শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির জাল গোটাতে সক্রিয় ইডি। এই আবহে এবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী রাজীব দে-কে তলব করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পাশাপাশি, পার্থ ঘনিষ্ঠ কলকাতা পুরসভার ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পার্থ সরকারকে-ও তলব করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই সিজিও কমপ্লেক্সে তাঁদের আসতে বলা হয়েছে বলে খবর।
ইতিমধ্যেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ সরকারের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারী আধিকারিকরা মনে করছেন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ কালো টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়। এর মধ্যে প্রোমোটিং ব্যবসাও রয়েছে। সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতেই পার্থ ঘনিষ্ঠ এই দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ইডি।
এর আগে রাজীব দে-র বাড়ি ও বীরভূমের গেস্ট হাউসে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল সিবিআই। আর এবার ইডির স্ক্যানারে পার্থ ঘনিষ্ঠ রাজীব দে। নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ কালো টাকা কোথায় রয়েছে এবং কোন কোন ব্যবসায় সেই টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন ইডির আধিকারিকরা।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পরতে পরতে রহস্য। সেই রহস্যের পর্দাফাঁস করতেই তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডির এই তৎপরতায় কি উঠে আসবে নিয়োগ দুর্নীতির মাথাদের নাম? সামনে আসবে কি এই দুর্নীতির কোনও নতুন যোগসূত্র?
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার ইডির স্ক্যানারে পার্থ ঘনিষ্ঠ প্রসন্ন রায়। বৃহস্পতিবার প্রসন্ন রায়ের অফিস সহ ৭ জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালান ইডির আধিকারিকরা। এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে খবর। পাশাপাশি, বেশকিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস-ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রসন্ন রায়ের ৪৫০টিরও বেশি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে বলে খবর।
জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর তাঁর একাধিক সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করছিলেন প্রসন্ন রায়। এই আবহেই গতকাল একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। পাশাপাশি, প্রসন্ন রায়ের এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উৎস কী? কোন কোন ব্যবসায় তিনি বিনিয়োগ করেছেন? গোটা বিষয়টিই খতিয়ে দেখছেন ইডির আধিকারিকরা।
তবে শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নন, এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিনহার-ও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন প্রসন্ন রায়। সিবিআইয়ের দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে চাকরি পাইয়ে দিতেন প্রসন্ন রায়।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে মিডলম্যানের ভূমিকা ছাড়াও আর কোন কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রসন্ন রায়? আগামী দিনে কি সামনে আসবে এই দুর্নীতির মাথাদের নাম? এরকম একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্যবাসীর মনে।
রাজ্যের শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। সোমবার আদালতে শিক্ষা দুর্নীতির চারটি মামলার তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিট চার্জশিটেই নাম রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। এছাড়াও পার্থর প্রাক্তন সচিব সুকান্ত আচার্য (ডব্লুবিসিএস), এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারপার্সন শর্মিলা মিত্র'র নাম রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সিবিআই সূত্র জানা গিয়েছে, নবম-দশম, একাদশ - দ্বাদশ, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি মামলায় চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। এসএসসির একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এদিন পেশ করা চার্জশিটে অভিযুক্তরা হচ্ছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি-র প্রাক্তন কর্তা সুবীরেশ ভট্টাচার্য, ওএমআর শিট প্রস্তুতকারক সংস্থা নাইসার কর্তা পুনীত কুমার, পঙ্কজ বনশাল, এজেন্ট প্রসন্ন রায়, প্রদীপ সিং, প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারী, অরুণ মাইতি, অশোক মাইতি।
নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় পেশ করা চূড়ান্ত চার্জশিটে নতুন অভিযুক্তর তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি-র প্রাক্তন আধিকারিক সৌমিত্র ঘোষ, নাইসা, পুনীত কুমার, পঙ্কজ বনশাল। এমনকি অভিযুক্ত হিসেবে কয়েকজন শিক্ষকের নামও রয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, সৌমিত্র ঘোষ, সুবীর ঘোষ, দিলীপ ভৌমিক-এর নাম আছে। এসএসসির গ্রুপ ‘সি’ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মোট ২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। এই মামলায় আগেই দু’দফায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সিবিআই সূত্রে আরও খবর, চার্জশিটে নাম রয়েছে এসএসসির প্রাক্তন আধিকারিক পর্ণা বসু-রও।
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জেলে প্রায় থাকেননি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। অসুস্থ থাকার নাম করে হাসপাতালেই কাটছে দিন। ইডি মরিয়া হয়ে উঠেছে কাকুর ভয়েস স্যাম্পেল টেস্ট করার জন্য। কিন্তু এসএসকেএম কোনও অজানা কারণে কাকুর ফিট সার্টিফিকেট দিতেই চাইছে না। এই পরিস্থিতিতে 'কালীঘাটের কাকু' এখনও এসএসকেএম হাসপাতালেই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বিরুদ্ধে এবার কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করল বিজেপি। অভিযোগ, গুরুতর অসুস্থ না হয়েও অপ্রয়োজনে এসএসকেএম হাসপাতালে শয্যা দখল করে রয়েছেন তিনি। এরফলে রোগী ভর্তি হতে পারছেন না।
অভিযোগের আরও বলা হয়, হাসপাতালে থাকার জন্য নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে দেরি হচ্ছে ইডির। ইডি হেফাজতের দাবি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। মঙ্গলবার এই বিষয়ে বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করা হয়। প্রধান বিচারপতি জানান, বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হবে।
উল্লেখ্য, এসএসকেএম হাসপাতালের তরফ থেকে একটার পর একটা স্বাস্থ্য পরীক্ষা সুজয় কৃষ্ণের ক্ষেত্রে করানোর কথা বলা হয়েছে। কখনও মায়োকার্ডিয়াল স্পেস পারফিউশন টেস্ট, আবার কখনও মেন্টাল টাফনেস টেস্ট-স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যেই আবদ্ধ কালীঘাটের কাকু। শুধু কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে না। অন্যদিকে, আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে এসএসকেএম হাসপাতালের কাছ থেকে কাকুর সমস্ত শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট।
ইতিমধ্যেই চাকরির (job) ক্ষেত্রে একাধিক দুর্নীতি সামনে এসেছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Recruitment corruption cases) একের পর এক আধিকারিক মন্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেফতার (arrest) করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবার দুবার প্রকাশিত দুটি মেরিট লিস্ট ঘিরে সমস্যায় পড়েছেন বেলদার (Belda) এলাকা এক চাকরিপ্রার্থী।
২০১৬ সালে পরীক্ষা দেওয়ার পর রেজাল্টে বেলদা থানা এলাকার বাসিন্দা লিপিকা মণ্ডলের র্যাঙ্ক হয় ৩০। তবে মেরিট লিস্ট প্রকাশের পর তাঁর র্যাঙ্ক হয় ৩১। যেখানে ২ নং এ আসে প্রবীন মণ্ডলের নাম। যেহেতু ৩০ পর্যন্ত কাউন্সেলিং হয় এবং চাকরি পায় অন্যরা। তাই সেবারেও চাকরি জোটেনি লিপিকা মণ্ডলের। এরপরই চিন্তা শুরু হয় তাঁর। শিক্ষা দফতরে কমিশনার চেয়ারম্যানের কাছে ঘুরেও সুরাহা হয়নি। এমনকি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগও জানিয়েও চাকরি পাননি লিপিকা।
এরপরই শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য। ফের আদালতের নির্দেশে আবারও মেরিট লিস্ট প্রকাশ হয়। সেখানে লিপিকা মণ্ডলের পুনরায় র্যাঙ্ক হয় ৩০। নতুন এই সংশোধনী মেরিট লিস্টে নাম বাদ পড়ে ২ নম্বরে থাকা প্রবীন মণ্ডলের। ৩০ পর্যন্ত যদি নিয়োগ হয় তবে বাদ পড়লেন লিপিকা। বর্তমানে আদালতের উপরে ভরসা রেখেছেন লিপিকা মণ্ডল, আদৌ কি চাকরি হবে তাঁর? নাকি যে তিমিরে ছিলেন সে তিমিরেই থাকবেন তিনি? প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে লিপিকার মনে।