ফাইনালে (World Cup 2022) তাঁর খেলা নিয়েই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। চোটের জন্য গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচ খেলতেই পারেননি ডি মারিয়া (Di Maria)। কিন্তু ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মেগা ফাইনালে ত্রাতা হয়ে উঠলেন সেই ডি মারিয়া। প্রথম গোলের সময় তিনি পেনাল্টি আদায় করে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় গোলের সময় তিনি নায়ক। দুরন্ত মুভমেন্ট ফিনিশ হয় ডি মারিয়ার বাঁ পায়ে। বিশ্বকাপ জেতার দু'দিন পর সাজঘর থেকে চুঁইয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ফাইনালের ২৪ ঘণ্টা আগে এক হোয়াটস আপ বার্তায় স্ত্রী জর্জেলিনাকে সেলিব্রেশনের প্রস্তুতি নিতে বলেন ডি মারিয়া। এমনকি, স্ত্রীকে জানান ফাইনালে তিনি গোল করবেনই। তিনি গোল করার ব্যাপারে নিশ্চিত। কোপা ফাইনালে গোল ছিল ডি মারিয়ার। আর ওয়েম্বলিতে ফিনালিসিমায় গোল ছিল তাঁর। আর্জেন্টিনা দল দেশে ফেরার পর একান্ত আলাপচারিতার কথা ফাঁস করেছেন ডি মারিয়ার স্ত্রী।
নিজের ওপর কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে এমন ভবিষ্যৎবাণী করা যায়! ডি মারিয়া সেটাই দেখালেন। হয়তো নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেললেন এই তারকা। মেগাস্টার লিও মেসির ছায়ায় ঢাকা থেকেছেন দীর্ঘ সময়। কিন্তু নীল-সাদার ইতিহাসে ঝকঝকে রোদ্দুর এনে দেওয়ার অন্যতম কারিগর তিনি, ডি মারিয়া।
প্রসূন গুপ্ত: ভারতীয় বিখ্যাতরা কিন্তু চিরকাল দেশপ্রেমী। এই একটা বিষয়ে ভারত অন্য দেশ থেকে অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু ভারত এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবল (Qatar World Cup 2022) খেলার যোগ্য হয়ে ওঠেনি। তাই এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দেশের ফুটবল (Indian Football) নিয়ে আলোচনা অবান্তর। এবারের বিশ্বকাপে (Fifa World Cup) একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যে কোনও রাউন্ডের খেলার আগে প্রতিটি দেশের খেলোয়াড়রা রাষ্ট্রীয় সংগীতে গলা মিলিয়েছেন এবং দেশকে জেতানোর জন্য জান লড়িয়েছেন।
কিন্তু একসময় প্রাক্তন ফুটবলার তথা কোচ বেকেনবাওয়ার বলেছিলেন, দেশপ্রেম রাখতেই হবে কিন্তু অনেক সময়ে খেলতে নেমে দামি খেলোয়াড়রা তা ভুলে ক্লাব ফুটবল খেলতে হবে পা বাঁচিয়ে খেলেন। কারণ ক্লাবগুলি তাঁদের বিশ্বের ধনীদের তালিকাভুক্ত করে। কাজেই তাঁরা যতটা দেশের, তার থেকে অনেকটাই বেশি ক্লাবের। যদিও বেকেনবাওয়ার নিজের দেশের খেলোয়াড়দের প্রশংসা করতে ভোলেননি।
এটা বাস্তব বিশ্বে জার্মানিদের মতো দেশপ্রেমী খুব কমই হয়। যুক্তি, হিটলারের ডাকে সমস্ত জার্মানিরা একাট্টা হয়ে গিয়েছিলো, যদিও তাঁরা জানতো যে হিটলার কাজটা ভুল করছে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলি ভয়ঙ্কর দরিদ্র। এদের দেশ থেকে খুব উঁচু পরিবার থেকে কিশোর খেলোয়াড়রা ফুটবল নিয়ে ভাবে না।নিম্নবিত্ত পরিবার থেকেই ব্রাজিল উরুগুয়ে বা চিলি, আর্জেন্টিনার বেশিরভাগ খেলোয়াড় মাঠে নেমে নাম করেছেন। দারিদ্রই তাঁদের বাধ্য করেছে ইউরোপের ক্লাবগুলির কাছে নিজেদের বিক্রি করতে।
আজকে সেরা গোলরক্ষক মার্টিনেজ ,আর্জেন্টিনার একটি ক্লাবে খেলে নজর কাড়েন। পরবর্তীতে ভেবেছিলেন ফ্রান্সের কোনও দলে খেলবেন কিন্তু ফরাসি দলগুলি মার্টিনেজকে পাত্তা দেয়নি। অন্যদিকে নিজের দেশও এর আগের বড় টুর্নামেন্টগুলোতে মার্টিনেজকে সে ভাবে খেলায়নি। এবারই তাঁর প্রথম বিশ্বকাপে বাজিমাত। আর্জেন্টিনার দেশজ শত্রু ব্রিটেন। কিন্তু ইংলিশ লিগে মার্টিনেজকে আদর করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে চেলসি পরে লিয়েনে কয়েকটি ব্রিটিশ দলে খেলার পর এখন আস্টন ভিলার প্রধান গোলরক্ষক।
মার্টিনেজ স্বপরিবারে ইংল্যান্ডেই বাড়ি করে বসবাস করেন এবং চিরকাল এখানেই থাকবেন বলেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। হুগো লরিসও তাই। মেসির প্রিয় দেশ স্পেন। এখানে তাঁর নিজের বাড়ি রয়েছে। স্পেনকে ভালোবাসার অন্যতম কারণ তিনি জন্মসূত্রে স্প্যানিশ কিন্তু তাঁর আদি পুরুষেরা আর্জেন্টিনাতে চলে এসেছিলেন। নেইমার তো ব্রাজিলে ফিরতেই চান না। ফ্রান্সে নিজের এপার্টমেন্ট আছে। এ রকম বহু উদাহরণ। ব্যতিক্রম জার্মানি হতে পারে না সবাই কারণ পেটের খিদে এবং পকেটে অর্থ কেই বা ছাড়তে চায় !
প্রসূন গুপ্ত: এবারের ফুটবলে (World Football) সারা জাগিয়েছে কম বেশি সব দলই। কিন্তু তার মধ্যে নজর কেড়েছে জাপান, মরক্কো, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ইত্যাদি দলের বেশ কিছু খেলোয়াড়। ফুটবলে টাকা কামাতে গেলে প্রথমত ইউরোপের নানা ক্লাবে (EPL) খেলাটাই বাঞ্চনীয়। তবে এটাও ঠিক মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিও প্রচুর অর্থ দিয়ে নানান দল করছে। এক্ষেত্রে একটি কথা বলতেই হবে, মধ্যপ্রাচ্য বা জাপান (J League) টাকা ঢেলে দল করলেও সেখানে চট করে কেউ যেতে চায় না। সাধারণত মদ্রিচদের (Luka Modrich) মতো বয়স্ক খেলোয়াড়দেরই স্থান হয় এই সব ক্লাবে।
জিকো কিন্তু তাঁর খেলোয়াড় জীবন শেষ করেছিলেন জাপানে পরে সেখানে কোচিংও করেন। আবার জার্মানির একসময়ের সেরা স্ট্রাইকার ক্লিন্সম্যান তাঁর শেষ খেলা খেলেছিলেন আমেরিকার একটি ক্লাবে। পরে আমেরিকার কোচও হয়েছিলেন। ফলে এবার বিশ্বকাপে যাঁরা নজর কেড়েছেন,তাঁদের অনেকেই আগামীতে ইউরোপের বড় ক্লাবে খেলতে দেখা যাবে।
ইউরোপের ধনী দল কোনগুলি, স্বাভাবিক প্রশ্ন। বলে রাখা ভালো ও ভাবে বিচার করা যায় না। খেলোয়াড় বুঝে এরা ফুটবলার কিনে নেয়। তবে ইংলিশ লীগ সবচেয়ে বড়োলোক ক্লাব নিয়ে গঠিত। এমন নয় যে ম্যানচেস্টার, লিভারপুল বা চেলসিই নামি ক্লাব। এস্টন ভিলা, ম্যান সিটি থেকে আধা ডজন ক্লাব আছে ,যারা যখন তখন সেরার শিরোপা পেতে পারে। ইংলিশ লীগের ক্লাবগুলি যথেষ্ট ধনী এবং বিভিন্ন দেশের সেরা খেলোয়াড়রা এখানে খেলেন। এরপর আসে স্পেনের নাম। এখানেও প্রচুর অর্থ ব্যয় করে দল গঠন করা হয়। তাছাড়া জার্মানি , ফ্রান্স , ইতালি তো আছেই। বুনো, লিভাকোভিচ, রিৎসু দোয়ান ইত্যাদি খেলোয়াড়রা ইউরোপিয়ান ক্লাবে খেলেন ঠিকই কিন্তু দ্বিতীয় সারির। এবারে তাদের দর আকাশচুম্বী হবে। টাকার থলি নিয়ে ক্লাবগুলি প্রস্তুত খেলোয়াড় কিনতে।
প্রসূন গুপ্ত: খেলার হচ্ছে কাতারে (Qatar World Cup 2022), একমাত্র মহাদেশ ছাড়া ভারতের সঙ্গে বিশ্বকাপের সম্পর্কজনিত কোনও কিছুর নামগন্ধ নেই। কিন্তু খেলা পাগল বাঙালি (Bengal means Football) দর্শকের সমর্থন কিন্তু টিভি সম্প্রচারকারীদের দরকার টিআরপি তোলার জন্য। তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় সারা ভারত, বাংলাদেশ (India- Bangladesh) পাকিস্তান ইত্যাদি উপমহাদেশে টেলিভিশনের সব থেকে বেশি দর্শক। সুতরাং এ দেশগুলির সুবিধাজনক খেলা দেখার সময় ঠিক করছে ফিফা। এই একটি বিষয়ে ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলা পাগল দর্শক দুই বাংলাতে। লক্ষ্য করে দেখুন রাশিয়া এবং কাতারে ফাইনাল হয়েছে ভারতীয় সময় রাত ৮.৩০-এ। শহর কলকাতা থেকে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে খেলা দেখা হয়েছে। এই একটি বিষয়ে বৈরিতা নেই তৃণমূল বিজেপি বা সিপিএমে। কাল রাতে সব মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিলো। তবে সবাই যে আর্জেন্টিনার সমর্থক এমন মোটেই নয়। ব্রাজিল বা জার্মানির সমর্থকরা কাল ফ্রান্সের জন্য গলা ফাটিয়েছে। কারণ লাটিন আমেরিকায় আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল খেলার মাঠে পরম শত্রু , তেমন সমর্থক বিচারে শত্রুতা এদেশেও।
এতদিন বাংলার ব্রাজিল সমর্থকরা দেখাতেন তাঁদের প্রিয় দলের ঝুলিতে পাঁচটি বিশ্বকাপ। ফুটবল বলতে পেলে, রোমারিও, রোনাল্ডো, রিভাল্ডো, রবার্তো কার্লস, কাকা এবং হালফিলের নেইমার। যদিও রবিবারের পর থেকে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা বলা শুরু করবে তাঁদের প্রিয় দলের ঝুলিতে তিনটি বিশ্বকাপ। ফুটবল বলতে পাসারেল্লা, মারাদোনা, মেসি, ডি মারিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাংলায় ফুটবলের কিছু পাগলপ্রেমী তো আছেই। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের সচিব দেব সাহা আর্জেন্টিনার অন্ধ ভক্ত। সন্ধ্যাতেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছবি এবং লাইভ করে আর্জেন্টিনার জন্য গলা ফাটিয়েছেন। হুগলির ব্যবসায়ী অমল কুন্ডুর বোনের বিয়ে গেলো, ওসব উৎসব বাদ দিয়ে প্রথম থেকে হৈচৈ আর্জেন্টিনার জন্য। বারাসতের সূর্যদের পারিবারিক বনভোজন ছিল প্রথম থেকেই, কতক্ষনে বাড়ি ফিরবে তাঁর জন্য ছটফট করে খেলা শুরুর আগেই বাড়ি ফিরে মেসির জার্সি পরে চিৎকার ইত্যাদি। কাল শহর কলকাতার একাধিক মহল্লায় রাত পর্যন্ত বাজি পুড়েছে। নেপথ্যে ফুটবলের তথাকথিত ঈশ্বর মেসির হাতে কাপ ওঠা।
শিলিগুড়ির তৃণমূল/সিপিএম/ বিজেপির সমর্থকরা এককাট্টা হয়ে আর্জেন্টিনার জন্য গলা ফাঁটিয়েছে এবং সব থেকে গোড়া সমর্থক হিসাবে পত্র পত্রিকায় নাম কুড়িয়েছেন কলকাতার অমিত নাইয়া। শনিবার থেকে নির্জলা উপোস। খেলা শেষে দিশাহারা হয়ে পাগলের মতো ভ্যামস ভ্যামস করে চেঁচিয়ে পাড়া মাত করেছে।সোমবার এলাকার বাজারে লোকজনের একটিই কথা, উফ আর খেলা নেই।
আগে থেকেই বহু জায়গায় মাংস/ভাতের আয়োজন করা হয়েছিল। আর্জেন্টিনা ৩ গোল দিয়ে ৩ গোল খাওয়ার পর এদেরই অনেকে বলেছিলো, না জিতলে সব ফেলে দেব। বিরাটির মহারাজ মুখার্জি আবার বাড়িটিকেই নীল/সাদা করে মেসির ঢাউস এক ছবি টাঙিয়ে জয়ের উৎসব পালন করেছেন।
ভারত বিশ্ব ফুটবলের এই প্রতিযোগিতার ধারে কাছে নেই। আগামী ৫০ বছরেও যেতে পারবে কিনা সন্দেহ কিন্তু ফিফা জানে দর্শক তাদের এই ভারতেই নাকি দুই বাংলায়।
কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup) ফাইনাল রাজ্যের ক্রীড়া ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের (Arup Biswas) চোখে। খেলা দেখে কী লিখলেন তিনি..
১৪ ঘন্টা কেটে গিয়েছে, এখনও ফাইনাল (World Cup Final 2022) জ্বরে আচ্ছন্ন সারা পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীরা। কী খেলাটাই দেখলাম রবিবাসরীয় রাতে। এরকম একটা ফাইনাল এর আগে কবে দেখেছি মনে করতে পারছি না। আমি একসময় মোহনবাগান ও ব্রাজিলের প্রচন্ড সমর্থক ছিলাম। কিন্তু মন্ত্রিত্বের দায়িত্বে আসার পর একেবারেই নিরপেক্ষ।
রবিবার রাতে আমার এলাকায় জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে ফাইনালের (Argentina beats France) ব্যবস্থা করেছিলাম। বললে বিশ্বাস করবেন না প্রায় ৫ হাজার মানুষের ভিড় হয়েছিল। নানা পোশাকে, বিশেষ করে নীল-সাদা জার্সিতে এই ঠান্ডায় সব এসে উপস্থিত। একেক সময়ে ভাবি এই খেলা পাগল দর্শকের দেশ ভারত বা বাংলাদেশ, অথচ এখন থেকে কবে যে ফুটবলার উঠবে কে জানে।
অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন বা এআইএফএফের ভাবনার বিষয়। যাই হোক, এবারে লিখি খেলা কেমন হলো! নিঃসন্দেহে প্রথম অর্দ্ধে অসাধারণ আর্জেন্টিনা। মুহুর্মুহু আক্রমণে কাহিল করে দিয়েছিলো ফ্রান্সকে। মনে হচ্ছিলো ফ্রান্স কি খেলা ছেড়ে দিলো? ডি'মারিয়া বাঁ প্রান্ত থেকে দুজন ফ্রান্স ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সেঢুকেছে , অমনি ফাউল। আর্জেন্টিনার কোচের এবার টুর্নামেন্টে একটা বিশেষ স্ট্রাটেজিই ছিল বক্সে ঢুকে কাটাও, ড্রিবল করো, তোমাকে মারবেই এবং মারলেই পেনাল্টি। লক্ষ্য করে দেখা প্রায় প্রতি ম্যাচে আর্জেন্টিনা পেনাল্টি পেয়েছে এবং গোল করেছে মেসি। দ্বিতীয় গোলটি কয়েক মিনিটের মধ্যে ৫টি টাচ এবং বাঁ প্রান্ত থেকে ডি'মারিয়ার অসাধারণ গোল।
দ্বিতীয়ার্দ্ধে একসময় কোচ ডি'মারিয়াকে কেন তুলে নিলো বুঝলাম না। ও উঠে যাওয়ার পর ফ্রান্সের কোচ একে একে গ্রিসম্যান এবং জিরুডকে তুলে নেওয়ার পর ফ্রান্সের খেলার ঝাঁজ বাড়লো। এই সময়ে আর্জেন্টিনা কি খেলায় একটু হালকা দিলো। এমবাপেকে অনেকটাই মাঠজুড়ে খেলতে দেখা গেলো।
এরপর বক্সের মধ্যে ধাক্কা এবং পেনাল্টি। প্রথম গোল এমবাপের। কিছুক্ষণের মধ্যে দ্বিতীয় অসাধারণ মুভে ফের এমবাপেই গোল করলেন। এক্সট্রা টাইম, ফের খেলা ধরলো আর্জেন্টিনা এবং টাচ ফুটবলে ড্রিবল করে গোল পেলেন মেসি কিন্তু ওই কিছুক্ষণ। বক্সে হাতে বল লাগার জন্য ফের পেনাল্টি পেলো ফ্রান্স।
ফের গোল করলেন এমবাপে। শেষ পর্যন্ত টাই ব্রেকারের মাধ্যমে খেলা শেষ হলো। আর্জেন্টিনা টাই ব্রেকে অনেক সপ্রতিভ ছিল। পরপর ৪টি গোল করলো মেসির দল কিন্তু এখানেই পিছিয়ে ফ্রান্স কারণ গ্রিসম্যান , জিহুর মতো খেলোয়াড় ছিল না যাঁরা পেনাল্টি বিশেষজ্ঞ।
ভালোই হয়েছে, পেলে , মারাদোনার পর একটি নামই আসে বিশ্ব ফুটবলের সেরাদের মধ্যে তিনি জাদুকর মেসি। তাঁর হাতে কাপটি না উঠলে খারাপ লাগত। তবে মেসি হয়তো বিদায় নিলেন এবং দেখে গেলেন নতুন প্রজন্মের এমবাপে এসে গিয়েছেন আগামীর জন্য।
সাড়ে তিন দশকের প্রতীক্ষার অবসান। ফ্রান্সকে টাই ব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। দিনের শেষে এই ট্রফি হয়তো বা মারাদোনাকে উৎসর্গ করবেন মেসিরা। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসের পাতায় এখন পেলে, মারাদোনা, জিদান, রোনাল্ডোর সঙ্গেই মেসির নাম ঢুকে গেল। ২০১৪-তে তীরে এসে তরী ডুবেছিল, কিন্তু 2022 মানেই ভামোস ভামোস আর্জেন্টিনা।
লুসেইল স্টেডিয়ামে নাটকীয়, রোমহর্ষক ফাইনালে ১২০ মিনিট পর্যন্ত খেলার ফল ৩-৩। পেনাল্টিতে দুটি গোলের পাশাপাশি ফ্রান্সের তৃতীয় গোলও এমবাপের ঝুলিতে। ১৯৬৬-র পর এই প্রথম কোন ফুটবলার ফাইনালে হ্যাট্রিক করলেন। ব্যস ওইটুকুই, কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রথম ৮০ মিনিট দেশর ছেলেদের সঙ্গে দাপট রেখেই খেলেছে আর্জেন্টিনা। প্রথম ৭৫ মিনিট মাঠেই খুঁজে পাওয়া যায়নি এমবাপে, গ্রিজম্যানদের আক্রমণ।
প্রথম অর্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় স্কালোনির দল। ম্যাচের ৬০ মিনিট পর্যন্ত ফ্রান্সের ঝুলিতে না ছিল কর্নার, না অফসাইড। বল পজেশন থেকে শুরু করে গোলমুখী শট এগিয়ে সেই নীল-সাদাই। আর্জেন্টিনার ৩ গোলের পিছনে অবদান মেসি ২ আর ডি মারিয়া ১। মেসির করা দুটি গোলের মধ্যে একটি আবার পেনাল্টি থেকে। কিন্তু ৮০ মিনিটের মাথায় ডি মারিয়াকে স্কালোনি তুলে নিতেই আক্রমণের ধার ভারে এমবাপের।
প্রথম ৯০ মিনিট শেষ হয় ২-২ গোলে। অতিরিক্ত সময় শেষ হয় ৩-৩ গোলে। অবশেষে ম্যাচের ভাগ্য লিখতে হয় পেনাল্টি শুটআউটে। কোয়ার্টার ফাইনালের মতো এই ম্যাচেও নায়ক আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ই মার্টিনেজ। ফ্রান্সের দ্বিতীয় শট আটকে দিয়ে চাপে ফেলে দেন এমবাপেদের। এরপর শুধু সময়ের অপেক্ষা, কারণ ফুটবল দেবতা বিশ্ব ফুটবলের এল এম -১০-কে নিরাশ করেনি।
কাতার বিশ্বকাপ এই নামে খ্যাত হল আমি 'মেসিরই বিশ্বকাপ।' ঠিক যেভাবে ৯৪ রোমারিও, ৯৮ জিদান, ৮৬ মারাদোনা আর ২০২২ মানে লিওনেল মেসি। ৭৮,৮৬,২০২২ বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিক এখন মারাদোনার দেশে।
মুন্নি চৌধুরীঃ বিশ্বকাপ ফাইনালের কাউন্টডাউন শুরু। আজ, রবিবার রাতে লুসেইল স্টেডিয়ামে হবে চলতি বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) মেগা ফাইনাল ম্যাচ। মেসি (Lionel Messi) না এমবাপে (Kylian Mbappe)? কাপ উঠবে কার হাতে? বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।
হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে নানা ফ্যাক্টর নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে বসে পড়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর্জেন্টিনা শিবিরে যেমন হঠাৎ উদয় হয়েছেন সেরগিও আগুয়েরো (Sergio Leonel Agüero)। সম্পর্কে দিয়েগো মারাদোনার জামাই। নীল-সাদা জার্সিতে খেলতে খেলতেই হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়ে তাঁর। খেলা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। আগুয়েরো ছিলেন লিও মেসির রুম পার্টনার। টিমের সঙ্গে খেলতে গেলে মেসির রুম পার্টনার হতেন তিনি। আগুয়েরো খেলা ছাড়ার পর নতুন কোনও ফুটবলার মেসির রুম পার্টনার হননি।
২০১০, ২০১৪ আর ২০১৮। তিনটে বিশ্বকাপে খেলেছেন তিনি। মেসির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে সেরগিও-র। ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনা শিবির উড়িয়ে নিয়ে এসেছে আগুয়েরোকো। আর্জেন্টিনা অনুশীলনে দেখা গিয়েছে তাঁকে। শুধু তাই নয়। মেসির সঙ্গে রুম ভাগ করে থাকবেন তিনি। সেই নিয়ম আদায় করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন। লিও মেসিকে তাজা রাখতে, মন ফুরফুরে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি নেই। মারাদোনার জামাই কি গুড লাক নিয়ে আসতে পারবেন?
কাতার বিশ্বকাপ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তীর চোখে। কী লিখছেন তিনি
এই সেদিন বিশ্বকাপ শুরু হলো আর এর মধ্যেই রবিবার শেষ হবে এই উৎসব। ফের ৪ বছর বাদে আমেরিকা মহাদেশের মার্কিন যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং মেক্সিকোতে আয়োজন হবে পরের ফুটবল বিশ্বযুদ্ধ। মনটা খারাপ লাগে, সোমবার থেকে ফের রাতে দ্রুত টিভির সামনে বসার দরকার নেই। কোথাও ফাঁকা লাগবে বারবার। যদিও আমরা রাজনীতির মানুষ এবং আমাদের সারা বছর সংগঠন থেকে জনসেবামূলক কাজেই ব্যস্ত থাকতে হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূল দলের সভাপতি হিসাবে অনেক কাজ। সামনে আবার পঞ্চায়েত নির্বাচন, তবুও ব্যস্ততার মধ্যে মনটা উদাস লাগবে বেশ কিছুদিন। ২০২২-র বিশ্বকাপের স্মৃতিতে, খেলা গেলো বটে। সারা বিশ্বের ৩২টি বাছাই করা দল এসে কী খেলাটাই না খেললো।
এক আয়োজক কাতার ছাড়া প্রতিটি দলই তাদের সেরা উপহার দিয়েছে। আসলে ৩২টির মধ্যে ১টি দলই 'সোনার ফিফা কাপ'টি পাবে। বাকিরা ফের প্রস্তুতি নেবে চার বছরের জন্য। দেখুন কে কোন দলের সমর্থক তা নিয়ে তর্কের প্রয়োজন নেই। কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা বা ফ্রান্স। আবার কেউ আফ্রিকার দামাল ছেলেদের কামাল করা মরক্কোর সমর্থক ছিল, থাকতেই পারে। আমাদের ভারত বিশ্ব ফুটবলে নেই এটা যথেষ্ট ভাবনার। এতো আইএসএল খেলা হচ্ছে তারপরেও খেলোয়াড় উঠে আসছে না কেন? বিশ্বকাপ ফুটবল একটি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে থাকা একটি উৎসব। লক্ষ্য করে দেখুন একটা সময়ে বর্ণ সংকট মাথাচাড়া দিয়েছিলো বিশ্বের শ্বেতাঙ্গদের দেশে। কিন্তু আজকের ফুটবলের দিকে তাকান।
এখানে বর্ণ মানে না কেউই। ফ্রান্স দলটার মধ্যে ৭-৮টি খেলোয়াড় কৃষ্ণাঙ্গ এবং এদের বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মের। একটি গোল হলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দর তুলনা হয় কখনও? মরক্কো তিউনেশিয়া দলটি ইসলাম ধর্মের আফ্রিকা জাত অথচ দিব্বি শ্বেতাঙ্গদের প্রশংসা পেলো তারা। আমরা বলি, ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার। এই বিশ্বকাপ দেখে বলতে হয় "ধর্ম বর্ণ যার যার, কিন্তু ফুটবল সবার।" (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
কাতার বিশ্বকাপ কাঁথি পুরসভার উপ পৌরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরির চোখে। কী লিখছেন তিনি
আমরা রাজনীতির মানুষ, ২৪ ঘন্টা তাই দৌড়ে বেড়াতে হয়। একদিকে জেলার যুব সভাপতির দায়িত্ব, অন্যদিকে পৌরসভা। এত চাপের মধ্যে থেকেও খেলা দেখবো না তাই কী হয়। একসময় ফুটবল খেলতাম এবং জেলার প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। কিন্তু রাজনীতিতে আসার পর খেলাটাই ছেড়ে দিতে হল। আমার বাবা মন্ত্রী অখিল গিরি আবার ক্রিকেটের ভক্ত, খেলেছেনও। কিন্তু উনি বলেন, যে টুর্নামেন্টে ভারত নেই সেখানে কাউকে সমর্থন করবো না। কিন্তু বিশ্বকাপ দেখছেন। আমরা পরিবারের সবাই এবং মাঝে মধ্যে এলাকার ক্লাবে বসে হৈহৈ করে খেলা দেখছি। আর্জেন্টিনার খেলা থাকলে একা বসে দেখার মজা নেই।
বাংলা-সহ সারা পূর্ব মেদিনীপুর এখন নীল-সাদা হয়ে রয়েছে। প্রায় সকলের মুখে ভ্যামোস ভ্যামোস। স্প্যানিশ কথার অর্থ যতটা উদ্ধার করলাম তাতে দাঁড়ায়, জয় শুধু জয়। আমাদের এলাকায় অবশ্য কিছু ফ্ল্যাগ টাঙানো হয়েছে তুঁতে-নীল, সাদা-লাল অর্থাৎ ফরাসি দল। মজাদার বিষয়, ফ্রান্সের ভক্ত আগে এতো দেখিনি। মনে হয় এরা সব ব্রাজিলের সমর্থক। ফ্রান্সকে কিন্তু উড়িয়ে দিচ্ছি না। ফাইনাল বলে কথা, টেনশন তো থাকবেই।কিন্তু ওই যে, "ম"-এর নাকি সময় এটা। আমার তাই মনে হয় মারাদোনার পর মেসি কিছু একটা করবে।
রাত জেগে প্রায় সব খেলাই দেখেছি। আমার কিন্তু ভালো লেগেছে মরক্কোকেও। দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে এবার। ফ্রান্সের স্ট্র্যাটেজির কাছে হেরে গিয়েছে। এই দল দেখবেন আমেরিকা বিশ্বকাপে সব দলের কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াবে। আজ রাতে ক্রোয়েশিয়া বনাম মরোক্কো। মন চাইছে মরক্কো জিতুক, কিন্তু বাস্তব বলছে ক্রোয়েশিয়া। কারণ দুটি দলের খেলার ধরণ অনেকটাই এক রকম। ডিফেন্স করা এবং কাউন্টার আক্রমণে উঠে যাওয়া।একটি জায়গাই ক্রোয়েটদের ইতিবাচক অবস্থান সেটা গোল করার লোক বেশি।
যাই হোক, রবিবারের খেলায় আজকের ফুটবল শাহেনশা মেসির হাতে কাপ উঠুক। পরপর দু'বার বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড ছিল উরুগুয়ের ১৯৩৪ এবং ৩৮-এ এবং ব্রাজিলের ৫৮ ও ৬২-তে। তৃতীয়বার আর তার পুনরাবৃত্তি চাই না। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন থেকে ছিটকে গিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo)। মরক্কোর বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ ম্যাচটি খেলেছিল সিআর সেভেন-এর দল। যদিও সেদিন প্রথম একাদশে স্থান পাননি রোনাল্ডো। বিশ্বকাপ (World Cup 2022) অভিযান শেষ হতেই পর্তুগাল কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ফার্নান্দো স্যান্টোস (Fernando Santos)। সরকারিভাবে এখনও এই খবর ঘোষণা করেনি। তবে পর্তুগিজ ফুটবল সংস্থা সূত্রে এমনটাই খবর পাওয়া যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, নতুন কোচ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন হোসে মোরিনহো। আর হোসে ছিটকে গেলে বা বাদ পড়লে পাওলো ফনসেকার দায়িত্বে আসা কার্যত নিশ্চিত। এছাড়া কোচ হওয়ার রেসে আরও অনেকে রয়েছেন। রুই জর্জ, আবেল ফেরেরা, রুই ভিতোরিয়া এবং জর্জ জেসুস রয়েছেন। তবে যত দূর শোনা যাচ্ছে, সকলের প্রথম পছন্দ মোরিনহো। কারণ, তিনি জন্মসূত্রে পর্তুগিজ হওয়ায় বাড়তি সুবিধা রয়েছে। অন্যদিকে, তিনি ক্লাবস্তরে ফুটবল কোচ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। তাঁর সাফল্য সকলের নজর কেড়েছে। আবার রোনাল্ডোর সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বলে শোনা গিয়েছে। যদিও অনেকে মনে করছেন, তিনি ক্লাবস্তর ছেড়ে জাতীয় স্তরের দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করবেন।
এখন সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, তবে কি রোনাল্ডোর সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে সান্তোসের এই সিদ্ধান্ত? নাকি মরক্কোর বিরুদ্ধে হার মেনে নিতে না পেরে নিজেই পদত্যাগ করলেন?
কাতার বিশ্বকাপ শিক্ষাবিদ এবং সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সত্যম রায়চৌধুরীর চোখে
যাবো যাবো করেও এবার বিশ্বকাপে যাওয়া হল না। এর আগে অনেকগুলো বিশ্বকাপের খেলা মাঠে বসে দেখেছি কিন্তু কাতার থেকে পুত্রের কাতর আবেদন ছিল যে, এই অসাধারণ ফুটবল দেখতে অন্তত একবার এসো। আসলে বর্ষশেষে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ইনস্টিটিউটগুলিতে সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে, ম্যানেজমেন্টের পরীক্ষাও আছে। এই সময় যাই কী করে? যাই হোক আমার যাওয়া না যাওয়াতে বিশ্ব ফুটবল থেমে থাকবে না। দারুন আকর্ষণীয় ভাবে প্রায় একমাসব্যাপী চলছে বিশ্ব ফুটবলের আসর। আমাদের পরিবারে সকলেই আর্জেন্টিনার ভক্ত। চাই যে, কাপটা এবার অন্তত মেসির হাতে উঠুক। পেলে, মারাদোনার পর সুপারস্টার তো মেসিই। আগের দুজনের হাতে বিশ্বকাপ এসেছিলো কিন্তু মেসি বিশ্বকাপে খেলছেন ২০০৬ থেকে, এখনও কাপ অধরা।
বললাম বটে কিন্তু কাজটা কি এতো সোজা হবে? ফ্রান্স ইউরোপের সেরা দল। প্রতিটি পজিশনে দুর্দান্ত খেলোয়াড়রা দাপটের সঙ্গে খেলছেন। এর উপর জিরুড, এমবাপে, গ্রিজম্যান ত্রয়ীর মুহুর্মুহ আক্রমণ কতটা সামাল দিতে পারবে আর্জেন্টিনা? এই নিয়েও হাজারো প্রশ্ন রয়েছে। আমি রাশিয়া বিশ্বকাপে এমবাপের খেলা দেখেছি। উনি তখন ডিফেন্সে নেমে বল তৈরি করে দৌড়তেন। এবার প্রথম থেকেই তাঁকে বামমুখী আক্রমণ করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে মেসি ডান দিক থেকে আক্রমণ শানান। অর্থাৎ দুই খেলোয়াড়ই এক প্রান্তিক। ফলে কে কাকে কতটা মার্কিং করে সেটাই দেখার। এটা সত্যি বড় খেলোয়াড়দের স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেওয়া হয় না। কিন্তু পাশাপাশি অন্য খেলোয়াড়রা সেই সুযোগটা নেন।
এদিকে গ্রিজম্যান যেমন ভয়ঙ্কর পাস দেন তেমন আর্জেন্টিনাতেও আলভারেজ, ডি'মারিয়া আছেন আক্রমণে। আর্জেন্টিনার এবারে বেশ ভালো ডিফেন্স। দুই দলের দুই গোলরক্ষক মার্টিনেজ ও লরিস অসাধারণ, ফলে গোল করাটাও কঠিন। আমার মন বলছে কয়েকটা গোল দু দিক থেকেই হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাই ব্রেকে গেলে ভালো খেলার মজাটাই চলে যাবে। টাই ব্রেক অন্তত ফাইনাল চলে না।
আমাদের খুশি করতে পারেনি ১৯৯৪-এ ওভাবে ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন হতে কিংবা লাল কার্ড দেখে জিদান বেরিয়ে যাওয়ার পর ইতালিকে জিততে। খেলা হোক আনন্দের, নব্বই মিনিটেই চূড়ান্ত হয়ে যাক কাতার বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নের নাম। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
মরোক্কোর রূপকথা থামিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে (World Cup 2022 Final) ফ্রান্স (France)। এমবাপে (Kylian Mbappe), গ্রিজমান আর বিশ্বকাপের মাঝে দাঁড়িয়ে শুধু লিও মেসি (Lionel Messi)। ফরাসি বিপ্লবের মাঝেও মরক্কোর ফুটবলে মজে গিয়েছে বিশ্ব ফুটবল। হাকিমি, আমবারাতারা ফরাসি দূর্গে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। শেষরক্ষা হয়তো হয়নি। তবে ওয়ালিদ রেগরেগুয়ের (Walid Regragui)দলকে নিয়ে প্রশংসার বন্যা বইছে। মরক্কো কোচ অবশ্য ম্যাচের আগে বেজায় ধর্ম সংকটে পড়েছিলেন। ফ্রান্স বনাম মরক্কো ম্যাচ ছিল ওয়ালিদের জন্মভূমি বনাম পিতৃভূমির ম্যাচ। জন্ম, বেড়ে ওঠা, ফুটবলের প্রথম পাঠ, সবটাই ফ্রান্সে। রাজধানী প্যারিস থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কোবে ইয়েসেন। ওখানেই জন্ম ওয়ালিদের। দিজো, আজাকসিও সহ ফ্রান্সের পাঁচটি ক্লাবেও খেলেছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে খেলেছেন অলিভার জিরুডের সঙ্গে। সেই জিরুড এখন ৫৩টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ফ্রান্সের। টপকে গিয়েছেন থিওরি অঁরিকে। পরে অবশ্য মরক্কোয় পাড়ি ওয়ালিদের। খেলেছেন আটলাস সিংহের জার্সিতে। ম্যাচের আগে ওয়ালিদ মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। চাননি কোনওমতে ফুটবল থেকে ফোকাস সরে যাক। তিনি পেশাদার কোচ। ফ্রান্সকে হারানোর লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু দাপট দেখিয়েও হার মানতে হয়।
তবে আলোচ্য বিষয়, প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে শেষ চারে পৌঁছেছিল মরক্কো। ইতিহাসে লেখা থাকবে ওয়ালিদ আর তাঁর ছেলেদের নাম। তৃতীয় স্থান দখলের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে নামবে মরক্কো। ম্যাচ জিতলে ওয়ালিদের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হবে। ফ্রান্সে জন্মানো মরোক্কান কোচ কি পারবেন আরও একটা মাইলস্টোন তৈরি করতে?
কাতার বিশ্বকাপ অর্জুন পদকপ্রাপ্ত সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে। কী লিখছেন তিনি
অসাধারণ খেলেও অভিজ্ঞতার অভাবে ফ্রান্সের স্ট্র্যাটেজির কাছে হার মানলো মরোক্কোর এক ঝাঁক বাচ্চা ছেলের লড়াই। কি খেলাটাই না খেললো! আমার মনে পড়ছে ২০০২-এর দক্ষিণ কোরিয়ার খেলা। অসাধারণ খেলে পর্তুগাল, স্পেন, ইতালির মতো ইউরোপ সেরা দলগুলোকে হারিয়ে শেষ পর্যন্ত জার্মানির পাওয়ার ফুটবলের কাছে হেরে গিয়েছিলো। বুধবার রাতের খেলা শেষে আমার ওই দিনটির কথা মনে পড়ছিলো। মরোক্কোকে কখনোই আমি ধর্তব্যের মধ্যে রাখিনি। কিন্তু যত খেলা এগিয়েছে আমি অবাক হয়ে এই তরুণ ব্রিগেডের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। স্পেন থেকে পর্তুগাল হয়ে একের পর কঠিন বাধা পেরিয়ে তারা সেমিফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু তাদের চিরায়ত আলট্রা ডিফেসিভ খেলা ছেড়ে হঠাৎ কেন প্রথম থেকেই আক্রমণে গেল বুঝতে পারলাম না।
ফ্রান্সের কোচ ধুরন্ধর দেশ আগের খেলা দেখে স্ট্র্যাটেজি পাল্টে ফেলেছিলেন। নিজেদের অর্ধে বারবার মরোক্কোকে আহ্বান করেছে ফ্রান্স। কোচ জানতেন, মরোক্কো কাউন্টার আক্রমণে ভয়ঙ্কর। অন্যদিকে এমবাপেকে বাঁদিকে না খেলিয়ে মধ্যভাগ দিয়ে আক্রমণ করানোর চেষ্টায় ছিলেন তিনি। মরোক্কো অবশ্যই এমবাপেকে আটকাতে বাঁ প্রান্তে খেলোয়াড় প্রস্তুত রেখেছিল, কিন্তু পরিবর্তনেই ঘাবড়ে গেল তারা। মরোক্কোর কোচ গ্রিজমান বা জিরুডকে লক্ষ্য করেননি। লেফট ব্যাক হার্নান্দেজ এসে গোল করলেন অনেকটাই এমবাপের গোলমুখী শট ডিফ্লেকট হয়ে বাঁদিকে যাওয়ার জন্য। ওখানে ৫ মিনিটের মধ্যে অসাধারণ বাঁ পায়ের সাইড ভলিতে গোল খেল তারা। এরপর মরোক্কো প্রচুর আক্রমণ করেছে। ইংলিশ লিগের সেরা গোলকিপার লরিস ছিলেন অদম্য, ভাগ্যও সঙ্গে ছিল তাঁর।
দ্বিতীয় গোলটিও এমবাপের গোলমুখী শট ধাক্কা খেয়ে ডান দিকে চলে গেলে মুয়ানি গোল করে যান। এমবাপের খেলা কিন্তু আগামীর সেরার ভবিষ্যৎ। যাই হোক দুই সেরা বিশ্বকাপ প্রাপক দল রবিবারে মুখোমুখি। ধনী দেশ ফ্রান্স কোটি-কোটি টাকা খরচ করে ফুটবলের পিছনে। এমব্যাপে পিএসজি দল ছেড়ে বিদেশে পা রাখতে গিয়েছিলেন, কিন্তু দেশের প্রেসিডেন্টের অনুরোধে ফ্রান্স ছাড়া হননি। এই একই দলে খেলেন লিও মেসি। একটাই তফাৎ খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, তিনি বিশ্বসেরা মেসি। দেখো দু ধরণের খেলোয়াড় হয় প্রথমটি রোনাল্ডো, নেইমার বা কিছুটা এমবাপের মতো ইন্ডিভিজুয়াল স্কিলের ফুটবলার, যাঁরা নিজের খেলাটাই খেলেন। অন্যটি টিম প্লেয়ার। এতদিন আর যাই হোক আজকের মেসি কিন্তু টিম লিডার। তিনি শত বাধা পেরিয়ে প্রায় একক প্রয়াসে দলকে ফাইনালে তুলেছেন। এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ, তাই সেরা খেলাটি খেলছেন। বিপক্ষের অন্তত ৪ জন খেলোয়াড় তাঁকে জোনাল মার্কিং করছেন, কিন্তু সেই ফাঁক দিয়ে তিনি নিজে ৫টি গোল করেছেন এবং দলের অন্য খেলোয়াড়কে দিয়েও গোল করিয়েছেন। মারাদোনা, জিদানের পর এই একক শক্তিকে দেখছে বিশ্বও, যে দলকে টেনে তুলছেন। আমি তাই চাই দুরন্ত ফাইনাল হোক এবং কাপ উঠুক মেসির হাতে।
পেলে মারাদোনার পর বিশ্বসেরাদের তালিকায় একটাই নাম লিওনেল মেসি। ১৪০ কোটির দেশ ভারতে এখনও পর্যন্ত একটা ফুটবল টিম তৈরি হল না, তাঁর দায় কে নেবে? আমাদের দেশে অনেক ভালো ফুটবলার রয়েছে। তাঁদের ভালো খাবার, ভালো প্রতিনিধিত্ব দিলে একটা সেরা ফুটবল টিম তৈরি করা যেতই। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
প্রসূন গুপ্ত: রাত ১২.৩০ মানেই আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। আয়েশি বাঙালি যতই ঘুমকাতুরে হোক না কেন রাতে বিশ্রাম নেই। আসলে রাতের খেলাগুলো কাতারে বড় দলগুলির খেলা ছিল বলেই, হয়তো রাত জাগাকে ভবিতব্য মেনে নিয়েছে খেলা পাগল এই জাতি। এখানেই শেষ নয় ব্রাজিল বিদায় নেওয়ার পর সাপোর্টারের ভিড় ছিল আর্জেন্টিনার দিকে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে আর্জেন্টিনার খেলা দেখতে সবাই রাত জেগেছিলো। বাদ যাননি ব্রাজিলের কোনও এক গোড়া সমর্থক। খেলায় একটি করে গোল হয়েছে আর টালিগঞ্জ বা দমদমে পটকা ফেটেছে। রাত আড়াইটার পর তো কালীপুজোর রাত হয়ে গিয়েছিলো, কলকাতা এবং শহরতলিতে যেন অকাল দিওয়ালি। আর তো মাত্র একটা রাত জাগার ব্যাপার। এরপর তৃতীয় স্থানের লড়াই আর ফাইনালের সময় তো চমৎকার, ভারতীয় সময় রাত ৮.৩০। ফিফা কমিটি স্বীকার করেছে ভারত, বাংলাদেশের মতো দর্শক সারা বিশ্বের কোথাও নেই। সুতরাং তাঁদের কথা ভেবে এবং বিজ্ঞাপনের ভাবনা থেকে সম্প্রচারকারী টিভি কোম্পানির দাবিই নাকি ছিল যে ভাবেই হোক ৮.৩০-এর সময়কে ফাইনালের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
ফলে মস্কো ফাইনাল এবং কাতার ফাইনাল এই সন্ধ্যারাতেই হচ্ছে। সে যাই হোক বুধবার মধ্যরাতের খেলায় এগিয়ে কে? অন্য সময় হলে নিশ্চই বলা যেত এমবাপের ফ্রান্স। ফ্রান্সের কিন্তু প্রচুর সমর্থক বাংলায়। জিদানের সময় থেকে এই ফ্রান্স ভক্তি। এবার তো আরও অনেকে আছে। ইংল্যান্ড ফ্রান্সের খেলায় ফ্রান্সের সমর্থক ছিল বেশি। এবারে হেরে যাওয়া ব্রাজিলের সমর্থকরা নিশ্চিত ফ্রান্সকে সমর্থন করবে এমনটাই ভাবা হয়েছিল।
কিন্তু জানা যাচ্ছে আফ্রিকার সিংহ হয়ে ওঠা মরোক্কোর দিকে আজ রাতে সমর্থন থাকবে বেশি। ফ্রান্সের আক্রমণ রোখা মুশকিল, তবুও বলা যেতে পারে উত্তর আফ্রিকার এই দেশের হারানোর কিছু নেই। তাই ৯০ মিনিট সেরা খেলাটাই খেলবে তাঁরা।
কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই জোর গুঞ্জন এবার হয়তো শেষ বিশ্বকাপ মেসি, রোনাল্ডো, মড্রিচের। এই নামগুলোর মধ্যে শেষ দু'জন বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত করেছেন। অর্থাৎ সিআর-৭ আর লুকা মড্রিচের কাতার বিশ্বকাপ জয় অধরা। তবে মঙ্গলবার রাতে স্বপ্নের খেলা খেলে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলে লিয়োনেল মেসি জানিয়ে দিলেন, বিশ্বকাপে এটাই তাঁর শেষ ম্যাচ। পরের বিশ্বকাপে তিনি আর খেলবেন না। সেমিফাইনালে ৩-০ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে দুরমুশ করে ফাইনালে আর্জেন্টিনা। ১৮ ডিসেম্বর লুসেইল স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ কে? ঠিক হবে বুধবার রাতে ফ্রান্স বনাম মরোক্কোর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে। কিন্তু প্রথমস সেমিফাইনালে ক্রোটদেওর বিরুদ্ধে একটি গোল করেন মেসি। আর আল্ভারেজ গোলের জন্য পাস বাড়িয়েছেন একটি।
মেসির বয়স ৩৫ বছর। পরের বিশ্বকাপ চার বছর পর অর্থাৎ ৩৯ বছর বয়সে পরের বিশ্বকাপ খেলতে হবে মেসিকে। যদিও ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছে পেপে ৪০ বছর বয়সে কাতার বিশ্বকাপ খেলতে পারলে মেসি নয় কেন? যদিও আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালনি বলেছিলেন, মেসি পরের বিশ্বকাপ খেলবেন। কিন্তু মেসি নিজে জানালেন, এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। মেসিদেরকে কড়া মার্কিংয়ে রাখেন বিপক্ষের ফুটবলাররা। যে পরিমাণ চাপ মেসিদের নিতে হয়, যত বয়স বাড়ে সেই ট্যাকেল নেওয়ার ক্ষমতা কমে। এই বিশ্বকাপে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে নিষ্প্রভ দেখিয়েছে, পরের বিশ্বকাপে হয়তো মেসিকেও তেমন দেখাবে। সেটা হতে না দিয়ে এই বিশ্বকাপেই শেষ করতে চাইছেন তিনি। এমনটাই মত অনেক ফুটবল লিখিয়ের।
এদিকে, ১৯৮৬-র পর বিশ্বকাপ জেতেনি আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ তাদের কাছে। ২০১৪-তে আশা জাগিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। অতিরিক্ত সময়ের ১১৩ মিনিটের মাথায় জার্মানির গোটজের গোলে কাপ হাতছাড়া হয়ে আর্জেন্টিনার। এদিকে, আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেসি গোলদাতার তালিকায় এখন মেসি। মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁর আগে ছিল গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। কিন্তু ১১ গোল করে বাতি গোলকেও ছাপিয়ে যান মেসি। এখন ১৮ ডিসেম্বর লুসেইল স্টেডিয়ামে সব চোখ থাকবে বিশ্ব ফুটবলের এলএম-১০-র দিকে।