শেষ ওভারে বেন স্টোকস মিডঅনের উপর দিয়ে বলটি তুলে দিতেই ১৯ ওভারেই বিশ্ব চ্যাম্পিও হলো ইংল্যান্ড দল। এবারের টি২০ বিশ্বকাপে ইংলিশম্যানেরাই ছিল চ্যাম্পিয়নের দাবিদার কিন্তু গ্রুপ লিগে আয়ারল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের পর অনেকেই ভেবেছিলো হয়তো একটু বেশি ভাবা হয়েছিল তাদের নিয়ে। আসলে এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ব্যালেন্স দল ছিল ইংরেজরাই। বেশির ভাগ খেলোয়াড়রাই আইপিএলের নামি দামি খেলোয়াড়। সেই প্রমাণটিই আজ দিয়ে দিলো। একই সাথে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে দিলো না তারা। ১৯৯২ এ এই মেলবোর্নেই হয়েছিল ইমরানের পাকিস্তানের সঙ্গে ইংল্যান্ডের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনাল। সেবারেও পাক দল নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল এবং হেরেছিল। ভাবা গিয়েছিলো হয়তো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে কিন্তু হলো না শেষ হাসিটি ছিল বেন স্টোকের ব্যাটের ভরসায়।
ঠিক সময়ে রবিবাসরীয় মেলবোর্ন ফাইনাল শুরু হয়। ঝড়বৃষ্টির প্রবল সম্ভবনা যেমন ছিল তেমন ছিল খেলা না হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু ব্রিটিশদের কাছে আনলাকি ১৩ শেষ পর্যন্ত লাকি হয়ে উঠলো। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৩৭ এই গুটিয়ে যায় আজম বাবরদের পাকিস্তান। সর্বোচ্চ রান আসে শান মাসুদের ব্যাট থেকে মাত্র ৩৮। এরপরই বাবরের ৩২। মেলবোর্ন মাঠ কিন্তু আজ বোলারদের যথেষ্ট সাহায্য করেছে। দু দলের বোলাররাই দুর্দান্ত বল করেছেন। বিশ্বের সেরা টি২০ জুটি রিজওয়ান, বাবর আজ প্রথম থেকেই ঢিমে তালে খেলছিল। রান ওঠেনি কোনও দলেরই আশানুরূপ।
এরমধ্যে স্যাম কারেন সেরা বল করেন মাত্র ১২ রানে ৩ উইকেট দখল করেন তিনি। এরপরই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস বোলিংয়ের গোড়াপত্তন করতে এসে নেন একটি উইকেট। পরে ব্যাট করতে এসে ভারতের বিরুদ্ধে রেকর্ড করা বাটলার, হেলেস জুটি চলে যান বেশি রান করার আগেই। অধিনায়ক বাটলারের সংগ্রহ ২৬ এবং হেলেসের মাত্র ৭। একটা সময়ে দেখা যায় ৬০ বলে ৩ উইকেট এবং দরকার ৬১ রান। এই সময়ে স্টোকস খেলাটি ধরেন কিন্তু বড় শট নিতে দেখা যায় নি। নেবার মতো অবস্থায় মাঠ ছিল না। এরই মধ্যে আরও ৬ ওভারের মধ্যে আরও দুটি উইকেট পরে যায়। খেলা ধরেন অবশ্য মঈন খান। কোঠিন অবস্থায় ১৫ বলে ১৯ রান করে আউট হয়ে যান। এ সময়ে ১২ বলে ৭ রান দরকার ছিল যা আজকের সেরা স্টোকস তুলে নেন। পাক দলের দুর্ভাগ্য প্রথমে দুর্দান্ত বল করেও শাহীন আফ্রিদি তৃতীয় ওভার বল করতে এসে পায়ে পেশির টানে ম্যাথ থেকে বেরিয়ে যান সঙ্গে নিয়ে যান পাকিস্তানের ভাগ্য।
বিশ্বকাপ টি-২০ জমে উঠেছে। আচমকাই রবিবারের মস্ত ধাক্কা টুর্নামেন্টের রং পাল্টিয়ে দিল। ছুটির দিনে অনেকেই দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। রবিবারের একমাত্র খেলায় ধরে নিয়েছিল ভারতীয় দর্শকরা যে ভারত কোনও ভাবে জিম্বাবোয়েকে হারাক, শান্তিতে ভারত এক নম্বর হয়ে সেমিফাইনালে যাক। লোকের ধারণা আর কি বা রয়েছে রবিবাসরীয়তে? কারণ আজকের একটি খেলা দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম নেদারল্যান্ড, যেখানে টুসকি দিয়ে জিতে যাবে আফ্রিকানরা। আর খেলে বলতে পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশ যেখানে ফল নিয়ে কি লাভ, কারণ এরা তো কেউই তো আর সেমিফাইনালে যাবে না। কিন্তু ক্রিকেট এক বলের খেলা, কখন কি হয়ে যাবে কেউই কি বলতে পারে?
কার্যত রবিবারের রবির রং পাল্টিয়ে ফেললো সমস্ত জল্পনা। ভারতীয় সময় আলো না ফোটা সকালে শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম নেদারল্যান্ডের খেলা। চিরকালের চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা সদ্য বিশ্ব ক্রিকেটে আসা ফুটবলের চোকার্স দেশ নেদারল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলো। জমে গেলো ক্রিকেট। সকলের কাছে মৃত্যু থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কাছে সুযোগ এসে গেল। যে জিতবে সেই যাবে সেমিফাইনালে। এবং এবার আর সুযোগ নষ্ট করলো না পাকিস্তান। বাংলাদেশকে অনায়াসেই হারিয়ে এবারে সেমিতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি। অন্যদিকে ভারত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইংল্যান্ডের সঙে লড়াইতে।
ইতিহাস কি ফিরে আসে? ১৯৯২-এর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পাকিস্তান খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সেমিফানালে পৌঁছেছিল। তারপর জিতে ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইমরান খান বিশ্বকাপের দখল নিয়েছিল। দেখার বিষয় ভারত কি হারাতে পারবে ইংল্যান্ডকে? যদি পারে তবে অন্য খেলা, কিন্তু যদি ইংল্যান্ড ফাইনালে ওঠে? সেবারেও কিন্তু টুর্নামেন্টটি অস্ট্রেলিয়াতেই হয়েছিল ঠিক ৩০ বছর আগে।
মেলবোর্নে বিরাট জয়। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (T-20 World Cup 2022) শেষ বলের থ্রিলার। পাকিস্তানকে চার উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল ভারত (India VS Pakistan) । জয় এল ভারতের ঝুলিতে।দীপাবলির আগেই বড়ো উপহার দিল কিং কোহলির (Virat Kohli) ব্যাট। একা কুম্ভের মতো দুর্গ রক্ষা করলেন। কোহলির চওড়া ব্যাট যেন খাপ খোলা তরবারি। ৫৩ বলে অপরাজিত ৮২। ছ'টা চার। চারটে ছয়। শাহীন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হ্যারিস রৌফদের জারিজুরি শেষ কোহলির ব্যাটের সামনে। আর বিরাটকে সঙ্গ দেন হার্দিক। ৪০ রান করে দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন। আর ফ্রি হিট, ওয়াইড, আউট, ওভার বাউন্ডারির মতো ঘটনাবহুল রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারে আসে তৃপ্তির জয়।
মেলবোর্নে শুরুটা ছিল ভারতের। শেষেও মেন ইন ব্লু-এর দাপট বজায় ছিল।টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। বাবর আজম, মহম্মদ রিজওয়ান রান পাননি। তবে লড়াই করার মতো রান করেছিল পাকিস্তান। ৮ উইকেটে ১৫৯। তিন উইকেট পেলেন পান্ডিয়া। অর্শদীপ আরও তিন। আর ভারত করেছে ৬ উইকেটে ১৬০ রান।
প্রথমে নড়বড়ে শুরু করেছিল ভারত। রাহুল, রোহিত, সূর্যকুমার কেউ রান পাননি। কিন্তু কোহলি ছিলেন। ওয়াঘার সীমান্তের ওপারে পৌঁছে যাওয়া ম্যাচ এপারে নিয়ে এলেন। মেলবোর্ন থেকে ভারত। শুধু জয় হো।