শনিবার বাংলার ঘরে ঘরে পূজিত হয়েছেন দেবী কোজাগরী লক্ষ্মী (Laxmi Puja 2023)। আর এই লক্ষ্মী পুজো টলিপাড়ায় প্রায় অধিকাংশ সেলেবের বাড়িতেই হতে দেখা যায়। বিভিন্ন টলি তারকাদের বাড়ির পুজোর মধ্যে অন্যতম হল অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর বাড়ির লক্ষ্মী পুজো। প্রত্যেকবারই তাঁর কলকাতার বাড়িতে বেশ জাঁকজমক করে পুজো করতে দেখা যায়। তবে এবারে দেশে নেই তিনি। কিন্তু বিদেশে থাকলেও নিজে হাতেই ভোগ রান্না করে ঘরোয়া ভাবে মা লক্ষ্মীর পুজো করলেন তিনি।
প্রতিবছরই এইদিনটি নিজের মতো করেই পালন করেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। বিদেশের বাড়িতে পুজো করার ও ভোগের ছবি নিজেই শেয়ার করেছেন ইনস্টাগ্রামে। সেখানেই দেখা গিয়েছে, নো মেকাপ লুকে। তাঁর পরনে একটি লালপেড়ে সাদা শাড়ি। একেবারে বঙ্গ নারীর বেশে তাঁকে কোজাগরীর আরাধনা করতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, ভিডিও-তে দেখা গিয়েছে, নিজের হাতে লুচি, সুজি রেঁধে মায়ের সামনে ভোগ দিয়েছেন। এছাড়াও পাঁচ ফল, মিষ্টি, ধুপ-ধুনো জ্বেলে মা লক্ষ্মীর পুজো সেরেছেন ঋতু।
সৌমেন সুর: কোজাগরী পূর্ণিমার সন্ধ্যায় পরাশক্তি ধনদায়িনি মহালক্ষ্মীর পদ সঞ্চার প্রতি গৃহস্থের আঙিনায়। কার্তিক মাসের অমাবস্যায় সেই একই মায়ের অর্চনা করবো অন্য নামে, ভিন্নরূপে, ধ্যানান্তরে। আজ যে জগৎ মাতার শুভ আগমন, তিনি মহাশক্তির এক বরণীয় রূপ, মহাকালের শক্তিমূর্তি আদ্যাশক্তি, চতুর্ভুজা, দিগবসনা, সুখপ্রদায়িনী ও বরাভয়দায়িনী। সৌন্দর্য, মাধুর্য এবং গাম্ভীর্যের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে দেবী কালিকার বর্ণিত ধ্যানমন্ত্রে।
'কালিকা বঙ্গদেশে চ' এই শাস্ত্রবাক্য শত শত বৎসর ধরে। পরম শ্রদ্ধায়, বড় আন্তরিকতায় ও গভীর ভক্তিতে এই বঙ্গভূমিতে এই পরম জননী কালিকারূপিণী মহাদেবী নিত্য সেবিতা ও পূজিতা। প্রচলিত কথা আছে 'যেখানে বাঙালি বাড়ি, সেখানে আছে কালীবাড়ি।' সৃষ্টিস্থিতিকারিনী কালরূপা মুক্তিদাত্রী দেবী কালিকার উপাসনাই হল কালের হাত থেকে নিষ্কৃতির একমাত্র উপায়।
শ্যামা মায়ের মূর্তিতে সারল্য ও কাঠিন্যের এক অপূর্ব সমাবেশ। তাই মহাকালী নৃমুণ্ডমালিনী ও করালবদনা ভয়ঙ্করা, আবার সেইসঙ্গে তিনি বরাভয় করা। একদিকে সৃজন, অপরদিকে নিধন। দুষ্টের দমন আর সৃষ্টের পালন। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছেন, 'কালী কি কালো?' দূর থেকে কালো, জানতে পারলে কালো নয়। সমুদ্রের জল দূর থেকে নীল, কাছে গিয়ে দেখো আর হাতে তুলে দ্যাখো-- রঙ নেই। ব্রহ্মশক্তি এই বিশ্বমাতা বিবসনা। দেশকালে ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আদৌ আবদ্ধ নয় তিনি বলেই দিগম্বরী। এই অভয়া মা ত্রিনয়ণ দিয়ে তাঁর করুণা ধারা বর্ষণ করেন তাঁর সন্তানকে সত্য, শিব ও সুন্দরকে প্রত্যক্ষ করান।
আমাদের আর্যঋষিরা বলেন, সৃষ্টির মধ্যেই সৃজন, পালন, সংহার বিদ্যমান। সেই করুণাময়ী পরমেশ্বরী মা কালী সৃষ্টি, স্থিতি, লয় করছেন। একদিকে সংহার, অন্যদিকে তিনি অভয় বরদা। একহাতে ভীতি প্রদর্শন অপর হাতে সন্তানকে কোলে ধারণ। এই নিয়েই মা। মা আমাদের করুণাময়ী, মঙ্গলময়ী, জয় মা ওঁ তৎসাৎ।
দুর্গা নিরঞ্জনের পরপরই দ্রুত চলে আসে লক্ষ্মীপুজো। অবশ্য এই পুজো মোটেই সার্বজনীন পুজো প্যান্ডেলের উৎসব নয়। বরং একেবারেই ঘরের অন্দরের নিয়ম মেনে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো হয়ে থাকে। যদিও সারা ভারত সহ এ বাংলাতেও দীপাবলিতে লক্ষ্মীপুজো হয়। কেউ কেউ বলে থাকে যে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো সাধারণত ওপার বাংলার বাঙালিরা করে থাকেন। এবং এ দেশীরা লক্ষ্মীপুজো করে অমাবস্যার দিন অর্থাৎ কালীপুজোর দিন। সর্বদা এই তথ্য ঠিক নয়।
উত্তমকুমার থেকে আজকের শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোই করেছেন বা করেন। যাঁরা দুজনই 'ঘটি' বা এদেশীয়। কলকাতার আদি দুর্গাপুজো যাঁরা করেন যুগ যুগ ধরে, যেমন সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের পুজো, তাঁদেরও লক্ষ্মীপুজো হয় এই কোজাগরীর নিয়ম মেনেই।
বেশ কয়েক বছর ধরে এই কোজাগরী পুজো মানুষ দেখছে টেলিভিশনে, যেখানে দেখানো হচ্ছে সেলিব্রেটিদের বাড়ি। কাজেই উৎসাহ কম পরেনি এই পুজোতে। এই পুজো প্রথম টিভির পর্দায় আসে সাংসদ তথা তৃণমূলের পার্লামেন্টের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি নিয়ে। সুদীপবাবু এবং তাঁর বিধায়ক স্ত্রী নয়না খুবই নিষ্ঠাভরে তাঁদের মধ্যে কলকাতার বাড়িতে করে থাকেন। এ ছাড়াও তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাদের বাড়িতে পূজো হয়। শোভনদেবের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। তাঁর বাড়ির পুজোর পুরোহিত তিনি নিজেই।সাধন পাণ্ডেদের বাড়ির পুজো অবশ্যি একটু অন্য ধরনের। তাঁরা ধামা পুজো করে থাকেন। অর্থাৎ দেবীর ধামা। এ বছর সাধনবাবু প্রয়াত হওয়াতে পুজো করছেন না তাঁর স্ত্রী কন্যা। অরূপ রায় থেকে অরূপ বিশ্বাস ইত্যাদির বাড়িতে পুজো হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, বিজেপি নেতাদের বাড়িতেও লক্ষ্মীপুজো হয়। রাহুল সিনহা থেকে লকেট চট্টোপাধ্যায়, সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রত্যেকেই পুজো করে থাকেন। বামেরা পুজোআর্চাতে বিশ্বাসী না হলেও কারুর কারুর বাড়িতে পুজোর আয়োজন হয়। যথা শিলিগুড়িতে অনেকদিন ধরে প্রবীণ সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যর বাড়িতে তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীপুজো করতেন। কিন্তু অশোকবাবুর স্ত্রীর প্রয়াণে পুজো বন্ধই হয়ে গিয়েছে। একই সঠিক সিনেমা ও টিভি শিল্পীদের অনেকের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হয়ে থাকে। তবে এঁদের আবার পুজোর থেকে নিজেদের ও পুজোর প্রচারের দিকেই নজর বেশি। লক্ষ্মীমাতা বাণিজ্যের দেবী তাই প্রচার করতেই ব্যস্ত অনেকেই।
বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি (Rainfall) পুজোর (Durga Puja 2022) সময় ভুগিয়েছে উৎসবপ্রিয় বাঙালিকে। লক্ষ্মীপুজোতে (Laxmi Puja) রয়েছে হালকা-মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। কিন্তু আগামী সপ্তাহের আগে বাংলা ছাড়ছে না বর্ষা। বৃহস্পতিবার এই ইঙ্গিত দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। অন্তত সোমবার অর্থাৎ ১০ অক্টোবরের আগে রাজ্য থেকে বর্ষা (Monsoon Update) বিদায়ের সম্ভাবনা নেই। আবহবিদদের দাবি, পয়লা জুন দেশে বর্ষা ঢোকে আর বাংলায় মধ্যজুনে বরশার প্রবেশ। আবার ১০ অক্টোবর বাংলা থেকে বর্ষা বিদায়ের নির্ঘণ্ট। সেই সূচি মেনেই লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা বঙ্গে।
এদিকে, অন্ধ্র উপকূলে ঘূর্ণাবর্ত এবং উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত নিম্নচাপ অক্ষরেখার জোড়া ফলায় এখনই বাংলা থেকে বিদায় নেবে না বর্ষা। মনে করা হয়েছিল, উমা বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলা থেকে বর্ষা বিদায়। কিন্তু এখনই সেই সম্ভাবনা নেই। এদিন জানিয়ে দিল হাওয়া অফিস। তাদের পূর্বাভাস, রবিবার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনেও দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস পাঁচ জেলায়। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, 'বঙ্গোপসাগরের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের কাছে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত। আগামী ১০ তারিখের মধ্যে বর্ষা বিদায়ের কোনও সম্ভাবনা নেই রাজ্যে।'