রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে ফের 'অ্যাকশন মোডে' ইডি। শহরের একাধিক জায়গায় সকাল থেকে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছেন তদন্তকারী অফিসাররা। বাগুইআটিতে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডি ঢুকতেই একেবারে বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের মতো মোবাইল ছুঁড়ে দিলেন পাশের ফ্ল্যাটের ছাদে। পাঁচিল টপকে মোবাইল উদ্ধার করলেন ইডি আধিকারিকরা।
কয়েকমাস আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মুর্শিদাবাদের বড়ঞায় বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল ইডি। সেসময় বিধায়ক প্রমাণ লোপাট করতে তাঁর মোবাইলটি বাড়ির পুকুরে জলে ফেলে দিয়েছিলেন। ইডিও নাছোড়, সেই মোবাইলটি পুকুর থেকে খুঁজে বের করে আনে। প্রমাণ লোপাট করতেই বিধায়ক মোবাইলটি জলে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন বলে দাবি করেছিল ইডি।
যদিও মোবাইল জলে ফেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ইডির হতে গ্রেফতার হতে জয়েছিল বিধায়ককে। এবার রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। কৈখালির এক অভিজাত আবাসনে তল্লাশি অভিযানে যান ইডি আধিকারিকরা। জানা যাচ্ছে, বাকিবুরের নামে ওই ফ্ল্যাট। কিন্তু বাকিবুর নয়, এই ফ্ল্যাটে থাকেন ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হানিস তোসিবাল। ইডি ফ্ল্যাটে ঢুকতেই ব্যবসায়ী তাঁর মোবাইল ফোনটি ছুঁড়ে ফেলে দেন। সেই মোবাইলদুটিই উদ্ধার করেছে ইডি। তার একটির ব্যাক কভারে ৫০০ টাকা নোট ছিল বলে জানা গিয়েছে। মোবাইলটি উঁচু থেকে ছুঁড়ে ফেলতেই ব্যাক কভারটি খুলে ৫০০ টাকার নোটটি বেরিয়ে এসেছিল। সেটিও উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। ব্যবসায়ীর কীর্তি দেখে ইডি দাবি করেছে তথ্য লোপাট করতেই তিনি মোবাইলটি ফেলে দিয়েছেন। কলকাতা শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায়ও একযোগে চলছে তল্লাশি।
বাগুইআটি ছাড়াও নিউআলিপুরের একটি বহুতলে এবং সল্টলেকের আইবি ব্লকে চলছে ইডি অভিযান। ইডির ৮ থেকে ১০টি টিম এখন শহরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে। ৮ নম্বর সদরস্ট্রিটের একটি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের অফিসেও তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি। এছাড়া পার্কস্ট্রিটেও একটি বাড়িতে চলছে ইডি অভিযান।
বিধায়ক (MLA) জীবনকৃষ্ণকে (Jibankrishna Saha) নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা বার্তা, নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া বহিস্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনুর। শান্তনু ও জীবন দু'জনের গ্রেফতারির কারণ এক এবং গ্রেফতার হয়েছেন বহু ছল-চাতুরির পর। বুধবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত শান্তনুর শুনানি ছিল নগর দায়রা আদালতে। দুপুরেই প্রেসিডেন্সি জেল থেকে আদালত চত্বরে আনা হয় তাঁকে। শান্তনুকে দেখেই উপস্থিত সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন ছুড়ে দেন তাঁকে। জানতে চাওয়া হয় জীবনকৃষ্ণের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে তিনি কি কিছু বলতে চান? জবাবে কিছুটা নির্বিকার ভাবেই শান্তনু বলেন, ‘সবাইকে নববর্ষ এবং ইদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’
শান্তনুর বিরুদ্ধে স্কুল ছাড়াও আরও বিভিন্ন সরকারি চাকরির নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ইডি। বিভিন্ন সময়ে তাঁরা এমনও দাবি করেছে যে, শান্তনুর সঙ্গে উপর মহলের অনেকের যোগাযোগ ছিল। অন্যদিকে, জীবনকৃষ্ণর বিরুদ্ধে যে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাতে বড়ঞার বিধায়কের অধীনে কয়েকশো এজেন্ট কাজ করত বলে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা। বিভিন্ন জেলায় সেই এজেন্টরা ছড়িয়ে ছিল, এমনটাই সন্দেহ করা হচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, বুধবার নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া অয়ন শীলের বাবা-মা ও স্ত্রীকে ইডির কলকাতার দফতরে তলব করে ইডির আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, তাদের ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কিছু লেনদেন করেছিল অয়ন এবং সেই লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানতেন কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাদেরকে ডাকা হয়েছিল বলেই খবর। বুধবার সকালে ইডির দফতরে হাজির হয়েছিলেন অয়ন সিলেন বাবা-মা ও স্ত্রী।
জল সেঁচের মজুরি (Wages) কে দেবে? জেসিবির (Jcb) টাকাই বা কে দেবে! জীবনকৃষ্ণের (Jibankeishna) মোবাইল উদ্ধারের তল্লাশি চালানোর সময়, ব্যবহৃত শ্রমিকদের মজুরি ও জেসিবির ভাড়া কে দেবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সূত্রের খবর, জীবনকৃষ্ণের বাড়ির তল্লাশি চালানোর সময় ব্যবহৃত শ্রমিকদের মজুরি ও জেসিবির মোট ভাড়া প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা। কিন্তু সেই টাকা এখন কে মেটাবে যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
চলতি মাসে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে, জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়ি তল্লাশি চালায় সিবিআই আধিকারিকরা। ঘটনাচক্রে সিবিআই জেরার মুখে পড়ে অসুস্থতার নাম করে তাঁর দুটি মোবাইল পুকুরে ফেলে দেয় জীবনকৃষ্ণ সাহা। এরপরেই ওই মোবাইল খুঁজতে মরিয়া হয়ে ওঠে সিবিআই আধিকারিকরা। পুকুরের চারপাশ ভালো করে খোঁজার পর যখন মোবাইল উদ্ধার না হয়, তখন ওই পুকুরের জল সেঁচে মোবাইল উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। তাতে ব্যবহার করতে হয় স্থানীয় কিছু শ্রমিকদের এবং ব্যবহার করতে হয় সেঁচ মেশিনের কিন্তু অভিযোগ শ্রমিকদের মজুরি ও সেঁচে মেশিনের ভাড়া এখন অবধি মেটায়নি সিবিআই কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া সূত্রের আরও খবর, যখন পুকুরের জল সেঁচের পর শ্রমিক লাগিয়ে মোবাইল উদ্ধার করা যায়নি, তখন ওই মোবাইল উদ্ধারের জন্য কাজে লাগানো হয় জেসিবি। ওই মেশিনটি প্রায় ১০ ঘণ্টা কাজ করে, ওই জেসিবি মেশিন, যার ভাড়াও মেটানি সিবিআই কর্তৃপক্ষ এমনই অভিযোগ।
সূত্রের খবর মোবাইল খুঁজতে দু'দিনে ২৮ জন শ্রমিকের পারিশ্রমিক প্রায় চৌদ্দ হাজার টাকা। এছাড়া জেসিবির ভাড়া ছিল প্রায় ঘন্টা প্রতি দুই হাজার টাকা। সেঁচে মেশিন ও জেসিবি ১০ ঘন্টা করে কাজ করেছে। সবমিলিয়ে মোট খরচের পরিমাণ ৪৮ হাজার টাকা। এখন প্রশ্ন এই বকেয়া কে মেটাবে! তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
মনি ভট্টাচার্য: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআইয়ের (CBI) ৭ জনের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করার পর, সিএন-ডিজিটালের তরফে জানানো হয়েছিল, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে (Recruitment corruption) তদন্তের মোড় ঘুরতে পারে এ সপ্তাতেই। ঠিক তার ৭ দিনের মধ্যেই সোমবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার (Arrested) হল মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban Krishna Saha)। সোমবার তাঁর মুর্শিদাবাদের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এরপর উঠে আসছে আরো কিছু প্রভাবশালীদের নাম।
সূত্রের খবর, সোমবার কাকভোরে জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তারপরেই নিঃশ্বাস ঘন হতে শুরু হয়েছে তৃণমূলের আরও কিছু বিধায়কের। সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই ফের জেরা করা হতে পারে নিয়োগ দুর্নীতির আরেক মহারথী গোপাল দলপতি ও তাঁর স্ত্রী হৈমন্তীকে। সম্প্রতি হৈমন্তীর বেহালার ফ্লাটেও পৌঁছে গিয়েছিল সিবিআই। পাশাপাশি কপালে চিন্তার ভাজ রয়েছে নলহাটির প্রাক্তন তৃণমূল ব্লক সভাপতি বিভাস অধিকারীও।
নববর্ষের আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার থেকেই রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে নতুন মোড় আনতে গত সোমবার অর্থাৎ ১০ই এপ্রিল একটি সাতজনের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করে সিবিআই। ৭ দিনের মধ্যেই রাজ্যজুড়ে তৎপর হয়ে পড়ে সিবিআই। শুক্রবার রাজ্যের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমান জেলায়, পাশাপাশি নিউটাউনেও তল্লাশি চালায় সিবিআইয়ের একাধিক দল। এরপর শনিবার তল্লাশি চালানো হয় নলহাটির প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিভাস অধিকারীর বাড়ি। শনিবারই তল্লাশি চালানো হয় গোপাল দলপতি ও হৈমন্তীর বাড়িতেও। পাশাপাশি ঐদিনই হৈমন্তীর বেহালার ফ্ল্যাটও সিল করে দেয় সিবিআই।
সূত্রের খবর, এই জীবনকৃষ্ণ সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে আসছে রাজ্যের আরও বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতা ও বিধায়কদের নাম। সিবিআই সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অনুব্রত ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এই জীবনকৃষ্ণ গরুপাচার সম্বন্ধেও অনেক তথ্য জানতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। রবিবার রাতেই তাঁকে গ্রেফতারের ছক কষে ফেলে সিবিআই। সোমবার ভোর ৫ টা ১৫ নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করে, সোমবার সকালেই তাঁকে নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসে সিবিআই। সোমবারই স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাঁকে সিবিআই স্পেশাল আদালতে তোলা হবে বলে খবর।