রাজ্য জুড়ে বেড়ে চলা দুর্নীতির আবহেই গ্রুপ সি (Group C) মামলায় তৎপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI)। আদালতের ডেডলাইনকে মাথায় রেখেই ময়দানে নেমেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এবারে রাজ্যের এসএসসি গ্রুপ সি পদে চাকরি পাওয়া সমস্ত শিক্ষাকর্মীদের নথি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছে সিবিআই। এর পরই নড়েচড়ে বসেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
আদালতের চাপ বাড়তেই অ্যাকশন মোডে সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতির রহস্য শেষ করতে তৎপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ফলে শিক্ষকদের পর এবারে গ্রুপ সি পদে চাকরি পাওয়া ক্লার্কদের নথি চেয়ে পাঠাল সিবিআই। নিয়োগ সংক্রান্ত নথি চেয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। এর পর পর্ষদের পক্ষ থেকে সমস্ত জেলার স্কুল পরিদর্শকদের চিঠি দিয়ে গ্রুপ সি পদে চাকরি পাওয়া ক্লার্কদের নথি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সমস্ত নথি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের হাতে আসলেই তা সিবিআই-এর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলেই পর্ষদ সূত্রে খবর।
নিয়োগ দুর্নীতিতে ইতিমধ্যেই জেলবন্দি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থেকে শিক্ষাদফতরের একাধিক কর্তা। এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি রয়েছেন তাঁরা। কিন্তু দুর্নীতির শিকড়ে পৌঁছনোর দিশা দেখতে এখনও ব্যর্থ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর মধ্যেই ঘাড়ে এসে পড়েছে আদালতের ডেডলাইন। সেই নির্দেশকে মাথায় রেখেই তদন্তের জাল গোটাতে তৎপর তাঁরা। তদন্তে মূল মাথার সন্ধানের অপেক্ষায় রাজ্যবাসী।
গ্রুপ ডি-র পর এবার গ্রুপ সি-তে (Group C) চাকরিরত ৮৪২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। শনিবার বিকেল তিনটের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ (WBBSE)। এমনটাই এসএসসি-কে (SSC) নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। এই ৮৪২ জনের মধ্যে ৫৭ জনকে কোনও সুপারিশপত্র দেয়নি কমিশন। এমনটাই হাইকোর্টকে (Calcutta High Court) অবগত করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। এতে আরও বিস্মিত কলকাতা হাইকোর্ট।
জানা গিয়েছে, ৫৭ জন সুপারিশহীন এবং সুপারিশ পাওয়া ৭৮৫ জনের চাকরি বাতিল করতে হবে। শনিবার বিকেলের মধ্যে এই ৮৪২ জনের সুপারিশপত্র বাতিল করে নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। শুক্রবার আদালত জানিয়েছে, আগামী দশ দিনের মধ্যে ওয়েটিংলিস্ট থেকে নতুন নিয়োগ করতে হবে।
আগামীকাল থেকেই এই ৮৪২ জন স্কুলে যেতে পারবে না। করতে পারবেন না স্কুলের কোনও কাজ। স্কুলের কাগজপত্র যা তাঁদের কাছে আছে, অবিলম্বে তা স্কুলকে জমা দিতে হবে শনিবারের মধ্যে। এই মর্মেই নির্দেশ আদালতের। জানা গিয়েছে, গ্রুপ সি নিয়োগে ৪০%-র বেশি চাকরি হারালেন হাইকোর্টের নির্দেশে।
গ্রুপ সি মামলায় (Group C Case) তদন্তের স্বার্থে পাঁচ দিনের সিবিআই হেফাজতে (CBI Custody) স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য। ২২ তারিখ ফের তাঁকে তুলতে হবে আলিপুর আদালতে। শনিবার এই মর্মে নির্দেশ দেন আলিপুর বিশেষ আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়। এদিন শুনানিতে আদালতকে সিবিআই জানায়, 'এই মামলায় চার্জশিট পেশ হয়েছে। কিন্তু তদন্ত যে গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতে এসেছে, তার থেকে এই মামলায় সুবীরেশের (Subiresh Bhattacharya) যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। সেই সব নথি সামনে রেখে তাঁকে জেরার প্রয়োজন রয়েছে।'
যদিও সিবিআইয়ের আবেদনের বিরোধিতা করেন এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যানের আইনজীবী। তিনি জানান, 'আমার মক্কেলকে আবার জেরার কথা বলছে সিবিআই। আমার মক্কেল কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছেন। আগামী ২২ ডিসেম্বর শুনানি। তার মধ্যে আবার সিবিআই হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেছে হাইকোর্টে। আমার মক্কেল তদন্তে সহযোগিতা করছে, তারপরেও কেন আবার হেফাজতে চায় সিবিআই?'
এদিকে, সুবীরেশের হাজিরা নিয়ে সম্প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তাঁকে আলিপুর আদালতে হাজিরার জন্য ১০ দিন সময় দিয়েছিলেন বিচারক। সেই বিচারকের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার সিবিআই অবশ্য উচ্চ আদালতকে জানিয়েছে, শনিবার এসএসসি-র প্রাক্তন কর্তাকে আদালতে হাজির করানো হবে। সেই মোতাবেক এদিন প্রাক্তন শিক্ষাকর্তাকে আলিপুর বিশেষ আদালতে তোলা হলে ৫ দিনের সিবিআই হেফাজত মঞ্জুর হয়েছে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সুবীরেশের হেফাজত পেল কেন্দ্রীয় সংস্থা।
স্কুল সার্ভিস কমিশন না এসএসসি (SSC Case) গ্রুপ-ডি (Group C and D) নিয়োগ-কাণ্ডের তদন্তে থাকা সিবিআইয়ের সিটে (CBI SIT) রদবদল। সিটের ২ জনকে সরিয়ে, চার জনকে নিযুক্ত করলো কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে সিটের দায়িত্বে আনা হল কেন্দ্রীয় সংস্থার ডিআইজি অখিলেশ সিংকে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে বহাল থাকবে। বুধবার অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলএন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Ganguly)। এদিন শুনানিতে এসএসসি গ্রুপ-ডি নিয়োগ-কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিবিআইয়ের আইও-কে ডেকে পাঠায় হাইকোর্ট। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরেই এই পদক্ষেপ আদালতের। জানা গিয়েছে সিবিআইয়ের ডিআইজি অখিলেশ সিং ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।
সিবিআই সিটে রদবদলের ফলে দু'জনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন কেসি ঋষিনামণ এবং ইমরান আশিক। গত কয়েকদিনে নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের ধীর গতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কেন্দ্রীয় এই সংস্থাকে লোকবল বাড়াতেও পরামর্শ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন শুনানিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, প্রায় এক বছর হতে চললো সিবিআই তদন্তের নির্দেশ সেওয়া হয়েছে। জুন মাসে সিট গঠন করা হয়েছে। গ্রুপ-ডি মামলায় মোট ৫৪২ জনের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা মাত্র ১৬ জনকে জেরা করেছে।'
তিনি জানান, প্রত্যেককে জেরা করা হলে আরও তথ্য হাতে আসতো। এর কারণ হতে পারে সিবিআইয়ে আধিকারিকদের অভাব নয়তো দক্ষতার অভাব। এরপরেই সিট পুনর্গঠনে চার জন সিবিআই অফিসারের নাম চান বিচারপতি। ডেপুটি এসপি অংশুমান সাহা, ইনস্পেক্টর বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, প্রদীপ ত্রিপাঠী এবং ওয়াসিম আক্রম খানকে সিটের সদস্য করেন বিচারপতি। ডিআইজি অখিলেশ সিংয়ের নেতৃত্বে সিটের এই চার সদস্য কাজ করবে। অখিলেশ সিংকে বর্তমান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে এখুনি কলকাতা পাঠাতে হবে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে বদলি করা যাবে না। এমনটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি এই মামলার তদন্তে কতটা অগ্রগতি তা ৭ দিনের সিবিআইকে জানাতে হবে। আগামি ২২ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
পুজোর আগে এসএসসি (SSC Recruitment) গ্রুপ সি এবং ডি নিয়োগে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বড় সুখবর। গ্রুপ সি (Group C) পদে পুজোর আগেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Ganguly)। কাউন্সেলিংয়ের দিনেই নিয়োগপত্র তুলে দিতে হবে। এমন নির্দেশ দিয়েছে আদালত (High Court)। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ৯-ই ফেব্রুয়ারি এসএসসি-কে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল গ্রুপ সি-র শূন্যপদে বেআইনিভাবে নিযুক্তদের বরখাস্তের পাশাপাশি বেতন বন্ধ করতে হবে।
হাইকোর্ট গঠিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বাগ কমিটির রিপোর্ট উল্লেখ ছিল, মোট ৫৪৫ জনকে গ্রুপ সি-র শূন্যপদে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। ৯-ই ফেব্রুয়ারিতে ৫৪৫ জনের বেতন বন্ধ-সহ চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, এসএসসি গ্রুপ-সি-র জন্য জেলাভিত্তিক ৫৭৩টি শূন্যপদ রয়েছে। বিচারপতির নির্দেশে সেগুলো বাতিল করা হয়েছিল। বুধবার সেই শূন্যপদ মেধার ভিত্তিতে অবিলম্বে পূরণ করার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২৮-শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই শূন্যপদে নিয়োগ করতে হবে।
এই নির্দেশের পর এসএসসির আইনজীবী সুতনু পাত্র জানান, এত অল্প সময়ের মধ্যে এতো নিয়োগ সম্ভব হবে না। যুক্তি গ্রাহ্য করে বিচারপতি জানান, ১০০ জন করে ধাপে ধাপে নিয়োগ করুন। একই ভাবে এসএসসি গ্রুপ ডি মামলায় ৫৭০ জনকে চাকরি দিতে বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। গ্রুপ-ডি নিয়োগে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল ৫৭৩ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। বরখাস্তের পর সেই পদ এখন শূন্য। সেখানে মেধাতালিকার ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের অবিলম্বে চাকরিতে নিযুক্ত করার নির্দেশ হাইকোর্টের। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই নির্দেশ দিয়েছেন। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২-এর মধ্যে কাউনসেলিং শুরু করার নির্দেশ।
উল্লেখ্য হাইকোর্টের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার নির্দেশের পর ৫৭৩ জনের একজনও হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেননি। মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্রাচার্যর বক্তব্য, ৫৭৩ জনের বেশিরভাগ নিয়োগ ভৌতিক। ফলে স্কুল সার্ভিস কমিশন যথাযথ শূন্যপদের পরিপ্রেক্ষিতে রেশিও মেনটেন করে যেন নিয়োগপত্র দেয়।