ক্লাসরুম ছেড়ে রাস্তায় শিক্ষকেরা। আন্দোলন, বিক্ষোভ ছাড়া উপায়ও নেই। ডিএ-র দাবি নয়, এবার স্কুলের পাশে ময়লা আবর্জনা দূর করতে ক্লাসরুম ছেড়ে রাস্তায় নামলেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। আর আসবেন নাই বা কেন। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর সীতাকুণ্ড রোডে মাদারাট পপুলার একাডেমী স্কুলের পাশেই বিশাল আবর্জনার স্তূপ। প্রশাসনের নজরে বিষয়টি আনার জন্যই প্রতিবাদের পথ বেছে নিলেন শিক্ষকেরা। আন্দোলনে সামিল হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরাও।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বৃষ্টি হলে ভ্যাটের দুর্গন্ধে ক্লাস করানো যায়না। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ফলে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বারংবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও অসুবিধের সম্মুখীন হচ্ছেন। বারংবার প্রশসনকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের পথকেই তা৬রা বেছে নিয়েছেন।
স্কুলেরই এক ছাত্রী জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এই ময়লা আবর্জনা ডিঙ্গিয়ে স্কুলে ঢুকতে হচ্ছে তাঁদের। তাঁদের অভিভাবকরাও একাধিকবার আপত্তি জানিয়েছেন। স্থানীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। তবুও সমস্যার সমাধান হয়নি।
সৌমেন সুর: পৃথিবীতে প্রাণী সৃষ্টি হওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ গড়তে বহু কোটি বছর লেগেছিল। তাই পরিবেশ ও প্রাণ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। সমস্ত প্রাণই এই পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত। বিশেষ করে মানব জীবন। পরিবেশ বোঝাতে গিয়ে আমরা সামাজিক, পারিবারিক, প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের কথা বলছি। মানব জীবনে এই প্রত্যেকটি পরিবেশের গুরুত্ব অসীম, সুস্থ পরিবেশ মানুষকে মানবিক গুণের সমৃদ্ধ করে, দূষিত পরিবেশ মানুষকে করে অমানুষ। যেমন যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া নৃশংসমূলক বর্বরোচিত এক অমানবিক কর্মকাণ্ড। পরিবেশ দূষিত হলে এমন ভয়ার্ত কাণ্ডের উদ্ভব হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, পরিবেশ মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবেশ নির্মল হওয়া একান্ত আবশ্যক। যদি কোনো ছাত্রছাত্রী পড়তে এসে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নিজেকে মেলে ধরে, তাহলে তার পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটলো, ক্যারিয়ারে পেরেক পোতা হয়ে গেল। কার সর্বনাশ হলো? হিসেব করে দেখুন আপনার নিজের। অথচ আপনার বাবা-মা কত কষ্ট করে আপনাকে পাঠিয়েছে একটা আশায়, তাদের সন্তান মানুষ হবে, তাদের পাশে দাঁড়াবে কিন্তু সব আশা ধুলিসাৎ হয়ে গেল শুধুমাত্র আপনার ভুলের জন্য। আপনি দূষিত পরিবেশের দাস হয়ে গেছেন। যেখানে স্বপ্ন আশা বৃথা।
শিক্ষার শেষে মানুষ যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করে তখন সে সামাজিক পরিবেশে গিয়ে পড়ে। এই পরিবেশে সে প্রত্যক্ষ করে একদিকে আদর্শ অন্যদিকে আদর্শ হীনতা, একদিকে মূল্যবোধ অন্যদিকে মূল্যবোধের অভাব, একদিকে সুনীতি অপরদিকে চরম দুর্নীতি, একদিকে ত্যাগ অপরদিকে লোভ- মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়, এদের হাতছানিতে। যে যেমন ভাবে প্রভাবিত হয় সে তেমনভাবেই সমাজে পরিচিত হয়। দূষিত পরিবেশের স্পর্শ আপনার গায়ে যাতে না লাগে, তার জন্য আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন থাকতে হবে। চক্রব্যূহের ফাঁদে কখনোই নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন না। চেষ্টা করবেন দূরে সরে থাকতে। মনে রাখবেন জীবনে সাফল্য আপনাকে পেতেই হবে। Success is the best revenge. Bad Environment থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
সৌমেন সুর: আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে শিক্ষা ও সভ্যতা নিয়ে আমরা বড়াই করি। শিক্ষা ও সভ্যতার প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করার ক্ষমতা যদি মানুষের থাকতো, তাহলে প্রকৃতি ও মানুষের এরকম বিপর্যয় ঘটতো না। আজ অসহায় মানুষ ভুলে গিয়েছে বেঁচে থাকার মূল সত্য। যেদিন শোষিত বঞ্চিত মানুষ উপলব্ধি করবে- বেঁচে থাকার প্রকৃত মূল্য কি! সেদিন হবে অন্যায়ের অবসান।
নব প্রজন্মের কথা আমরা কি কখনো তলিয়ে দেখেছি? একটি শিশুর শিক্ষক যে এই প্রকৃতি, যাকে কেন্দ্র করেই শিশুরা বেড়ে ওঠে। মাঠ নেই, পুকুর নেই, জলা নেই- ভালোবাসাহীন এক কৃত্রিম সমাজ। এ দায়ভার, নিতে হবে আমাদের সকলকেই। এখনো সময় আছে, সবুজ গাছ, মাঠ, পুকুর (যতটুকু আছে) তাকে রক্ষা করা। এবং শিশুকে বহির্মুখী না করে সুষম স্বাস্থ্য ও মনোবিকাশের দিকে নজর দেওয়া।
আজ আকাশ দেখতে হলে ঘাড় তুলে দেখতে হয়। হাইরাইজ় বিল্ডিং সারি সারি। খেলার জন্য মাঠ ছিল, পুকুর ছিল, জলা জমি ছিল- হায়রে লোভ!! লোভাতুর মানুষের গ্রাসে উধাও হয়ে গিয়েছে সবুজ প্রকৃতি। শিশুদের মুখের দিকে তাকালে অসহায় মুখে শুধুই হাহাকার। তাই বোধনের মঙ্গল মন্ত্র যত শীঘ্র হোক আনতেই হবে, নইলে ধ্বংস অনিবার্য।