ফের শেখ শাহজাহানের স্ত্রীকে তলব করল ইডি। গতকাল অর্থাৎ সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় চলেছে তলব। আগামী বুধবার আবার সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানের স্ত্রীকে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরার পাঠিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সূত্রের খবর, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে চলছে এই জিজ্ঞাসাবাদ।
গতকাল, সোমবার সকাল ১০ নাগাদ শেখ শাহজাহানের স্ত্রী তসলিমা বিবি তাঁর আইনজীবিকে নিয়ে ইডি দফতরে হাজির হন। প্রায় ১১ ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ন'টা নাগাদ ইডির অফিস থেকে বেরিয়ে যান তিনি। তারপর একদিন যেতে না যেতেই আবারও তলব করা হয়েছে শাহজাহান স্ত্রী তসলিমা বিবিকে। ইডি সূত্রে খবর, শাহজাহানের ব্যবসার গোপন তথ্য জানতেই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ইডি অফিসাররা।
গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলায় তল্লাশি করতে গিয়ে সন্দেশখালিতে আক্রান্ত হয় ইডি। সেই হামলা ঘটনার পর থেকে ৫৫ দিন বেপাত্তা ছিলেন তৃণমূল নেতা শেখ শাহাজাহান। তারপর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয় তাঁকে গেফতার করা হয়। আদালতে হাজিরার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল শাহজাহানকে। তখন আদালতকে শাহজাহান জানিয়েছিলেন, স্ত্রীর অসুস্থতার জন্যই তিনি হাজিরা দিতে পারছেন না। সোমবার ইডির অফিসেই প্রথম প্রকাশ্যে এলেন শাহজাহানের স্ত্রী তসলিমা বিবি।
ভূপতিনগর বিস্ফোরণকাণ্ডে ফের এনআইএ-র পক্ষ থেকে তলব করা হল তিন তৃণমূল নেতাকে। আজ, সোমবার কলকাতায় এনআইএ-এর সদর দফতরে এসে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ওই তিন তৃণমূল নেতাকে। যে তিনজনকে তলব করা হয়েছে, তাঁরা হলেন সুবীর মাইতি, নবকুমার পান্ডা ও মানব কুমার পয়রাকে।
গত শনিবার ভূপতিনগর বিস্ফোরণকাণ্ডে দুই মূল ষড়যন্ত্রকারীকে গ্রেফতার করে এনআইএ। ধৃত ওই দু'জন হল বলাই চরণ মাইতি এবং মনোব্রত জানা। দুইজনেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত। এনআইএ-এর আধিকারিকরা ওই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার সময় গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। জনরোষে আক্রান্ত হতে হয় কেন্দ্রীয় এজেন্সির সদস্য়দের। NIA-এর গাড়ি লক্ষ্য় করে ছোড়া হয় ইট পাথর। আর সেই ইটের আঘাতে আহত হন দুই এনআইএ আধিকারিক। এমনকি তাঁদের গাড়ি আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে গ্রামবাসীরা। টায়ার জ্বালিয়ে দফায় দফায় চলে বিক্ষোভ অবরোধ। যদিও এখন পুরোপুরি শান্ত রয়েছে ভূপতিনগর।
গত ২০২২ এর ২রা ডিসেম্বর ভগবানপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ভূপতিনগর থানা এলাকার নাড়ুয়াবিলা গ্রামে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা ফেলা হয়। আর সেই বোমা বিস্ফোরণকাণ্ডে মৃত্য়ু তিনজনের। বোমার ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। নবকুমার পান্ডা, সুবীর মাইতি, মিলন বার, অরুন মাইতি ওরফে উত্তম মাইতি, বলাইচরণ মাইতি, শিবপ্রসাদ গায়েন, মানব কুমার পড়ুয়া এবং মনোব্রত জানা। এই ৮ তৃণমূল নেতা কর্মীকে বেশ কয়েকদিন আগেই এনআইএ-র পক্ষ থেকে তলব করা হয়েছিল। এর মধ্য়ে আজ ফের তিনজনকে তলব করা হয় এনআইএয়ের তরফে।
আবারও সিবিআইয়ের স্ক্যানারে নারদাকর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল। ৪ঠা এপ্রিল সকাল ১১টায় নিজাম প্যালেসে তলব সংবাদমাধ্যম তেহলকার প্রাক্তন সম্পাদককে। ষড়যন্ত্র, নাকি দুর্নীতি, উত্তর কি সামনে আসবে এবার? ইমেল মারফত তাঁকে সিবিআই ডেকে পাঠালেও পাল্টা জবাব দেন ম্যাথু।
সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে স্যামুয়েল হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক নাটকে পরিণত হয়েছে, পাল্টা জবাব তাঁর। দুই মাস আগেও এমন একটা চিঠি পেয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁর জবাবে বলা ছিল, তিনি এখন বেঙ্গালুরুতে থাকেন আর এত কম সময়ে কলকাতা আসতে পারবেন না। তাঁকে যাতায়াত এবং থাকার খরচ দিতে হবে। গোটা ঘটনায় তিনি কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চান। একইসঙ্গে তাঁর দাবি, কলকাতায় আসা-যাওয়ার খরচও জোগাতে হবে সিবিআইকে। ২০১৬ সাল থেকে সিবিআই এই মামলার তদন্ত করলেও এখনও রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ তারা। এদিকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে তৎপর দুই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ও সিবিআই। ফের নির্বাচনের আগে নারদ-কাণ্ড নিয়ে তৎপর সিবিআই। কিন্তু কে এই ম্যাথু স্যামুয়েল? কীভাবে তিনি যুক্ত নারদা-কাণ্ডের সঙ্গে।
ম্যাথু স্যামুয়েল একজন সাংবাদিক। তিনি সংবাদমাধ্যম তেহলকার প্রাক্তন সম্পাদকও। তিনিই নারদ ‘স্টিং অপারেশন’ চালিয়েছিলেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বাছাই করা কিছু নেতা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ২০১৪ সালে হওয়া এই অভিযানে ক্যামেরার সামনেই টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল বাংলার শাসক দলের একাধিক সাংসদ, মন্ত্রীকে। অভিযোগ, তোয়ালে মুড়ে টাকা নিতে দেখা যায় তৎকালীন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে উত্থানও এই ২০১৪ সাল থেকেই। বঙ্গ রাজনীতির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায় এই সমস্ত নেতাদের সঙ্গে অভিষেকের সখ্যতা খুব একটা মধুর ছিল না। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বারবার বলতে শোনা যায়, “এটি দুর্নীতি ছিল না, এটি ছিল ষড়যন্ত্র। কনস্পিরেসি মেড বাই ভাইপো। যাদের সহ্য করতে পারত না, যাদের মনে করত আগামী দিনে বাধা হতে পারে, তাদের বিরুদ্ধেই ম্যাথুকে কেডি সিং-এর মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়েছিল।" যদিও আট বছর পরেও এখনও অধরা নারদা রহস্য!
সন্দেশখালিতে রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে গিয়ে শাহজাহান অনুগামীদের হাতে মার খেতে হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের। গত ৫ জানুয়ারির ওই ঘটনার মূল চক্রী শেখ শাহজাহান ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। বর্তমানে সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন তিনি। হামলার ওই ঘটনায় কারা কারা যুক্ত ছিল, তা জানতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সম্প্রতি ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ জিয়াউদ্দিন মোল্লাকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এই আবহে শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগীর সহ ১০ জনকে তলব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। বৃহস্পতিবারই নিজাম প্যালেসে তাদের হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। সিবিআইয়ের তলবে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার নিজাম প্যালেসে হাজির হন শাহজাহান ঘনিষ্ঠ ২ ব্যক্তি।
সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনার রহস্যভেদে ততপর সিবিআই। আগামী দিনে তদন্তে কোনও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে কিনা, সেটাই এখন দেখার।
নির্ধারিত সময়,অতিক্রান্ত। আজও হাজিরা এড়ালেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। এদিন মানিক ভট্টাচার্যকে তলব করে ইডি। দুপুর ২ টোর মধ্যে বিধাননগরের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দফতরে হাজিরার নির্দেশ দিয়ে নোটিস পাঠানো হয় ইডির তরফে।। কিন্তু এদিনও হাজিরা এড়িয়ে যান তিনি। উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট তাঁকে তলব করে ইডি(ED)। কিন্তু স্বাধীনতা দিবস(Independence day) থাকায় তিনি হাজিরা এড়িয়ে(avoid) যান। গতকাল মানিক ভট্টাচার্যর বিষয়ে ইডির উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, আজ হাজিরা না দিলে মানিকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ(legal step) নিতে পারে ইডি।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুলাই টেট মামলায় ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন মানিক ভট্টাচার্য। তাঁর বাড়ি থেকে তল্লাশিতে মেলে একটি সিডি । সেই সিডিতে সংশোধিত তালিকার ২৬৯ জনের নাম ও তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ছিল। ইডি সূত্রে খবর এই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মানিক ভট্টাচার্যকে। সেদিন তিনি নির্ধারিত সময়ের আগেই সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছে যান। তারপর চলে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ।
মানিক ভট্টাচার্য হাজিরা এড়ানোয় পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় সেদিকে তাকিয়ে সকলে।