অর্থের বিনিময়ে উচ্চমাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ভাইরাল! এই চক্রের অন্যতম পাণ্ডাকে নদিয়া থেকে গ্রেফতার করে বিধাননগর সাইবার থানার পুলিস। সূত্রের খবর, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির অভিযোগের জেরে এই গ্রেফতারি।
১৮ ফেব্রুয়ারি, বিধাননগর সাইবার থানায় উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, একটি চক্র সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে। ওই চক্র পরীক্ষার্থীদের সামাজিক মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি দেয়, উচ্চমাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র তারা অর্থের বিনিময়ে হাতে তুলে দেবে। এই অভিযোগের গুরুত্ব বিচার করেই তদন্ত শুরু করে বিধাননগর সাইবার থানার পুলিস। প্রাথমিকভাবে পুলিস দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে চিহ্নিত করে। যার মধ্যে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট, গ্রাহক নদিয়ার বাসিন্দা এক মহিলা।
এরপরই বিধাননগর সাইবার থানার পুলিস যোগাযোগ করে নদিয়ার ওই গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি পুলিসকে জানান, এটিএম কার্ড এক বন্ধু রুপম সাধুখাঁ তাঁর থেকে জোর করে নিয়ে গিয়েছে। সেই মহিলা পুলিসকে আরও জানান, ব্যাঙ্কের থেকে পাঠানো এসএমএস মারফত তিনি জানতে পারেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু আর্থিক লেনদেন হয়েছে। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে অজ্ঞাত। এরপরই বিধাননগর সাইবার থানার পুলিস নদিয়া থেকে গ্রেফতার করে রুপম সাধুখাঁকে। পুলিস সূত্রে খবর, আদালতে পেশ করা হয় ধৃত রূপমকে। পুলিস হেফাজতের পক্ষেই সওয়াল করেন তদন্তকারীরা। কারণ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত অন্যদেরও খোঁজ পেতে চায় পুলিস।
মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। মাধ্যমিকের প্রথম দিন সকাল থেকেই হইহই রইরই কাণ্ড। হঠাৎ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হুবহু মাধ্যমিকের মতই এক প্রশ্নপত্রের বেশ কয়েকটি পাতা। এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে তুমুল হৈচৈ পড়ে যায়। এই খবর সবার প্রথম সম্প্রচার করে সিএন। অতঃপর সিএনের খবরের জেরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরীক্ষা শেষের সার্বিক ঘটনাক্রমের সাংবাদিক বৈঠকে, ভাইরাল হওয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়েও বিবৃতি দেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ওই দুই পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন এবং অ্যাডমিট কার্ড। প্রসঙ্গত, এর আগেই পর্ষদ নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিল, প্রশ্নপত্রের প্রতিটি পাতায় ওই প্রশ্নপত্রের ক্রমিক নম্বরের কোড লুকানো থাকবে। কেউ কোনও পাতার ছবি তুলতে চাইলে, পাতায় লুকিয়ে থাকা ক্রমিক নম্বরের মাধ্যমে তা সহজেই জানতে পারা যাবে। এমন কাজে ধরা পড়লে সে বছরের মত তার পরীক্ষা সম্পূর্ণ বাতিল হয়ে যাবে। শুধু তাই না, পরীক্ষাকেন্দ্রের পরীক্ষকও পরীক্ষা শুরুর আগে তা অবগত করেছিলেন পরীক্ষার্থীদের। তবুও এমন ঘটনা থেকে বিরত রইল না ২০২৪ এর মাধ্যমিকের প্রথম দিনের পরীক্ষাও। পর্ষদের নির্দেশিকাকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই এমন ঘটনা ঘটল।
তবে প্রশ্ন উঠছে, যেখানে রাজ্য জুড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে এত নিরাপত্তার বহর শোনা যাচ্ছে, সেখানে পরীক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারছে কীভাবে? এছাড়াও পর্ষদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকেও মোবাইল ও স্মার্ট ওয়াচ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৩ পরীক্ষার্থীর। তারই মাঝে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রশ্নপত্র ভাইরালের মত ঘটনা ঘটল পরীক্ষার প্রথম দিনেই। তবে, নিরাপত্তার গাফিলতি কোথাও স্পষ্ট মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে। এই গাফিলতির দায় নেবে কে? উঠছে প্রশ্ন।