চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল যুবকের। রেল লাইনের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ক্ষতবিক্ষত দেহ। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার নদীয়ার ফুলিয়ার প্রফুল্ল নগরের রেলগেটের কাছে। জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম সুজয় বিশ্বাস। বয়স আনুমানিক ২৬ বছর। বাড়ি নদীয়ার আরংঘাটার রাধাকান্তপুরে।
সূত্রের খবর, দু'দিন আগে ওই যুবক তাঁর মা ও বাবার সঙ্গে একটি অনুষ্ঠান উপলক্ষে ফুলিয়ার প্রফুল্ল নগরের মেসোর বাড়িতে যান। একদম রেললাইনের পাশেই তাঁর মেসোর বাড়ি। সোমবার এগারোটা নাগাদ ওই রেল লাইনের উপর দিয়ে যাচ্ছিল আপ ট্রেন। পরিবারের দাবি, চোখের নিমিষেই ওই যুবক বাড়ি থেকে বেরিয়ে রেললাইনের উপরে চলে যায়, এরপর ট্রেনের ধাক্কায় ওই যুবকের দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরিবারের আরও দাবি, ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। কিন্তু অনুষ্ঠানে এসে ছেলের এইভাবে মৃত্যুর ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ে যুবক সুজয় বিশ্বাস-এর মা ও বাবা। এছাড়াও কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। যদিও মৃতদেহটি উদ্ধার করার জন্য তৎপর হয় রেলের জিআরপি। এছাড়াও কি কারণে ওই যুবক ট্রেনের সামনে চলে গিয়েছে, তার তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিস।
আদিবাসী ব্যক্তির পর এবার মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে নির্বীজকরণের অভিযোগ। নির্বীজকরণের অভিযোগ বারংবার উঠে আসছে নদিয়ার ফুলিয়া ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, নির্বীজকরণ নিয়ে প্রথমে শান্তিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন পরিযায়ী শ্রমিক মাধব রায়। অভিযোগ, আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওই মাধব রায়কে প্রথমে করোনা ভ্যাকসিনের নাম করে হাসপাতালে নিয়ে এসে নির্বীজকরণ করানো হয়।পরবর্তীতে আবারও সেই নির্বীজকরণ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয় শান্তিপুর থানায়।
অভিযোগ, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি খোকন দেবনাথকে (৬২) নির্বীজকরণ করে দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, খোকন দেবনাথ বিবাহিত হলেও তাঁর কোনও সন্তান হয়নি এখনও। তা সত্ত্বেও তাঁকে ভুল বুঝিয়ে নির্বীজকরণ বা এনএসভি করানো হয় বলে অভিযোগ। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে এলাকার সমস্ত পুরুষ।
তবে নির্বীজকরণ বা এনএসভি-এর ক্ষেত্রে সরকারি একটি অনুদান হিসেবে তিন ধাপে টাকা পাওয়া যায়। প্রথমত, নির্বীজকরণের ক্ষেত্রে যে আশাকর্মী রোগীকে নিয়ে আসবে সেই আশা কর্মী একটি টাকা পাবে। দ্বিতীয়ত, যিনি এনএসভি করবেন বা যাকে করানো হবে সেও একটি টাকা পাবে। অন্যদিকে, যে চিকিৎসক এই অপারেশন করবেন তিনিও টাকা পাবেন। সেক্ষেত্রে ফুলিয়া হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাদেরকে এনএসভি বা নির্বীজকরণ করানো হয়েছে তাঁরা কেউই টাকা পায়নি। যার কারণে অনুমান করা যাচ্ছে হাসাপাতালের ভিতরেও চলছে দুর্নীতি।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। কখনো দরিদ্র আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ আবার কখনো বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের নিয়ে গিয়ে ভুল বুঝিয়ে কিংবা বোকা বানিয়ে করানো হচ্ছে নির্বীজকরণ বা এনএসভি। বারংবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও এখনও উদাসীন প্রশাসন। নির্বীজকরণের অভিযোগ ফুলিয়া ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালের সামনে সামিল হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ।
করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার নামে নির্বীজকরণ বা এনএসভি করানোর অভিযোগ স্থানীয় দু'জন আশা কর্মী ও ফুলিয়া প্রাথমিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিপুর থানার চাঁদরা রায়পাড়া এলাকায়। ইতিমধ্যে শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
জানা গিয়েছে, গত সোমবার ২৭ নভেম্বর মাধব রায়কে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে ফুলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এনএসভি করানো হয়। পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই তাঁকে বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে ছেড়ে দেওয়া হয়। সারাদিন পেরিয়ে গেলেও ঠিক সন্ধের আগে পরিবারের লোকজন খবর পান রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছেন মাধব রায়। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি পরিবারের লোকেরা ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণনগর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। এরপর কৃষ্ণনগর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরিবারের সদস্যদের কাছে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় মাধব রায়ের এনএসভি অপারেশন করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে এই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এলাকারই দু'জন আশা কর্মী এবং ফুলিয়া হাসপাতালে চিকিৎসকরা।
উল্লেখ্য, পরিবারের তরফ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মাধব রায়ের রোগের কর্ম ক্ষমতা হারানোর। চিন্তায় ভেঙে পড়ছেন মাধব রায়ের স্ত্রী মেনকা রায়। পরিবারের তরফ থেকে দোষীদের বিরুদ্ধে শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে শান্তিপুর থানার পুলিস।