প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় মামলাকারী রাকেশ মণ্ডলের করা মামলার ভিত্তিতে বড় নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে সিবিআই মঙ্গলবার জানায়, নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তল ঘোষ, নীলাদ্রি ঘোষ ও তাপস মণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এরপর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন ছয় মাসের মধ্যে মামলার ট্রায়াল শেষ করতে হবে। তিনি জানতে চান নিম্ন আদালত কবে থেকে কুন্তল ঘোষ, নীলাদ্রি ঘোষ ও তাপস মণ্ডলের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করবে?
বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে সিবিআই জানায়, বুধবার থেকে চার্জ ফ্রেম করা হবে। এই তিনজন অভিযুক্তের পক্ষ থেকে আদালতে তাদের বক্তব্য জানালেও তার কাগজ আদালতে জমা পরেনি। ফলে এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন নতুন করে এই তিনজন আর কোনও বক্তব্য জানাতে পারবে না। তিনি সিবিআইকে নির্দেশ দেন আগে এই সংক্রান্ত যে আবেদনগুলি জমা পড়েছে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতকে সেগুলির তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করতে হবে। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে এই তিনজনের বিরুদ্ধে। পার্থ সেন ও কৌশিক মাঝিকে চার্জশিট জমা দিয়ে চার্জ ফ্রেম করে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে মামলাগুলির নিষ্পত্তি করতে হবে বলে সিবিআইকে নির্দেশ দেন বিচারপতি।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্টে মামলা করেন চাকরিপ্রার্থী রাকেশ মণ্ডল। ২০১৪ সালের টেটের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে। মামলাকারীর আইনজীবী দিবেন্দু চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন কোনও অতিরিক্ত মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।নিয়োগ মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। ২১শে ডিসেম্বর সিবিআই রিপোর্ট জমা দিয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। মুখ বন্ধ খামে জমা দেওয়া রিপোর্ট খতিয়ে দেখলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।সিবিআইয়ের পক্ষে জহিরউদ্দিন শেখ, টাইগার হোসেন, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় , তাপস কুমার মণ্ডল, নীলাদ্রি ঘোষ ও কুন্তল ঘোষের নামে নিম্ন আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।
চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে ১৪ই ডিসেম্বর। তবে এখনও পর্যন্ত চার্জ ফ্রেম করা হয়নি নিম্ন আদালতে বলেই এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে জানায় সিবিআই। বিচারপতিকে সিবিআই এও জানায় যে মেধা তালিকা প্রকাশ হয়েছিল তাতে প্রভাব খাটিয়েছিল তাপস কুমার মণ্ডল। এস বসু রায় কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজোশ করে এই দুর্নীতি করা হয়েছিল বলেই অভিযোগ করেছে সিবিআই।
এরপরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে ঠিক কি জানিয়েছিল? সমস্ত কিছু শোনার পর নিম্ন আদালতকে এই মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য কড়া নির্দেশ দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রসূন গুপ্ত: বহু বছর আগে প্রয়াত ভারত অধিনায়ক টাইগার পাতৌদি বলেছিলেন, স্পিনারকে পা বাড়িয়ে খেলতে হয়, কিন্তু পিছনের পা-টি যেন পপিং ক্রিজে থাকে। আজকের ক্রিকেটে ওই আপ্তবাক্য কেউই মানে না। অন্তত আইপিএলে, সে কারণেই সিক্সারও যেমন হয়, তেমনি আউটও হচ্ছে নিয়মিত। যদিও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিষয়টিকে ক্রিকেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে উদাহরণটি কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। এজলাস বা কোর্টের প্রধানের আসনটি মোটেই খেলার স্থান নয়। অন্যদিকে বিচারপতির আদেশ শিরোধার্য করতে হবে এটাই দস্তুর। কিন্তু এখানেও নিয়ম নিশ্চিত আছে যে, মাননীয় বিচারপতি তাঁর প্রক্রিয়ায় কীভাবে এগোবেন বা কী আদেশ বা রায় দেবেন তা সর্বদা তাঁর নিজস্ব বিষয়। কে দোষী বা সন্দেহভাজন তা বিচারপতি আদেশের আগে প্রচার করেন না।
তিনি দুই পক্ষের কথা শুনে রায় বা আদেশ দেবেন এটাই চিরায়ত। শিক্ষা সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় একটি টিভি চ্যানেলে গত সেপ্টেম্বর মাসে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে এই শিক্ষা সংক্রান্ত মামলায় কী হচ্ছে বা তিনি কী ভাবছেন অথবা তাঁর ধরন কী, তা অনেকটাই প্রকাশ করে ফেলেছিলেন। যা আইনসিদ্ধ কিনা তাই নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক তুঙ্গে ছিল।
অভিজ্ঞ আইনজীবীরা বলেছিলেন, এসব তিনি আদেশ দেওয়ার আগে বলে ঠিক কাজ করেননি। ওই সময়ে বর্তমান সরকার বিরোধী মহলে তিনি নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর নামে পোস্টার পড়েছিল বিভিন্ন স্থানে। এরপর তাঁকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে, এমনকি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও। মূল বিষয়ের বাইরে তিনি এজলাসে নাম করেছেন রাহুল গান্ধীর বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের, যাঁরা এই মামলায় ছিলেনও না। এই সমস্ত নিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে অভিযোগ জমা পড়ে গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে। সমস্ত দিক বিচার করে প্রধান বিচারপতি শিক্ষা সংক্রান্ত মামলা থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিলেন। এমনটাই নাকি হওয়ার ছিল বলেই ধারণা আইজীবী মহলে। রাতারাতি নায়ক থেকে ট্রাজিক কিংয়ে চলে আসলেন তিনি। এরপর সম্মানের সঙ্গে তিনি কী করেন সেটাই দেখার।