সৌমেন সুর: বাংলার কৃষক ও গণ আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম গৌরবময় আন্দোলন তেভাগা আন্দোলন। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে তেভাগা কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল উৎপাদিত ফসলের দুই-তৃতীয়াংশের দাবিতে। বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী নেতারা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাধারণ কৃষক-জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম হল তেভাগা আন্দোলন। তাদের আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা, স্বঅধিকারের জন্য এই লড়াই। প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্বের পর...
১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা মুছে ফেলে অবিভক্ত বাংলার গ্রামগঞ্জে কৃষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তেভাগার দাবিতে লড়াই করে। সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও সংহতি ছিল তেভাগা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বহু চেষ্টা করেও এই ঐক্য নষ্ট করতে পারেনি জমিদার, জোতদার শ্রেণি। বন্দুক গল্পের রচয়িতা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। এই গল্পের গুণ্ডা চরিত্র রঘুরামকে ঘিরে চরিত্রের রূপান্তর ঘটেছে। তবে এই গল্পে আরও একটা দিক দেখানো হয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি।
কৃষক নেতা রহমানের নেতৃত্বে গ্রামবাসী একত্রিত হয়েছে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছে। তারা ঠিক করেছে উৎপন্ন ফসলের একভাগ দেবে মহাজনদের আর দু'ভাগ নিজেদের গোলায় উঠবে। তাঁদের মেলবন্ধন ও সংগঠিত আন্দোলনকে নষ্ট করার জন্য জোতদার ফজল আলি ধর্মের দোহাই দিয়ে রহমানকে দূরে থাকতে বলে।
কিন্তু গ্রামবাসী এ কথায় কান দেয় না। আসলে এখানে ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, শোষক এবং শোষিতের বিষয়ে দুই শ্রেণি। আর এখানে রহমান-সহ গ্রামবাসীরা শোষিতের মধ্যে এক শ্রেণি। অন্যদিকে ফজল আলি, লোকনাথ সাহা, বৃন্দাবন পালেরা সবাই শোষক সম্প্রদায়ভুক্ত। ছলে বলে কৌশলে কৃষকদের সংঘবদ্ধ আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ভাঙতে পারেনি মহাজনের দল।
তখন শোষক শ্রেণি ভাড়া করা গুণ্ডা রঘুরামকে ডেকে বন্দুক তুলে দেয় হাতে। এখানেই ঘটে চরিত্রের রূপান্তর। রঘুরাম বুঝতে পারে কৃষক নেতা রহমানের মূল্য। তেভাগা আন্দোলনে সব শ্রেণির মানুষের ঐক্য আজ নৈতিক জয়ের পূর্বাভাস। রঘুরাম বন্দুক সমর্পণ করে দেন। (তথ্যঋণ: মাসরেকুল আলম)
সৌমেন সুর: বাংলার কৃষক ও গণ আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম গৌরবময় আন্দোলন তেভাগা আন্দোলন। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে তেভাগা কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল উৎপাদিত ফসলের দুই-তৃতীয়াংশের দাবিতে। বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী নেতারা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাধারণ কৃষক-জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম হল তেভাগা আন্দোলন। তাদের আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা, স্বঅধিকারের জন্য এই লড়াই। প্রথম পর্বের পর...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিস্তার, ভারত ছাড়ো আন্দোলন, পঞ্চাশের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, মহামারি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ইত্যাদি এসবের হাতছানি থেকেই প্রসার ঘটেছে তেভাগা কৃষক আন্দোলনের। এই আন্দোলনের ছায়া বাংলা সাহিত্যের ছোটগল্পে প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'হারানের নাত জামাই'। তেভাগা আন্দোলনের নেতা ভুবন মণ্ডলকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে গল্পের প্লট। বিপ্লবী ভুবনকে পুলিস সালিগঞ্জ গ্রামে হারানের বাড়িতে গ্রেফতার করতে এলে, হারানের মেয়ের বুদ্ধিতে ময়নার জামাই সেজে পুলিসকে ফেরত পাঠায়। এমতাবস্থায় গ্রামের সাধারণ চাষীগণ শ্রেণি চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
লেখক সমরেশ বসুর গল্প প্রতিরোধ। তেভাগার দাবিতে মুখর গ্রামের কৃষকরা স্থির করেছে জমিদার পীতাম্বরকে অর্ধেক ফসল দেবেন। অন্যদিকে জমিদারের গুণ্ডাবাহিনী এবং পুলিস মিলে গ্রামে সন্ত্রাস চালাতে দ্বিধা করেনি। গ্রামের নারীদের উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায় তাঁরা। মনাইয়ের প্রসূতি বউ রাধার ভূমিকা চোখে পড়ার মতোন। সে ধান বাঁচাতে নিজের প্রাণ দেয়। কিন্তু বিদ্রোহ আরও তীব্র রূপ নেয় সুবল অংশ নেওয়াতে। (চলবে) তথ্যঋণ: মাসরেকুল আলম
সৌমেন সুর: বাংলার কৃষক ও গণ আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম গৌরবময় আন্দোলন তেভাগা আন্দোলন। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে তেভাগা কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল উৎপাদিত ফসলের দুই-তৃতীয়াংশের দাবিতে। বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী নেতারা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাধারণ কৃষক-জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম হল তেভাগা আন্দোলন। তাদের আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা, স্বঅধিকারের জন্য এই লড়াই।
এই আন্দোলনকে দমাতে জোতদার, জমিদার, পুলিসের সম্মিলিত নিপীড়ন, নির্যাতন, দমন-পীড়ন, গুলি, হত্যা, নারীদের শ্লীলতাহানি নির্বিচারে চলেছে। তবে কৃষক সমাজ দমে যায়নি। একজোট হয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। হিন্দু মুসলমান ঐক্য এই আন্দোলনকে আরও অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিল। সমাজ এবং সময়কে নিয়ে তৈরি হয় সাহিত্য এবং সেখানে মানুষ অংশগ্রহণ করে। সেদিক থেকে তেভাগা কেন্দ্রিক সাহিত্যের শাখা বাংলা ছোট গল্পে সমৃদ্ধ। যাঁদের লেখা গল্পে তেভাগার স্পষ্ট ছোঁয়া আছে, তাদের কিছু নাম ও কিছু কথা সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারে।
লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-- গল্প/ছোট বকুলপুরের যাত্রী। তেভাগার সময় পরিবেশ ছোট বকুলপুর পুলিস পাহারা দিচ্ছিল। এমতাবস্থায় দিবাকর স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে আন্নার ভাইদের খবর নিতে সেখানে উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থলে পুলিস তাদের নানাভাবে তদন্ত করে। সন্দেহ করে তাঁরা বিপ্লবী হতে পারে। শেষ পর্যন্ত একটা গানের কাগজে লেখা শব্দ দেখে দিবাকরকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং গ্রেফতার করে। (চলবে) তথ্যঋণ: মাসরেকুল আলম