সৌমেন সুর: মা সারদা ছিলেন ধৈর্য, সরলতা ও দয়াভাবের প্রতিমূর্তি। তার জন্ম কাহিনী নিয়ে একটা মত প্রচলিত আছে। সারদা মা স্বয়ং এই প্রসঙ্গে কথা বলেছিলেন। ' আমার মা শিহরে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলেন। মা ছিলেন অত্যন্ত ভক্তিমতী, নিষ্ঠাবান ও কর্তব্যপরায়ণ। ঠাকুর দেখে ফিরবার সময় হঠাৎ শৌচে যাওয়ার ইচ্ছে হওয়ায় একটা গাছের কাছে যখন যান, তখন শৌচ আর হলো না, মা দেখলেন একটা আলো তাঁর পেটের মধ্যে প্রবেশ করলো, আর দেখলেন, একটা ৫-৬ বছরের একটি মেয়ে গাছ থেকে নেমে আসে, পরনে লাল চেলি। মেয়েটি হাসিমুখে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, 'আমি তোমার ঘরে আসছি মা।' এলে মেয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় আর মা অচৈতন্য হয়ে যায়।
১২৬০ বঙ্গাব্দের ৮ই পৌষ বৃহস্পতিবার রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ঘরে মঙ্গলশঙ্খ বেজে উঠলো। গ্রামবাসীর কাছে খবর পৌঁছালো, রামচন্দ্রের ঘরে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। সকলে শিশুকন্যার মঙ্গল কামনা করতে লাগলেন। এদিকে জন্মপত্রিকা অনুসারে নাম দেওয়া হল ঠাকুরমনি দেবী। লোকবিশ্রুত নাম সারদামনি। পরবর্তীতে নাম হয়ে যায় সারদা। ১২৭১ সালে এ দেশে ভীষণ দুর্ভিক্ষ হয়। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষেরা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে দলে দলে আসতো দুটো ভাতের আশায়। রামচন্দ্র ছিলেন দরিদ্র ব্রাহ্মণ।
মানুষেরা যাতে ফিরে না যায় তার জন্য মরাই থেকে ধান বার করে চাল করে সবাইকে খাইয়েছেন। মা সারদা ওই ছোট্ট বয়সে পরিবেশন করেছেন। কাউকে দুহাত দিয়ে বাতাস করেছেন। বাড়িতে দলে দলে মানুষ। কাউকে ভুখা পেটে ফিরে যেতে হয়নি। এমনই মানুষ ছিলেন মা সারদা। সেই বাল্য বয়সেই বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য কত দয়া! ছোটবেলায় যিনি দিন দুঃখী মানুষদের অন্ন জুগিয়েছেন, তিনি যে জগতের মা হয়ে উঠবেন সেটাই তো স্বাভাবিক।
সেই যুগে সমাজে বাল্যবিবাহ প্রথা ছিল। সারদা দেবীর মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ২২ বছর বয়সের শ্রীরামকৃষ্ণের সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের আয়োজন ঈশ্বর আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছিলেন। সারদা মায়ের মামার বাড়ির কাছে একটা শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান হয়। মেলা, যাত্রা আরও কত কি। যাত্রাপালা শেষ হলে এক মহিলা সারদাকে জিজ্ঞাসা করেন, 'এই যে এত লোক এখানে রয়েছে এর মধ্যে কাকে তোর বর করতে পছন্দ?' সারদা দেবী আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল যুবক রামকৃষ্ণকে। এখন মা সারা পৃথিবীতে বিরল। আমরা পরম শ্রদ্ধা ভরে মায়ের চরণে শতকোটি প্রণাম জানিয়ে বলি, 'মা, তুমি জগতের মা, তুমি সতেরও মা, অসতেরও মা। তুমি আমাদের রক্ষা করো।'
সৌমেন সুর: জন্মের সময় পিতা কৃষ্ণধন ঘোষ শিশু অরবিন্দের নাম রাখেন 'অরবিন্দ অ্যাকরয়েড ঘোষ। পরে স্বয়ং অরবিন্দই নিজের নামের থেকে অ্যাকরয়েড শব্দটি বাদ দেন। পিতা কৃষ্ণধন 'অরবিন্দ' নাম রেখেছিলেন পদ্ম- এর নাম অনুসারে। তাঁর সুপ্ত বাসনা ছিল, তাঁর সন্তানেরা এক একজন দেশের শতদল হয়ে ফুটে উঠুক। আলোকে যেমন চেপে রাখা যায় না, তেমনি প্রতিভাকে জোর করে চেপে রাখা যায় না। সেটা অরবিন্দের মেধা দেখে বুঝতে পেরেছিলেন- ল্যাটিন ভাষার সু পণ্ডিত মিঃ ড্রয়েট। শিশু অরবিন্দ অসামান্য মেধায় খুব কম সময়ের মধ্যে শেক্সপিয়ার, শেলী, কিটস ও অন্যান্য ইউরোপীয় লেখকের লেখা পড়লেন এবং আত্মস্থ করলেন। এই অসাধারণ মেধা দেখে মিসেস ড্রয়েট চেয়েছিলেন খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করতে। কিন্তু মিস্টার ড্রয়েট তাঁকে নিরস্ত করেন, যেহেতু শিশু অরবিন্দের ধর্ম ও দর্শনের প্রতি আগ্রহ ছিল না সে সময়।
শিশু অরবিন্দকে যখন লন্ডনে 'সেন্ট পলস স্কুলে' ভর্তি করে দেওয়া হয় তখন স্কুলের হেডমাস্টার অবাক হয়ে গেলেন শিশু অরবিন্দের ল্যাটিন ভাষায় ব্যুৎপত্তি দেখে। উনি এবার চেষ্টা করলেন জটিল গ্রীক ভাষা শেখাতে। কি আশ্চর্য, যে ভাষা শিখতে মানুষের দম ছুটে যায়, সে ভাষা অরবিন্দের কাছে সহজ সরল। জীবনের প্রথম ২১ বছরের মধ্যে শেষ ১৪ বছর কেটেছিল ইংল্যান্ডে। প্রথম সাত বছর ভারতে কাটলে ও তার মধ্যে দু'বছর কেটেছিল কনডেন্ট স্কুলে। ইংল্যান্ডের প্রতি অরবিন্দের কোনও আকর্ষণ জন্মায়নি। শুধুমাত্র সাহিত্য ছাড়া। বরঞ্চকিশোর অরবিন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফ্রান্স। সেখানকার মানুষের শিক্ষা ও আন্তরিকতার জন্য।
দেশে ফিরে আসার পর কিশোর অরবিন্দের পাশ্চাত্য রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে একটু সময় লাগে। এরপর আমরা পায়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন অরবিন্দকে। তাঁর মুখ থেকে শোনা যায় ভারতীয় সংস্কৃতির কথা। তবে ভারতীয় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিলেও ইউরোপীয় সংস্কৃতিকে অসম্মান করেননি। বরং উভয় সংস্কৃতির মিলনের ফলে মনের গভীরতা আরো উদার হয়। অরবিন্দের পিতা আদ্যোপান্ত সাহেব হলেও নিজেও দেশকে কোনদিন অস্বীকার করেননি। ধীরে ধীরে কিশোর অরবিন্দের মনে যে সব প্রেমের যে বীজ বপন হয় তা তাকে পরবর্তীতে একজন আদর্শ দেশপ্রেমিক আদর্শ বিপ্লবী রূপে সাহায্য করে। তথ্যঋণ তীর্থ মিত্র।
পরনে উলের সোয়েটার, লম্বা লাল প্যান্ট আর মাথায় টুপি। ছোট্ট বাচ্চাটির চোখে মুখে সরলতার ছাপ। ছবিটি যে কোনও স্টুডিওতে তোলা হয়েছিল তা বোঝাই যাচ্ছে। স্মৃতির অ্যালবাম থেকে এই ছবিটিই তুলে এনেছেন অভিনেতা। শুধু তাই নয়, সামাজিক মাধ্যমে ভক্তদের জন্যও এই ছবি শেয়ার করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, 'তখনও সরল ছিলাম, আজও সরল।' যদিও অভিনেতা শেয়ার না করলে বোঝাই যেত না ছোটোবেলাটি আসলে কার।
যখন এই ছবিটি তোলা হয়েছিল বাচ্চাটি জানতই না, বড় হয়ে খুব নাম করবে সে। টলিউডে সে অর্থে কোনও গড ফাদারের প্রয়োজন পড়বে না। প্রথম ছবি থেকেই খুলে যাবে ভাগ্যের চাকা। বাচ্চাটি জানত না, তাকে আর ঘুরে তাকাতে হবে না। আপামর পশ্চিমবঙ্গবাসী তাঁকে ভালো মনের মানুষ হিসেবে চিনবে। বাচ্চাটি আরও জানত না, বহু দর্শককে সে নিজের কমেডি টাইমিং দিয়ে হাসাবে। বাচ্চাটি এও জানত না, তাঁর কয়েকটি শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত মন্তব্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা হবে। বাচ্চাটি একেবারেই জানত না, একসময় 'অঙ্কুশ হাজরা' এক নাম পরিচিত হবে।
হ্যাঁ, সেদিনের ছোট্ট বাচ্চাটি আজকের অঙ্কুশ হাজরা। সামাজিক মাধ্যমে অভিনেতাই নিজের ছোটবেলার এই ছবিটি শেয়ার করেছেন। তিনি যে ছোটবেলায় 'সরল' ছিলেন তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। নেইজেনদের বেশিরভাগই এই ছবির প্রশংসা করেছেন। অনেকে আবার যথারীতি ট্রোলও করেছেন।
পার্থ ভৌমিক (সেচমন্ত্রী-পশ্চিমবঙ্গ সরকার): সিএন পোর্টাল থেকে বললো যে রবিবার বন্ধুত্বের দিবস বা ফ্রেন্ডশিপ ডে। আমাদের যুগে এতশত বুঝতাম না যে এটারও আবার একটা দিন হতে পারে। একটা কথাই বাস্তব, ছোটবেলা থেকে পড়াশুনা-খেলাধুলা সবেতেই বন্ধুত্ব থাকতো যা কিনা আজকেও আছে। আমি হয়তো আজ রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হতে পারি, হয়তো সরকারি সিকিউরিটি নিয়ে অফিস যেতে হতে পারে, কিন্তু এখনও অফিসে যাওয়ার পথে কাউকে দেখলে থেমে যাই বা হাত নাড়িয়ে ডেকেনি।
এ অভ্যাস আমার আর পাঁচ জনের মতো। মানে বন্ধুত্বের কথা বলি। মনে পড়ে যাচ্ছে স্কুল জীবনের কথা। ক্লাস করার থেকে টিফিনে দুস্টুমিই বেশি মনে পড়ে। খেলাটা আমার নেশা ছিল স্কুলে তো ফুটবল খেলতামই। কিন্তু ছুটির পর পাড়ার মাঠে খেলাটাই বেশি পছন্দের ছিল। লাল হলুদ জার্সির আকর্ষণ তো ছিলই। লাইন দিয়ে বিস্তর খেলা দেখেছি। দলবল নিয়েই যত কাণ্ড আমার ছিল। এমন কোনও দিন থাকতো না যেদিনটা বন্ধুহীন হয়ে থাকতাম।একটু বড় হওয়ার পর তো আমাদের পুজোর মধ্যে চলে এলাম। তখন পড়ার বাইরে খেলা আড্ডা এবং পুজোতে কাজ করাটাই ছিল আসল। অষ্টমীতে দল বেঁধে সবার বাড়িতে খিচুড়ি বিতরণ এবং কালী পুজোতে তো দায়িত্ব আরও বেড়ে যেত। আমাদের নৈহাটিতে কালী পুজো বিখ্যাত। ফলে অন্য ক্লাবের পুজোর সঙ্গে টক্কর তো থাকতো।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বন্ধুদের সঙ্গে একটু ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিলাম। বাড়ি ফেরার পথে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে গন্ধ দূর করার একটা আর্ট ছিল। ধরা পরে মার খাবার কথাও ভুলিনি। ইস এতো বছর বাদে ওই দিনের কথা লিখতে বসে কত কথা মনে পরে চোখে জল এসে যাচ্ছে। আমার মনে হয়ে ছোটবেলার বন্ধুই সেরা বন্ধু। যদিও কলেজে ঢুকে নিজেকে অনেকটাই স্বাধীন মনে হয়েছিল। এরপর তো কলেজের আড্ডা, রাজনীতি, অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা ইত্যাদির সঙ্গে ভীষণ ভাবে যেটা ভালো লাগলো তা হচ্ছে নাটক। আজকেও শত কাজের মধ্যে নাটকটা সুযোগ পেলে করি। এখানকার বন্ধুরা আবার একটু গম্ভীর মেজাজের। আমার গিন্নি দারুন সংগীত শিল্পী, কাজেই ওর সঙ্গে আগে অনেকটা সময় কাটতো সংস্কৃতি মানসে। ও তো আমার প্রিয় বন্ধুই বটে, এ ছাড়া আমার সন্তানরাও আমার বন্ধু।
রাজনীতি করি, যাদের সঙ্গে করি তাঁরা আমার বন্ধু। এখন তো ওদের সঙ্গেই কাজ। এ ছাড়া দপ্তরে তো কাজের ফাঁকে যোগাযোগ রাখি বন্ধুদের সাথে। মনে হয়ে ভগবানকে বলি, আমি যেন সকলের পার্থ হয়েই থাকতে পারি এবং আপনারা আমার বুদ্ধিদাতা কৃষ্ণ। (অনুলিখন- প্রসূন গুপ্ত)
সৌমেন সুরঃ স্কুলে নরেন ক্লাসে মন দিয়ে শিক্ষকের পড়া শুনতেন। এত ইনভলভ্ হয়ে যেতেন যে, মাঝে মাঝে শিক্ষকেরই ভ্রম হয়ে যেতো। শিক্ষক মহাশয় মনে করতেন নরেন বুঝি ঘুমাচ্ছে। যখন বলতেন, এতক্ষণ কি বললাম বলো তো? নরেন শিক্ষকের সবটুকু lesson আগাগোড়া নির্ভুলভাবে বলে দেয়। শিক্ষক মহাশয়, নরেনের স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। যার গুনে একটা গোটা বই একবার গভীরভাবে চোখ বোলানোর পর পুরো বই নির্ভুলভাবে বলতে পারতেন। ছেলেবেলায় নরেন তার বন্ধুদের নিয়ে একটা বাগানে খেলতে আসতেন। সেই বাগানের মালিক এদের খেলা বন্ধ করবার জন্য একটা ফন্দি আটেন। যখন ছেলেরা আসে তখন বাগানের মালিক ছেলেদের বলে, এখানে খেলাধূলা তোমরা কোরো না। ঐ গাছে একজন দৈত্য আছে, সে যদি দেখে, তোমাদের বারণ করা সত্ত্বেও তোমরা খেলছ- তাহলে দৈত্য রেগে গিয়ে তোমাদের চরম ক্ষতি করে দিতে পারে। এই কথা শুনে সবাই ভয়ে চলে যায়। কিন্তু নরেন ভয় পায় না। মালিকের বয়ান দেওয়া ঐ গাছে সত্যি দৈত্য আছে কিনা তা পরখ করবার জন্য সারারাত গাছে উঠে বসে থাকে। কিন্তু কোনো দৈত্যের দেখা পাই নি। এই ব্যাপারটা যখন মালিক জানতে পারে তখন উনি খেলার অনুমতি দেন। এখান থেকে আমরা দেখতে পাই- নরেনের সাহসিকতাও অকুতোভয়।
আর একটা ছবি আমরা দেখতে পাই- ছোটবেলা থেকে তার নেতৃত্ব দেবার শখ। তাঁর সমস্ত বন্ধুদের মধ্যে লীডারশীপ নরেনের। নরেনকে সবাই নেতা হিসাবে মান্য করতো। নরেন যা বলতো, তা অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য ও মনোমুগ্ধকর। বিবেকানন্দের নেতা হওয়ার পিছনে ছিল, সবাইকে সমদৃষ্টিতে দেখা, সকলের প্রতি আন্তরিকতা এবং অন্যকে ছোট না করার মনোবৃত্তি, এগুলো প্রতিভাত হওয়ার দরুন বিবেকানন্দর নেতা হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছিল। উ্রনবিংশ শতাব্দীর যুৃব সমাজের পথপ্রর্দশক সেজে উঠেছিলেন ভবিষ্যতের জন্য। বিলে থেকে বিবেকানন্দ হয়ে উঠতে যে শ্রম, অধ্যবসায়, দৃঢ়তা, ইচ্ছাশক্তির দরকার ছিল, তা তাঁর শরীরের Out & out বিদ্যমান। নরেন জানতো, কিভাবে ভ্রাতৃত্ববোধ, মমত্ব দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায়। এই ভ্রাতৃত্ববোধ মানুষের মনে গাঁথতে পারলেই সারা বিশ্বকে গেঁথে নেওয়া একদম সহজলভ্য হয়ে দাঁড়াবে। এই মনোভাব ছিল বলেই তিনি একদিন যুব নেতা থেকে বিশ্বনেতা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সৌমেন সুর : যখন ভারতবর্ষ দারিদ্রতায় ডুবে যাচ্ছে, ধর্ম যখন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, শিক্ষিত মানুষজন অপরের অনুকরণে ব্যস্ত-সারা দেশ এক চরম অস্তিরতায়, সঠিক পথটা কি, কি করলে মানুষ একটু স্বস্তি পাবে, এইরকম পটভূমিকায় উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রীটে জন্মগ্রহণ করেন নরেন। বিখ্যাত দত্ত পরিবারে। আসল নাম নরেন্দ্র নাথ দত্ত। শৈশবকালের নাম বীরেশ্বর ওরফে বিলে। এই নরেনই হলেন ভারত জাগরনের অন্যতম পথিক। নরেনের পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন হাইকোর্টের নামকরা অ্যাটর্নী। মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী ছিলেন ধর্মপ্রাণ মহিলা। ছেলেবেলা থেকেই বীরেশ্বর আধ্যাত্বিকপ্রবন ছিলেন। এই সিমটম তাঁর মায়ের জন্যই সম্ভব হয়েছে। ছোট থাকতেই মা বিলেকে রামায়ন মহাভারত পড়ে শোনাতেন। এই ধর্মগ্রন্থের কাহিনি শুনতে শুনতে বীরেশ্বরের ধর্মের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। এই আধ্যাত্বিক প্রবণতার জন্য বিলের মা ভুবনেশ্বরী দেবী বিলেকে মানসিকভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।
নরেনের ছোট বেলায় আমরা দেখতে পাই--ওর ধ্যানগম্ভীর ভাব। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ধ্যান ধ্যান খেলা। এই খেলায় সবাই যখন মগ্ন। তখন বন্ধুরা দেখছে, বীরেশ্বরের সামনে একটা সাপ ফনা তুলে রয়েছে। বন্ধুরা সবাই পালিয়ে যায়। দূর থেকে বন্ধুরা নরেনকে ডাকতে থাকে। কিন্তু সে ডাক কখনই নরেনের কানে পৌছয় না। কিছুক্ষণ বাদ সাপটি আপনা আপনি চলে যায়। এমনই ছিল নরেনের একাগ্রতা। ছোটবেলা থেকে নরেন সন্ন্যাসী সাজতে ভালবাসতেন। মাঝে মাঝে মাকে বায়না করতেন সন্ন্যাসী সাজিয়ে দেবার জন্য। কখনো কখনো নরেন সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে মাকে বলতেন- কেমন লাগছে? এই দৃশ্য দেখে ভুবনেশ্বরী দেবী মনে মনে ভয় পেতেন। কারণ নরেনের ঠাকুরদা সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করে সংসার থেকে একদিন বিদায় নিয়েছিলেন। তেমন কোনো ঘটনা কি নরেনের জীবনে ঘটবে নাকি!
নরেন ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। যাকে তাকে হুট করে বিশ্বাস করতেন না। পরিস্থিতি বিচার করে তারপর রায় দিতেন। (চলবে)।
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে নিজের স্থান তৈরী করেছেন এই অভিনেত্রী। শুধু তাই নয়, সামাজিক মাধ্যমে বলিউডের যে অভিনেত্রীদের ফলোয়ার বেশি, সেই তালিকায় উপর দিকে রয়েছেন অভিনেত্রী। তাঁর বাবা বলিউডের (Bollywood) জনপ্রিয় অভিনেতা। প্রথম দিকে দু একটি সিনেমা করলেও জনপ্রিয়তা পাননি। তবে 'আশিকি-২' (Aashiqui 2) সিনেমায় অভিনয় তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অনেকেই হয়তো বুঝতে পেরে গিয়েছে এতক্ষণে কার কথা বলছি। এই ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি আর কেউ নয়, শ্রদ্ধা কাপুর (Shraddha Kapoor)।
বলি অভিনেতা শক্তি কাপুর এবং গায়িকা শিবাঙ্গী কাপুরের মেয়ে তিনি। ২০১০ সালে 'তিন পাত্তি' সিনেমা দিয়ে অভিনয় জগতে ডেবিউ করেছিলেন শ্রদ্ধা। ২০১১ সালে 'লাভ কা দি এন্ড' সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। দুটো সিনেমাতেই সাফল্য পাননি শ্রদ্ধা। ২০১৩ সালে অভিনয় করেছিলেন রোম্যান্টিক মিউজিক্যাল সিনেমা 'আশিকি-২' তে। এইবার আর সাফল্য দূরে থাকেনি অভিনেত্রীর।
এক ভিলেন, বাঘী, রক অন ২, ওকে জানু, হাফ গার্লফ্রেন্ড, হাসিনা পার্কার ছবিতে অভিনয় করেছেন। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত সিনেমা 'টু ঝুটি ম্যায় মক্কার' সিনেমাটি। বর্তমানে শ্রদ্ধার ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যা ৮০.৯ মিলিয়ন। তখনকার ছোট্ট এই মেয়েটি যে বড় হয়ে এত অর্জন করবেন, তা কে জানত!
সৌমেন সুর: এখনও রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এদিক-ওদিক চোখ যায়। লোকলজ্জা ও ব্যস্ততার ভয়ে চাইলেও কোনওকিছু কুড়োতে পারি না। তবে ছোটদের কুড়োতে দেখে আনন্দ হয়। আর আমি নিজে হাতে কুড়িয়ে নিতে না পারলেও আমার মন টুকরো টুকরো কত ঘটনা কুড়িয়ে নিয়ে জমা রাখে। শৈশবের সেই অভাবনীয় রেশ রয়ে গিয়েছে বলেই তো এখনো মন যেন কিছু একটা খোঁজে ঘরে-বাইরে, কিছু একটা কুড়িয়ে পাওয়ার কথা ভাবে। কুড়িয়ে পাওয়া নিয়ে যে সন্ন্য়াসীর মনও আলোড়িত করে, সে প্রসঙ্গে একটা সুন্দর গল্প বলেছেন সৈয়দ মুজতবা আলি।
এক বৌদ্ধ শ্রমন শুনেছিলেন যে রাস্তায় কিছু কুড়িয়ে পাওয়া নাকি আনন্দের। এই কথা শুনে তিনি ভাবলেন একবার পরীক্ষা করে দেখাই যাক। তিনি ভিক্ষার কয়েকটি পয়সা বারবার ছড়িয়ে দেন আবার কুড়োতে থাকেন। কিন্তু তার মনে কোনও আনন্দ হয় না। তখন নিজের মনেই ভাবেন, তাহলে সবাই যে বললো- কুড়িয়ে পাওয়ার মধ্যে আনন্দ জাগ্রত হয়। তখন আবার তিনি পয়সা ছড়াতে থাকেন আর কুড়োতে থাকেন। এভাবে ক্রিয়াকর্ম করতে করতে একসময় ঘাসের মধ্যে সব হারিয়ে গেল। এরপর বহুক্ষণ ধরে খুঁজে খুঁজে অবশেষে যখন খুঁজে পেলেন, তখন তিনি চিত্কার করে বলে ওঠেন, কুড়িয়ে পাওয়ার মধ্যে আনন্দ অবশ্যই আছে। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কথা প্রাসঙ্গিক- 'হারিয়ে যাওয়া আলোর মাঝে কনা কনা কুড়িয়ে পেলেম যারে,
রইল গাঁথা মোর জীবনের হারে।
সেই যে আমার জোড়া দেওয়া
খণ্ড আলোর মালা,
সেই নিয়ে আজ সাজাই আমার থালা'
সৌমেন সুরঃ বিষয়টির ওপর কিছু বলতে গিয়ে কয়েকটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, সেগুলো না বললে বিষয়টা সম্পূর্ণ হবে না। যেমন, প্রত্যাশিত প্রাপ্তিযোগে মনে আনন্দ আসে, কিন্তু যা অপ্রত্যাশিত, সেই প্রাপ্তিযোগ মনকে অসম্ভব নাড়া দেয়। শুধু টাকা, পয়সা বা মূল্যবান জিনিস নয়, অপ্রত্যাশিত যে কোনো জিনিস পাওয়া সুখপ্রদ। জীবনে বিভিন্ন অবিস্মরণীয় ঘটনা অপ্রত্যাশিত, তা নানা কুডিয়ে পাওয়ার উজ্জ্বল মুহূর্তের সমষ্ঠি, তাই নয় কি?
আমার ছেলেবেলা থেকে গল্পটা বলি। তখন আমি একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। কোনো কোনোদিন স্কুলে টিফিন নিয়ে যাই। তবে মজার ব্যাপার হলো, যেদিন দু-এক টাকা বড়দের কাছ থেকে পাই, সেদিন আমার ইচ্ছেমতো জিনিস কিনে খাওয়ার আনন্দে মনটা ভরপুর হয়ে ওঠে। এমনিই একটা দিন আমার। ঢোলা হাফ প্যান্ট আর হাফশার্ট পরে স্কুলের পথে চলেছি। মনের অজান্তে পকেটে হাত গলিয়ে অনুভব করি, আমার পকেটে একটা দু'টাকার নোট। বারবার মনে ঘুরেফিরে আসছে-কখন টিফিন হবে আর আমি আমার ইচ্ছেমতো আলুকাবলি বা ছোলামাখা, একটা সবুজ রঙের আইসক্রিম খাবো। এইসব ভাবতে ভাবতে প্রায় স্কুলের সামনে চলে এসেছি। এমন সময় আমার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে আমার সহপাঠী আমার কাছে এসে বলে, তোমার পকেট থেকে এই দু'টাকা পড়ে গিয়েছিল, নাও ধরো। আমি দ্রুত আমার পকেটে হাত গলিয়ে দেখি, টাকাটা নেই। এইবার একই সঙ্গে হারানোর দুঃখ আর পর মুহুর্তে ফিরে পাওয়ার আনন্দে আমি আত্মহারা, স্তব্ধবাক।
এরপর থেকে সহপাঠী বন্ধু আমার প্রাণের বন্ধু হয়ে দাঁড়ায়। দু'জনে মিলে পথে ঘাটে মাঠে জঙ্গলে কতকিছু কুড়িয়ে বেড়িয়েছি, কুড়িয়ে পেয়েছি। তার সবকিছু আজ মনে পড়ে না। তবে সেইসব স্যাঁতস্যাঁতে ডাকটিকিট, তামার এক পয়সা, সোনালি পালক, আরো কতকিছু কুড়িয়ে পাওয়ার আনন্দ আজও বুকের মধ্যে ভিড় করে।
ওবেসিটির সমস্যা এখন প্রত্যেক বাড়িতেই দেখা যায়। তবে চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে, যখন মানুষটি জানেনই না যে, তাঁর স্থুলতা রয়েছে কিনা। এখন স্থুলতা বা ওবেসিটি বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবারই দেখতে পাওয়া যায়। এককথায় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওবেসিটি বর্তমানে বিশ্বে মহামারীর আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। তাই বিশেষজ্ঞরা এখন ছোটদের ওবেসিটির উপর বিশেষ নজর দিতে বলেছেন। কারণ ছোট থেকই ওজন বৃদ্ধি হতে থাকলে তা পরে ওবেসিটির আকার ধারণ করবেই। যা পরে আরও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি হতে থাকলে প্রথম থেকেই তা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
বর্তমান যুগের জীবনযাত্রা ধরণই ওই রোগের জন্য দায়ী বলে ধরা যেতে পারে। কারণ আগেকার দিনের মত বাচ্চাদের এখন আর মাঠে খেলাধুলো করতে দেখা যায় না, তাদের দেখা যায় ফোনের মধ্য়ে মুখ গুজে বসে থাকতে। যার ফলে তাদের এক্সারসাইজ তো দূর, খেলাধুলোও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে ওজন বৃদ্ধি হতেই থাকে। এছাড়াও বেশি করে ফাস্টফুড খাওয়াও স্থুলতার অন্যতম প্রধান কারণ। আর ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে দেখা যায় বিভিন্ন জটিল সমস্যা। স্থুলতার ফলে বাচ্চাদের মধ্যেই দেখা যায় কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা। এমনকী অকালপ্রয়াণ পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই স্থুলতার সমস্যা আছে কিনা, তা জানার জন্য প্রথমেই পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
সুজিত সাহা: শীত এলেই বেড়িয়ে পড়ি হাঁটতে। সঙ্গী হয় আমার পাগল বন্ধু। সময়ের ঠিক নেই-- উদ্দেশ্যহীন যখন যেখানে মন চায়। তেমনি গত ১১ জানুয়ারি যশোর রোড ধরে মাইকেল নগরের কাছে আসতেই কানে এলো মাইকের শব্দ। কৌতুহলবশত শব্দকে অনুসরণ করে পৌঁছলাম গন্তব্যে। করোনাকালে প্রায় তিন বছর চোখে পড়েনি এমন সুন্দর দৃশ্য। কেমন যেন ফিরে গেলাম ছোটবেলায়। সবুজ সুন্দর স্কুল প্রাঙ্গণের একপ্রান্তে নীল-সাদা মঞ্চের উপর মাইকেল নগর শিক্ষা নিকেতন (উচ্চ মাধ্যমিক)-Annual Meet 2023। মাইকে ভেসে এলো স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এখনই শুরু হতে চলেছে। উপভোগ্য পরিবেশে জায়গা মতো দাঁড়িয়ে পড়লাম দু'জনে। ছোটবেলার ইতিউতি কথা মনকে নস্টালজিক করে তুললো।
মান্যবরদের উপস্থিতিতে প্রদীপ জ্বালালেন মধ্যমগ্রাম পুরসভার পুরপ্রধান। শুরু হল ক্রীড়া অনুষ্ঠান। অসামান্য দক্ষতায় ছাত্রছাত্রীরা human formation দ্বারা বিভিন্ন form সৃষ্টি করলো। সারা মাঠ করতালিতে ভরে উঠলো। একে এক শুরু হলো Obstacle Race, Hurdle Race, shot put, javelin throw আরও কত কি! একদল কিশোরের সবুজ গালিচার বুক চিরে ছুটে আসা অনবদ্য দৃশ্য। সত্যি বারেবারে হারিয়ে ফেলছিলাম নিজেকে।
মাননীয় প্রধান শিক্ষক মহাশয় শ্রী অমিয়কান্তি বিশ্বাস ও তাঁর সুযোগ্য শিক্ষকবৃন্দের প্রচেষ্টায় মাঠ প্রাঙ্গণে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। যে কোনও পেশাদার event গ্রুপকে হার মানাতে পারে তাঁদের ব্যবস্থাপনা। কঠোর অনুশাসন ও নিয়মানুবর্তিতা মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠা ছাত্রছাত্রীদের সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব আগামি দিনের পথচলাকে সুদৃঢ় করবে বলে আমার বিশ্বাস। Go As You Like শুরু না হলে বুঝতেই পারতাম না কখন দুপুরে গড়িয়ে বিকেল হলো। কেন যে মাইকেল নগর শিক্ষা নিকেতন স্কুলটি এই অঞ্চলের সেরা স্কুল হয়ে উঠেছে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না। (সমাপ্ত)
সৌমেন সুর: ঈশ্বরচন্দ্র যখন কলকাতা ছেড়ে বীরসিংহ গ্রামে যান, কারো বাড়িতে আদ্যশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান হলে তাঁর ওপর নিমন্ত্রণের কবিতা লেখার ভার পড়ে। নিমন্ত্রণের আসা পণ্ডিত তাঁর সঙ্গে ব্যাকরণের বিচার করেন। বিচারকালে ঈশ্বর সংস্কৃত ভাষায় কথা বলেন। পণ্ডিতরা ঈশ্বরের পাণ্ডিত্য় দেখে অবাক হয়ে যান। কখনও কখনও সাহিত্য দর্পণের ব্যাখ্যা শুনে পণ্ডিতরা বলেন, 'এই বালক বড় হযে বাংলার এক অদ্বীতিয় লোক হবে।' ১৮৪১ সালের ৪ ডিসেম্বর কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজের সার্টিফিকেট পেলেন ঈশ্বর। সংস্কৃত কলেজে পড়ার সময়েই তাঁর নামের শেষে জুড়ে যায় একটা উপাধি। উপাধি বিদ্যাসাগর।
পরবর্তীকালে বিখ্যাত হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামে। মানুষের ছেলেবেলা তাঁর সমগ্র জীবনের ভিত তৈরি করে। মা বাবা এবং সামগ্রিক পরিবেশ এক শিশুর মনে চারিত্রিক দৃঢ়তা এনে দেয়। বিদ্যাসাগরের মা ভগবতী দেবীর পরোপকারী মন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত পরের কষ্ট দেখলেই তিনি বিচলিত হয়ে উঠতেন। ঠাকুরদাসের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ পূর্ণতা পেয়েছিল ছেলে ইশ্বরচন্দ্রের মাধ্যমে। মা বাবার সাহয্যেই। ছোট্ট ঈশ্বর পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিলেন দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর। (সমাপ্ত) তথ্যঋন-দেবশ্রী ভট্টাচার্য
সৌমেন সুর: মানুষের জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় হলো শৈশব। কোন পিছুটান নেই। শুধু খেলা, মজা আর আনন্দ। তবে সবার জীবন সমান নয়। কারো কারো জীবনে আনন্দের লেশমাত্র নেই। প্রখ্যাত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলা কেমন ছিল সেটাই আজ আলোচনা করবো। প্রথম পর্বের পর...
ঈশ্বর দেখতে ছোট্টখাট্টো। কিন্তু মাথাটি দেখতে তুলনায় বড়। সহপাঠীরা তাই ঠাট্টা করে বলে, 'যশুরে কৈ,কসুরে জৈ'। ঈশ্বর শুনে রেগে যান। যত বেশী রাগেন ততবেশী সবাই একই কথা বলতে থাকে। যশোর জেলার কই মাছের মুন্ডু নাকি অনেক বড় হয়, তাই এমন নাম। এত ঠাট্টা ইয়ারকি সত্ত্বেও ঈশ্বর যখন বৃত্তি পেত, তখন তার প্রথমেই মনে পড়তো গরীব বন্ধুদের কথা। প্রতিবছর ঈশ্বর বৃত্তির টাকা পেয়ে তাদের কাপড় কিনে দিত।
রোজ রাতে বাবার কাছে পড়া দিতে হয়। পড়ায় ভুল হলে রক্ষে নেই। লেখাপড়া ছাড়াও তার কাজের শেষ ছিল না। রোজ সকালে বাজার যেতে হতো। মাছ কাটতে হতো, তরকারিও কাটতে হতো। তারপর রান্না করতে হতো। খাওয়া হয়ে গেলে সবার বাসন মেজে তারপর কলেজ যেতেন। ঠাকুরদাসের উর্পাজন খুব একটা ভাল ছিল না। কোনমতে সংসার চলতো। রোজ দুবেলা ভাত ঠিকমতো জুটতো না। অনেকসময় নুন দিয়েও ভাত খেতে হতো তাকে।
কোনওদিন যদি মাছ জুটতো তাহলে সেটা পুরো খাওয়া হত না। অর্ধেক রেখে দেওয়া হত পরের দিনের জন্য। সংস্কৃত কলেজে ঈশ্বর পাঁচটাকা বৃত্তি পেতেন। বৃত্তির টাকা তিনি বাবার হাতে তুলে দিতেন। ঠাকুরদাস সেই টাকা নিয়ে বললেন, 'তোমার এই টাকায় জমি কিনবো। দেশে একটা টোল খুলবো। যারা লেখাপড়া শিখতে পারছে না, তাদের তুমি দেখবে'। শেষপর্যন্ত ঠাকুরদাস তার কথামতো কাজটা করেছিলেন। (চলবে)
সৌমেন সুর: মানুষের জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় হলো শৈশব। কোন পিছুটান নেই। শুধু খেলা, মজা আর আনন্দ। তবে সবার জীবন সমান নয়। কারো কারো জীবনে আনন্দের লেশমাত্র নেই। প্রখ্যাত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলা কেমন ছিল সেটাই আজ আলোচনা করবো। প্রথম পর্বের পর...
ঈশ্বরের দুষ্টুমির জন্য় পাড়ার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যেতো। কখনও কারও বাগানে ঢুকে চুপি চুপি ফল খেয়ে ফেলতেন। কেউ কাপড় শোকাতে দিলে, সেই কাপড়ে ময়লা দাগ লাগিয়ে দিতেন ঈশ্বর। কখনও ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে, ধানের শিষ মুখে দিয়ে চিবাতেন তিনি। একবার যবের শিষ চিবাতে গিয়ে গলায় কাঁটা আটকে যায়। দূর্গাদেবী অনেক চেষ্টা করে গলায় আঙুল দিয়ে সেই কাঁটা বের করেন। ঈশ্বরের আবার কোনওকিছুতে ভয় ছিল না। এমনকি বাবাকেও ভয় পেতেন না।
বাবা যা বলতেন তার বিপরীত কাজ করতেন ঈশ্বর। এমন গোঁ ছিল তাঁর। যাই হোক আট বছর পর্যন্ত কালীকান্তের পাঠশালায় পড়াশোনা করলেন। একদিন গুরুমশাই ঠাকুরদাসকে ডেকে বললেন, 'ঈশ্বরের যা মেধা, আমার মনে হয় কলকাতার স্কুলে পড়াশোনা করলে অনেক বিদ্বান হবে। এখানে ওর প্রয়োজন নেই'। ঠাকুরদাস অনেক চিন্তা করে ঈশ্বরকে নিযে এলেন কলকাতা। একদিন বীরসিংহ থেকে বেড়িয়ে পড়লেন কলকাতার উদ্দেশে পায়ে হেঁটে।
ভাবুন পথটা! যাত্রায় ঠাকুরদাস, ঈশ্বরচন্দ্র আর গুরুমশাই কালীকান্ত। হাঁটতে হাঁটতে ঈশ্বর খেয়াল করলেন, রাস্তার পাশে লঙ্কা বাটার মতো পাটা পোঁতা। ঈশ্বর প্রশ্ন করলেন বাবাকে, এটা কী? ঠাকুরদাস বলেন, এটাকে বলে মাইলস্টোন।কলকাতা থেকে এক মাইল অন্তর পাথর পোঁতা আছে। যাতে মানুষের পথ মাপতে বুঝতে অসুবিধা না হয়। মেধাবী ঈশ্বরচন্দ্র পরের পোঁতা পাতর দেখে বলে দেয়, কত মাইল তাঁরা হেঁটে চলেছে। গুরুমশাই কালীকান্ত ঈশ্বরের মেধা দেখে আর্শীবাদ করে বলেন, 'এই ছেলে একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে'। (চলবে)
সৌমেন সুর: মানুষের জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় হলো শৈশব। কোন পিছুটান নেই। শুধু খেলা, মজা আর আনন্দ। তবে সবার জীবন সমান নয়। কারো কারো জীবনে আনন্দের লেশমাত্র নেই। প্রখ্যাত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলা কেমন ছিল সেটাই আজ আলোচনা করবো।
বিদ্যাসাগরের পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়স যখন ২৩ কি ২৪, তখন গোঘাটের রামকান্ত তর্কবাগীশের মেয়ে ভগবতী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর ঠাকুরদাসের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। এই সুখবরটা ছেলে ঠাকুরদাসকে জানাবার জন্য রামজয় কোমরগঞ্জে রওনা দেন, যেখানে ঠাকুরদাস কাজের সুবাদে থাকেন। পথে রামজয়ের সঙ্গে ছেলের দেখা হয়ে যায়। রঙ্গ করে তিনি বলেন, 'বাড়ি এসো। একটা এঁড়ে বাছুর হয়েছে।' ঠাকুরদাস রঙ্গটা ধরতে পারেননি। তিনি বাড়ি ফিরতেই হাসতে হাসতে রামজয় ঠাকুর দাসকে নবজাতকের মুখ দেখিয়ে বললেন, 'একে আমি এড়েঁ বাছুর বলেছিলাম। কারণ এই ছেলে এঁড়ে বাছুরের মতো একগুঁয়ে হবে, যা ধরবে তাই করবে। কাউকে ভয় করবে না। ও হবে ক্ষণজন্মা, প্রথিতযশা। ওর জন্য আমার বংশ ধন্য হবে। ওর নাম রাখা হোক ঈশ্বরচন্দ্র।'
পাঁচ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্রকে ভর্তি করানো হলো গ্রামের কালীকান্ত চ্যাটার্জির পাঠশালায়। পড়াশোনায় তাঁর ছিল ভীষণ টান। পাশাপাশি দুষ্টুমিতে ছিলেন তুলনাহীন। (চলবে) তথ্যঋণ/ দেবশ্রী ভট্টাচার্য