চিরঞ্জিত চক্রবর্তী (অভিনেতা ও বিধায়ক): রাত পোহালেই ভারতীয় চলচিত্রের অন্যতম সেরা রোমান্টিক নায়ক প্রয়াত দেব আনন্দের শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। সিএন পোর্টাল থেকে এই শতবর্ষ নিয়ে আমাকে কিছু লিখতে বলা হলো। আমি কিন্তু ওই তথাকথিত 'কবে জন্ম, কটি ছবি বা সেরা ছবি' ইত্যাদি নিয়ে লিখবো না বরং কিছু অন্য কথা লিখি।
দেবসাহেব আমার প্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম। আমি যখন ছবির জগতে আসি তখন অনেক কথার মধ্যে জানতে পেরেছিলাম যে দেব আনন্দ নাকি সারাদিনে একটি আপেল খেয়ে দিন কাটান। শরীরটা রোগা রাখার জন্য। এ ছাড়া শুনেছিলাম তিনি নাকি পেট পাতলা রাখতেন ওই একই কারণে। অদ্ভুত লেগেছিলো। ভেবেছিলাম আমিও ওই একটা আপেল খেয়ে দিন কাটাবো। কিন্তু অবাস্তব হয়েছিল সেই পরিকল্পনা। যাই হোক, আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করেন যে কেমন অভিনেতা ছিলেন তিনি। আমি বলবো, তিনি রোমান্টিক নায়ক ছিলেন সেই ১৯৪৬ থেকেই।
আমরা বলি কমার্শিয়াল ছবি আর ইন্টেলেকচুয়াল বা আলাদা ছবি। তা দেবসাহেব টিপিকাল কমার্শিয়াল ছবিই করে গিয়েছেন চিরকাল, ব্যতিক্রম গাইড। এখানে নিজের একটু উদাহরণ দিতেই হয়। আমার শুরুটা মানিকদা বা সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে। আমি তাঁর সহকারী ছিলাম এবং তাঁর একটি ডকুমেন্টারিতে অভিনয়ও করেছি। আমি নিজে অনেকগুলো ছবি পরিচালনা করেছি। চেষ্টা করেছি আলাদা ছবি করার, যেমন 'সংসার সংগ্রাম' বা 'ভয়'| কিন্তু তখন আমি রীতিমতো বাংলার অ্যাঙ্গরি হিরো, ফলে আমার 'বেদের মেয়ে জোসনা' ছবির ইমেজ থেকে বেরোনোর ব্যাপারটা দর্শক নিলো না। কাজেই আমাকেও টিপিকাল কমার্শিয়াল মারধর ও রোমান্টিক কমার্শিয়াল ছবিই করতে হয়েছে। ইদানিং অবিশ্যি কয়েকটা ভিন্ন ধরণের ছবি করলাম কিন্তু সে তো আজকের যুগ ধরেই।
দেবসাহেবের অনেক ছবিই দেখেছি। আগেকার সাদাকালো ছবিও। অবিশ্যি ওই পুরোনো ছবি টাটকা দেখিনি পরে দেখেছি। ৫০ দশক থেকে ৭০ দশকের মধ্যভাগ অবধি তিনি ছিলেন সুপারহিট নায়ক। গোয়েন্দা বা রহস্য ছবি মানেই ঠোঁটে সিগারেট দেওয়া দেব আনন্দ। অনেক ছবির প্রযোজক পরিচালক তিনিই ছিলেন। হরে রাম হরে কৃষ্ণ ছবি তো হিন্দি ছবিকে আলাদা ধারায় এনে দিয়েছিলো। তিনি দিলীপ কুমার বা রাজ কাপুরের মতো চরিত্র নিয়ে পরীক্ষায় বিশ্বাসী ছিলেন না। এরপর আরও ৩০/৩৫ বছর নিজের পরিচালনা বা প্রযোজনায় অসংখ্য ছবি করেছেন কিন্তু সিংহভাগই সুপার ফ্লপ। নিজের জায়গা থেকে তিনি কিন্তু নড়েননি। চালিয়ে গিয়েছেন। একবার কোনও এক মাল্টি প্রেক্ষাগৃহে অন্য একটা ছবি দেখতে গিয়েছি, দেখলাম দেব আনন্দের শেষ ছবিটি নাকি একটি স্ক্রিনে দেখানো হবে, পরে শুনলাম হবে না কারণ একটি মাত্র টিকিট বিক্রি হয়েছে।
দেবসাহেবের জীবনটাকে যদি দু'ভাগ করা যায় তবে দ্বিতীয় ভাগটি নির্মম। ওই ধরণের হিরো ফ্লপ শো করছে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। দেব আনন্দের শেষ সময়টিও ভালো লাগে নি। বৃদ্ধ হয়েছেন অথচ মুখচোখের চামড়া যেন ঝুলে পড়েছে। শরীর রোগা রাখতে এই কোন ফর্মুলা কে জানে? আজ শতবর্ষের সময়ে একটি কথাই লিখবো, ভারতে হলিউড ধারার নায়ক যদি কেউ এসে থাকেন তবে তিনি দেব আনন্দ। প্রণাম দেবসাহেব।
ভিতরে অট্টালিকা-সম বাংলো। বাইরে মোটা পাথর দিয়ে তৈরী দেওয়ালের মাঝে বাড়ির প্রবেশদ্বার। জুহুর এঁদো গ্রামে অবস্থিত এই বাড়ির সামনে একসময় ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকতেন সাধারণ মানুষ। কারণ এই বাড়ি যার তার নয়। এই বাড়িতেই থাকতেন বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা দেব আনন্দ (Dev Anand)। তাঁকে একবার চোখের দেখা দেখতে কত দূর থেকে ছুটে আসতেন ভক্তরা। সেসব এখন অতীত। কারণ অভিনেতা প্রয়াত হয়েছেন অনেক আগেই। তবুও বাড়িটি এখনও রয়েছে। আগাছায় ঢাকা দেওয়ালের মাঝে জ্বলজ্বল করে লেখা রয়েছে 'আনন্দ'।
এই বাড়িটিই এখন সামাজিক মাধ্যমে, সংবাদ মাধ্যমে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ, মাঝে গুজব ছড়িয়েছিল দেব আনন্দের যত্ন করে গড়ে তোলা বাড়িটি নাকি ধূলিস্যাৎ হয়ে যেতে চলেছে। তিনি চলে যাওয়ার পর বাংলোটি দেখভাল করার লোকের নাকি অভাব। অভিনেতার ছেলে থাকেন বিদেশে। অভিনেতার স্ত্রী ও মেয়ে থাকে উটিতে। তাই বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন না কি দেব আনন্দের পরিবার।
ইতিমধ্যেই না কি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে অভিনেতার পরিবারের ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার সওদা হয়ে গিয়েছে। প্রয়াত অভিনেতার বাংলো গুঁড়িয়ে না কি ২২ তলা টাওয়ার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব কী আদৌ সত্যি? দেব আনন্দের ভাইপো কেতন আনন্দ, এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন।
তিনি এক ইংরেজি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'এই খবর একেবারেই মিথ্যে। আমি দেবিনা (দেব আনন্দ কন্যা) ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি।' অর্থাৎ ভক্তদের মন খারাপের বিশেষ কারণ এখন নেই।
সত্তরের দশকে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জিনাত আমান (Zeenat Aman)। বর্তমানে তাঁকে আর অভিনয়ে দেখ যায় না। কিন্তু 'দম মারো দম' নায়িকাকে মনে রেখেছে সকলে। সিনেমা জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার আগে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল অভিনেত্রীকে। এমনকি একসময় হতাশা তাঁকে এতটাই গ্রাস করেছিল যে মুম্বই ছেড়ে নিজের মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন জিনাত। এই পরিস্থিতি থেকে তাঁকে টেনে বের করেছিলেন অভিনেতা দেব আনন্দ (Dev Anand)। নিজের সামাজিক মাধ্যমে সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী।
জিনাত নিজের ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, 'বলিউডের মতো ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকে প্রত্যেক অভিনেতা একজন স্টারমেকার খোঁজেন। যে তাঁর মধ্যে লুকিয়ে থাকা তারকাকে খুঁজে নেবেন। খুব কম মানুষ এরকম একজনকে খুঁজে পান। আমিও পেয়েছিলাম। আমার স্টারমেকার ছিলেন দেব আনন্দ।'
এখন থেকেই শুরু জিনাতের আসল গল্প। তিনি লিখছেন, '১৯৭০ সাল তখন। আমি হলচল সিনেমায় একটি ছোট্ট অংশে অভিনয় করেছিলাম। সামান্য জনপ্রিয়তা পেয়েছিলাম। কিন্তু তারপর আর কাজ পাচ্ছিলাম না। আমি ব্যাগ গোছাতে শুরু করি মালটায় ফিরে আমার মা এবং সৎ-বাবার সঙ্গে থাকব বলে। সেই সময় দেব সাহেব এবং তাঁর নবকেতন টিম, হরে রামা হরে কৃষ্ণর জন্য কাস্টিং করছিলেন। তখনই আমার প্রথম সিনেমার পরিচালক তাঁদের আমার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমি সেদিন একটা হলুদ টপ, রঙিন স্কার্ট এবং হলুদ ফ্রেমের একটা চশমা পরেছিলাম। তাঁদের সঙ্গে দেখা করার কিছুদিন পর আমাকে স্ক্রিন টেস্টে দেখা হয়।'
জিনাত আরও লিখেছেন, 'সেই গাঁথা এখানেই শেষ নয়। আমার পরিবার দেশ ছাড়তে তৈরী হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দেব সাহেব আমার মা-কে অনুরোধ করেন, কিছুদিন পরে ফিরতে। আমরা কাঠমান্ডু চলে যাওয়ার বদলে আমরা জনপ্রিয় একটি হোটেলে অপেক্ষা করতে থাকলাম। শ্যুটে ডাক পাওয়ার আগে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছিলাম।'
প্রসূন গুপ্ত: সিনেমা জগতে প্রেমপর্ব অনেকটা জলভাতের মতো। মানে করলেই হলো, এমনটি নয় যে আজকের কাহিনী। একেবারে হিন্দি ছবির গোড়ার দিন থেকেই প্রেমের ঘটনা ও বিচ্ছেদের কাহিনী লিপ্ত আছে। দেব আনন্দের সঙ্গে প্রেম ছিল অসাধারণ সুন্দরী সুরাইয়ার। সুরাইয়া মুসলিম ছিলেন ফলে তাঁর বাড়ির থেকে ঘোর আপত্তি ছিল অসম বিবাহে। সুরাইয়া শেষ দিন অবধি অবিবাহিত থাকলেন। আর দেব আনন্দ প্রেম করে বিয়ে করলেন নতুন নায়িকা কল্পনা কার্তিককে। এরপরও বহু নায়িকা দেবের প্রেমে পড়েছেন। রাজ কাপুরও প্রেমে পড়েছেন বহুবার। নায়িকারা মুখিয়ে থাকতো রাজের প্রেমে পড়ার জন্য। নার্গিস, পদ্মিনী, বৈজয়ন্তীমালা থেকে বয়সে অনেক ছোট সিমি, প্রেমে পড়েছিলেন রাজ কাপুরের।
কোনওটাই টেকেনি। দিলীপ কুমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল এক পাকিস্তানি নায়িকার। শোনা যায় দিলীপের প্রিয়পাত্রী ছিলেন মধুবালা। সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কিন্তু সায়রার আবার দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গে। এ ব্যাপারে ধর্মেন্দ্র একেবারে রোমিও ছিলেন। প্রথম থেকেই বিবাহিত ধর্মেন্দ্রর প্রথম প্রেম মীনা কুমারীর সঙ্গে পরে নিয়মিত প্রেমে পড়েছেন বহু নায়িকা। শেষ পর্যন্ত বিবাহিত ধর্মেন্দ্রকে বিয়ে করেন হেমা মালিনী।
অবশ্য এর আগে দুজনই মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে সংবাদ। আজকের নায়িকাদের প্রেম করা মানে টাইম পাস। কে যে কখন প্রেমে পড়ছে কার কখন ছাড়াছাড়ি হচ্ছে, সে খবর মিডিয়ায় উঠতে উঠতে ক্লান্ত। কারণ বিয়ে না করে সংসার আজকের ফ্যাশন। তবে সুস্মিতা সেন প্রেমের মাহাত্ম্য টেক্কা দেয় অনেককেই। নিয়মিত প্রেম করেছেন নানা নায়ক কিংবা পরিচালক বা প্রযোজকের সঙ্গে। কিন্তু গুঞ্জন আছে এই প্রেমের শর্ত নাকি একটাই ছিল যে সাত পাঁকে বাধা চলবে না। অনেকেই বলে সুস্মিতার মধ্যে প্রেম বস্তুটিই নেই নতুবা বিতর্কিত ললিত মোদির প্রেমে পড়ে কেউ? এখনও নাকি সুস্মিতা রয়েছেন ললিতের সঙ্গেই।
এদেশে ফিরলেই ললিতকে গ্রেফতার হতে হবে জেনেও নাকি এই প্রেম। ললিত বর্তমানে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেন তিনি। শেষ খবর সুস্মিতার ভাই নাকি ললিতের সুস্থতা কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছেন, ধন্যি মেয়ে।