দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের (Debjani Mukherjee) করা অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর মায়ের লেখা চিঠি ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিল সিআইডি। সেই বিবৃতিতে উল্লেখ, সিআইডি (CID) একটি তদন্তকারী সংস্থা, আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করে এবং আগামি দিনের করবে। জয়নগর থানায় দায়ের হওয়া একটা মামলার প্রেক্ষিতে বয়ান রেকর্ড করতে ২৩ অগাস্ট দমদম জেলে (Dumdum Jail) গিয়েছিলেন সিআইডির একজন তদন্তকারী অফিসার। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলের মহিলা পুলিস এবং সংশোধনাগারের অন্য কর্মীরা। আদালতের নির্দেশে দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের বয়ান রেকর্ড করেন সিআইডির আইও বা তদন্তকারী অফিসার।
তাই দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের মায়ের আনা অভিযোগ খণ্ডন করছে সিআইডি এবং সংবাদ মাধ্যমকে অনুরোধ ধরনের মিথ্যা প্রচারে কান না দিতে। তবে দেবযানীর এবং তাঁর মায়ের লেখা চিঠিতে দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে সুদীপ্ত সেনের থেকে টাকা নেওয়ার বয়ান লিখতে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই দু'জনের মধ্যে অন্যতম সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, 'কাজ করবে না, সিআইডিকে দিয়ে আকাজ করাবে রাজ্য প্রশাসন।' সিপিএম নেতা জানান, যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে আমরা প্রস্তুত। ৮ বছর ধরে একজন জেলবন্দি, তাঁকে দিয়ে এখন বয়ান লেখাতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। একুশের ভোটের আগেও একটা চিঠি লেখানো হয়েছিল, সেখানে আমার নাম, বিমান বসুর নাম ছিল এই কাণ্ডের তদন্ত হোক। কোন অফিসার, কোন তৃণমূল নেতার অঙ্গুলিহহেলনে এই কাজ করেছে সেটাও তদন্তের আওতায় আনা হোক। এভাবেই দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য প্রশাসন এবং শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সুজন চক্রবর্তী।
পাশাপাশি রয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, যার নামও উল্লেখ মা-মেয়ের চিঠিতে। শুভেন্দুর ট্যুইট, 'অপমান, সম্পূর্ণ অপমান। একসময়ের মর্যাদাপূর্ণ সংস্থা সিআইডি এখন বাংলার পিসি-ভাইপোর বেতনভুক দ্বাররক্ষী হয়ে উঠছে। বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার জন্য বিচারাধীন বন্দিকে ভয় দেখিয়ে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের স্বার্থরক্ষায় অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে সিআইডি।'
Disgrace, total disgrace!
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) September 8, 2022
The once glorious CID has now become the paid janitor of WB's Bua-Bhatija.
CID is indulging in criminality for advancing the nefarious interest of the Banerjees by intimidating under trial prisoners to give false statements against WB Opposition Leaders: pic.twitter.com/fHdZJyLgvZ
ফের বিস্ফোরক তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Ray)। শুক্রবার দমদমের এক অনুষ্ঠানে বিরোধীদের পিঠে তাল পড়ার প্রসঙ্গ টেনেছেন এই প্রবীণ সাংসদ (TMC MP)। তিনি বলেন, 'আপনারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলুন কোনও আপত্তি নেই। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) সম্বন্ধে বলুন, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু ভুল করে একথা বলবেন না, তৃণমূল সবাই চোর। তাহলে পিঠে তাল পড়লে দুঃখ করবেন না। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কুৎসা করবেন না। দুর্নীতির রানী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata) এসব বললে আমাদের ছেলেরা রেগে যায়। রেগে গেলে মানুষের মাথা ঠিক থাকে না, কী করবে আমরা বলতে পারছি না। সিপিএম, বিজেপি সবাইকে এ কথা বলে যাচ্ছি।'
গণতন্ত্রে আপনারা অন্যভাবে প্রচার করুন, দেশে আইন আছে, আপনারা আইনি ব্যবস্থা নিন। দোষ হলে এমন একটা ভাব যে তৃণমূল পচে গিয়েছে, এটা নয়। এভাবেও দমদমের অনুষ্ঠানে সরব ছিলেন সৌগত রায়।
শুক্রবারের অনুষ্ঠানে তিনি ক্যালকাটা নিউজ বা সিএন চ্যানেলের নাম উল্লেখ করে হুমকি দেন দমদমের সাংসদ। তিনি অনুষ্ঠানমঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, 'এখানে একজন সিএন-র উপস্থিত আছে। সিএন-র মতো সত্যের অপলাপ করে এমন চ্যানেল আমি দেখিনি। এই চ্যানেলের মালিকরা থাকে বিরাটি, ইচ্ছে করলে চ্যানেলটা বন্ধ করে দিতে পারি। কিন্তু আমরা একাজে বিশ্বাস করি না।'
যদিও সৌগত রায়ের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'আমরা গান্ধীবাদী। এযাবৎকাল আমরা মার খেয়ে বড় হয়েছি, অত্যাচারিতদের পাশে মানুষের সহানুভূতি থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরো দেহে মারের দাগ। রাজশক্তি শেষ কথা বলে না, জনশক্তি শেষ কথা বলে।'
কী বললেন সৌগত রায় এবং ফিরহাদ হাকিম:
দমদমের (Dumdum) সুভাষনগর এলাকায় মাংসের দোকান বসা ঘিরে স্থানীয় এক দোকানিকে মারধরে অভিযুক্ত কাউন্সিলরের অনুগামীরা। এই ঘটনায় আহত এক স্থানীয় মহিলা। দু'পক্ষের তরফে দমদম থানায় (Dumdum Police Station) অভিযোগ দায়ের। অভিযোগ, দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল (TMC) কাউন্সিলর ঊষা দেবনাথের স্বামী তাঁর দলবল নিয়ে এসে ওই মাংসের দোকানিকে সংশ্লিষ্ট জায়গায় বসতে বারণ করেন। কাউন্সিলরের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ড কমিটির সদস্য অন্য মহিলারা এসে বলেন, 'বাড়ির মালিকের আপত্তি আছে তাই এখানে মাংসের দোকান বসানো যাবে না।' এই থেকেই শুরু বচসা এবং কাউন্সিলরের অনুগামীদের সেই মাংস বিক্রেতা মহিলার উপর চড়াও হওয়ার ঘটনা। এমনটাই অভিযোগ করেছেন সেই মাংস ব্যবসায়ীর ছেলে।
সেই সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন স্থানীয় এক মহিলা প্রিয়াঙ্কা দাস। তাঁর অভিযোগ, 'ঘটনার ভিডিও মোবাইলবন্দি করছি এই সন্দেহে তাঁর উপরও চড়াও হয়েছিলেন কাউন্সিলরের অনুগামীরা।' প্রিয়াঙ্কা দাসের শরীরের একাধিক জায়গায় মারধরের চিহ্ন স্পষ্ট। যদিও গোটা এই অভিযোগ খারিজ করেছেন কাউন্সিলর ঊষা দেবনাথ এবং তাঁর অনুগামীরা। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জানান, বাড়িওয়ালা বাড়ির সামনে থাকা মাংসের দোকান নিয়ে আপত্তি তুলে আমাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তখন আমি কয়েকজনকে পাঠিয়ে ওই মহিলা ব্যবসায়ীকে ওখান থেকে উঠে যেতে বলি। আমাদের মেয়েরা গেলে ওই মহিলা উলটে চপার নিয়ে ওদের পিছু ধাওয়া করে সোনার চেন ছিনিয়ে নিয়েছেন।
তাই অভিযুক্তর শাস্তির দাবিতে আমরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। এদিকে, ওই মাংস ব্যবসায়ীর ছেলের দাবি, 'যে বাড়ির সামনে তাঁদের দোকান, সেই বাড়ির মালিকের কোনও আপত্তি ছিল না। আমরা কথা বলেই নিয়েছিলাম। সেই প্রমাণও আছে। কিন্তু আমার মা-কে এখান থেকে তুলতে, কাউন্সিলরের দলবল বাড়িওয়ালাকে ভয় দেখিয়ে সিদ্ধান্ত বদল ঘটাতে বাধ্য করে। তারপরেই এই হামলা।'
দক্ষিণ দমদমে (South Dumdum) তৃণমূল কাউন্সিলরের নাম করে এবার পড়লো পোস্টার (poster)। সেই পোস্টারে লেখা টেটে (TET) চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা আর্থিক প্রতারণা বরুণ নন্দী দূর হাটো। কিন্তু কেন পড়ল এই পোস্টার? কী আসল ঘটনা?
দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাগান (Laalbagan) এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর বরুণ নন্দীর নামে তাঁর ওয়ার্ড অফিস এবং ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে পোস্টার, পোস্টারে লেখা আছে টেটে চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপে অভিযুক্ত বরুণ নন্দী দুর হটো। এর আগেও দেখা গিয়েছিল বরুণ নন্দীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছিলেন বেশ কিছু মানুষজন চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাৎ করার। তারপর ফের একই পোস্টার তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। রাতের অন্ধকারে কে বা কারা এই পোস্টার বরুণ নন্দীর ওয়ার্ড অফিস এবং বিস্তীর্ণ এলাকায় ফেলল এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
যদিও তৃণমূল কাউন্সিলর বরুণ নন্দী এই বিষয়ে জানান, "কী পোস্টার পড়েছে আমি জানিনা, জিনিসটা পুরোপুরি মিথ্যা যে বা যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তাঁদের বিরুদ্ধে আমিও প্রচুর অভিযোগ করতে পারি। গৌতম সাহা মণ্ডল আগে টিভিতে যে মন্তব্য করেছিল আমি তাঁর সুস্থতা কামনা করে বলি, তাঁর একটা ক্ষোভ আমার বিরুদ্ধে থাকবেই। ২০১৫ সালে দলের টিকিট পাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু প্রথম কথা তিনি কোন দল করে এখনও বুঝতে পারলাম না। এর আগে আমার বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে হেরেছে। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। আমার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। গৌতম সাহা মণ্ডল এখন বিজেপি করছে তিনি এই সমস্ত কিছু করছেন এবং আমি মানহানির মামলা করেছে।
যদিও এ বিষয়ে বিজেপি নেতা বিমল শংকর নন্দ জানান, তৃণমূল নেতারা নিজেরা ঠোগী। তাই সব কিছুতে তাঁরা ষড়যন্ত্র দেখে। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন তিনি বিগত ৭-৮ দিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে তিনি কী করে পোস্টার মারবেন। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।