
সৌমেন সুর: পৃথিবীতে প্রাণী সৃষ্টি হওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ গড়তে বহু কোটি বছর লেগেছিল। তাই পরিবেশ ও প্রাণ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। সমস্ত প্রাণই এই পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত। বিশেষ করে মানব জীবন। পরিবেশ বোঝাতে গিয়ে আমরা সামাজিক, পারিবারিক, প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের কথা বলছি। মানব জীবনে এই প্রত্যেকটি পরিবেশের গুরুত্ব অসীম, সুস্থ পরিবেশ মানুষকে মানবিক গুণের সমৃদ্ধ করে, দূষিত পরিবেশ মানুষকে করে অমানুষ। যেমন যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া নৃশংসমূলক বর্বরোচিত এক অমানবিক কর্মকাণ্ড। পরিবেশ দূষিত হলে এমন ভয়ার্ত কাণ্ডের উদ্ভব হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, পরিবেশ মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবেশ নির্মল হওয়া একান্ত আবশ্যক। যদি কোনো ছাত্রছাত্রী পড়তে এসে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নিজেকে মেলে ধরে, তাহলে তার পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটলো, ক্যারিয়ারে পেরেক পোতা হয়ে গেল। কার সর্বনাশ হলো? হিসেব করে দেখুন আপনার নিজের। অথচ আপনার বাবা-মা কত কষ্ট করে আপনাকে পাঠিয়েছে একটা আশায়, তাদের সন্তান মানুষ হবে, তাদের পাশে দাঁড়াবে কিন্তু সব আশা ধুলিসাৎ হয়ে গেল শুধুমাত্র আপনার ভুলের জন্য। আপনি দূষিত পরিবেশের দাস হয়ে গেছেন। যেখানে স্বপ্ন আশা বৃথা।
শিক্ষার শেষে মানুষ যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করে তখন সে সামাজিক পরিবেশে গিয়ে পড়ে। এই পরিবেশে সে প্রত্যক্ষ করে একদিকে আদর্শ অন্যদিকে আদর্শ হীনতা, একদিকে মূল্যবোধ অন্যদিকে মূল্যবোধের অভাব, একদিকে সুনীতি অপরদিকে চরম দুর্নীতি, একদিকে ত্যাগ অপরদিকে লোভ- মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়, এদের হাতছানিতে। যে যেমন ভাবে প্রভাবিত হয় সে তেমনভাবেই সমাজে পরিচিত হয়। দূষিত পরিবেশের স্পর্শ আপনার গায়ে যাতে না লাগে, তার জন্য আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন থাকতে হবে। চক্রব্যূহের ফাঁদে কখনোই নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন না। চেষ্টা করবেন দূরে সরে থাকতে। মনে রাখবেন জীবনে সাফল্য আপনাকে পেতেই হবে। Success is the best revenge. Bad Environment থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
সৌমেন সুর: মানুষ যখন প্রকৃতিকে বশ করে নিজের কাজে লাগিয়েছে তখনই অজান্তে বিপদকে ডেকে এনেছে সে। প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরন করেছে। মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে জয়ী হলেও প্রকৃতি হার মেনে নেয়নি। তার অভিশাপ পৃথিবীকে নিতে হয় বা হজম করতে হয়। সভ্যতা যত এগিয়েছে, মানুষ তত সমৃদ্ধ হয়েছে, অনুভব করেছে কার্যকারন অলৌকিক ঘটনা নয়, তখন থেকেই মানুষ প্রকৃতিকে জয় করার জন্য বুদ্ধি প্রয়োগ করেছে। ফলে রেজাল্ট হয়েছে উল্টো। অভিশাপকে বরন করেছে মানুষ। সৃষ্টি এবং বিনাশ প্রকৃতির নিয়ম। সৃষ্টির পাশে অবস্থান করে ধ্বংস। ধরা যাক, ধ্বংস না হয়ে যদি শুধু সৃষ্টিই হতো, তাহলে দেখা যেতো সৃষ্টির মধ্যে চরম বিশৃংখলা। মানুষসহ প্রাণীর সংখ্যা পৃথিবীর তিনভাগের একভাগ স্থল পূর্ণ হয়ে যেতো। তখন কোথায় থাকতো সেসব মানুষ আর প্রাণী! তাই সৃষ্টিকে রক্ষার জন্যই প্রকৃতি ব্যলেন্স করে নেয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, অনাবৃষ্টির জন্য দায়ী মানুষের বন কেটে বসত তৈরি করার পরিকল্পনা। বন্যার জন্য দায়ী নদীর বুকে বাঁধ নির্মাণ করে নদীর প্রবাহকে অযথা আটকে রাখা। এরফলে হঠাত্ হঠাত্ বন্যায় ঘর বাড়ি, শস্যক্ষেত্র এবং শ'য়ে শ'য়ে মানুষের প্রাণ ভেসে যায়। এমনকী ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, সুনামি এসবের জন্য দায়ী মানুষের সৃষ্টি বিশ্ব উষ্ণায়ন। প্রকৃতি যে কখন বিরূপ চরিত্র ধারন করবে সেটা কেই বলতে পারে না। প্রকৃতির ভয়ংকর রূপের মধ্যে আগ্নেয়গিরি, তুষারপাত, অতিবৃষ্টি, প্লাবন, উল্কাপাত, বজ্রপাত যেন এক একটা রূপ। প্রকৃতির এই রূপগুলি ধ্বংসকারী হলেও সবচেয়ে বিনাশকারী রূপ হলো ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, অগ্নুত্পাত প্রভৃতি।
যাই হোক, মানুষ খেয়াল খুশিমতো প্রকৃতিকে তাচ্ছিল্য করে নিজের স্বার্থকে রূপায়ন করে, তাতে আজ হয়তো জিতলেন কিন্তু ভবিষ্যতে প্রকৃতির সর্বনাশী রূপে আপনার স্বপ্ন ব্যর্থ হবেই। প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে যে মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছে, অদূর ভবিষ্যতে সেই সভ্যতা টিকে থাকবে--সে গ্যারাণ্টি কোথায়!
সৌমেন সুরঃ সম্প্রতি একটা ঘূর্ণিঝড়ে প্রকৃতি বুঝিয়ে দিয়েছে- তোমরা যদি আমাদের ওপর আঘাত হানো, তাহলে আমরাও পাল্টা আঘাত হানতে বাধ্য হবো। প্রকৃতি কখনো সে কল্যাণময়ী, কখনো সে ভয়ংকর সর্বনাশী। কখনো সে আশীর্বাদ, কখনো অভিশাপ। প্রকৃতির অভিশাপ কখন যে কীভাবে মানুষ তথা জীবজগতের ভয়ংকর দুর্দশা ঘটায়, তা কেউ বলতে পারে না। প্রকৃতির অভিশাপের এক একটা রূপ- অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্প, বজ্রপাত, অনাবৃষ্টি, প্লাবন, বন্যা, উল্কাপাত প্রভৃতি। বস্তুত সভ্যতার অগ্রগতি ঘটাতে গিয়ে মানুষ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে প্রকৃতির সামনে। অনাবৃষ্টির জন্য দায়ী বন কেটে বসত গড়ার পরিকল্পনা। বন্যার জন্য দায়ী নদীর বুকে বাঁধ নির্মাণ করে তার প্রবাহকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা।
এমনকী ভূমিকম্প, ঝড়, সুনামী প্রভৃতির ভয়ংকর অভিশাপের জন্য দায়ী মানুষের সৃষ্টি বিশ্বায়নের। মানুষ ও প্রকৃতির লড়াইয়ে মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জয়ী হলেও প্রকৃতি তার হারকে মেনে নেয়নি সহজে। তাই প্রকৃতির অভিশাপ বর্ষিত হয় পৃথিবীতে। তবে প্রকৃতির রুদ্র মূর্তির সামনে মানুষ অসহায়। প্রকৃতির অভিশাপ ধ্বংস আনে আবার মানুষ নতুন উদ্যমে গড়ে তোলে। তবুও মানুষের উচিত, খেয়াল খুশিমতো প্রকৃতিকে অগ্রাহ্য করে নিজের স্বার্থ থেকে বিরত থাকা। নইলে আঘাত অনিবার্য।