বুধবার ইডি (ED) ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে মানিক ভট্টাচার্যের (Manik Bhattacharya) বিরুদ্ধে বিস্ফোরক তাপস মণ্ডল। খানিকটা ইডির অভিযোগেই সিলমোহর দিয়েছে তাপস মণ্ডল। কেন্দ্রীয় সংস্থার সিজিও কমপ্লক্সের (CGO Complex) অফিসে এদিন সকাল ১১টা নাগাদ হাজিরা দেন মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। অপসারিত পর্ষদ (Primary Board) সভাপতির মহিষবাথানের অফিস সংক্রান্ত একাধিক নথি নিয়ে তাপসবাবুকে হাজিরা দিতে বলেছিল ইডি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, মানিক গ্রেফতারির পর তিন বার তাপস মণ্ডলকে ডেকেছে ইডি। গত মাসের শেষে একবার সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেন তাপস। নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে লিঙ্কম্যান হিসেবে কাজ করতেন তাপস মণ্ডল। প্রাথমিক তদন্তের এমনটাই অনুমান ইডির।
সেই মোতাবেক এদিন সিজিও কমপ্লক্সে ঢোকার মুখে ইডির করা অভিযোগ প্রসঙ্গে মানিক ঘনিষ্ঠকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। আপনি কি অফলাইন লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানেন? এই যে ইডি আদালতে দাবি করছে B.ED এবং D.EL.ED কলেজে ছাত্র ভর্তিতে অফলাইন লেনদেনের টাকা মানিক ভট্টাচার্যের কাছে যেত?
সেই প্রশ্নের জবাবে তাপস মণ্ডল বলেন, 'অফলাইনে ভর্তির টাকা এবং নথি নিতে মহিষবাথানের অফিসে লোক পাঠাতেন মানিক ভট্টাচার্য। আমরা স্টাফরা এমনটাই বলেছেন। উনি যখন লোক পাঠাতেন নিশ্চয় টাকা মানিক ভট্টাচার্যের কাছে যেত। ছাত্রপিছু ৫ হাজার টাকা পাঠানো হতো।' পাশাপাশি এদিন তিনি জানান, শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত যে যে নথি তাঁর কাছে চাওয়া হয়েছিল, সেই সেই নথি তিনি নিয়ে এসেছেন। এর আগেও কিছু নথি তিনি কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছেন।
B.ED এবং D.EL.ED কলেজে ভর্তির 'বেনিয়ম'-এর ইঙ্গিত খানিকটা তাপস মণ্ডলের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে বেড়িয়ে আসল। এমনটাই অনুমান একাংশের।
প্রায় ৭ ঘণ্টা পর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোন মানেকা গম্ভীর। কয়লা-কাণ্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) শ্যালিকাকে তিন দফায় জিজ্ঞাসাবাদ এবং বয়ান রেকর্ড করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সেই বয়ান পাঠানো হয়ে দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে। সেখান থেকে সংকেত আসতেই তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্স ছাড়তে বলেন ইডি কর্তারা। যদিও রবিবার মধ্যরাতে আইনজীবীকে নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে (CGO Complex) এসেছিলেন মানেকা (Menaka Gambhir)। এরপর সোমবার দুপুরে ফের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিলেন অভিষেকের শ্যালিকা মানেকা গম্ভীর। তাঁর আইনজীবীর দাবি, মেনকাকে রাত সাড়ে ১২ টা নাগাদ তলব করেছিল ইডি। রবিবার মধ্যরাতে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১০ মিনিট আগেই ইডির দফতরে পৌঁছে গিয়েছিলেন মেনকা গম্ভীর। কিন্তু সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়ে ইডির অফিসারদেরই দেখা পাননি তিনি। ডাকাডাকি, হাঁকাহাঁকি করেও কোনও সাড়া না মেলায় শেষমেশ ইডির (ED) দফতর থেকে রাত ১২টা বেজে ৪০ মিনিট নাগাদ বেরিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। সূত্রের খবর, মেনকাকে যে সমন পাঠানো হয়েছিল তাতে উল্লেখ ছিল, তাঁকে হাজিরা দিতে হবে ১২ সেপ্টেম্বর ১২.৩০ এ.এম অর্থাৎ ১২ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে বারোটায়। আর এখানেই তৈরি হয় সমস্যা। ভুল স্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাও। যদিও তাদের পাল্টা, হাজিরার আগে কেন মেইল করে বা ফোনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি মানেকা গম্ভীর।
এদিকে, মানেকা গম্ভীরের জন্য ১৫-২০টি প্রশ্নের তালিকা তৈরি রেখেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। প্রসঙ্গত, এর আগে মানেকা গম্ভীরের বিদেশ যাত্রায় বাধা দেয় ইডি। শনিবার রাতে ব্যাঙ্কক যাওয়ার জন্য কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছেলেন মেনকা। কিন্তু বিমানবন্দরে পৌঁছতেই তাঁকে দীর্ঘক্ষণ একটি ঘরে বসিয়ে রেখেছিলেন অভিবাসন দফতরের কর্মীরা। দ্রুত তাঁরা দিল্লিতে ইডির সদর দফতরের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ইডি সূত্রে জানা যায়, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকা মেনকার নামে আগেই লুক আউট নোটিস জারি করা হয়েছিল। সেই নোটিস দেশের সব বিমানবন্দরেই পাঠানো হয়েছিল। অপরদিকে, মানেকা গম্ভীর যখন সিজিও কমপ্লেক্সে তখন ইডির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে মামলা তাঁর আইনজীবীর। কোর্টের নির্দেশ থাকলেও ইডি কীভাবে মানেকা গম্ভীরের বিদেশ যাত্রা আটকাতে পারে? জানতে চেয়েই এই মামলা।
চিটফান্ড-কাণ্ডে (Chit Fund Case) বীজপুরের বিধায়ক (TMC MLA) সুবোধ অধিকারীকে এবার ডেকে পাঠাল সিবিআই (CBI)। মঙ্গলবারই তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও তাঁর আইনজীবী এদিন বীজপুরের বিধায়ককে প্রতিনিধিত্ব করেন। সিবিআইয়ের চাওয়া বেশ কিছু নথি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে সিবিআই দফতরে হাজির হয়েছিলেন বিধায়কের আইনজীবী।
ইতিমধ্যে বীজপুরের বিধায়কের পৈতৃক বাড়ি-সহ কাঁচরাপাড়ার একাধিক জায়গায় গত সপ্তাহে ম্যারাথন তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। সেই তালিকায় ছিল সুবোধ অধিকারীর অফিস, ফ্ল্যাট এবং তাঁর ভাই তথা কাঁচরাপাড়ার পুরপ্রধানের ফ্ল্যাটেও। বীজপুর, কাঁচরাপাড়ার পাশাপাশি সুবোধ অধিকারীর কলকাতার কাশীপুর, টালা পার্ক এবং দক্ষিণদাঁড়ির ফ্ল্যাটেও অভিযান চালায় সিবিআই। সেই সূত্র ধরেই এদিকে নথি-সহ ডেকে পাঠানো হয় সুবোধ অধিকারীকে।
এদিকে, রাজু সাহানির বাড়ি এবং রিসোর্টে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা নগদ এবং প্রচুর সম্পত্তি নথি উদ্ধার করেছে সিবিআই। সেই সূত্রে রাজুকে জেরা করে পাওয়া তথ্যসূত্র ধরেই সুবোধ এবং কমল অধিকারীর বাড়িতে সিবিআই অভিযান। সুবোধের পৈতৃক বাড়ি-সহ তাঁদের মঙ্গলদ্বীপ আবাসন ফ্ল্যাট এবং কমল অধিকারীর নিজস্ব ফ্ল্যাটেও চলছে অভিযান। পাশাপাশি হালিশহরের জেঠিয়ার সুবোধ এবং কমল অধিকারীর এক আত্মীয়ের বাড়ি-সহ কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী গৌতম বিশ্বাসের বাড়িতেও সিবিআই দল। জানা যাচ্ছে, এই রাজু সাহানির সঙ্গে তাইল্যান্ডে ব্যবসা রয়েছে সুবোধ অধিকারীর। সেই সূত্র ধরে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশি। জানা গিয়েছে, সুবোধের পৈতৃক বাড়িতে দুই ভাই থাকেন না।।একমাত্র ছোট ভাই থাকেন।
কয়লা-কাণ্ডে ইডি জিজ্ঞসাবাদের মুখোমুখি তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। প্রায় ৫ ঘন্টা পার, সিজিও কমপ্লেক্সে (CGO Complex) তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এ অবস্থায় বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বঙ্গ বিজেপির (Bengal BJP) সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আজ বড় কিছু ঘটতে পারে, আপনারা দেখতে থাকুন। এই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এদিন বালুরঘাটের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি (Sukanta Majumder) বলেন, 'দিদি ঘুরে আসার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে গিয়েছেন। দিদির প্রিয় কেষ্ট জেলে আছেন। যদি বোঝাপড়া থাকতো এঁরা জেলে যেতেন না। আগামি দিনে কেউ কেউ যেতে পারেন। আজকেও বড় কিছু ঘটতে পারে। আপনারা লক্ষ্য রাখুন।'
সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্যের পরেই তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন জানান, 'সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্যে দুটো কথা স্পষ্ট হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটিং করেন না। কারও সঙ্গে আপস করে না। আর দ্বিতীয় ইডি, সিবিআই এখন আর নিরপেক্ষ নয়। বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে চলে। সেটাই আজ উনি ভুল করে হলেও ঠিক বলে ফেলেছেন।' কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর আবার খোঁচা, 'দিদি-মোদীর সেটিং আছে, ভাইপোর ভয়ের কোনও কারণ নেই।'
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, 'বড় কিছু হওয়ার গল্প কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী সব জানেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যখন চিটফান্ড-কাণ্ডের তদন্ত করছে, তখন কুণাল ঘোষ বলেছিলেন চিটফান্ডে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু যিনি সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন, তিনি এখনও জেলের বাইরে। তাই বড় কিছু ঘটেনি। কিন্তু ঘটতে পারতো।'
প্রসূন গুপ্ত: ২৯ অগাস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, কী সুন্দর বক্তব্য রেখেছে অভিষেক। আবার হয়তো ওকে নোটিস পাঠাবে কোনও গোয়েন্দা সংস্থা। একই সুর দলনেত্রীর ভাষণের আগে শোনা গিয়েছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও। তাঁর আশঙ্কা ছিল, ২১ জুলাইয়ের পরদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই জনসভার ৪-৫ দিনের মধ্যে হয়তো তৃণমূলের ফের কাউকে ডাকতে পারে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই জানা গেল শুক্রবারে ইডি, কয়লা কাণ্ডে ডেকে পাঠিয়েছে অভিষেককেই। যদিও ২৮ অগাস্ট তাঁর কাছে নোটিস গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
অভিষেককে এর আগে যতবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি ডেকেছে, ততবার তিনি কিন্তু পরম দর্পে দেখা করতে গিয়েছেন। যদিও সাক্ষ্য দিতে ডাকা তবু কেন্দ্রীয় সংস্থার তলবে সাড়া দেওয়ায় আগ্রহ দেখায় কে? তৃণমূল সূত্রের খবর, এই বিষয়ে অভিষেক অকুতোভয়, কারণ কী? এই নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বিস্তর। বিশেষজ্ঞদের ভাবনায় যা উঠে আসছে, তা খানিকটা এরকম।
১) অভিষেক এই বিষয়ে কিছু জানেন না। ফলে তাঁর আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তিনি নিয়মিত বিভিন্ন মঞ্চেও তা জানিয়েছেন। অথচ সিবিআই বা ইডি ডাকলে যে কোনও রাজ্য বা পশ্চিমবঙ্গে অনেকে হাজিরা এড়ায়। সম্প্রতি এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে অনুব্রত বা পার্থর বেলাতে। শেষ পর্যন্ত দু'জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
২) অভিষেক তৃণমূলের সংগঠন আরও জোরদার করার দায়িত্বে। তিনি জানেন যদি নানা বাহানায় তিনি নিজেকে গুটিয়ে রাখেন তবে দলের মধ্যে বিশেষ করে তৃণমূলস্তরে ভুল বার্তা যাবে।
৩) সারা দেশে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি নানা দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে। বিরোধীরা মনে করছে ২০২৪-এর আগে মোদী সরকার এভাবে চাপে রাখতে চাইছে বিরোধীদের। কিন্তু এটাও সত্যি যে, আজ প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ছন্নছাড়া অবস্থা। বিভিন্ন রাজ্যে অবিজেপি সরকার ভেঙে যাচ্ছে, সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। তবে কি বিরোধী বলে আর কিছুই থাকবে না? এই প্রশ্ন এখন জাতীয় রাজনীতির অন্দরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
৪) আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন বিশেষজ্ঞদের মত, বর্তমান বিশ্বে একনায়কতন্ত্রের রাজনীতি চলে না। কারণ গণতন্ত্রের হত্যা মানেই রাষ্ট্রপুঞ্জের চাপ আসবে। বিদেশি বাণিজ্য এবং বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কাজেই সমস্ত দলের উপর চাপ সৃষ্টি করাটা বিজেপির মতো শক্তিশালী দলের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে মমতা বা অভিষেকের উপর অহেতুক চাপ যে অমিত শাহরা করছেন না তা বলাই বাহুল্য। অভিষেক এটা জানে ফলে অকুতভয় হয়ে সহযোগিতা করছেন এজেন্সিগুলিকে।