Breaking News
Abhishek Banerjee: বিজেপি নেত্রীকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের অভিযোগ, প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জাতীয় মহিলা কমিশনের      Convocation: যাদবপুরের পর এবার রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সমাবর্তনে স্থগিতাদেশ রাজভবনের      Sandeshkhali: স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন 'সন্দেশখালির বাঘ'...      High Court: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল, সুদ সহ বেতন ফেরতের নির্দেশ হাইকোর্টের      Sandeshkhali: সন্দেশখালিতে জমি দখল তদন্তে সক্রিয় সিবিআই, বয়ান রেকর্ড অভিযোগকারীদের      CBI: শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ! তদন্তে সিবিআই      Vote: জীবিত অথচ ভোটার তালিকায় মৃত! ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ধূপগুড়ির ১২ জন ভোটার      ED: মিলে গেল কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর, শ্রীঘই হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ ইডির      Ram Navami: রামনবমীর আনন্দে মেতেছে অযোধ্যা, রামলালার কপালে প্রথম সূর্যতিলক      Train: দমদমে ২১ দিনের ট্রাফিক ব্লক, বাতিল একগুচ্ছ ট্রেন, প্রভাবিত কোন কোন রুট?     

ECI

Holiday: চলুন ছুটির দিনে একবার নস্টালজিয়ায় ফিরে যাওয়া যাক...

সৌমেন সুরঃ ছুটির দিনে একটু অন্যভাবে দিন কাটাবো, এটা ভাবতেই শরীরের তন্দ্রীগুলো আনন্দে ঝনকে উঠলো। ছুটি মানে একটু থামা। ছুটি মানে চলমান জীবনে ক্ষনিকের বিশ্রাম। বর্তমানে চলমান জীবনে যা ঘটছে- গা যেমন শিউরে উঠছে তেমনি আতঙ্কও বাড়ছে। দেশের বর্তমান অবস্থা বড় ভয়াবহ। কখন যে কী হয়, আমরা কেউ জানি না। যাইহোক এমনি ডামাডোল অবস্থায় হাতে আসছে একটি ছুটির দিন। ভাবতেই মনটা পুলকে ভরে উঠছে। ছুটি মানে জীবনের মধ্যে ছুটি, ছুটি মানে জীবনের ছুটি নয়।

অবশেষে হাতে এলো ছুটির দিন। মহররমের ছুটি। মানে অফিস ছুটি। এদিকে শ্রাবণ মাস। বৃষ্টি ঝরার মাস। অনর্গল কোথায় বৃষ্টি পড়বে তা নয়, মাঝে মাঝে একটু বৃষ্টি, একটু রোদ, আবার মন ভার করে থাকা উড়ো মেঘের আনাগোনা। গ্লোবালাইজেশনের জন্য সব ভালো মুহূর্তগুলো হারিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে। কী আর করা। সকাল হতেই জলখাবার খেয়ে অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবো বলে, সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমি অজ গ্রামে থাকি। আমার সব বন্ধুরা শহরে থাকে। আমার বাড়ি থেকে শহর প্রায় চার মাইল। যাইহোক এক বুক আনন্দ নিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলেছি। আলের দুপাশে ধূ ধূ মাঠ। শুধু ধান আর পাট গাছ সারি সারি। যেদিকে চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। বৃষ্টির জল পড়ে প্রত্যেক গাছের পাতা যেন যৌবনবতী হয়ে গেছে। মাতাল হাওয়ায় ধানের শীষগুলো মাতালের মতো দোল খাচ্ছে। মনটা ভারী ভালো লাগছে। কারণ একটাই- আড্ডায় ছুটিটা উপভোগ করবো।

কথায় আছে- 'Man proposes, God disposes।' হালকা মেঘলা আকাশে হঠাৎ ভিড় করে আসে,  পাহাড় প্রমাণ কালো মেঘ। আমি প্রাণপণে সাইকেল চালাতে শুরু করলাম। আমাকে শহরে পৌঁছতেই হবে। কিন্তু হায় যখন দেখলাম পুকুরের হাঁস গুলো সাঁতার কেটে তাড়াতাড়ি ঘরের দিকে এগোতে থাকছে, তখন বুঝলাম- আমার Journey এখানেই শেষ। দেখতে দেখতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমি সাইকেলটা নিয়ে একটা বটগাছের তলায় দাঁড়ালাম। ভিজছি অঝোরে। আর ভাবছি ছুটির দিনটা বৃথা গেল। ভাবনাটা এই মুহূর্তে আপনাদের হতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমার নয়। কারণ দূরে একঝাঁক বাচ্চা ছেলে পুকুরে সাঁতার কেটে খেলছে। আনন্দ করছে। ওদের দেখে তাৎক্ষণিক আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। আমিও তো একসময় ওদের মতই উদ্দাম ছিলাম। মুহূর্তে মনটা আমার আনন্দে ভরে গেল। ছুটির দিনটা আমার বৃথা গেল না। নাই বা দিতে পারলাম আড্ডা। কিন্তু প্রকৃতি তো এখন আমার সঙ্গে ছিল। একেবারে লাজুক বধূর মতো। এই উপলব্ধি যে আমার মনের একটা দরজা খুলে দিল, যা আগের মুহূর্ত পর্যন্ত টের পাইনি।

10 months ago
Uttam Kumar: উত্তম কুমার আজও বেঁচে আছেন-কিছু কথা আর ফিরে দেখা

সৌমেন সুর: যার সম্বন্ধে লিখতে বসেছি তিনি বাংলার মানুষের একমাত্র ম্যাটিনী-আইডল। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছেন বুঝি? না ভাবনার কিছু নেই। ম্যাটিনী আইডল বাংলা সিনেমা জগতে একজনই, সে উত্তম কুমার। কেন উত্তম কুমার? অন্যদেরই বা মানুষ মনে রাখেন না কেন!  সিনেমার জগতে মহানায়ক তিনি উত্তম কুমার। তিনি 'নায়ক' ছবি করেছেন, আবার 'অমানুষ' করেছেন। দুটো ছবি আকাশ পাতাল তফাৎ। অথচ উত্তম কুমারের বিচরণ সর্বত্র। 'নায়ক' এর মত ছবিতে সুপার্ব অভিনয়। উত্তম কুমার আবার অমানুষ ছবিতেও অনবদ্য। আসলে মহানায়ককে বিচার করা বড় দুষ্কর। বাংলা ছবিতে এমন এমন কিছু চরিত্র করেছেন যা আলোচনার ঊর্ধ্বে। তিনি এক কথায় সিনেমা জগতে সব্যসাচী ছিলেন, গান গাইতে পারতেন, সুর দিতে পারতেন, ছবি প্রযোজনা করেছেন, এমনকি পরিচালনা পর্যন্ত করেছেন। এরপরেও তো আছে অভিনয়। আজ ৪৩ বছর হয়ে গেল উত্তম কুমার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এত বছর বাদেও তিনি সমান জনপ্রিয়। 'নায়ক' ছবিতে ওই অসম্ভব সুন্দর সংলাপ ডেলিভারি আজও বহু মানুষের মুখে মুখে, 'I will go to the top, The top, The top'। ৪৩ বছর পেরিয়েও মুছে যাননি মহানায়ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাণিজ্যকারি সংস্থা ছবি প্রদর্শন করেন সেই উত্তম কুমাররেরই। এতেই বোঝা যায়, জনপ্রিয়তা এতটুকু ভাটা পড়েননি। তাঁর ক্রেজ তাঁর ইমেজ, আজও আমরা সিনেমার অভিনয় সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে উত্তম কুমারের প্রসঙ্গ চলে আসে। বেশ কিছু ছবির মহানায়কের অনবদ্য অভিনয় বাংলার মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। হয়তো ছবি বিশ্বাসকে মানুষ ভুলে যেতে পারেন, কিন্তু উত্তম কুমার বাংলার মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আরও অনেক অনেক দিন।

অভিনয় পর্ব ছাড়া দান ধ্যান কর্মে ছিলেন মানুষের মনের মনিকোঠায়। অবশ্য এই পর্বটি ছিল অত্যন্ত গোপন অবস্থায়, কেউ জানতে পারতেন না, একমাত্র গ্রহীতা ছাড়া। যুগে যুগে অবতার যেমনই মাটিতে নামেন তার কর্ম মানুষের কাছে ফলপ্রসূ করতে। তেমনই উত্তম কুমার বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়ে তার কর্মের শিষ্টতা দেখে আজও মানুষ তাকে ভুলতে পারেননি। তিনি যে কত বড় মানুষ ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়, তার মহাপ্রস্থানের পথের সময় চাক্ষুষ কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল, মহানায়ককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। উত্তম কুমার একবারই জন্ম নেয়, এবার হয়ত তাকে পাবো, অন্য নামে অন্য কোনও খানে, তবে বাংলার মানুষের কাছে উত্তম কুমার ছিলেন, আছেন, থাকবেনও।

10 months ago
Youth: নবপ্রজন্ম সাহিত্যের হাত ধরে সমাজপথে এগিয়ে চলুক

সৌমেন সুর: এই বিষয়টি নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। তারাই দেশের আগামী শেকড়। তাদেরকে সুন্দরভাবে বাঁচতে হবে। বাঁচতে গেলে রসদ চাই। সেই রসদের একটা অংশ- সাহিত্য। সাহিত্যকে জানতে হবে, বুঝতে হবে। এই প্রজন্ম, মন্মথ রায় কে জানে না। রমাপদ চৌধুরীকে চেনে না, প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের নাম শোনেনি, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেনে না- শুনে আমি ভীষণ স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এরপর ভাবলাম, আমার কর্তব্যটুকু অন্তত করি। সাহিত্যের উপযোগিতাটা তুলে ধরি।  প্রথমে বলি,  ' Feeling is not a particular content, but the whole universe Subspecie intuition। ' সাহিত্য সমাজের দর্পণ, তবে হুবহু অনুকরণ নয়, এর সাথে আছে কবি- সাহিত্যিকের আপন মনের মাধুরী, তখনই সৃষ্টি হয় ধ্রুপদী সাহিত্য। সাহিত্যের অর্থ হলো পারস্পরিক যোগ। একেরসঙ্গে বহুর মিলন ঘটিয়ে সাহিত্য আত্মীয়তার সূত্র তৈরি করে। তবে বর্তমানে ব্যস্ত জীবনে সাহিত্য পাঠের অবকাশ কমলেও এর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। মানুষ আর প্রকৃতি নিয়েই সাহিত্যের জীবন। সাহিত্য না পড়লে জ্ঞান সঞ্চয় হয় না। একজন জ্ঞানী মানুষ আর একজন অজ্ঞান মানুষ আকাশ পাতাল তফাৎ। 

সাহিত্য সমাজের মাটিতে ফোঁটা ফুল। তবে হুবহু দর্পণ নয়, তার সঙ্গে মিশে আছে আপন মনের মাধুরী। সাহিত্য সমাজের একটি বিচিত্র সুন্দর সংগ্রহশালা। এই সংগ্রহশালা থেকে আহরণ করে নিতে হবে অজানা তত্ত্ব। আসলে পড়তে হবে। পড়লে দোষ কোথায়!  পড়লে বরং জ্ঞান বাড়ে। না পড়লে অজ্ঞানী হয়ে থাকতে হয়। কোনটা শ্রেয়, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। কে নাট্যকার, কে কবি, কে সাহিত্যিক, কে লেখক- তারা কি লিখেছেন, তারা কেন নক্ষত্র, এগুলো বুঝতে হবে। জানতে হবে। 

সবশেষে বলি, সাহিত্য হল আমাদের আনন্দের আশ্রয়, অবকাশের সঙ্গী, দুঃখের সান্ত্বনা এবং ন্যায় বিচারের হাতিয়ার। সাহিত্য আমাদের হৃদয়কে প্রস্ফুটিত করে। নব প্রজন্মকে অনুরোধ- সাহিত্যকে মনে প্রাণে ভালোবেসে- অফুরন্ত জ্ঞান আহরণ কোরে, নিজেকে প্রকাশ করুন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে।

10 months ago


Special: গুপ্ত বৃন্দাবনে ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মা সারদা

সৌমেন সুর: আজ বিষয়টা একটু অন্যদিকে ঘোরাবো। প্রতিদিন খুনখারাবি, মারামারি, মিছিল, হাম  বড়াভাব, বৌদ্ধত্য এসব দেখতে দেখতে মনটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। মন একটু বিশ্রাম চাইছে। কিন্তু চাইলে তো সব ঠিকঠাক হয় না। তাই ঠিক করলাম আজ একটু আধ্যাত্মিক পথের কথা বলে মনটাকে অন্য পথে চালিত করবো। ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মা সারদাকে কে না চেনে, কে না জানে। ঠাকুর অত্যন্ত সহজ সরল ভাবে অধ্যাত্ম ও উপনিষদের কথা ব্যাখ্যা করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। এত সহজ কথা অথচ কী গভীর তার অর্থ। আমরা বৃন্দাবনকে চিনি জানি। কিন্তু বৃন্দাবন যে বাংলায় অবস্থিত আছে এটা আমরা অনেকেই জানিনা। ঠাকুর আমাদেরকে নিয়ে গেলেন বিষ্ণুপুর। এখানেই তিনি অনুভব করেন বৃন্দাবনের পরশ। উচ্চারণ করে বলেন এই হল গুপ্ত বৃন্দাবন।

আজ আমি মা সারদাকে নিয়ে বিষয়কেন্দ্রিক গল্প বলতে বলতে এগিয়ে যাব। ষোড়শ শতাব্দীতে রাজা বীরহাম্বিরের হাত ধরে বিষ্ণুপুরের মানুষ ভেসেছিল বৈষ্ণব ধর্মের জোয়ারে। বিষ্ণুপুরকে সাজানো হয় বৃন্দাবনের মতো করে। ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাই বিষ্ণুপুর বলতে গুপ্ত বৃন্দাবনের কথা বলতেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও সারদা দেবী কামারপুকুর ও জয়রামবাটী এই দুই স্থানে আবির্ভাব হয়েছিলেন। এই দুই স্থান থেকে বিষ্ণুপুর খুব দূরে নয়। ঠাকুর বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন একটা মামলার সাক্ষ্য দিতে। তখন রাজার তৈরি মায়ের মন্দিরে মৃন্ময়ী মাকে তিনি দর্শন করেন আর সারদা মাকে জানান, 'তুমি বিষ্ণুপুরে গুপ্ত বৃন্দাবন দেখো।' উত্তরে মা সারদা বলেন, 'আমি মেয়েমানুষ, কি করে দেখবো।' ঠাকুর বলেন, 'দেখবে দেখবে, ঠিক দেখবে।' একদিন ঠাকুরের কথা ফলে যায়। বিষ্ণুপুর হয়ে বেঙ্গল নাগপুর ট্রেন চালু হয়। আগে বিষ্ণুপুর দুর্গম ছিল এখন সুগম হয়। মা তখন জয়রামবাটী থেকে বিষ্ণুপুর আসতেন ট্রেনে করে। ঠাকুরের ভবিষ্যৎবাণীকে কেন্দ্র করে মা একদিন সর্বমঙ্গলা মন্দিরের প্রাঙ্গণে বসে বলেন, 'ঠাকুরের কথা আজ সত্যি হল। ' মা প্রথম বিষ্ণুপুর যান ১৩১২ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে, কলকাতা থেকে জয়রামবাটী যাওয়ার পথে। আরেকবার মা বিষ্ণুপুর স্টেশন এ অপেক্ষা করছিলেন, তখন একজন অব বাঙালি কুলি মাকে দেবী ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। কি করবেন মনস্থির করতে পারেন না- এত আনন্দ উদ্ভব হয়েছিল তার মনে। সম্ভবত স্বপ্নে হয়তো মাকে দেখেছিলেন। ১৯২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মা বিষ্ণুপুর থেকে কলকাতা বাগবাজার অঞ্চলে উদ্বোধনের পথে শেষবার গমন করেন।

ভাবের কথা বললাম বলে সবটাই ভাব নয়। তবে ভাবেই ভক্তি। আর ভক্তিতেই মুক্তি। সংসার আবদ্ধ জীব আমরা। সংসারের মধ্যে থেকে যদি দিনান্তে একবার তাঁকে স্মরণ করা যায়, তাহলে আমাদের উতক্ত রিপু গুলো ঠান্ডা হয়ে যাবে, মন শান্ত হবে। তখন মনে হবে অনেক ভুলভাল কর্ম করেছি, আর নয়। এবার ঈশ্বরকে স্মরণ করে পথ চলব।

আজ বিষ্ণুপুর তাই শুধু গুপ্ত বৃন্দাবন, মন্দিরের দেশ, সংগীতের পিঠস্থানই নয়, গর্বিত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও মা সারদার পদধূলিতে ধন্য হলো ভুবন।

10 months ago
Special: হে বঙ্গের যুবসমাজ, মানুষের পাশে দাঁড়াও

সৌমেন সুর: এখনো দেশের বহু মানুষ জীবনধারণের জন্য নূন্যতম উপকরণগুলো থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চিতের কারণে তরুণ সমাজকে দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা ও কর্তব্য পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যে কোনও কর্মে যুব সমাজের অগ্রাধিকার থাকে। তারা সাহসী, কর্মঠ, সবুজের ন্যায় তারুণ্যে, প্রাণপ্রিয়, সূর্যের মতো উজ্জ্বল। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো মৌলিক অধিকার। এই মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ভারতের সংবিধান রচনার আগে দেশের মানুষের কোন মৌলিক অধিকার ছিল না। গণপরিষদ মৌলিক অধিকার বিধিবদ্ধ করার ব্যাপারে একটি পরামর্শদাতা কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়। এর ফলে ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতের সংবিধান রচনা হয়।

দেশের নাগরিক হিসেবে দেশ সেবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তবে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও সমস্ত মানুষ অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের পূর্ণ অধিকার হয়তো পাইনি। তাই মানুষের অধিকার কর্তব্য পালনে যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের জন্য আমরা দেশ না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব যে বিপর্যস্ত এ কথা উপলব্ধি করলে দেশ গঠনের উপযোগিতা ধরা পড়বে। অন্যদিকে নাগরিকগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে যে অধিকার গুলো ভোগ করে সেগুলোর বিনিময়ে রাষ্ট্রকে কর দিতে হয়, সেই কর দেওয়া নাগরিকের কর্তব্য। এজন্য যুব সমাজের এই কর্তব্য পালন করা উচিত। যুব সমাজের কর্তব্য প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। মানুষের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য যুব সম্প্রদায়কে সমাজসেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। নাগরিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করতে হবে। দেশের যুবসমাজ যে কোন সংগ্রামে আপোসহীন লড়াই করে। এরাই সমস্ত শক্তির উৎস। দেশের মানুষ যুব সম্প্রদায়ের প্রতি অনেক আশা করে। যুব সমাজ যদি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে সাধারণ মানুষ মনে বলা প্রায়। তাই তাত্ত্বিক ও তুর্কি তরুণেরা যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে একদিন না একদিন শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে উঠবেই।

10 months ago


Special story: আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রতিবাদী হোন বঙ্কুবাবুর মতো

সৌমেন সুর: প্রথমে আমি পাঠক সমাজকে অনুরোধ করছি- আপনারা প্লিজ সত্যজিৎ রায়ের 'বঙ্কুবাবুর বন্ধু' গল্পটি পড়ুন। গল্পটি এইজন্যে পড়তে বলছি- ফেলুদা সিরিজের এই গল্পটি আপনার মনে একটু অদ্ভুত একটা Sense Create করবে, যার স্বাদ অনেকদিন পর্যন্ত আপনার মনে গেঁথে থাকবে। যদি আপনার সমাজের ব্যাপারে কোনো Possitive Mode থাকে তাহলেই এই গল্পটার সার্থকতা।

বর্তমান সমাজ এক অস্থির পদচারনে ধূলায় লুটাচ্ছে। সমাজটার কোনায় কোনায় নেগেটিভ ভাইরাস বাস করে আছে। এ ওকে মানছে না, সে তাকে মানছে না। আমিই সবার থেকে বড়। আমার অস্তিত্বই আগামীর ভবিষ্যৎ। দাও সব বাড়িয়ে। দুদিন আন্দোলন হবে, তিন দিনের দিন সব ধামাচাপা। এ যেন কবির ভাষায়, 'অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ...।' এমন সুস্বাদু খাওয়ার আচার বিলানো হচ্ছে যার স্বাদে কিছু মানুষ ঠান্ডায় আরাম খাচ্ছে, আর কিছু মানুষ কপাল চাপড়াচ্ছে। দেশের এ কী হাল হলো! যাই হোক গল্পটা পড়ে আমি এত আনন্দিত হয়েছি যার জন্য আপনাদের কাছে শেয়ার না করে পারলাম না। দেখুন, যদি কোনো মানুষকে অযথা অসামাজিক ভাবে আচরণ বা বিদ্রুপ করা হয় তাহলে সে মানুষটার পজিসন কেমন হয়, সেটা একবার Feel করুন। যদি আপনার ক্ষেত্রে হয় ভাবুনতো।

অর্থবান উকিল শ্রীপতি বাবুর বাড়িতে, শ্রীপতিবাবু তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দেন। এই আড্ডার মাঝে সহজ সরল বঙ্গ বাবুকে নিয়ে আলোচিত উপহাস, মস্করা করা হয়, যা অত্যন্ত বিষাক্তজনক। বঙ্কুবাবু সব সহ্য করেন নীরবে। প্রতিবাদ করেন না। মনে মনে ভাবেন, আপনারা যা করছেন করুন। একদিন না একদিন একটা ফল, আপনাদের শিক্ষা দেবে। দেখতে দেখতে বঙ্কুবাবুর জীবনে হঠাৎ একদিন ভাল সময় চলে আসে। যেন এক আকোস্মিক পরিবর্তন ঘটে ওর জীবনে।

পথে যেতে যেতে বাঁশবাগানে উপুড় করা একটা কাঁচের বাক্স থেকে যন্ত্রের মতো বেরিয়ে আসে অদ্ভুত এক জীব। সে নাকি ক্লোনিয়াস গ্রহের অ্যাং। অ্যাং-এর জন্য বঙ্কুবাবুর জীবনে ঘটে যায় পরিবর্তন। শ্রীপতি বাবুর বাড়িতে বঙ্কুবাবু স্পষ্ট ভাষায় প্রতিবাদ কোরে, সমালোচনা কোরে বীরদর্পে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। লেখক আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন প্রকৃত বন্ধু কে? আসলে প্রকৃত বন্ধু হল অ্যাং। যারা জীবনে মাথা উঁচু করে পথ চলতে প্রেরণা দেন।

গল্পটা, বহুগুনের অধিকারী হয়েও আত্মবিশ্বাসের অভাবে অনেক মানুষ নিগ্রহের শিকার হন, বঙ্কুবাবুর মতো। সেই আত্মবিশ্বাস জীবনে পথ চলার চালিকা শক্তি। বাস্তব জীবন অত্যন্ত কঠিন। প্রতি পদে লড়াই। গল্পটি শিখিয়েছে- লড়াইটা কিভাবে করতে হয়। এখন আমাদের দেশের সমস্ত শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ও সাধারণ মানুষকে অনুরোধ, লড়াইটা সঠিকভাবে করুন বেনোজল বাদ দিয়ে। সমাজে বঙ্গবাবুর বন্ধুর মতো সবাই বন্ধু যদি হতো, তাহলে সমাজটা সত্যি পাল্টে যেত।

10 months ago
Special story: মানপত্র চাই না, পেট ভরে দুটো ভাত খেতে চাই

সৌমেন সুর: একটা টিলার ওপর বাদক ঢ্য়ারা পিটিয়ে বলে, 'শুনুন...শুনুন..শুনুন। নিশ্চিন্তপুরের প্রজারা মন দিয়ে শুনুন, আমাদের রাজ্য়ে কৃষিফলনে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান যাতে করতে পারে তার জন্য় দলভিত্তিক কৃষকরা তার জমিতে চাষ করবে। এক একটা দলে ৪ জন করে থাকবে। যে বেশী ফলন দেখাতে পারবে- সে রাজার তরফ থেকে পুরস্কার পাবে। ...ঘোষণা করতে করতে বাদক চলে যায়। এদিকে প্রচুর কৃষক এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। যথারীতি শুরু হয় চাষ। মন্ত্রীরা রাজাকে বলে, সারা রাজ্য়ে কৃষি ফলন দেখবার মতো। সারা মাঠ ধনধান্য়ে পুষ্পে ভরা। অনেক চাষী তাঁদের সর্বস্ব দিয়ে এই ফলন করেছে। তবে সব থেকে বেশী উলন ফলিয়েছে হোসেন মিঞা। সবাই হোসেনকে প্রশংসা করতে থাকে। মন্ত্রীরা রাজার কাছে গুনাগুন গায়। বলে, হোসেন মিঞা আমাদের রাজ্য়ে সেরা কৃষক। ওর হাতে জাদু আছে। ও আমাদের দেশের গর্ব। রাজামশায় আপনি একবার নিজের চোখে দেখে আসুন। 

রাজা একদিন রাজ্য়বিহারে বের হন। নিজের চোখে হোসেনের কৃতকর্ম দেখে মুগ্ধ হন। তিনি নির্দেশ দেন, হোসেন মিঞাকে পাঁচটা মোহর আর মানপত্র দিয়ে পুরস্কৃত করো। রাতারাতি হোসেন মিঞার মানে লেখা হলো মানপত্র। এবার পাঁচটা মোহর থেকে একটা মোহর সরিয়ে রেখে প্রথম মন্ত্রী দায়িত্ব দিলো দ্বিতীয় মন্ত্রীকে। দ্বিতীয় মন্ত্রী একটা মোহর সরিয়ে তৃতীয় মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিলো। তৃতীয় ও চতুর্থ মন্ত্রী মোহর সরিয়ে রাখলো। পঞ্চম মন্ত্রী শেষ মোহরটা নিজে সরিয়ে রেখে, শুধু মানপত্রটা নিয়ে হোসেনের বাড়ির পথে রওনা হয়। 

এদিকে রাজা সিংহাসনে বসে ভাবতে লাগলেন, রাজ্য়ে যা কৃষিফলন হয়েছে তা, কয়েক হাজার কোটি টাকার মতো। আমি সব ফলন বিক্রি করে দেবো। রপ্তানি করবো বিদেশে। যে অর্থ পাওয়া যাবে তার ফিফটি পারসেন্ট আমি আমার পরিচিত জনের নাম দিয়ে বিদেশের ব্য়াংকে টাকাটা গচ্ছিত রাখবো। 

ওদিকে হোসেন মিঞার বাড়িতে ৫ম মন্ত্রী ও পেয়াদা এসে হাজির। মন্ত্রী হোসেন মিঞাকে রাজার কথা বলে, রাজা তার কাজে ভীষণ খুশি হযেছেন। তাই রাজা এই মানপত্র দিয়ে তোমায় সম্মান জানিয়েছেন। হোসেন মিঞা মানপত্রটা এদিক ওদিক দ্য়াখে। এটার মর্ম উদ্ধার হয় না তার মাথায়। শুকনো মুখে মন্ত্রীকে হোসেন মিঞা বলে, রাজামশাইকে বলবেন-  মানপত্রের দরকার নেই। আমরা পেটভরে দুমুঠো ভাত খেতে চাই। মন্ত্রী কথাটা শুনে চমকে ওঠেন। আজ অস্তাচলের সূর্যের রং বড় ফ্য়াকাশে। ম্রিয়মান। (সমাপ্ত) 

10 months ago
Special story: মানপত্র চাই না, পেটভরে দুটো ভাত খেতে চাই

সৌমেন সুর: রাজ্যের নাম নিশ্চিন্তপুর। নিশ্চিন্তপুরের সমস্ত প্রজারা বেশ সুখেই আছে। এই খবরটা রাজ্যের মন্ত্রীরা রাজাকে রিপোর্ট করেছে। কী কৃষিতে, কী শিল্পে, কী সাহিত্যে, কী সংস্কৃতিতে আমাদের রাজ্য একমেবাদ্বিতীয়ম্। রাজা শুনে পরম আহ্লাদিত। ভাবলেন-আমাদের রাজ্য তাহলে কোথায় পৌছে গেছে। মন্ত্রীদের চোখে ঘুম নেই, প্রজারা যাতে ভালো থাকতে পারে, তারজন্য কত পরিশ্রম করছে।

রাজা রাতে বিছানায় শুয়ে আপনমনে বলতে থাকেন- আমি তো মূর্খ, অশিক্ষিত। গায়ের জোরে রাজা হয়েছি। রাজা হওয়ার মতো কোনো ক্যালি আমার নেই। তবু রাজা হয়েছি বুদ্ধির জোরে। কিন্তু একদিন তো আমার গদির আয়ু শেষ হয়ে যাবে- তখন আমার দশা তো ছাতু মাখার মতো হয়ে যাবে, তাহলে? এক কাজ করি, এখন থেকে প্রজাদের ভয় দেখাতে থাকি, আইনি প্যাচে ব্যাতিব্যাস্ত করে তুলি- তাতে ওরা সবাই আতঙ্কে দিন কাটাতে থাকবে, আর আমার অস্তিত্ব টিকে থাকবে বছরের পর বছর। আমার মন্ত্রীগুলোও হয়েছে একেবারে চুপ শয়তান। কোনোটা ভালো নয। ওপর ওপর দেখায় ভালো, ভেতরে চরম শয়তানী। তার চেয়ে আমি এক কাজ করি, আমি আমার আখের গুছিয়ে নিই। যখন ক্ষমতা থাকবে না তখন ঠ্যাংয়ের ওপর ঠ্যাং তুলে আরাম করে দিন কাটাবো। এবার থেকে যা ভেবেছি তাই করবো। তার আগে আমাকে কয়েকটা চমক দিতে হবে। এমন কিছু প্রচার করবো যাতে প্রজারা নিঃশর্তে সেটা মেনে নেয়। তবে যে প্রতিবাদ করবে তার আর রক্ষে নেই। প্রতিবাদ করলেই ফাঁসি নয়ত কারাগারে সারাজীবন বন্দী। জীবন একেবারে বরবাদ করে ছাড়বো। স্টেস্টাস, সম্মান একেবারে ধূলোয় মিশিয়ে দেবো। মুর্খ প্রজাদের থেকে শুষে শুষে সব খেয়ে নেবো। ওদেরকে ফকির বানিয়ে ছাড়বো, আর আমরা আমির হয়ে থাকবো। কিন্তু একটা ছুঁতো বার করতে হবে- এমন কিছু জিনিস, যা দেখে বা শুনে প্রজারা মোহিত হয়ে যাবে। কাল থেকেই প্রচার কার্য শুরু হয়ে যাক। (চলবে)

10 months ago


Special story: দুই মহাকাব্যের তলানিতে দেশের শয়তানী

সৌমেন সুর: ভারতের প্রাণস্পন্দনকে ধরে আছে দুই মহাকাব্য। রামায়ণ ও মহাভারত। ভারতের রাজনীতি, জাতীয় জীবনের ইতিহাস, ধর্মীয় চেতনা, সামাজিক ঐতিহ্য, নীতিবোধ, আধ্যাত্মিকতা-সবকিছুর ধারক ও বাহক এই দুই মহাকাব্য। 

কেন্দ্র ও রাজ্য- দুজনেই উল্লেখিত বিষয়গুলির ধারক ও বাহক। যদি তাই হয় তাহলে এত হানাহানি, মারামারি কেন? একটু চিন্তা করলে দৃশ্যত ধরা পড়ে-কোনো জিনিসই Moveable নয়। দেহ যখন থাকবে না তখন কোনোকিছুই সাথে যাবে না-তাহলে? তাহলে পড়ে থাকবে শুধু সুকর্ম আর ব্যবহার। এখন যদি কেন্দ্র ও রাজ্য সখ্যতায় বাসা বাঁধে, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো মলিনতা থাকে না। তবে বাধা কিসের! কিসের এত ইগো!

রামের প্রজাবাত্সল্য, লক্ষণের স্বেচ্ছায় দুঃখবরণ, ভারতের অমায়িক ভাতৃপ্রেম, সীতার পরিভক্তি ও চারিত্রিক দৃঢ়তা-এসবই প্রাচীনকাল থেকে ভারতবাসীর কাছে পরম আদর্শ বলে বিবেচিত হয়েছে। রামায়ণের প্রভাব ভারতীয় সমাজকে বিশ্বের যে কোনো জনসমাজ থেকে পৃথক এক স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। তাহলে দেশে এখনো কেন জাতপাত নিয়ে নৃশংস ধাষ্টামী, কেন এত দাঙ্গা, কেন এত লোভ! যখন রামায়ণের সার জিনিসটা আমরা বুঝতে পারি, তাহলে এত বৈষম্য কেন? চারিদিকে এত শোকের ছায়া কেন! তাহলে সবটাই কি গিমিক?

এবার আসি মহাভারতে। মহাভারতে পরিবেশিত রাজনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি, ভারতীয় সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতীক। মহাভারতের মূলকথা ধর্মের জয়, অধর্মের পরাজয়। ভোগ যে মানব জীবনের কাম্য নয়, বৈরাগ্যেই মুক্তি- এই মর্মকথা মহাবারতের কাহিনীতে ফুটে উঠেছে। তাহলে বাজারে এত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি কেন? কাদের স্বার্থে? চাহিদার তো শেষ নেই। থামবে কখন? একটা মানুষের কত দরকার একসময় না থাকলে, পরিস্থিতির চেহারা তো রণভূমিতে পরিণত হবে। তাহলে আমাদের মূল্যবান এই দুই মহাকাব্যের দাম কোথায় রইল! সবটাই কি ক্তঁ গঙ্গায় নমঃ। দুটো মহাকাব্য শুধু আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবই নয়, ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের মূর্ত প্রতীক। পথপ্রদর্শক। দুটি মহাকাব্যের সারবস্তু বুঝে শয়তানী না করে, যদি সত্ভাবে সবাইকে নিয়ে চলতে পারা যায়, তাহলে একদিন ভারতবর্ষ হবে সূর্যের আর এক নাম।

10 months ago
Story: আপনাকে যদি সারা জীবনের মতো পেতে চাই, আপনি রাজি?

সৌমেন সুর: সুপ্রিয় নির্মল দৃষ্টিতে তাকায় হিয়ার দিকে। তারপর মুখ ঘুরিয়ে বলে, 'আমার জীবন হলো, 'কিছুতেই যায় না মনের ভার, দিনের আকাশ মেঘে অন্ধকার।' হিয়া অবাক হয়ে তাকায়। কথাটা বলে সুপ্রিয় সিট থেকে উঠে আস্তে আস্তে হেঁটে জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। বলা শুরু করে।

--অনেক আশা নিয়ে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছিলাম কলকাতায়। দাদা-বৌদির সংসারে। ওখানে থেকে চাকরির চেষ্টা করছিলাম। দেখতে দেখতে একটা বছর ভালমন্দ নিয়ে বেশ কাটছিলো। হঠাৎ একদিন দুপুর বেলায়, বৌদি ভাতের থালাটা দড়াম কোরে টেবিলের ওপর রেখে বলে, 'আর কতদিন যে সহ্য করতে হবে এই জ্বালা।' কথাটা বলে বৌদি গজগজ করতে করতে ঘরের ভেতর চলে যায়। আমার তখন সারা শরীর অপমানে কাঁপতে থাকে। মনে হচ্ছিল খাবার ছেড়ে উঠে পড়ি। কিন্তু পরক্ষণে ভাবি, না খেলে তো সারাদিন উপোস থাকতে হবে। তারপর আমি যাবো কোথায়। সাতপাঁচ ভেবে কোনোমতে ভাতটা খেয়ে, ঘরে বসে চিন্তা করি। একটা আশ্রয়, কোথায় পাই! এখানে কে আছে আমার! এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ে যায় পিসিমার কথা। হালিশহরে থাকে। ব্যস, ওইদিনই দাদার টেবিলে চিঠি লিখে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ি।

ভেজানো দরজা ঠেলে স্টেশন মাস্টার অশোক সামন্ত ঘরে ঢোকেন। দু'জনকে দেখে বলেন, 'তোমরা ঘুমোওনি! অবশ্য ঘুমোবেই বা কোথায়! যাক সুপ্রিয়, আমার রিলিভার এসে গেছে আমার ডিউটি শেষ। আমার কলিগকে বলে দিয়েছি তোমাদের কথা। ফার্স্ট ট্রেনটা এলে ঘর ফাঁকা করে দিও। আর একটা কথা সুপ্রিয়, তোমার পিসিমাকে বোলো, আমি সামনের রবিবার দুপুরে বাড়ি যাচ্ছি। চিংড়ি মাছের মালাইকারি খাবো। আমার ধর্মদিদির হাতের মালাইকারি এখনো আমি ভুলতে পারিনি।' অশোকবাবু হাসতে হাসতে চলে যান। সুপ্রিয় কথা বলতে বলতে বেঞ্চে এসে বসে।

--'আমি কলকাতা থেকে হালিশহরে চলে আসি। পিসিমাকে সব ঘটনা খুলে বলি। পিসিমা শুনে বলেন, এখানে তোর যতদিন মন চায় থাক। আর এখান থেকেই তুই চাকরির চেষ্টা কর। তারপর একদিন ঈশ্বরের কৃপায় সত্যিই চাকরি পেলাম। মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভের। আজ দুবছর হয়ে গেল আমার চাকরির। যাক, আমার কথা বাদ দাও- আপনি কোথায় যাবেন এখন? প্রথম ট্রেনতো আসতে আর আধঘণ্টার মতো বাকি।'

হিয়ার মুখে ভাবান্তর। কি বলবে কিছু ঠিক করতে পারে না। সুপ্রিয় বলে ওঠে, 'কি হলো, চুপ করে আছেন কেন? যাক, একটা কথা বলি, এখন ব্রহ্ম মুহূর্ত। চলুন প্ল্যাটফর্ম থেকে দৃশ্যটা উপভোগ করি। ভাললাগবে আপনার।'

ওরা দুজন প্ল্যাটফর্মে চলে আসে। দু'একজন করে মানুষ আসতে শুরু করেছে ট্রেন ধরার জন্য। সুপ্রিয় বলে, 'জানেন, মা বলতেন- ব্রহ্ম মুহুর্তে কেউ যদি একমনে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে তার সেই প্রার্থনা সফল হয়। নিন, আমরা প্রার্থনা করি।'

দুজনে আকাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। এখন অন্ধকারও কাটেনি, আলোও প্রকাশ পাইনি। এমন একটা সন্ধিক্ষণ।

প্রার্থনা শেষে সুপ্রিয় বলে, 'একটা কথা বলবো, যদি কিছু মনে না করেন।' হিয়া বলে, 'বলুন।' 'আপনার চুপ থাকাতে আমি বুঝে গেছি- আপনার তেমন কোনো জায়গা নেই।' কথাটা বলে সুপ্রিয় হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, 'আপনাকে যদি সারা জীবনের মতো পেতে চাই, আপনি রাজি?'

হিয়া হাসিমুখে সুপ্রিয়র হতে হাত মেলায়। ওরা চলতে শুরু করে।

10 months ago


Market: সবজির দামে নজরদারি স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের, মানিকতলা, গড়িয়াহাট বাজার পরিদর্শন করলেন

বেশ কিছু দিন ধরেই বেড়ে চলেছে সবজির দাম (Vagetable Price)। বাজারে গিয়ে সবজির দাম শুনলেই চোখ যেন কপালে উঠছে ক্রেতাদের। কেউ কেউ তো আবার খুব দরকার না হলে বাজার থেকেই খালি থলি নিয়েই বাড়ি ফিরে আসছে। তবে এই দুর্মূল্যের বাজারেও বেশ কিছু বিক্রেতা আছে যাঁরা এই দাম বাড়ার সুযোগ সুবিধা নিয়ে চলেছে। যেখানে কোনও সবজির দাম ১০০ টাকা কেজি, সেখানে ওই সুবিধাবাদী বিক্রেতারা ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি নিয়ে নিচ্ছে ক্রেতাদের থেকে। তাই এই দুর্নীতি এড়াতে বাজার পরিদর্শনে নেমেছে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (Special Task Force) অফিসারেরা। মানিকতলা বাজার, গড়িয়াহাট বাজার, শোভাবাজারে গিয়ে সবজির দামও জিজ্ঞাসা করছেন তাঁরা। 

এই ঘটনায় বাজারের অনেক খুচরো সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সবজির আকাশছোঁয়া দাম বৃদ্ধির ফলে বেশি ক্ষতি হচ্ছে তাঁদেরই। কারণ, অত্যধিক দামের কারণে বহু ক্রেতা প্রয়োজনের চেয়েও কম পরিমাণে আনাজ কিনছেন। আবার কেউ কেউ তো দাম শুনেই হাঁটা দিচ্ছেন। ফলে ভুগছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতাদের দাবি, ভোটের জন্য গ্রাম থেকে সবজির গাড়ি শহরে পৌঁছতে পারছে না। যার ফলে অল্প জিনিসের জন্য দামও বাড়ছে প্রচুর।

তবে এই বিষয়ে টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলের মতে,‘‘গরমে ফসল শুকিয়ে গিয়েছিল। তবে এখন বর্ষায় সবজির ফলন ভালো হচ্ছে। তবে সেইসব সবজি বাজারে আসতে আরও দিনপাঁচেক সময় লাগবে।’’  

10 months ago
Story: বলুন তো কেন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন!

সৌমেন সুরঃ সুপ্রিয় হিয়াকে বসতে বলে। হিয়া চেয়ারে বসে। 'আপনি একটু বসুন, আমি খাবার নিয়ে আসছি।' কথাটা বলে সুপ্রিয় বেরিয়ে যায়।

হিয়ার চোখে মুখে শূন্যতা। এক গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা দৃশ্য। সুনিতা একটা রেকাবিতে কিছু ফুল আর একটা ছোট্ট দইয়ের ভার হাতে নিয়ে ডাকেন, হিয়া...হিয়া..। 

হিয়া কাঁধ ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

সুনিতা মন্দির থেকে পুজোর সামগ্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, হিয়া ঘরে ঢুকে বলে, 'আমাকে ডেকেছো মামী?' 'হ্যাঁ.. দেখি' বলে কপালে দইয়ের একটা ফোঁটা দিয়ে দেন। তারপর একটা জবা ফুল নিয়ে বলেন, 'এই ফুলটা কাছে রেখে দে, মায়ের আশীর্বাদী ফুল।' হিয়া ফুলটা হাতে নিয়ে ওর ব্যাগে রাখে। তারপর প্রণাম করে মামীকে। মামী হিয়ার চিবুক ছুঁয়ে বলেন, 'তোর পরীক্ষা ভালো হোক, এই আশীর্বাদ করছি।'

হঠাৎ ধুমকেতুর মতো প্রবেশ করে রিনি। রিনি সুনিতার একমাত্র মেয়ে। বলে ওঠে, ' আচ্ছা ওর বেলায় দইয়ের ফোঁটা, আশীর্বাদী ফুল। আর আমার বেলায় কিছুই না।' আঃ রিনি। ওভাবে বলছিস কেন, ও তোর দিদি। 'নিজের দিদি তো নয়, দূর সম্পর্কের দিদি।' সুনিতা ধমকে ওঠেন, 'রিনি..' 'হিয়া তুই যা তো। সাবধানে পৌঁছাস, যা।' হিয়া মুখ হাঁড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

একটা মালবাহী ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে গর্জন করতে করতে পাস করে।

হিয়া গুম হয়ে বসে আছে চেয়ারে। সুপ্রিয় ক্যারিব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করে। 'এত রাতে খাবার পাওয়া যায়!' অনেক কষ্টে পেলাম ডিম টোস্ট। নিন ধরুন। হিয়া খাবারটা হাতে নেয়।  সুপ্রিয় পাশের বেঞ্চে বসে খেতে শুরু করে। হিয়াও খেতে থাকে।

সুপ্রিয় বলে ওঠে, 'খেতে খেতে বলুন তো কেন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন?'  হিয়া তাকায় সুপ্রিয়র দিকে। তারপর মুখ ঘুরিয়ে স্থির হয়ে বলে, 'মানুষ অনেক কষ্ট পেলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। জানেন, দিনগুলো ভালো কাটছিল। মা,বাপ মরা মেয়ে মামার বাড়িতে মানুষ হচ্ছিলাম। মামা আমি দু'জনেই ভালো মানুষ। কিন্তু মামাতো বোন রিনি ছিল আমার বিরুদ্ধে, আমাকে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। কেন যে ওসব করতো তার কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একদিন'....

রিনি রাগের মাথায় ঘরের জিনিসপত্র হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলছে, শব্দ শুনে সুনিতা দেবী দ্রুত ঘরে আসেন। রিনির কাণ্ড থেকে চিৎকার করে ওঠেন, 'কি হচ্ছে কি?' রিনি... রিনি আরও উচ্চ গলায় বলে ওঠে, কেন আমার শাড়ি হিয়াকে পড়তে দিয়েছ? কেন..?' একটু পরেছে তাতে দোষের কি হয়েছে!' 'দোষের হয়েছে তোমার শাড়ি তো ছিল, তাই দিলে না কেন...? আচ্ছা আমার শাড়ি পরে ইন্টারভিউ যাওয়া যায়! তাইতো তোর শাড়ি... এমন সময় হিয়া ঘরে ঢোকে।

10 months ago
Story: কিছু না বললে বুঝবো কেমন করে!

সৌমেন সুর: একটা চায়ের দোকান। বলা যায় রাতের চায়ের দোকান। দুজনে একটা বেঞ্চে বসে। সুপ্রিয় বলে ওঠে, 'ভজনদা, দুটো কেক দাও।' মেয়েটি সুপ্রিয়র দিকে জিজ্ঞাসুনেত্রে তাকায়।

--'আমার চেনা দোকান। হালিশহরে আমি বছর দুয়েক আছি। এই চায়ের দোকানটা সারা রাত খোলা থাকে। কারন, রাত দুটোর পর সবজীওয়ালারা আসতে থাকবে। তারা প্রথম ট্রেন ধরে কলকাতায় যায়।'

কেক, চা চলে আসে। বেঞ্চের ওপর চায়ের ভাঁড় দুটো রাখে সুপ্রিয়।

--'দাঁড়ান, চা খাবার আগে একটু জল খান। বাচ্চা...বড় কাগজের কাপে জল দেতো।' একটু হাঁক দেয় সুপ্রিয়।

মেয়েটি জড়সড় হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ভাবনাগ্রস্ত হয়ে বসে আছে।

--নিন, জলটা খান।

মেয়েটির সম্বিত্ ফেরে। সুপ্রিয়র দিকে তাকায়। সুপ্রিয় ইশারায় জলটা খেতে বলে। মেয়েটি জলটা খায়। সুপ্রিয় চায়ের ভাঁড়টা এগিয়ে দিয়ে বলে,'চা'টা খান। একটু কেকের কামড়, আর এক সিপ চুমুক, ভালোলাগবে। নিন।

মেয়েটি হাতে নেয় কেকটা। এইসময় সুপ্রিয় বলে, 'আমি সুপ্রিয়। সুপ্রিয় রায়। আপনি?' মেয়েটি ওর দিকে তাকিয়ে বলে, 'আমি হিয়া মিত্র।' খেতে খেতে সুপ্রিয় বলে, 'আজ আপনি এই অঘটন ঘটাচ্ছিলেন কেন?' হিয়া কোনো কথা বলে না। রেল লাইনের দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

---কিছু না বললে বুঝবো কেমন করে!

হিয়া তাকায় সুপ্রিয়র দিকে। সু্প্রিয় আশ্বাস দেয়, 'ঠিক আছে এখানে বলতে হবে না, অন্য জায়গায় বলবেন।' তার আগে চা'টা খেয়ে নিন, ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।

হিয়া চায়ে চুমুক দেয়। 'কেকটা খান। লজ্জা না করে খান। মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে পেটে কিছু পড়েনি। ঠিক আছে এটা খান, আমি খাবার আনছি। আমারও খিদে পেয়েছে।' সুপ্রিয় ক্যাজুয়ালী কথাটা বলে।

হিয়া কেক-এ কামড় দেয়।

দুজন RPF প্ল্যাটফর্মে হেটে টহল দিচ্ছে। প্ল্যাটফর্মের ঘড়িতে রাত একটা দশ।

স্টেশন মাষ্টারের ঘর। হিয়া ও সুপ্রিয় ঘরে প্রবেশ করে। স্টেশন মাষ্টার দুজনকে দেখে অবাক হয়ে বলে, 'কি ব্যাপার, শেষ ট্রেনটা তো অনেক আগে বেরিয়ে গেছে।' সুপ্রিয় কথায় যোগ দেয়, 'সেইজন্যই তো বিপদে পড়েছি অশোকদা।' 'তোমার আবার বিপদ কিসের, তুমি তো এই এলাকার।' 'না আমি নয়, মানে আমার বান্ধবী। লাষ্ট ট্রেনটা মিস করেছে বলেই তো যত হ্যাপা।' 'তা কি করবে এখন।' 'বলছিলাম, আপনার পাশের ঘরটা তো ফাঁকাই থাকে, ওখানে না হয় রাতটা কোনোমতে--' 'ঘুমোতে পারবে কি! বসে বসে ঘুমোতে হবে।' 'ওতেই হবে অশোকদা, রাতটা কোনমতে কাটাতে পারলেই চলবে।' 'তাহলে যাও, দেখো বসে বসে যদি ঘুমোতে পারো।' দুজনে পাশের ঘরটায় চলে যায়।

10 months ago


Special story: "এটা খেয়ে নানা রোগে মানুষ জর্জরিত, কোনো হেলদোল নেই"

সৌমেন সুরঃ মানুষের কল্যাণে সমাজ। সমাজের কল্যাণেই মানুষ। সমাজের ভালখারাপ মানুষের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে। আমরা মোদ্দা কথাটা জানি, মনুষ্যত্ব নিয়েই মানুষ। মনুষ্যত্ব বিহীন মানুষ-অমানুষ। যে জীবন নিজের সুখে মগ্ন, সে জীবন স্বার্থপর। সে জীবন অমানবিকতায় পঙ্কু। তাই চোরাপথে জীবনের যে সাফল্য, তা বেশিদিন টেকে না। আসলে নীতিবোধ মানুষের জীবনে বড় আশ্রয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সমাজ জীবনের সম্পর্ক নিবিড়। আজকের ব্যবসায়, স্বার্থটা-বড়। অভাব হলো নীতিবোধের। সর্বত্র ভেজালের মহিমা। ওষুধে ভেজাল, চাল, ডাল তেল, আটা এমনকি রান্নার মশলাপাতিতে পর্যন্ত ভেজাল। পোস্তয় ভেজাল। শাকসবজি, বেগুন, পটলে তীব্র পরিমাণে বিষ তেলের প্রয়োগ। শরীরের পক্ষে কত অস্বাস্থ্যকর। পৃথিবীতে ভারতের মতো আর কোনো দেশে খাদ্যে এত ভেজাল মেশানো হয় না। এক্ষেত্রে আমাদের দেশ বোধহয় শীর্ষে। বাড়ি তৈরী করবেন? গালে হাত দিয়ে ভাবতে হবে আপনাকে, কারণ সিমেন্টে ভেজাল। এমনকি যে শাকসবজি খেয়ে একটু স্বস্তি পাবেন, তাতেও ভেজাল, কারণ তাতে রং করানো হয়। এভাবেই বেড়ে চলে অসাধু ব্যবসায়ীদের মুনাফার অঙ্ক। 

ভেজাল ব্যবসায়ীদের রোধ করা যাচ্ছে না কেন? ভেজাল খাবার খেয়ে কত মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। কেউ কেউ মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ে। এসব দেখেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কোনো চেতনা নেই। তারা মুনাফা লুটতেই ব্যস্ত। ঘৃণ্য ব্যবসায়ীদের এখানে কঠোর শাস্তি হয় না। তবে দুর্নীতি দমনের জন্য একসময় গঠিত হয়েছিল 'সদাচার সমিতি'। কিন্তু কোনো কার্যকর হলো না। সদাচার সমিতি ভরে উঠলো বাস্তু ঘুঘুদের নিয়ে। অবশেষে তৈরি হলো ভেজালরোধে 'খাদ্য ভেজাল নিবারনী বিধি।'সে আইনেও অসাধু ব্যবসায়ীদের ঘায়েল করা গেল না। আসলে আইন দিয়ে কখনও মানুষের হৃদয় পরিবর্তন করা যায় না। দরকার মানবিক বোধ। এই চেতনা যতদিন ব্যবসায়ীদের না হচ্ছে ততদিন সমাজে ভেজাল অটুট থাকবে। ভেজালের সর্বনাশা বিভীষিকা থেকে মানুষের কি কোনো মুক্তি নেই? ভেজাল সমাজের একটা রীতিমত ভয়ানক অপরাধ। এক্ষেত্রে সরকারের দিকে তীব্র দৃষ্টি আকর্ষন করছি। 

10 months ago
Story: কি ব্যাপার আপনি মরতে যাচ্ছিলেন কেন?

সৌমেন সুর: শুনশান স্টেশন। রাত প্রায় সাড়ে বারোটা, স্টেশনে লোকজন নেই বললেই চলে। শুধু রেলের লাল সিগন্যাল জ্বলে আছে প্রহরীর মত। দু-একটা ভিখারী ঘুমিয়ে আছে এদিক-ওদিক। প্লাটফর্মের প্রায় সব দোকানগুলো বন্ধ। একটা স্নাক্স-এর দোকান বন্ধ করতে ব্যস্ত।

সুপ্রিয় হেঁটে চলেছে ধীরে সুস্থে। কোনও হেলদোল নেই। সুপ্রিয় স্ন্যাকসের দোকানের কাছে এসে দাঁড়ায়। 

একটা ভুজিয়া দিন তো।

দোকানদার প্যাকেটটা হাতে দেয়। সুপ্রিয় দাম দিয়ে প্যাকেটটা ছিড়ে খেতে খেতে আনমনা হয়ে এগোতে থাকে। প্লাটফর্ম থেকে কিছুটা দূরে হঠাৎ সবুজ সিগন্যাল জ্বলে ওঠে। সুপ্রিয় সিগন্যাল দেখে আপন মনে বলে ওঠে। 'এখন পাস করবে চক্রধরপুর এক্সপ্রেস। হাওড়া থেকে ছেড়েছে রাত বারোটা পাঁচে।'


সুপ্রিয় ঘাড় ঘুরে তাকায়। অনেক দূরে ট্রেনটা হুইসেল দিয়ে এগিয়ে আসছে। সুপ্রিয় আবার খেতে খেতে এগোতে থাকে। হঠাৎ ও থমকে দাঁড়ায়। মুহূর্তে ঘাড় ঘুরে তাকায়। ট্রেনটা অনেকটা এগিয়ে এসেছে।

একটি যুবতী মেয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বেশ কিছুটা দূরে, লাইনের উপর দাঁড়িয়ে আছে।

সুপ্রিয় প্যাকেটটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে দ্রুত মেয়েটির দিকে দৌড়াতে শুরু করে, ট্রেনটা কাছাকাছি চলে এসেছে। সুপ্রিয় মেয়েটির কাছে এসেই এক ঝটকায় লাইন থেকে সরিয়ে নেয় মেয়েটিকে।

চক্রধরপুর এক্সপ্রেস সিংহের মতো গর্জন করতে করতে নিমেষে দৃষ্টির বাইরে চলে যায়।

সুপ্রিয় অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে।

মেয়েটি পাথরের মতো 

স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দশ সেকেন্ড কারুর মুখে কোন কথা নেই। সুপ্রিয় স্তব্ধতা ভাঙে।

কি ব্যাপার আপনি মরতে যাচ্ছিলেন কেন?


মেয়েটি কোন কথা বলে না। মরা মাছের মত তাকায় সুপ্রিয় দিকে।

উত্তর দিন!

আপনি আমাকে বাঁচালেন কেন?

সুপ্রিয় থমকে যায় কি বলবে মুহূর্তে ঠাওর করতে পারে না একটা অদ্ভুত এক্সপ্রেশন ফুটে ওঠে মুখে। পরক্ষণে স্বাভাবিক হয়ে বলে, 'এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলাটা ঠিক নয়। আসুন ওদিক টা যাই

10 months ago