হারলেই বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) বাইরে, ড্র করলেও রাউন্ড অফ ১৬ পোক্ত নয়। খানিকটা এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে রবিবার মধ্যরাতে মেক্সিকোর (Argentina versus Mexico) বিরুদ্ধে খেলতে নামছে আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচে অবিশ্বাস্য ভালো খেলে দু'বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারিয়েছে সৌদি আরব। তাই রবিবার সাড়ে ১২টার ম্যাচ মেসি (Lionel Messi) -ডিবালা-মার্টিনেজদের কাছে মরণ-বাঁচন লড়াই। যদিও আন্তর্জাতিক ফুটবলের পরিসংখ্যান বলছে, মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ধারে ভারে অনেকটাই এগিয়ে নীল-সাদা ব্রিগেড। অন্তত ফুটবলের এই মহারণে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে তিনবার মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা। প্রতিবারই জয় পকেটে পুড়েছে মারাদোনার দেশ। তবে মেক্সিকোর গোলে শক্ত হাত, গিলেরমো ওচোয়া। আর্জেন্টিনার আক্রমণকে সুচাগ্র মেদিনী ছাড়তে নারাজ এই অভিজ্ঞ গোলরক্ষক।
তবে মেসিদের গ্রুপে সবচেয়ে দুর্বল প্রতিপক্ষ ছিল সৌদি আরব। তাঁদের কাছে হেরে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই তলানিতে দি মারিয়াদের। মনোবল বাড়িয়ে দলকে মাঠে নামাতে মরিয়া লিওনেল স্কালোনি। রবিবারের ম্যাচ আর্জেন্টিনাকে জিততেই হবে, কারণ গ্রুপের শেষ ম্যাচে তাঁদের প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড। লেওয়ানডস্কিরা খুব সহজে ছেড়ে কথা বলবে না নীল-সাদা ব্রিগেডকে। এমনটাই মনে করছেন ফুটবল লিখিয়েরা।
শোনা গিয়েছে, কাতার বিশ্বকাপ লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ। সেখানে গ্রুপ পর্ব থেকে আর্জেন্টিনা বিদায় নিলে সেটা লজ্জাজনক এই ফুটবল তারকার জন্য। তাই নিজের ১০০% এই ম্যাচে দেবেন এলএম-১০। তাঁর সতীর্থরাও চান না কোনও ভুল করতে। ডিফেন্সের যে ফাঁকফোকর সৌদি আরব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, সেই ফাঁক ভরাট করেই মেক্সিকোর বিরুদ্ধে নামবে আর্জেন্টিনা। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করছে।
এদিকে, জয়ে ফিরতে মেক্সিকো ম্যাচে প্রথম একাদশে একাধিক বদল করতে পারেন কোচ স্কালোনি। ৪-৩-২-১ এই ছকে সামনে লাউতারো মার্টিনেজকে রাখতে পারেন কোচ। তাঁকে বল বাড়াতে সামান্য পিছনে থাকবেন মেসি এবং ডি মারিয়া। ডিপ ডিফেন্সে অটামান্ডিকে সঙ্গত দিতে থাকবেন আকুনা। এই ছকেই সম্ভবত মেক্সিকো বধে রবিবার মধ্যরাতে লুসেইল স্টেডিয়ামে নামতে চলেছে আর্জেন্টিনা।
হীরক বোস: ফুটবল বিশ্বকাপের (FIFA World Cup 2022) উন্মাদনায় ফুটছে শহর কলকাতা (Kolkata)। ব্রাজিলের দুরন্ত জয় যেন সেই উচ্ছ্বাসকে দ্বিগুণ করেছে। এদিকে, আবার রোনাল্ডো (Ronaldo) পাঁচ বিশ্বকাপেই গোল করে নজির গড়েছেন। তাই পর্তুগালেরও সাপোর্ট বাড়ছে। আর্জেন্টিনাকে (Argentina) নিয়ে বেশ চাপে মেসি ভক্তরা। এমনই সব বিষয় নিয়ে ফুটবল আড্ডা জমে উঠেছে উত্তর কলকাতার ফকির চক্রবর্তী লেনে। কাতার ফুটবল জ্বরের আঁচ এসে পড়েছে উত্তর কলকাতার এই বনেদি পাড়াতে। যেখানকার রাস্তা সেজেছে হলুদ-নীল আর নীল-সাদা রং-এ। বাড়ির দেওয়ালে মেসি-রোনাল্ডো-নেইমার থেকে মারাদোনার ছবি আঁকা। সঙ্গে রয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগালের ফ্ল্যাগ। আর রয়েছে ১৯৩০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রত্যেক চ্যাম্পিয়নদের ট্রফি হাতে পোষ্টার।
দিশারি ক্লাবের ছেলেরা একমাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাতারের ফ্যান জোন তুলে এনেছে কলকাতায়। ক্লাবে বসেই জায়েন্ট স্ক্রিনে দেখা হচ্ছে বিশ্বকাপের খেলা। আর চলছে মেসি, নেইমার, রোনাল্ডোদের নিয়ে কাটাছেঁড়া। ইতিমধ্যে বিশ্বকাপের মূলপর্বে অংশ গ্রহণ করা ৩২টি দেশ একটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। সমর্থকদের হতাশ করেছে আর্জেন্টিনা-জার্মানি। অপরদিকে সাম্বা ঝড়ে উড়ে গিয়েছে ছোট দেশ সার্বিয়া। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ঘানার বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে পর্তুগাল।
এই অবস্থায় আগামি দিনে রাউন্ড অফ ১৬-এ কোন সেরা ষোলো দল যায়, সেদিকে তাকিয়ে ক্রীড়া ফুটবল বিশ্ব।
প্রসূন গুপ্ত: গত বিশ্বকাপগুলিতে (World Cup) কোনও দু-একটি দলকে বিশ্বজয়ের সম্ভাব্য দাবিদার হিসাবে ধরা হতো। কিন্তু ২০১৮ থেকে ফুটবল রণাঙ্গনে কে কার থেকে বেশি ভালো খেলবে, পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। তবুও অনেকেই বলেছিলো যে বেলজিয়াম অথবা ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে উঠবেই কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সেবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স নিজেদের ছক পালটে নতুন খেলা উপহার দিয়েছিল। এবার (Qatar World Cup 2022) গতিপ্রকৃতি তাও বোঝা যাচ্ছে না। মেসির (Lionel Messi) এটাই শেষ বিশ্বকাপ। অনেকে সংখ্যাতত্ত্বের বিচার করে ভবিষ্যতবাণী করে বলেছে এবার কাপ যাবে আর্জেন্টিনায়। কিন্তু দু'বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন প্রথম খেলতে অখ্যাত সৌদি আরবের (Saudi beats Argentina) কাছে ২-১ গোলে পরাজিত।
পেনাল্টিতে গোল করা ছাড়া মেসিকে প্রথম ম্যাচে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। বুধবার সন্ধ্যায় নেমেছিল ৪ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। প্রথম অর্ধে বল ছুঁতেই দেয়নি জাপানকে, গোলও পেলো তারা পেনাল্টিতে। কিন্তু দ্বিতীয় অর্ধে এ কোন জাপান? স্পিড বল ভাসিয়ে দেওয়া ইত্যাদিতে নাস্তানাবুদ করে জার্মানিকে ২-১ গোলে পরাজিত করলো। এছাড়া বেলজিয়াম কোনওক্রমে ১ গোল দিয়ে জিতলো আরেক অখ্যাত কানাডার বিরুদ্ধে। অসম্ভব ভালো খেলেছে কানাডা। তারা একটি পেনাল্টি আদায় করে ব্যর্থ হলো গোল করতে। কারণ গোলে ছিল বিশ্বের সেরা থিবাউট কোর্তোয়াস, এই গোলরক্ষক বাঁচালেন বহু আক্রমণ। হল্যান্ড-সেনেগালের বিরুদ্ধে তেমন খেলা দেখতে না পারলেও শেষ সময়ে দুটি গোল পেয়েছে।
কিন্তু কিছু ইউরোপিয়ান দল নজর কেড়েছে। ইংল্যান্ড প্রথম খেলায় ইরানকে ৪-২ গোলে হারায়, ঠিক আছে কিন্তু ইরান দুটি গোলও করেছে। ফ্রান্স মোটামুটি এমবাপেকে সামনে রেখে ভালো খেলছে। অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ গোলে তারা হারিয়েছে। এশিয়া মহাদেশের দলগুলি যথেষ্ট ভালো খেলছে। এখনও পর্যন্ত সেরা ম্যাচ খেলেছে স্পেন। বুধবার রাতে কোস্টারিকাকে ৭ গোল দিয়ে প্রমাণ করলো তিকিতাকা বা পাসিং ফুটবল এখনও হারিয়ে যায়নি। পাশাপাশি নিশ্চিত করেছে ২০১০-র পর এবারও তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার। বৃহস্পতিবার দুই বিখ্যাত পর্তুগিজ ভাষার দেশ খেলতে নামছে। একটা রোনাল্ডোর পর্তুগাল, অন্যটি বাঙালির আরেক প্রিয় দল ব্রাজিল, রাত জাগার অপেক্ষায় বাঙালি।
বিশ্বকাপে (World Cup 2022) প্রথম ম্যাচে হার। সুপার সৌদিতে বিধ্বস্ত আর্জেন্টিনা (Argentina)। নীল সাদা সমর্থকের মনে আশঙ্কা এখন ক্রমাগত বাড়ছে। বাড়ছে চিন্তাও। এর মাঝেই কাতারের (Qatar World Cup 2022) বাতাসে ডালপালা মেলেছে পিএসজি তত্ত্ব। যা শুনলে খানিকটা আশ্বস্ত হতে পারেন মেসি (Lionel Messi) সমর্থকরা। একটু বিস্তারিতভাবে বলা যাক। লিগ ওয়ানে প্যারিস সেন্ট জার্মেইন ক্লাবেই খেলেন মেসি। পিএসজি ফরাসি লিগের প্রথম সারির ক্লাব।
২০০১ সালে ওখানে যোগ দিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনাল্ডিনহো।পরের বছর ছিল বিশ্বকাপের আসর। কাপ জিতেছিল ব্রাজিল। রাতারাতি মহাতারকা হয়ে উঠেছিলেন রোনাল্ডিনহো। এরপর ২০১৭, পিএসজি রেকর্ড অর্থে সই করায় এক ফরাসি তারকাকে। এমবাপে। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে কাঁপিয়ে সেরা যুব ফুটবলারের সম্মান পান তিনি। কাপও জেতে ফ্রান্স। এরপর ২০২১, বার্সেলোনা থেকে মেসিকে সই করায় পিএসজি। আর কাকতলীয় হলেও এবারই বিশ্বকাপের আসর বসেছে কাতারে। রোনাল্ডিনহো, এমবাপের মতো মেসি কি পারবেন কাপ ঘরে তুলতে?
প্রসূন গুপ্ত: বুয়েনোস আইরেস থেকে কাতার (Qatar World Cup 2022) যাওয়ার পথে কলকাতায় নেমেছিলেন নাকি মেসি (Lionel Messi)? মজার প্রশ্ন। সৌদি আরব (Saudi Arab) বা ওই গ্রুপের খেলা নিয়ে চিন্তা খুব বেশি নেই আর্জেন্টিনার কঠিন লড়াই তো নক আউটে। ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ মহলের একটি অংশ বলতে শুরু করেছে যে এবারে কাপ যাচ্ছে মেসির হাত ধরে তাঁর দেশে। যদিও আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ দেখে হতাশ প্রত্যেকেই।
তবে কোন যুক্তিতে এই দাবি, তা বিশেষ করে ভাঙতে চাইছেনা কেউই। কিন্তু পত্র-পত্রিকাতে ঢালাও লেখা হচ্ছে 'এবার নাকি আর্জেন্টিনা'। গত বিশ্বকাপে এমনটাই হচ্ছিলো বেলজিয়ামকে নিয়ে। রেড ডেভিলসদের ডার্কহর্স বলেই ক্ষান্ত হয়নি কেউ। বরং যুক্তিতে বুঝিয়েছে, তারা যে দলগত সংহতির ফলেই কাপ জিতবে তারা। কিন্তু হলোটা কি? কোনও এক অজানা ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়ামকে সেমিফাইনালে নাস্তানাবুদ করে জিতে ফাইনালে গেলো। এবার দলের পক্ষে আরব দলের বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে প্রথম গোল করে অনেকটাই উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মেসি। কলকাতার মেসি বললো, এটাই তো বলেছিলাম, কাপ আমরা নেবোই।
কিন্তু কে এই পাগল সমর্থক। সোশাল নেটওয়ার্কে গত ১৫ দিন ধরে প্রায় ১৫০ পোস্ট করেছে এই মেসি ভক্ত। কলকাতার কাছেই তার বাড়ি, নাম অমিত নাইয়া। মজার জায়গা এই সোশাল নেট। কত শত পোস্ট ভাইরাল হয় নিয়মিত! শুভেন্দু অধিকারীকে ট্রোল করা অথবা রাহুল গান্ধীকে 'পাপ্পু' বলা সবই চলে। ইদানিং চলছিল প্রয়াত নায়িকা ঐন্দ্রিলা শর্মাকে নিয়ে। পোস্টে হিট চরিত্র রোদ্দুর রায়, কুকথা কথা বলে। এদেরই মতো মেসি পাগল অমিত কোনও পোস্টে লিখছে, ব্রাজিল কাঁপছে-মেসি আসছে। লিখেছেন মোদী থেকে মমতা সবাই নাকি মেসিকেই চাইছে। এমন পোস্টও হচ্ছে যে প্রয়াত জ্যোতি বোস নাকি শেষ সময়ে চেয়েছিলেন মেসির হাতে কাপটা উঠুক। আসলে সবটাই মজার। মানুষের এই নিয়ে মজা পাওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই। অমিতের পোস্টগুলি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। কিন্তু যদি না হয়, ক্রীড়াপ্রেমীরা কিন্তু অমিত নাইয়াকেই সমর্থন করছে।
তবে প্রথম ম্যাচ দেখে আর্জেন্টিনার উপর থেকে ক্রমেই আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা। কতটা ফলবে অমিত নাইয়ার পোস্ট, শুধু সময় বলবে।
কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup) গ্রুপ সি-র প্রথম ম্যাচে অঘটন। লুসেইল স্টেডিয়ামে আরব্য রজনী, ২-১ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারালো সৌদি আরব (Saudi Araba beats Argentina)। মঙ্গলবার প্রথম থেকেই নীল-সাদা জার্সির দাপট থাকলেও মাত্র একবার বল জালে জড়াতে পেরেছে তারা। তাও পেনাল্টিতে মেসির গোল। তিন তিনটি গোল অফ সাইডের জন্য বাতিল হয়েছে, যার মধ্যে একটা মেসির পা থেকে। এই ম্যাচের প্রথম অর্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল নীল-সাদা ব্রিগেড। কিন্তু দ্বিতীয় অর্ধে ঘুরে দাঁড়ায় সৌদি। ৪৮ মিনিটে খেলায় সমতা ফেরান সালেহ। পাশাপাশি ৫৩ মিনিটে গোল করে সৌদিকে এগিয়ে দেন সালেম।
তারপর সৌদির গোল বক্সে একাধিকবার ডি মারিয়া, মেসিরা ঢুকে গেলেও বল জালে জড়াতে পারেননি। প্রতিবার সৌদি গোলরক্ষক মহম্মদ এলোওয়াইসের হাতে আটকেছে আর্জেন্টিনার আক্রমণ। বল পজেশন, কর্নার কিক; প্রতিক্ষেত্রে নীল-সাদা ব্রিগেড সৌদির থেকে এগিয়ে থাকলেও ২-১ গোলে হেরেই মাঠ ছাড়তে হয় মেসিদের। এদিন প্রথম থেকেই আর্জেন্টিনার আক্রমণকে একাধিকবার অফ সাইডের ট্র্যাপে ফেলে সৌদি ডিফেন্স। সেই ট্র্যাপেই বাতিল মার্টিনেজের গোল। মঙ্গলবার ভার প্রযুক্তির মাধ্যমেই পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা আবার এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অফ সাইডে নিশ্চিত বাতিল হয় মার্টিনেজের গোল। প্রতিপক্ষের স্ট্র্যাটেজিতে ৯০ মিনিট সেভাবে নড়াচড়া করতেই পারেননি লিওনেল মেসি। আটকে দেওয়া হয়েছিল ডি মারিয়ার ডিফেন্স চেরা পাসও।
২৭ নভেম্বর এই গ্রুপে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ মেক্সিকো, পয়লা নভেম্বর নীল-সাদা ব্রিগেড খেলবে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
কাতার (Qatar World Cup 2022) থেকে কলকাতা ফুটবল জ্বরে কাবু সারা বিশ্ব। আর্জেন্টিনা (Argentina) যখন মাঠে নামছে, কলকাতার মেসি ভক্তরাও তখন প্রস্তুতি নিচ্ছে জোর কদমে। গাঙ্গুলি বাগানের আর্জেন্টিনা ফ্যান্স ক্লাব তো কাতারের ফ্যান জোনকে তুলে এনেছে তাদের এলাকায়। রবীন্দ্র পল্লি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের রাজকীয় আয়োজনে স্বাগত ব্রাজিল, রোনাল্ডো (Ronaldo) ভক্তদেরও। ফ্যান জোনে চলছে দেদার ফুটবল আড্ডা। বড় বড় কাটআউট মারাদোনা থেকে মেসি, ডিমারিয়া, দিবালাদের।
লাগানো হয়েছে বিশাল আকারের জায়েন্ট স্কিন। সেখানে বসেই মেসি ম্যাজিক দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে ৮ থেকে ৮০-র আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। শেষবারের মতো বিশ্বকাপের আসরে নামছেন এলএম টেন। পারবেন কি তিনি নীল-সাদার দেশকে বিশ্বকাপটা তুলে দিয়ে মারাদোনার পাশে নিজের জায়গা করে নিতে? এ শহরের মেসি ভক্তরা কিন্তু আত্মবিশ্বাসী। তাদের আশা নিজের শেষ বিশ্বকাপে স্বপ্নের ফুটবল উপহান দিন লিও। আর সেটা দেখার জন্য কলকাতার আর্জেন্টাইন সমর্থকরদের উন্মাদনা তুঙ্গে। আর্জেন্টিনা মাঠে নামার আগে তাই গাঙ্গুলি বাগানের রং হয়েছে নীল-সাদা। মেসিদের জন্য বিশেষ প্রস্তুতিও চলছে ফ্যান জোনে। এখন অপেক্ষা শুধু মেসি ম্যাজিকের।
প্রসূন গুপ্ত: শতাব্দীর পথে বিশ্বকাপ ফুটবল (World Cup 2022)। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কিছুটা থেমে গেলেও আজও অটুট বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) ঐতিহ্য। এই ফুটবল যুদ্ধে বহু ফুটবলার এসেছেন, খেলেছেন কিন্তু রেকর্ড বইয়ে মাত্র কিছু খেলোয়াড় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। ফুটবল বললেই ব্রাজিল (Brazil) দেশের কথা প্রথমেই মনে আসে। পাঁচবার বিশ্বকাপ জয় করেছে তারা। অসংখ্য তারকা ফুটবলার দিয়েছে এই দেশ। কিন্তু বিশ্বফুটবলে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন ফুটবলের রাজা পেলে (Pele), কালো হীরা নাম হয়েছিল তাঁর। অসংখ্য গোল করে দেশকে সম্মানের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। এটা সত্যি যে পেলের সাথে জার্জিনহো-সহ বহু ফুটবলার খেলেছেন কিন্তু বাস্তবতায় একার কৃতিত্বে পেলে ছিলেন অনন্য।
এরপর যে নামটি আসে তিনি ফুটবলের রাজপুত্র প্রয়াত দিয়েগো মারাদোনা। আর্জেন্টিনাকে শুধু বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন তাই নয়, একার কৃতিত্বে অজস্র গোল করেছেন মারাদোনা। বলতে দ্বিধা নেই তাঁর সেরা সময়ে আর্জেন্টিনা দলে আহামরি এমন কিছু বড় খেলোয়াড় ছিল না। গত শতকে এই দুজনই কিংবদন্তি। মারাদোনা অবশ্য আজ প্রয়াত কিন্তু অমর তাঁর ক্রীড়াশৈলী।
এই দুজন ছাড়া আর যাঁরা বিখ্যাত হয়েছেন বা দেশের নাম চিরস্মরণীয় করেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন জার্মানির বেকেনবাওয়ার। মধ্য মাঠ থেকে অসংখ্য বল বাড়িয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে বলা হয়ে থাকে সর্বকালের সেরা মিড-ডিফেন্ডার। এসেছেন জোহান ক্রুয়েফের। নেদারল্যান্ড কোনও দিন বিশ্বকাপ যেতেনি কিন্তু ফুটবল নিয়ে জাদু দেখাতে পারতেন তিনি। গত শতকের আরও এক প্রতিভাবান ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান। ৯৮-র বিশ্বকাপে খানিকটা জিদানের ভেলকিতে মাত হয়েছে বিশ্ব। সেবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বিপ্লবের দেশ ফ্রান্স। জিদানের মতো পরিশ্রমী খেলোয়াড় এর আগে খুব কমই এসেছে।
চলতি শতকে যে দুজন খেলোয়াড় বিশ্বখ্যাত, তাঁদের হয়তো এবারই শেষ বিশ্বকাপ। রোনাল্ডো বা সিআর-৭ এবং মেসি বা এলএম-১০। অবশ্যই দুজনের খেলার ধারণ আলাদা। মেসি আর্জেন্টিনায় মারাদোনার পরবর্তী প্রতিভা এবং রোনাল্ডো উইথড্রয়াল স্ট্রাইকার। দুজনই গোল করেন বা গোল করতে সাহায্য করেন। এই বিশ্বকাপে এই দু'জন কী করেন দেখার। তবে আগে পরে আরও অনেক নাম আসতেই পারে কিন্তু এদের সমতুল্য কারও নাম এই মুহূর্তে মাথায় আসছেই না।
গ্ল্যামার, প্যাশন, বৈভব। কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) নানা রঙে রঙিন। ৩২ দেশ কাপ জয়ের লক্ষে। বিশ্বের প্রায় ১২ লক্ষ ফুটবলপ্রেমী ডেরা বেঁধেছেন মরু শহরে। মেসি (Lionel Messi), রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo), নেইমারদের দেখার তর সইছে না। মঙ্গলবার সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নামছে আর্জেন্টিনা। তার আগে চমকপ্রদ তথ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে কাতারে। কী সেই অজানা তথ্য? জানতে উৎসুক সকলে।
নীল সাদার খাদ্যতালিকায় রয়েছে আসাদো। গো-মাংস থেকে তৈরি এই ডিশ। মেসিদের দলে কোচ, ফুটবলার, সাপোর্ট স্টাফ, কর্তা মিলিয়ে মোট সদস্য ৭২ জন। প্রায় এক মাস চলবে কাতারের কাপ যুদ্ধ। ৯০০ কেজি মাংস প্যাকেজিং করে নিয়ে গিয়েছে আর্জেন্টিনা। নিজেদের রাঁধুনি রয়েছে দলের সঙ্গে। এককথায় এলাহি ব্যাপার। ব্রাজিল আবার জোর দিয়েছে কফির উপরে। প্রচুর ব্ল্যাক কফি নিয়ে গিয়েছেন নেইমাররা। নার্ভ চাঙ্গা করতে এই ব্ল্যাক কফির জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া ৩৬ কেজি কাসাভো ময়দা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যা ফুটবলারদের রসনা তৃপ্তিতে ব্যবহৃত হবে।
শুধু কি তাই? লাতিন আমেরিকার আর এক দেশ উরুগুয়ে। গো-মাংস উৎপাদনে ওঁরাও প্রথম সারিতে রয়েছেন। প্রচুর মাংস নিয়ে নিয়ে কাতার পাড়ি দিয়েছেন তাঁরাও। সঙ্গে তাজা ফলের যোগান তো রয়েছেই। বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে সদ্য। এমন সব রংদার তথ্য রোমাঞ্চ তৈরি করেছে সমর্থকদের মনে।
হীরক বোস: কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের (World Cup 2022) দামামা বেজেছে। পশ্চিম এশিয়ার (Qatar) এই দেশে মেকসিকান ওয়েভ তুলতে বিদেশি পর্যটকরা পৌঁছে যাচ্ছেন, চাহিদা বাড়ছে হোটেলের। কিন্তু প্রিয় দল কবে পা রাখছে কাতারে। সবথেকে বেশি উত্তেজনা রয়েছে ব্রাজিল (Brazil), আর্জেন্টিনা আর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে নিয়ে। সঙ্গে সিআর সেভেনের অপেক্ষায় মরু শহর।
সাম্বার ছন্দ কাতারে পা দেবে ১৯ তারিখ। ২৪ তারিখ সার্বিয়ার বিরুদ্ধে লুসেল স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ ব্রাজিলের। তার আগে নেইমাররা ১৯ তারিখ স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় দোহায় এসে পৌঁছাবেন। ব্রাজিলের পাশাপাশি সেদিন দোহায় পৌঁছবে ক্যামেরুন এবং সার্বিয়াও। কাতারের স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে পাঁচটা পৌঁছবে ক্যামেরুন।
তার আধঘণ্টা পরই পৌঁছে যাবে সার্বিয়া। সুইজারল্যান্ড অবশ্য ১৪ নভেম্বরই পৌঁছে যাবে দোহায়। লাতিন আমেরিকার অপর দল উরুগুয়ে ১৯ নভেম্বরই যাবে কাতারে। ১৬ তারিখ কাতারে পৌঁছবে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্স। মেসিদের প্রথম খেলা ২২ তারিখ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে। আর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স মাঠে নামছে ২৩ তারিখ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপে অংশগ্রহনকারী দলগুলির মধ্যে প্রথম কাতারে পৌঁছবে জাপান। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার ১০ দিন আগেই এই দেশে পা রাখবেন জাপানি ফুটবলাররা। অধিকাংশ দলই যাবে ১৪ থেকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে। ১৭ তারিখ কাতার পৌঁছাবে স্পেন আর জার্মানি। ইউরোপের এই দুই দেশই রয়েছে একই গ্রুপে।