ক্লাব না দেশ। এই সংঘাতের প্রভাব এবার পড়ল ফিফার ক্রমতালিকাতেও। দীর্ঘ সময় পর ফিফার ক্রমতালিকার ১০০ নম্বরের বাইরে চলে গেল ভারতীয় ফুটবল। এতদিন ৯৯ নম্বরে ছিল ভারতের অবস্থান। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফিফার নতুন তালিকায় ১০২ নম্বরে ভারতের স্থান। যা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ ভারতীয় কোচ ইগর স্তিমাচ এবং ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী।
বৃহস্পতিবার এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জিতেছে ভারত। অধিনায়কের গোলে এই ম্যাচে জিতে নকআউটের স্বপ্ন দেখছেন ইগর স্তিমাচ। তার মধ্যে, হতাশ জনক এই খবর। ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী জানিয়েছেন, এশিয়ান গেমসের মধ্যে এই ঘটনা নতুন করে ভাবতে হবে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এরপরেও হয়তো ঘুম ভাঙবে না ভারতীয় ফুটবলের। যে সমস্যা অতি দ্রুত সমাধান সম্ভব ছিল, তা অহেতুক জটিল করা হয়েছে বলেই দিল্লির ফুটবল হাউজের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
কান্ড ঘটিয়েছেন ফিফা সভাপতি। নতুন বছরেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ফিফা সভাপতির। ফুটবল সম্রাট পেলের শেষকৃত্যে গিয়ে অদ্ভুত কান্ড করেছেন ইনফ্যান্টিনো। পেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কফিন নিয়ে যাওয়া হয়েছে সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরোতে। নিউ ইয়র্ক কসমসে কেরিয়ারের শেষ দুই বছর খেলার আগে সান্তোসেই খেলেছেন পেলে। মৃত্যুর আগে পেলেও ব্যক্ত করে গিয়েছেন নিজের ইচ্ছার কথা। দেহ যেন নিয়ে যাওয়া হয় ভিলা বেলমিরোতে। সেই কথা মাথায় রেখেই স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয় কফিন।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বহু ভিআইপি ছুটে এসেছেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। এখানেই এসেছিলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট। কফিনের ঢাকনা খুলে রাখা হয়েছিল। খোলা কফিনের সামনে মোবাইল ফোন বার করে সেলফি তোলেন ইনফ্যান্টিনো। পরে পেলের স্ত্রী মার্সিয়া ও পুত্র এডিনহো কে সমবেদনা জানান তিনি। কিন্তু ততক্ষণে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এটাই শেষ নয়। তাঁর আচরণ নিয়ে আগেও সমালোচনা হয়েছে। বিশ্বকাপ ফাইনালের পুরস্কার মঞ্চে ইনফ্যান্টিনোর আচরণ মোটেও সমর্থনযোগ্য ছিল না। বছর শেষ হয়ে নতুন বছর শুরু হয়ে গেল। কিন্তু ইনফ্যান্টিনো বদলালেন না।
পেলে নেই (Pele Demise)। শুধু এই একটা খবর যেন সব আলো নিভিয়ে দিয়েছে। পেলের চলে যাওয়া, একটা জীবন্ত ইতিহাসে শেষ দাঁড়ি পড়ে যাওয়া। একটা সময়, স্পোর্টস কুইজে অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন ছিল, ফুটবল সম্রাট পেলের পুরো নাম কী? এডসন আরান্তেস ডো নাসিমান্তো। বিজ্ঞানী থমাস এডিসনের নামে নামকরণ করা হয়েছিল এডসন। দারিদ্র, জীবনযুদ্ধ নিত্যসঙ্গী ছিল তাঁর। বুট কেনার পয়সাও ছিল না। কাগজের ফুটবল (World Football) বানিয়েই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। তাও বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করলেন ফুটবল দল, দি সুলেস ওয়ান্স।
সেই পেলের ঝুলিতে ১২৮৩ গোলের রেকর্ড। মাত্র ১৫ বছর বয়সে যোগ দিলেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসে। ১৯৬৯ সালের ১৯ নভেম্বর সেই সান্তোসের জার্সিতেই করে ফেললেন কেরিয়ারের এক হাজারতম গোল। সান্তোসের ইতিহাসে ১৯ নভেম্বর দিনটিকে পেলে দিবস হিসেবেই পালন করা হয়। লকার রুমে আলাদাভাবে সংরক্ষিত ফুটবল সম্রাটের লকার। ১৯ বছর বয়সে খেলে ফেললেন বিশ্বকাপ।
কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ জয়, বিশ্বকাপে গোল, হ্যাটট্রিক সব, সব পেলের দখলে। যখন যেখানে খেলেছেন হ্যামলিনের বাঁশিওলার মতোই কাতারে কাতারে মানুষ সম্মোহিত হয়েছে তাঁর ফুটবলের জাদুতে। তৈরি হয়েছে রূপকথার গল্প।
১৯৬৭ সালে পেলে গেলেন নাইজেরিয়া। সুপার ঈগলদের বিরুদ্ধে ম্যাচ। ওদিকে দেশে আগুন জ্বলছে। শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই। শুধু পেলের জন্যই দু'দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হলো। পোপ ফ্রান্সিসকে নিজের সই করা জার্সি উপহার দিয়েছিলেন পেলে। ভ্যাটিকান সিটির সংগ্রহশালায় সযত্নে রাখা সেই জার্সি। সম্রাটকে মাঠে নামতে দেখেছে ফুটবলের মক্কাও। ১৯৭৭, ২৪ সেপ্টেম্বর। মোহনবাগানের আমন্ত্রণে কসমস ক্লাব এলো কলকাতায়। পেলের কসমসকে আটকে দিয়েছিলেন গৌতম সরকার, শিবাজী ব্যানার্জিরা। ২-২ গোলে শেষ হয়েছিল ম্যাচ। কলকাতায় জনবিস্ফোরণ। টুকরো টুকরো স্মৃতির কোলাজ ভেসে বেড়াচ্ছে তিলোত্তমায়।
শোকস্তব্ধ ব্রাজিল। দেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হবে। আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সান্তোস ক্লাবে।। শতাব্দীর সেরা ফুটবলারকে সেখানেই শ্রদ্ধা জানাবেন মানুষ। কারণ পেলে একজনই হয়, তাঁর থেকে কেউ ভালো খেলে ফেললেও। দ্বিতীয় পেলে হওয়ার প্রশ্নই নেই। কারণ ফুটবল সম্রাট নিজেই একবার বলেছিলেন, আমার মা-বাবা বহুদিন আগেই সন্তান উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন।
প্রসূন গুপ্ত: ভারতীয় বিখ্যাতরা কিন্তু চিরকাল দেশপ্রেমী। এই একটা বিষয়ে ভারত অন্য দেশ থেকে অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু ভারত এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবল (Qatar World Cup 2022) খেলার যোগ্য হয়ে ওঠেনি। তাই এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দেশের ফুটবল (Indian Football) নিয়ে আলোচনা অবান্তর। এবারের বিশ্বকাপে (Fifa World Cup) একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যে কোনও রাউন্ডের খেলার আগে প্রতিটি দেশের খেলোয়াড়রা রাষ্ট্রীয় সংগীতে গলা মিলিয়েছেন এবং দেশকে জেতানোর জন্য জান লড়িয়েছেন।
কিন্তু একসময় প্রাক্তন ফুটবলার তথা কোচ বেকেনবাওয়ার বলেছিলেন, দেশপ্রেম রাখতেই হবে কিন্তু অনেক সময়ে খেলতে নেমে দামি খেলোয়াড়রা তা ভুলে ক্লাব ফুটবল খেলতে হবে পা বাঁচিয়ে খেলেন। কারণ ক্লাবগুলি তাঁদের বিশ্বের ধনীদের তালিকাভুক্ত করে। কাজেই তাঁরা যতটা দেশের, তার থেকে অনেকটাই বেশি ক্লাবের। যদিও বেকেনবাওয়ার নিজের দেশের খেলোয়াড়দের প্রশংসা করতে ভোলেননি।
এটা বাস্তব বিশ্বে জার্মানিদের মতো দেশপ্রেমী খুব কমই হয়। যুক্তি, হিটলারের ডাকে সমস্ত জার্মানিরা একাট্টা হয়ে গিয়েছিলো, যদিও তাঁরা জানতো যে হিটলার কাজটা ভুল করছে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলি ভয়ঙ্কর দরিদ্র। এদের দেশ থেকে খুব উঁচু পরিবার থেকে কিশোর খেলোয়াড়রা ফুটবল নিয়ে ভাবে না।নিম্নবিত্ত পরিবার থেকেই ব্রাজিল উরুগুয়ে বা চিলি, আর্জেন্টিনার বেশিরভাগ খেলোয়াড় মাঠে নেমে নাম করেছেন। দারিদ্রই তাঁদের বাধ্য করেছে ইউরোপের ক্লাবগুলির কাছে নিজেদের বিক্রি করতে।
আজকে সেরা গোলরক্ষক মার্টিনেজ ,আর্জেন্টিনার একটি ক্লাবে খেলে নজর কাড়েন। পরবর্তীতে ভেবেছিলেন ফ্রান্সের কোনও দলে খেলবেন কিন্তু ফরাসি দলগুলি মার্টিনেজকে পাত্তা দেয়নি। অন্যদিকে নিজের দেশও এর আগের বড় টুর্নামেন্টগুলোতে মার্টিনেজকে সে ভাবে খেলায়নি। এবারই তাঁর প্রথম বিশ্বকাপে বাজিমাত। আর্জেন্টিনার দেশজ শত্রু ব্রিটেন। কিন্তু ইংলিশ লিগে মার্টিনেজকে আদর করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে চেলসি পরে লিয়েনে কয়েকটি ব্রিটিশ দলে খেলার পর এখন আস্টন ভিলার প্রধান গোলরক্ষক।
মার্টিনেজ স্বপরিবারে ইংল্যান্ডেই বাড়ি করে বসবাস করেন এবং চিরকাল এখানেই থাকবেন বলেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। হুগো লরিসও তাই। মেসির প্রিয় দেশ স্পেন। এখানে তাঁর নিজের বাড়ি রয়েছে। স্পেনকে ভালোবাসার অন্যতম কারণ তিনি জন্মসূত্রে স্প্যানিশ কিন্তু তাঁর আদি পুরুষেরা আর্জেন্টিনাতে চলে এসেছিলেন। নেইমার তো ব্রাজিলে ফিরতেই চান না। ফ্রান্সে নিজের এপার্টমেন্ট আছে। এ রকম বহু উদাহরণ। ব্যতিক্রম জার্মানি হতে পারে না সবাই কারণ পেটের খিদে এবং পকেটে অর্থ কেই বা ছাড়তে চায় !
মুম্বাইয়ের (Mumbai) মেরিন ড্রাইভের গারওয়ার ক্লাবে রবিরাতে সকলে মেতে উঠেছিলেন কাতার বিশ্বকাপের (FIFA World Cup) আনন্দে। কিন্তু মুহূর্তেই সেই আনন্দ পরিণত হল শোকে। রাত পৌনে ১১টা নাগাদ সবাই খেলা দেখতে ব্যস্ত। সেই সময় ছ’তলার সিঁড়ির রেলিং গলে নীচে পড়ে মারা (death) যায় ৩ বছরের হৃদয়াংশ রাঠৌর।
রবিবার ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার ফাইনাল ম্যাচ চলছিল। সকলেই উত্তেজিত মেসির হাতে কাপ দেখার জন্য। জানা গিয়েছে, ওই ক্লাবের সহসভাপতি রাজ পুরোহিত ক্লাবের ৪০০ সদস্যের জন্য সাততলায় জায়েন্ট স্ক্রিন বসান। উল্লেখ্য, রাজ পুরোহিত একজন বিজেপি নেতাও। সকলে সেদিন ম্যাচের আনন্দ উপভোগ করছিলেন। তখনই শুনতে পান ভারী কিছু পড়ার শব্দ। সকলে দৌড়ে যান। গিয়ে দেখেন নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৩ বছরের শিশুটি। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা হৃদয়াংশকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পুলিস সূত্রে খবর, হৃদয়াংশ তার বাবা-মা এবং দিদির সঙ্গে মেরিন ড্রাইভের কাছে ওই ক্লাবে গিয়েছিল। বছর এগারোর একটি ছেলের সঙ্গে ছ’তলায় ওয়াশরুমে গিয়েছিল হৃদয়াংশ। সেখান থেকে ফেরার সময় পা পিছলে সিঁড়ির রেলিং গলে পড়ে যায়। আওয়াজ পেয়ে ক্লাবের নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে আসে। তারপর হৈচৈ পড়ে যায়।
হৃদয়াংশের বাবা অবিনাশ ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। শিশুটির এক আত্মীয়ের অভিযোগ, সিঁড়ির রেলিং কাচ দিয়ে ঘেরা ছিল। কিন্তু রেলিংয়ের একটা জায়গায় কাচ ভাঙা ছিল। সে জায়গাটা ফাঁকা ছিল। খেলা দেখানোর আয়োজনের আগে এই জায়গাটি ঠিক করা উচিত ছিল বলে দাবি শিশুটির আত্মীয়ের। জায়গাটি ঠিক থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না বলে অভিযোগ।
মেরিন ড্রাইভ থানার পরিদর্শক সন্তোষ আভাদ বলেন, "দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এখনও অবধি ক্লাবের বিরুদ্ধে কোনও অবহেলার মামলা দায়ের করা হয়নি। আরও তদন্ত চলছে। মাথায় আঘাতের পরে চিকিৎসা চলাকালীন ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে মৃত্যু হয়েছে। রাত ২ টোর দিকে মারা যায়। ছেলেটির বাবার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।"
সাড়ে তিন দশকের প্রতীক্ষার অবসান। ফ্রান্সকে টাই ব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। দিনের শেষে এই ট্রফি হয়তো বা মারাদোনাকে উৎসর্গ করবেন মেসিরা। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসের পাতায় এখন পেলে, মারাদোনা, জিদান, রোনাল্ডোর সঙ্গেই মেসির নাম ঢুকে গেল। ২০১৪-তে তীরে এসে তরী ডুবেছিল, কিন্তু 2022 মানেই ভামোস ভামোস আর্জেন্টিনা।
লুসেইল স্টেডিয়ামে নাটকীয়, রোমহর্ষক ফাইনালে ১২০ মিনিট পর্যন্ত খেলার ফল ৩-৩। পেনাল্টিতে দুটি গোলের পাশাপাশি ফ্রান্সের তৃতীয় গোলও এমবাপের ঝুলিতে। ১৯৬৬-র পর এই প্রথম কোন ফুটবলার ফাইনালে হ্যাট্রিক করলেন। ব্যস ওইটুকুই, কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রথম ৮০ মিনিট দেশর ছেলেদের সঙ্গে দাপট রেখেই খেলেছে আর্জেন্টিনা। প্রথম ৭৫ মিনিট মাঠেই খুঁজে পাওয়া যায়নি এমবাপে, গ্রিজম্যানদের আক্রমণ।
প্রথম অর্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় স্কালোনির দল। ম্যাচের ৬০ মিনিট পর্যন্ত ফ্রান্সের ঝুলিতে না ছিল কর্নার, না অফসাইড। বল পজেশন থেকে শুরু করে গোলমুখী শট এগিয়ে সেই নীল-সাদাই। আর্জেন্টিনার ৩ গোলের পিছনে অবদান মেসি ২ আর ডি মারিয়া ১। মেসির করা দুটি গোলের মধ্যে একটি আবার পেনাল্টি থেকে। কিন্তু ৮০ মিনিটের মাথায় ডি মারিয়াকে স্কালোনি তুলে নিতেই আক্রমণের ধার ভারে এমবাপের।
প্রথম ৯০ মিনিট শেষ হয় ২-২ গোলে। অতিরিক্ত সময় শেষ হয় ৩-৩ গোলে। অবশেষে ম্যাচের ভাগ্য লিখতে হয় পেনাল্টি শুটআউটে। কোয়ার্টার ফাইনালের মতো এই ম্যাচেও নায়ক আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ই মার্টিনেজ। ফ্রান্সের দ্বিতীয় শট আটকে দিয়ে চাপে ফেলে দেন এমবাপেদের। এরপর শুধু সময়ের অপেক্ষা, কারণ ফুটবল দেবতা বিশ্ব ফুটবলের এল এম -১০-কে নিরাশ করেনি।
কাতার বিশ্বকাপ এই নামে খ্যাত হল আমি 'মেসিরই বিশ্বকাপ।' ঠিক যেভাবে ৯৪ রোমারিও, ৯৮ জিদান, ৮৬ মারাদোনা আর ২০২২ মানে লিওনেল মেসি। ৭৮,৮৬,২০২২ বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিক এখন মারাদোনার দেশে।
কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) শেষ হচ্ছে ১৮ ডিসেম্বর, রবিবার। ভারতীয় সময় রাত ৮.৩০টা থেকে শুরু হবে ফাইনাল ম্যাচ, যুযুধান দুই দল ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা (France-Argentina)। এই ম্যাচ যত না বিশ্বকাপ ফাইনাল, ততবেশি মেসি বনাম এমবাপে লড়াই। একদিকে, ফ্রান্সের কাছে পরপর দু'বার কাপ জেতার হাতছানি, অন্যদিকে ৩৬ বছর পর কাপ খরা কাটানোর সুযোগ নীল-সাদা ব্রিগেডের। পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো সমাপ্তিও (Closing Ceremony) জমকালো করতে চায় ফিফা(FIFA)।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার বিবৃতি, ম্যাচ শুরু কাতারের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায়। অন্তত দেড় ঘণ্টা আগে অর্থাৎ বিকেল নাগাদ সবাইকে আসন গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সমাপ্তি অনুষ্ঠান এতটাই জমকালো হবে যা সারা জীবন মনে থাকবে।
কারা কারা অংশগ্রহণ করবে, সেই তালিকাও দিয়েছে ফিফা। অডিওয় একটি গানের সংকলন চলবে, সেখানে ভিডিওয় থাকবে এই বিশ্বকাপের স্মরণীয় মুহূর্তগুলির কোলাজ। কাতার বিশ্বকাপের থিম সং ‘হায়া হায়া’ গাইবেন আমেরিকার গায়ক ডেভিডো এবং আইশা। এই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন বলিউডের ডান্স ক্যুইন নোরা ফাতেহিও। ‘লাইট দ্য স্কাই’ গানের সঙ্গে নাচবেন তাঁরা। বলিউডে বহু সিনেমায় আইটেম গানের সঙ্গে নাচ করেছেন নোরা।
মরোক্কোর রূপকথা থামিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে (World Cup 2022 Final) ফ্রান্স (France)। এমবাপে (Kylian Mbappe), গ্রিজমান আর বিশ্বকাপের মাঝে দাঁড়িয়ে শুধু লিও মেসি (Lionel Messi)। ফরাসি বিপ্লবের মাঝেও মরক্কোর ফুটবলে মজে গিয়েছে বিশ্ব ফুটবল। হাকিমি, আমবারাতারা ফরাসি দূর্গে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। শেষরক্ষা হয়তো হয়নি। তবে ওয়ালিদ রেগরেগুয়ের (Walid Regragui)দলকে নিয়ে প্রশংসার বন্যা বইছে। মরক্কো কোচ অবশ্য ম্যাচের আগে বেজায় ধর্ম সংকটে পড়েছিলেন। ফ্রান্স বনাম মরক্কো ম্যাচ ছিল ওয়ালিদের জন্মভূমি বনাম পিতৃভূমির ম্যাচ। জন্ম, বেড়ে ওঠা, ফুটবলের প্রথম পাঠ, সবটাই ফ্রান্সে। রাজধানী প্যারিস থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কোবে ইয়েসেন। ওখানেই জন্ম ওয়ালিদের। দিজো, আজাকসিও সহ ফ্রান্সের পাঁচটি ক্লাবেও খেলেছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে খেলেছেন অলিভার জিরুডের সঙ্গে। সেই জিরুড এখন ৫৩টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ফ্রান্সের। টপকে গিয়েছেন থিওরি অঁরিকে। পরে অবশ্য মরক্কোয় পাড়ি ওয়ালিদের। খেলেছেন আটলাস সিংহের জার্সিতে। ম্যাচের আগে ওয়ালিদ মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। চাননি কোনওমতে ফুটবল থেকে ফোকাস সরে যাক। তিনি পেশাদার কোচ। ফ্রান্সকে হারানোর লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু দাপট দেখিয়েও হার মানতে হয়।
তবে আলোচ্য বিষয়, প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে শেষ চারে পৌঁছেছিল মরক্কো। ইতিহাসে লেখা থাকবে ওয়ালিদ আর তাঁর ছেলেদের নাম। তৃতীয় স্থান দখলের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে নামবে মরক্কো। ম্যাচ জিতলে ওয়ালিদের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হবে। ফ্রান্সে জন্মানো মরোক্কান কোচ কি পারবেন আরও একটা মাইলস্টোন তৈরি করতে?
কাতার বিশ্বকাপ সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়ের চোখে। খেলা দেখে কী লিখছেন তিনি
আহ কি খেলাটাই দেখলাম মঙ্গলবার রাতে! খেলা শুরু হয়েছিল আমাদের ঘড়ির রাত ১২.৩০-এ, শেষ হলো ঠিক ২.২০-তে। তারপর বাকি রাতটা আর ঘুম এলো না। স্বাভাবিক এরকম একটা স্বপ্নের ফুটবল ম্যাচ তাও সেমিফাইনাল এবং সঙ্গে মেসি সঙ্গে ৩টে অসাধারণ গোল ভাবতে ভাবতেই সকাল হয়ে গেলো। ফুটবল প্রেমীর চরিত্রের উপর প্রশাসনের আবরণ পরে এবার সকালে প্রশাসনিক কাজে বেরোতে হবে যে। হাওড়ার বাসিন্দা কাজেই ফুটবল আমাদের রন্ধ্রে-অণুতে। আমি কিন্তু খাঁটি ভারতীয় তারপর মোহনবাগানী কাজেই বিশ্ব ফুটবলে কোনও সুনির্দিষ্ট দলের সমর্থক নই। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল ভালো লাগে এবং অবশ্যই লাতিন আমেরিকার ফুটবলের স্কিল। আমার ভালো লাগার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ২০০২-এর পর। ওই শেষ বারের মতো ব্রাজিলের পায়ের কাজ দেখেছিলাম রোনাল্ডো,রবার্তো কার্লোসদের। তারপর একেবারেই ইউরোপিয়ান ঘরানার প্রেসিং ও পাসিং ফুটবল।
মঙ্গলবার রাতে ফের শিল্প ফায়ার এলো মেসি বাহিনীর হাত ধরে। ৩টি গোল, কোনটাকে কার আগে রাখবো এখনও বুঝতে পারছি না। সকলেই ধরে নিয়েছিল ব্রাজিলকে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া কাজেই আর্জেন্টিনা আর কী করতে পারে। এছাড়া লাতিন আমেরিকার দলের চরিত্রই হচ্ছে ডিফেন্স আলগা রেখে আক্রমণে যাও। কিন্তু ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ব্রাজিলের মতো আক্রমণে প্রথমে যায়নি আর্জেন্টিনা। আল্ট্রা ডিফেন্স রেখে খেলা শুরু করেছিল অর্থাৎ ক্রোটদের আক্রমণ করতে দাও পরে আলগা বল ধরে প্রতি-আক্রমণ। ডিফেন্স এবারে যথেষ্ট ভালো আর্জেন্টিনার। গোলে মার্টিনেজ, উইথড্রল স্টপার মাক্যালিস্টার একটু নিচ থেকে রড্রিগো দি'পল।
শুরুতে ডিফেন্সের পথে না গিয়ে ক্রমাগত আক্রমণ গেলো মড্রিচের দল। কিন্তু কিছুতেই বক্সের ভিতরে যেতে পারলো না। ৩০ মিনিট এভাবেই চলার পর হঠাৎ চলতি বল নিয়ে যাওয়ার পথে বক্সে ক্রোট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ, আলভারেজকে ফাউল করে বসে, পেনাল্টি ১০০% | মেসি এসে বাঁ পায়ে গোলকিপারের বাঁদিকের কোন দিয়ে গোল করে এগিয়ে দেন দেশকে। এরপর ৫ মিনিটের মধ্যে ৮৬-র মারাদোনাকে মনে করিয়ে দিলো জুলিয়ান আলভারেজ। নিজেদের অর্ধ থেকে একই বল নিয়ে বুলডোজারের মতো ক্রোটদের পাশে রেখে একার কৃতিত্বে বুটের টো দিয়ে জালে বল জড়ান। আগামীতে মেসি চলে যাওয়ার পর নতুন সুপারস্টার পেয়ে গেলো আলভারেজকে। এরপর আরও একটি গোল হতে পারতো। দুটি গোল খেয়ে মদ্রিচ, পেরিসিচ, কোভাচিচরা খেলা থেকেই যেন বেরিয়ে গেলো। এমনিতেও এই বিশ্বকাপ এদের অনেকের শেষ বিশ্বকাপ।
ব্রাজিলের সঙ্গে খেলে এনার্জিটা ছেড়ে এসেছিলো কি? তৃতীয় গোল সেই ৮৬-র মারাদোনাকে মনে করিয়ে দিলেন মেসি। ডান দিক থেকে গতি বাড়িয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার জাস্কো গার্ডিওলকে ঘাড়ের কাছে রেখেই একের পর এক ইনসাইড আউটসাইড ডজ এবং লম্বা স্প্রিন্ট। একটা সময় গার্ডিওলকে ডজ করে পিছনে ফেলে বারের এক প্রান্তে গিয়ে ঠিকানা লেখা পাস বাড়ালেন আলভারেজকে। গোলমুখ খুঁজতে ভুল করেননি বছর বাইশের আলভারেজ। তিনি ঠিকানা লেখা পাস জালে জড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন বোঝালেন এবার আমি এসে গিয়েছি।
সেরা খেলা দেখলাম মঙ্গলবার মধ্যরাতে। তুলনাহীন, এবারে কাপ আর ঠোঁটের মধ্যে যতটুকু ফারাক রইলো রবিবাসরীয়তে। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
লালকার্ড দেখলেন রেফারি (referee)। বিশ্বাস হচ্ছে না? এটাই সত্যি। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় সত্যি। স্প্যানিশ রেফারি আন্তোনিও মাতেউ লাহোজকে (Antonio Mateu Lahoz) ফ্রিজ করলো ফিফা (Fifa World Cup 2022)। চলতি বিশ্বকাপে আর কোনও ম্যাচ খেলাতে পারবেন না তিনি। কেন এমন সিদ্ধান্ত? কী করেছেন তিনি?
আর্জেন্টিনা সমর্থকদের কাছে কার্যত ভিলেন এই রেফারি। বলা হচ্ছে, বাঁশি হাতে ফাঁসি দিয়েছেন তিনি। আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন লাহোজ।। দুটো দল মিলিয়ে ১৮ জনকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। তার মধ্যে নীল সাদা শিবিরের ১০ জন রয়েছেন। আটজন ফুটবলার ছাড়া কোচ স্কালনি আর ডেপুটিও কার্ড দেখেছেন। কার্ড দেখেছেন লিও মেসি। সবচেয়ে বড় কথা পরপর ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখায় আকুনা আর মন্ত্রিয়েলের সার্ভিস পাবে না আর্জেন্টিনা। ফলে লেফট ব্যাক নিয়ে প্রবল চিন্তায় আর্জেন্টিনা কোচ।
নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন মেসি। এমনিতে বিনয়ী। বিতর্ক থেকে শত হাত দূরে থাকেন। কিন্তু তিনিও অভিযোগ করেছিলেন, এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমন রেফারিং হলে মুশকিল। ফিফার উচিত খেয়াল রাখা। দায়িত্ব দেওয়ার আগে ফিফার ভেবে দেখা উচিত ছিল। মেসির পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন গোলরক্ষক মার্টিনেজ। একহাত নিয়েছিলেন রেফারিকে।
এরপর নড়েচড়ে বসেছে ফিফাও। ফ্রিজ করা হয়েছে আন্তোনিও লাহোজকে। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, আর্জেন্টিনা বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ পরিচালনা করবেন ইতালিয়ান রেফারি অরসাতো। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা বনাম মেক্সিকো ম্যাচ খেলিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আয়োজক দেশ কাতার আর ইকুয়েডোর। সেই ম্যাচেও দায়িত্বে ছিলেন ইতালির অরসাতো। প্রশ্ন একটাই। হাইভোল্টেজ সেমিফাইনালে কি পাশমার্ক পাবেন এই রেফারি?
কাতার বিশ্বকাপ তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তীর চোখে। খেলা দেখে কী লিখলেন তিনি
ধনী মহাদেশের মধ্যে প্রথম স্থানে নিঃসন্দেহে ইউরোপ। ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স তো বটেই ইতালি, স্পেন, সুইৎজারল্যান্ড ইত্যাদি দেশও যথেষ্ট ধনী। কাজেই খেলাধুলার ক্ষেত্রে এরা দেদার খরচ করে থাকে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ দেশ বামপন্থার হাত ধরে। ব্যতিক্রম ছিল না যুগোশ্লোভিয়া। ৮০-র দশকে এই পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রবল ভাবে দেখা যায়। সাম্যবাদের নামে এই দেশগুলিতে চলতো রীতিমতো একনায়কতন্ত্র। যা কিছু সব বুঝে নেবে বামপন্থী দলগুলো বা কম্যুনিস্ট পার্টি। এলো ১৯৯১, সব ভেঙেচুরে গেলো। যুগোশ্লোভিয়ার অস্তিত্বই রইলো না। এর মধ্যে একটি দেশের জন্ম হলো ক্রোয়েশিয়া। দ্রুত বামপন্থা ছেড়ে তার ন্যাটোর অর্থাৎ আমেরিকার হাত ধরে ফেললো। ধীরে ধীরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এবং বাণিজ্যে উন্নতি আসতে শুরু হলো। ক্রোয়েশিয়ার মূল সম্পদ শিপ বিল্ডিং। এছাড়া ফুড প্রসেসিং, মেডিসিন, আইটি, বায়ো-কেমিক্যাল এবং কাঠের ব্যবসায়ে দ্রুত উন্নতি করে বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করলো। একইসঙ্গে গড়ে তুললো ফুটবল খেলার উন্নয়ন। ক্রোয়েশিয়াকে ইউরোপের উচ্চ মধ্যবিত্ত বলা হয়ে থাকে।
আসলে যুগোস্লাভিয়া ফুটবল দলটি যথেষ্ট শাক্তিশালী দল ছিল। ক্রোয়েশিয়ার জন্ম হওয়ার পর অধিকাংশ ফুটবলার চলে এসেছিলেন তাদের দেশে। পরবর্তীতে ক্রোয়েশিয়া বর্তমানে ইউরোপের নামি দল এবং গত বিশ্বকাপের রানার্স আপ। মাঝমাঠের মদ্রিচকে সোনার বল দেওয়া হয়েছিল। সেই ক্রোয়েশিয়া এবারে ব্রাজিলকে হারিয়ে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি। কেমন খেলবে তারা?
এবারও তাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী। মাঝমাঠে মদ্রিচ ছাড়াও রয়েছেন ব্রুনো পেটকোভিচ, কোভাচিচ, ব্রোনেভিচ ইত্যাদি। তাদের ডিফেন্সও যথেষ্ট ভালো। গোলে বিশ্বমানের গোলরক্ষক লিভাকোভিচ ইতিমধ্যে পেনাল্টি বাঁচিয়ে প্রথমে জাপান পরে ব্রাজিলকে বিদায় করে দিয়েছে। এটা বাস্তব যে আর্জেন্টিনায় মেসি ডি'মারিয়ার মতো খেলোয়াড় আছে। কোচ ডালিচ জানিয়েছেন যে, আলাদা করে কারও পিছনে পুলিশম্যান মার্কিং করা হবে না। জোনাল মার্কিংয়ে থাকবেন সবাই, আর্জেন্টিনা কিন্তু এই দলকে উড়িয়ে দিতে পারে না। এ স্বত্বেও ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে একজনই তিনি লিওনেল মেসি। গুরুত্বপূর্ণ খেলায় ভাগ্যনিয়ন্ত্রক মেসি ছাড়া আর বিশ্ব ফুটবলে আছে কে? (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
কাতার বিশ্বকাপ অভিনেতা-বিধায়ক চিরঞ্জীত চক্রবর্তীর চোখে। কী লিখছেন তিনি
অনেক বিশেষজ্ঞই বিশ্বকাপ নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। কে হতে পারে চ্যাম্পিয়ন, তার ভবিষ্যৎবাণীও চলছে কিন্তু আমি এদের দলে নেই। খেলা বিশেষ করে আজকের ফুটবল নিয়ে আগাম মন্তব্য করাটা অনুচিত বলেই মনে করি। লক্ষ্য করে দেখুন, কি খেলাটাই প্রথম রাউন্ডে খেললো এশিয়া-আফ্রিকার দলগুলি। যেকোনও সময়ে হারিয়ে দিলো তথাকথিত চ্যাম্পিয়ন দলগুলিকে। জাপানের খেলা তো আমার দারুণ লেগেছে, মনে হয় বাঙালি ফুটপ্রেমীদের মনে দাগ কেটেছে জাপান। গত রাতের লাতিন আমেরিকার দল দু'টির কী অবস্থা! ব্রাজিল শেষ মুহূর্তে ৩ স্ট্রাইকিং খেলোয়াড়দের তুলে নিলো, তখন হাতে ছিল মাত্র ৬ মিনিট। কোনও মানে হয়! একটা কথা এই নেইমারকে কখনোই আমার সর্বকালের সেরাদের মধ্যে ফেলবো না।
আর্জেন্টিনার বিষয়েও একই ঘটনার জেরক্স। দিব্বি এগিয়ে থেকেও দু গোল খেয়ে গেলো মেসির দল। নেদারল্যান্ডের দ্বিতীয় গোলটিতে অসাধারণ স্পটকিকের ফসল। যাই হোক এবারে নজর বাকি দুই কোয়ার্টার ফাইনাল।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, সিনেমা জগতের অভিনেতা থেকে রাজনীতির বিধায়ক হলেও খেলার প্রতি আকর্ষণ আমার খুব বেশি। শুধু বিশ্বকাপ নয় ইউরোপিয়ান ক্লাব কাপ ফুটবলের খেলাও নিয়মিত রাত জেগে দেখে থাকি যার ফলে আজকের বিশ্বকাপারদের খেলা দেখে আমি অভ্যস্থ। আজকের দুটি ম্যাচ জমজমাট। প্রথমে ফ্রান্স বনাম ইংল্যান্ডের খেলার মধ্যে সামান্য হলেও আমি ইংলিশম্যানদের।
এটা সত্যি যে ফ্রান্সের দলটি দারুণ ফর্মে আছে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এরাও কিন্তু গ্রুপ লিগে হেরেছে। ওদের দুর্বলতা ইংল্যান্ড জানে। ইংল্যান্ড একমাত্র দল যারা টোটাল ফুটবল খেলছে, একটি ম্যাচেও হারেনি। গোল থেকে ডিফেন্স হয় মিডফিল্ড এবং স্ট্রাইকার সবাই চনমনে, দ্রুত দৌড়ায় ৭ জন একসঙ্গে আবার ৬ জন দ্রুত নেমেও আসে। অন্যদিকে এমব্যাপে, জিরুডরা ঠিকই। কিন্তু অনেকটাই বাঁ দিক থেকে এমবাপের আক্রমণের উপর নির্ভর করে ফ্রান্স।
ওকে আটকাতে নিশ্চই কিছু প্ল্যান আছে কোচ সাউথগেটের মাথায়। অন্যদিকে পর্তুগাল ও মরক্কো। খুব চাপের খেলা, আমি মনে করি রোনাল্ডো তাঁর সেরা ফর্ম হারিয়েছে। দৌড়চ্ছে ঠিকই কিন্তু যে প্রেসিং ফুটবল খেলা উচিত তা কোথায় রোনালদোর মধ্যে? তবে নজর থাকবে নতুন তারকা রামোসের উপর। মরক্কো যদি খেলাটাকে কোনওভাবে টাইব্রেকে নিয়ে যায় তবে বিপাকে পড়বে রোনাল্ডো বাহিনী। অতএব ভবিষ্যৎবাণী বৃথা। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর চোখে। খেলা দেখে কী লিখছেন তিনি
বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের (Quarter Final) দুটি ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পর একটাই স্লোগান হওয়া উচিত 'কাতার তুমি কার'? এবার বিশ্বকাপ নাটকীয়তায় ভরা। কে যে কখন কাকে হারিয়ে দেবে বা দিতে পারে পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। প্রতিটি ম্যাচের আগে মনে হয়েছে অমুক দল জিততে পারে। কিন্তু খেলা শেষে দেখা গেলো তমুক দল দুর্দান্ত খেলে জিতে গিয়েছে। এই টুর্নামেন্টে গ্রুপ লিগের পর জার্মানি নেই, যোগ্যতা অর্জন করেনি ইতালি। বিদায় নিয়েছে বেলজিয়াম, স্পেন এবং শুক্রবার রাতে বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেলো ব্রাজিলের জন্য। হলুদ সবুজ পতাকাগুলি আজ সকাল রাস্তার মোড়ে মোড়ে যেন হঠাৎই জৌলুশ হারিয়েছে। ব্রাজিলের ভক্তদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে, হয়তো কোনও নিকট আত্মীয় চলে গেছে গত রাতে।
আমরা ওপার বাংলার, ছেলেবেলা থেকে দেখেছি বাড়িতে লাল-হলুদ সংস্কৃতি। আমি তো আর পরিবারের বাইরে নই কাজেই...। বাবাদের আমলে বিদেশি খেলা দেখার সুযোগ ছিল না, টিভিতে পাওয়া যেত না। কিন্তু ১৯৭৮ থেকে, তখন আমার বাল্যকাল, দেখেছি কিছু বিশ্বকাপের খেলা। সেই থেকে শুরু, চলছে আজ অবধি। আমার লাতিন আমেরিকার ফুটবল ভালো লাগে চিরকালই। ব্রাজিল ,আর্জেন্টিনা কিংবা উরুগুয়ের খেলা মানেই পায়ের শিল্প। এবার কিন্তু তার অভাব প্রকট হয়েছে বারবার। কোথায় বিপক্ষের ডি বক্সে একচেটিয়া আক্রমণ থাকবে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার, তার জায়গায় স্থান পেয়েছে অজস্র পাসিং ফুটবল। নেইমার চেষ্টা করেছিল, ব্রাজিলের আক্রমণ, বল পজেশন নিশ্চয় ক্রোয়েশিয়ার থেকে বেশি ছিল। কিন্তু ক্রোটরা খেলাটাকে এলোমেলো করে দিলো নিজেদের মধ্যে প্রচুর দিশাহীন দিশাহীন পাশ খেলে। দ্বিতীয়ার্ধে নেইমার বাহিনী খেলা ধরলো। গোল এলো কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে। একটা জিনিস লক্ষ করলাম সারা মাঠজুড়ে খেললো গত বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় লুকা মদ্রিচ। ৩৭ বছরের অধিনায়কই ব্রাজিলের খেলার ছন্দ নষ্ট করে দিলেন, সারা মাঠের প্রতি অঞ্চল ঘুরে দৌড়ে।
আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ব্রাজিলকে ওই সময়েই গোল খেতে হলো। তখন খেলা শেষ হতে আর বাকি নেই। ক্রোটরাতো এটাই চাইছিলো। ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকভিচ বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাঁর উপরেই ভরসা করে জাপানকে টাই ব্রেকে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া, এবারে বিদায় ব্রাজিলের।
এদিকে, আর্জেন্টিনার খেলা মানেই মেসি। কিন্তু প্রথমে নেদারল্যান্ড খেলায় অসংখ্য পাস খেলে চাপে রাখলেও মেসি বাহিনী প্রথম অর্ধের শেষে খেলা ধরে নিয়েছিল। সতীর্থ মলিনাকে দুর্দান্ত পাস বাড়িয়ে গোল মুখ খুলে দেন এলএম-১০। প্রথম অর্ধেই ১-০ আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে আকুনহাকে বক্সে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। নিজেদের ফলে খেলার ফল ২-০ করতে ভুল করেননি লিও। কিন্তু ম্যাচের ৮০ মিনিট পর্যন্ত ২-০ এগিয়ে থেকেও কি খানিকটা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস গ্রাস করেছিল স্কালোনির ছেলেদের। ডিফেন্সের দুর্বলতা খুঁজে ডাচরা দুটি গোল শোধ করে দিলো। অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিট অবশ্য ২-২ স্কোর লাইন রেখে টাই ব্রেকে ৪-৩ গোলে কমলা ব্রিগেডকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালের ছাড়পত্র পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে নায়ক অবশ্য আরজেন্টাইন গোলরক্ষক ই মার্টিনেজ। তবে একটি কথা বলবো টাইব্রেকে কোনও দলের মান বোঝা যায় না। কিন্তু এটাই এবারের বিশ্বকাপের ট্যাগলাইন। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
শুক্রবার সন্ধ্যার কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইবেকার হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ব্রাজিলের (Brazil lost to Croatia)। ছ'টি বিশ্বকাপ (World Cup 2022) জেতার লক্ষ্যমাত্রা এই মুহূর্তে দেরাজে তুলে রাখতে হয়েছে নেইমারদের। এদিকে, রুদ্ধশ্বাস এই ম্যাচে এক্সট্রা টাইম অবধি গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে গোল দিয়ে ম্যাচ টাইবেকার অবধি নিয়ে যায় লুক মদ্রিচের দল। অপরদিকে ব্রাজিল ম্যাচের রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগে শুক্রবার মধ্যরাতে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা, প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ড (Brazil versus Netherland)। কমলা ব্রিগেড বনাম নীল-সাদা ম্যাচ দেখতে রাত জাগে কলকাতা। প্রথম অর্ধ আর্জেন্টিনা এক গোলে এগিয়ে গেলেও, প্রিয় টিমের খেলা দেখে মন ভরেনি ফুটবলপ্রেমীদের। দ্বিতীয় অর্ধে পেনাল্টিতে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু খেলা শেষের ২০ মিনিট নীল-সাদার ডিফেন্সের উপর চাপ বাড়িয়ে পিছিয়ে থেকেও ম্যাচ ড্র করে ডাচরা।
খেলা গড়ায় এক্সট্রা টাইম পর্যন্ত। আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে নাটকের পর নাটক। নেদারল্যান্ডসকে ৪-৩ ব্য়বধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে গেলেন মেসিরা। এই ম্যাচে মেসিকে রুখে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ভাগ্য নিজের দিকে টানার চেষ্টা করেছিলেন ডাচ কোচ লুই ফান গল। জোনাল মার্কিংয়ে থাকা মেসি বল ধরলেই ছেঁকে ধরছিলেন তিন থেকে চার জন। কিন্তু ডাচ টিমের সব কৌশল ভোতা করে মলিনাকে দিয়ে গোল করালেন মেসি। নিজেও আবার পেনাল্টি থেকে গোল করলেন।
দু’দলই রক্ষণ মজবুত রেখে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিল। নেদারল্যান্ডস দু’প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠছিল, প্রথম ২০ মিনিটে দু’বার আর্জেন্টিনার বক্সে ঢুকে পড়েন মেম্ফিস দেপাই, কোডি গাকপোরা। কিন্তু খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি এমিলিয়ানো মার্টিন। অন্যদিকে থ্রু বলে ধরে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিল আর্জেন্টিনা। মেসির পায়ে বল পড়লেই অন্তত তিন জন মিলে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করছিলেন।
দু’দলেরই খেলা তৈরি হচ্ছিল নিজেদের রক্ষণ থেকে নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাসে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করছিলেন ফুটবলাররা। তার পরে আক্রমণে উঠছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের রক্ষণ জমাট থাকায় গোলের সুযোগ তৈরি হচ্ছিল না। মাঝে মধ্যে খেলার গতি খুব মন্থর হয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত মেসির জাদুতে ৩৪ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। প্রায় ৩০ গজ দূরে বল ধরেন মেসি। ঘাড়ের কাছে চার জন ডিফেন্ডারকে নিয়ে সামনের দিকে এগোন। তার পর কোনাকুনি বল বাড়ান বক্সে থাকা মলিনার দিকে। গোলরক্ষকের ডান দিক থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন মোলিনা।
কাতারে কাপযুদ্ধ। বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) যত ফাইনালের দিকে এগোচ্ছে তত টানটান উত্তেজনা বেড়েছে। আর্জেন্টিনা না ফ্রান্স? ব্রাজিল না ইংল্যান্ড? চায়ে পে চর্চায় ঝড় তুলেছে। মেসি, নেইমার, এমবাপের আকাশে স্টার ওয়ার। এর মাঝেই নিঃশব্দে বিদায় নিচ্ছে স্টেডিয়াম ৯৭৪ (974 Stadium)। নেহাৎ সংখ্যা নয়, কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত স্টেডিয়াম। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ব্রাজিল হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াকে। সরকারিভাবে ওই ম্যাচটাই ছিল স্টেডিয়াম ৯৭৪-এর শেষ ম্যাচ। আর ম্যাচ হবে না। তাই ব্রাজিল-দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচের পর খোলা শুরু স্টেডিয়াম ৯৭৪।
ঐতিহাসিক! কারণ, ফুটবলের ইতিহাসে এই প্রথম শিপিং কন্টেনার দিয়ে তৈরি হয়েছিল একটা গোটা স্টেডিয়াম। বালির বুকে সবুজ গালিচার মতো মাঠ। এবার পাততাড়ি গোটানোর পালা। জানা গিয়েছে, উরুগুয়ে বা আফ্রিকায় পাড়ি দেবে ৯৭৪। ওখানেই আবার গড়ে উঠবে নতুন স্টেডিয়াম। এমনিতেই ইনভেস্টমেন্টে রেকর্ড গড়েছে কাতার। সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ। আর পেট্রো মনির ট্রাম্প কার্ড ওই স্টেডিয়াম।
কাতারের আন্তর্জাতিক ডায়াল কোড ৯৭৪। সেটা মাথায় রেখেই এই স্টেডিয়াম তৈরী করেছিল স্প্যানিশ সংস্থা। এবার বিদায় নেওয়ার পালা। শুধু অঙ্কের বিচারে থেকে যাবে দুটো দারুন তথ্য। রাশিয়া বিশ্বকাপে যা খরচ হয়েছিল তার সতেরো গুণ বেশি খরচ হয়েছে কাতারে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে ইনভেস্টমেন্টের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৭০৭ কোটি ২৭ কোটি টাকা। এতদিন পর্যন্ত এটাই ছিল সবচেয়ে বেশি ইনভেস্টমেন্টের বিশ্বকাপ। সব ছাপিয়ে গেল কাতার। আর ছাপিয়ে গেল ৯৭৪। কন্টেনার স্টেডিয়াম উড়ে যাচ্ছে অন্য দেশে।