
একসপ্তাহে দ্বিতীয়বার সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির (ED) দফতরে অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত। মঙ্গলবার প্রায় আড়াই ঘণ্টা ইডি দফতরে ছিলেন তিনি (Actor Bony Sengupta)। যেসব নথি কেন্দ্রীয় সংস্থা তাঁকে আনতে বলেছিল, সেই নথি সঙ্গে নিয়েই সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেন অভিনেতা। এমনটাই সংবাদ মাধ্যমকে জানান বনি। এদিন সিজিও থেকে বেরনোর সময় অভিনেতা বলেন, 'যা যা নথি চেয়েছিল সব জমা দিয়েছি। এরপর সব ইডি বলবে। আমাকে আর আসতে হবে না। টাকা ফেরতের প্রশ্ন নেই, ওসব আমার টাকা।'
সংবাদ মাধ্যমকে বনির অনুরোধ, 'আপনারা আমাকে আর প্লিজ হ্যারাস করবেন না। আপনারা একটু বেশি বলছেন। প্রশ্নের উত্তর সব ইডির থেকে জানতে পারবেন।' এই মন্তব্য করেই গাড়িতে উঠে বেড়িয়ে যান বনি সেনগুপ্ত। এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে সিজিওতে ঢোকার মুখে একঝাঁক প্রশ্ন করা হয়েছিল অভিনেতাকে। ফরেন ট্রিপের টাকা কে দিয়েছিল, কুন্তলের সঙ্গে কোনও চুক্তিপত্র সই হয়েছিল কিনা? কিন্তু কোনও প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই সিজিও কমপ্লেক্সে ঢুকে যান অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দুই দফায় বনি সেনগুপ্তকে জেরা করে ইডি। কুন্তলের থেকে পাওয়া একটা গাড়ির সূত্র ধরে এই জিজ্ঞাসাবাদ বলে সূত্রের খবর। সেবার বনি বলেছিলেন, এক অর্গানাইজারের সূত্রে তাঁর সঙ্গে কুন্তলের পরিচয়। ছবি করার প্রস্তাব নিয়ে কুন্তল এসেছিলেন। তারপর ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৪০ লক্ষ টাকার একটা গাড়ি ও আমাকে দিয়েছিল। তবে কোনও ছবি তৈরি হয়নি। কিন্তু বলেছিল প্রোগ্রাম করে সেই টাকা শোধ করে দিতে।
নিয়োগ-কাণ্ডের (Education Scam) মূল চক্রী কুন্তল ঘোষ। এভাবে সবাইকে ডাইভার্ট করে নিজের টাকা সরাচ্ছে কুন্তল (Kuntal Ghosh)। অন্য রাজ্যে টাকা পাঠাচ্ছে। ইডি হেফাজতে (ED Custody) থাকা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। এদিন সিজিও থেকে বেরনোর মুখে হুগলির বলাগড়ের এই তৃণমূল নেতা (TMC Leader) বলেন, 'এই কাণ্ডের মেইন মাস্টারমাইন্ড কুন্তল। ও এরকম করে সবাইকে ডাইভার্ট করছে। মিথ্যা অভিযোগ করে ডাইভার্ট করছে। আর ওর টাকাগুলো এভাবে সাইড করছে, অন্য রাজ্যে পাঠাচ্ছে।'
হুগলি জেলা পরিষদের এই কর্মাধ্যক্ষর দাবি, 'আমি কোনওকিছুর সঙ্গে জড়িত নই। আগামি দিনে প্রমাণ হবে। কুন্তলের লোকজন অন্য রাজ্যে টাকা সরাচ্ছে। এজেন্টদের ভয় দেখাচ্ছে। কয়েকশো এজেন্টের থেকে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছে ও। আমার সবকিছু লিগাল। আগামি দিনে সব প্রমাণ হবে।'
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, 'নিয়োগ-কাণ্ডে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোট ৬ বার ইডি ডেকেছে। সপ্তমবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এই ছ'বার সংবাদ মাধ্যম তাঁকে নানা প্রশ্ন করলেও এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা। কিন্তু গ্রেফতার হতেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন তিনি। বলাগড়ের এই তৃণমূল নেতা দাবি করলেন মাস্টারমাইন্ড কুন্তল। তিনি নির্দোষ বরং যারা জেলে বসে রয়েছেন, তাঁরা ফাসাচ্ছেন শান্তনুকে। হঠাৎ কেন কুন্তলকে কাঠগড়ায় তুলছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়?'
যদিও এদিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ইডি দাবি করেছে নিয়োগ-কাণ্ডে কুন্তল এবং শান্তনু যৌথভাবে চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তুলেছেন। এঁরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। কেন্দ্রীয় সংস্থার অনুমান, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি ১১১ কোটির নয় বরং ৩৫০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি। ইতিমধ্যে তদন্তে শান্তনুর নামে ৫১ কাটা জমি, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্টের খোঁজ পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। একজন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীর কাছে এই টাকা কোথা থেকে আসছে? ইডির জবাব, 'বেআইনি নিয়োগের মাধ্যমে এসেছে এই টাকা।' আদালতে তারা জানিয়েছে, 'তদন্তে এমন কিছু তথ্য আসছে, যার মাধ্যমে এটা বোঝা যাচ্ছে যে এর সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যোগাযোগ ছিল। যারা চাকরি পেয়েছে তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড মোবাইলে মিলেছে। এগুলো কী করছিল মোবাইলে?'
আমার নেইল পার্লারের ব্র্যান্ডিং করেছিলেন কৌশানী মুখোপাধ্যায় (Actress Kaushani Mukherjee)। সিজিও কমপ্লেক্স (CGO Complex) থেকে বেড়িয়ে সাংবাদিকদের জানান সোমা চক্রবর্তী। উল্লেখ্য, ইডির হাতে ধৃত কুন্তল ঘোষের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিয়োগ-কাণ্ডে নাম এসেছে সোমা চক্রবর্তীর। এক পার্লারের মালকিন হিসেবে এখন রাজ্য রাজনীতির খবরের শিরোনামে এই মহিলা। সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতির টাকা নাকি বিনিয়োগ হয়েছে এই নেইল পার্লারে। তাই শনিবার দ্বিতীয়বারের জন্য সোমাকে তলব করে ইডি (ED)। একাধিক নথি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে ১টা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন সোমা। তারপর থেকে ৪ ঘন্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি।
সোমাকে মোট কত টাকা দিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ একদিকে সেটা জানার চেষ্টা করেন ইডি অধিকারিকরা। একইসঙ্গে নগদ টাকা লেনদেন হয়েছে কুন্তল ও সোমার মধ্যে সেটা মনে করছে ইডি। শুধু তাই নয় সোমা চক্রবর্তীর পার্লারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন অভিনেত্রী কৌশানি মুখোপাধ্যায়। যদিও কত টাকার বিনিময়ে এই ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করেছিলেন অভিনেত্রী। তার কোনও সদুত্তর দেয়নি সোমা চক্রবর্তী।
জানা গিয়েছে, এই নিয়ে দ্বিতীয়বার হাজিরা দিলেন সোমা। চলতি মাসের ৩ মার্চ প্রথমবার ইডি দফতরে এসেছিলেন তিনি। আজ দুপুর ১টা নাগাদ আসেন সোমা, বেড়িয়ে যান বিকাল ৫টা নাগাদ।
বৃহস্পতিবার দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে টলিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্তকে। ফের মঙ্গলবার ইডির (ED) তরফে তলব করা হয়েছে বনি সেনগুপ্তকে। ব্যাংকের নথি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে অভিনেতাকে (Bony Sengupta)। এদিকে জানা গিয়েছে, বনির চর্চিত বান্ধবী অভিনেত্রী কৌশানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনেতার মাধ্যমেই আলাপ কুন্তলের। টলিউডের এক নায়িকাকে সামনে রেখে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির (Tollywood Industry) বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে নিজের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল কুন্তল।
তার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেন তিনি বলেই সূত্রের খবর।
ইডি সূত্রে খবর, কুন্তলের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের যোগ পাওয়া গিয়েছে। অনেককেই ছবি প্রযোজনা করার টোপ দিয়ে আলাপ করে দামী উপহার দিয়েছে কুন্তল, এমনটাই জানা গিয়েছে। এমনকি, এই অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন কুন্তল। মূলত নিজের ক্ষমতা এবং পরিচিতি সাধারণের কাছে জাহির করার জন্য এভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করেন কুন্তল। অনেক অভিনেত্রী কোনও ছবির কাজ না করেই মোটা টাকা পেয়েছেন কুন্তলের থেকে। কিছু অনুষ্ঠানে কেবল উপস্থিতির বিনিময়ে টাকা পেয়েছেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।
টলিপাড়ার এই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তালিকা তৈরি করছে ইডি।
এদের মধ্যে একজন অভিনেত্রী এই নেটওয়ার্ক তৈরিতে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন।
সেই অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ইডি, এমনটাই সূত্রের খবর।
নিয়োগ দুর্নীতিতে (Education Scam) গ্রেফতার কুন্তল ঘোষের (Kuntal Ghosh) সূত্র ধরে এবার ইডি স্ক্যানারে টলিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত। নথি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ চলতি সপ্তাহের শুক্রবার তাঁকে তলব করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা (ED)। কিন্তু বৃহস্পতিবারই ইডির সিজিও কমপ্লেক্সের দফতরে হাজিরা দিয়েছেন অভিনেতা। জানা গিয়েছে, বনি (Boni Sengupta) ছাড়াও কুন্তল ঘোষের সূত্র ধরে ইডি র্যাডারে টলিউডের আরও বেশ কিছু পরিচিত মুখ। তবে নিয়োগ-কাণ্ডে এই প্রথম কোনও টলিউড অভিনেতা কেন্দ্রীয় সংস্থার নোটিশ পেলেন।
ইডি সূত্রে খবর, তদন্তে গ্রেফতার হওয়া কুন্তল ঘোষের ব্যাঙ্কের নথি ঘেঁটে বনি সেনগুপ্ত ওরফে অনুপ্রিয় সেনগুপ্তর নাম উঠে এসেছে, সেই সূত্রেই এই তলব। কী পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে, কুন্তলকে কীভাবে চেনেন এবং নিয়োগ-কাণ্ডে আদৌ জড়িত কিনা বনি? এসব জানতেই তলব বলে সূত্রের খবর। ইডির অনুমান, এই দুর্নীতির টাকা ঘুরপথে টলিউডে ছড়িয়েছে। এদিকে, বনি ছাড়াও হুগলির যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকেছে ইডি। এর আগে কুন্তলকে গ্রেফতারির পর একাধিকবার শান্তনুর নাম নিয়োগ-কাণ্ডে প্রকাশ্যে এসেছে।
সিবিআই জেরার (CBI) সময় কুন্তল-তাপসের তর্ক জারি ছিল জেরা টেবিলে। মুখোমুখি জেরা পর্বেও বেশ কয়েকবার তর্ক জুড়েছেন হেফাজতে থাকা কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে এমনটাই দাবি। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জেরা পর্বে দুই অভিযুক্তর মধ্যে তর্ক বাঁধে, এমনটাই খবর। জেরার সময় একে অপরের বক্তব্য বারেবারে খণ্ডনের চেষ্টা করেছিলেন তাপস-কুন্তল (Tapas-Kuntal) বলে সূত্রের দাবি।
এই দুজনের কলহের জেরে বেশ কিছুক্ষণ জেরা বন্ধ রাখতে হয় সিবিআইকে।দু'পক্ষকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তদন্তকারী অফিসাররা। এমনটাই সিবিআই সূত্রে খবর। এদিকে, কুন্তল ঘোষ এদিন দাবি করেন তিনি কালীঘাটের কাকুকে চেনেন না। তিনি কাকু বলতে, একমাত্র তাঁর বাবার ভাইকেই চেনেন। যদিও কুন্তল 'মিথ্যা বলছে', 'ও সব জানে' বলে বৃহস্পতিবার পাল্টা দাবি করেন তাপস মণ্ডল।
পাশাপাশি এদিন কুন্তল আদালতে থেকে বেড়িয়ে জনৈক হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক 'রহস্যময়ী নারী'র প্রসঙ্গ টানেন। বিস্ফোরক কুন্তল বলেন, 'রহস্যময়ী নারী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় সব জানেন। তদন্তের ভিতরের কথা আর কিছু বলবো না।'
জানা গিয়েছে, তদন্তে চলাকালীন একটি সংস্থার নাম উঠে এসেছে। যেখানে গোপাল দলপতির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সেই অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল। সেই অ্যাকাউন্টের খোঁজ নিতে গিয়ে এই হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে (CBI Court) পেশ করা হয়েছিল নিয়োগ-কাণ্ডে (Education Scam) ধৃত তিন অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ,তাপস মণ্ডল ও নীলাদ্রি ঘোষকে। ৯ মার্চ পর্যন্ত এঁদের জেল হেফাজতের (Jail Custody) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে এদিন শুনানিতে সকলেরই জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থার আপত্তি মেনে খারিজ হয় সেই আবেদন।
যদিও শুনানি চলাকালীন বিচারক সিবিআইকে সিডি দেখিয়ে জনৈক মিস্টার হোসেনের নামোল্লেখ করে প্রশ্ন করেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, 'দু'জনের নাম উঠে এসেছে। সেখানে মিস্টার হোসেন নামে একজনের নাম পাওয়া গিয়েছে। যিনি বেআইনিভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। সিডিতে নাম পাওয়া গিয়েছে। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি কেনো?'
এই প্রশ্নের জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, উনি (পড়ুন জনৈক হোসেন) আমাদের প্রাইম উইটনেস। ও আমাদের বলছে, সেইমতো আমরা কাজ করছি।' এরপরেই বিচারক প্রশ্ন করেন, 'এই ব্যক্তির জবানবন্দি কোথায়?' সিবিআই আইনজীবী জানান, সেটা রেকর্ড করার কাজ চলছে।' বিচারকের পাল্টা প্রশ্ন, 'যদি পরে রাজি না হয়?'
এদিকে, কুন্তল, নীলাদ্রি এবং তাপসের জামিনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সংস্থা জানায়,'এদের আইনজীবীরা স্বীকার করছেন যে ওরা এজেন্ট। এঁরা তদন্তে সহযোগিতা করেনি। মুখোমুখি জেরায় বেশ কিছু প্রভাবশালীর নাম উঠে এসেছে। যারা এঁদের সঙ্গে সংযুক্ত। এঁরা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারে। ষড়যন্ত্র এতটাই বড় যে, আমাদের তদন্তকারীর এতটা কম্পিটেন্ট যে কোনও প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করছে না। পনিরের কথা বলা হচ্ছে, ভ্যারাইটি অফ পনিরটাই খুঁজছে তদন্তকারীরা।'
এদিন কোর্টের বাইরে তাপস-কুন্তলের আইনজীবী জানান, 'বন্ধ দরজার ভিতরে সিবিআই কী করেছে আমরা জানি না। আমার দুই মক্কেলকে মাত্র এক ঘণ্টা জেরা করেছে। কিন্তু কোর্ট বারবার একটাই প্রশ্ন করছে, প্রভাবশালী সেই ব্যক্তিটা কোথায়?' পাশাপাশি তাপস মণ্ডলের আইনজীবী জানান, 'সিবিআই এফআইআর-এ আমার মক্কেলের নাম নেই। কুন্তল ঘোষের বয়ানের ভিত্তিতে তাঁকে ডাকা হয়েছিল। সিবিআইয়ের নোটিশের জবাবে আমরা তদন্তে সহযোগিতা করতে ছয় বার কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে গিয়েছি।'
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (Corruption Case) তদন্তকারী সংস্থা ইডির (ED) হাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয়, কুন্তল ঘোষ টাকা দিয়েছিল মানিক ভট্টাচার্যকেও (Manik Bhattacharya)। জেরায় কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেন কুন্তল ঘোষ। তিন জন লোক যুব তৃণমূল নেতার থেকে এই টাকা এসে নিয়ে যেতেন। এমনটাই ইডিকে জানিয়েছেন কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh)। সেই তিন ব্যক্তির নাম জানতে পেরেছে ইডি। নানাভাবে কোটি টাকার বেশি সেই তিন ব্যক্তি কুন্তলের থেকে নিয়ে মানিক ভট্টাচার্যর হাতে তুলে দিয়েছে।
এদিকে, তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যর ছেলে শৌভিক ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করেছে ইডি। এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়াকে এই মর্মে অবগত করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। নিয়োগ-কাণ্ডে এই প্রথম কারও বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি ইডির। এযাবৎকাল তদন্তে পাওয়া একাধিক তথ্য এবং নথির ভিত্তিতে সন্দেহের তালিকায় উঠে এসেছেন মানিক-পুত্র। কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাই লুকআউট নোটিস জারি ইডির।
ইডি হেফাজত (ED Custody) শেষে এবার ১৪ দিনের জেল হেফাজতে যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে গত মাসে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন কুন্তল। জানা গিয়েছে, ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেকোনও দিন জেলে (Jail) গিয়ে তাঁকে জেরা করতে পারবে ইডি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সংস্থার ফরওয়ার্ডিং লেটারে উল্লেখ, কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh) টলিউডে টাকা বিনিয়োগ করেছেন। শর্ট ফিল্ম-সহ গান রেকর্ডিংয়ের কাজে এই দুর্নীতির টাকা ব্যবহার হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছে ইডি।
এমনকি, ইডি জেরায় যুব তৃণমূল নেতা স্বীকার করেছেন নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ১৯ কোটি পৌঁছে গিয়েছে প্রভাবশালীদের কাছে। জানা গিয়েছে, ফরেন্সিক মেথড ব্যবহার করে ইনভেস্টিগেশন করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পাশাপাশি এদিন আদালতে দাঁড়িয়ে জামিনের আবেদন করেন কুন্তল ঘোষ।
তাঁর আবেদন, 'আমি কিছু বলতে চাই। আমি সর্বত্রভাবে ইডিকে সাহায্য করেছি। আমার কাছে কিছু পায়নি ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থা বলতে বাধ্য হয়েছে আমার কাছে কিছু নেই। আমার বাড়িতে বৃদ্ধা মা আছেন, আমার ৫ বছরের ছেলে ৪ বছরের মেয়ে আছে। আমাকে হুজুর জামিন দেওয়া হোক।'
যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের (TMC Leader Kuntal Ghosh) বাড়িতে উদ্ধার হয়েছে দুটি ডায়রি। সেই ডায়রির পাতায় পাতায় রহস্য এবং সাঙ্কেতিক ভাষা। ইডির (ED Arrest) গোয়েন্দারা এখন সেই সাঙ্কেতিক ভাষার রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যস্ত। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে এই ডায়রি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনটাই প্রাথমিক তদন্তের পর মনে করছে ইডি। তবে শুধু জোড়া ডায়রি নয় যুব তৃণমূল নেতার বাড়িতে পাওয়া তিনটি পেন ড্রাইভও (Pen Drive Mystery) কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে বড় তথ্য-প্রমাণ বলে সূত্রের খবর। সেই পেন ড্রাইভে কী রয়েছে,খতিয়ে দেখতে দু'জন অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
এদিকে, ইডির হাতে গ্রেফতারির দিন এবং সোমবার তাপস মণ্ডলকে কাঠগড়ায় তুলেছেন কুন্তল ঘোষ। তাপস মণ্ডল তাঁর থেকে টাকা চেয়েছিলেন, না দেওয়ায় চক্রান্তের শিকার তিনি। গ্রেফতারির পর গত তিন দিন যাবৎ এই দাবি করছেন কুন্তল। এমনকি নীলাদ্রী বলে জনৈকর নাম প্রকাশ্যে এনেছেন যুব তৃণমূল নেতা। মঙ্গলবার ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে আসা তাপস মণ্ডল বলেন, 'নীলাদ্রি আমার একজন পরিচিত। আমার কাছে আসে, তাঁকে চিনি।' পাশাপাশি কুন্তলের থেকে টাকা চাওয়া প্রসঙ্গে তাপস মণ্ডল জানান, 'টাকা তো চাইবো, চাকরিপ্রার্থীদের টাকা চাইবো না! ওকে যে টাকা দেওয়া হয়েছিল, সেই টাকাই চাওয়া হয়েছে।'
এদিকে কুন্তলের স্ত্রী দাবি করেন, তাপস কুন্তলের ফ্ল্যাটে এসে থাকতেন। সেই ফ্ল্যাটে তাপসের ইনসুলিন পাওয়া গিয়েছে। এই দাবিও অস্বীকার করেন তাপস মণ্ডল। এমনকি, কুন্তলকে কোনওভাবেই তিনি ব্ল্যাকমেল করতেন না। সিজিও কমপ্লেক্সের ঢোকার মুখে জোর গলায় এই দাবি করেন তাপস মণ্ডল।
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ইডির (ED) তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধৃত যুব তৃণমূল নেতা (TMC Leader) কুন্তল ঘোষের ডায়রিতে একাধিক সাংকেতিক ওয়ার্ড লেখা। ডায়রি কারও হাতে পড়লেও কোন তথ্য যাতে ফাঁস না হয়, তার জন্য সাংকেতিক ভাষায় লেখা। এমনটাই মনে করছেন ইডি গোয়েন্দারা। এই সাংকেতিক ভাষায় লেখা, মোট কত টাকা তোলা হয়েছে, এমনটাই প্রাথমিক তদন্তের পর মনে করছে ইডি। এদিকে, হেফাজতে থাকা কুন্তলকে (Kuntal Ghosh) সোমবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে ইডি দফতরে আনা হয়েছে, চলছে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ।
পাশাপাশি সোমবারও তাঁর গ্রেফতারিতে তাপস মণ্ডলের চক্রান্ত দেখছেন কুন্তল ঘোষ। মেডিক্যাল টেস্টের জন্য যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুব তৃণমূল নেতা বলেন, 'আগেও বলেছি, এখনও বলছি তাপস মণ্ডলের চক্রান্ত।' এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ইডি সূত্রে খবর যেদিন গ্রেফতার হয়েছেন কুন্তল ঘোষ, সেদিনই তাঁকে ডায়রি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তিনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। তাই গ্রেফতারের পর হেফাজতে নিয়ে ফের তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ইডি। কিন্তু এখনও ডায়রি প্রশ্নে কোনও সদুত্তর পায়নি কেন্দ্রীয় সংস্থা।
অপরদিকে, সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যুর পর সতর্ক ইডি। কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে কুন্তলকে। জেরার সময় হচ্ছে ভিডিওগ্রাফি। তাঁর গতিবিধি রাখা হয়েছে সিসিটিভি নজরদারিতে। এমনকি শৌচাগারে গেলেও, চলছে বাইরে থেকে নজরদারি।
সৌমেন সুর: মেনকার গর্ভে এক শিশুকন্যার জন্ম হয়। কিন্তু মেনকা সেই শিশুকে ফেলে স্বর্গে চলে যান। মালিনী নদীর তীরে সদ্যজাত শিশুকন্যা। সেই সময় মহর্ষি কন্ব নদীতে স্নান কোরতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ চমকে ওঠেন। বনের মধ্যে নদীর তীরে এক শিশুকন্যাকে পশুপাখিরা আগলে রেখেছে। কন্ব মুনি সেই শিশুকন্যাকে তুলে আশ্রমে নিয়ে আসেন। যেহেতু পশুপাখি বাচ্চাটিকে রক্ষা করেছে, তাই তার নাম দেন শকুন্তলা।
কন্ব মুনির আশ্রমের পরিবেশ বেশ সুমধুর। নানা পাখীর কলতানে, ফুলের সুবাসে আর নানা ফলের গাছের ছায়ায়, আশ্রমের পরিবেশ এককথায় অনন্য সুন্দর। এক অদ্ভুত মায়াময় পরিবেশ। এই সুন্দর পরিবেশে শকুন্তলা ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো। বনের পশুপাখিরা শকুন্তলাকে বন্ধু করে নিয়েছিল। একদিন রাজা দুষ্মন্ত মৃগয়া করতে করতে এই কন্ব মুনির আশ্রমে এসে হাজির। আশ্রমের পরিবেশ দেখে রাজা মুগ্ধ হয়ে যান। চারদিক ঘুরে ঘুরে আশ্রম দেখছিলেন রাজা দুষ্মন্ত। হঠাৎ তাঁর চোখ পড়ে এক রমণীয় কন্যার উপর। কন্যা স্বয়ং শকুন্তলা।
চার চোখের মিলনের বন্ধনে ধরা পড়ে দু'জন। উভয় উভয়ের প্রতি অনুরক্ত হয়। এই প্রেম অবশেষে সমাপ্ত হয় গান্ধর্ব বিবাহে। বিবাহের আগে শকুন্তলা একটা শর্ত দেয়, 'আমার একটা প্রার্থনা আছে যে, আমার গর্ভে পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলে আপনি জীবিত অবস্থায় তাকে যুবরাজের মর্যাদা দেবেন এবং পরবর্তীতে সে হবে মহারাজ।' কথা শুনে রাজা সম্মত হলেন। এরপর কয়েকদিন অতিবাহিত করার পর রাজা চলে গেলেন নিজ রাজ্যে।
এদিকে শকুন্তলা প্রসব করেন এক পুত্রসন্তান। অনিন্দ্যসুন্দর রূপ সে শিশুর। ধীরে ধীরে সে বড় হতে লাগলো। বালক অবস্থায় অত্যন্ত বলবান, তেজস্বী এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যুবরাজ হওয়ার সব লক্ষ্মণ দেখে মহর্ষি কন্ব শকুন্তলাকে পতিগৃহে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। এখানে ঘটল এক বিপত্তি। রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলা আর তাঁর পুত্রকে কিছুতেই মেনে নিলেন না। এটা যে সত্য, তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন রাজা। তাঁর কোনও ঘটনা কিছুই মনে পড়ছে না।
রাজা ভরা সভায় শকুন্তলাকে তীব্রভাবে অপমানিত এবং লাঞ্ছিত করলেন। যেমন ঘটেছিল দ্রৌপদীর বেলায়। শকুন্তলাও দমবার পাত্রী নয়। আসলে নারীর ক্ষেত্রে এমনটাই দস্তুর। অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা, উদাসীনতা অবিশ্বাস গায়ে মেখে নারীকে বহুবার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি আদায় করে নিতে হয়েছে। শকুন্তলা দুষ্মন্তকে ছাড়েননি, রাজাকে সপাট তর্কবাণে জর্জরিত করে দিয়েছিলেন। নারীর অটুট বিশ্বাস এবং সত্যবাদীতার পরিচয় শকুন্তলার চরিত্রে। আবহমানকাল ধরে এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়েই নারী আপন ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর।
সৌমেন সুর: সমগ্র ভারতবাসীর কাছে আজও মহাভারত চিরায়ত সাহিত্য হিসেবে গণ্য। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আধুনিকতম রচনা এই মহাভারত। কী নেই এই সাহিত্যে! জীবনের নীতিবোধ থেকে শুরু করে হিংসা, ঈর্ষা, লোভ, কাম, ক্রোধ প্রভৃতির শিল্প সম্মত ব্যবহার এবং অজস্র চরিত্র নিজের গুনে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। রয়েছে অজস্র নারীর আখ্যান। যারা নানা বৈশিষ্ট্যে মানব মনে এখনও অমলিন।
শকুন্তলার কথা ধরা যাক। শকুন্তলার জন্ম মেনকার গর্ভে। ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র একবার কঠিন কঠোর তপস্যা করাতে স্বর্গে ইন্দ্রের আশঙ্কা হয়, যদি বিশ্বামিত্রের কারণে তাঁর সিংহাসনচ্যুত হয়। তখন ইন্দ্র স্বর্গের মহা অপ্সরা মেনকাকে নিয়োগ করেন বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভঙ্গের জন্য। মেনকা যথারীতি বিশ্বামিত্রের কাছে এসে এমন নৃত্য প্রদর্শন করেন যে তাঁর তপস্যা ভঙ্গ হয়। চোখের সামনে এমন অপরূপা নারীকে দেখে বিশ্বামিত্র মেনকার সঙ্গে আলিঙ্গনবদ্ধ হন এবং মেনকার গর্ভে শকুন্তলার জন্ম হয়।
এই শকুন্তলা ধীর, স্থির, নম্র স্বভাবের তপোবন দুহিতা। দুই প্রিয় সখী অনসূয়া, প্রিয়ংবদার সঙ্গে হাসিঠাট্টা, গান, খেলায় দিন কাটান। বনের পশু পাখিরা তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। এক স্নেহশীলা কল্যাণী স্বরূপা রমণী। অথচ এই নারী পরিস্থিতির চাপে পড়ে কতখানি তেজস্বিনী হতে পারেন এবং নিজের অধিকার রক্ষার জন্য অপরের কাছে কতখানি অপ্রিয়ভাষিনী হতে পারেন, তারই বর্ণনা রয়েছে মহাভারতে। মহাকাব্যজুড়ে এমন বহু নারীর সন্ধান আমরা পাই। যেমন কুন্তী, দ্রৌপদী, গান্ধারী, সুভদ্রা প্রমুখ। সবার প্রতিবাদ যে সোচ্চার এমনটা নয়। নীরবে সত্যের আশ্রয়কে বুকে করে অধর্মের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন।
(বাকিটুকু আগামী পর্বে)