মনের ভক্তি ও ইচ্ছা শক্তিতে নিজের হাতে ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের রামায়ণের গোটা চিত্র তুলে ধরেছেন তাঁত শাড়িতে। প্রায় এক বছর সময় ধরে একটির পর একটি সুতো দিয়ে নিখুঁতভাবে গোটা রামায়ণের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁত শাড়িতে রানাঘাট থানার হবিবপুর রাঘবপুর মাঠপাড়ার বাসিন্দা হস্তচালিত তাঁতশিল্পী পিকুল রায়।
সেই শাড়ি অযোধ্যার রামমন্দিরের রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন ভগবান সীতা মায়ের চরণে অর্পণ করতে চান শিল্পী পিকুল রায়। আগামী ২২ তারিখে অযোধ্যায় রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা। সেই দিনের উদ্দেশেই হবিবপুর স্টেশন থেকে অযোধ্যার উদ্দেশ্যে ট্রেনে রওনা তাঁতশিল্পী পিকুল রায়ের। তিনি সঙ্গে নিয়েছেন হাতে তৈরি রামায়ণের গোটা চিত্র ফুটিয়ে তোলা তাঁত শাড়ি। ভাইয়ের এই মহৎ কাজে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন দাদা অনন্ত রায়। তাই ভাইকে সঙ্গ দিতে ভাইয়ের সাথে দাদা অনন্তও অযোধ্যায় রওয়ানা দিয়েছেন। তিনি জানালেন, অযোধ্যার রামমন্দিরের তরফ থেকে তেমন কোনও সাড়া মেলেনি। অযোধ্যা মন্দিরের তরফে কোনও সাড়া না মিললেও, মনের ভক্তির বলেই সেই ইচ্ছাপূরণের জন্যই অযোধ্যার উদ্দেশে রওনা। তবে পিকুল রায় ও দাদা অনন্ত রায়ের অযোধ্যায় যাওয়ার খবর জানাজানি হতেই গোটা গ্রাম উপচে পড়ে উৎসাহিত করতে।
পিকুল রায়ের একবছর সময় লেগেছে শাড়ির কাজ সম্পূর্ণ করতে। সম্পূর্ণ তাঁতের উপর হাতের বুনোনে তৈরি এই শাড়ি দেখলে মনে হবে এটা ছাপা অথবা প্রিন্টের, কিন্তু না গোটাটাই হস্তশিল্প। এই হচ্ছে বাংলার তাঁত শিল্পের অবদান, যা আজকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন শিল্পী পিকলু রায়। রাম-সীতা, লক্ষণ, হনুমানকে হাতের বুনোনের মাধ্যমে শাড়িতে ফুটিয়ে তুলেছেন পিকলু। আগামী ২২শে জানুয়ারি অযোধ্যার রামমন্দিরে শাড়িটি উপহার হিসেবে দেবেন ও সেখানে উপস্থিত থেকে অঞ্জলিও দেবেন দাদা-ভাই।
এবার এক নতুন চরিত্রের জন্য তৈরি হচ্ছেন অভিনেতা রণবীর কাপুর (Ranbir Kapoor)। তাঁর আসন্ন সিনেমা রামায়ণ (Ramayan)। ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে এই সিনেমা নিয়ে জোর চর্চা। এর আগেও বলিউডের অনেক অভিনেতা কাজ করেছেন রামায়ণের চরিত্রে। কিন্তু 'ব্রক্ষ্মাস্ত্র' সিনেমায় রণবীরের অভিনয় দেখে দর্শক তাঁর কাছ থেকে আরও বেশি কিছু আশা করছেন।
জানা যাচ্ছে, পরিচালক নীতিশ তিওয়ারির সিনেমা রামায়ণের জন্য রামের চরিত্রে নির্বাচিত করা হয়েছে অভিনেতার রণবীর কাপুরকে। মহাভারতের মূল চরিত্র শ্রী রাম। দেশজুড়ে বহু মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে এই চরিত্রটির সঙ্গে। তাই এই মুহূর্তে সেই চরিত্রটির জন্য নিজেকে তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অভিনেতা।
বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমের দাবি, শ্রী রাম হয়ে উঠতে রণবীর নাকি মাদক এবং মাংস ছাড়তে চলেছেন। প্রভু শ্রী রাম পবিত্র। তাই দায়সারাভাবে চরিত্রটিতে অভিনয় করতে চাইছেন না রণবীর। বরং অন্তর থেকে রামের পবিত্রতাকে ছুঁতে চাইছেন অভিনেতা। তাই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন রণবীর।
জানা যাচ্ছে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে রামায়ণের শ্যুটিং। অগাস্ট মাসের মধ্যেই শ্যুটিং শেষ করে ফেলার পরিকল্পনা পরিচালকের। যদিও সিনেমায় অন্যান্য চরিত্রে কাদের দেখা যাবে, তার আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা এখনও হয়নি।
ব্রক্ষ্মাস্ত্র ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন রণবীর কাপুর (Ranbir kapoor) এবং আলিয়া ভাট (Alia Bhatt)। বাস্তবের এই জুটিকে পর্দায় দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন ভক্তরা। তাঁদের আবারও কবে সিনেমায় দেখা যাবে? এরকম অনেক প্রশ্নে ছয়লাপ হয়েছিল নেট মাধ্যম। এই নিয়েই একটি গুঞ্জন ছড়িয়েছিল বেশ কিছুমাস আগে। শোনা গিয়েছিল, নিতেশ তিওয়ারি পরিচালিত ছবি 'রামায়ণ' আসছে। এই ছবিতে রামের চরিত্রে পরিচালকের নির্বাচন নাকি রণবীর কাপুর। সেই সিনেমায় নাকি সীতার চরিত্রে দেখা যাবে আলিয়া ভাটকে।
এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে নেট মাধ্যমে। এবার নতুন গুঞ্জন আলিয়া নাকি এই ছবি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এই খবর পেয়েই মন ভেঙেছে অনেক 'রণলিয়া' (রণবীর ও আলিয়ার নাম মিলিয়ে দর্শকদের দেওয়া নাম) ভক্তদের। তবে আসল সত্যি অন্যকিছু। জানা গিয়েছে, সিনেমার পরিচালকরা খুব সন্তর্পণে পদক্ষেপ ফেলে এই সিনেমায় কাজ করতে চাইছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে কোনও পদক্ষেপ তাঁরা নিচ্ছেন না।
রামের চরিত্রে পরিচালকদের রণবীর কাপুরকেই পছন্দ এই তথ্য সত্যি। তবে সীতা-রাবণ-লক্ষণ-সহ অন্যান্য চরিত্রগুলির অভিনেতা এখনও নির্বাচিত হয়নি। ফলে আলিয়া সীতার চরিত্রে অভিনয় করবেন, সেই তথ্য একেবারেই সত্যি নয়। এই খবর রণলিয়া ভক্তদের কাছে হতাশাজনক। তবে ভবিষ্যতে রণবীর আলিয়াকে আবারও কোনও সিনেমায় দেখা যায় কি না এখন সেইটাই দেখার।
সৌমেন সুর: ভারতের প্রাণস্পন্দনকে ধরে আছে দুই মহাকাব্য। রামায়ণ ও মহাভারত। ভারতের রাজনীতি, জাতীয় জীবনের ইতিহাস, ধর্মীয় চেতনা, সামাজিক ঐতিহ্য, নীতিবোধ, আধ্যাত্মিকতা-সবকিছুর ধারক ও বাহক এই দুই মহাকাব্য।
কেন্দ্র ও রাজ্য- দুজনেই উল্লেখিত বিষয়গুলির ধারক ও বাহক। যদি তাই হয় তাহলে এত হানাহানি, মারামারি কেন? একটু চিন্তা করলে দৃশ্যত ধরা পড়ে-কোনো জিনিসই Moveable নয়। দেহ যখন থাকবে না তখন কোনোকিছুই সাথে যাবে না-তাহলে? তাহলে পড়ে থাকবে শুধু সুকর্ম আর ব্যবহার। এখন যদি কেন্দ্র ও রাজ্য সখ্যতায় বাসা বাঁধে, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো মলিনতা থাকে না। তবে বাধা কিসের! কিসের এত ইগো!
রামের প্রজাবাত্সল্য, লক্ষণের স্বেচ্ছায় দুঃখবরণ, ভারতের অমায়িক ভাতৃপ্রেম, সীতার পরিভক্তি ও চারিত্রিক দৃঢ়তা-এসবই প্রাচীনকাল থেকে ভারতবাসীর কাছে পরম আদর্শ বলে বিবেচিত হয়েছে। রামায়ণের প্রভাব ভারতীয় সমাজকে বিশ্বের যে কোনো জনসমাজ থেকে পৃথক এক স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। তাহলে দেশে এখনো কেন জাতপাত নিয়ে নৃশংস ধাষ্টামী, কেন এত দাঙ্গা, কেন এত লোভ! যখন রামায়ণের সার জিনিসটা আমরা বুঝতে পারি, তাহলে এত বৈষম্য কেন? চারিদিকে এত শোকের ছায়া কেন! তাহলে সবটাই কি গিমিক?
এবার আসি মহাভারতে। মহাভারতে পরিবেশিত রাজনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি, ভারতীয় সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতীক। মহাভারতের মূলকথা ধর্মের জয়, অধর্মের পরাজয়। ভোগ যে মানব জীবনের কাম্য নয়, বৈরাগ্যেই মুক্তি- এই মর্মকথা মহাবারতের কাহিনীতে ফুটে উঠেছে। তাহলে বাজারে এত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি কেন? কাদের স্বার্থে? চাহিদার তো শেষ নেই। থামবে কখন? একটা মানুষের কত দরকার একসময় না থাকলে, পরিস্থিতির চেহারা তো রণভূমিতে পরিণত হবে। তাহলে আমাদের মূল্যবান এই দুই মহাকাব্যের দাম কোথায় রইল! সবটাই কি ক্তঁ গঙ্গায় নমঃ। দুটো মহাকাব্য শুধু আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবই নয়, ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের মূর্ত প্রতীক। পথপ্রদর্শক। দুটি মহাকাব্যের সারবস্তু বুঝে শয়তানী না করে, যদি সত্ভাবে সবাইকে নিয়ে চলতে পারা যায়, তাহলে একদিন ভারতবর্ষ হবে সূর্যের আর এক নাম।