দিনটা ছিল ২০২৩ সালের ৯ এপ্রিল। সেদিন মাঠে ছক্কার ঝড় তুলেছিলেন কেকেআর-এর রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। চলতি মরসুমের আইপিএলে (IPL) অন্যতম হাইলাইটস ছিল কেকেআর-এর গুজরাত টাইটান্স বধ। সেদিন মাঠে রিঙ্কু ঝড়েই উড়ে গিয়েছিল গুজরাত টাইটান্স। ম্যাচের শেষের দিকে পরপর পাঁচটি ছয় করেই রাতারাতি স্টার হয়ে গিয়েছেন রিঙ্কু সিং। কিং খানের চোখের মণি হয়ে উঠেছেন রিঙ্কু। এবারে জানা গিয়েছে, শাহরুখ (Shah Rukh Khan) নাকি রিঙ্কুকে বলেছেন, তিনি তাঁর বিয়েতে নাচ করবেন। আর এই কথা প্রকাশ্যে আসতেই হইহই পড়ে গিয়েছে বলি ও ক্রিকেট মহলে।
রিঙ্কুর সেদিনের দুর্দান্ত পারফরমেন্স সামনে থেকে দেখতে পারেননি কেকেআর-এর কর্ণধার শাহরুখ খান। ফলে সেদিনই তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন এসআরকে। তবে তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল তা জানা যায়নি। সম্প্রতি সেই ব্যাপারে মুখ খুলেছেন ক্রিকেটার রিঙ্কু সিং। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জিও সিনেমায় বলেন, 'স্যার আমায় ফোন করেছিলেন। তিনি আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিলেন। এসআরকে বলেছেন, তাঁকে অনেকেই তাঁদের বিয়েতে ডাকেন। কিন্তু তিনি যান না। তবে তিনি আমার বিয়েতে আসবেন ও নাচবেন।' এই কথা রিঙ্কু সাক্ষাৎকারে একগাল লজ্জা ও হাসির সঙ্গে জানিয়েছেন। এরপরেই এই ভিডিও সমাজ মাধ্যমে শেয়ার হতেই ঝড়ের গতিতে ভাইরাল।
ম্যাচ জিতলেন কেকেআর (KKR), ম্যাচ জেতানোয় বড় ভূমিকা রেখে ম্যাচ ফি-র ১০ শতাংশ টাকা জরিমানাও দিতে হল কেকেআর ওপেনার জেসনকে (Jason Roy)। কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন জেসন রয়। ২৯ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। দলকে বড় রান তুলতে সাহায্য করেন। গেমচেঞ্জার এবং মোস্ট ভ্যালুয়েবল অ্যাসেটের পুরস্কার পান। দু’লক্ষ টাকা পান। সেই সঙ্গে নিয়ম ভাঙার দায়ে ম্যাচ ফি-র ১০ শতাংশ টাকা জরিমানাও (Fine) দিতে হল জেসনকে।
কোন নিয়ম ভাঙলেন জেসন? নাইট ওপেনারকে আউট করেন বিজয় কুমার। বোল্ড হন জেসন। কিন্তু আউট হওয়ার পরেই বেলে মারেন তিনি। এমন ব্যবহার নিয়মবিরুদ্ধ। সেই কারণেই জরিমানা দিতে হবে জেসনকে। আইপিএল কর্তৃপক্ষ বলেন, 'বেঙ্গালুরুতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে নিয়ম ভেঙেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের জেসন রয়। সেই কারণে ম্যাচ ফি-র ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে তাঁকে।' জেসন নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই কারণে কোনও শুনানি হবে না।
বুধবার কেকেআরের হয়ে ওপেন করতে নেমে ঝোড়ো ইনিংস খেলেন জেসন। তিনি পাঁচটি ছক্কা এবং চারটি চার মারেন। পাওয়ার প্লে-তে দ্রুত রান তোলার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন জেসন। প্রথমে ব্যাট করে ২০০ রান করে কেকেআর। জেসন ছাড়াও রান পেয়েছেন নীতীশ রানা। কেকেআর অধিনায়ক ২১ বলে ৪৮ রান করেন। তিন বলে ১২ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন ডেভিড উইজ়া।
অবশেষে আইপিএলে (IPL) জয়ের রাস্তা ফিরল কলকাতা (KKR)। বুধবার বেঙ্গালুরুতে (RCB) বিরাট কোহলির (Virat Kohli) আরসিবিকে ২১ রানে হারিয়ে দিল তারা। টানা চার ম্যাচে হারের পর জিতল কলকাতা। এ দিন প্রথমে ব্যাট করে ২০০-৫ তোলে কলকাতা। জবাবে কলকাতার বোলারদের দাপটে ১৭৯-৮ শেষ আরসিবি। ব্যাটারদের ব্যর্থতাই ডোবাল আরসিবিকে। কোহলি বাদে বাকি ব্যাটাররা কেউই খেলতে পারলেন না। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাসেল উইকেট তুলে নিলেন, যার মধ্যে রয়েছে কোহলির দামি উইকেট। একটি অসাধারণ ক্যাচ নিলেন। কলকাতার শুরুটা দুর্দান্ত করলেন জেসন রয়। মাঝের দিকে চালিয়ে খেলে ভদ্রস্থ রানে পৌঁছে দিলেন নীতিশ রানা।
২০০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে বৈভব অরোরা প্রথম ওভারে খেলেন ১০ রান। উমেশ যাদবের পরের ওভারে উঠল ১৯। মনে হচ্ছিল ১৫ ওভারেই দুশো রান তাড়া করে নেবে আরসিবি। খেলা ঘুরল তার পরেই। উপায় না দেখে তৃতীয় ওভারেই সুযশ শর্মাকে নিয়ে এলেন নীতিশ। দ্বিতীয় বলেই সুযশকে ছয় মারতে গিয়ে রিঙ্কু সিং-এর হাতে ক্যাচ দিলেন ডুপ্লেসি। বলের মতো ব্যাটেও ব্যর্থ শাহবাজ (২)।
দায়িত্ব গিয়ে পড়েছিল সেই ম্যাক্সওয়েল এবং কোহলির উপরেই। বড় ম্যাচে হতাশ করলেন ম্যাক্সওয়েল। তাঁকেও তুলে নিয়ে সুযশ। একাই আরসিবির হয়ে রান তাড়া করছিলেন কোহলি। সঙ্গী পেয়েছিলেন মহিপাল লোমরোরকে। কেকেআরের স্পিনারদের আক্রমণ করে বেশ সাফল্য পাচ্ছিলেন মহিপাল। অন্যদিকে, কোহলিও খেলছিলেন ভালই। দু’টি উইকেটই গেলে বেঙ্গালুরুর কাছে জেতার মতো আর কোনও রসদ ছিল না।
এ দিকে, কেকেআরের ব্যাটিংও প্রথম দিকে খুব ভাল হয়নি। আগে ব্যাট করলে পাওয়ার প্লে-তে বড় রান তুলতে হবে। বিশেষত যদি ম্যাচ চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে হয় তা হলে রানের পরিমাণ অনেকটাই বেশি হতে পারে। কিন্তু কলকাতা ৬৬ রানের বেশি তুলতে পারল না। তার পিছনে দায়ী ওপেনার নারায়ণ জগদীশন। প্রথম তিন ওভারে কলকাতার খুব বেশি রান ওঠেনি। কিন্তু চতুর্থ ওভার থেকেই চালাতে শুরু করেন জেসন রয়। ডেভিড উইলির সেই ওভারে ওঠে ১৭ রান। উল্টো দিকে নারায়ণ ব্যাটে-বলে করতেই পারছিলেন না। আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন খুচরো রান নিয়ে জেসনকে স্ট্রাইক দেওয়ার। কিন্তু খুচরো রান নিতে গেলেও তো সঠিক জায়গায় বল মারতে হয়। নারায়ণকে দেখে মনে হচ্ছিল সেটাও হবে না।
পর পর দু’টি উইকেট চলে যাওয়ায় চাপে পড়েছিল কলকাতা। কিন্তু চাপ কাটিয়ে দিলেন বেঙ্কটেশ আয়ার এবং নীতিশ রানার জুটি। দু’জনের জুটি ৮০ রান উঠে গেল। কিন্তু এর পরে স্লো হয়ে যায় তাদের রান। হাতে আটটি উইকেট থাকা সত্ত্বেও কেন যে আরও সাহসী হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নিলেন না তাঁরা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। দু’জনের জুটি চলল ১৮তম ওভার পর্যন্ত। পরের দিকে নেমে রিঙ্কু সিং এবং ডেভিড আগ্রাসী ক্রিকেট খেললেন। তাঁরা যদি আরও কয়েকটা বল পেতেন, তা হলে নিঃসন্দেহে আরও বেশি রান উঠতে পারত।
টানা চারটি ম্যাচে হার। সব মিলিয়ে পাঁচটি ম্যাচে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) কাছে এ বারের মতোও প্লে-অফে ওঠার স্বপ্ন ফিকে হতে চলেছে। দলের মনোবল তলানিতে। খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রথম একাদশ। সেই অবস্থায় শক্তিশালী রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (RCB) বিরুদ্ধে বুধবার মুখোমুখি হতে চলেছে তারা। খেলা হবে বেঙ্গালুরুতে, যেখানে রানের বন্যা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা।
এই মুহূর্তে কলকাতার কাছে এর চেয়ে কঠিন ম্যাচ হতে পারত না। শার্দূল ঠাকুরের (Shardul Thakur) ব্যক্তিগত ক্ষমতায় ঘরের মাঠে আরসিবিকে হারালেও বেঙ্গালুরুতে কাজ একদম সহজ নয়। কেকেআরের কোনও কিছুই ঠিক হচ্ছে না। না ব্যাটিং, না বোলিং, কিছুই ঠিকঠাক নেই।
আগের ম্যাচে কেকেআরের বোলারদের পিটিয়ে ২৩০ রান তুলে দিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের ব্যাটাররা। তা-ও আবার ঘরের মাঠে। কলকাতার কোনও বোলারই দাঁড়াতে পারেননি চেন্নাইয়ের বোলারদের সামনে। মঙ্গলবার তারা এমন এক দলের মুখোমুখি যে দলে বিরাট কোহলি, ফাফ ডুপ্লেসি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, দীনেশ কার্তিকের মতো ক্রিকেটার রয়েছেন। এঁদের প্রত্যেকে একার হাতে ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন।
এ বার অন্তত দু’টি ম্যাচে ডুপ্লেসি এবং ম্যাক্সওয়েলের ঝোড়ো ব্যাটিং দেখা গিয়েছে। আগের ম্যাচে রাজস্থানের বিরুদ্ধেই মারমুখী ব্যাট করেছেন দু’জন। কেকেআর বোলারদের প্রথম কাজ বেঙ্গালুরুর টপ অর্ডারকে আগে সাজঘরে ফেরানো, ছন্দের বিচারে যা এই মুহূর্তে অসম্ভব কঠিন কাজ।
ওপেনিং নিয়ে কেকেআরের সমস্যা কাটছেই না। আগের ম্যাচে হঠাৎ করেই ওপেনে নামিয়ে দেওয়া হল সুনীল নারাইনকে। তিন বলে তাঁর অবদান ০। এ ছাড়া নারায়ণ জগদীশন, লিটন দাস, জেসন রয়, রহমানুল্লা গুরবাজ— ওপেনারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন দেখার আরসিবি ম্যাচে নতুন আর কোনও জুটি পাওয়া যায় কি না।
এ দিকে, আগের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে রাজস্থানকে সাত রানে হারিয়ে ফুটছে আরসিবি। সাত ম্যাচের চারটিতে জিতে পঞ্চম স্থানে রয়েছে তারা। কিন্তু বুধবার জিতলে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে চলে আসতে পারে।
আরসিবির সাফল্যের মূল কারণ তাদের টপ অর্ডারই। কিন্তু বল হাতে মহম্মদ সিরাজ, শাহবাজ আহমেদ, ওয়েন পার্নেল, ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গরা তো আছেনই। ম্যাচ জেতাতে তাঁরাও সমান পারদর্শী। সিরাজ তো এই মুহূর্তে বেগনি টুপির অধিকারী। অন্য দিকে ডুপ্লেসির মাথায় রয়েছে কমলা টুপি। বোঝাই যাচ্ছে আইপিএলে দাপাচ্ছে কোন দল।
রবিবার, ২৩ এপ্রিল আইপিএল-এর (IPL) সিএসকে বনাম কেকেআর-এর (KKR-CSK) ম্যাচ ছিল জমজমাট। তবে সেদিনের ম্যাচ ছাড়াও মাঠে দর্শকদের জন্য আরও এক বিশেষ চমক ছিল। কারণ সেদিন ইডেনে দেখা গিয়েছে বাঙালি অভিনেত্রী তথা বং ক্রাশ ঋতাভরী চক্রবর্তীকে (Ritabhari Chakraborty)। ম্যাচ দেখতে যাওয়ার একগুচ্ছ ছবি-ভিডিও শেয়ার করেছেন তিনি। তা দেখেই ধেয়ে আসতে থাকে নেটিজেনদের প্রশ্ন। 'কোন দলের পক্ষে ঋতাভরী?' তবে তার উত্তর পাওয় গিয়েছে তাঁর ছবির ক্যাপশনেই।
রবিবার কলকাতার মাঠে খেলা হলেও এদিন যেন পুরো গ্যালারি হলুদেই ভরে গিয়েছিল। কলকাতার ফ্যান যেন ছিল হাতেগোনা। তবে ঋতাভরীর হাতে দেখা গিয়েছে, কেকেআর-এর পতাকা। যা দেখে বোঝা গেল, তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষেই রয়েছেন। ফলে এই দেখে কিছুটা হলেও অন্যান্য কেকেআর ফ্যানরা খুশিই হয়েছেন। তাঁকে গলা ফাটিয়ে কেকেআর-এর জন্য চিয়ার করতে দেখা গিয়েছে। যদিও কেকেআর-এর পরাজয়ে মন ভেঙেছে কেকেআর ফ্যানদের। তবে ঋতাভরীর ক্যাপশন দেখে মনে বল পেয়েছেন কেকেআর ফ্যানরা।
ম্যাচের দিন ঋতাভরী আবার অভিনেত্রী জুহি চাওয়ালার সঙ্গেও ছবি তুলেছেন। সেই ছবিও নিজের ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন। সেই ছবিতেই ক্যাপশনে লেখা, 'ম্যাচ ডে! যে যা কিছুই বলুক। কেকেআর আমার মনে বিরাজ করে। আমরা জয়ী হই বা হেরে যাই, কলকাতাই রাজত্ব করবে।'
চিত্রনাট্যে বদল হল না এবারও। ইডেন গার্ডেন্সে ‘হোম’ ম্যাচ খেলতে এসে আরও এক বার জিতল চেন্নাই সুপার কিংস (CSK)। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির (MSD) দল চলে গেল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) কি এ বার নিজেরা ট্রফি জেতার জন্যে নেমেছে? নাকি বিপক্ষ দল এবং তাদের ক্রিকেটারদের ছন্দে ফেরানোর জন্যে নেমেছে? রবিবারের ম্যাচের পর এই প্রশ্নটা উঠতেই পারে।
প্রথম থেকেই চেন্নাই যে ভাবে শুরু করেছিল, তাতে বোঝা গিয়েছিল এই ম্যাচ তাদের নিয়ন্ত্রণে। রুতুরাজ গায়কোয়াড় এবং ডেভন কনওয়ে চলতি মরসুমে ভাল ছন্দে রয়েছেন। ইডেনে এসেও তাঁদের ছন্দে কোনও বদল নেই। হবেই বা কী করে? চাপ দিতে পারেন সে রকম বোলারই তো নেই কলকাতার। প্রথম ওভারে উমেশ যাদব সে রকম রান দিলেন না। কিন্তু ডেভিড উইজ়া আসতেই চেন্নাই ‘ছন্দ’ খুঁজে পেল।
বেধড়ক মার খেলেন উইজ়া এবং কুলবন্ত খেজরোলিয়া। রাজস্থানের বোলার খেজরোলিয়ার প্রথম ওভারে ১৪ রান এল। সুনীল নারাইন, বরুণ চক্রবর্তীরাও ছাড় পেলেন না। কলকাতার হয়ে প্রথম সাফল্য পেলেন রহস্য স্পিনার সুযশ শর্মাই। রুতুরাজ তাঁর বল বুঝতেই পারেননি।
কলকাতা অবশ্য বুঝতে পারেনি রুতুরাজ ফেরার পর এত বড় আতঙ্ক তাদের সামনে অপেক্ষা করছে। অজিঙ্ক রাহানে গত মরসুমেও কলকাতায় ছিলেন। বিরাট ভাল খেলেছেন এমনটা কেউ দাবি করবেন না। কিন্তু চেন্নাইয়ের রাহানে অন্য ব্যাটার। খোলা মনে তাঁকে খেলার স্বাধীনতা দিয়েছেন ধোনি। তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছেন রাহানে।
তবে কনওয়ে ক্রিজে থাকা পর্যন্ত তাঁকে খুব বেশি কিছু করতে হয়নি। কেকেআরের বোলারদের উপর তাণ্ডব দেখানোর কাজটা করছিলেন কিউয়ি ব্যাটারই। অনায়াস বিক্রমে অর্ধশতরান করে ফেললেন। চলতি আইপিএলে টানা চারটি। কেন তাঁর উপর এতটা ভরসা করে চেন্নাই, সেটা বোঝা গেল। শুরুটা ভাল হলে বাকি সব কিছুই সহজ হয়ে…
মুম্বইয়ের সূর্যকুমার যাদব এই কেকেআর ম্যাচেই ছন্দ ফেরত পেয়েছিলেন। আগের ম্যাচে দিল্লিকে প্রথম জয় ‘উপহার’ দিয়েছিলেন কেকেআরের ক্রিকেটাররা। আর এ দিন অজিঙ্ক রাহানে, শিবম দুবের মতো ক্রিকেটারকে ছন্দ ফিরিয়ে দিলেন। উপরি পাওয়া মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে দেখার স্বাদ। প্রথমে ব্যাট করে চেন্নাইয়ের তোলা ২৩৫-৪ স্কোরের জবাবে ১৮৫-৮ স্কোরে থেমে গেল কলকাতা।
আইপিএলে কেকেআরের অবস্থা যত দিন যাচ্ছে, তত খারাপ হচ্ছে। প্রতিটি দল এসে খোলনলচে বের করে দিয়ে যাচ্ছে শাহরুখ খানের দলের। পরিকল্পনাহীন, বুদ্ধিবিবেচনাহীন এবং কিছু অযোগ্য ক্রিকেটারকে নিয়ে দল গড়লে যা হয়, তাই হচ্ছে। দু’টি ম্যাচে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য কলকাতাকে জিতিয়েছে বটে। কিন্তু প্রতি ম্যাচে তা হয় না। হওয়ার সুযোগও পাওয়া যাচ্ছে না।
এ দিন ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে সত্যিই বোঝা যাচ্ছিল না কোন মাঠে খেলা হচ্ছে? মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে দেখতে রবিবাসরীয় ইডেন গার্ডেন্সে যে হলুদ ঝড় উঠবে সেটা জানা ছিল। কিন্তু শহর কলকাতার গর্বের মাঠ যে এভাবে সর্ষের খেত হয়ে উঠবে সেটা হয়তো কল্পনাও করা যায়নি। বিকেল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল। কলকাতার সমর্থক খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। যে দিকেই তাকানো যায় শুধু হলুদ জার্সি এবং পিঠে লেখা ধোনির নাম। সম্ভবত ধোনির শেষ ম্যাচে এ ভাবেই কলকাতা আপন করে নিল ক্যাপ্টেন কুলকে।
একেই লিগ টেবিলের শেষে থাকা দলের কাছে হার, হেরে হ্যাট্রিক। পাশাপাশি ঘরের মাঠে চেন্নাই (CSK) ও ধোনির (MSD) জন্য বিপরীত চিৎকার কেকেআরকে (KKR) নিশ্চয়ই চাপে রাখবে। পাশাপাশি ব্যাটিং ও বোলিং নিয়ে বিপর্যয় তো রয়েছেই। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে দলে চার বদল এনেও লাভ হয়নি। উল্টে লিগের লাস্ট বয়ের কাছে হারতে হয়েছে খারাপ ভাবে। রবিবার ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে খেলতে হবে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে। ধারে-ভারে চেন্নাই অনেকটাই এগিয়ে। এই ম্যাচেও কি চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে দলে কোনও বদল দেখা যাবে?
আগের ম্যাচের একাধিক ক্রিকেটারকে নিয়ে ভুগেছে কলকাতা। তারা সবচেয়ে হতাশ লিটন দাসকে নিয়ে। কেন তিনি কলকাতায় এলেও নামানো হচ্ছে না তা নিয়ে অনেক জল্পনা হচ্ছিল। লিটন দলে সুযোগ পেয়েও কিছুই করতে পারেননি। ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলে চার মারেন। কিন্তু তৃতীয় বলেই আড়াআড়ি কোনও মতে শট খেলতে গিয়ে লোপ্পা ক্যাচ দিয়ে বসেন।
উইকেট কিপিংয়ের সময়ে তো আরও খারাপ হয়েছে তাঁর পারফরম্যান্স। একটি সহজ ক্যাচ ছাড়েন। দু’টি স্টাম্পিং মিস করেন। তার মধ্যে অক্ষর পটেলকে অনেকটা সময় পেয়েও যে ভাবে স্টাম্প করতে ব্যর্থ হন, তা দেখে অনেকেই বিস্মিত। তাঁর মতো অভিজ্ঞ উইকেটকিপারের থেকে এটা কেউই আশা করেননি। লিটনকে বসানো হলে দলে আনা হতে পারে সেই রহমানুল্লা গুরবাজকে। সে ক্ষেত্রে কলকাতাকে হয়তো আবার ওপেনিং জুটি বদলাতে হবে।
দলে মনদীপ সিংহকে নেওয়ার যৌক্তিকতাও অনেকে খুঁজে পাননি। তিনি ব্যাট তো ভাল করতেই পারেন না। বলও করেন না। ফলে শুধু ব্যাটিংয়ের জন্য তাঁকে নেওয়া অনর্থক। চেন্নাই ম্যাচে কলকাতা মনদীপকে বসানোর কথা ভাবতেই পারে। বরং তাঁর জায়গায় শার্দূল ঠাকুরকে ফেরানো হলে তিনি বল করার পাশাপাশি ব্যাট হাতে চালিয়ে খেলে দিতে পারবেন।
বেঙ্কটেশ আয়ার বল করতে পারেন। কিন্তু তাঁকে আগের ম্যাচে তুলে অনুকূল রায়কে নামানো হয়, যিনি বল হাতে খুব খারাপ করেননি। তবে ইডেন গার্ডেন্সের কথা মাথায় রেখে অনুকূল নয়, ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে কলকাতার খেলানো উচিত সুযশ শর্মাকেই। কুলবন্ত খেজরোলিয়াকে আর হয়তো খেলানোর ভুল করবে না কেকেআর।
বাকি দলে আপাতত পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে হয় না। প্রথম ম্যাচে ভাল খেলেছেন জেসন রয়। তিনি থাকছেনই। সুনীল নারাইনের বদলে ডেভিড ওয়াইজ়াকে একটি ম্যাচে নামানো যেতেই পারে। কিন্তু ইডেনের স্পিনিং উইকেটের কথা ভেবে সেই বদল হয়তো করা হবে না।
দিল্লি ক্যাপিটালসের (DC) বিরুদ্ধে হেরে হারের হ্যাটট্রিক কলকাতার (KKR)। প্রথমে ব্যাট করে ১২৭ রান তুলেছিল কেকেআর। সেই রান ৪ উইকেটে তুলে নিল দিল্লি।
বৃহস্পতিবার দলে একাধিক পরিবর্তন করেছিল কলকাতা। কিন্তু ভাগ্য বদলাতে পারেনি। দিনের পর দিন ব্যর্থ হওয়া রহমানুল্লা গুরবাজকে বসিয়ে খেলানো হয়েছিল লিটন দাসকে। যিনি ৪ বলে ৪ রান করেন। একটি চার মারেন এবং মুকেশ কুমারের বাউন্সার বুঝতে না পেরে ক্যাচ দিয়ে যান। খেলানো হয়েছিল জেসন রয়কেও। যিনি ৪৩ রান করলেও নেন ৩৯ বল। উল্টো দিক থেকে একের পর এক ব্যাটার আউট হওয়ায় হাত খুলতেই পারছিলেন না তিনি। এ বারের আইপিএলে প্রথম বার নেমে ৪৩ রান করলেও জেসনকে খুব স্বচ্ছন্দ দেখায়নি।
তিন নম্বরে নামেন বেঙ্কটেশ আয়ার। গত ম্যাচে শতরান করা বেঙ্কটেশ দিল্লির বিরুদ্ধে কোনও রানই পাননি। অধিনায়ক নীতীশ রানা নিজের ঘরের মাঠে করেন মাত্র ৪ রান। মনদীপ সিংহ (১২), রিঙ্কু সিংহ (৬), সুনীল নারাইনরা (৪) এলেন এবং চলে গেলেন। জেসন একা চেষ্টা করে গেলেন রান করার কিন্তু কোনও ব্যাটারই সাহায্য করতে পারলেন না তাঁকে।
কলকাতার রান ১০০ পার হবে কি না সেটা নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ৯৬ রানে ৯ উইকেট চলে গিয়েছিল কলকাতার। এমন একটা সময় ক্রিজে ছিলেন আন্দ্রে রাসেল। হাতে ২৬টি বল। এমন অবস্থায় রাসেল নিজে স্ট্রাইক না নিয়ে বরুণ চক্রবর্তীকে এগিয়ে দিলেন বেশ কয়েক বার। উমেশ যাদবকেও খেলানোর চেষ্টা করেছিলেন তার আগে। কিন্তু উমেশ আউট হতে যে বরুণের সঙ্গেও একই কাজ করবেন তা ভাবা যায়নি। বরুণ কোনও রকমে সামলালেন ছ’টি বল। রাসেল নিজে স্ট্রাইক পেয়েও যে খুব কাজে লাগাতে পারছিলেন এমনটা নয়। ৩১ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকা রাসেল মুকেশ কুমারের শেষ ওভারে তিনটি ছক্কা মেরেছিলেন। সেই ১৮ রান না হলে তাঁর ৩০ রানের গণ্ডি পার হত না এবং দলেরও ১২৭ রান হত না।
টানা পাঁচটি ম্যাচ হারা দিল্লির কাছে এই ম্যাচ ছিল মরণ-বাঁচন লড়াই। সেই ম্যাচে অভিজ্ঞ ইশান্ত শর্মাকে সুযোগ দিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রা। আইপিএলে একাধিক বার দেখা গিয়েছে প্রাক্তন নাইটদের কেকেআরের বিরুদ্ধে ভাল খেলতে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হল। নিজের চার ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে দু’উইকেট তুলে নিলেন ইশান্ত। অন্য এক প্রাক্তন নাইট কুলদীপ যাদব তিন ওভারে ১৫ রান দিয়ে নেন দু’উইকেট। তাঁদের দাপটে কলকাতার রানের চাকা যেমন আটকে যায়, তেমনই একের পর এক উইকেটও যায়। দু’টি করে উইকেট নেন অক্ষর পটেল এবং এনরিখ নোখিয়ে। একটি উইকেট নেন বাংলার পেসার মুকেশ কুমার। শেষ বলে রান আউট হন বরুণ।
মাত্র ১২৭ রানের পুঁজি নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছিল কলকাতার বোলাররা। যে দল আগের ম্যাচে ১৮৫ রান করেও হেরেছিল সেই দল যে এত কম রান নিয়ে লড়বে সেটা ভাবা কঠিন ছিল। দিল্লির পিচে বল কিছুটা থমকে আসছিল। সেই কারণে স্পিনাররা কিছুটা সুবিধা পাচ্ছিলেন। নীতীশ রানা নিজে সেই কারণে অফ স্পিন করতে শুরু করেন। নারাইন, বরুণরা তো ছিলেনই। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে নামা অনুকূলও দু’টি উইকেট তুলে নেন। কিন্তু দিল্লির উপর চাপ দেওয়ার মতো রানটাই ছিল না কেকেআরের হাতে। তাই মাত্র ১৩ রানে পৃথ্বীর উইকেট বা মিচেল মার্শ (২) এবং ফিল সল্টকে (৫) অল্প রানে ফিরিয়ে দিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি কেকেআর।
বৃহস্পতিবার দিল্লির (DC) ফিরোজ শাহ কোটলায় মুখোমুখি হবে দুই দল। দিল্লি বনাম কলকাতা (KKR) এখনও পর্যন্ত ৩১টি ম্যাচ (IPL) খেলেছে। এর মধ্যে ১৬ বার জিতেছে কলকাতা। ১৪ বার জিতেছে দিল্লি। একটি ম্যাচ ভেস্তে যায়। শেষ পাঁচ বারের লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে দিল্লি। তিন বার জিতেছে তারা। এ বারের আইপিএলে যদিও দিল্লি এখনও পর্যন্ত কোনও ম্যাচেই জিততে পারেনি। চাপ রয়েছে দিল্লির ক্রিকেটারদের উপর। সৌরভদের উপরেও সেই চাপ রয়েছে।
দিল্লি দলের কোচ রিকি পন্টিং। যিনি নিজে এক সময় নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছেন। দিল্লির বোলিং কোচ অজিত আগরকর। তিনি কলকাতার প্রাক্তন পেসার। ইশান্ত শর্মা রয়েছেন দিল্লি দলে। এ বারের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত কোনও ম্যাচ খেলেননি তিনি। প্রাক্তন নাইটরা সাধারণত কেকেআরের বিরুদ্ধে ভাল খেলে। এই যুক্তিতে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে ইশান্তকে খেলতে দেখা যাবে কি না সেই দিকেও নজর থাকবে।
রবিবাসরীয় ওয়াংখেড়েতে কলকাতাকে (KKR) ৫ উইকেটে হারাল মুম্বই (MI)। ব্যাটারদের ব্যর্থতা, দলগঠনে পরিকল্পনার অভাব, জোরে বোলারদের নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং (IPL)। সব মিলিয়ে আরও এক বার আরব সাগরে জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল কলকাতার। আরও এক বার শাহরুখ খানের শহরে হারতে হল কলকাতাকে। বেঙ্কটেশ আয়ারের শতরান দিনের শেষে দাম পেল না। রবিবাসরীয় ওয়াংখেড়েতে কলকাতাকে ৫ উইকেটে হারাল মুম্বই। টানা দ্বিতীয় জয় পেল তারা। এ দিকে, কলকাতা টানা দু’টি ম্যাচে হেরে গেল।
মুম্বইয়ের ইনিংসের শুরুটা দেখেই বোঝা গিয়েছিল দিনটা কেমন হতে চলেছে। প্রথম ওভারে উমেশ যাদব ২ রান দিলেন বটে। কিন্তু দ্বিতীয় ওভার থেকে স্বমূর্তি ধারণ করলেন ঈশান কিশন এবং রোহিত শর্মা। শার্দূল ঠাকুরের ওভার থেকে এল ১৬। তাঁকে দেখে তৃতীয় ওভারে উমেশও নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং শুরু করলেন। তাঁর ওভার থেকে ১৭ রান এল।
ওয়াংখেড়ে জুড়ে তখন তাণ্ডব চালাচ্ছেন ঈশান। মাঠের বিভিন্ন দিকে তাঁর মারা শট উড়ে যাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে রান করছিলেন রোহিতও। পাওয়ার প্লে-তেই মুম্বইয়ের স্কোরবোর্ডে ৭২ রান উঠে যায়। ম্যাচের ভবিষ্যৎ ওখানেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। অর্ধশতরান করে ঈশান ফিরতেও রান তোলার গতি কমেনি। সূর্যকুমার যাদব যেন কলকাতা ম্যাচকেই বেছে নিয়েছিলেন রানে ফেরার জন্য। পুরনো দলের বিরুদ্ধে আরও এক বার জ্বলে উঠতে দেখা গেল তাঁকে।
তার আগে অবশ্য ওয়াংখেড়ে জুড়ে ছিলেন শুধুই বেঙ্কটেশ এবং বেঙ্কটেশ। ইডব্লিউএ দিবস উপলক্ষে নানা পরিকল্পনা করেছিল মুম্বই। গোটা গ্যালারির রং নীল। পাশেই নীল সমুদ্র। গ্যালারি এবং সমুদ্রে একইসঙ্গে ঢেউ তুলে দিলেন কলকাতার ব্যাটার। ব্যাট হাতে এমনিতেই তিনি ধারাবাহিক। কিন্তু রবিবার নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন বেঙ্কটেশ। মুম্বইয়ের কোনও বোলারই তাঁর সামনে টিকতে পারেননি। অফসাইডে হোক লেগ সাইডে, সব দিকেই সমান স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে ব্যাট করলেন বেঙ্কটেশ।
কলকাতার ওপেনিং জুটি নিয়ে সমস্যা কবে মিটবে কেউ জানেন না। এ দিনও রহমানুল্লা গুরবাজ এবং নারায়ণ জগদীশন ওপেন করলেন। চলতি মরসুমে টানা তৃতীয় বার। কিন্তু সাফল্য এল না। জগদীশন যে ওপেন করার মতো যোগ্য ক্রিকেটারই নন, এটা হয়তো কেকেআরের বোঝার সময় এসেছে। এ দিন পাঁচটি বল খেলে খাতাই খুলতে পারলেন না। একই কথা বলা যেতে পারে গুরবাজের ক্ষেত্রেও। রিজার্ভ বেঞ্চে লিটন দাসের মতো ক্রিকেটার বসে রয়েছেন। তা সত্ত্বেও খারাপ ছন্দে থাকা গুরবাজকে প্রতিটি ম্যাচে খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একটি অর্ধশতরান ছাড়া পাঁচটি ম্যাচে কেকেআরের হয়ে কিছুই করতে পারেননি তিনি।
বেঙ্কটেশ না থাকলে এ দিন কেকেআরের রান ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছত কিনা বলা মুশকিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আন্দ্রে রাসেলের ২১। একার হাতে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেলেন কেকেআরের ইনিংসকে। কলকাতার ইনিংসে ১০টা ছক্কার মধ্যে ৯টাই তাঁর। মুম্বই বোলারদের একার হাতে শাসন করলেন তিনি।
শুরুটা ভাল হয়েছিল। কিন্তু মাঝের দিকে ওভারে হঠাৎই কলকাতার রানের গতি অনেকটা কমে গেল। শতরানের কাছাকাছি এসে বেঙ্কটেশ আর ঝুঁকি নিয়ে শট খেলতে চাননি। খুচরো রান করার দিকে নজর দিয়েছিল। উল্টো দিকে থাকা রিঙ্কু সিংহকেও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে দেখা গেল না। রিঙ্কু এ দিন হতাশই করলেন। স্বভাববিরোধী ক্রিকেট খেললেন তিনি। তাঁর ব্যাট থেকে চার-ছয়ের প্রত্যাশাই করেন কেকেআরের সমর্থকরা। সেখানে রিঙ্কু ১৮টি বল খেলে মাত্র ২টি চার মেরেছেন।
আজ অর্থাৎ রবিবার মুম্বইয়ের (MI) অধিনায়কত্ব করবে সূর্য যাদব। পাশাপাশি রবিবার দু'বছর পর আইপিএলে (IPL) অভিষেক হল অর্জুন তেন্ডুলকরের (Arjun Tendulkar)। রবিবার মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কলকাতার বিরুদ্ধেই আইপিএলের প্রথম বল করলেন তেইশ বছরের অর্জুন। টস জিতে কলকাতাকে ব্যাট করতে পাঠান মুম্বই অধিনায়ক সূর্য যাদব। প্রথম ওভার তুলে দেন অর্জুনের হাতে। ২০২১ সাল থেকে দলের সঙ্গে আছেন। গতবছর নিলামে তাঁকে কিনেছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
ঘরোয়া ক্রিকেটে মুম্বই দলে নিয়মিত সুযোগ না পাওযার জন্য এ বছর গোয়ার হয়ে খেলছেন অর্জুন। এখনও পর্যন্ত ৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন অর্জুন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৯টি উইকেট। ব্যাট হাতে করেছেন ১৫১ রান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শতরান রয়েছে তাঁর। অর্জুনের সর্বোচ্চ রান ১২০। ২০১৩ সালে আইপিএলে শেষবার খেলেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। এক দশক পর সেই মুম্বইয়ের মাঠে রবিবার অভিষেক হল আর এক তেন্ডুলকরের।
প্রসঙ্গত রবিবার বিকেলের ম্যাচে মরশুমের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে কলকতার ভেঙ্কটেশ আইয়ারের। ২০ ওভারে মুম্বইয়ের সামনে ১৮৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা রাখল কেকেআর।
মুম্বইয়ের (MI) ঘরের মাঠে আজ অর্থাৎ রবিবার মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে নামছে কেকেআর (KKR)। এমনিতে ঘরের মাঠে হায়দরাবাদের (SRH) কাছে হারলেও কেকেআরের ছন্দ এবং আত্মবিশ্বাস ভাল জায়গাতেই রয়েছে। পর পর তিনটি ম্যাচে দুশোর উপর রান তুলেছে তারা। আগের ম্যাচে হারতে হলেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। আর আমদাবাদে গুজরাতের বিরুদ্ধে ম্যাচ তো রিঙ্কু সিংহের সৌজন্যে লোকগাথায় পরিণত হয়েছে। রবিবার মুম্বইকে হারিয়ে জয়ের রাস্তায় ফিরতে মরিয়া কেকেআর।
হায়দরাবাদকে হারালেও দলের পরিবেশ ভালই। শনিবার ছিল পয়লা বৈশাখ। সকালে হোটেলে ঢেলে খাওয়াদাওয়া হয়। বাঙালি উপকরণ ছিল মেনুতে। শার্দূল ঠাকুর জমিয়ে চিংড়ির মালাইকারি খেয়েছিলেন। কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত আবার মিষ্টি দই বলতে অজ্ঞান। মাছ চেখে দেখেছিলেন লকি ফার্গুসন। দুপুরের বিমানে রওনা হয়ে বিকেলেই মুম্বই পৌঁছে গেল কেকেআর। তবে রবিবার দুপুরে খেলা হওয়ায় কোনও সাংবাদিক বৈঠক হয়নি।
মুম্বই এই ম্যাচে পাবে না জফ্রা আর্চারকে। তাই জোরে বোলিং সামলাতে হবে জেসন বেহরেনডর্ফ এবং রিলি মেরেডিথকে। স্পিন বিভাগে পীযূষ চাওলা রয়েছেন। এ ছাড়া টিম ডেভিড, ক্যামেরন গ্রিন, তিলক বর্মা এবং ঈশান কিশনকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। রোহিতকেও ছন্দে থাকতে হবে। দিল্লি ম্যাচে অর্ধশতরান করে দলকে জিতিয়েছেন। কলকাতার বিরুদ্ধে তাঁর রেকর্ড এমনিতেই ভাল।
এ দিকে, কলকাতার হয়ে আন্দ্রে রাসেল নামবেন কি না সেটাই বড় প্রশ্ন। আগের ম্যাচে বল করতে গিয়ে খোঁড়াতে দেখা গিয়েছে। ব্যাট হাতেও খুব খারাপ ছন্দে। তাঁকে বাদ দিলেও বলার কিছু নেই। লিটন দাসের অভিষেকের দিকে নজর থাকবে। বাকি দল মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
হারের জন্য নিজেদের ব্যাটিং ও বোলিংকে দুষলেন কেকেআর (KKR) অধিনায়ক (Cptain) নীতীশ রানা (Nitish Rana)। শুক্রবারের হারের পর সাংবাদিকদের জানালেন, 'রিঙ্কু কি রোজ রোজ ম্যাচ জেতাবে নাকি!' ঘরের মাঠে জয়ের হ্যাটট্রিক হয়নি। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ২৩ রানে হারতে হয়েছে নীতীশ রানাদের। প্রথমে ব্যাট করে ২২৮ রান করেছিল হায়দরাবাদ। অনেক চেষ্টা করলেও সেই রান তাড়া করতে পারেনি কলকাতা। অর্ধশতরান করেছেন দলের অধিনায়ক নীতীশ ও রিঙ্কু সিং। কিন্তু আগের ম্যাচের অবিশ্বাস্য জয় এই ম্যাচে দেখা যায়নি। ম্যাচ হারার পরে নীতীশকে প্রশ্ন করা হয় রিঙ্কুর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে। তারপরেই এমন মন্তব্য করেন অধিনায়ক নীতিশ রানা।
খেলা শেষে নীতীশকে প্রশ্ন করা হয় যে, রিঙ্কুকে কি ব্যাটিং অর্ডারে আরও উপরে নামানো উচিত ছিল? বিশেষ করে যেখানে আন্দ্রে রাসেল এত খারাপ ছন্দে রয়েছেন। এই প্রশ্ন শুনে খানিক বিরক্ত হন নীতীশ। তিনি বলেন, ‘২৩০ রান তাড়া করা সহজ নয়। সেটা যে মাঠেই হোক না কেন। আর রোজ রোজ তো রিঙ্কু আমাদের জেতাবে না। ১০ দিনে এক দিন ওর ওই ইনিংস দেখা যাবে। রোজ রোজ না।’ নীতীশ আরও বলেছেন, ‘আমরা ভাল ব্যাট করেছি। শেষ পর্যন্ত খেলা নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। ২০০ রান যে হবে সেটা মনে হয়েছিল। কিন্তু আরও অনেক বেশি রান হয়ে গেল। বোলারদের আরও ভাল বল করা উচিত ছিল।’
শেষ পর্যন্ত লড়ে গেলেও অসফল রিঙ্কু (Rinku Singh) ও কেকেআর (KKR)। ঘরের মাঠে হায়দরাবাদের (SRH) কাছে ২৩ রানে হার কলকাতার। শুক্রবার টসে জিতে প্রথম বল করার সিদ্ধান্ত নেয় কেকেআর। ব্যাটে নেমে ২২৯ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্যমাত্রা সেট করে হায়দরাবাদ, ব্যাটে নেমে একদম ভালো করতে পারেনি কেকেআর। শেষ অবধি ম্যাচের হাল ধরে অধিনায়ক নীতিশ রানা ও রিঙ্কু সিং। শেষে রানা আউট হয়ে যাওয়ার পর একাই লড়ে যায় রিঙ্কু। কিন্তু পাহাড় সমান রানের লক্ষ্যমাত্রা একসময় অসম্ভব হয়ে যায়। শেষে ২৩ রানে হারতে হয় কলকাতাকে। রিঙ্কু ৩১ বলে ৫৮ রান করে নট আউট ছিল।
শুক্রবার ঘরের মাঠে টসে জিতে হায়দরাবাদকে ব্যাট করতে পাঠায় কলকাতা। ব্যাটে নেমে হ্যারি ব্রুক জ্বলে ওঠে। রান আসে অভিষেক শর্মা ও মার্ক্রমের ব্যাটেও। ২০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২২৮ রান করে হায়দরাবাদ। ওই ইনিংসে ব্রুক ৫৫ বলে ১০০ রান করে। যা আইপিএলের প্রথম শত রান। মার্ক্রমের ব্যাটে ২৬ বলে ৫০ রান আসে। শর্মা করে ১৭ বলে ৩২ রান। ২২৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নেমে জগদীশন ছাড়া রান পায়নি টপ অর্ডার কেউই। উল্লেখযোগ্য রানা ৪১ বলে ৭৫ রান করে, ও জগদীশন ২১ বলে ৩৬ রান করে। শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রানে শেষ হয় তাদের ইনিংস।
প্রথমে বল করতে নেমেও ব্যর্থ কেকেআর, একমাত্র রাসেল ৩টি উইকেট পায় ও বরুন পায় একটি উইকেট। এ ছাড়া ফার্গুসন ২ ওভারে ৩৭ রান দেয়। উমেশ দেয় ৩ ওভারে ৪২ রান। ওদিকে ওদিকে বলে সফল হায়দরাবাদ। ১টি করে উইকেট পায় ভুবনেশ্বর, নটরাজন, ও উমরান। ২ টি করে উইকেট পায় জসেন ও মার্কণ্ডে। শনিবারের ম্যাচে অন্তত এটা স্পষ্ট যে রিঙ্কু সিং একদিনের জন্য আসেনি। রিঙ্কু যে লম্বা রেসের ঘোড়া সেটা ও বুঝিয়ে দিয়েছে।