কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের (Swapan Debnath) চোখে।
আমি বর্ধমানের বিধায়ক দীর্ঘদিনের। আছিও পূর্বস্থলীতে বহুদিন। কিন্তু আমরা ওপার বাংলার । স্বাভাবিক ভাবেই ইস্টবেঙ্গল। একদিকে ইস্টবেঙ্গলের লাইফ মেম্বার অন্যদিকে বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিল। অবশ্য এটাও ঠিক যে ল্যাটিন আমেরিকার ফুটবলের প্রতি আমার আকর্ষণ চিরকালই। আহা এমন শিল্প ছিল পেলে, মারাদোনা থেকে আজকের মেসি বা নেইমার ইত্যাদিদের খেলা বা ছোট্ট ডজ বা ড্রিবলিং নিয়ে জায়গা বদলে বদলে কি খেলাটাই না খেলে।
তবে এটা ঠিক যে আজকের আধুনিক ফুটবলে কেউ এতো জায়গা দেবে না খেলোয়াড়দের কাটানোর। সময় কম, কিন্তু দেখছি তো এবারের খেলা। কি সব তিকিতাকা, নাহ মোটেই খারাপ না লাগলেও চোখে লেগে থাকে না। এবারের বিশ্বকাপে আমি মুখিয়ে রয়েছি আজকের ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার খেলা দেখার জন্য। বিধানসভার কাজ চলছে কিন্তু ফেরার পথে মোবাইলে ব্রাজিলের খেলা দেখবো অবশ্য বাড়ি পৌছিয়ে বাকি খেলা টিভিতে।
শুক্রবারের দুটো খেলায় গুরুত্বপূর্ণ। মন বলছে, ক্রোয়েশিয়াকে ব্রাজিল হারাবেই তবে নেইমারকে মাঠে থাকতে হবে এবং ছটফট করতে হবে। ওদের ডিফেন্স এতেই ভেঙে যাবে । আহামরি এমন কিছু দল নয় ক্রোয়েশিয়ারা। অনেক বুড়ো খেলোয়াড় ওদের। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার কাছে পরপর কঠিন ম্যাচ। আজকে নেদারল্যান্ড কিন্তু বেগ দেবেই। ওই যে ঝাঁকড়া চুলওয়ালা ৪ নম্বর জার্সির ডিফেন্স, যথেষ্ট ভালো।
আমি খেলাধুলার ভক্ত। আমাদের পূর্বস্থলীতে নিয়মিত টুর্নামেন্ট হয়। এখানে বিদেশ বোস, ষষ্ঠী দুলে থেকে বহু খেলোয়াড়ের যোগদানে দারুন টুর্নামেন্ট হয়। এছাড়া বাংলার আদি খেলা কবাডি, খোখো ইত্যাদি খেলাও আমি আমার এলাকায় চালু রেখেছি। শরীরচর্চাই তো আসল। এসবে আমাদের দেশে খামতি আছে বলেই আমরা বিশ্বকাপ ফুটবলের স্বপ্ন দেখি না। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা। বিশ্বকাপে (Qatar World Cup 2022) পায়রায় মজেছে সেলেকাও। দক্ষিণ কোরিয়াকে (South Korea) হারিয়েছে ব্রাজিল (Brazil)। গোলের পর আলাদা আলাদা নেচে গ্যালারি পাগল করে দিয়েছেন নেইমার, পাকুয়েতা, রাফিনহা-রা। চার গোলে চার রকম নাচ। প্রবল জনপ্রিয় হয়েছে পিজিওন ডান্স। কোচ তিতেও ওই পিজিওন নাচে কোমর দুলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। উঠে আসছে মজার গল্প।
কোরিয়া ম্যাচের আগের দিন বিভিন্ন ধরণের নাচে নেচেছিলেন ফুটবলাররা। চাপ কমিয়ে মন ফুরুফুরে রাখতে নাচের থিওরি বরাবর অনুসরণ করে এসেছে ব্রাজিলিয়ান সাজঘর। রোনাল্ডিনহো তো বাজনা বাজাতে বাজাতে টিম নিয়ে বাস থেকে নামতেন। পা মেলাতো গোটা দল। এবার নেইমার, রিচার্লিসন, ভিনিয়া সবাই নাচতে পারেন। কিন্তু কোচ তিতে ওঁদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিলেন না। ফলে ঠিক হয় 'পায়রা ডান্স' করা হবে। সেটাই সুপার হিট কাতার ছাড়িয়ে সর্বত্র।
ALERTA DE VÍDEO F*DA PASSANDO NA TIMELINE! 🚨 Simplesmente Ronaldo fazendo a dança do Pombo com o Pombo. 9️⃣🐦🇧🇷 #TNTSportsNoQatar
— TNT Sports BR (@TNTSportsBR) December 6, 2022
Crédito: FIFA e Ronaldo TV pic.twitter.com/TrQpCyy2GZ
শোনা যাচ্ছে অন্তত দশ রকম নাচ পকেটে নিয়ে কাতারে এসেছে সেলেকাও। পিজিওন কাহিনী অবশ্য এখানেই শেষ হয়নি। ম্যাচের পর কিংবদন্তি রোনাল্ডোর সঙ্গে ইন্টারভিউ সেশন ছিল রিচার্লিসনের। দুজনকেই দেখা গিয়েছে পিজিয়ন স্টাইলে পোজ দিয়ে কোমর দোলাতে। সামনে এবার ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচ হবে সেয়ানে সেয়ানে। কিন্তু নতুন নাচ কি দেখা যাবে? নজর তো রাখতেই হবে।
কাতার বিশ্বকাপ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার চোখে! ব্রাজিলকেই ফেভারিট রাখছেন তিনি
প্রথমেই বলে রাখি আমি ব্রাজিল সাপোর্টার। ছেলেবেলায় খেলা টিভিতে দেখতে পেতাম না। কিন্তু সিনেমা দেখতে গেলে আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ডকুমেন্টারি দেখার সময়ে পেলের খেলা দেখতাম। ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকারকে ফুটবলের জাদুকর মনে হতো। ব্রাজিলের খবর অবশ্য পত্র-পত্রিকায় দেখতাম। তবে ১৯৭৮ থেকে যখন টিভিতে বিশ্বকাপের খেলা দেখানো শুরু হলো, তখন থেকে নিয়মিত খেলা দেখছি। আমি অবশ্যই লাতিন আমেরিকার স্কিল, ড্রিবল, টাচ ফুটবলের ভক্ত। এশিয়ার দল এবং ইউরোপ ধীরে ধীরে প্রতিযোগিতায় উঠে আসলো। আমার ইউরোপের ফুটবল কোনও দিনই ভালো লাগে না। শুধু পাওয়ার ফুটবল, শিল্প কোথায়? ধনী মহাদেশের সদস্য তারা, বিপুল অর্থের বিলাসবহুল জীবনের মধ্যে থেকে দামি ফুটবল খেলে ইউরোপ। তবে এটাও ঠিক এদের একচেটিয়া দাপট ওই ২০০২-এ ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে।
গত কুড়ি বছরে ফুটবল থেকে শিল্প উধাও। এখন শুধু হাজার হাজার পাস। সব মাটি চেড়া ফুটবল। হেডিং বিষয়টি উবে গিয়ে, এখন নাকি সব তিকিতাকা ফুটবল। আমি নিজে ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল খেলেছি। সুব্রত কাপেও অংশ নিয়েছি, অন্য খেলাতেও মন ছিল বিস্তর। পরে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে ঢাকা পড়লো আমার ফুটবল জীবন। একদিকে ডাক্তারি শিক্ষা অন্যদিকে রাজনীতি, খেলার জগৎ থেকে আমাকে অনেকটা সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।
এমএলএ হওয়ার পর আমার এলাকায় পুরোদস্তুর খেলা চালু করেছিলাম। আমার দাবি ও পরিশ্রমে একসময়ে গ্রামীণ স্টেডিয়াম খুলেছি। বলরাম, চুনি গোস্বামী কে না এসেছিলেন!তার সাথে ট্রেনিং ক্যাম্প তো রয়েছেেই। মঙ্গলবার রাতে দেখলাম তিকিতাকার নির্মম ব্যর্থতা। স্পেনকে প্রায় একঘরে করে দুর্দান্ত জয় পেলো মরক্কো। দারুন দল মরক্কো, আফ্রিকার এই দলটির দিকেই তাকিয়ে এখন আশায় বাঁচছে তৃতীয় বিশ্বের অন্য দলগুলো। যদিও প্রতিযোগিতায় প্রবল ভাবে আছে আমার ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। মরক্কোর মতো এতো ভালো ডিফেন্স কোনও দলে আছে বলে মনে হয় না। এদের অনেকেই স্পেনে খেলে বিশেষ করে ওদের গোলরক্ষক। মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু তো সারা বছর স্পেনেই থাকেন এবং ওখানেই খেলেন। কাজেই জানতেন স্পেন কী করতে পারে। আজ অবধি বুনু ১৩টি পেনাল্টি শট বাঁচিয়েছেন। মঙ্গলবারের ম্যাচেও সবকটি পেনাল্টি বাঁচিয়ে স্পেনকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকেই দিলেন বুনু।
এবার আসল টক্কর। আটটি দলের মধ্যে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও মরোক্কোর দিকে সমর্থন থাকবে বেশির ভাগ বাঙালির। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
কাতার বিশ্বকাপ মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের চোখে! খেলা দেখে কী লিখছেন তিনি
আমি চিরকালই ব্রাজিলের ফ্যান। ব্রাজিল ছাড়া আর আছেটা কী? ছেলেবেলায় পড়াশোনার সঙ্গে কৃষ্ণনগরে ফুটবলও খেলতাম। পরে রাজনীতিতে আসি। আমাদের স্বদেশী করা পরিবার। আমার এক দাদুর ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কারণে ফাঁসি হয়েছিল। ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই শেষ কিন্তু ওদের ফুটবল খেলা রেখে গিয়েছিল বাঙালির মনে। আগে টিভি ছিল না, কিন্তু ব্রাজিলের খবর পেতাম ছেলেবেলায় খবরের কাগজের পাতায়। পড়তাম পেলের খেলার খবর। সেই থেকে কবে যে ব্রাজিলের ভক্ত হয় গিয়েছি, তা আজও স্মৃতিতে।
এবার বিশ্বকাপ নিয়মিতভাবে দেখা হয়নি, কারণ প্রথম দিকে লিগ পর্যায়ের খেলাগুলি পড়তো কাজের সময়ে। তখন তো দফতরের কাজ থাকতো দেখবো কী ভাবে? তবুও পরে এসে ক্লিপিংস দেখতাম। যাই বলুন লাইভ ফুটবল ছেড়ে বাসি ফুটবল দেখা কি এক? এটা অবশ্য সত্যি যে রাত আটটা বা বারোটার খেলা ছাড়ছি না। ছাড়বোই বা কেন ৪ বছরে বিশ্বকাপ আসে একবার মাত্র, এ খেলা ছাড়া যায়? তবে গভীর রাতে শোয়ার অভ্যাস, কিন্তু বিশ্বকাপের কল্যাণে বহুদিন আগেই সেই অভ্যাস রপ্ত করেছি। তাই এখনও রাত জাগছি।
সোমবারের দু'টি খেলাই দেখলাম। জাপান দুর্দান্ত খেলেও জিততে পারলো না স্রেফ অভিজ্ঞতার কারণে। ক্রোয়েশিয়ার সব বয়স্ক ফুটবলার, লুকা মদ্রিচের কী হাল! কিন্তু ওরা দাঁতে দাঁত চেপে টাই ব্রেকারের জন্য অপেক্ষা করলো এবং সেখানেই বাজিমাত করলো ক্রোটরা। কিন্তু দেখবেন আগামীতে এই জাপান অনেকদূর যাবে।
আমার আবার প্রিয় ব্রাজিল। সোমবার রাতের খেলায় খুঁজে পেলাম সেই পুরনো স্কিল, সেই দৌড়, সেই টাচ। মাঠজুড়ে শুধুই সাম্বা ঝড়। এসবের জন্যই তো ব্রাজিল বিশ্বসেরার খেতাব পেয়েছে চিরকাল। ৬ মিনিটের পরই প্রথম গোল, তারপর পেনাল্টিতে নেইমারের ঠাণ্ডা মাথায় জালে বল ঢোকানো, প্রথম অর্ধেই প্রতিপক্ষের জালে একের পর এক বল জড়িয়ে খেলা প্রায় শেষ করে দেওয়া। পরপর চারটি গোল, অনেক ব্রাজিল ফ্যান আবার ভেবে বসেছিল আটটি হলেও খারাপ হতো না। শেষে ফাউল করে স্পটকিক থেকে একটা পাস্ এবং সামান্য ত্রুটির জন্য ব্রাজিল একটা গোল খেয়ে গেলো। এরপর তো লাতিন আমেরিকার আরও এক দেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসে বিরুদ্ধে তাঁদের দৌড়, টাচ দেখতেই হবে। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
চলতি কাতার বিশ্বকাপে (Qatar World Cup) নামজাদা কোনও দলই গ্রুপে তিনটে ম্যাচ জিতে ৯ পয়েন্ট ঘরে তুলতে পারেনি। সে আর্জেন্টিনা (Argentina) হোক, পর্তুগল হোক, ফ্রান্স হোক বা ব্রাজিল। আর তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শুক্রবার মধ্যরাতে ক্যামেরুন অতিরিক্ত সময়ের গোলে ব্রাজিলকে হারিয়েছে। এই জয়ের সঙ্গে বিশ্বকাপে (World Cup 2022) অনন্য নজির রজার মিল্লার (Cameroon) দেশের। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপে হারায় ক্যামেরুন। ১০ নম্বর জার্সির আবু বকর হেডে বল জালে জড়ান। তারপরেই জার্সি খুলে সেলিব্রেশন আর লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন।
এভাবেই এই বিশ্বকাপে কোনও দলই গ্রুপ ম্যাচের সব ম্যাচ জিততে পারেনি। এদিকে, নিয়মরক্ষার এই ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চকে মাঠে নামিয়েছিলেন তিতে। যদিও গোলমুখে প্রচুর সুযোগ পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেনি জেসাস, ফ্রেড এবং অ্যান্টনিরা। হয় ক্যামেরুনের গোলকিপারের হাতে লেগে বল ফিরেছে, নয়তো বাইরে গিয়েছে বল।
বিশেষজ্ঞদের মত, প্রথম একাদশ তৈরি থাকলেও, রিজার্ভ বেঞ্চ গোলমুখ খুঁজতে ব্যর্থ। এর আগে রিজার্ভ দল নামিয়ে স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স হেরেছে। শুক্রবার সেই তালিকায় যোগ হল ব্রাজিলের নামও। প্রশংসনীয় পারফরম্যান্স ক্যামেরুনের গোলকিপার ডেভিস এপাসিরও। অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল বাঁচান তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের মুহুর্মুহু আক্রমণ সামলাতে হয়েছে তাঁকে। শেষ ৪৫ মিনিট সেভাবে ব্রাজিলের অর্ধে বল বাড়াতে পারেনি ক্যামেরুন ফরওয়ার্ড। অতিরিক্ত সময়ে ৩ মিনিটের মাথায় কাউন্টার অ্যাটাকে একটাই সুযোগ পায় ক্যামেরুন সেই সুযোগেই গোল করেন আবুবকর।
শেষ কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup) গ্রুপ লিগের ম্যাচ। চূড়ান্ত প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের (Pre Quarter Final) ১৬ দল। আটটি গ্রুপের দুটি করে দল প্রাক কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছে। শনিবার থেকেই শুরু নকআউট পর্ব। এবার কোন দলের প্রতিপক্ষ কে, কিছু দলের প্রতিপক্ষ দুর্বল, কিছু দলের প্রতিপক্ষ আবার যুদ্ধ ছাড়া মেদিনী ছাড়বে না।
গ্রুপ এ থেকে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে নেদারল্যান্ডস-সেনেগাল। গ্রুপ বি থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়ে পরের রাউন্ডে ইংল্যান্ড-আমেরিকা। গ্রুপ সি-র শীর্ষে আর্জেন্টিনা আর দ্বিতীয় স্থানে পোল্যান্ড। গ্রুপ ডি-র শীর্ষে ফ্রান্স আর দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়া। তাই নেদারল্যান্ডস খেলবে আমেরিকার সঙ্গে আর সেনেগাল খেলবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে। পাশাপাশি আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া আর পোল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ২০১৮-র চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
একইভাবে গ্রুপ ই থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় জাপান-স্পেন। গ্রুপ এফ থেকে প্রথম হয়ে নকআউট রাউন্ডে মরক্কো। দ্বিতীয় স্থানে ক্রোয়েশিয়া। গ্রুপ জি থেকে ব্রাজিল-সুইৎজারল্যান্ড শেষ ষোলোয়। আর গ্রুপ এইচ-র শীর্ষে পর্তুগাল, দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ কোরিয়া। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অসামান্য খেলা এই বিশ্বকাপে জার্মানি এবং উরুগুয়ের মতো টিমের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়েছে। গ্রুপ লিগের সেই খেলা কি এশিয়ার দলগুলোর প্রাক কোয়ার্টার ফাইনালেও বজায় থাকবে তা বলবে সময়।
গ্রুপ ই থেকে জাপান শীর্ষে আর স্পেন দ্বিতীয়, গ্রুপ এফ থেকে মরক্কো ফার্স্ট বয় আর ক্রোয়েশিয়া দ্বিতীয়। জি থেকে পর্তুগল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর দক্ষিণ কোরিয়া দ্বিতীয়। পাশাপাশি গ্রুপ এইচ থেকে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন আর সুইৎজারল্যান্ড রানার্স। তাই গ্রুপ ই-র জাপান খেলবে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আর স্পেন খেলবে মরক্কোর বিরুদ্ধে। একইভাবে গ্রুপ জি-র পর্তুগল খেলবে সুইৎজারল্যান্ডের আর ব্রাজিল খেলবে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে। ৩ তারিখ অর্থাৎ শনিবার থেকে ৬ তারিখ অর্থাৎ মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে প্রাক কোয়ার্টার ফাইনালের এই নক আউট লড়াই।
সার্বিয়া (Brazil versus Serbia) ম্যাচের শেষভাগ থেকেই মাঠের বাইরে ব্রাজিল স্ট্রাইকার নেইমার (Neymar)। লিগামেন্টের চোটের কারণে কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগের কোনও ম্যাচ খেলতে পারবেন না তিনি। স্পষ্ট করে দিয়েছিল হলুদ-সবুজ শিবির। ইতিমধ্যে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে সেলেকাওরা। শুক্রবার মধ্যরাতে নিয়মরক্ষার ম্যাচে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে নামছে তারা। কিন্তু প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের (Pre Quarter Final) জন্য কতটা ফিট নেইমার? কারণ ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমের খবর, নেইমারের সম্ভবত এই বিশ্বকাপে আর কোনও ম্যাচেই খেলা হবে না।
যদিও নকআউট পর্ব থেকে মাঠে দেখা যাবে নেইমারকে। এমন একটা জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কিন্নেতু সেই সম্মাভাবনাও ক্ষীণ বলে মনে করছে ব্রাজিল টিম ম্যানেজমেন্ট। যদিও নেইমারের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি নিয়ে কোনও সরকারি ঘোষণা নেই। তবে এখনও তাঁর গোড়ালি ভাল রকম ফুলে রয়েছে এবং আরোগ্যের হার খুব ধীর গতির।
এদিকে, ক্যামেরুন ম্যাচের আগে ব্রাজিলের সহকারী কোচ বলেছেন, “নেইমার ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। তবে আপাতত আমাদের ফোকাস ক্যামেরুন ম্যাচে। সেটা হয়ে গেলে দলের বাকিদের কার কী অবস্থা সেটা নিয়ে ভাবার সময় পাব। ওর ফেরার ব্যাপারে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।”
প্রসূন গুপ্ত: সোমবার বিশ্বকাপ ফুটবলের (Qatar World Cup 2022) ৪টি খেলা থাকলেও প্রথম দুটিতে নজর ছিল না ফুটবল প্রেমীদের। তবু বিশ্বকাপ (World Cup 2022) বলে কথা। ক্যামেরুন ও সার্বিয়ার খেলাটিতে আধা ডজন গোল হল। দুই দল ৩টি করে গোল দিলো। এশিয়ার দল হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে নজর ছিলই কিন্তু ঘানার সঙ্গে ২টি গোল দিয়েও ৩টি হজম করতে হলো কাজেই নকআউট রাউন্ডে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়লো। কিন্তু সকলেরই নজরে ছিল দুই পর্তুগিজের দল কী করে। মূলত ব্রাজিল, তাছাড়া পর্তুগাল (Brazil-Portugal) বা রোনাল্ডোর দিকে নজর তো ছিলই। দুটি দেশের ভাষা পর্তুগিজ, খেলার ধরণে চিরকাল ব্রাজিল অনেক এগিয়ে কিন্তু সোমবারের খেলা হলো উল্টো।
নেইমার আহত কাজেই তাঁকে ছাড়াই ব্রাজিলকে মাঠে নামতে হয়েছে। নেইমারের অভাব দ্রুত অনুভূত হলো। তিনি কেমন খেলেন অন্য বিষয় কিন্তু তাঁর মাঠে থাকা বা তাঁর নেতৃত্ব নিশ্চই সিলভার দ্বারা সম্ভব নয়। ব্রাজিলের মূল অস্ত্র ছিল ড্রিবলিং, ডজিং, পাসিং এবং হেডিং। তার প্রথম দুটি বহুদিন বিদায় নিয়েছে রইলো পাসিং-হেডিং। বারবার দেখা গিয়েছে থ্রু পাশ ধরতেই পারছেন না তিতের ছেলেরা। সুইৎজারল্যান্ডের সঙ্গে ফিফা টুর্নামেন্টে কখনও জেতেনি ব্রাজিল। তাই ফের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে চললো কি, ছিল প্রশ্ন।
দ্বিতীয়ার্ধের শেষ ৩৫ মিনিট দৌড়ের ঝাঁঝ বাড়ালে প্রথম গোলটি এলো ব্রাজিলের। প্রশ্ন থেকেই যায় এই ব্রাজিল কতদূর যেতে পারবে? ভিভিআইপি গ্যালারিতে রোনাল্ডো, কাকা কার্লোস, কাফুদের মতো হেভিওয়েটরা বসে। তবে তিতের দল নিয়ে তাঁরা কিন্তু আশাবাদী।
এদিকে, পর্তুগালকে কিন্তু সঠিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিআর-৭ বা রোনাল্ডো। দুর্দান্ত খেলছেন এমন নয় কিন্তু বারবার আক্রমণে উঠছেন। কাজেই উরুগুয়ে আক্রমণ ভুলে বক্সে ৫ ডিফেন্ডারকে দাঁড় করিয়েছিল। ব্রাজিলের খেলায় যেমন স্পিডটা ছিল না তেমন পর্তুগাল দ্রুত আক্রমণ শানিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ মিনিটে প্রথম গোল উরুগুয়ের বিরুদ্ধে। ব্রুনো ফার্নান্দেজের গোলমুখী উঁচু বলে স্পট জাম্প করে রোনাল্ডো মাথা না ছোঁয়ালেও মাথা তাঁর লাফানোটা উরুগুয়ের গোলরক্ষকেকে দিশেহারা করে দেয়। এরপর মাঠে আসেন সুয়ারেজ। মাথা গরম বলে কোচ তাঁকে প্রথমে নামাননি। প্রতি আক্রমণ বাড়ায় উরুগুয়ে। একবার তো গোল হয়েই গিয়েছিল। এরপর একটি কাউন্টার আক্রমণে পর্তুগাল উঠলে বক্সেই ব্রুনো কে ফেলে দেওয়া হয়। পেনাল্টি থেকে দ্বিতীয় গোল করেন ওই ব্রুনোই। পর্তুগাল কিন্তু আশা জাগাচ্ছে।
শুক্রবার ব্রাজিলের (Brazil) এসপিরিতো সান্তো (Espirito Santo) প্রদেশের দুটি স্কুলে বন্দুকধারী কিশোরের হামলা (Shooting)। গুলিতে এক শিশু-সহ মৃত্যু (Death) তিনজনের। স্থানীয় পুলিস সূত্রে খবর, আহত হয়েছেন অন্তত আটজন। রাজ্যের রাজধানী ভিটোরিয়া থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) উত্তরে অবস্থিত ছোট শহর আরাক্রুজ টাউনের দু’টি স্কুলে স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে হামলার ঘটনাটি ঘটে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সামরিক পোশাক পরা এক অজ্ঞাত পরিচয় কিশোর স্কুল দুটিতে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। একটি বেসরকারি এবং একটি সরকারি স্কুল ছিল। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিল ওই বন্দুকবাজ কিশোর। পরে আটক করে পুলিস।
স্থানীয় পুলিস বলেছে যে, তারা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করেছিল যে বন্দুকধারী হামলাকারী স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র। তবে এসপিরিতো সান্তোর জননিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মার্সিও সেলান্তে সাংবাদিকদের বলেছেন যে, সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।
এসপিরিতো সান্তোর গভর্নর রেনাতো কাসাগ্রান্ডে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। এবং তিনি লেখেন, “আরাক্রুজের দুটি স্কুলে কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে এক কিশোর। তাকে আটক করেছে নিরাপত্তারক্ষীরা। নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে তিনদিনের শোকপালন করা হবে। কেন এই হামলা চালানো হয়েছে তা জানতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”
পাবলিক সিকিউরিটি অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, ইতিমধ্যে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একজন আহত ব্যক্তিকে হেলিকপ্টারে করে আরাক্রুজ থেকে প্রায় ৬০কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত একটি বৃহত্তর শহর সেরাায় নিয়ে যেতে হয়েছিল।
প্রসূন গুপ্ত: বিশ্বকাপ (World Cup 2022) জমে উঠেছে, কখন কোন দল যে পাল্টে দেবে খেলার রং ধরা মুশকিল। শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত ৩২টি দলই তাদের গ্রুপ লিগের প্রথম ম্যাচ খেলে নিয়েছে। সারা বিশ্বের ফুটবল আজ এমন একটি জায়গায় পৌঁছেছে যে বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) লড়াইয়ে যাওয়া দলগুলি অবিশ্বাস্য ভালো খেলছে। এবারের সেরা প্রাপ্তি গোলরক্ষক। এই গোলরক্ষরা অসম্ভব ভালো খেলছে এবং কে কার থেকে ভালো ধরে যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার চারটি ম্যাচ ছিল, তার মধ্যে উরুগুয়ে বনাম দক্ষিণ কোরিয়া ছিল গোলশূন্য। সুইৎজারল্যান্ড বনাম ক্যামেরুন ম্যাচে সুইস দল এক গোলে জেতে। আসলে এই দুই খেলার দিকে ক্রীড়াপ্রেমীদের উৎসাহ ছিল কম। আসল নজরে ছিল পর্তুগিজরা কী করেন। একটা সময় পর্তুগিজরা (Portugal) দখল নিয়েছিল ব্রাজিল, ভারতের গোয়া, শ্রীলংকা, কেরলের একটি অংশ। এ ছাড়াও তাদের দখলদারি ছিল কুখ্যাত কিন্তু তারা যেখানেই গিয়েছে, পরবর্তীতে সেই দেশ বা রাজ্যগুলিতে ফুটবল হয়ে উঠেছিল প্রধান খেলা। বৃহস্পতিবার ছিল এমনই একটি দিন, যেদিন পর্তুগাল এবং পর্তুগিজ ভাষার দেশ ব্রাজিলের (Brazil) খেলা ছিল।
দুটিতেই জয় আসে পর্তুগিজদের। সিআর-৭ অর্থাৎ রোনাল্ডোর শেষ বিশ্বকাপে কেমন খেলেন অপেক্ষায় ছিলেন ভারতীয় ভক্তরা। মেসির মতো এক জায়গায় না দাঁড়িয়ে বরং ম্যান মার্কিং ভেদ করার চেষ্টায় ছিলেন রোনাল্ডো। প্রথমার্ধে কোনও গোল না হলেও রোনাল্ডোর একটি স্পট জাম্প করে হেড করার দৃশ্য ছিল অন্যতম সেরা। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধে তেজ বাড়ায় পর্তুগাল। একটি বক্স ফাউলে পেনাল্টি থেকে গোল করেন রোনাল্ডোই।
কিছুক্ষণের মধ্যে বিপক্ষে থাকা ঘানা নড়চড়ে বসে এবং দ্রুত গোল পেয়ে যায়। একটা সময়ে মনে হচ্ছিলো হয়তো আর্জেন্টিনা বা জার্মানির মতো খেলার ফল হতে পারে কিন্তু এই সময়ে অসংখ্য পাস খেলে আরও দুটি গোল করে। ফের কাউন্টার আক্রমণে গোল পেয়ে যায় ঘানা, তখন খেলা শেষ হতে আর বেশি সময় ছিল না।
এদিকে, বহুদিন বাদে এক নতুন ব্রাজিলকে পাওয়া গেলো। সেই স্কিল সেই দৃষ্টিনন্দন গোল শেষ ৪৫ মিনিট মাঠে যেন সাম্বা ঝড়। ডিফেন্সে ড্যানি আলভেস, থিয়াগো সিলভা, মার্ককুইনহোস, আলেক্স সান্দ্রো। উপরে ভিনিসিয়াস, রাফিনহা নেইমার এবং সবাইকে ছাপিয়ে রিচারলিসন। প্রথম থেকেই আক্রমণে গিয়েছিলো ব্রাজিল কিন্তু সার্বিয়ার গোলরক্ষক একের পর এক গোল বাঁচিয়ে যান। শেষের দিকে বার পোস্টে লেগেও বল ফিরেছে একাধিকবার। এই ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে পরপর দুটি গোল করেন রিচারলিসন। দ্বিতীয়টি তো দেখার মতো, সাইড ভলি করে অনেকটাই বাই সাইকেল কিক করে এবারের সেরা গোলটি উপহার দেন দলকে। নেইমার মন্দ খেলেননি কিন্তু বড্ড বেশি বল হোল্ড করে খেই হারিয়েছেন মাঝে মধ্যে। অবশ্য পায়ে চোট লেগে বেরিয়েও যান তিনি। শোনা গেলো পরের ম্যাচ খেলতে পারবেন। টোটাল ফুটবল দেখা গেলো ব্রাজিলের মধ্যে। তাই দিনটি ছিল পর্তুগিজদেরই।
হীরক বোস: কাতার থেকে কোপাকাবানা হয়ে কলকাতা মহাবিশ্বের আস্ত একটা গ্রহ তখন রাত জাগছে। তখনই ফুটবলের সবুজ ঘাসের ক্যানভাসে দ্য ভিঞ্চির তুলির আঁচড় দিচ্ছে সাম্বার দেশ। যার শুরুটা ছিল একটু আশ্চর্যের।
ব্রাজিলের ৯ নম্বর জার্সি একটা ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। তা সে রোমারিও হোক বা রোনাল্ডো। গত বিশ্বকাপেও এই ৯ নম্বর জার্সিটা পরে মাঠে নেমেছিলেন গ্যাব্রিয়াল জেসাস। কিন্তু এই বিশ্বকাপে তার জার্সি নাম্বার বদলে গিয়ে ১৮। আর তিতের দলে তার জায়গা হয়েছে রিজার্ভ বেঞ্চে। কিন্তু কেন? 'ব্রাজিলিয়ান নাইন' তাহলে কে? লাইনআপে চুলে সাদা কালার করা ছেলেটাকে দেখে কেউ কি বুঝতে পেরেছিল নতুন এক তারকা জন্ম নিতে চলেছে?
রিচার্লিসনের সঙ্গে রিপিনহাকে সামনে রেখে অ্যটাকিং মিডে নেইমারকে রেখে দল সাজিয়েছিল তিতে। যাদের বল সাপ্লাই দেওয়ার দায়িত্ব পিছনে থাকা ক্যাসেমেরোর। নিজের গতি দিয়ে বাঁ দিকের উইংটাকে সচল রেখেছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়ার। তবে বিক্ষিপ্ত কিছু সুযোগ ছাড়া প্রথমার্ধে সেভাবে খোলস ছেড়ে বেরতে দেখা গেলো না সেলেকাওদের। নেইমারও ঠিক নেইমারসুলভ খেলা উপহার দিতে পারেননি। এদিকে, থিয়াগো সিলভা, ডিলানোদের ডিফন্সকে সেভাবে কোন পরীক্ষার মুখে ফলতে পারেনি সার্বিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয়ে গেলো সাম্বার আক্রমনাত্মক ঝাঁজ। দীর্ঘ একঘন্টার অপেক্ষার পর অবশেষে এলো গোল। নেইমারের বল থেকে ভিনিসিয়াসের শট সার্বিয়ার গোলরক্ষক সেভ দিতেই ফিরতি বল ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা রিচার্লিসন খুব সহজেই জালে জড়িয়ে দেন। ঠিক তার ১০ মিনিট পরেই আসলো বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোলটা, সেই রিচার্লিসনের পা থেকেই। ভিনিসিয়াসের থ্রু ধরে দুরন্ত সাইডভলিতে গোল ব্রাজিলের নতুন নাম্বার নাইনের। দুটো গোলই নয় সেলেকাওদের দুটো শট পোষ্টে লেগেও ফিরে আসে। ম্যাচের বয়স যখন ৮০ মিনিট নেইমার, রিচার্লিসনদের তুলে নিয়ে গ্যাব্রিয়াল জেসাসকে নামিয়ে দেন তিতে। ভিনিসিয়াসের গতিময় ফুটবল তখন রীতিমতো ছেলেখেলা করছে সার্বিয়ার ডিফেন্সকে নিয়ে। তবে গোলরক্ষকের প্রচেষ্টার জন্য আর গোলসংখ্যা বাড়াতে পারেনি ব্রাজিল।
ব্যক্তিকেন্দ্রিক ফুটবল নয়, দলগত প্রচেষ্টায় সাম্বার শিল্প ধরা দিলো মরুশহরে। যা দেখে চোখ জুরিয়ে গেলো ফুটবল ভক্তদের।
প্রসূন গুপ্ত: শতাব্দীর পথে বিশ্বকাপ ফুটবল (World Cup 2022)। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কিছুটা থেমে গেলেও আজও অটুট বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) ঐতিহ্য। এই ফুটবল যুদ্ধে বহু ফুটবলার এসেছেন, খেলেছেন কিন্তু রেকর্ড বইয়ে মাত্র কিছু খেলোয়াড় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। ফুটবল বললেই ব্রাজিল (Brazil) দেশের কথা প্রথমেই মনে আসে। পাঁচবার বিশ্বকাপ জয় করেছে তারা। অসংখ্য তারকা ফুটবলার দিয়েছে এই দেশ। কিন্তু বিশ্বফুটবলে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন ফুটবলের রাজা পেলে (Pele), কালো হীরা নাম হয়েছিল তাঁর। অসংখ্য গোল করে দেশকে সম্মানের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। এটা সত্যি যে পেলের সাথে জার্জিনহো-সহ বহু ফুটবলার খেলেছেন কিন্তু বাস্তবতায় একার কৃতিত্বে পেলে ছিলেন অনন্য।
এরপর যে নামটি আসে তিনি ফুটবলের রাজপুত্র প্রয়াত দিয়েগো মারাদোনা। আর্জেন্টিনাকে শুধু বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন তাই নয়, একার কৃতিত্বে অজস্র গোল করেছেন মারাদোনা। বলতে দ্বিধা নেই তাঁর সেরা সময়ে আর্জেন্টিনা দলে আহামরি এমন কিছু বড় খেলোয়াড় ছিল না। গত শতকে এই দুজনই কিংবদন্তি। মারাদোনা অবশ্য আজ প্রয়াত কিন্তু অমর তাঁর ক্রীড়াশৈলী।
এই দুজন ছাড়া আর যাঁরা বিখ্যাত হয়েছেন বা দেশের নাম চিরস্মরণীয় করেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন জার্মানির বেকেনবাওয়ার। মধ্য মাঠ থেকে অসংখ্য বল বাড়িয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে বলা হয়ে থাকে সর্বকালের সেরা মিড-ডিফেন্ডার। এসেছেন জোহান ক্রুয়েফের। নেদারল্যান্ড কোনও দিন বিশ্বকাপ যেতেনি কিন্তু ফুটবল নিয়ে জাদু দেখাতে পারতেন তিনি। গত শতকের আরও এক প্রতিভাবান ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান। ৯৮-র বিশ্বকাপে খানিকটা জিদানের ভেলকিতে মাত হয়েছে বিশ্ব। সেবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বিপ্লবের দেশ ফ্রান্স। জিদানের মতো পরিশ্রমী খেলোয়াড় এর আগে খুব কমই এসেছে।
চলতি শতকে যে দুজন খেলোয়াড় বিশ্বখ্যাত, তাঁদের হয়তো এবারই শেষ বিশ্বকাপ। রোনাল্ডো বা সিআর-৭ এবং মেসি বা এলএম-১০। অবশ্যই দুজনের খেলার ধারণ আলাদা। মেসি আর্জেন্টিনায় মারাদোনার পরবর্তী প্রতিভা এবং রোনাল্ডো উইথড্রয়াল স্ট্রাইকার। দুজনই গোল করেন বা গোল করতে সাহায্য করেন। এই বিশ্বকাপে এই দু'জন কী করেন দেখার। তবে আগে পরে আরও অনেক নাম আসতেই পারে কিন্তু এদের সমতুল্য কারও নাম এই মুহূর্তে মাথায় আসছেই না।
বিশ্বকাপে (Qatar World Cup 2022) ব্রাজিল দল থেকে বাদ পড়লেন তারকা ফুটবলার কুটিনহো (Coutinho)। যদিও তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বার্তা দিলেন অধিনায়ক নেইমার (Neymar)। কাতার বিশ্বকাপের জন্য সাম্বার দেশের (Brazil) দল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। অধিনায়ক নেইমারের সঙ্গে দলে জায়গা করে নিয়েছেন সব নামজাদা তারকা ফুটবলাররা। তিতের ব্রাজিল দলে থিয়াগো সিলভা, দানি আলভেসের মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে গ্যাব্রিয়াল জেসাস, ভিনিসিয়াস জুনিয়ারের মতো তারুণ্যের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। তবে দল থেকে বাদ পড়েছেন সুপারস্টার কুটিনহো।
সাম্প্রতিক ফর্ম আর চোটের কারণেই ব্রাজিল দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এরপরেই সতীর্থর উদ্দেশ্যে আবেগঘন নেইমার। মন খারাপ হলেও সোশাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে, বাকি সবার মতো টিভির সামনে বসে দেশের হয়ে গলা ফাটানোর কথা জানাতেই... এই রিপ্লাই করেছেন ব্রাজিল অধিনায়ক। কুটিনহোর জন্য ভালোবাসার বার্তা এভাবেই দিলেন ব্রাজিল অধিনায়ক। এদিকে, কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ জি-তে রয়েছে ব্রাজিল। নেইমারদের গ্রুপে অন্য দলগুলো--- ক্যামেরুন, সার্বিয়া, সুইৎজারল্যান্ড। ২৫,২৮ নভেম্বর এবং ৩ ডিসেম্বর গ্রুপ লিগের ম্যাচগুলো খেলবে ব্রাজিল।
তাঁর বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ, তিনি স্বৈরাচারী শাসক, করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ। এমনকি দক্ষিণ আমেরিকার ফুসফুস হিসেবে পরিচিত অ্যামাজন জঙ্গল (Amazon Forest) পোড়ানোর দায়ে কাঠগড়ায় তিনি। ব্রাজিলের (Brazil Vote) সেই বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো (Jair Bolsonaro) হারলেন সাধারণ নির্বাচন। দেশের প্রায় ৫১% জনতার সমর্থন নিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে প্রত্যাবর্তন বামপন্থী নেতা লুলা ডি সিল্ভার (Lula De Silva)। রবিবার প্রকাশিত নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, মোট বৈধ ভোটের ৫০.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন লুলা। অন্যদিকে বোলসোনারো পেয়েছেন ৪৯.২ শতাংশ ভোট।
নিজের জয় নিশ্চিত হতেই দলীয় সদস্য- সমর্থকদের নিয়ে সাও পাওলো শহরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন লুলা। পেলের দেশের আগামি প্রেসিডেন্ট জানান, বিভাজিত ব্রাজিলকে তিনি ‘শান্তি-একতা’ দিয়ে জুড়বেন। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের বার্তা, 'ব্রাজিল আবার ফিরে এল গণতন্ত্র।' নিজের ট্যুইটের সঙ্গে দেশের জাতীয় পতাকার ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের দায়িত্ব নিতে চলা আগামি প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানান, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও জনতার রায় মানতে নারাজ বোলসোনারো। তাঁর দাবি, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কারচুপি হয়েছে।
তিনি দুই সন্তানের জননী, দু'জনেই যমজ (twin child)। এত অবধি ঠিক ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাড়ালো সন্তানদের ডিএনএ টেস্ট। জানা গেলো, মহিলার দুই সন্তানের বাবা আলাদা! এমনটাও সম্ভব? সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ব্রাজিলের (Brazil) এক তরুণী। একই দিনে দুই পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হয়েছিলেন। তারপরই সন্তান সম্ভবা (pregnant woman) হয়ে পড়েন তরুণী।
ব্রাজিলের এক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই তরুণী যেহেতু একই দিনে দুই পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান, তাই তিনি বুঝতে পারছিলেন না তাঁর সন্তানদের আসল বাবা কে। আর পিতৃপরিচয় খুঁজে পেতেই ডিএনএ পরীক্ষা করান তিনি। সেই পরীক্ষায় এক সঙ্গীর জিনগত উপাদানের সঙ্গে দুই সদ্যোজাতের জিনগত উপাদান মিলিয়ে দেখা হয়। পরীক্ষার ফল বলছে, এক শিশুর সঙ্গে জিন মিললেও অন্য শিশুর সঙ্গে মেলেনি। অর্থাৎ যমজ হলেও দুই শিশুর বাবা আলাদা।
গোটা বিষয়টি বিরল, তাহলেও একেবারে অসম্ভব নয়। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয়, ‘হেটারোপ্যারেন্টাল সুপারফেকান্ডেশন’। এ ক্ষেত্রে মায়ের দেহের দু’টি ডিম্বাণু দুই আলাদা পুরুষের শুক্রাণুর দ্বারা নিষিক্ত হয়। দু’টি ভ্রূণ আলাদা দুই প্লাসেন্টা বা অমরার ভিতরে বড় হতে থাকে।