সৌমেন সুর: ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়কে এককথায় কোনো বিশেষণ দিয়ে ভূষিত করা যাবে না। সাহিত্যের কোন বিভাগে তিনি অনুপস্থিত? সব বিভাগই তিনি বীরবিক্রমে জাজ্বল্যমান। তবে সব শিল্পী সাহিত্যিকদের চেনা যায় তার কোনো একটি সৃষ্টি বা লেখা তাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। তার সৃষ্টি মানুষকে আনন্দ দেয়। লেখক ষষ্ঠীপদকে আমরা চিনেছি- তার অমস সৃষ্টি পান্ডব গোয়েন্দা কাহিনী থেকে। এই কিশোর গল্পটি, যা ছোট বড় সবার কাছে খুব আদরনীয়। লেখকের জীবনে একটা মাইলস্টোন। তিনি কি না লিখেছেন, গল্প উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনী, এমন কি ছড়া পর্যন্ত। তার লেখা একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না। সব বিভাগে তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। একটা ছড়া উপহার দিই আপনাদের। লেখার মধ্যে শব্দের ব্যবহার কত প্রাঞ্জল, কত আধুনিক। ' ব্রাবোন রোডে উড়ালপুল/ ভূগর্ভেতে রেল/ আজব শহর কলকাতাতে/ নিত্য নতুন খেল/ এই খেলারই পাশে পাশে আদিম খেলা চলে/ ঝমঝমাঝম বৃষ্টি হলেই/ শহর ভাসে জলে।'
সরকারি চাকরির পাশাপাশি সাহিত্যকে তিনি জীবনের একমাত্র সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন। ষাট বছরের সাহিত্য জীবনে অসংখ্য গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। শুধু ছোটদের জন্য নয়, বড়দের জন্য তাঁর গল্প প্রথম সারির পত্রিকায় পাই। ৮ থেকে ৮০ সব বয়সের মানুষের কাছে তিনি পেয়েছেন অকৃত্রিম ভালোবাসা। তিনি যেসব গল্প লিখেছেন, তাতে অহেতুক জটিল মনস্তত্বের বর্ণনা একদম নেই। অত্যন্ত সহজ সরল ভাবে আমাদের কাছে প্রেজেন্ট করেছেন।
ষষ্ঠীপদবাবু জীবনপথে দিন অতিবাহিত করেছেন- নিপাট একজন ভালো মানুষ হয়ে। সাধারণ জীবনযাপন করে। এত ভদ্র মানুষ ও স্বল্পভাষী ছিলেন সে সম্পর্কে কয়েকটা কথা তুলে ধরছি। কোন একটি জায়গায় প্রধান অতিথি হয়ে নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন তিনি। কোন সাম্মানিক তো নেননি, এমনকি গাড়ি ভাড়া পর্যন্ত নেননি। এমনই মানুষ ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের ৩রা মার্চ তিনি পৃথিবী ছেড়ে চির বিদায় নেন। রেখে যান অগণিত গ্রন্থ- যা মানুষকে ভাবাবে, আনন্দ দেবে। তবে ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় মানুষের কাছে বেঁচে থাকবেন অনেকদিন, কারণ তিনি যে চিরসবুজ, চির নবীন।
সৌমেন সুর: অসীম সাহসী স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর আজ প্রয়াণ দিবস। যে ভূমিতে মানুষ জন্মগ্রহণ করে- সেটা মানুষের মাতৃভূমি। ক্ষুদিরামের মাতৃভূমি ছিল সেই দেশের মাটি। দেশের জন্য তাঁর প্রাণ কেঁদে উঠেছিল। তাই মানুষের হৃদয়ে ক্ষুদিরামের নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দেশপ্রেম হৃদয়ে সঞ্চারিত হলে দেশের গৌরবকে নিজের গৌরব বলে মনে হয়। ক্ষুদিরামের অত্যন্ত কম বয়স থেকেই দেশপ্রেম জেগে উঠেছিল। ১৯০৩ সালে অরবিন্দ ঘোষ ও ভগিনী নিবেদিতা মেদিনীপুরে এসেছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করার প্রয়াসে বক্তব্য রাখেন। এখানে ক্ষুদিরাম বক্তব্য শুনে, দেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে অবহিত হন। ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হন। তখন তার মাত্র ১৪ বছর বয়স। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে, পাঠ ছেড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেখতে দেখতে স্বাধীনতা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশজুড়ে।
বিভিন্ন বিপ্লবীগণ বিভিন্ন কর্মে যুক্ত হয়ে পড়েন। কিংসফোর্ড কে মারবার জন্য ভার পড়ে দুই যুবকের- ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকির। বেরিয়ে পড়লেন ফোর্ডকে মারতে মুজফফরপুর।দুজনেই নাম পাল্টে দিলেন। উঠলেন এক ধর্মশালায়। একদিন দুজনে ইউরোপিয়ান ক্লাবের পাশে লুকিয়ে থাকেন কিংসফোর্ডের আশায়। অবশেষে ঘোড়ার গাড়ির দেখা মেলে। দুজনে উত্তেজিত হয়ে বোমা নিক্ষেপ করে। দুজনে ভাবলেন সবাই মারা গেছে। কিন্তু কিংসফোর্ড মারা যাননি। মারা যান অন্যজন। তখন দুজনেই ভীষণ আক্ষেপ করেন। ছুটি দুজনে ভিন্ন পথ অবলম্বন করে পালাবার পথ তৈরি করে। অবশেষে ক্ষুদিরাম মুজফফরপুরে একটি চায়ের দোকানে সন্দেহজনক অবস্থায় ধরা পড়েন। প্রফুল্ল চাকি ধরা পড়ার মুহূর্তে নিজের মাথায় গুলিকরে আত্মহত্যা করেন। এরপর ক্ষুদিরামের যখন ফাঁসি হয়- সারা দেশ কেঁদেছিল তাঁর জন্য। দেশের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ ভারতবাসী কোনদিন ভোলেননি, আজও নয়।
'দা ইম্মর্টাল অশ্বত্থামা' (The Immortal Ashwatthama) ছবিটি বহুদিন ধরে চর্চায়। ২০২০ সালে ছবিটির ঘোষণা করেছিলেন পরিচালক আদিত্য ধর। শোনা গিয়েছিল, মূল চরিত্রে দেখা যাবে ভিকি কৌশলকে। কিন্তু ছবি থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। এরপর শোনা গিয়েছিল, মূল চরিত্রে নির্মাতাদের পছন্দ রণবীর সিংকে। কিন্তু ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয় তাঁকেও। তারপর শোনা যায়, আর কেউ নয়, বলিউডের কিং খান, অর্থাৎ শাহরুখই (Shahrukh Khan) হবেন অশ্বত্থামার চরিত্রাভিনেতা। কিন্তু বাদশাও বাদ পড়লেন বোধহয়। বর্তমানে শোনা যাচ্ছে, ঐতিহাসিক চরিত্রে দক্ষিণী অভিনেতাদের সাফল্য দেখে সেদিকেই ঝুঁকছেন নির্মাতারা।
আল্লু অর্জুন, জুনিয়র এনটিআরের মতো অভিনেতারা ক্রমেই দক্ষিণী সিনেমার সীমানা পেরিয়ে সর্বভারতীয় হয়ে উঠেছেন। তাঁদের কাউকেই না কি ছবিতে পেতে চাইছেন নির্মাতারা। ২০২০তে ছবির ঘোষণা হলেও, বাজেটের কারণে পিছিয়ে গিয়েছিল ছবির কাজ। যদিও পরবর্তীকালে সহযোগিতা পেয়ে ছবি তৈরির কাজ আবারও শুরু হয়েছে। হাতে বাজেট আসতেই বড় তারকাকে ছবিতে নিতে চাইছেন নির্মাতা।
এইবার শোনা যাচ্ছে আল্লু অর্জুনকে অভিনেতা হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অভিনেতা এখন 'পুস্পা-দা রুল'এর শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত। এই ছবিটি শেষ হলেই নাকি অশ্বত্থামা নিয়ে কথাবার্তা হতে পারে। ২০২০ সাল থেকে যে ছবি পিছিয়ে যাচ্ছে, তা কবে মুক্তি পাবে, মূল চরিত্রে কে অভিনয় করবেন, এখন সেটাই দেখার।
বহু প্রতীক্ষিত ছবি 'দ্য ইমমোর্টাল অশ্বত্থামা' (The Immortal Ashwatthama) নিয়ে উৎসুক বলিউডপ্রেমী। অশত্থামার চরিত্রে কাকে দেখা যাবে, তা নিয়েও বেশ কৌতুহল সাধারণ মানুষের। আগে জানা গিয়েছিল, আদিত্য ধর পরিচালিত এই ছবিতে প্রধান চরিত্রে দেখা যাবে ভিকি কৌশলকে (Vicky Kaushal)। কিন্তু বর্তমানে জানা গিয়েছে, এই ছবি থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। তাঁর জায়গায় অশ্বত্থামার চরিত্রে দেখা যাবে রণবীর সিংকে (Ranveer Singh)। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, ভিকি-রণবীরের পর এখন জল্পনা শুরু হয়েছে, বলিউড নয়, টলিউডের কোনও জনপ্রিয় মুখকেই দেখতে পাওয় যাবে এই ছবিতে।
দ্য ইমমোর্টাল অশ্বত্থামা নিয়ে জল্পনা অনেক আগে থেকেই। প্রথমে ঠিক ছিল রনি স্ক্রুওয়ালার প্রযোজনায় এই ছবিতে থাকবেন ভিকিই। কিন্তু পরে খবর এসেছে, জিও স্টুডিওস-এর প্রযোজনায় রণবীর সিং-কে নিয়েই শুরু হবে এই ছবির শ্যুটিং। তবে সম্প্রতি গুঞ্জন রটেছে, বলিউড নয় টলিউডের সুপারস্টার জুনিয়র এনটিআর বা আল্লু অর্জুনকে দেখা যাবে অশ্বত্থামার চরিত্রে। আরও জানা গিয়েছে, আল্লু নাকি জুনিয়র এনটিআর, কাকে নেওয়া হবে এই ছবির জন্য, তা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়েছে প্রযোজনায় সংস্থায়।
অবশেষে অশ্বত্থামার চরিত্রে কাকে দেখতে পাবে, তা নিয়ে মুখিয়ে রয়েছে বলিউড-টলিউডপ্রেমীরা। তবে এই ছবির জন্য যে দক্ষিণ ভারতের অভিনেতাদেরও নেওয়া হতে পারে, এমন খবর প্রকাশ্যে আসতেই বেজায় খুশি দক্ষিণ ভারতবাসী।