ফের মৃত্যু (Death) হল এক ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্ত মহিলার। ডেঙ্গির প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে তাতে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গি আক্রান্তের (Infected) সংখ্যা। ঠিক এরকমই আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বনগাঁ ব্লকের আকাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ঘরে ঘরে। তবে এখনও ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন নয় প্রশাসন, এমনই অভিযোগ উঠছে। যদিও এই ঘটনায় মৃতার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে মৃত মহিলার বাড়িতে গেলেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক।
পরিবার সূত্রে খবর, চলতি মাসের ৫ তারিখে ওই মহিলাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। তাঁকে মূলত ডেঙ্গি ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছিল। পরিবারের দাবি, হাসপাতালের তরফ থেকে সেরকম কোনও চিকিৎসা করা হয়নি। যার ফলে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এমনকি ডেথ সার্টিফিকেটেও মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়নি, এমনটাই দাবি করেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গোটা এলাকা জুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। শুধুমাত্র তাই নয়, একই পরিবারের দুই থেকে তিন জনের মধ্যে দেখা গিয়েছে সংক্রমণ। স্থানীয়দের দাবি, এই ঘটনার পরেও সচেতন হচ্ছে না প্রশাসন।
রাজ্যে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্তের সংখ্যা। এমনকি ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর গ্রাফও। শহর থেকে শহরতলি, এমনকি রাজ্যের জেলাগুলিতে তার ছবি স্পষ্ট। রবিবারই ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো আরও এক জনের। ঘটনাটি ঘটেছে বারাসত (Barasat) পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডে। এই নিয়ে মোট ২ জন বারাসাত পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু (Death) হল। যদিও এই ঘটনায় মৃতের পরিবার ও সাধারণ মানুষ পুরসভার পরিষেবা নিয়ে আঙুল তুলেছেন।
জানা গিয়েছে, মৃতের নাম রহমত আলী (১৯)। গত মঙ্গলবার তাঁর জ্বর হয়। এরপরেই তাঁর ডেঙ্গি পরীক্ষাও করানো হয়। শনিবার ডেঙ্গি পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ আসায় তড়িঘড়ি তাঁকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে রহমতের প্লেটলেট কাউন্ট কম থাকার জন্য তাঁকে আরজিকর-এ স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু মৃতের পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই রবিবার সন্ধ্যেতে মৃত্যু হয় তাঁর। আর এই ঘটনার পরেই মৃতের পরিবারের সদস্যরা ও এলাকার মানুষজন পুরসভার পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে।
যদিও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরমাতা বলেন, পুরসভা তাদের মতন করে চেষ্টা করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ সচেতন নয়। এই জন্যেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে এবং মৃত্যুর মতন ঘটনা ঘটছে বলেও দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, পুরসভার পরিষেবা নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। শুধুমাত্র বারাসতই নয়, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুরের জুগনীতলা সহ বেশ কিছু পুরসভা এলাকায়। সাধারণের অভিযোগ, ড্রেনের মধ্যে জমে থাকা জলের কোনো নিকাশী ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকি যেখানে সেখানে নোংরার স্তূপ, পালস্টিকের মধ্যে জমে থাকার ফলে জন্ম নিচ্ছে ডেঙ্গির মশা। যার ফলে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণের দাবি, বারবার পুরসভার সাফাই কর্মীরা ড্রেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করলেও কোনও নিকাশী ব্যবস্থা না থাকায় নোংরা জমা জল বের করা যাচ্ছে না। যার ফলে সাধারণ মানুষদেরই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে দাবি করেন সাধারণ মানুষ।
দিন দিন বেড়েই চলেছে ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্তের (infected) সংখ্য়া। এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে (State) ৫০০০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে, উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ৪০০ জন, নদীয়াতে ৩০০ জন এবং হুগলীতে ৯৫ জন। তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে এখনও ২৫০ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
তবে দিন দিন ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতাল গুলির বিরুদ্ধেই অসচেতনতার অভিযোগ উঠে আসছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নের উদ্যোগে নেওয়ার কথা বলা হলেও হাসপাতালের চিত্র অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা৷ অভিযোগ, হাসপাতালের আশপাশের ড্রেনগুলিতে জল জমে রয়েছে। ময়লা আবর্জনার মধ্যে মাছি-মশা উড়ে বেড়াচ্ছে। এরকমই বেহাল চিত্র দেখা গিয়েছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল, কৃষ্ণনগর শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল, ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতাল ও ইসলামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতাল ও ইসলামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মেইন গেটের সামনেই দেখা যাচ্ছে নোংরা জমা জল। আর সেই নোংরা জলেই মশার লার্ভা ভেসে বেড়াচ্ছে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা করাতে এসে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে না তো?
বর্ষার মরশুম শুরু হতে না হতেই দেখা দিয়েছে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি বাড়ছে ‘স্ক্রাব টাইফাস’ (Scrub Typhus) রোগের প্রকোপ। উত্তর দিনাজপুরে (Uttar Dinajpur) দেখা মিলেছে এই নতুন সংক্রমণের। যার জেরে জেলা জুড়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। রায়গঞ্জেও 'স্ক্রাব টাইফাস' চোখ রাঙাচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত একমাসে জেলায় রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর মহকুমা মিলিয়ে মোট ৪৬ জন ‘স্ক্রাব টাইফাস’-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় ১১ জনের শরীরে ওই রোগের সংক্রমণ মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও পেটের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা করাতে যাওয়া রোগীদের ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি ‘স্ক্রাব টাইফাস’ রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাও করা হচ্ছে।
এক রোগীর আত্মীয় জানান, তাঁর দাদা ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। ওয়ার্ডে প্রচুর রোগীর চাপ বাড়ছে। ফলে বেড পাওয়া খুবই মুশকিল হয়ে পড়েছে। য়ার ফলে মেঝেতে কিংবা বারান্দায় রাখা হচ্ছে রোগীদের। বেশীর ভাগই ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া কিংবা স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত, এমনটাই জানান তিনি।
এই ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক বিদ্যুৎ ব্যানার্জী বলেন, এসময় জ্বর একটু বেশী হয়। তবে অন্যান্য জেলার তুলনায় এ জেলায় রোগীর সংখ্যা কম। আপাতত হাসপাতালে ১ জন ডেঙ্গী আক্রান্ত রয়েছেন। তিনি সুস্থ রয়েছেন। এছাড়াও ২৬ টি স্ক্রাব টাইফাস পজিটিভ রায়েছে। গত ২ দিনে নতুন করে এমন কোনও রোগীর হদিশ মেলেনি। তবে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা চলছে। তবে চিন্তার কোনও বিষয় নেই বলেই আশ্বস্ত করছেন তিনি।
যত দিন যাচ্ছে ততই ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্তের (infected) সংখ্যা বাড়ছে বাংলায়। আগে শুধুমাত্র পুরসভা এলাকাগুলিতেই ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি দেখা যেত। তবে এবার পুরসভা এলাকাগুলির পাশাপাশি শহরতলি এলাকা সহ গোটা রাজ্য (State) জুড়েই ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে। ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা স্থিতিশীল হলেও হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গি সংক্রমণ। তবে কিছু কিছু জায়গায় এই ডেঙ্গি সচেতনতার জন্য ব্লিংচিং পাউডার ছড়িয়ে, জমা জল ফেলে এবং ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হচ্ছে। ডেঙ্গি সংক্রমণ নিয়ে প্রশাসন সচেতন হলেও, সচেতনতায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে সরকারি হাসপাতাল গুলির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, হাসপাতালের একাধিক জায়গায় জল জমে রয়েছে যা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালগুলিতে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে নোংরা প্লাস্টিক। যার ভিতরে জল জমে থাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ হাসপাতাল গুলিতেই বেশি দেখা গিয়েছে।
বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া, নদীয়ার হরিণঘাটা, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, মধ্যমগ্রাম, অশোকনগর সহ কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় ডেঙ্গি সংক্রমণের হার বেড়ে চলেছে। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো এক গৃহবধূর। মৃতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম জেসমিরা বিবি (৩১)। কয়েকদিন আগেই জ্বর হওয়ায় তাঁকে শনিবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর রক্ত পরীক্ষা করার পর ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ডেঙ্গি ধরা পড়ার পর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু তাতেও আর শেষ রক্ষা হয়নি। একই ভাবে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শতাধিক রোগী। সবমিলিয়ে প্রায় ৭০ জনের উপরে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে।
অন্যদিকে, নদীয়ার কল্যাণী মেডিসিন এন্ড জহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৯৯ জন অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের সবার ডেঙ্গি পরীক্ষা করা হলে তাদের মধ্যে ৩৭ জনের শরীরে ডেঙ্গি সংক্রমণ পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এই ডেঙ্গি।