
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে বৃহস্পতিবার সকাল সকাল ইডির হানা শহরে। ইডি আধিকারিকরা অভিযান চালান কাশিপুর থানা এলাকার কাশিনাথ দত্ত রোডে প্রাক্তন শিক্ষকের বাড়িতে। জানা গিয়েছে, বালুরঘাটের প্রাক্তন শিক্ষক শুভ্রাংশ মৈত্রের বাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে ইডি আধিকারিকরা পৌঁছে যান সকাল নয়টা নাগাদ।
মূলত শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে প্রাক্তন এই শিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছয় ইডি আধিকারিকরা। তবে বছর খানেক আগেই প্রায়ত হয়েছেন শুভ্রাংশ মৈত্র। কাশিপুরের বাড়িতে শুভ্রাংশ বাবুর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা থাকেন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে শুভ্রাংশ বাবু কোনওভাবে যুক্ত কিনা তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন ইডি আধিকারিকরা। পাশাপাশি বিভিন্ন নথিও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।
নিয়োগ দুর্নীতি, রেশন দুর্নীতির পাশাপাশি এবার পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের গতি বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইতিমধ্যেই তদন্তকারী সংস্থার আতস কাঁচের নীচে রয়েছে ১৪ টি পুরসভা। এই পুরসভাগুলিতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে একাধিক নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন ইডি আধিকারিকরা। যেগুলো খতিয়ে দেখেই এক এক করে এই পুরসভা গুলোর প্রাক্তন ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের তলব করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত অয়ন শীলের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে পুরসভা নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক ওএমআর শিট উদ্ধার করেছিল তদন্তকারী সংস্থা । আর তারপর থেকেই তদন্তকারী সংস্থা দফায় দফায় একাধিক পুরসভাতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। একাধিক নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই বাজেয়াপ্ত নথি থেকে বেশ কিছু সাংকেতিক অক্ষর মিলেছে। যার রহস্যভেদের পর পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নয়া মোড়। সূত্রের খবর, বাজেয়াপ্ত করা নথিতে থাকা সি এইচ, এসবি, এম এম, এ সহ একাধিক সাংকেতিক শব্দের রহস্যভেদ করতে সক্ষম হয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। আর এরপরই ইডির নজরে রাজ্যের এক প্রাক্তন ও বর্তমান মন্ত্রীর নাম। যাঁর হাতে রয়েছে রাজ্যের একাধিক দফতর।
এর আগে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের একাধিক হেভিওয়েট নেতার নাম সামনে এসেছে। পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতেও কি উঠে আসতে পারে প্রভাবশালীদের নাম ? এই সাংকেতিক অক্ষরের আড়ালে কোন সংকেত লুকিয়ে রয়েছে, তার রহস্যভেদের চেষ্টা করছেন ইডির আধিকারিকরা।
মিড ডে মিলে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ। রাজ্যের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক রিপোর্ট যৌথ রিভিউ কমিটির। সূত্রের খবর, শিক্ষামন্ত্রকের কাছে ইতিমধ্যেই সেই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। রাজ্যকে বিঁধতে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হাতিয়ার সেই রিপোর্ট। সূত্রের খবর, রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, ১৬ কোটির মিড ডে মিলে দুর্নীতি হয়েছে। ১০০ কোটি টাকার গরমিলের অভিযোগ। জেলা থেকে আসা রিপোর্টের সঙ্গে কেন্দ্রের রিপোর্টও মিলছে না বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে। অভিযোগ, অতিরিক্ত পড়ুয়া দেখানো হচ্ছে রাজ্যের তরফে। পড়ুয়া উপস্থিতির হারও বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে।
কখনও সাপ, কখনও বাঙ কিংবা টিকটিকি। প্রতন্ত গ্রামে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের বাচ্চাগুলো যখন দুপুরের খাবারটা মুখে তুলতে বসে, তখন তাতে দেখতে পায় ঝলসে যাওয়া টিকটিকি, সাপ-ব্যাঙদের। অনেকে খেয়েও ফেলে, অসুস্থও হয়। মিড ডে মিলে এভাবে সরীসৃপদের ঝলসানো দেহ পাওয়া গত কয়েক মাসে কার্যত নিত্য নৈমিত্তিক খবর হয়ে উঠেছে বাংলায়। সে খবর বারবার প্রকাশিত হয়েছে। কাঠগড়ায় উঠেছে প্রশাসন। খতিয়ে দেখার আশ্বাস মিলেছে, তবুও রোজনামচায় পরিবর্তন আসেনি। মিড মিল ইস্যুতে রাজ্যকে বারবার বিঁধেছেন বিরোধীরা।
এবার কেন্দ্রের তরফ যে রিপোর্ট জমা পড়েছে, তা রীতিমতো চমকে ওঠার মতন। শিক্ষা, রেশন, চাকরি, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোতে যে দুর্নীতির খবর সামনে এসেছে, সে অধ্যায়ে নবতম সংযোজন মিড ডে মিল। বাচ্চাদের খাবারেও দুর্নীতি! রিপোর্ট কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকে জমা পড়েছে। তাতে উল্লেখ রয়েছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বেনিয়ম ধরা পড়েছে। যত সংখ্যক উপস্থিতির হার দেখানো হয়েছে, তার থেকে কম রয়েছে উপস্থিতি। কর্মদিবসের হারেরও গড়মিল। সেখানেও বেশি করে দেখানোর কথা রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। ১৬ কোটি মিড ডে অতিরিক্ত ‘এস্টিমেশনে’ চলে গিয়েছে। এই মিড ডে মিলের দাম ১০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক ইতিমধ্যেই CAG কে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সিবিআই-কেও মিড ডে মিল দুর্নীতিতে তদন্তের সুপারিশ করল কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক।
শিক্ষা ও রেশন দুর্নীতির পর এবার অভিযোগ উঠেছে শস্যবিমা দুর্নীতির। গ্রামের প্রকৃত কৃষকদের জমির পরিমাণ কমিয়ে ভুয়ো কৃষক হিসেবে শস্যবিমা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ। বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের হাউসিবাদ গ্রামের এমন ঘটনা জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছে কৃষি দফতর। অভিযোগ, একটি গ্রামের ২২ জন ভুয়ো কৃষক হিসাবে মোটা অঙ্কের বিমার টাকা পেয়েছে।
জানা গিয়েছে, গত কয়েকবছর থেকেই এ রাজ্যের কৃষকরা খারিফ (বর্ষাকালীন ফসল) ও রবি (শীতকালীন ফসল) মরসুমে নিজেদের শস্যবিমা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই দুটি মরসুমে পৃথকভাবে নিজেদের চাষযোগ্য জমির বিবরণ সহ শস্যবিমা করার জন্য ব্লক স্তরের কৃষি দফতরে আবেদন জানান কৃষকরা। সেই আবেদনের তথ্য যাচাই করে কৃষি দফতর তা পাঠিয়ে দেয় বিমা সংস্থার কাছে। আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারনে ফসলহানী হলে সরাসরি বিমা সংস্থা কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিমার টাকা জমা করে।
চলতি বছরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় বাঁকুড়ার ছাতনায় খারিফ মরসুমে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কারণ বৃষ্টির অভাবে বহু জমিতে ধান রোপণ করতে পারেননি ওই ব্লকের কৃষকরা। সেই কারণে সম্প্রতি বিমা সংস্থার তরফে ছাতনা ব্লকের কৃষকদের শস্যবিমার টাকা পাঠানো শুরু হয়েছে। আর তাতেই উঠে এসেছে বড়সড় বেনিয়মের অভিযোগ। ছাতনা ব্লকের হাউসিবাদ গ্রামের কৃষকদের একাংশের দাবি, গ্রামের প্রকৃত কৃষকরা যে পরিমাণ জমির তথ্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন তা ইচ্ছাকৃত ভাবে কমিয়ে দিয়েছে কৃষিদফতর। অভিযোগ, গ্রামের যে সমস্ত কৃষকদের নিজস্ব জমি নেই তাঁদের অ্যাকাউন্টে মোটা মোটা অঙ্কের বিমার টাকা ঢুকেছে।
ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে স্থানীয় বিডিও, জেলা শাসক এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ পেতেই তদন্ত শুরু করেছে কৃষি দফতর।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন আরও ১ অভিযুক্ত। চাকরি বিক্রির অন্যতম দালাল প্রসন্ন রায়কে জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার প্রসন্ন রায়ের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারপতি। উত্তর ২৪ পরগনা সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকার চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তুলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠাতেন এই প্রসন্ন রায়। দেশে ও দেশের বাইরে তাঁর বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে ইডি ও সিবিআই।
এদিন প্রসন্ন রায়ের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন মুকুল রোহতগি। তার পরই তাঁকে জামিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আদালত। ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রসন্ন রায়। এসএসসি দুর্নীতিতে সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করলেও পরে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতেও তাঁকে হেফাজতে নেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীদের দাবি, প্রসন্ন রায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। উত্তর ২৪ পরগনা ও লাগোয়া এলাকার চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে তা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পাঠাতেন তিনি। সেজন্য বিধাননগরে একটি পরিবহন সংস্থার দফতর খুলেছিলেন তিনি। সেই দফতর থেকেই চলত জালিয়াতির কারবার। প্রসন্নের পাঠানো তালিকা মিলিয়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন পার্থ।
নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এই নিয়ে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি জামিন পেলেন। এর আগে মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা ও ওএমআর শিট পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সংস্থা নাইসার কর্তা নীলাদ্রি দাস জামিন পেয়েছেন।
রেশন বন্টন দুর্নীতি কাণ্ডে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে সম্প্রতি গ্রেফতার হয় রাজ্যের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। প্রথমে গ্রেফতার করা হয় মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ বাকিবুর রহমানকে। এরপর তদন্ত যত এগিয়ে জানা গিয়েছে, মন্ত্রী ও মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ বাকিবুরের নামে, বেনামে প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে। যার হদিস ইতিমধ্যেই পেয়েছে ইডি। তদন্ত এগোতেই পেঁয়াজের খোসার মত সামনে আসছে আরও ভয়ানক তথ্য। পাশাপাশি ইডির চাঞ্চল্যকর তথ্য যা রীতিমত অবাক করার মত।
ইডির দাবি, চালকলের মালিকের কাছ থেকে 'কমিশন' হিসেবে টাকা নয়, সম্পত্তি নিয়েছিলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। যে সম্পত্তি নিজের নামে নয়, দানপত্র হিসেবে লিখিয়ে নিয়েছিলেন নিজের বাড়ির পরিচারকের নামে।
রেশন 'দুর্নীতি' কাণ্ডে ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইতিমধ্যেই, ওই চালকল মালিকের বয়ান রেকর্ড করেছে ইডি। শুধু তাই নয় ওই সম্পত্তি নেওয়ার যাবতীয় কাগজপত্র এমনকি বাড়ির পরিচারকের নামে 'দানপত্র' লিখিয়ে নেওয়ার নথিও ইডির হাতে এসেছে বলেই জানা গিয়েছে।
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে শনিবার সকাল থেকেই বেশ কয়েকটা জায়গায় ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালায় ইডি। শনিবারই আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোডের একটি বহুতলের ছ’তলায় অঙ্কিত চন্দ্রের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তল্লাশিতে যান তদন্তকারীরা। টানা ২৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে রবিবার সকাল ৮.১৫ মিনিট নাগাদ বেরিয়ে যান তদন্তকারীরা। এই তদন্তের পর রীতিমত চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলেন ইডির আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রেই খবর, বেশ কিছু নথিপত্র এবং বৈদ্যুনিত যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয় ওই সংস্থার অফিস থেকে। এছাড়া এখানেই রেশনের চাল, ডাল প্যাকেজিং হত। এমন অভিযোগ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার অঙ্কিত চন্দ্রের বিরুদ্ধে আগেও ছিল বলে অভিযোগ।
এবার একপ্রকার তৃণমূলের সুরেই ইডি-কে কটাক্ষ করলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। পাশাপাশি, দলের বর্ধিত অধিবেশনের উদ্বোধনে গিয়ে
'ইন্ডিয়া' জোট নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি।
রাজ্যের দুর্নীতি প্রসঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে ইয়েচুরি বলেন, যারা দোষ করেছেন তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। পাশাপাশি তিনি বলেন, বিরোধীদের হেনস্থা করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। একই সঙ্গে ইন্ডিয়া জোট সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, তৃণমূল কখনই বিজেপির বিকল্প হতে পারে না। কিন্তু ভারতবাসীকে বাঁচানোর জন্য বিজেপিকে আগে সরকার থেকে সরাতে হবে।
ওই অনুষ্ঠানে রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে যেমন তৃণমূলকে কাটগড়ায় তুলেছেন ইয়েচুরি তেমনই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বিজেপিকে সরানোর জন্য তৃণমূলের সমর্থন প্রয়োজন
একজন রেশন বন্টন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, অপরজন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে, অথচ দুজনের গলাতেই একই নাম 'মমতা।' রাজ্যের দুই প্রভাবশালী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দুজনই দুর্নীতির দায়ে আপাতত গারদের পিছনে। কিন্তু কোথাও যেন এই দুই মন্ত্রীই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায় জানেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই মানেন। কিন্তু কি জানেন মমতা বন্দোপাধ্যায়? এই দুর্নীতির পটভূমিতে দুইটি দিক হওয়া সম্ভব, যে তিনি জানেন, অভিযুক্তরা নির্দোষ, অথবা অভিযুক্তরা দোষী। কিন্তু এই দুটির মধ্যে মমতা বন্দোপাধ্যায় কি জানেন? বিরোধীদের অবশ্য দাবি সমস্ত দুর্নীতির কথা মমতা জানেন।
সম্প্রতি রেশন বন্টন দুর্নীতি কাণ্ডে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার করা হয় বর্তমান বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। কিন্তু ঘটনার সূত্রপাত আজ অর্থাৎ শুক্রবার সকালে, সকালে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য ইডির দফতর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বার করা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে ইডি হেফাজতে থাকা মন্ত্রী বলেন, আমি চক্রান্তের শিকার। বিজেপিকে দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তার পরেই তিনি বলেন, মমতাদি সব জানে।' ওদিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ভরা আদালতে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রসঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নাম নেন। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘নিয়োগে আমার ভূমিকা নেই। একটা অংশ নীতি প্রণয়ন করে অন্যরা নিয়োগ করেন। সচিবরা মুখ্যসচিবের অধীনে কাজ করেন। মুখ্যসচিব কাজ করেন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। নিয়োগ সংক্রান্ত রিপোর্ট যেত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।' এরপরেই শোরগোল শুরু হয়, সেই আগুনে এবার ঘি ঢাললেন মমতার ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী বালু, অর্থাৎ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। যদিও সমস্ত রকম দুর্নীতি প্রসঙ্গে নিজেকে 'অজ্ঞাত' হিসেবেই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
যদিও দুর্নীতি প্রসঙ্গে বারবার বিরোধীরা কালীঘটের দিদিমণিকেই টার্গেট করেছেন। বিরোধীদের দাবি, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, এ রাজ্যের সমস্ত ভাল-মন্দের দায়িত্বও তারই। সেরকমই বরাবরই ঘনিষ্ঠ বালু ও পার্থের মাধ্যম্যে হওয়া দুর্নীতিও মমতার জানাটাই স্বাভাবিক বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও জ্যোতিপ্রিয়র বাড়িতে ইডি হানা দিতেই তিনি চটে গিয়েছিযেন, এবং জানিয়েছিলেন, 'বালুর কিছু হলে ইডি-সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করব।' এরপরেই গ্রেফতার হয় তাঁর প্রিয় বালু। তারপরেও নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা রেশন দুর্নীতি প্রসঙ্গে বামকে টার্গেট করেন। কিন্তু তাতে কি হিসেবে মিলল? একদিকে মমতার ঘনিষ্ঠ গ্রেফতার হওয়া মন্ত্রীরা ঘুরপথে দাবি করছেন, 'মমতা সব জানেন।' ওদিকে মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেই শোনা গিয়েছিল পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি নাকি তিনি টেরই পাননি। তাহলে প্রশ্ন উঠছে গোটা রাজ্য জুড়ে রেশন, গরু, কয়লা, শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি কার সূক্ষ্ম মাথার খেলা? উত্তর কে দেবেন? বঙ্গের দুর্নীতির হিমশৈলের চূড়ায় কে দাঁড়িয়ে সেটাই দেখতে চায় বাংলা।
রেশন বন্টন দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তদন্তে নেমেই মাস্টার স্ট্রোক হিসাবে মন্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুঁজে কোটি কোটি টাকার হদিশ পেয়েছেন ইডি কর্তারা। তদন্তকারীদের অনুমান, এখনও বিপুল অঙ্কের অর্থের হিসেব তদন্তে উঠে আসা বাকি। এই দুর্নীতিতে বনমত্রীর সম্পর্কে পাওয়া কিছু তথ্য ও সূত্র মারফত খবরের উপর ভিত্তি করে ক্যালকাটা নিউজের প্রতিনিধি অন্তর্তদন্তে নামেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি নথি, পাবলিক ডোমিনে থাকা তথ্য ও সাধারণ মানুষের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে বিস্ফোরক কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
২০০১-এ প্রথম বার উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থেকে বিধায়ক হন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু। এরপর ২০০৬ এর জ্যোতিপ্রিয়র নির্বাচনী হলফনামাতে উল্লেখ ছিল, তাঁর হাতে নগদ অর্থ বলতে শুধুমাত্র ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া সেই অর্থে ব্যাংক ব্যালান্স বা গাড়ির উল্লেখ ছিলনা। গল্পে টুইস্ট আসে ২০২১ সালের হলফনামায়। সেখানে শুধু সরকারিভাবে উল্লেখ ছিল ১৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের। ৩৩ টি ফিক্সড ডিপোজিটের। এছাড়া এলআইসি, গয়না, শেয়ার বন্ড, গাড়ি কী নেই সেখানে। এত গেল সরকারি উল্লেখ। সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বালু বিভিন্ন খাতে তাঁর হাতে থাকা অর্থ বিনিয়োগ করতেন। এর একটা বড় অংশ জমি কেনা বেচার কাজে লাগাতেন। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান ও তাঁর ঘনিষ্ট অভিষেক বিশ্বাসের কাছে সেই জমি বিক্রি করে দিয়েছেন বিধায়ক। এছাড়া হাবরা, বনগাঁ, বারাসত, রাজারহাট সহ বেশ কয়েকটি পুরসভার বালু ঘনিষ্ট এক ঝাঁক কাউন্সিলরের নামে বিপুল পরিমাণ জমি, ফ্ল্যাট ও অন্যান্য সম্পত্তি কেনা হয়েছে। তা এখন ইডির স্ক্যানারে রয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, জ্যোতিপ্রিয়র হিসেবহীন অর্থ যেমন হোটেল ব্যবসায় খাটছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। তেমনই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে চেইন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়, একইসঙ্গে চেইন মিষ্টি ব্যবসাতেও। আরও জানা গিয়েছে, কালো টাকা লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত সিম কার্ড তোলা হত হাবরা স্টেশন রোডের একটি দোকান থেকে। একবার ব্যবহার করেই তা ভেঙে ফেলা হত। এই সিম কার্ড তোলার কাজ করত দলীয় এক চিত্র গ্রাহক। একইসঙ্গে বালুর বেআইনি অর্থ এর একটা বড় ভাগ খাটত ঋণ প্রদানকারী সংস্থায়। এছাড়াও বালুর টাকা ঘুরপথে একাধিক বারে (পানশালায়) বিনিয়োগ করা হয়েছে । ক্যামেরার সামনে বলতে না চাইলেও বালুর বিনিয়োগ নিয়ে ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষের অকপট সত্যি ধরা পড়েছে সিএন-এর গোপন ক্যামেরায়।
টাকার পাহাড় তো দেখেছেন। ছোলার পাহাড় দেখেছেন কখনও? ঝাড়গ্রামের এক মাঠের মাঝে আস্ত ছোলার পাহাড়। তবে খাওয়ার যোগ্য হলে তাও তো হত। এ যে একেবারে খারাপ হয়ে যাওয়া ছোলা। ছোলার মাঝ দিয়ে রীতিমত উঁকি মারছে কালো কালো পোকা। পাশে ফেলা বস্তার গায়ে জ্বলজ্বল করছে রেশনের স্ট্যাম্প। রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার খোদ মন্ত্রী, তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। তারই মাঝে, এবার ঝাড়গ্রাম গোপীবল্লভপুর ২ নম্বর ব্লকের তপসিয়ার কেন্দুয়ানা গ্রামের ফাঁকা মাঠে উদ্ধার বস্তা বস্তা নষ্ট ছোলা। কোথা থেকে আসল বিপুল পরিমাণ ছোলা?
গ্রামেরই মাঠের মধ্যে এত এত ছোলা উদ্ধার হচ্ছে, এই ব্যাপারে কিন্তু স্পিক টি নট রেশন ডিলারের পরিবারও। জানা গিয়েছে, এলাকার রেশনের দোকান থেকে সেইভাবে ভাগ্যে ছোলা জোটেনি কারোরই।
দোকানের ছোলা তো জোটেই না। উপরন্তু এলাকার মাঠে ছোলার ছড়াছড়ি। কোথা থেকে এল এই বিপুল পরিমাণ নষ্ট হওয়া ছোলার বস্তা? রেশন দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতেই কি ছোলা নষ্ট করতে তৎপর স্থানীয় রেশন ডিলার? সবটা শুধু প্রশ্ন আকারে আসছে সামনে। উত্তর দেবে কে?
রেশন দুর্নীতির জালে ইতিমধ্যেই ধরা দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তারই মধ্যে কোথাও দেখা গেছে রেশনের কার্ড। কোথাও আবার রেশনের খাবার। সবটাই কি কাকতালীয়? নাকি সত্যিই ডাল মে কুছ কালা হ্যায়?
দিল্লির আবগারি দুর্নীতি তদন্তে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হতে পারে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। বৃহস্পতিবার তাঁকে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিয়েছে ইডি। মঙ্গলবার এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আপ নেত্রী অতসি। তাঁর অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবেই ইন্ডিয়া জোটকে টার্গেট করছে কেন্দ্র। এই জোট ভাঙতেই কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের ফন্দি করা হচ্ছে।
আপ নেত্রী দাবি করেছেন, তাঁদের কাছে কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের খবর রয়েছে। আর এই চক্রান্ত করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। এই ব্যাপারে জোটের বাকি সঙ্গীদের পাশে চান আপ নেত্রী। কারণ, যে ভাবে গত কয়েক বছর ধরে বিজেপি বিরোধিতা করছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, তাতে হয়তো তাঁকে এই খেসারত দিতে হতে পারে বলেই দাবি অতসির।
উল্লেখ, এর আগে এই একই ইস্যুতে গ্রেফতার করা হয়েছে দিল্লি উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াকে। গত বছর অগাস্টে দায়ের হওয়া আবগারি মামলার প্রথম এফআইআরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর নাম না থাকলেও চার্জশিটে কেজরির নাম রয়েছে বলে খবর।
রেশন দুর্নীতিতে বৃহস্পতিবার এক যোগে একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালান ইডি আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার সকালে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরনোর পর রেশন দুর্নীতির জট খুঁজতে তাঁরা পৌঁছে যান একাধিক জায়গায়। তল্লাশি চালান বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে। পাশপাশি তল্লাশি অভিযান চালান মন্ত্রী আপ্তসহায়ক অমিত দে-এর দুটি ফ্যাল্টে। পাশাপাশি ইডি আধিকারিকদের একটি দল পৌঁছে যান বেলেঘাটার লতাফৎ হোসেন লেনে। সেখানে দেবাশিস দে নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও তল্লাশি চালায়। জানা গিয়েছে, এই দেবাশিস দে মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক-এর ঘনিষ্ঠ। সামনে এসেছে তাঁদের ছবিও। দেবাশিস দে-এর এই বেলাঘাটার বাড়িতে যেতেন অমিত দে, এমনটাই স্থানীয় সূত্রে খবর।
স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায় ২০ বছর ধরে এখানে আছেন তাঁরা। ব্যবসায়ী দেবাশিস দে-এর ছেলে রনিত দে খাদ্য দফতরে চাকরি পেয়েছেন মাস তিনেক আগে। মনে করা হচ্ছে মূলত তাঁর খোঁজেই এদিন ইডি আধিকারিকরা এসেছেন। এই চাকরি পাওয়ার সঙ্গে কী কোনও দুর্নীতির যোগসূত্র রয়েছে কিনা? রনিত কিংবা তাঁর বাবা দেবাশিস, এই রেশন দুর্নীতির সঙ্গে তাঁদের যোগ কী? বাকিবুর রহমানের সঙ্গেই বা তাঁদের কী যোগ? এই দেবাশিস দে কে ব্যবহার করে কোনও টাকা লেনদেন হয়েছে কিনা, সেটাই তলিয়ে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
এদিন সবকিছুর উত্তর খুঁজতেই দেবাশিস দে-এর বাড়িতে পৌঁছে যান ইডি আধিকারিকরা। জিজ্ঞাসাবাদ করেন পরিবাররে সদস্যদের। কীভাবে মিলল এই চাকরি তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁর ছেলেকেও। খতিয়ে দেখেন তাঁদের একাধিক ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্টও। সবকিছু মিলিয়ে রেশন দুর্নীতির তদন্তের জট খুলতে ইডির স্ক্যানারে এখন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী সহ তাঁর একাধিক ঘনিষ্ঠরা। বাকিবুরের রহমানের পাশাপাশি আরও কারা যু্ক্ত এই দুর্নীতির সঙ্গে তা জানতে এখন তৎপর ইডি।
পুজো শেষ হতেই ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইডি (ED) তল্লাশি শুরু করেছে। রেশন বণ্টন ‘দুর্নীতি’ (Ration Scam) মামলায় রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের একাধিক বাড়িতে ইডি আধিকারিকরা (Enforcement Directorate) তল্লাশি শুরু করেন। পাশাপাশি সকালে মন্ত্রীর আপ্ত সহায়কের বাড়িতেও তল্লাশি চালান আধিকারিকরা। এরই মধ্যে দুপুরে মিষ্টি হাতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হলেন বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত (Sabyasachi Dutta) ও বিধাননগর পুরনিগম ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন পুরপিতা ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা নির্মল দত্ত। তবে দুজনের কাউওকেই দেখা করতে দেয়নি।
রেশন দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে ইডি আধিকারিকরা তল্লাশি শুরু করেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ জ্যোতিপ্রিয়র বাড়ি বিসি ২৪৫-তে পৌঁছে যান সব্যসাচী দত্ত। হাতে তাঁর মিষ্টির প্যাকেট। কিন্তু বাড়ির গেটেই তাঁকে আটকান সিআরপিএফ জওয়ানরা। জানান, তিনি এই মুহূর্তে ভিতরে যেতে পারবেন না। সব্যসাচী দত্ত জানান, তিনি স্রেফ মিষ্টি নিয়ে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছেন। আগামী পরশুদিন লক্ষ্মীপুজো। সেই লক্ষ্মীপুজোর নেমন্তন্ন করতে এসেছিলাম।
রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে জেরা এবং তদন্ত এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি করে সামনে আসছে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। এবার বাকিবুর রহমানের ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ পেল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সূত্রের খবর, মোট ৯৫ টি সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে বাকিবুর রহমানের, যার মিলিত মূল্য ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া বাকিবুর রহমানের নামে পার্ক স্ট্রিট, রাজারহাট, বারাসত এবং রঘুনাথপুরে ৯টি ফ্ল্যাট এবং ১ হাজার ৬৩২ কাঠা জমিরও হদিশ পেয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা। তার নামে মিলেছে ১৬ টি কোম্পানির খোঁজ। তার নামে কি রয়েছে আরও বেনামী সম্পত্তি, তার খোঁজ চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা।
প্রসঙ্গত, রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগে প্রায় ৫৪ ঘন্টা ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করেছিলেন ইডি আধিকারিকরা। তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, গ্রেফতার হওয়ার আভাস পেয়ে দুবাই পালিয়ে যাওয়ার ছক কষছিলেন ওই ব্যবসায়ী। দুবাইয়ে তার ২ টি ফ্ল্যাট রয়েছে এবং ২০১৯ সাল থেকে সেখানে যাতায়াত রয়েছে বাকিবুর রহমানের। বাকিবুরের বাড়ি থেকে একাধিক নথিপত্রসহ ৬ টি মোবাইল ফোনও বেশকিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার হয়। তাতে ডিজিটাল এভিডেন্স, রেজিস্ট্রার বুকের পাশাপাশি মিলেছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ। নগদ ছাড়াও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে, তখনই অনুমান করেছিলেন গোয়েন্দারা।
আগেই জানা গিয়েছিল ধৃত ব্যবসায়ীর ৬টি শেল কোম্পানি আছে, যার মধ্য দিয়ে কালো টাকা সাদা করতেন তিনি। বাকিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মেলে ইডি স্কানারে খাদ্য দফতরের কয়েকজন ইন্সপেক্টর এবং একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের নাম। আর এবার মিলল খোদ বাকিবুর রহমানের নামেই বিপুল সম্পত্তির খোঁজ। রাজনৈতিক মদতেই কি এত বিপুল রমরমা একজন সাধারণ চালকল ব্যবসায়ীর? জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হলেই কোটি কোটি টাকার রমরমা, কটাক্ষ সিপিএম শিবিরে।
এর আগেও অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের নামে মিলেছিল কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। তাছাড়াও শাসকদল বা মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ হলেই অনেকের ক্ষেত্রেই মিলেছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ। বাকিবুরের ক্ষেত্রেও কি দুর্নীতির কালো অর্থ এভাবেই হয়েছে পাচার, তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা।