প্রসূন গুপ্তঃ স্বাধীনতা উত্তর যুগে কংগ্রেসের ধীর গতিতে পতন কিন্তু এই বাংলাতে শুরু হয়েছিল। অথচ বিধান রায়ের রাজ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামী কম ছিল না। ১৯৬৬/৬৭ তে প্রফুল্ল সেনের সরকার পরাজিত হয় এবং অনেক সহযোগী নিয়ে কমিউনিস্টরা রাজ্য দখল করল। মাঝে ১৯৭২ - ৭৭ ফের একবার কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল। আজ এ রাজ্যে ক্ষমতায় ব-কলমে মমতার কংগ্রেস।
জাতীয় কংগ্রেসের একটা করে পার্টি অফিস হয়তো প্রতি জেলায় আজও আছে কিন্তু কর্মী কোথায়? তবু মুর্শিদাবাদ মালদা বা উত্তর দিনাজপুর ও পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের সংগঠন আছে। অবিশ্যি এবারে এই জেলাগুলিতে কংগ্রেস লোকসভায় প্রার্থী দিয়েছে। লক্ষ্য কিন্তু বহরমপুরেই।
এটা বাস্তব যে এ রাজ্যে ইন্ডিয়া জোট হয় নি ঠিকই কিন্তু গুঞ্জনে তৃণমূল নাকি বহরমপুর ও বরকত গনির কেন্দ্র দ.মালদহে এমন দুই প্রার্থী দিয়েছে যাদের জেতা কঠিন। ১৯৯৯ থেকে বহরমপুরে জিতে আসছেন অধীর চৌধুরী। ২০১৯ এ কঠিন লড়াই হয় তৃণমূলের প্রার্থীর সাথে কিন্তু শেষ হাসি ছিল অধীরের।
এবারে বহরমপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। যিনি গুজরাতের বাসিন্দা। আইপিএল এ কলকাতা টিমে খেলা ছাড়া বাংলার সাথে কোনও যোগাযোগই নেই। এটা সত্যি মুর্শিদাবাদ জেলায় ৬৬ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোট কিন্তু ঐ ভোটাররা নেহাতই গ্রাম্য বাঙালি। ইউসুফের থেকে জেলার অধীরের উপর আস্থা তাদের অনেক বেশি। অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী নির্মল সাহা এই দুই প্রার্থীর তুলনায় নেহাতই শিশু। বিজেপির ধারনা যদি মুসলিম ভোট ভাগ হয় তবে হিন্দু ভোটে জিতে আসবে তারা। অতি সরলীকরণ। অধীর নিজে হিন্দু কাজেই তাঁর হিন্দু ভোট পেতে সমস্যা কোথায়? অবিশ্যি দুষ্টু লোকেদের বক্তব্য মোদীর প্রিয় মানুষ অধীরকে হারাতে ততটা আগ্রহী নয় নাকি বিজেপি।
সে অঙ্ক যাই হোক না কেন এলাকায় অধীরের জনপ্রিয়তা আজকেও অটুট। তিনি এলাকায় যথেষ্ট কাজ করেন সারা বছর ধরে অতএব এই তিন শক্তির লড়াইয়ে শেষ হাসি এবারেও অধীরের জন্য অপেক্ষা করছে বলেই ধারনা।
প্রসূন গুপ্তঃ নীতীশ কুমারকে পিছনে ফেলে জোটের অন্যতম আইএসএফ ডিগবাজি খেলো একেবারে ভোটের প্রান্তে এসে। আইএসএফের প্রধান নওশাদ সিদ্দিকী নাকি তৃণমূল বিরোধীদের অন্যতম মুখ ছিলেন ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে। তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চাইছেন। তাঁর এই বার্তায় বিজেপি-কংগ্রেস এবং বাম তিন পক্ষই খুশি হয়েছিল। অনেকটা সাগরদিঘি মডেলে ভোটটি করতে চাইছিল বিরোধীরা। শুভেন্দুর ধারণা ছিল, নওশাদ দাঁড়ালে সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হলে আখেরে ফায়দা বিজেপির। ওই কেন্দ্রে প্রায় ৪৫% মুসলিম ভোট আছে এবং ওই মোতাবেক চললে হিন্দু ভোটের বড় অংশ নিয়ে বিজেপি জিততেই পারে। ফলত বিজেপি গড়িমসি করেছিল প্রার্থী দিতে (এখনও ওই অবস্থায়)। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস নওশাদ দাঁড়ালে প্রার্থী দিতই না। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার নওশাদ জানালেন যে, দলের নির্দেশে তিনি দাঁড়াচ্ছেন না। এই খবরে অথৈ জলে পড়েছে বিরোধীরা।
একই সাথে জোট নিয়ে প্রবল জটিলতা বাম জোটের মধ্যে রয়েছে। আইএসএফ যত্রতত্র প্রার্থী দিয়ে বিপাকে ফেলেছে সিপিএমকে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি তুলোধনা করছে নওশাদকে। তিনি বলেছেন যে, এই দলটি নাকি বিজেপির সঙ্গে 'সেটিংয়ে' রয়েছে যা ধরা যায়নি। নওশাদকে প্রজেক্ট করা মহম্মদ সেলিম সরাসরি না বললেও প্রকারান্তে বলেছেন যে, আইএসএফ সঠিক ভাবে চলছে না। অন্যদিকে বিজেপি তৃণমূলের সঙ্গে নওশাদের সেটিং এর তত্ত্ব তুলেছে। এখানেই শেষ নয়, বহু কেন্দ্রে বাম ও কংগ্রেসের জোটে জোট পাকিয়েছে। কোচবিহার থেকে পুরুলিয়াতে।
তৃণমূল সুপ্রিম আগেই জেনেছিলেন, এই রাজ্যে তারাই 'ইন্ডিয়া'। এবারে কংগ্রেস ও বামেরা এই তথাকথিত ইন্ডিয়া জোট নামক জট থেকে বেরিয়ে জানাচ্ছে, এই রাজ্যে কোনও ইন্ডিয়া জোট নেই। কাজেই ভোটের দিন দশেক আগে পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডিয়া জোটের গঙ্গা প্রাপ্তি হল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই লড়াই হবে তৃণমূল বনাম বিজেপির, বাকিরা ভোট কাটুয়ার ভূমিকাতেই থাকবে।
এক্স হ্যান্ডেলে জল্পনার সূত্রপাত। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদের পাশাপাশি দলীয় মুখপাত্রের পদ ছাড়া নিয়ে জল্পনা যখন তুঙ্গে। তখনই নিরবতা ভাঙলেন অভিমানি কুণাল। দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে পদ ছাড়ার কথা শুত্রবার কুণাল ঘোষের তরফে অফিসিয়াল বিবৃতির মাধ্যমে সামনে এসে যায়। তিনি লিখলেন, ‘আমি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র পদে থাকতে চাইছি না। সিস্টেমে আমি মিসফিট। আমার পক্ষে কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আমি দলের সৈনিক হিসেবেই থাকব। দয়া করে দলবদলের রটনা বরদাস্ত করবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার সেনাপতি। তৃণমূল কংগ্রেস আমার দল।’সরকারি নিরাপত্তার পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্রের whats app গ্রুপও ছাড়লেন কুণাল।
কুণাল ঘোষের এক্স হ্যান্ডেল থেকে বৃহস্পতিবার রাতে বিস্ফোরক পোস্ট করা হয়। তখন থেকেই সকলের মনে দানা বাধছিল তৃণমূলের অন্দরে একটা কিছু চলছে। শুক্রবার সকালে আচমকাই দেখা গেল সেই পোস্টটি উধাও। এমনকী এক্স হ্যান্ডলের বায়ো থেকে রাজনীতিবিদ ও তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্রের পরিচয়ও মুছে দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। এখন তাঁর পরিচয় শুধুই সাংবাদিক ও সমাজকর্মী। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে কেন এমন করলেন কুণাল ?
বৃহস্পতিবার রাতে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে কুণাল ঘোষ পোস্ট করেছিলেন, ‘নেতা অযোগ্য গ্রুপবাজ স্বার্থপর। সারা বছর ছ্যাঁচড়ামি করবে আর ভোটের মুখে দিদি, অভিষেক, তৃণমূল দলের প্রতি কর্মীদের আবেগের উপর ভর করে জিতে যাবে, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে, সেটা বারবার হতে পারে না।’ এই পোস্টে কারুর নাম উল্লেখ না করলেও কলকাতা উত্তর লোকসভার সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়কেই কটাক্ষ করে যে কুণালের এই পোস্ট তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারুর। পোষ্ট করে তিনি লেখেন নরেন্দ্র মোদীর কুৎসার বিরোধিতা যুক্তিতে ধুয়ে দেওয়া যায়।নাম না করে সুদীপকে কটাক্ষ করে লিখেছেন রোজভ্যালি থেকে বাঁচিয়ে গলায় বকলেস পড়িয়ে রেখেছেন মোদী। শুক্রবার সিএনকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারে সুদীপকে নিয়ে বিস্ফোরক কুণাল।
অন্যদিকে সূত্রের খবর গত দু বছর ধরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কাজ করছেন কুণাল ঘোষ।কাজে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তাই হলদিয়ায় অস্থায়ী বাড়িও নিয়েছেন তিনি। নন্দীগ্রামে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে কোমর বেঁধে নেমেছেন কুণাল।পঞ্চায়েত ভোটের আগে চাটাই বৈঠক থেকে শুরু করে গ্রাম সভা সবটা করেছেন গোটা জেলা জুড়ে।দুই সাংগঠনিক জেলা কাঁথি এবং তমলুক ছুটে গিয়েছেন দলের প্রয়োজনে।আগামী ১০ মার্চ তৃণমূল কংগ্রেসের ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর কলকাতার নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন সুদীপ। সেখানে ডাক পাননি কুণাল ঘোষ । শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের বৈঠকেও ডাক পাননি তিনি।যান তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকশি। আর এরপরই ক্ষোভে বিস্ফোরক পোস্ট। অভিমানে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন কুণাল। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন ঘাসফুলের অন্দরে এই অশান্ত বাতাবরণ তৈরি হওয়ায় দলের অস্বস্তি যে আরও বাড়লো তা বলাইবাহুল্য।
সেই মুর্শিদাবাদ, ফের মৃত্যু, বলি কংগ্রেস কর্মী। পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রথম রক্তে ভিজেছিল মুর্শিদাবাদ। লোকসভার আগে সেই উত্তাপ ধরা পড়ছে। কংগ্রেস-তৃণমূলের সংঘর্ষে মৃত্যু এক কংগ্রেস কর্মীর। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের রানিনগর থানার নজরানা পানি পিয়াকতে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বেশ কিছুদিন ধরে এলাকা অশান্ত ছিল তৃণমূল ও কংগ্রেস সমর্থক দুই পরিবারের বিবাদ ঘিরে। অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তৃণমূল কর্মী দলবল নিয়ে কংগ্রেস কর্মীর এনামুল হকের পরিবারের লোকজনের ওপর চড়াও হয়। বেধরক মারধর শুরু করা হয় ওই কংগ্রেস কর্মীকে, যার জেরে ঘটনাস্থলেই এনামুল হকের মৃত্যু হয়।
তৃণমূলের দাবি মারধর করা হয়নি, শারিরীক অসুস্থতার কারণে মৃত হয়েছে কংগ্রেস কর্মীর। এদিকে কংগ্রেসের অভিযোগ, দোষীদের গ্রেফতার না করে কংগ্রেস কর্মীদেরই আটক করেছে পুলিস।
২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে তৃণমূল-কংগ্রেসের সংঘর্ষে লাগাতার উত্তপ্ত থেকেছে মুর্শিদাবাদ। লোকসভা দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই বলি হতে হল কংগ্রেস কর্মীকে। এই আবহে কেমন ভোট হয়, এখন সেটাই দেখার।
প্রসূন গুপ্ত: ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ অবধি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ অর্থাৎ রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। অবিশ্যি এর মধ্যে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর প্রয়ানে তিনিই প্রথম রাজ্যসভা থেকে যাওয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর থেকে নেহেরু/গান্ধী পরিবার থেকে আর কেউ রাজ্যসভায় দাঁড়ান নি। এবারে ইন্দিরার পুত্রবধূ সনিয়া রাজ্যসভায় যাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে সনিয়া হঠাৎ রাজ্যসভায় কেন? দাঁড়ালে কোথা থেকে এবং তাঁদের পারিবারিক কেন্দ্র রায়বেরিলিতে কে দাঁড়াবে?
আপাতত ঠিক হয়েছে সনিয়া গান্ধী রাজস্থান থেকে দাঁড়াচ্ছেন। সেখানকার সদ্য বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত, সনিয়ার নির্বাচনী এজেন্ট। এই রাজস্থান থেকেই সাংসদ ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি আর সরাসরি রাজনীতিতে থাকছেন না বলেই খবর। অন্যদিকে পরে থাকে রায়বেরিলি।
সূত্রের খবর এবার প্রথম এই কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এতদিন খোদ সনিয়ার আপত্তিতে প্রিয়াঙ্কা ভোটে আসেন নি। তিনি কিন্তু প্রচারে ছিলেন বহুদিন। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি রাহুলের উপর আস্থা নেই তাঁর মায়ের?
বিষয়টি ভিন্ন। একসময় ভোট যাদুগর প্রশান্ত কিশোর গান্ধী পরিবারকে জানিয়েছিলেন যে, প্রিয়াঙ্কাকে প্রোজেক্ট করতে। তাঁর মধ্যে নাকি ঠাকুমা ইন্দিরার লক্ষন ইতিবাচক রয়েছে। কিন্তু সনিয়া বা রাহুল বিষয়টিকে আমল দেন নি। এখন শেষ মুহূর্তে বদল কি পিকের টোটকা?
প্রসঙ্গত নরেন্দ্র মোদী কিন্তু সময়ে সময়ে এই পরিবারকে কটাক্ষ করেছেন পরিবারতন্ত্র নিয়ে। কংগ্রেসের বক্তব্য ঐ কারনেই আরও বেশি করে বিরোধীতা করবে তারা। তাই কি প্রিয়াঙ্কাকে ভোটে নিয়ে আসা? সময় জবাব দেবে।
রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আরএসএস-বিজেপির অনুষ্ঠান, তাই থাকবে না জাতীয় কংগ্রেস। মঙ্গলবার অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। দলের তরফে সোনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং অধীর চৌধুরীকে ২২ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে রাম মন্দির ট্রাস্ট। কিন্তু নির্মীয়মান রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না সোনিয়া গান্ধী, অধীর চৌধুরী এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে।
প্রেস বিবৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানালেন জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমশে। কেন শতাব্দী প্রাচীন এই দলের এই সিদ্ধান্ত। সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছেন জয়রাম রমেশ। প্রেস বিবৃতিতে জয়রাম রমেশ লেখেন, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার রামমন্দিরের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্র পেয়েছেন কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী এবং রাজ্যসভার দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। দেশে লক্ষ-কোটি মানুষ ভগবান রামের পুজো করেন। ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আরএসএস-বিজেপি অযোধ্যার রামমন্দিরকে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়েছে। নির্মীয়মান রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ভোটকে মাথায় রেখে এগিয়ে এনেছে বিজেপি-আরএসএস। ২০১৯ সালের সু্প্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান জানিয়ে দেশের লক্ষ-কোটি মানুষের আবেগকে সম্মান জানিয়ে আরএসএস-বিজেপির এই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ সসম্মানে ফিরিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী, অধীর চৌধুরী এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে।
উল্লেখ্য, ২২ জানুয়ারির এই অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় আসমুদ্র হিমাচল। এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। তাঁরা কী করবেন, স্পষ্ট নয় অবস্থান। ইতিমধ্যে মন্দির নগরী নবরূপে নির্মিত রেলস্টেশন এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পেয়েছে। ১৪-২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় চলবে অমৃত মহোত্সব। এদিকে ৩০ ডিসেম্বর অযোধ্যায় গিয়ে কার্যত মূল উৎসবের সূচনা করেন নরেন্দ্র মোদী। এখন সব চোখে ২২ জানুয়ারির সেই পুণ্যক্ষণের দিকে।
প্রসূন গুপ্ত: বিরোধী জোটের নিঃসন্দেহে সবথেকে শক্তিশালী দল কংগ্রেস। তবে এই কংগ্রেস ইন্দিরা বা রাজীবের কংগ্রেস নয়। ইন্দিরা গান্ধী বিরোধীদের আমলই দিতেন না ব্যতিক্রম একমাত্র সিপিআই। সিপিআই পাশে না থাকলে ইন্দিরার রাজনৈতিক জীবন কঠিন হতো ১৯৬৯ এ , যখন ইন্দিরা দলটাকেই চটিয়ে নব কংগ্রেস গঠন করলেন। তখন পুরাতনী কংগ্রেসি বা সিন্ডিকেট কংগ্রেস সরে যাওয়ার পরে ইন্দিরার সরকার পরে যাচ্ছিলো কিন্তু বন্ধু দেশ রাশিয়ার নির্দেশে সিপিআই কংগ্রেসকে সহযোগিতা করে এবং ৬৯ থেকে ১৯৭১ অবধি সরকার চালান ইন্দিরা। এরপর তো জোট ইত্যাদি হয়েও ভেঙে যায়। ফের ক্ষমতায় ইন্দিরা। ইন্দিরার মৃত্যুর পরে রাজীব গান্ধী ক্ষমতায় আসেন এবং প্রবল শক্তিশালী সরকার পান। কিন্তু পরেরবারের ভোটে রাজীব নিজে জিতলেও কংগ্রেস ক্ষমতা হারায়। ফের জোট ফের পতন। শেষ পর্যন্ত ১৯৯১ তে রাজীবের হত্যার পরে ক্ষমতায় আসে নরসিমা রাওয়ের সরকার। এবারে কিন্তু বামেদের ভোটের দরকার হতো পার্লামেন্টে , যা রাও পেয়েছিলেন।
আজকের কংগ্রেস কিন্তু জোট ছাড়া ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আজকের কংগ্রেস 'রাহুলের কংগ্রেস'। যদিও মলিকার্জুন খাড়গে বলে এক বৃদ্ধ আছেন নাম কি বাস্তে সভাপতির আসনে। দল চালাচ্ছেন কিন্তু রাহুল গান্ধী। সাম্প্রতিক ভোটে তিন রাজ্যে পরাজিত হওয়ার পরেও রাহুলই শেষ কথা। ইতিমধ্যে একটি জোট হয়েছে "ইন্ডিয়া' যেখানে ২৬ টির বেশি বিরোধী দল আছে। সব দলেরই ভোটে আসন নিয়ে আলোচনা রয়েছে। কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে বর্তমানের এই জোটের ডিএমকে ও আরজেডি বাদে প্রায় প্রতি দলের বিরুদ্ধে গত ১০/১৫ বছরে রাহুলের কংগ্রেস লড়াই করেছে। এই জোট বৈঠকে যা হোক না কেন, রাহুল অনেক বেশি ভরসা করছেন সিপিএমের উপর। অথচ এই সিপিএমের ক্ষমতা কমে এখন কেরালায় গিয়ে ঠেকেছে। আবার ওই কেরালায় সিপিএম কংগ্রেস পরস্পরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। রাহুল এই পরিসংখ্যান জানা সত্বেও সিপিএমের উপরে কেন এতো ভরসা রাখছেন তা বোঝা দুস্কর। এই ভরসার স্থান থেকে কংগ্রেস /বাম জোটের নিদারুন পরাজয় হয়েছে বাংলায় এবং ত্রিপুরায় | তবু রাহুল পুরাতন স্থানেই অবস্থান করছেন। জোটের মধ্যে তাই সৃষ্টি হয়েছে উপজোট যার নাম জিঞ্জার গ্রুপ।
লোকসভা নির্বাচনের আগেই বড় ধাক্কা কংগ্রেসের। এবারে ইডির চার্জশিটে নাম উঠে এল কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর। মূলত আর্থিক প্রতারণা মামলায় ইডির র্যাডারে সোনিয়া কন্যা। এই প্রথমবার আর্থিক প্রতারণা মামলার চার্জশিটে প্রিয়াঙ্কার নাম উল্লেখ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তবে শুধুমাত্র প্রিয়াঙ্কা নন, তাঁর স্বামী রবার্ট বঢরার নামও রয়েছে ইডির চার্জশিটে।
জানা গিয়েছে, হরিয়ানার ফরিদাবাদে একটি কৃষিজমি কেনা-বেচা ঘিরে দুর্নীতি হয়েছে। তাতেই জড়িত প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও তাঁর স্বামী রবার্ট বঢরা। ইডির দাবি, ২০০৬ সালে দিল্লির এক রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এইচএল পাহার কাছ থেকে হরিয়ানায় ৪০ একরের তিনটি কৃষিজমি কিনেছিলেন প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর স্বামী রবার্ট বঢরা। ২০১০ সালে আবার সেই রিয়েল এস্টেট এজেন্টের কাছেই ওই জমি বিক্রি করে দেন। এই জমি কেনা-বেচা ঘিরেই বেআইনি আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে ইডির দাবি। শুধু তাই নয়, একাধিক প্রতারণা মামলায় অভিযুক্ত প্রবাসী ব্যবসায়ী সিসি থাম্পির সঙ্গেও নাকি গভীর সম্পর্ক রয়েছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং রবার্ট বঢরার।
উল্লেখ্য, এই মামলায় নাম রয়েছে কুখ্যাত ব্যবসায়ী সঞ্জয় ভাণ্ডারী এবং প্রবাসী ব্যবসায়ী সিসি থাম্পির। ইডির দাবি, আর্থিক দুর্নীতি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই লন্ডনে সম্পত্তি কিনেছিলেন সঞ্জয় ভান্ডারি। সেই সম্পত্তিতেই বসবাস করতেন রবার্ট বঢরা। ইডি সূত্রে খবর, ব্ল্যাক মানি অ্যান্ড ইম্পোজিশন অফ ট্যাক্স আইন ২০১৫-এর অধীনে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে আয়কর দফতর। সেই মামলার তদন্তই শুরু করেছে ইডি। ফলে লোকসভার নির্বাচনের আগেই ইডির চার্জশিটে প্রিয়াঙ্কার নাম উল্লেখ করায় বড়সড় বিপাকে কংগ্রেস।
'ভারত জোড়ো যাত্রা'র পর এবারে কংগ্রেসের নয়া উদ্যোগ 'ভারত ন্যায় যাত্রা'। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই ফের এক কর্মসূচি নিলেন রাহুল গান্ধী। এবার তার নাম 'ভারত ন্যায় যাত্রা'। জানা গিয়েছে, আগামী ১৪ জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত চলবে কংগ্রেসের 'ভারত ন্যায় যাত্রা'। ৬ হাজার ২০০ কিমি পথ হাঁটবেন রাহুল, অতিক্রম করবেন ১৪টি রাজ্য। এবার উত্তর-পূর্বের মণিপুর থেকে মহারাষ্ট্রের মুম্বই পর্যন্ত হাঁটবেন রাহুল। বাংলাকেও ছুঁয়ে যাবেন রাহুল, এমনটাই সূত্রের খবর।
কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, 'ভারত ন্যায় যাত্রা' শুরু করতে চলেছেন রাহুল গান্ধী। আগামী ১৪ জানুয়ারি থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত চলবে কংগ্রেসের এই কর্মসূচি। এই যাত্রা মোট ৬ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে। যে রাজ্যগুলির মধ্যে দিয়ে এই যাত্রা হবে, সেগুলি হল নাগাল্যান্ড, অসম, মেঘালয়, বিহার, ওড়িশা, ছত্তিসগড়, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত হয়ে এটি শেষ হবে মহারাষ্ট্রে৷ বাংলাকেও ছুঁয়ে যাবেন রাহুল, এমনটাই জানা গিয়েছে। ১৪ জানুয়ারি মণিপুরে এই যাত্রার সূচনা করবেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। বাস থাকবে এই যাত্রায়, মাঝে মাঝে কিছুটা পথ হেঁটে পেরনো হবে।
কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, ২১ ডিসেম্বর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির তরফে রাহুল গান্ধীকে একটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ভারতের পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত পদযাত্রা করতে পারেন রাহুল গান্ধী। রাহুল গান্ধী CWC-এর এই পরামর্শ মেনে নিয়েছেন। AICC সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১৪ জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত 'ভারত ন্যায় যাত্রা' চলবে।
এবারে কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী সাসপেন্ড। শীতকালীন অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁকে। তবে শুধুমাত্র অধীর নন, মোট ৩৩ জন বিরোধী সাংসদকে শীতকালীন অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আর এই তালিকায় রয়েছে শাসকদলেরই এক ঝাঁক সাংসদ। তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, শতাব্দী রায়, অসিত মাল, প্রতিমা মণ্ডল, সুনীল মণ্ডলকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আবার কংগ্রেসের 'সাসপেন্ডেড' সাংসদদের মধ্যে রয়েছেন গৌরব গগৈ। ডিএমকে সাংসদ এ রাজা, দয়ানিধি মারান, টি আর বালুকে-ও সাসপেন্ড করা হয় সোমবার।
জানা গিয়েছে, লোকসভার স্বাভাবিক কাজে বাধা দেওয়া ও ওয়েলে নেমে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠেছে বিরোধীদের বিরুদ্ধে। ফলে তাঁদের লোকসভার অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বাদল অধিবেশনেও লোকসভায় 'অসংসদীয় শব্দ' ব্যবহার করার জন্য সাসপেন্ড হয়েছিলেন লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। সোমবার শীতকালীন অধিবেশনেও অধীর সহ মোট ৩৩ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা।
প্রসূন গুপ্তঃ এই রাজ্যে সিপিএমের কোনও বিধায়ক বা সাংসদ নেই। ত্রিপুরাতে বিধায়ক আছে, কিন্তু সাংসদ নেই। আবার কেরলে দুইই আছে, কিন্তু কংগ্রেস বিরোধিতায়। অন্যদিকে, আজকের বামফ্রন্ট বলতেও তেমন কিছু নেই অর্থাৎ যা কিছু সিপিএম এবং সিপিআইয়ের। এবারে যদি ভারত জুড়ে সত্যিই কোনও জোট যার নাম 'ইন্ডিয়া' হয় তবে সিপিএম পরবে নানান সমস্যায়।
প্রথমত, এই ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য একই সুরে কথা বলছে না। দিল্লিতে সিপিএমের সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যেমন নিয়মিত ভাবে এই ইন্ডিয়ার বৈঠকগুলোতে অংশ নিচ্ছে তেমনটি কিন্তু রাজ্যের সম্পাদক সেলিমের ভূমিকা নয়। সেলিম রাজ্য প্রশাসনে থাকা তৃণমূলের ঘোরতর বিরোধী। প্রচার মাধ্যমের সামনে শুভেন্দু অধিকারী আর সেলিমের বক্তব্যের কোনও ফারাক নেই। তার উপরে আবার আইএসএফের সঙ্গে সেলিমের যথেষ্ট মধুর সম্পর্ক। এ রাজ্যে সেলিম থেকে শুরু করে দলের বাকি নেতাদের অবস্থান একই রকম। অবিশ্যি সেটাই রেজিমেন্টেড পার্টির বরাবরের নিয়ম তো বটেই।
সিপিএমের সাথে কেরালায় কোনও ভাবেই কংগ্রেসের জোট বাঁধা সম্ভব নয়। সিপিএম তো চাইছেই না, উল্টোদিকে কংগ্রেস যদি কোনও ভাবে জোটের কথা ভাবেও তবে দল ভেঙে যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে দলের কর্মী সমর্থকদের ত্রিপুরার মতো বিজেপিতে চলে যাওয়ার সম্ভবনা থাকবে। পশ্চিমবঙ্গে না তৃণমূল না বামেরা এক হতে পারে। মনে রাখতে হবে তৃণমূলের জন্মই সিপিএমের বিরোধিতা করে। যদিও একা বা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে এ রাজ্যে লড়লে কংগ্রেসের সুবিধা হয়তো হতে পারে কিন্তু সিপিএমের পকেটে শূন্যই জুটবে। সিপিএমে এখন যে ৭% ভোট অবশিষ্ট আছে তারাও বেরিয়ে যাবে যদি তৃণমূলের সঙ্গে জোট হয়।
সমস্ত বিষয়টি বোঝা যাবে ১৯ ডিসেম্বর, পরবর্তী 'ইন্ডিয়া'র বৈঠকে। তবুও খবর যতটুকু আপাতত দিল্লি কংগ্রেস চাইছে তৃণমূলের সঙ্গেই সম্পর্ক পোক্ত করতে। প্রয়োজনে শুধু ত্রিপুরাতেই এই দলের জোট অটুট থাকবে লোকসভা নির্বাচনে।
প্রসূন গুপ্তঃ গো-বলয়ের তিন রাজ্য হারানোর পরে কংগ্রেস অনেকটাই নমনীয়। রাহুল গান্ধী চাইছেন যা ভুল হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে, এবারে ছোট্ট দলগুলিকেও 'ইন্ডিয়া' জোটে সামিল করতে হবে। যদিও বিগত তিন রাজ্যের ভোটের সমীকরণে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের ভোট রাজস্থানে বেড়েছে, ঝাড়খণ্ডে সামান্য ফারাক বিজেপির সঙ্গে কিন্তু ভোট খুব না কমলেও মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ভোট শতাংশ বাড়িয়েছে। এর কারণ খতিয়ে দেখা যাচ্ছে ছোট দলগুলি ভোট কেটে নেওয়াতে অনেক ছোট দলের বিধায়ক হয়েছে এবং কংগ্রেসের আসন কমেছে। কাজেই দেশের আঞ্চলিক দলগুলিই নয় ছোট দলগুলিকেও সঙ্গে নিতে হবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে, ধারণা কংগ্রেস হাইকমান্ডার। এই নিয়ে অবিশ্যি আগামী ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর দিল্লিতে জোটের পরের সভা, যেখানে লোকসভার আসন সমঝোতার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
অন্যদিকে শোনা গেল, সোমবার ৪ ডিসেম্বর রাহুল গান্ধীর সঙ্গে নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাথমিক কথা হয়েছে। ঠিক হয়েছে বহরমপুর, দক্ষিণ মালদহ এবং রায়গঞ্জ আসন তিনটি তৃণমূল, কংগ্রেসকে ছাড়তে পারে। যদিও কংগ্রেস আরও একটি আসন দাবি করেছিল কিন্তু চতুর্থ আসন নিশ্চিত তৃণমূল আর ছাড়বে না।
প্রশ্ন থাকতে পারে তৃণমূল কেন কংগ্রেসকে আসন ছাড়বে? এই কংগ্রেসের রাজ্য নেতারা সারা বছর তৃণমূলের চরম বিরোধিতা করে থাকে। কিন্তু জানা যাচ্ছে সম্প্রতি 'মহুয়া কাণ্ডে' কংগ্রেসের তীব্র প্রতিবাদ তৃণমূলকে খুশি করেছে। অন্যদিকে সম্প্রতি তেলেঙ্গানা জয়ের পরে সেখানকার নব্য মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি নাকি তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে মমতাকে আমন্ত্রণ করেছিলেন। উত্তরবঙ্গে আগে থেকে অনুষ্ঠান ঠিক থাকায় মুখ্যমন্ত্রী যেতে পারেননি, কিন্তু প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যসভার পরিষদীয় নেতা ডেরেক ও'ব্রায়ানকে পাঠিয়েছিলেন। ডেরেক, রাহুলের খুবই সুসম্পর্ক। ডেরেককে সোনিয়া, রাহুল তাদের চাটার্ড ফ্লাইটে হায়দ্রাবাদে নিয়ে যান এবং সেখানে কংগ্রেসের তরফ থেকে ডেরেককে যথেষ্ট সম্মান জানানো হয়। এই ধরণের ঘটনাগুলিতে কংগ্রেস এবং তৃণমূল অনেকটাই কাছাকাছি। চূড়ান্ত রূপ নেবে আগামী ১৮ থেকে ২০র সভায়।
লোকসভা ভোটের আগে দক্ষিণের রাজনীতিতে বিরাট স্বস্তি কংগ্রেসের। অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগের পর এই প্রথম তেলঙ্গনায় সরকার গঠনের পথে শতাব্দী প্রাচীন এই রাজনৈতিক দল। ১১৯ আসনের রাজ্য বিধানসভায় গণনার দু ঘণ্টার মধ্যেই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস।
রাজনৈতিক মহলের মতে, রাহুল গান্ধীর ভারত জড়ো যাত্রার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে দক্ষিণের এই রাজ্যে। সেই আবেগকে এই ভোটে কাজে লাগিয়েছেন কংগ্রেস কর্মীরা। পাশাপাশি চন্দ্রশেখর রাও সরকারের দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে আগাগোড়া বিধানসভায় প্রচার চালিয়ে ছিল কংগ্রেস। তাতেও ফল এসেছে।
প্রাথমিক ভাবে যা খবর, তাতে গ্রামীণ তেলঙ্গনায় ভাল ফল করেছে কংগ্রেস। আর সেটাই অক্সিজেন দিয়েছে প্রদেশ নেতৃত্ব। শহরের ফল আড়াআড়ি ভাগ হয়েছে কংগ্রেস এবং বিআরএসের মধ্যে। বেলা বাড়লে ছবি আরও স্পষ্ট হবে।
ভোপালের মসনদে কমল ফুটল। কমল নাথ কিছু করতে পারলেন না। মোদী ম্যাজিকে এবারও মধ্যপ্রদেশ কার্যত নিজেদের দখলে রাখল বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে অন্যতম বড় রাজ্য নিজেদের দখলে রেখে স্বস্তিতে দিল্লিতে গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা।
প্রাথমিক গণনার পর কংগ্রেস নেতা কমল নাথ দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস আসছে। কিন্তু বেলা বাড়তে ফল পাল্টে গেল। ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে কার্যত ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে বিজেপি।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, বিরাট কোনও অঘটন না ঘটলে ভোপালের গদিতে শিবরাজেই আস্থা ঢেলে দেবেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের ফল সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দিল বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাকেও।
লোকসভা ভোটের আগে রাজস্থান স্বস্তি দিল বিজেপিকে। মরুরাজ্যে ফের পদ্ম ফোটা এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা। ২০০ আসনের বিধানসভার ম্যাজিক ফিগার ১০০। গণনার এক ঘণ্টার মধ্যেই তা পেরিয়ে দুর্বার গতিয়ে এগিয়ে চলেছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের দাবি, জয়পুরের তখতে বসুন্ধরার রাজ এখন সময়ে অপেক্ষা।
গত পাঁচ বছর গেটলট বনাম পাইলট এই লড়াইয়ে ব্যস্ত থেকেছে কংগ্রেস। পাঁচ বছর আগে ভাল ফলেও রাজ্যে এই দুই নেতার লড়াইয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে দিল্লিকে। সচিনকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েও অস্বস্তি কাটেনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, মরু রাজ্যে উন্নয়নের বদলে দলীয় কোন্দলই ডোবাল কংগ্রেসকে। যেখানে ছত্তীশগড় ও তেলঙ্গনা রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা থেকে ফায়দা তুলল, সেখানে পিছিয়ে পড়ল রাজস্থান।
রাজস্থান রাজনীতিতে পালাবদলের দস্তর রয়েছে। সেই দস্তর মেনেই রাজ্যে সরকার গড়ার পথে বিজেপি। রাজস্থান নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতার গোড়া থেকেই দাবি ছিল ফিরে আসার। গণনার ফলে সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।