নতুন বছরের শুরুতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে উঠে এসেছিল র্যাগিংয়ের অভিযোগ। অর্থপেডিক স্নাতকোত্তর বিভাগের ২ ডাক্তারি পড়ুয়া, একই বিভাগের ২ পড়ুয়ার বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ এনেছিলেন। যার মধ্যে ছিল অশালীন আচরণ, শারীরিক নিগ্রহ, দুর্ব্যবহার এমনকি অস্ত্রোপচার কেন্দ্রের ভিতরে মারধর, ইলেকট্রিক কেটলি, জলের বোতল দিয়ে মারধর করা ছাড়াও অস্ত্রোপচার কেন্দ্রের সরঞ্জাম দিয়ে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করার অভিযোগ। এরপরেই ঘটনাটি লিখিত আকারে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাসকে জানান র্যাগিংয়ের শিকার ওই ছাত্ররা। পাশাপাশি এই ঘটনায় ছাত্র সংসদ-এর তরফ থেকেও অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। এরপরেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরফে বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটির কাছে।
এরপরেই শুক্রবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের র্যাগিং সংক্রান্ত এনকোয়ারি কমিটির পক্ষ থেকে অধ্যক্ষের অফিসে জমা দেওয়া হলো রিপোর্ট। শনিবার এই রিপোর্ট নিয়েই বৈঠক রয়েছে কলেজ কাউন্সিলের। এছাড়াও, র্যাগিংয়ের ঘটনায় যে অভিযোগ উঠেছিল সে সম্পর্কে সত্যতা জানতে পেরেছে এনকোয়ারি কমিটি, এমনটাই সূত্রের খবর।
জিইয়ে রইল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (Calcutta Medical College) অচলাবস্থা। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনের (Swasthya Bhaban) প্রস্তাবিত বৈঠক বাতিল হয়েছে। এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পড়ুয়াদের তরফে নাগরিক মিছিল (Civil Society) আয়োজন করা হয়েছে। মিছিলের সমর্থনে হাজির অন্য মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। জানা গিয়েছে, মিছিলের অভিমুখ সেন্ট্রাল এভিনিউ সেখান থেকে ধর্মতলা। পাশাপাশি এসপ্লানেডে চলমান গাড়িতে পথসভা হবে। বেশ কয়েক জন চিকিৎসক হাজির এই মিছিলে।
এদিকে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে নির্বাচন সংক্রান্ত জট কাটাতে ফের স্বাস্থ্য সচিবকে ফোন করে সমাধানসূত্র বের করার আবেদন জানাব। এদিন এমনটাই জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, গত ১০ই ডিসেম্বর কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমস্যা দুর করতে এসেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ন স্বরূপ নিগম এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধান্ত নিয়োগী।
পাশাপাশি সোমবার হাসপাতালে এসেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি প্রাথমিক ভাবে কথা বলেন অনশনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে। তারপর প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে বৈঠক করেন তিনি। কিন্তু এদিন বৈঠক বাতিল হওয়ায় ঝুলে রইল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অচলাবস্থা।
ছাত্র সংসদের (Students Union Vote) নির্বাচনের দাবিতে ৪ দিনে পড়ল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (Medical College) পড়ুয়াদের অনশন আন্দোলন। শনিবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্যসচিব পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন। কিন্তু বেরোয়নি সমাধান সূত্র। মঙ্গলবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের ডাক দেওয়া হয়েছে। যদিও সোমবার অনশনরত এক পড়ুয়া ঋতম মুখোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি তাঁকে চিকিৎসার জন্য সুপার স্পেশালিটি ব্লকের সিসিইউ-তে নিইয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তাঁদের সহপাঠীর এহেন অবস্থার জন্য মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তুলেছেন আন্দোলনরত (Agitation) মেডিক্যাল পড়ুয়ারা।
এদিকে, এদিন সমস্যা সমধানের সূত্র খুঁজতে মেডিক্যাল কলেজে আসেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কথা বলেন পড়ুয়াদের সঙ্গে এরপরে ভিতরে প্রিন্সিপাল রুমে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এদিকে, অনশনের সঙ্গেই কলেজ চত্বরে পোস্টারিং পড়ুয়াদের। এখন মঙ্গলবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্য মহল।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (Student Union Election) দাবিতে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের (Medical Student) আন্দোলনের চলছে কলকাতা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে (Calcutta Medical College and Hospital)। এদিকে, স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত নিতে একেবারেই অপারগ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাহেই রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী ছাড়াও রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম (Health Secretary) কথা বলেন আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে। পাশাপাশি বৈঠক করেন প্রিন্সিপাল ইন্দ্রনীল বিশ্বাস এবং এমএসভিপি ডক্টর অঞ্জন অধিকারীর সঙ্গে।
ঠিক হয়েছে আগামী মঙ্গলবার, ছাত্র প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্যসচিব, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল, এমএসভিপি সবপক্ষকে নিয়ে বৈঠক হবে স্বাস্থ্য ভবনে। প্রিন্সিপাল আশাবাদী, 'ওই বৈঠক থেকে নির্বাচন নিয়ে সমাধান সূত্র বের হয়ে আসবে।' সবপক্ষই দেখতে চায় নির্বাচন নিয়ে, যখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন স্বাস্থ্য ভবনের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছে, সেই জায়গায় কী সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য ভবন।
এদিকে, আজ চতুর্থ দিনে পড়ল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোটের দাবিতে আমরণ অনশন। রবিবার ছুটি থাকলেও হাসপাতালে নিজের দফতরে আসেন প্রিন্সিপাল ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। এদিকে, প্রিন্সিপাল ইন্দ্রনীল বিশ্বাস দফতরে আসা মাত্রই, প্রথমে চলে যান অনশন মঞ্চে। সেখানে তিনি, অনশনকারী ছাত্রদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। জানতে চান তাদের শারীরিক অবস্থা কেমন রয়েছে। জানা গিয়েছে, অনশনের ৭২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত, আন্দোলনরত পড়ুয়াদের একজনের গাঁয়ে সামান্য জ্বর রয়েছে। কয়েকজনের ইউরিনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
অপরদিকে ছাত্র সংসদ সূত্রে খবর, আগামী মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনে সব পক্ষকে ডাকা হয়েছে নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে। প্রিন্সিপালের দাবি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন স্বাস্থ্য সচিব। ছাত্রদের বৈঠকে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের দাবি,আগামী মঙ্গলবার কখন বৈঠক হবে, কোথায় বৈঠক হবে, সেকথা আলোচনা করে কিছুই নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানানো হয়নি। আদৌ স্বাস্থ্য ভবনের ডাকা বৈঠকে উপস্থিত থাকব কিনা। আমরা নিজেরা বৈঠক করে,প্রিন্সিপালের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করব।
সৌমেন সুর: হিন্দু কলেজের শিক্ষা সমাপ্ত করার পর, ১৮৬১ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে মহেন্দ্রলাল সরকার আই.এম.এস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৬৩ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকেই ডক্টর অফ মেডিসিন ডিগ্রির অধিকারী হন। ভারতে সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞান চর্চার মূল্যায়ন প্রসঙ্গে শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর 'রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ' গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন, "বঙ্গদেশকে যত লোক উঁচু করে তুলেছেন এবং শিক্ষিত বাঙালিদের মনে মনুষ্যত্বের আকাঙ্ক্ষা দীপ্ত করেছেন, তাঁদের মধ্যে ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন অন্যতম। এরকম বিমল সত্যানুরাগী, সাহসী ও দৃঢ়চেতা অতি অল্প বাঙালিই দেখাতে পেরেছেন। এইরকম জ্ঞানানুরাগ মানুষ বঙ্গদেশে দুর্লভ।"
যাই হোক, এম.ডি ডিগ্রি পাওয়ার পর ডাক্তার সরকার প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। তাঁর অসামান্য রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের খ্যাতি সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যসাগর তাঁর অত্যন্ত গুণগ্রাহী ছিলেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের ক্যানসার রোগের চিকিৎসার জন্য, তাঁর ভক্তরা ডাঃ সরকারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। জীবনের প্রাথমিক পর্বে হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে তাঁর অনাস্থার প্রধান কারণ ছিল- ওই পদ্ধতিতে অ্যানাটমি ও ফিজিওলজির তেমন গুরুত্ব না থাকা। পরবর্তীতে বিদ্যাসাগরের প্রেরণায় নিজের চিকিৎসার ধারা পাল্টে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হোমিওপ্যাথি বিশেসজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার।
ডাক্তার সরকারের শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল 'ইন্ডিয়ান এ্যাসোসিয়েশন ফোর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স' প্রতিষ্ঠা করা। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় সমকালের সেরা ছাত্রদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চায় যাতে মগ্ন থাকে তারই জন্য এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা। ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তাঁরই ভাইপো অমৃতলাল সরকার। তাঁর সময়েও এই প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। প্রতিষ্ঠানটি যাদবপুরে অবস্থিত। ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার সেই সময়ের রোগ নিরাময়ে ছিলেন ধন্বন্তরী, তাইতো আজও তাঁকে ভুলতে পারিনি আমরা।