকালে ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন ১২ জনকে ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভোটার তালিকায় তাঁদের মৃত বলে উল্লেখ করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ধূপগুড়ির ঝাড়আলতা অঞ্চলের উত্তর কাঠুলিয়া গ্রামের ৬০ নম্বর বুথে।
অভিযোগ, ধূপগুড়ির ওই বুথে ভোট দিতে গেলে ভোট কর্মীরা জানান, ভোটার তালিকায় মৃত বলে নাম রয়েছে। তাই তাঁরা ভোট দিতে পারবেন না। ভোট দিতে এসে মোট ১২ জন জলজ্য়ান্ত মানুষকে মৃত বলে জানানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
পাশাপাশি ভোট দিতে পারলেন না ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা। জানা গিয়েছে, সরকারি কাগজে তিনি মৃত। সমস্তরকম সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত ধূপগুড়ির সাত নম্বর ওয়ার্ডের বৃদ্ধা বাসন্তী দাস। এদিন সকালে বৈরাতীগুড়ি হাইস্কুলে ভোট দিতে গেলে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি কারণ জানতে গেলে তাঁকে জানানো হয় কাগজ-কলমে তিনি মৃত। জেলাশাসক দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে মৃত বলে জানানো হয় বলে অভিযোগ।
লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট শুরু। সকাল থেকেই উত্তপ্ত কোচবিহারের একাধিক এলাকা। ফের উত্তপ্ত সেই শীতলখুচি। শীতলখুচির ছোট শালবাড়ি এলাকায় সংঘর্ষে জড়াল তৃণমূল-বিজেপি। ওই এলাকার ২৮৬ নম্বর বুথের বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের হাতাহাতি হয়। দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন ঘটনায় জখম হয়েছেন বলে খবর।
পাশাপাশি, শীতলকুচি ব্লকের গোসাইরহাট অঞ্চলের অন্তর্গত বড় ধাপের চাত্রার ২০১ নম্বর বুথে এক বিজেপি কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পরে ঘটনাস্থলে আসে বিশাল পুলিস বাহিনী এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একই ছবি ধরা পড়েছে ১৩৯ নম্বর বুথেও।
প্রত্যেকবারই নির্বাচনের সময় খবরের শিরোনামে থাকে কোচবিহার। বিজেপি এবং শাসক শিবিরের মধ্যে চলছে অভিযোগ ও পালটা অভিযোগের পালা। তুফানগঞ্জ দুই নম্বর ব্লকের বারকোদালি দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯/২২৬ ও ৯/২২৭ নম্বর বুথে তৃণমূলের বুথ এজেন্টকে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। তৃণমূলের ভোটারদের ভোট দিতে না যাওয়ার হুমকি। এমনকি তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য কেও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি, অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায়।
পয়লা বৈশাখের শুভ দিনেই ইস্তেহার প্রকাশ বিজেপির। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরেই 'সংকল্প পত্র' প্রকাশ হয় আজ রবিবার। ইস্তেহারে উন্নত ভারতের কথা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি 'মোদীর গ্যারেন্টি'র উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
দফায় দফায় একাধিক বৈঠক শেষে এদিন ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়েছে। ইস্তেহারের নাম বিজেপির তরফে 'সংকল্প পত্র' রাখা হয়েছে। যেখানে মহিলা, কৃষক থেকে শুরু করে গরীব পরিবারের জন্য একাধিক প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে।
পাশাপাশি যুব সম্প্রদায়, কৃষক পরিবারের প্রতিও একাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিজেপির সংকল্প পত্রে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে নির্মলা সীতারমণ, জেপি নাড্ডা সহ একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার নির্বাচন। তার আগে এদিন ইস্তেহার প্রকাশ করলেন নরেন্দ্র মোদী। যেখানে একাধিক বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রয়েছে এক দেশ এবং ভোট লাগু করার প্রতিশ্রুতি। পাশাপাশি নারীবন্দন আইন থেকে শুরু করে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
প্রসূন গুপ্তঃ অবশেষে একেবারে ভোট শুরুর দোরগোড়ায় আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করল পুরাতন সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াকে। বড্ড দেরিতে এই ঘোষণা হলো। অঞ্চলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা ইতিমধ্যেই ৫০ শতাংশ অঞ্চলে প্রচার সেরে ফেলেছেন। এবারে প্রশ্ন এই আসানসোল কেন্দ্রে প্রার্থী ঠিক করতে এত দেরি হলো কেন?
প্রথমত একেবারে প্রথমেই ভোজপুরি গায়ক/অভিনেতা পবন সিংকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু বাঙালিকে নিয়ে পবনের একটি আপত্তিকর গানে তুমুল প্রতিবাদ ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। মানে মানে পবন এক প্রকার পালিয়ে যান ভোট লড়াই থেকে।
এরপর বিজেপি ভাবতে শুরু করে যে, একসময় পরপর দুবার এই লোকসভা জেতার পরে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় দল ছেড়ে, পদ ছেড়ে তৃণমূলে যদি দেন এবং তাদের সিম্বলে জিতে মমতা মন্ত্রিসভার সদস্য হন। অন্যদিকে উপনির্বাচনে আসানসোল কেন্দ্রে প্রার্থী হন অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ শত্রুঘ্ন এবং ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতে আসেন। কাজেই অঞ্চলটি যে বেশ কঠিন তা বেশ ভালো বুঝতে পারে বিজেপি। কিন্তু শত্রুর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে পায় না তারা। একবার প্রাক্তন তৃণমূল এবং বর্তমানে বিজেপির নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে কে প্রার্থী করার ভাবনা আসে তাদের কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে গোপন বৈঠকের কথা জানতে পেরে জিতেনকে বাতিল করা হয়। অবাঙালি অধ্যুষিত এই অঞ্চলে শেষ পর্যন্ত আলুওলিয়াকে ঠিক করা হয়।
আলুওয়ালিয়া ২০১৪-তে দার্জিলিং থেকে সাংসদ হন, ২০১৯ পদ্মফুল চিন্হে জিতে আসেন বর্ধমান/ দুর্গাপুর থেকে। শেষ বার অবিশ্যি নামমাত্র ভোটে জেতেন আলুওয়ালিয়া। এই আলুওয়ালিয়া মূলত প্রয়াত সুষমা স্বরাজের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং লালকৃষ্ণ আদবানিরও পছন্দের মানুষ। সুরিন্দর আসানসোলের মানুষ, চমৎকার বাংলা বলেন, তাঁর স্ত্রীও বাঙালি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কিন্তু একটাই মাইনাস পয়েন্ট তিনি মোদী/শাহের অপছন্দের নেতা বলেই গুঞ্জন। শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না দেখেই তাঁকে প্রার্থী করা হলো। সমস্যা হচ্ছে শত্রুঘ্ন কঠিন প্রার্থী। আসানসোলে প্রচুর বিহারী এবং মুসলিম ভোট। এ ছাড়া শত্রু বিহারীবাবুও বটে কাজেই বেশ কঠিন লড়াই আলুওয়ালিয়ার।
লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। সাত দফায় চলবে ভোটগ্রহণ পর্ব। ১৯শে এপ্রিল প্রথম দফার ভোট। সব রাজনৈতিক দলই প্রচারে ব্যস্ত। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে একাধিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। পুলিস প্রশাসনকে সজাগ থাকতে বলছে নির্বাচন কমিশন। এমতাবস্থায় এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সহ এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল বিমানবন্দর থানার পুলিস। বুধবার ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয় অভিযুক্ত দুষ্কৃতীকে।
পুলিস সূত্রে খবর, মঙ্গলবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বিমানবন্দর থানার পুলিস এয়ারপোর্ট সংলগ্ন কৈখালী থেকে এনামুল শেখ নামে এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। ওই দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কৈখালী অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করছিল, এমনটাই খবর পান পুলিস আধিকারিকরা। কোনও অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে নিয়েই ধৃত দুষ্কৃতী ওই অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সেই খবরই গোপন সূত্র মারফত এসে পৌঁছয় বিমানবন্দর থানার পুলিসের কাছে। এরপরেই অভিযান চালিয়ে এনামুল শেখকে আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেফতার করে বিমানবন্দর থানার পুলিস।
বিমানবন্দর থানা পুলিস সূত্রে আরও খবর, ধৃতের কাছ থেকে একটি ওয়ান শাটার পাইপ গান ও এক রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। ধৃত দুষ্কৃতী নিউটাউন এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। ধৃতের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় অভিযোগ রয়েছে। ধৃতকে আদালতে তুলে ১৪ দিনের পুলিস হেফাজত চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। তাকে হেফাজতে পেলে তার থেকে জানার চেষ্টা করা হবে সে কোথা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র পেয়েছিল এবং কী ধরনের অপরাধের উদ্দেশ্যে তিনি এয়ারপোর্ট সংলগ্ন কৈখালী অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করছিল।
প্রসূন গুপ্তঃ পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানাতেও দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র কংগ্রেস বা তৃণমূলকে ঢেলে ভোট দিয়েছে। ১৯৮৪/৮৫ থেকে আজ অবধি এই কেন্দ্রে না সিপিএম না বিজেপি তাদের সাংসদের জেতাতে পারে নি। এর অবিশ্যি অন্য একটা কারণ ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯১ থেকে এখানে টানা সাংসদ। এর মধ্যে ২০০৪-এ বাংলায় তৃণমূল মাত্র একটি আসনই জিতেছিল তা এই দক্ষিণ কলকাতায়। ২০০৯-এ শেষবারের মতো যেতেন মমতা নিজে কিন্তু আর দাঁড়ান নি কেননা এরপরেই রাজ্যে পরিবর্তন এবং তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রে জেতেন সুব্রত বক্সী। ২০১৪-তেও বক্সী জিতেছিলেন। ২০১৯-এ ভরা বিজেপি হাওয়াতেও এই কেন্দ্রে জিতে আসেন তৃণমূলের মালা রায়। দক্ষিণ কলকাতাকে তৃণমূলের গড় বলা হয়ে থাকে।
এবারে এই কেন্দ্রে মূল তিন প্রার্থী। তৃণমূলের মালা রায়, সিপিএমের সায়েরা শাহ হালিম এবং বিজেপির প্রাক্তন রায়গঞ্জের সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। দেবশ্রী কলকাতার কাছেই থাকেন, আরএসএসের ঘনিষ্ঠ এবং বিজেপির দীর্ঘদিনের প্রচারক। মোদী সরকারের মন্ত্রী থাকলেও একসময় তাঁর মন্ত্রীত্ব চলে যায়। তিনি রায়গঞ্জেও নিয়মিত ছিলেন না। এবারে তাঁর টিকিট পাওয়া এক প্রকার অসম্ভব ছিল কিন্তু শোনা যায় সংঘ পরিবারের চাপেই নাকি দক্ষিণ কলকাতার টিকিট পান তিনি কিন্তু বড্ডো কঠিন জমিতে লড়াই তাঁর।
অন্যদিকে সায়েরা কিন্তু প্রাক্তন বাম স্পিকার আব্দুল হালিমের পুত্রবধূ এবং অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের ভাইঝি। বালিগঞ্জ কেন্দ্রে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে উপনির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বেশ ভালো লড়াই দিয়েছিলেন কাজেই এবারেও তাঁর উপর ভরসা রেখেছে সিপিএম। এই লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ৩৬ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট, সেখানেই ভরসা বামেদের। তা যাই হোক না কেন এই অঞ্চলে এক ডজন তৃণমূলের বড় নেতাদের বসবাস এবং সংগঠন। বাংলার সবথেকে সেফ সিটে তৃণমূলকে হারানো ভয়ঙ্কর কঠিন কাজ।
এবারের লোকসভা ভোটে বাংলায় ইস্যুগুলির মধ্যে একেবারে প্রথমে রয়েছে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। এদিন জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে ভোট প্রচারে এসে দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলকে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পাশাপাশি তিনি এদিনও বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকা গরিবদের হাতে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখে এদিনও উঠে এসেছে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। আর বাংলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ওপরে হামলার প্রসঙ্গ। তিনি বলেছেন, সন্দেশখালিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ওপরে হামলা সারা দেশ দেখেছে। তিনি বলেছেন, এখানে এমন পরিস্থিতি যে আদালতকে সব ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার বাংলা এসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্র গরিবদের জন্য টাকা পাঠাচ্ছে আর তৃণমূল সেই টাকা লুট হচ্ছে। তিনি বলেন, তৃণমূলের ছোট নেতাও বড় বাংলোয় থাকেন। কিন্তু চা-বাগানের দিকে তাদের কোনও নজর নেই। বাংলার চা-শিল্প দেশের মধ্যে সব থেকে পিছিয়ে।
গত পাঁচ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে ইডির ওপরে হামলার পরে ছয় এপ্রিল ভূপতিনগরে এনআইএ-র ওপরে হামলা হয়েছে। দুটি ঘটনাতেই অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেছেন, সারা দেশ কেন্দ্রীয় এজেন্সির ওপরে হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। এদিনের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, তোলাবাজদের বাঁচাতে তৎপর তৃণমূল। সেই জন্য তারা কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তে বাধা দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখে এদিন উঠে এসেছে রাজ্যের রেশন ও নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গও। প্রধাননমন্ত্রীর অভিযোগ রাজ্যের সর্বত্র সিন্ডিকেট রাজ কায়েম হয়েছে। তবে সব কিছুর মধ্যে থেকেও প্রধানমন্ত্রী এদিন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর গ্যারান্টির কথা বলেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন কেউ ছাড় পাবে না। পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, জুন মাস থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তে আরও গতি আসবে।
বাংলায় কেন্দ্রের উন্নয়নে ব্রেক কষছে তৃণমূল, এমন মন্তব্যও করেন তিনি। কেন্দ্রীয় প্রকল্প রাজ্যে চালু করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
এদিনও প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়েছে দুর্নীতিতে বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকা ফেরানোর প্রতিশ্রুতির কথা। তিনি বলেছেন, বাংলায় দুর্নীতির মাধ্যমে যারা টাকা জমিয়েছিল, তাদের তিন হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিনি এব্যাপারে কথা বলছেন। ওই টাকা তিনি বাংলার গরিবদের দিনে চান বলে জানিয়েছেন।
আর মাত্র কয়েকদিন পরেই শুরু হবে ২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। আর এই ভোট আবহে ফের একবার ফাঁস ভোট কর্মীদের তথ্য। প্রকাশ্যে, পোলিং পার্টি-সহ কোন ব্লকে ডিউটি সেই সমস্ত তথ্য। ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে প্রায় ৫৩৭৯ টি দলের ভোটকর্মীদের তালিকা চলে এসেছে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে।
ভোট কর্মীদের বহু ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন শিক্ষানুরাগী মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী। ফাঁস হওয়া তালিকা বাতিল এবং দোষীদের শাস্তি চেয়ে ইতিমধ্যেই কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাবেন বলে জানালেন কিংকর অধিকারী। পাশাপাশি তিনি জানালেন, এভাবে বারংবার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা। রাজনৈতিক দলগুলির কাছে চলে যাচ্ছে ভোটকর্মীদের সমস্ত তথ্য। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়া এবং আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিলেন শিক্ষানুরাগী মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী।
প্রসঙ্গত, এর আগেও ফাঁস হয়েছে ভোটকর্মীদের ব্যক্তিগত বহু তথ্য। ভোটকর্মীদের মোবাইল নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কর্মক্ষেত্রের ঠিকানা সমস্ত কিছুই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তখন এর প্রতিবাদে সরব হয়েছিল শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছেও।
তারপর ফের একবার তথ্য ফাঁসের ঘটনা প্রকাশ্যে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে বারংবার কীভাবে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে ভোটকর্মীদের সমস্ত তথ্য? নেপথ্যে কি রয়েছে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রভাব? তবে এবার রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এবং ভোটকর্মীদের তথ্য ফাঁসের ঘটনায়, এবার নির্বাচন কমিশনের তরফে ঠিক কী পদক্ষেপ নেওয়া হয় সেটাই দেখার।
প্রসূন গুপ্তঃ নীতীশ কুমারকে পিছনে ফেলে জোটের অন্যতম আইএসএফ ডিগবাজি খেলো একেবারে ভোটের প্রান্তে এসে। আইএসএফের প্রধান নওশাদ সিদ্দিকী নাকি তৃণমূল বিরোধীদের অন্যতম মুখ ছিলেন ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে। তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চাইছেন। তাঁর এই বার্তায় বিজেপি-কংগ্রেস এবং বাম তিন পক্ষই খুশি হয়েছিল। অনেকটা সাগরদিঘি মডেলে ভোটটি করতে চাইছিল বিরোধীরা। শুভেন্দুর ধারণা ছিল, নওশাদ দাঁড়ালে সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হলে আখেরে ফায়দা বিজেপির। ওই কেন্দ্রে প্রায় ৪৫% মুসলিম ভোট আছে এবং ওই মোতাবেক চললে হিন্দু ভোটের বড় অংশ নিয়ে বিজেপি জিততেই পারে। ফলত বিজেপি গড়িমসি করেছিল প্রার্থী দিতে (এখনও ওই অবস্থায়)। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস নওশাদ দাঁড়ালে প্রার্থী দিতই না। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার নওশাদ জানালেন যে, দলের নির্দেশে তিনি দাঁড়াচ্ছেন না। এই খবরে অথৈ জলে পড়েছে বিরোধীরা।
একই সাথে জোট নিয়ে প্রবল জটিলতা বাম জোটের মধ্যে রয়েছে। আইএসএফ যত্রতত্র প্রার্থী দিয়ে বিপাকে ফেলেছে সিপিএমকে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি তুলোধনা করছে নওশাদকে। তিনি বলেছেন যে, এই দলটি নাকি বিজেপির সঙ্গে 'সেটিংয়ে' রয়েছে যা ধরা যায়নি। নওশাদকে প্রজেক্ট করা মহম্মদ সেলিম সরাসরি না বললেও প্রকারান্তে বলেছেন যে, আইএসএফ সঠিক ভাবে চলছে না। অন্যদিকে বিজেপি তৃণমূলের সঙ্গে নওশাদের সেটিং এর তত্ত্ব তুলেছে। এখানেই শেষ নয়, বহু কেন্দ্রে বাম ও কংগ্রেসের জোটে জোট পাকিয়েছে। কোচবিহার থেকে পুরুলিয়াতে।
তৃণমূল সুপ্রিম আগেই জেনেছিলেন, এই রাজ্যে তারাই 'ইন্ডিয়া'। এবারে কংগ্রেস ও বামেরা এই তথাকথিত ইন্ডিয়া জোট নামক জট থেকে বেরিয়ে জানাচ্ছে, এই রাজ্যে কোনও ইন্ডিয়া জোট নেই। কাজেই ভোটের দিন দশেক আগে পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডিয়া জোটের গঙ্গা প্রাপ্তি হল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই লড়াই হবে তৃণমূল বনাম বিজেপির, বাকিরা ভোট কাটুয়ার ভূমিকাতেই থাকবে।
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের আরও পাঁচটি আসনে প্রার্থী দিল বামফ্রন্ট। আজ, শুক্রবার বিকেলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলীয় দফতরে সেই ঘোষণা করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আইএসএফের দর কষাকষিতে বামফ্রন্ট যে অসন্তুষ্ট সেটাও বোঝা গিয়েছে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে। আইএসএফের পর ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী দিল সিপিআইএম।
ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইএসএফ দাঁড় করিয়েছে মজনু লস্করকে। নওশাদ সিদ্দিকী প্রথমে এই আসন থেকে লড়াই করবেন বলে বারবার জানিয়ে এলেও তা হয়নি। এই ভোলবদলের কারণ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে নওশাদ বলছেন, তিনি দলের ঊর্ধ্বে নন। আইএসএফের প্রার্থী দেওয়ার পর আজ সিপিআইএম প্রতীকুর রহমানকে ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী করল। সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক এবং সাম্প্রতিক সন্দেশখালি আন্দোলনের মুখ হিসেবে উঠে আসা নিরাপদ সর্দারকে প্রার্থী করা হয়েছে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে।
ব্যারাকপুর আসন থেকে সিপিআইএমের হয়ে লড়বেন দেবদূত ঘোষ। ঘাটাল আসনে সিপিআইয়ের তপন গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বারাসত কেন্দ্র থেকে লড়াই করবেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী প্রবীর ঘোষ। এদিন বামফ্রন্টের তরফে জানানো হয়েছে, ৩০টি আসনে লড়বেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা। জয়নগর ও মথুরাপুর আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। ১২টি আসনে বামেদের সমর্থনে লড়াই করবে কংগ্রেস। পুরুলিয়ায় একাই লড়বে ফরওয়ার্ড ব্লক।
লোকসভা আবহে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। গ্রীষ্মের দাবদাহকে উপেক্ষা করেই চলছে নির্বাচনী প্রচার। শুক্রবার সকাল সকাল প্রচার সারলেন উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। বেলেঘাটার লোহাপোল এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ সারেন তিনি। সেখানে সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগের কথাও শোনেন তিনি।
উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে কোনও লড়াই-ই নেই। তিনিই জিতছেন এই কেন্দ্র থেকে, নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে জানালেন জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী তাপস। এর আগেও একাধিকবার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
প্রতিপক্ষ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কখনও দুর্নীতিগ্রস্ত তো কখনও সুবিধাবাদী বলে কটাক্ষ করেছেন উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। এর থেকেই স্পষ্ট যে লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে। তবে শেষ হাসি কে হাসবে তা জানতে আরও বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে রাজ্যবাসীকে।
প্রসূন গুপ্তঃ ২০২৪-এর লোকসভা ভোটটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান, ইস বার ৪০০ পার। চাট্টিখানি ব্যাপার নয়, ৫৪৩ আসন বিশিষ্ট লোকসভা একক শক্তিতে ৪০০ পার একবারই হয়েছিল। ১৯৮৪/৮৫ তে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে। এছাড়া ৩৫০ পার করেছেন জওহরলাল নেহেরু এবং ইন্দিরা গান্ধী। এখনও পর্যন্ত সেরা ফল নরেন্দ্র মোদীর ৩০৩, যা কিনা গত লোকসভায় আসন পেয়েছিলেন। প্রথমত নেহেরু, ইন্দিরা বা রাজীব পেরেছিলেন কারণ সারা ভারতে কংগ্রেসের ভোটার ছিল এবং যস্মিন রাজ্যে যদাচার ফর্মুলাতে এই জয় পেয়েছিলেন তাঁরা। পক্ষান্তরে মূলত হিন্দি এবং পশ্চিমী সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত বিজেপি কিন্তু দক্ষিণে কর্ণাটক ছাড়া কোথাও সংগঠন করতেই পারেনি। বলতে গেলে পূর্ব ভারতেও কিন্তু একক শক্তি একমাত্র অসম ও ত্রিপুরা ছাড়া কোথায়? আজ অবধি বিহারেও একক শক্তি গড়ে তুলতে পারেনি কেন্দ্রীয় বিজেপি।
দেখা গিয়েছে, ২০১৯-এ রাজস্থান, গুজরাত, হরিয়ানা, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড়, ঝাড়খন্ড, কর্ণাটক এবং ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছিল বিরোধীদের। কোথাও শূন্য কোথাও একটি বা দুটি আসনের বেশি বিরোধীদের বাক্সে আসেনি কিছুই। এছাড়া উত্তরপ্রদেশে ৮০ তে ৬২+, এনডিএ ৪ , বিহারে জোট নিয়ে ৪০ এ ৩৯ এবং মহারাষ্ট্রে গোটা পাঁচেক আসন ছাড়া ৪৩ টি আসন জয় করেছিল বিজেপি এবং তাদের ভীষণ কাছের জোট। এখানেই এবং অসম, ত্রিপুরা, উড়িষ্যা ইত্যাদি রাজ্য ধরে সব মিলিয়ে ২৫০টির বেশি আসন পেয়েছিলো বিজেপি+ জোট। পরে দক্ষিণ ভারত-পূর্ব ভারত, পশ্চিমবঙ্গ ইত্যাদি নিয়ে বিজেপি একা ৩০৩ এবং জোট সহ ৩৫০-র উপর আসন পেয়েছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির সেরা ফল বলেই গণ্য করেছে বিশেষজ্ঞ মহল।
এবারে তার থেকে বেশি আসনের জায়গা কোথায়? অন্দরের খবর মহারাষ্ট্র, বিহার, ঝাড়খন্ড, কর্ণাটক, দিল্লি এবং হারিয়ানাতে আসন কমছে বিজেপির। উত্তরপ্রদেশ দাঁড়িয়ে আছে যোগী আদিত্যনাথের জনপ্রিয়তার উপর। কাজেই কোথাও মোদীর জনপ্রিয়তাকে ফের তুলে ধরে একক সংখ্যাগরিষ্টতা ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি। তাই যে ভাবেই হোক পশ্চিমবঙ্গের ২৫/২৬ আসন টার্গেট করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কাজটি কিন্তু বেশ জটিল।
প্রসূন গুপ্তঃ পশ্চিমবঙ্গের আদি শহরের অংশ সুতানটি, যাকে এখন উত্তর কলকাতা বলা হয়। একদিকে বেলগাছিয়া/ কাশিপুর থেকে সেই চৌরঙ্গী। এখানে স্কুল, কলেজে, মেডিকেল কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব সুবিধাই আছে। স্বাধীনতা পূর্ব যুগে কত শত গল্প যে উত্তর কলকাতার বাবু সংস্কৃতি নিয়ে পাই তার বিবরণ বিখ্যাত সাহিত্যিকরা লিখে গিয়েছেন। উত্তর কলকাতায় চিরকাল কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল যা এখন দখল নিয়েছে তৃণমূল। শিক্ষিত কলকাতার মানুষ নিজের নিজের জীবন নিয়েই থাকতে ভালোবাসে। দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারি নিয়ে রকে সন্ধ্যার পর আসর গরম হলেও শেষ পর্যন্ত তারা ওই তৃণমূলকেই জিতিয়ে এসেছে। এবারে কি কঠিন লড়াই এই লোকসভায়?
আসুন দেখে নি করা বসবাস করে এই উত্তর কলকাতায়। প্রথমত এখানে বাঙালিদের ৮৫ শতাংশই 'ঘটি' বা এদেশীয়। মোহনবাগান সমর্থক। এছাড়া ২৫-৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু বা মুসলিমদের বাস। অবাঙালি হিন্দু ব্যবসায়ীদের ৬-৭% এখানেই বাস করে তথা চৌরঙ্গী অঞ্চলে বিভিন্ন ভাষাভাষীর বাস। ২৫/৩০ বছর ধরে এখানে প্রথমে কংগ্রেস পরে তৃণমূলের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। একটা সময়ে উত্তর কলকাতা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। উত্তর পূর্ব এবং উত্তর পশ্চিম। উত্তর পূর্বে দাঁড়াতেন অজিত পাঁজা। অজিতবাবু আর ডিমিলিটেশন দেখে যেতে পারেন নি। এবারে একসময়ের ছাত্র পরিষদের সভাপতি এবং সদ্য তৃণমূলত্যাগী তাপস রায় এবারে এখানে বিজেপির প্রার্থী এবং কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রদীপবাবু যথেষ্ট বৃদ্ধ, এখন তেমন দৌড়ঝাঁপ করতে পারেন না কাজেই বলা যেতে পারে লড়াই সুদীপ ও তাপসের।
তাপস একপ্রকার সুদীপের উপর ক্ষোভে দল ছেড়েছেন। ব্যক্তি জনপ্রিয়তায় তিনি কমতি যান না। একরোখা সিপিএম বিরোধী লড়াকু নেতা। পক্ষান্তরে সুদীপবাবু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে থাকেন। তাঁর ইতিবাচক দিক দীর্ঘদিন সাংসদ থেকেছেন এবং অনেকেই বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের প্রিয় বিরোধী নেতা। খোদ প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের মুখ সুদীপবাবু কিন্তু লড়াই তো পছন্দের উপর চলবে না। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে সুদীপ পেয়েছিলেন মাত্র ৩৫.৯৪ % ভোট এবং জিতেছিলেন। পরের বার কিন্তু তিনিই ৪৯.১৮ % পেয়ে অনেকটাই শক্তি বৃদ্ধি করেছিলেন। এখন প্রশ্ন কে এগিয়ে? লড়াকু তাপস দাবি করেছেন তিনি সুদীপকে হারাবেন। কিন্তু আবেগ নির্ভর তাপসকে অনেক অঙ্ক পার করতে হবে যা যথার্থই কঠিন।