বাগুইআটি-কাণ্ডে (Baguiati Case) হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে ধৃত সত্যেন্দ্র চৌধুরীকে জেরা করে একাধিক তথ্য হাতে পেয়েছে সিআইডি (CID)। সূত্রের খবর, খুনের ঘটনার পর থেকে হাওড়া স্টেশনের (Howrah Station) ওয়েটিং রুমে রাত কাটাত সত্যেন্দ্র। সকালে আশপাশে ঘুরে বেড়াতো। টাকা দিয়ে ওয়েটিং রুম ভাড়া করে সেখানেই থাকত সে। পাশাপাশি জেরায় সত্যেন্দ্র জানিয়েছে, বাইক কেনার জন্য নেওয়া ৫০ হাজার টাকা ফেরৎ যাতে দিতে না হয়, তাই এই খুন। অতনু বারবার ৫০ হাজার টাকা চাওয়ায় এই খুন। এমনটাই দাবি অভিযুক্তের। যদিও এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে চায় সিআইডি। পাশাপাশি অন্য কোনও মোটিভ রয়েছে কিনা, খতিয়ে দেখবে তদন্তকারীরা।
এদিকে, হাওড়া স্টেশনে বাইরের রিজার্ভেশন কাউন্টার থেকে টিকিট কাটতে গিয়েই বিপদে পড়েন সত্যেন্দ্র। তাঁকে গ্রেফতার করে কোমরে দড়ি পরিয়ে গাড়িতে তোলা হয়। জানা গিয়েছে, শুক্রবার স্টেশনের বাইরে রেলওয়ে অনুমোদিত টিকিট বুকিং কাউন্টার থেকে মুম্বইয়ের ট্রেনের খোঁজখবর শুরু করে সত্যেন্দ্র। টিকিটও কাটা শুরু করে দোকান মালিক। কিন্তু হঠাৎ কারেন্ট চলে যাওয়ায় গোটা প্রক্রিয়া থমকে যায়। আর তাতেই সুবিধা পেয়ে যান স্টেশন চত্বরে সাদা পোশাকে ওঁত পেতে থাকা পুলিস।
টিকিট কাউন্টারের সামনে কারেন্ট আসার অপেক্ষায় থাকা সত্যেন্দ্রকে দু'দিক থেকে ঘিরে গ্রেফতার করে পুলিস। যদিও প্রথমে আশপাশে থাকা ব্যক্তিরা বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু পরে সাদা পোশাকের পুলিস নিজেদের পরিচয় দেওয়ায় তাঁরা বুঝতে পারে কে এই সত্যেন্দ্র। অপরদিকে, এদিন বারাসাত আদালত সত্যেন্দ্রকে ১৪ দিনের পুলিস হেফজাওত দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইপিসির ৩০২, ২০১, ৩৬৪-এ এবং ১২০-বি ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
বাগুইআটি জোড়াখুনের (Baguiati Murder) তদন্তে ভাঙড়ে সিআইডি টিম। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের বাসন্তী হাইওয়ের (Bhangar Basanti Highway) সিসিটিভি ফুটেজ (CCTV FOOTAGE) সংগ্রহ করতে যায় সিআইডি। বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন সিআইডি আধিকারিকরা।
সিআইডি (CID) আধিকারিকদের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার আগে পর্যন্ত পুলিস আধিকারিকরা তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারেননি। পুলিস আধিকারিকরা শত চেষ্টা করেও অতনুদের বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেননি। সিআইডি আধিকারিকদের চার জনের দল ইতিমধ্যেই চলে এসেছিলেন বাগুইআটি থানায় এর পর পুলিসের আধিকারিকদের সাথে কথোপ কথনের পর সিআইডি আধিকারিকরা তদন্তের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাবেন।
যে গাড়িটি করে সেই দিন নিয়ে যাওয়া হয় রাজারহাট ও পরবর্তীকালে বাসন্তী হাইওয়েতে, সেই গাড়িটিরও তদন্ত হবে। সিআইডি আধিকারিকদের হাতে গোটা তদন্তের ভার যাওয়ার পর তারা অতনুদের বাড়িতে আসবেন। গোটা বিষয়টা তদন্ত করবেন। এমনটাই সিআইডি আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
বাগুইআটির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘটনার পুরো তদন্ত সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখছেন। সম্পূর্ণ তদন্তের পর আসল অপরাধীকে ধরতে হবে ও যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা হবে, এমনটাই বক্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বুধবার এই মন্তব্য করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বাগুইআটির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।এই ঘটনায় পুলিসি গাফিলতির একটা অভিযোগ উঠছিল। সেই প্রসঙ্গে তিনি জানান,'পুলিস-সহ থানার আধিকারিকের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার ছিল। প্রয়োজনে সিআইডির সাহায্য নেওয়া যেতে পারতো। মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন। পরিবারের পাশে রাজ্য সরকার আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেদনাহত। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত সাজা দেওয়া হবে। এই নির্দেশ ডিজিকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।' পাশাপাশি তিনি জানান, আইসিকে ক্লোজ করে সিআইডি-কে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। এদিন বিকেলের দিকে দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন সিআইডির প্রতিনিধি দল। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিধাননগরের সিপি সুপ্রতীম সরকার।
বুধবার নবান্নে (Nabanna) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) একটি প্রশাসনিক বৈঠক করেন। এদিনের বৈঠকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দফতরের সচিব-সহ সিনিয়র আধিকারিকরা। এছাড়াও বিএলআরও-রাও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি পুজোর পরেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতে পারে। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
এদিন নবান্নের পর্যালোচনামূলক বৈঠক থেকে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "কোনও অভিযোগই যেন ফাইল চাপা হয়ে পড়ে না থাকে। সচিবালয়ে কোনও অভিযোগ এলে ৭ দিনের মধ্যে করতে হবে নিষ্পত্তি। সচিবালয়ের পাশাপাশি পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদ স্তরেও কোনও অভিযোগ এলে তা সমাধান করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই।" এদিন রিভিউ বৈঠকের শুরুতেই আইন শৃঙ্খলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে বাগুইহাটির ঘটনা নিয়ে ডিজিকে ডেকে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন ১৩ দিন দেহ পড়ে থাকল? সমন্বয়ের অভাব হল কেন? কমিশনারকে জিজ্ঞাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ডিজির ওপরেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি ডিজি-র উদ্দেশ্যে বলেন, "বেআইনি কিছু সহ্য করব না। ৭ দিন সময় দিলাম সমন্বয় ফিরিয়ে আনার জন্য যা করার করুন।" অন্যদিকে নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রীদের সতর্ক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "স্থায়ী হোক বা অস্থায়ী, সরকারি নিয়ম মেনে অনুমতি নিয়েই নিয়োগ করতে হবে। অনুমতি ছাড়া কোনও নিয়োগ নয়।" নিয়োগের আগে প্রতিটি দফতরের নির্দিষ্ট কমিটির থেকে অনুমতি নিতে হবে বলেও কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকেই বিশেষ করে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী৷