আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতারের পরদিনই রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভাঙড়। একদিকে যেমন উদ্ধার হয়েছে তাজা বোমা, অন্যদিকে দলীয় পতাকা লাগানোকে কেন্দ্র করে আইএসএফ এবং তৃণমূল কর্মীরা বচসায় জড়িয়ে পড়েন। আর তা রীতিমতো সংঘর্ষে পৌঁছয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় উওর কাশীপুর থানার পুলিস। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিসকে লাঠিচার্জ করতে হয় বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী। শুক্রবার সকালে তৃণমূল ও আইএসএফ সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয় ভাঙরের কোচপুকুর এলাকা। অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা ফেস্টুন ব্যানার লাগাচ্ছিলেন এলাকায়। আর তা কেন্দ্র করে আইএসএফ কর্মীদের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। পরবর্তীতে বচসা পৌঁছয় হাতাহাতিতে। এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের পক্ষ থেকে উত্তর কাশীপুর থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, কোচপুকুরে সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের জিরানগাছা প্রাথমিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তবে এঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতায় রেফার করে দেয় চিকিৎসকেরা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুনের মামলায় গ্রেফতার ভাঙড়ের দাপুটে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার উত্তর কাশীপুর থানার পুলিস আরাবুলকে গ্রেফতার করে। পুলিস সূত্রে খবর, খুনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আরাবুলকে গ্রেফতারের ঘটনায় ভাঙড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আজ, শুক্রবার তাঁকে বারুইপুর আদালতে পেশ করা হয়। ১২ দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
পুলিস সূত্রে খবর, আরাবুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে আসেন উত্তর কাশীপুর থানায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভাঙড় ডিভিশনের ডিসি সৈকত ঘোষ। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটে ঝামেলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় আরাবুল ইসলামকে। ভাঙরের দাপুটে এই তৃণমূল নেতা ও তাঁর ছেলে আসেন উত্তর কাশীপুর থানায়। জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটে অশান্তির পাশাপাশি আইএসএফ কর্মী খুনের ঘটনাতেও আরাবুল ইসলামের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। অর্থাৎ বিজয়গঞ্জ বাজারে গণ্ডগোলের ঘটনায় খুন, অস্ত্র আইন, খুনের চেষ্টা, সরকারি কর্মচারীদের কাজে বাধা-সহ একাধিক ধারায় মামলা হয়। তার প্রেক্ষিতেই এই গ্রেফতারি বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, সাত মাসের পুরনো মামলায় ধৃত তাজা নেতা আরাবুল ইসলাম। যদিও একই মামলায় এখনও মুক্ত বিধায়ক শওকত মোল্লা। কান পাতলেই ভাঙরে শোনা যাচ্ছে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কথা।
গ্রেফতার ভাঙ্গড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। উত্তর কাশীপুর থানার পুলিস তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় লালবাজারে। সূত্রের খবর, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় রাজনৈতিক হিংসার বলি হন মইনুদ্দিন মোল্লা নামে এক আইএসএফ কর্মী। খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয় আরাবুল ইসলামের নামে। সেই মামলাতেই আজ, বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর।
মঙ্গলবার গণনার রাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। ভাঙড়-২ পঞ্চায়েতের অধীন কাঁঠালিয়া হাইস্কুলের দোতলার কন্ট্রোল রুমে সেদিন কী ঘটেছিল জানেন? বিস্ফোরক অভিযোগ উঠছে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের বাহিনীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওইদিন কন্ট্রোল রুমে আরাবুলকে তাঁর স্ত্রী-সহ আটকে রেখেছিল পুলিস। তাঁদের থেকে কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল। সেইসঙ্গে গালিগালাজ, আর বারবার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিখোঁজ সহকর্মীদের খোঁজ পাওয়া না গেলে তাঁদের কপালে দুর্ভোগ আছে, এমন হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তখন বুথে উপস্থিত ভোটকর্মীরাও একই অভিযোগ তুলেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্য পুলিশ বা বারুইপুর পুলিশ জেলার আধিকারিকেরা মন্তব্য করতে চাননি। ঘটনার প্রেক্ষিতে আরাবুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুরো ঘটনার বিষয়ে তিনি দলকে জানিয়েছেন।
পুলিশের অভিযোগ তাঁদের কর্মীদের নিখোঁজের পিছনে দায়ী আরাবুল ইসলাম ও তাঁর দলবল। তাই তাঁকে সেখানে আটকে রেখে বারবার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আরাবুল জানিয়েছেন, পুলিশের ওই দুই কর্মীকে তো তিনিই নিমকুড়িয়া থেকে উদ্ধার করিয়েছেন। ওঁদের তো আইএসএফ তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁরা রাজনীতির মানুষ। পুলিশ সুযোগ পেলেই অসম্মান করে। দলকে সব ঘটনা জানিয়েছেন। পুলিশ বেশি রকম বাড়াবাড়ি করেছে।
ভাঙড়ের (Bhangar) প্রাক্তন তৃণমূল (TMC) বিধায়ক আরাবুল ইসলামের (Arabul Islam) গ্রামেই হেরে গেল তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটে ভাঙড় ২ ব্লকের যে গুটিকয়েক গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের লড়াই করে জেতার কথা ছিল, তার মধ্যে একটি ছিল আরাবুলের গ্রাম পোলেরহাট ২। সেই গ্রামেই হেরে গেল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। দুপুর দু’টো পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী পোলেরহাট২ পঞ্চায়েতে মোট ২৪টি আসনের মধ্যে ১৫টিতেই জিতে গিয়েছে জমি রক্ষা কমিটি এবং আইএসএফের জোট। তৃণমূল এখনও পর্যন্ত স্রেফ একটিই আসনে জয়ী হয়েছে।
একসময়ে ভাঙড়ের রাশ থাকত তাঁরই হাতে। তবে ইদানীং ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামের প্রতিপত্তিতে কিছুটা ‘টান’ পড়েছিল বলে মনে করছিল স্থানীয় নেতৃত্বই। পঞ্চায়েত ভোটের ফল সেই ধারণাতেই সিলমোহর দিল। মঙ্গলবার ভাঙড়ে আরাবুলের নিজের গ্রাম পোলের হাট২ গ্রাম পঞ্চায়েতেই হেরে গেল তৃণমূল। ভাঙড় ২ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে স্রেফ দু’টিতেই সব আসনে লড়তে হয়েছিল তৃণমূলকে তার মধ্যেই একটি ছিল আরাবুলের গ্রামে পোলেরহাট২ গ্রাম পঞ্চায়েত।
আরাবুল (Arabul Islam) ও তাঁর পুত্র হাকিমুল (Hakimul Islam) সহ মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করল পুলিস। ভাঙড়ের (Bhangar) কাশীপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগ দায়ের করেন নিহত আইএসএফ নেতা মহিউদ্দিনের বাবা কুতুবুদ্দিন মোল্লা। নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে ১৫ জুন রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর।
মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকা। বোমাবাজি এবং গুলি চালানো হয় বলেও অভিযোগ। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত ৬টি মামলা রুজু করা হয়েছে। আরাবুল প্রসঙ্গে কুতুবুদ্দিন জানান, তাঁর ছেলে মহিউদ্দিন হিংসার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। তাঁরা শুধুমাত্র বিডিও অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেসময় গুলি চালানো হয় এবং সেই গুলি মহিউদ্দিনের গায়ে লেগে মৃত্যু হয়।
মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকা। ঘটনায় মোট ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২ জন তৃণমূল কর্মী। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।